Ifrat Shariyar Shuvo

Ifrat Shariyar Shuvo লেখালেখির মাঝে নিজের অব্যক্ত অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে চাই;
আপনাদের হৃদয় ছুঁতে চাই।

কেউ কি বলে তুমি কাঁদলে কষ্ট হয় নাকি তুমিও একা আমার মতো,,, বৃষ্টির জলে কেঁদে কেঁদে কমিয়ে নাও হৃদয়ের ক্ষত,,,
07/12/2023

কেউ কি বলে তুমি কাঁদলে কষ্ট হয়
নাকি তুমিও একা আমার মতো,,,
বৃষ্টির জলে কেঁদে কেঁদে
কমিয়ে নাও হৃদয়ের ক্ষত,,,

24/10/2023

মেয়েদের জীবনে কিছু জটিল সমস্যা আছে। এই ধরুন একটা ছেলে যখন ক্যারিয়ারে মন দেয়, তার শুধুই ক্যারিয়ারেই ফোকাস থাকে। আর যখন একটা মেয়ে ক্যারিয়ারে মন দেয়, তার মনকে আরো লম্বা করে ঘরের কাজ, সংসার সামলানো, বাচ্চা সামলানো, স্বামীকে খুশি রাখা, নিজেকে পরিপাটি রাখা, শরীর ফিট রাখা, স্কিনকে সুন্দর রাখা, এরকম অসংখ্য দিকেও মন টেনে নিয়ে যেতে হয়। বিচিত্র এবং জটিল সার্কেল। আমার ঘরের কাজ করতে একদম ভালো লাগে না। সেই কৈশোর থেকেই ভাবতাম, আমি কখনোই ফুলটাইম ঘরের কাজ করবো না। যেটা ভালো লাগেনা সেটা কেন করবো। আমার থিওরি ছিল এরকম, মাসে দুই লাখ টাকা ইনকাম করবো আর পনেরো হাজার টাকা দিয়ে কাজের জন্য লোক রাখবো যে/যারা আমার ঘরের সমস্ত কাজ করে দিবে। আমি শুধু একটা কাজই মন দিয়ে করবো সেটা হচ্ছে নিজের ক্যারিয়ার।

কিন্তু বাস্তবতা এত সুন্দর না। নিজের কাজ কখনোই অন্য কাউকে দিয়ে হয় না। যতই ট্রেনিং দেয়া হোক, যতই বুঝিয়ে সুঝিয়ে দক্ষ বানানো হোক, দিনশেষে এরা সেই ভুলগুলোই করবে যেগুলো অবচেতন মনেও আপনি করবেন না। আমার ঘরের কাজের দায়িত্ব অন্য কাউকে দিয়ে আমি বিন্দু পরিমাণ শান্তি পাইনা। এই ধরুন বারবার বলার পরও ঠিকমতো কাজটা করতে না পারা, জামাকাপড় ঘরদোর মনমতো পরিষ্কার হয় না, একটা কথা বুঝিয়ে বলতে বলতে যে পরিমাণ কষ্ট হয় তাতে ওই কাজটা নিজেই সুন্দরভাবে করে ফেলা যায়। নিজের বাচ্চাকে আমি যতটা আগলে রাখি, দুনিয়ার আর কেউই ওকে সেভাবে রাখবে না এটাই স্বাভাবিক। কারণ দিনশেষে সে আমার বাচ্চা, ওই ভদ্রমহিলার নয়। আবার দিনশেষে এটা আমার ঘর, ওনার নয়।

যেকোনো এক জায়গায় স্যাক্রিফাইস করতেই হবে। নিজের কাজ আরেকজনকে দিয়ে করালে তার মনের মতো করে সে কাজটা করবে, আমার মনের মতো করে কেন করবে? এটাই স্বাভাবিক। তাই না?

জি, আমি এটাই শুরুতে বলেছি। নিজের কাজগুলো যদি নিজের মনমতো করতে চাই, বাচ্চাকে মনের মতো গড়তে চাই, ঘরটা নিজের মতো গুছিয়ে রাখতে চাই, তাহলে আমার নিজেকেই এখানে সময় দিতে হবে। অন্য কারো কাঁধে এসব দায়িত্ব দিলে তার মতোই হবে, আমার চাহিদা মতো হবেনা। খুব কঠিন সত্য। এখানেই গণ্ডগোলটা বাঁধে। মানে ঘরের দিকেও খেয়াল রাখা, সময় দেয়া, আবার কাজের দিকেও ফোকাস রাখা।

ঘর, সন্তান, ক্যারিয়ার, সবকিছু সমানভাবে সময় দিলে সবই সুন্দর। কিন্তু চব্বিশ ঘণ্টায় একটা মেয়ে এত সময় কোথ থেকে ম্যানেজ করবে? তাছাড়া ক্লান্তি বলেও একটা বিষয় আছে। হয়তো এ জন্যই আমাদের পুরুষশাসিত সমাজ বলে, মেয়েরা শুধু

12/10/2023

রাত

#পর্ব- ৩/শেষ পর্ব

কিন্তু দাদাকে একদম স্বাভাবিক লাগছে। কোনোরকম পরিবর্তন দাদার মধ্যে লক্ষ্য করলাম না। প্রতিদিন দাদা যেমন থাকেন আজকেও ঠিক তেমনি লাগছে। কিন্তু ভাববার বিষয় হলো মা প্রতিদিন সকালে মাছ কুটতে বসে। আজকেও তার ব্যতিক্রম হলো না। আজকে মা মাছ কোথায় পেল সেটায় ভাবাতে লাগলাম। তাই আমি দাদার রুম থেকে বের হয়ে সরাসরি মায়ের কাছে গেলাম। মাকে জিজ্ঞেস করলাম

"মা তুমি মাছ কোথায় পেয়েছো?"

মায়ের সোজাসাপটা উত্তর

"তোর দাদা নিয়ে এসেছে। প্রতিদিন তো তোর দাদায় রাতে মাছ ধরে আনে। দেখ গতকাল একটা বড়ো বোয়াল ধরেছে তোর দাদা। আজকে এটাই রান্না করব।"

মায়ের কথা শুনে আমার বুক আবারও কেঁপে উঠল। দাদা তো কাল মাছ ধরতে যায়নি। তাহলে মাছ কোথায় পেল দাদা! এ মাছগুলো কীভাবে আসলো? এগুলো কী সত্যি কোনো মাছ? ভাবনা যেন আমাকে ছাড়ছেই না। আমি পুনরায় দাদার রুমে গেলাম। দাদাকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে হালকা গলায় জিজ্ঞেস করলাম

"এই যে দাদা প্রতিদিন এত কষ্ট করে মাছ ধরো, তোমার কষ্ট হয় না।"

"কষ্ট কেন হবে রে, তোর জন্য নিয়ে আসি। এই যে তুই মজা করে খাস আমার খুব ভালো লাগে।"

দাদার মধ্যে কোনোরকম পরিবর্তন পেলাম না। তবে আমিও নাছোরবান্দা এর রহস্য তো আমি উদঘাটন করবই। তাই ইচ্ছা করেই দাদাকে বললাম

"দাদা জানো আমার মনটা অনেক খারাপ।"

"কী হয়েছে তোর?"

"জানো দাদা গতকাল ফুফুকে স্বপ্ন দেখেছি। দেখার পর থেকেই খারাপ লাগছে ভীষণ। আচ্ছা দাদা ফুফু কী সত্যিই আত্মহত্যা করেছিল? নাকি কেউ ফুফুকে মেরে দিয়েছে? কী হয়েছিল ফুফুর সাথে? মরার পরেই বা ফুফুর কবর থেকে কান্নার শব্দ কেন আসতেছিল? ফুফু কী কোনো বড়ো গুনাহ করেছিল?

আমার কথা শুনে দাদা একটু চমকে গেলেন। এতদিন পর এরকম কথা দাদা আশা করেননি। দাদার এ নিয়ে কথা বলারও হয়তো ইচ্ছে নেই। তাই তিনি কথার প্রসঙ্গ পাল্টে বললেন

"যা দেখেছো ভালো দেখেছো। খারাপ স্বপ্নের ব্যখ্যা দিতে হয় না। আবার শুনতেও হয় না। অতীত কখনও ঘাটতে নেই। যাও গিয়ে নাস্তা করে নাও। গতকাল নাকি তুমি এমনিতেই ভয় পেয়েছো। এখন আবার এগুলো নিয়ে কথা বললে আরও ভয় পাবে। আর আমি একটু বাজারে যাই। আজকে বাজারে অনেক কাজ আছে।"

কথাগুলো বলেই দাদা উঠে দাঁড়ালেন। আমি আর কথা বাড়ালাম না। সোজা ঘর থেকে বের হয়ে আসলাম। কিন্তু আমার মন না চায়তেও গত রাতের ঘটনাতেই পড়ে আছে। তাই চিন্তা করলাম দাদা বের হলেই দাদার ঘরটা চিরুনি তল্লাশি করব। এতে যদি দাদার ঘরে কিছু পাওয়া যায়। হতে পারে দাদা কালো জাদু করে, নাহয় অন্য কোনো রহস্য। এ রহস্য আমাকে উদঘাটন করতেই হবে।

বেলা ১২ টা বাজে। মা নাস্তা খাওয়ার জন্য অনেক বকাবকি করছে। তবে আমার মন নাস্তা খাওয়ায় একদম বসলো না। আমি নজর রাখছি দাদা কখন বের হবে সেদিকে। কারণ দাদা বের হলেই কেবল আমি দাদার ঘর তল্লাশি করতে পারব।

ঠিক ১২ টা ৩০ এ দাদা বের হলেন বাজারের উদ্দেশ্যে। দাদা বের হতেই আমি আস্তে করে দাদার ঘরে ঢুকে পড়লাম। পুরো ঘর তন্ন তন্ন করে খুঁজতে লাগলাম। তবে এমন কিছুই পেলাম না যাতে করে রহস্য উদঘাটন হবে৷ আমি বেশ হতাশ হয়েই বসে গেলাম। মনটা বিষন্ন লাগছে৷ ঠিক তেমন সময় আমার হাতের ধাক্কা লেগে টেবিলের নীচ থেকে একটা ডায়েরি পড়ল।

ডায়েরিটা দেখে কেন জানি না মনে হলো আমি যা খুঁজতেছি সেটা পেয়ে গেছি। তাই বেশ ব্যস্ত হয়েই ডায়েরিটা হাতে নিলাম। সেখানেই বসেই ডায়েরিটা খুলে পড়তে লাগলাম। এতে বুঝতে পারলাম দাদা কোনো কালোজাদুর সাথে সম্পৃক্ত না। এটুকু আশ্বস্ত হতে পেরে আমার ভীষণ ভালো লাগছে। ডায়েরিটা পড়ে বুঝতে পারলাম দাদার সবচেয়ে আদরের সন্তান ছিল ফুফু। ফুফুকে তিনি অনেক স্নেহ করতেন। আর বেশির ভাগ লেখা ফুফুকে নিয়েই লেখা। আর এরপর লেখা ছিল দাদীকে নিয়ে। আমাদের নিয়েও লেখা তবে টুকটাক। ফুফুর কতগুলো ছবি ডায়েরিতে রাখা। বুঝতে পারছিলাম ফুফুর মৃত্যুতে দাদা অনেক কষ্ট পেয়েছিলেন। তেমনি দাদী চলে যাওয়ার পরও দাদা ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলেন। ডায়েরিতে সে বিষয়গুলোই লিপিবদ্ধ করা ছিল। তবে শেষ পাতাগুলো পড়ে রিতীমতো আমার শরীর ঘামতে লাগল।

ডায়েরির শেষ পাতাগুলো দাদা ফুফুকে নিয়ে লিখেছেন। দাদার লেখার সারমর্ম এই দাঁড়ায় যে,

দাদা তার সন্তানদের মধ্যে ফুফুকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন। ছোটো থেকে ফুফুকে সবচেয়ে বেশি প্রায়োরিটি দিয়ে তিনি বড়ো করেছেন। দাদার কলিজা বলা চলে ফুফু। বয়সের সাথে সাথে ফুফুও বড়ো হয়। বড়ো হওয়ার একটা পর্যায়ে ফুফু প্রেমে পড়ে। দাদাও অবশ্য বিষয়টা খুব ভালোভাবে মেনে নিয়েছিলেন। ফুফুর খুশির জন্য দাদা আকাশের চাঁদটা ধরে আনতে প্রস্তুত।

সময় যায় ফুফুর সম্পর্কের রঙ বদলায়। একটা পর্যায়ে ফুফু বুঝতে পারেন উনার ভালোবাসা কেবল একতরফা। তিনি যাকে ভালোবাসেন সে ভদ্রলোক ভালোবাসেন অন্য কাউকে। বিষয়টি ফুফু একেবারেই মানতে পারছিলেন না। দাদাকে বলার পর দাদা ফুফুকে অনেক যত্ন করে বুঝান। কিন্তু নাছোরবান্দা ফুফু একদমই মানতে পারছেন না বিষয়টি। ছোটোবেলা থেকে যা চেয়েছেন তা পেয়েছেন তিনি। তাই হুট করে না পাওয়ার ধাক্কাটা তাকে ভীষণভাবে আঘাত করছে৷

ফুফু অনেক চেষ্টা করল তার প্রিয়তমকে তার করার জন্য। সব চেষ্টায় যেন ব্যর্থ হলো। অবশেষে ফুফু আশ্রয় নিল কালোজাদুর। প্রিয়তমকে পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠলেন তিনি। কালোজাদুর কবলে পড়ে সব ধরণের অন্যায় করতে লাগলেন। শয়তানকে খুশি করার একটা সময় গিয়ে, একটা নবজাতককেও বলি দিলেন।

বিষয়টি দাদা যখন বুঝতে পারলেন তখন দাদার আর কিছু করার ছিল না। ফুফুকে এই বিপথ থেকে ফিরিয়ে আনার অনেক চেষ্টা করেই তিনি ব্যর্থ হলেন। এদিকে ফুফু শয়তানকে খুশি করতে আরও মরিয়া হয়ে গেলেন। শয়তানকে খুশি করার জন্য তিনি আমাকে বলি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। বিষয়টি দাদা বুঝতে পেরে ফুফুকে নিজ হাতে হত্যা করলেন। ফুফু তার কলিজার টুকরা ছিলেন। নিজের সন্তানকে মেরে যেন তিনি পাথর হয়ে গেলেন।

এদিকে সবাই ভাবলেন ফুফু আত্মঘাতিকে মারা গেছেন। কিন্তু সত্য এটাই যে ফুফুকে দাদা হত্যা করেছেন। মৃত্যুর পরও ফুফুর কবর থেকে আজাবের আওয়াজ ভেসে আসত। সেজন্য ফুফুর কবরে ঘটা করে দোয়া পড়ানো হয়।

ডায়েরিটা পড়তে পড়তেই দাদাকে আমার সামনে অবলোকন করে ভয় পেয়ে গেলাম। আমাকে ভয় পেতে দাদা আমাকে অভয় দেখালেন। তারপর দাদা যা বললেন তা শুনে আমি বিস্মিত হয়ে গেলাম।

এবার আসি মূল ঘটনায়। এর বেশ কিছুদিন পরেই ফুফুর আত্মা ফিরে আসে শয়তানের ঢাল হয়ে। এসেই সে দাদাকে খুন করে৷ আর সেদিন দাদা রাতে নদীতে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। দাদার মৃত্যুর পর দাদার আত্মা ফিরে আসে আমাদের বাসায়। ফুফু যাতে কোনো সমস্যা করতে না পারে তাই দাদা প্রতদিন রাতে ফুফুর সাথে দেখা করতে যান। আর প্রতিরাতেই ফুফুকে ধ্বংস করার অনেক চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এতদিন পারেন নি। তবে গতরাতেই তিনি ফুফুকে একেবারে ধ্বংস করেন সাপের ধ্বংশন দিয়ে।

আমি বুঝতে পারছিলাম দাদা আমাদের মাঝে বেশিক্ষণ থাকবেন না৷ তার কাজ শেষ তিনি চলে যাবেন। ভাবতেই যেন আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছিল৷ আমি ছলছল চোখে দাদার দিকে তাকাতেই দাদা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

"কষ্ট পাস না দাদাভাই। তুই আমার হার্টের হার্টবিট। সবসময় তুই ভালো থাকিস। কখনও পাওয়ার জেদে খারাপ পথ বেছে নিস না৷ পাওয়া না পাওয়া নিয়েই জীবন।"

এরপর দাদা গেলেন আর কখনও ফিরে আসলেন না। সবাই এটাই ভেবে নিলেন দাদা হয়তো নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে ডুবে মারা গেছেন।

সেদিনের পর থেকে দাদাকে কখনও দেখিনি। তবে শেষ রহস্যটার জট না খুলতে পারলে আমিও হয়তো সবার মতো এটাই ভেবে নিতাম দাদা পানিতে ডুবে মা*রা গেছেন।

কপি করা নিষেধ।

11/10/2023

রাত

#পর্ব-২

দাদাকে খেয়াল করলাম পরিধান করা ফতোয়ার ছোটো পকেট থেকে একটা সাপ বের করলো। সাপটা প্রশস্তে বেশ বড়ো নয়। একদম ক্ষীণক্ষীনে চিকন। কিন্তু লম্বায় অনেক বড়ো। দেখতে অনেকটা এখনের যুগের ডিসের তারের মতো। সাপের রঙটা ছিল সবুজ। মাথাটা আবার কালো রঙ করা। বুকের ভেতরটায় এমন দৃশ্য দেখে কম্পন দিতে লাগল। শরীরটা কাঁপতেও লাগল। এদিকে শরীর যেমন ভয়ে কাঁপছে। অপরদিকে জঙ্গলের দক্ষিণের বাতাসেও শরীর শীতে কাঁপছে। ভয়ে আর শীতে শরীর ঠান্ডা হয়ে জমাট বেঁধে গেছে। তবুও আমি পিছু হটলাম না। সামনের দিকে তাকিয়ে দাদার কাজকর্ম গুলো অবলোকন করতে লাগলাম।

দাদা সাপটা বের করেই ফুফুর দিকে এগিয়ে দিল। এগিয়ে দিতেই ফুফুর সারা শরীর সাপটা পেঁচিয়ে ধরে মুখের দিকে কামড়াতে লাগল। সাপের কামড়ের বিষ কতটা ত্যাজী ছিল জানি না। তবে ফুফুর চিৎকারে পুরো জঙ্গলের ভয়ানক প্রাণীগুলোও হয়তো চুপ হয়ে গিয়েছিল। এদিকে আমি এতই ভয় পেলাম যে আমার মূত্র বিসর্জন হয়ে গেল। এরকম ভয় এর আগে কখনও পেয়েছি কি'না জানি না। তবে এরকম শাস্তির কথা জাহান্নামীদের হবে পড়েছিলাম।

কিন্তু এদিকে এটাই মিলাতে পারছিলাম না। ফুফু কীভাবে এখানে আসলো? কেনই বা দাদা এত রাতে এখানে আসলো? দাদা সাপটায় বা কোথায় পেল? দাদার পকেটে সবসময় সাপটা থাকলে, কেন কোনোদিন সাপটা দেখিনি। সব গুলো প্রশ্নই যেন মাথায় গিজগিজ করতে লাগল। আর এদিকে আমার শরীর বরফের থেকে ঠান্ডা হয়ে গেল।

হঠাৎ করে সাপটা কামড়াতে কামড়াতে মরে গেল। এদিকে সাপটা মরে যাওয়াতে ফুফু চুপ হয়ে গেল। সারা শরীরটা ফুফুর সাপের বিষে নীল হয়ে আছে। জিহ্বাটা বের করে নিজের হাত দিয়েই টেনে ধরল সে। জিহ্বাটাও কালো হয়ে গেছে। তাকে দেখে বুঝা যাচ্ছে না, এতক্ষণ সে এখানে আর্তনাদ করছিল।

আমি বরফের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে শুধু ঘটনা দেখছিলাম। ফুফু এবার কী যেন দাদার কানে ফিসফিস করে বলল। দাদা কথাটা শুনে পেছন ফিরে তাকাল। ভেবেছিলাম দাদা হয়তো বুঝে গেছে আমি পেছনে দাঁড়িয়ে আছি। তাই ভয়ে কাঁপতে লাগলাম। কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে দাদা পেছন ফিরে আমার দিকে তাকিয়েও কোনো ভ্রূক্ষেপ করলো না। দেখে মনে হচ্ছে উনি উনার মধ্যে নেই। এদিকে দাদাকে লক্ষ্য করতে গিয়ে ফুফুকে হারিয়ে ফেললাম। ফুফু কোনদিকে গেল সেটা লক্ষ্য করতে পারেনি। এদিকে দাদা একদম আমার পাশ কাটিয়ে গেল, তবুও আমার দিকে তার কোনে নজর পড়ল না। মনে হচ্ছে অন্য কেউ তাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। আমার ভয়টা আরও বাড়তে লাগল।

দাদা এগিয়ে যাচ্ছিল আমিও দাদার পিছু নিলাম আবার। দাদা বাড়ির দিকে রওনা দিয়েছে। আমিও দাদার পিছে পিছে বাড়ির দিকে এগুতে লাগলাম। একটা পর্যায়ে দাদা বাড়িতে চলে আসলো। আর নিজের ঘরে প্রবেশ করলেন।

আমিও নিজেকে সামলে হাঁপাতে হাঁপাতে ঘরে প্রবেশ করলাম। মা আমাকে হাঁপাতে দেখে ঘুম থেকে উঠে অবাক হয়ে তাকালেন। আমার শরীর ভেজা। বিশ্রি একটা গন্ধ আসতে লাগল শরীর থেকে।

মা তড়িঘড়ি করে উঠলেন। আমাকে ধরে জিজ্ঞেস করলেন

"কী হয়েছে?"

আমি সবটা চেপে গেলাম। গ্রাম হওয়ায় ওয়াশরুম টা ঘরের বাইরে ছিল। তাই মাকে উত্তর দিলাম

"ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম মা। আসতে গিয়ে ভয় পেয়ে যাই। তাই কাপড় নষ্ট করে ফেলি।"

মা আমার কথা শুনে কিছুটা অবাক হলেন। যে আমি মাকে ছাড়া কখনও ওয়াশরুমে যাইনি। সে আমি একা একা ওয়াশ রুমে গেলাম। তবুও মা নিজেকে সামলে নিলেন। বাইরে গিয়ে গরম পানি করে আমাকে গোসল করালেন। তারপর সূরা পড়ে ফুক দিয়ে বিছানায় উঠালেন। ততক্ষণে ফজরের আযান পড়তে লাগল। আমি আযান শুনেই নামাজ পড়তে লাগলাম।

নামাজ শেষে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। সারা শরীর আমার কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসলো। যতবার চোখ বন্ধ করছিলাম ততবারেই আমার দাদা আর ফুফুর চেহারা ভেসে আসছিল। অনেক চেষ্টার পর দোয়া পড়তে পড়তে আমার চোখে ঘুম আসলো।

পরদিন ঘুম থেকে উঠলাম সকাল ১১ টায়। উঠেই আমি গতরাতের কথা ভাবতে লাগলামি। ঘর থেকে বের হয়েই সরাসরি দাদার রুমে গেলাম। কিন্তু...

কপি করা নিষেধ

11/10/2023

খোলা_জানালার_দক্ষিণে
#পর্ব_০৪
#লেখিকা

বিষন্ন মন ছন্নছাড়া রাত বিষাদের ছোঁয়ায় আসক্ত শরীর। ক্লান্ত দেহটা ধীর গতিতে ব্যাগের মধ্যে সব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গোছাচ্ছে। চারদিকে পিনপতন নীরবতা। বাহিরে থেকে গাড়ির কোলাহল কর্ণকুহরে ভেসে আসছে৷ মেহেভীন আজকে অফিসে ছুটি নিতে গিয়েছিল। কালকে নিজ জন্ম ভূমিতে যাবে। রুপা মেহেভীনের বিষাদগ্রস্ত মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে কোনো বাক্য উচ্চারন করতে পারছে না। সে সবকিছু নিরবে পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে। মেহেভীন নিজের মুঠোফোনটা হাতে তুলে নিল। ফোন হাতে নিতেই মায়ের নাম্বারটা জ্বল জ্বল করে উঠলো। বুকের ভেতরটা ভারি হয়ে আসছে মেভেভীনের। আচমকা দম বন্ধ হয়ে আসার ব্যাপার টা মেহেভীন ভিষণ ভাবে উপলব্ধি করতে পারছে। আজকে সে মাকে ফোন দিবে কালকে বাসায় যাবে। সে কথা জানানোর জন্য অফিসে ছুটি নিতে গিয়েছিল মেহেভীন। মায়ের অসুস্থতার কথা শুনে তো আর ঘরে বসে থাকা যায় না৷ মায়ের নাম্বারে কল যাচ্ছে। মেহেভীনের হৃদস্পন্দনের গতিবেগ তড়িৎ গতিতে ছুটে চলেছে। ভেতরে দারুন অস্থিরতা কাজ করছে।

--হ্যালো কে বলছেন?

--মা আমি মেহেভীন।

--মেহেভীন! তুই এতদিন কোথায় ছিলি? আমাদের খোঁজ খবর নিসনি কেন? তোকে কত খুঁজেছি। আমরা কি খুব বেশি অন্যায় করে ফেলছি। যে তুই আমাদের এত বড় শাস্তি দিচ্ছিস। তুই তোর স্বামী সহ বাসায় চলে আয় মা। আমি তোদের মেনে নিব। এভাবে আর বাবা-মায়ের ওপরে রাগ করে দূরে সরে থাকিস না। তোর চিন্তায় তোর বাবা আর আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি রে মা। রাইমা বেগম মেয়ের কল পেয়ে যেন উন্মাদ হয় গিয়েছে। মেহেভীনকে কথা বলার সুযোগ দিচ্ছে না। মেহেভীন বিস্মিত হয়ে মায়ের কথা শুনছে। সে বিয়ে করেছে! অথচ সে নিজেই জানেনা। তার মা কি সবকিছু নিজের মন মতো বানিয়ে নিয়েছে। সে পালিয়ে এসে বিয়ে করে সংসার করছে। মেহেভীন শান্ত কণ্ঠে বলল,

--আম্মু তুমি উত্তেজিত হবে না। তুমি উত্তেজিত হয়ে গেলে এখনই অসুস্থ হয়ে পড়বে। তখন আমার সাথে কিভাবে কথা বলবে। সে কথা কি একবারও ভেবে দেখেছ? আমি তোমার সব কথা শোনার জন্যই তোমার কাছে এসেছি। তাহলে এত তাড়াহুড়ো কিসের। মেহেভীনের কথায় শীতল হলো মায়ের হৃদয়। শান্ত নদীর মতো স্থীর হয়ে গেল রাইমা বেগম। মেহেভীন আবদারের সুরে বলল,

--মা আমি কালে বাসায় আসি। কতদিন হয়ে তোমাদের দেখি না। তোমাদের ভিষণ দেখতে ইচ্ছে করছে। আমি তোমাদের বাসায় গেলে, আমাকে তোমাদের ঘরে তুলে নিবে। নাকি ছুরে রাস্তায় ফেলে দিবে।

--এসব তুই কি বলছিস মেহেভীন। নিজের সন্তানকে কেউ কোনোদিন রাস্তায় ফেলে দিতে পারে। আজকে বুঝবি না। একটা সন্তান তার বাবা-মায়ের কাছে কি? যেদিন মা হবি সেদিন বুঝতে পারবি।

--আমি যে অন্যায় করেছি মা। তোমাদের সন্মান নষ্ট করেছি। আমার কি ক্ষমা হবে। আমাকে আবার আগের মতো ভালোবাসবে তো।

--আমি মনে করি আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে। আমাদের থেকে ভালো পরিকল্পনা কারী আল্লাহ। আমরা যা হারিয়েছি। তার থেকে দ্বিগুন আমাদের ফিরিয়ে দিবেন। প্রাপ্তির কাছে কত করে বলেছি। তোর সাথে কথা বলিয়ে দিতে প্রাপ্তি একদিনও কথা বলিয়ে দেয়নি। তুই নাকি আমাদের মুখ দেখতে চাস না। আমরা যেন তোকে না খোঁজার চেষ্টা করি। এবার বুঝতে পারছিস আমার ব্যাথাটা কোথায়। মায়ের কথায় মেহেভীন আশ্চর্যের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেল!

--আম্মু আমি এসব কিছু বলনি। প্রাপ্তি আপু আমাকে বলেছে তোমরা আমার মুখ দেখতে চাও না। আমি বাসায় গেলে আমাকে ত্যাজ্য কন্যা করে দিবে। আমি তোমাদের হারাতে চাইনি আম্মু। সেজন্য এতদিন তোমাদের থেকে পালিয়ে বেড়িয়েছি। মেহেভীনের কথা শেষ হবার সাথে সাথে পরিবেশটা নিস্তব্ধ হয়ে গেল। মা-ও মেয়ের চারপাশে যেন নিস্তব্ধ রাজত্ব করছে। দু'জনের বুঝতে বেগ পেতে হলো সমস্যাটা কোথায়। নিরবতা ভেঙে রাইমা বেগম গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

--তোর সাথে এমন হবার দরকার ছিল। না হলে জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারতি না। মায়ের থেকে মাসির দরদ বেশি। বাবা-মায়ের থেকে যেমন চাচাতো বোনকে বেশি আপন ভাবতে গিয়েছিল। সে তোকে তোর ভালোবাসার উপকার দিয়েছিল। তা এখনই সব শুনবি নাকি বাসায় আসবি সেটা বল আগে।

--আম্মু রাগ করছ কেন?

--রাগ করব না তো কি আদর করব। বাড়ি আগে আয় আগে পাজি মেয়ে একটা।

--সে আমাকে যা খুশি করার কর। কিন্তু আমাকে দূরে সরিয়ে দিও না আম্মু। তোমাদের ভালোবাসা ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না। ছোট বেলা থেকে এত কষ্ট করে মানুষ করেছ। আমার সাফল্যে অর্জনের পর তোমরা সুখ করবে না। তাহলে কে সুখ করবে আম্মু?

--তোর সাফল্য মানে?

--তোমাদের জন্য সারপ্রাইজ আছে।

--কালকে কখন আসবি?

--আজকে রাতে যাব আম্মু। সকালে পৌঁছে যাব। আব্বুর কি অবস্থা আম্মু। আব্বু কি আমার ওপরে খুব রেগে আছে। আমাকে যদি বাসা থেকে বের করে দেয়।

--তোর কি আমাদের এত খারাপ বাবা-মা বলে মনে হয়। তুই না জানিয়ে বিয়ে করেছিস। সেজন্য তোর বাবা রাগ করে আছে। তুই সামনে আসলে সব রাগ হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে।

--তুমি একটু বুঝিয়ে বলো আব্বুকে, আব্বু যেন আমার ওপরে রাগ না করে থাকে। রাইমা বেগম আর মেহেভীন দীর্ঘ সময় নিয়ে কথা বলল। বহুদিন পরে মেয়ের সাথে কথা বলে রাইমা বেগমের বুকটা প্রশান্তিতে ভরে গেল। কালকে তার মেয়ে আসুক। প্রাপ্তির বাবাকে ডেকে প্রাপ্তির সব কুকীর্তি কথা জানাবে। মেহেভীন রুপাকে ডেকে বাসায় যেতে বলল। কয়টা দিন মেয়েটা বাসায় গিয়ে বিশ্রাম নিক। সে রাতেই চলে যাবে। সে একটু মুক্ত পাখির ন্যায় চারদিকে উড়ে বেড়াতে চায়। তাই নিজের গাড়ি থাকা সত্বেও বাসের টিকিট কেটেছে সে। রাত বারোটায় গাড়ি। বাসায় যেতে যেতে প্রভাতের আলো ফুটে যাবে। বাসায় তালা লাগিয়ে এক ঘন্টা আগেই প্রাপ্তি বেড়িয়ে পড়লো।

শহরের পরিবেশ টা গ্রামের বিপরীত চিত্র। গ্রামের পরিবেশ রাত গভীর হবার সাথে সাথে মরুভূমিতে পরিনত হয়। আর শহরের অলিতে-গলিতে রাতভর গাড়ি চলাচল করে। মানুষ নিজ নিজ কর্মে ব্যস্ত থাকে। সোডিয়ামের হলুদ আলোয় পুরো শহর আলোকিত হয়ে থাকে। মেহেভীন বাসে উঠে বসলো। জানালার কাছে বসতে তার ভিষণ ভালোলাগে। কিন্তু ভাগ্য বসত তার সীট জানালার কাছে পড়েনি। তবুও সে জানালার কাছে গিয়ে বসলো। তার পাশের জনের সাথে কথা বলে ম্যানেজ করে নিতে হবে। মেহেভীন রাস্তার মানুষজন দেখতে ব্যস্ত তখনই কেউ বলে উঠলো,

--কাউকে না জানিয়ে তার সীটে বসতে হয় না। এটা আপনি জানেন না ম্যাডাম।

--আপনি এখানে।

--ভয় পাবেন না আজকে কিছু চাইতে আসিনি।

--সে কথা বলেছি আমি৷ আপনি কোথায় যাচ্ছেন?

--আমাদের বাসায় একটু ঝামেলা হয়েছে। আব্বু ফোন করে বাসায় যেতে বলছে। আপনি আমার সীটে বসে আছেন। সরে আসুন। আমি সেখানে বসব।

--আপনি আমার সীটে বসুন। আমার জানালার কাছে বসতে ভালো লাগে।

--সব জায়গায় ক্ষমতার প্রয়োগ করবেন না ম্যাডাম।

--আশ্চর্য! আমি কখন ক্ষমতার প্রয়োগ দেখালাম। আচ্ছা বেশ উঠে যাচ্ছি। আপনি বসুন আপনার জায়গায়। মেহেভীনকে রেগে যেতে দেখে মুনতাসিম বুকে হাত রেখে বলল,

--সর্বনাশ! এভাবে কেউ রেগে যায়। আপনি রেগে যাবেন না ম্যাডাম। আমার ক্রোধের আগুনে আমি শেষ হবে যাব।

--আপনি আমার সাথে ফ্লাট করছেন।

--আপনি কি ফ্লাট করার জিনিস ম্যাডাম। আমার এত সাহস আছে। আপনার সাথে কথা বলতে পারছি। আমার পাশে বসতে পারব। এটাই আমার ভাগ্য। কথা গুলো বলেই মুনতাসিম কাঁধ থেকে ব্যাগ রেখে বসলো।

গাড়ি চলতে শুরু করেছে। মেহেভীনের ছোট ছোট কেশ গুলো মেহেভীনকে বিরক্ত করে যাচ্ছে। মেহেভীন গাড়ির জানালার নিচে চিবুক ঠেকিয়ে রাতের সুন্দর্য উপভোগ করছে। রাতের শীতল হাওয়া মেহেভীনের মুখশ্রী স্পর্শ করে যাচ্ছে। তা দেখে মুনতাসিমের ভিষণ ঈর্ষা হচ্ছে। ইশ সে যদি এভাবে তাকে ছুঁয়ে দেখতে পারত। সে বুঝতে পারছে না। মেয়েটা সামনে আসলেই তার সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। মেয়েটা সামনে আসলে তার ক্রোধ, অহংকার, আত্মসম্মান সবকিছু কোথায় জানি হারিয়ে যায়। আজ ভিষণ করে বাবার কথা মনে পড়ছে। ধরনীর বুকে চলার পর এমন একজন মানুষ আসবে। যার কাছে তোমার ক্রোধ, অহংকার, আত্মসম্মান কিছুই থাকবে না। সবকিছু লুটে নিয়ে যাবে মানুষটা। তোমাকে করে তুলবে বেহায়া। সবকিছুর পরেও তুমি মানুষটাকে চাইবে। মানুষটাকে দেখার জন্য পাগলামি করবে। মানুষটার কণ্ঠস্বর শোনার জন্য ছটফট করবে। মানুষটার শূন্যতা তোমার ভেতরটাকে অস্থিরতায় কাঁপিয়ে তুলবে। যাকে ছাড়া তোমার নিজেকে শূন্য মনে হবে। অর্থহীন মনে হবে। এমন একটা সময় আসবে তুমিও পরিবর্তন হবে। তুমিও কারো বাধ্য হয়ে যাবে। তবে কি বাবার কথা সত্যি হয়ে যাবে। কথা ভাবতেই ভেতর থেকে ক্রোধ নিয়ে আসার চেষ্টা করল মুনতাসিম। নাহ আজ তার ক্রোধ তার নিয়ন্ত্রণের বাহিরে কিছুতেই ধরা দিতে চাইছে না। ভেতর থেকে অদ্ভুত এক শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। অনুভূতিরা আনন্দ মেতে উঠেছে। মনের শহরে আন্দোলন শুরু হয়ে গিয়েছে। মনের অলিতে-গলিতে মিছিল করে বলছে। তোমাকে ভালোবাসার যুদ্ধে হারিয়ে দিব মুনতাসিম ফুয়াদ। তোমার ছন্নছাড়া জীবন গুছিয়ে দিব। কারো ভালোবাসার চাদের মুড়িয়ে দিব। সেদিন আর বেশি দেরি নেই। একা থাকার সব অহংকার মাটির সাথে মিশিয়ে দিব। মুনতাসিমের ভাবনার মাঝেই অনুভব করল। একটা মাথা তার কাঁধ দখল করে নিয়েছে। মুহুর্তের মাঝে মুনতাসিম নিজের কাঁধের দিকে দৃষ্টিপাত করল। এই তো সেই চেহারা যে চেহারা দেখে তার মনের দারুন সর্বনাশ হয়েছিল। কি আছে এই চেহারার মধ্যে যা তাকে ভেতর থেকে দুর্বল করে দিয়েছে। এতগুলো বছরে যা কেউ করতে পারলো না। তা এই মেয়েটা কয়েক দিনে করে দেখালো। মুনতাসিম অনুভব করল মেহেভীন তার কাঁধে মাথা রাখায় তার ভিষণ আনন্দ লাগছে। অদ্ভুত এক অনুভূতি শরীরে বয়ে যাচ্ছে। মুনতাসিম নড়াচড়া করল না চুপ করে বসে আছে। যেন মেহেভীনের নিদ্রা না ভেঙে যায়।

চারিদিকে প্রভাতের আলো ফুটে গিয়েছে। গাড়ি এসে নিজ গন্তব্যে থেমে গিয়েছে। মুনতাসিম সারারাত ঘুমোয়নি। সে ঘুমালে যদি মেহেভীনের ঘুম ভেঙে যায়। অদ্ভুত একটা টান তৈরী হয়ে গিয়েছে মেয়েটার প্রতি। মেহেভীন সজাগ হবার আগেই খুব সাবধানে মুনতাসিম তাড়াহুড়ো করে গাড়ি থেকে নেমে চলে গেল। আস্তে আস্তে সব যাত্রী নামতে শুরু করেছে। মেহেভীন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। একজন বৃদ্ধা মহিলা মেহেভীনকে সজাগ করে দিয়ে গেল। মেহেভীনের আঁখিযুগল মেলতেই আঁখি জোড়া বড় বড় হয়ে গেল। রজনী কিভাবে পার হয়ে গেল সে টেরই পাইনি। পাশে তাকিয়ে দেখলো মুনতাসিম নেই। আচমকা মেহেভীনের একটু মন খারাপ হলো। সে মন খারাপকে দূরে সরিয়ে দিয়ে বাস থেকে নেমে পড়লো। মনের মধ্যে ভালো লাগার শিহরণ বয়ে গেল। কতদিন পর নিজের জন্ম স্থানে আসলো। সবকিছু বদলে গিয়েছে। মেহেভীন হাঁটতে শুরু করল সামনেই তাঁদের বাসা পাঁচ মিনিটের রাস্তা। সে ভাবলো হেঁটে চলে যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। চারদিকে সবুজ ধানক্ষেত আর মাঝখানে পিচ ঢালাই করা রাস্তা। দেখলেই মনটা ফুরফুরে হয়ে যায়। মেহেভীন যত বাসার দিকে অগ্রসর হচ্ছে ততই পুরো শরীর কাঁপছে। ভেতরটা ভয়ে কাবু হয়ে আসছে। তার বাবা যদি তাকে ফিরিয়ে দেয়। তাহলে সে কি করবে? ভালোবাসার মানুষের অবহেলা সে সহ্য করতে পারবে না। এসব ভাবতে ভাবতেই বাসার কাছে চলে আসলো। দরজার কলিং বেলে চাপ দিল মেহেভীন। ভেতরে দারুন অস্থিরতা কাজ করছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে। তার বাবা যদি এসে দরজা খুলে দেয়। তখন সে কি করবে ভাবতেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসলো।

চলবে.....

10/10/2023

খোলা_জানালার_দক্ষিণে
#পর্ব_০৩
#লেখিকা

বৃষ্টি হয়ে চারিদিকে স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে আছে। গাছের মরা ডালপালা গুলো রাস্তায় পড়ে আছে। মেহেভীন নামাজ শেষ করে প্রতিদিন হাঁটতে বের হয়। আজকেও হাঁটতে বের হয়েছে। আজকের সকালটা একটু অন্য রকম কেমন স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে। মনটা কাল থেকে ভিষণ খারাপ। কেন জানি ভেতর থেকে শান্তি পাচ্ছে না সে। তখনই পেছনে থেকে কারো কণ্ঠস্বর কর্ণকুহরে এসে পৌঁছল,

--এত সকাল বেলা কোথায় যাচ্ছেন ম্যাডাম? মেহেভীন তাকিয়ে দেখলো কালকের ছেলেটা। সে ভদ্রতা বজায় রেখে বলল,

--হাঁটতে বের হয়েছি।

--আমি কি আপনার যোগদান করতে পারি?

--না।

--কেনো?

--আশ্চর্য! আমি আপনাকে চিনিনা জানি না। আমি কেনো আপনার সাথে হাঁটতে যাব। আপনার কি নিজের পা নেই। একা একা চলতে পারেন না৷ যে অন্যের সাথে আপনাকে হাঁটতে যেতে হবে। এমন গায়ে পড়া মানুষ আমার একদম পছন্দ না। আমার আশেপাশে যেন আপনাকে না দেখি। কথা গুলো বলেই মেহেভীন বিলম্ব করল না। দ্রুত পায়ে স্থান ত্যাগ করল। মুনতাসিম মেহেভীনের যাওয়ার দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে।

মেহেভীন বাসায় এসে দম নিয়ে বিছানায় বসল। কণ্ঠস্বর কুসুমের ন্যায় কোমল করে রুপাকে ডাকলো। রুপা এসে মেহেভীনের পাশে বসল। রুপা ভালো মতোই জানে মেহেভীন এখন তাকে কি করতে বলবে। তবুও রুপা প্রশ্ন করল,

--কিছু বলবেন আপা?

--তোকে এখন মায়ের সাথে কথা বলতে হবে। কালকে মনটা খারাপ থাকায় কল দেওয়া হয়নি।

--দিয়ে কি বলব আপা। আপনি আমাকে সবকিছু শিখিয়ে দেন। না হলে ভুলভাল কিছু বলে ফেলবো।

--আজকে বেশি কিছু বলতে হবে না। মায়ের ভালো মন্দ খবর নিবি। কথা গুলো বলেই রাইমা বেগমের নাম্বারে ফোন দিল। একবার ফোন বেজে কেটে গেল। দ্বিতীয় বার ফোন দিতেই ফোনটা রিসিভ হলো। একটা গম্ভীর কণ্ঠস্বর কথা বলে উঠলো। মানুষটার কথা কর্ণকুহরে আসতেই বুকের ভেতরে মোচড় দিয়ে উঠলো মেহেভীনের। বিষাদে ছেয়ে গেল মনটা চেয়েও মাথা উঁচু করে বলতে পারছে না। আব্বু আমি তোমাদের হতভাগা মেয়ে মেহেভীন। কথা বলার সাহস হয়ে উঠলো না। সে রুপাকে বলতে শিখিয়ে দিল। রুপা সালাম দিয়ে বলল,

--বাবা কেমন আছেন? মা কোথায় মায়ের ফোন আপনি তুললেন যে!

--এই মেয়ে তোমাকে কতবার নিষেধ করেছি। তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনীর ফোনে ফোন দিবে না। তোমার উদ্দেশ্য কি বলো তো? এই নিষ্ঠুর ধরণীর বুকে নিজের স্বার্থ ছাড়া কেউ এক কদম হাঁটে না। সেখানে তুমি একটা অপরিচিত মেয়ে হয়ে আমার অর্ধাঙ্গিনীর জন্য এত দরদ দেখাও। এটা আমি মোটেও ভালো নজরে নেই না। আমার অর্ধাঙ্গিনী নির্ঘাত ভালো মানুষ ধরনীর মার প্যাচ বুঝে না। সরল মনে তোমাকে বিশ্বাস করে কথা বলে। আজকের পর থেকে তাকে ফোন দিলে আমি অন্য ব্যবস্থা নিব।

--আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন? আমার মনে কোনো পাপ নেই। আমার আল্লাহ জানে আমি কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে মায়ের সাথে কথা বলি না। আমি মায়ের আদর, ভালোবাসা পাবার জন্য মায়ের সাথে কথা বলি। আজ যদি আমার নিজের মা থাকতো। তাহলে কি আমি আপনার অর্ধাঙ্গিনীর কাছে ফোন দিতাম বলেন। আমাকে একটা বার মায়ের সাথে কথা বলিয়ে দেন। আমি আর বিরক্ত করব না।

--তাকে দেওয়া যাবে না। কাল থেকে সে ভিষণ অসুস্থ। শুনেছ এবার রাখো আর কখনো ফোন দিবে না। কথা গুলো বলেই কল কেটে দিল। মায়ের অসুস্থতার কথা শুনে মেহেভীনের ভেতরটা অস্থির হয়ে উঠলো। যন্ত্রনায় কেমন ছটফট করতে লাগলো। মেহেভীনের মন খারাপ দেখে রুপারও মন খারাপ হয়ে গেল। সে মলিন কণ্ঠে বলল,

--দেখেছেন আপা আমি আপনাকে বলে ছিলাম না। আপনার চাচাতো বোন ভালো না। সে আপনার ভালো চায় না। আপনার মা অসুস্থ সে খবর আপনাকে জানায়নি কেন? রুপার কথায় মেহেভীন রুপার থেকে ফোনটা নিয়ে নিল। প্রাপ্তির নাম্বার বের করে ফোন দিল।

--হ্যাঁ মেহেভীন বল এত সকালে কি মনে করে ফোন দিলি?

--আপু আম্মু কেমন আছে?

--চাঁচি তো ভালোই আছে। সকালেও চাঁচির সাথে কথা হয়েছে।

--একটু আম্মুর কাছে নিয়ে গিয়ে ফোনটা দিবে।

--চাঁচি তোর সাথে কথা বলতে চায় না। তোর মুখ ও দেখতে চায় না।

--সে কথা আমি আম্মুর মুখে শুনতে চাই।

--তোর নাম শুনলেই চাঁচি রেগে যাবে।

--বেশ ভালো তো তুমি তাহলে ফোনটা লাইনে রাখো। আমি কলে আছি সে কথা আম্মুকে বলবে না। তুমি আম্মুর কাছে গিয়ে আমার কথা তুলো। আমি দেখতে চাই আম্মু কি বলে। মেহেভীনের কথায় প্রাপ্তি অনুভূতি শূন্য হয়ে পড়ে। মাথা কাজ করছে না। বুদ্ধিরা জোট বেঁধে পালিয়েছে। এখন সে মেহেভীনকে কি জবাব দিবে। প্রাপ্তির নিরবতা মেহেভীনকে ভাবাচ্ছে গভীর ভাবে ভাবাচ্ছে। প্রাপ্তি কি তার থেকে কিছু আড়াল করছে। নিজের ক্যারিয়ার গড়তে গিয়ে তবে কি সে পরিবারের থেকে দূরে সরে এসেছে। নিজের সাফল্য অর্জনের আশায় সে এতটাই ব্যস্ত পরিবারের দিকে তাকানোর সময় হয়নি। তার সুযোগই কি প্রাপ্তি নিতে চাইছে। মেহেভীনের ভাবনার মাঝেই প্রাপ্তি বলে উঠলো,

--আমি একটা জব পেয়েছি। তোকে জানানো হয়নি। আমি তো অফিসে আছি৷ এখন কিভাবে চাঁচির সাথে কথা বলতে যাব।

--তুমি আবার কবে চাকরি পেলে? সারাদিনই বাসায় বসে থাকো। এরমধ্যেই তোমার চাকরি হয়ে গেল!

--তুই আমাকে এভাবে পুলিশের মতো জেরা করছিস কেন? আমাকে তোর চোর মনে হয়। নিজের বোনকে বিশ্বাস করিস না।

--আম্মু যে অসুস্থ আমায় জানাওনি কেন? মিথ্যা কথা বললে কেন আমায়? তুমি আবার বিশ্বাসের কথা বলছ! এদিকে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে ব্যস্ত আমি। সেজন্য আমি নিজের পরিবারের দিকে তাকাইনি৷ আর তুমি সেই সুযোগটা নিলে আপু।

--মেহেভীন তুই আমাকে ভুল বুঝছিস। আমি তোকে জানাইনি তার একটা কারন আছে। চাঁচির শ্বাসকষ্ট আছে। সেটা তুই ভালো মতোই জানিস। চাঁচির অসুস্থতার কথা শুনলে তুই চিন্তা করবি। তাই তোকে জানাইনি। তেমন গুরুতর কিছু না। গুরুতর কিছু হলে সবার আগে আমি তোকেই জানাতাম।

--আচ্ছা আমি তোমাকে প্রতি মাসে টাকা পাঠাই। সে টাকা গুলো তুমি কি বলে আব্বু আম্মুর হাতে তুলে দাও।

--তুই তো বলেছিস। এই টাকা গুলো তুই দিস। এ কথা চাচা চাঁচি যেন না জানে। সেজন্য চাচা চাঁচিকে বলি আমি জব করে তাদের টাকা দেই।

--তারা তোমাকে কোনো প্রশ্ন করে না। এত গুলো টাকা তুমি কেন ওদের দাও। তোমার বাবা-মা কিছু বলে না। তোমাদের ও সংসার আছে।

--তোর যদি আমার কথা বিশ্বাস না হয়। তাহলে তুই এখানে এসে দেখে যা।

--সেটা তুমি বললেও যাব আর না বললেও যাব। আমি তোমাকে অনেক বেশি বিশ্বাস করি আপু। এমন কোনো কাজ করো না। যাতে তোমার প্রতি আমার সব ভালোবাসা ঘৃণায় রুপ নেয়৷

--চাঁচি অসুস্থ এখন তোর না আসাই ভালো। মেহেভীন নিঃশব্দে কল কেটে দেয়। মেহেভীনের মধ্যে সন্দেহের দানা বাঁধে। কাউকে বিশ্বাস করা ভালো। কিন্তু অন্ধ বিশ্বাস একদমই ভালো না৷ এই কথা গুলো এতদিন মাথায় আসেনি কেন আমার। সারাদিন বাহিরের শত্রু খুঁজতে গিয়ে, ঘরের শত্রু চিনতেই ভুল করলাম আমি। মেহেভীনের মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে পড়েছে। কোনো বুদ্ধিই তার মস্তিষ্কে এসে ধরা দিচ্ছে না। এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে না। সবকিছু ঠান্ডা মাথায় ভাবতে হবে।

অন্ধকার রুমের মধ্যে বসে আছে প্রাপ্তি। তার সামনে বসা আগন্তুক। প্রাপ্তির মুখশ্রীতে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। আগন্তুক প্রাপ্তিকে উদ্দেশ্য করে বলল,

--মেহেভীনের মনে তুমি নিজেই সন্দেহের বীজ রোপণ করে দিয়েছ। তাই চাইলেও মেহেভীনের মনে আগের স্থান নিতে পারবে না। কি দরকার ছিল মিথ্যা কথা বলার। তুমি কি জানতে না মেহেভীন তার কাজের মেয়েটার মাধ্যমে রোজ তার বাবা-মায়ের খবর নেয়।

--সে কথা কি আপনি আমাকে বলেছিলেন। আমি তো জানতাম না। মেহেভীন তার বাবা-মায়ের খোঁজ খবর নেয়। আমি ভেবেছিলাম বোকা মেয়েটা জীবনে কিছু করতে পারবে না। কে জানতো জীবনের সফলতার শীর্ষে পৌঁছে যাবে। আমি মনে করেছিলাম। বাসার বাহিরে হলে কিছু নরপশু মেহেভীনকে শেয়াল কুকুরের মতো ছিঁড়ে খাবে। ধরনীর বুক থেকে মুছে যাবে মেহেভীন নামক রমনীর ছোট্ট দেহটা। আমার সবকিছু যে ব্যর্থ হয়ে গেল। এখন আমি কি করব? সব দোষ আপনার আপনি যদি আমাকে একটু সর্তক করে দিতেন। তাহলে আজে এতবড় ধরা খেতাম। মেহেভীন এবার কাজের পাশাপাশি পরিবারের দিকে নজর রাখবে। আগে আমায় ভরসা করত। তাই পরিবারের দিকে সেভাবে নজর দিত না। আজ মিথ্যা বলার কারনে আমাকে আর বিশ্বাস করবে না। মেয়েটা ভিষণ চালাক আর ধুরন্ধর হয়ে গিয়েছে।

--মেহেভীন কিছু করার আগেই ফরিদ রহমানের দেহটা ছয় টু'ক'রো হয়ে যাবে। সেটা নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। তুমি মেহেভীনের বাবা-মায়ের কানে বি'ষ দিতে থাকো। তারা যেন মেহেভীনকে ঘৃণা করতে থাকে।

--ওর বাবা-মা এতটা মেয়ে ভক্ত মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সে কথা জেনেও তাদের মেয়েকে চাই।

--তাহলে আমি যেই ঔষধ টা দিয়েছি। সেটার ডোজ বাড়িয়ে দাও। মেহেভীন চাইলেও কিছু করতে পারবে না।

--আমি দেশে আসছি সেটা তোমার বাবা জানে?

--না আমি ছাড়া কেউ জানে না।

--বেশ ভালো কাউকে বলার দরকার নেই। তুমি এখানে থেকে চলে যাও। কেউ দেখে ফেললে সমস্যা হয়ে যাবে। প্রাপ্তি কোনো কথা না বলে আস্তে করে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।

মেহেভীন সকালে কাজের উদ্দেশ্য বের হয়ে গিয়েছে। কখন বাসায় ফিরে ঠিক নেই। সবকিছু কাজের ওপর নির্ভর করে। রুপা ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছে। এমন সময় দরজায় কলিং বেল বেজে উঠে। রুপা গিয়ে দরজা খুলে দেখতে পায় কয়েকজন কালো পোশাক পড়া লোক দাঁড়িয়ে আছে। রুপা কিছু বলার আগেই তারা রুপাকে সেন্সলেস করে ফেলে। তারা রুপাকে নিয়ে চলে যায়। রুপাকে নিয়ে চলে যাবার এক ঘন্টা মেহেভীন আসে। দরজা খোলা দেখে মেহেভীন অস্থির হয়ে বাসার মধ্যে আসে। একটা জমির দলিল সাইন কারনো নিয়ে একজন লোকের সাথে মেহেভীনের ভিষণ ঝামেলা চলছে। দু'বার বাসায় এসে হুমকি দিয়ে গিয়েছে। সমস্ত বাসা খুঁজেও রুপাকে দেখতে না পেয়ে মেহেভীনের ললাটে চিন্তার ভাজ পড়ল। সে চিন্তিত হয়ে দরজার কাছে আসলো। দরজার কাছে এসে মুনতাসিমকে দেখতে পেল। মুহুর্তের মধ্যে মেহেভীনের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। মেহেভীন কিছু বলার আগেই মুনতাসিম বলল,

--কিছু খুঁজছেন ম্যাডাম। মুনতাসিমের নম্র ব্যবহারে শান্ত হলো মেহেভীন। বিরক্ততে তার মুখশ্রী কুঁচকে এলো। সে বিরক্তি মাখা মুখশ্রী করে জবাব দিল,

--আমার কাজের মেয়েটাকে খুঁজে পাচ্ছি না।

--আমি তাকে ছাঁদে ঘুমোতে দেখেছি। মুনতাসিমের কথায় মেহেভীন নিজের ললাটে দু'টো চাপড় মারল। এই মেয়েটাকে নিয়ে সে অসহ্য হয়ে গিয়েছে। একদম ছন্নছাড়া যেখানে যায় গল্পের ঝুড়ি নিয়ে বসে। ছাঁদে কাপড় তুলতে গিয়ে নিশ্চয়ই কারো সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছিল। সেখানেই ঘুমিয়েছে। রুপার স্বভাব সম্পর্কে সবাই অবগত।

--আপনার বাসায় একটু হলুদের গুঁড়ো হবে? আসলে আমি রান্না করতে গিয়ে ময়লা ভেবে ফেলে দিয়েছি। কিনে নিয়ে আসলে দিয়ে যাব।

--আপনি রান্না করতে পারেন না। তাহলে রান্না করতে যান কেন? এতবড় ছেলে হয়ে হলুদ গুঁড়ো কোনটা চিনেন না। নাকি আমার সাথে আপনি ফ্লাট করছেন?

--এসব আপনি কি বলছেন ম্যাডাম। আপনি কত বড় মাপের মানুষ। আপনার সাথে ফ্লাট করার মতো দুঃসাহস আমার আছে। মেহেভীন কিছু বলে না হলুদের গুঁড়ো দিয়ে ছাঁদে চলে যায় রুপাকে আনতে। মুনতাসিম মেহেভীনের দিকে তাকিয়ে বুকের বা পাশে হাত দিয়ে বলল, এই মেয়েটা আমাকে একদম শেষ করে ফেলবে।

চলবে.....

10/10/2023

#রাত

#পর্ব : ১
আমাদের গ্রামের পাশ ঘেষেই নদী। দাদা প্রতিদিন রাতে সেখানে যেতেন মাছ ধরতে। আমার বয়স তখন অল্প। একদিন আমি বায়না করে বসলাম আমিও মাছ ধরতে যাব দাদার সাথে। কিন্তু দাদা কোনোভাবেই নিতে রাজি হলেন না। এদিকে আমি জেদ চেপেই বসলাম যাবই যাব। তবুও দাদা রাজি হলেন না। তাই সেদিন চিন্তা করলাম দাদার পিছু পিছু লুকিয়ে যাব মাছ ধরতে। দাদা পাশের রুমেই থাকেন। আমি অধীর আগ্রহে না ঘুমিয়ে ঘাপটি মেরে শুয়ে আছি দাদা কখন ঘরের কপাট খুলবে। দাদা কপাট খুললেই আমিও আস্তে করে বের হয়ে যাব। মা ততক্ষণে বিভোর ঘুমে আচ্ছন্ন। বাবা থাকেন শহরে। মা আর আমিই এ ঘরে থাকি। তাই মাকে ফাঁকি দিয়ে বের হতে আমার তেমন বেগ পোহাতে হবে না, জানি।

হঠাৎ কপাট খুলার আওয়াজ পেলাম। আমি এবার নড়েচড়ে বসলাম। বুঝতে পারলাম দাদা মাছ ধরতে নদীতে যাবেন। তাই ধীর পায়ে আমিও ঘরের কপাট আস্তে করে খোলে লক্ষ্য করলাম দাদা বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন। আমিও এবার দাদার পিছু নিলাম। কিন্তু অবাক হলাম এটা দেখে দাদা নদীর দিকে এগিয়ে না গিয়ে, জঙ্গলের দিকে এগুচ্ছে। বাড়ির পাশের জঙ্গলটাকে বলে মইরা জঙ্গল। কেন এ নামকরণ করা হয়েছে জানা নেই। তবে এ জঙ্গলের কূল কিনারা নেই। কোথায় তার সমাপ্তি সেটা যেন কেউ বলতে নারাজ।

ভাবতে লাগলাম দাদা কী ভুল করে জঙ্গলের দিকে এগুচ্ছেন? আমি কি তাকে পিছু ডাকব? পরক্ষণেই আবার ভাবতে লাগলাম দাদাকে ডাকলে যদি দাদা রেগে গিয়ে আমাকে বাড়িতে দিয়ে আসেন। তাহলে তো আমি মাছ ধরা দেখতে পারব না। বয়স অল্প তাই বুঝও ছিল অল্প। কিছুটা ভয়ও লাগছিল। উত্তরের ঠান্ডা বাতাস ধেয়ে আসছিল। শরীরে সে বাতাস লেগে মাঝে মাঝে কাটা দিয়ে উঠছে৷ গরমের দিনেও শীতের আবেশ পাচ্ছিলাম।

এদিকে দাদা জঙ্গলের ভেতর দিকে যেতে লাগল। আমার কিছুটা ভয়ও লাগছিল। তবুও দাদা আছেন এ সাহসে জঙ্গলের দিকে এগুতে লাগলাম। দাদা জঙ্গলের একটু সামনে এগুতেই লক্ষ্য করলাম একটা কালো কুচকুচে নাম না জানা পাখি এসে অদ্ভুত সুরে ডাকছে। কচিমনে এটা একবার জানান দিচ্ছিল হয়তো এটা দাদা না। কোনো শয়তানের পাল্লায় পড়েছি। তাই মুখস্ত করা যত ধরণের দোয়া দূরুদ আছে পড়তে লাগলাম।

একটা পর্যায়ে বুঝতে পারলাম। এটা কোনো শয়তান না, এটা আমার দাদায়। কিন্তু দাদার এমন অদ্ভূত আচরণ দেখে আমি বিস্মিত হতে লাগলাম। দাদা আরও গভীর জঙ্গলের দিকে এগুতে লাগলেন। আমিও লুকিয়ে দাদার পিছু নিলাম। দাদা কিছুদূর এগুতেই থেমে গেলেন। আমিও দূরে দাঁড়িয়ে দাদাকে অবলোকন করতে লাগলাম। দাদা যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন সেখানে যেন পূর্ণিমা এসে ঢলে পড়েছে। জঙ্গলের এ জায়গাটা বেশ ফাঁকা হওয়ায় চাঁদের আলো এমন ত্যাজী হয়ে পড়েছে যে, দিনের মতো আলোকিত লাগছে। কথা সেটা নয় কথা হচ্ছে দাদার অদ্ভুত কিছু আচরণে আমি ভয় পেতে লাগলাম। আমি লক্ষ্য করলাম সেখানে শুধু, দাদা দাঁড়িয়ে না, আমার মৃ*ত ফুফুও দাঁড়িয়ে আছে।

আমার বুকের ভেতর কাঁপতে লাগল। তবে ঘটনা দেখার উদ্বেগ ও জাগল। দাদা ফুফুর দিকে তাকিয়ে কাঁদতে লাগল। তবে ফুফু হাসছিলেন। গলা ফাটিয়ে হাসছিলেন। ফুফুর হাসিতে যেন আমার মাথা ধরে গেল।

ফুফু মারা গেছেন আত্মঘাতিতে। কেউ বলে সুইসাইড করেছে কেউ বলে মেরে ফেলেছে। দু পক্ষের দু ধরণের কথায় ফুফুর শরীরটাকে ময়না তদন্তের নাম করে ক্ষত বিক্ষত করা হয়েছিল। আর তারপর প্রমাণ হয় ফুফু আ*ত্মহ*ত্যা করেন। এরপর ফুফুকে মাটি দেওয়া হয়। মাটি দেওয়ার পর প্রায় সপ্তাহ খানেক ফুফুর কবর থেকে কান্নার আওয়াজ আসত। সপ্তাহখানেক এমন হওয়ার পর হুজুর এসে দোয়া পড়ে যান। এরপর সব ঠিক হয়ে যায়।

আজকে হঠাৎ ফুফুকে এভাবে দেখব ভাবতে পারিনি। ভাবতে ভাবতেই দাদার দিকে তাকাতেই আমার কলিজা নড়ে গেল।

Address

Phulpur, Mymensingh Dhaka
Phulpur
2250

Telephone

+8801757728989

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Ifrat Shariyar Shuvo posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Ifrat Shariyar Shuvo:

Videos

Share

Category