24/12/2024
কোন ভাবেই ফ্যাসিজমকে বরদাস্ত করবোনা- ডা.শফিকুর রহমান
পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধিঃ
আমরা ঠিক করবো আমাদের দেশের শাসক, ভারত ঠিক করবে তাদের দেশের শাসক। ভারতের সাথে কেমন সর্ম্পক হবে? অনেকে এটাও জিজ্ঞেস করে, আবার বলে ভারততো আপনাদেরকে ক্ষমতায় আসতেও দিবে না, থাকতেও দিবে না। তিনি সম্মুখে থাকা নেতা-কর্মীদের প্রশ্ন করেন আচ্ছা বলেনতো এই দেশ কি ভারত? এই দেশ কি দিল্লি?এই দেশ কি? জবাবে উচ্ছস্বরে আওয়াজ আসে বাংলাদেশ। এই দেশ কি পরাধীন? তাহলে ভারত আমার দেশের শাসক ঠিক করবে কেন?আমরা কি ভারতের শাসক ঠিক করি?আমাদের কি ঠিক করা উচিত হবে? উচিত হবে না, আমরা অবশ্য শাসক বলি না, আমরা বলি রাষ্ট্রের সেবক, কিসের শাসক? জনগণের আমানত মুল্যবান ভোট তোমাকে ভাই বিশ^াস করে সম্মান করে দিয়েছে তুমি সেবক হও শাসক হয়ো না। শাসক হলে তোমার হাতে থাকবে ছড়ি, শরীরে গরম থাকবে চোখ থাকবে লাল, চোখটা একটু শীতল করো, হাতের ছড়িটা ফেলে দাও, চেষ্টা করো মানুষের পা ধোয়ানোর দুনিয়ায় সম্মান পাবা, আখেরাতে আল্লাহর দরবারে প্রিয় বান্দা হবা। সেই বাংলাদেশ আমরা চাচ্ছি, যে বাংলাদেশে থাকবে না সহমর্মিতা, ভালবাসা, শ্রদ্ধা। যে বাংলাদেশে থাকবে না হিংসা। আমরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিপক্ষে আমরা মাইনরিটি মেজরিটি এই সমস্ত সংলাপ আর দেখতে চাই না। এই বড়ি গিলিয়ে গিলিয়ে মানুষের সর্বনাশ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলা জামায়াত আয়োজিত পীরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের ফ্লাইওভারের নীচে পথ সভায় জামায়াতের আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা বৈষম্যহীন কোরান ভিত্তিক দেশ গড়তে চাই, কোরানের শ্রষ্টা আল্লাহ, আমাদেরও শ্রষ্টা আল্লাহ, সেই আল্লাহর বিধান সমস্ত মানুষের জন্য সৃষ্টির জন্য কল্যানকর, এই বিধান করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা, দোয়া, ভালবাসা চেয়ে হাত বাড়িয়ে দিতে পাশে থাকার আহবান জানান তিনি।
উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে জামায়াত নেতা বলেন, একটা সময় তাদের গিয়েছে তাদেরকে কালাকে সাদা বানাতে হয়েছে সার্ভ এক্সেল দিয়ে, আর সাদাকে আলকাতরা মেখে কালো করতে হয়েছে, সেই ব্রিটিশ স¤্রাজ্য শেষ, খোলা মনে লিখুন আর খোলা মনে বলুন, আপনাদের পজিশন হচ্ছে জাতির আয়না সমাজের দর্পন, আয়নার সামনে গেলে চেহারা অবিকল ফুটে উঠে, কোন কিছু আয়না গোপন করে না, সুন্দর হলে সুন্দর কালো হলে কালো, আর আপনাদের ব্যক্তিগত পজিশন হচ্ছে আপনি জাতির বিবেক, আমরা এই জায়গাটাতে আপনাদের কাছে প্রত্যাশা করি, আমরা কারো আনুকুল্লো চাই না, আবার আমরা কারো পক্ষ থেকে সেই মন্দ বিরোধিতাটাও প্রত্যাশা করি না, আমাদের যা পাওনা তাই দিবেন, আমাদের কথাগুলো অবিকল পৌঁছাবেন, আপনার ভাষায় আমার কথা পৌঁছাবেন না ভাই, তাহলে আমার উপরে জুলুম হবে, ইতোমধ্য কেউ কেউ এ কাজ করে জঘন্য অপরাধ করেছে, আমরা তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি, একজন মানুষের চরিত্র হনন করা তাকে হত্যা করার চাইতেও জঘন্য। আপনার কথা আপনি বলুন, আমার নামে আপনার কথা চালান কেন? সবাই এটা করে না, এগাদজন এই কাজ করে। এই এক একজনের কারনে গোটা সোসাইটির বদনাম হয়ে যায়। তাই আমার অনুরোধ আপনারা সজাগ থাকুন। এ রকম কেউ যাতে না করতে পারে আপনারা একটু সোচ্চার ভুমিকা পালন করুন যে আমিও সততার ভিত্তিতে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে সাংবাদিকতা করবো, আপনিও করবেন। এর বাইরে যাবেন না, গেলে সমাজের ও দেশের ক্ষতি হবে।
হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ ভিন্ন ধর্মাবলিদের উদ্দেশ্য আমীর বলেন,আমরা কোন মেজোরিটি মাইনরিটি মানি না, বাংলাদেশে যারা জন্মগ্রহন করবে, যারাই এদেশের নাগরিক ধর্মের ভিত্তিতে আমরা কাউকে ভাগ করবো না, কোন অধিকার নেই, আল্লাহ এই সুযোগ দেন নাই, অবশ্যই সকলেই সমান মর্যাদার অধিকারী। ৭২ সালের ১০ জানুয়ারী থেকে ২৪ সালের ৫ আগষ্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দল শাসন করেছে, আমরা চাই একটি আন্তর্জাতিক নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক, ৫৩ বছরে কারা বিভিন্ন ধর্মের মানুষের উপরে নির্যাতন করেছে, কার জায়গা জমি অবৈধভাবে দখল করেছে, কাদের ইজ্জতের উপরে হাত দিয়েছে, সেই দুষ্টাদের বের করে আনা হোক, জাতি দেখতে চায় এরা কারা, ওদের খোলস মুখোস উন্মোচন করার সময় এসেছে। সংখ্যা গুরু, সংখ্যা লঘু এটা লাগিয়ে মুখামুখি করে দিয়ে একটি মহল ৫৩ বছর ধরে অবৈধ ফায়দা নিয়েছে। এখন আমরা তা মাটির সাথে মিশিয়ে দিবো। সংখ্যা গুরু, সংখ্যা লঘু বলে বলে মানুষের মনের উপরে চাপ প্রয়োগ করে মানুষকে দুর্বল করে দেয়া হয়েছে। আমরা তাদেরকে বলি ঘুরে দাঁড়ান, সাদাকে সাদা কালোকে কালো বলুন। কারা আপনাদের সর্বনাশ করেছে তাদের নাম বলে দিন।
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন,আমরা বৈষমের বিরুদ্ধে ন্যায় বিচার চাই, যে সমাজে ন্যায় বিচার কায়েম হয়, সেই সমাজে মানুষের সকল অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়, আর যেই সমাজে ন্যায় বিচার নেই, সেই সমাজে মানুষ কোন অধিকার পায় না, ন্যায় বিচারের প্রতীক দলো দাড়িপাল্লা, আমাদের দলের প্রতীক ছিলো দাড়িপাল্লা, ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার যারা সরকার বিচার বিভাগকে ধবংস করে দলীয় কার্যালয়ে পরিনত করেছিল তারা আমাদের প্রতীক কেড়ে নিয়েছিল, দলকে নিবন্ধন হারা করেছিল, শেষ পর্যন্ত দিশেহারা হয়ে আমাদেরকে নিষিদ্ধ করেছিল, রক্ষা পায় নাই, ৪ দিনের মাথায় আল্লাহ তাদেরকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। কেন তারা দাড়িপাল্লার বিরুদ্ধে লাগলো? এই প্রতীক যদি বাংলাদেশে তাজা জীবন্ত হয়, এই প্রতীক যদি সংসদে যায়, এই প্রতীক হাতে নিয়ে যদি মানুষ দেশ শাসন করে তাহলে সেই দেশে আইনের শাসন কায়েম হবে। ন্যায় ভিত্তিক সমাজ হবে, ইনসাফ মানুষ পাবে, তারা যেহেতু বে ইনসাফি করবে তাই ইনসাফের প্রতীককে তারা সহ্য করতে পারেনি। ইনশাআল্লাহ প্রতীক আমরা ফিরে পাবো, নিবন্ধণ ফিরে পাবো, আমাদেরকে অবৈধভাবে অবৈধ করেছিল, আমরা বৈধ হয়েছি, এখন জনগণের ঘৃণার পাত্রে পরিনত হয়েছে তারা।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ গ্রহন সম্পর্কে বলেন, কিছু সুশীল এখন মুখ তুলে বলে আওয়ামী লীগ কি আগামী নির্বাচনে আসতে পারবে?আওয়ামী লীগ কি কখনও নির্বাচন চেয়েছে, আওয়ামী লীগ নির্বাচন চাইলে তিন তিনটি নির্বাচনে তাদের সুযোগ ছিল জনগণকে সুযোগ দেয়ার, তারাতো দেয় নাই, যারা নিজেরাই নির্বাচনে বিশ্বাস করে না, আপনারা কারা? মায়ের যেখানে দরদ নাই সন্তানের প্রতি আপনি মাসি হয়ে চিৎকার দেন কেন? ওরাইতো নির্বাচনে বিশ্বাস করে না। গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থা, গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সব গুলোকে খেয়ে চিবিয়ে হজম করে ফেলেছে। যুবকরা ভোটের প্রতি উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছিল। বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতিটি যুবক ও যুবতিকে এবং প্রবাসীদের ভোটার তালিকায় অন্তভুর্কির দাবীর কথা বলেন তিনি।
শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে আমীর বলেন, আমরা সেই শিক্ষা চাই, যেই শিক্ষা মানুষকে মানুষ হতে শিখাবে, যে শিক্ষা মানুষের হাতকে কর্মীর হাতে পরিনত করবে, যে শিক্ষা দুনিয়ার বৈষয়িক এবং নৈতিক জ্ঞানে একজন শিক্ষিত মানুষকে সম্মৃদ্ধ করবে, সেই শিক্ষাকে আমরা চাই, শিক্ষার পাঠ চুকানোর আগে তার হাতে কাজ চলে আসবে, আমরা আমাদের সন্তানদের হাতকে কর্মীর হাতে পরিনত করতে চাই।
জামায়াতের আমীর আরাও বলেন, শহীদ আবু সাঈদের মাতা-পিতা এক সন্তান হারিয়েছেন কিন্তু বাংলাদেশে তারা কোটি কোটি সন্তান পেয়ে ধণ্য হয়েছেন। আবু সাঈদ সাহস নিয়ে সেদিন বাংলার মানুষের চোখে আঙ্গুল দিয়ে পথ দেখতে বলেছেন, যুব ও যুব সমাজ সমস্ত অন্যায় এবং অপশক্তির বিরুদ্ধে। আবু সাঈদের রক্ত সারা বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রী, যুবক যুবতীদের রক্তে আগুন ধরে দিয়েছিল। তাই তারা স্লোগান দিয়েছিল আমাদের রক্তে লেগেছে আগুন।
পথসভায় উপজেলা জামায়াতের আমীর সহকারী অধ্যাপক মাওলানা মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে সাবেক উপজেলা আমীর সহকারী অধ্যাপক মাওলানা একেএম ইদ্রিস আলী ও যুব বিভাগের সেক্রেটারি মুহাম্মদ মেছবাউল হকের সঞ্চালনায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, জেলা আমীর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, সেক্রেটারী মাওলানা এনামুল হক, কর্ম পরিষদ সদস্য মাওলানা নুরুল আমিন, উপজেলা নায়েবে আমীর খাইরুল আজম বিএসসি, সাবেক উপজেলা আমীর মাওলানা লুৎফর রহমান, এড. মাওলানা আব্দুস সালাম, শিক্ষক ফেডারেশন কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ড. আবু সায়েম মোঃ তোফাজ্জল হোসেন, বাইতুল মাল সেক্রেটারী মাওলানা আব্দুল আজিজ, অফিস ও পাঠাগার সেক্রেটারী মাওলানা মশিউর রহমান, পৌর সেক্রেটারী মাহাবুব হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।