26/05/2021
ব্যাম -১৭ পরিবারের আমি একজন সদস্য। আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে শুরুতেই। প্রচন্ড শীতের মধ্যে, প্রথম বারের মত, পরিবার - আত্মীয় স্বজনদের বিদায় জানিয়ে রওনা করলাম এক অজানা অচেনা সাম্রাজ্যে। ঢাকা সদরঘাট থেকে জীবনের প্রথমবার লঞ্চে উঠার অভিজ্ঞতা হয়।লঞ্চ যে এই বিরাট আকারে হয়, আমার তার কোনো ধারণাই ছিলোনা। আমি যখন আমার ক্ষুদ্র শরীরে বিরাট আকারের লঞ্চ গুলোর সামনে দাঁড়াই তখন মনে হচ্ছিল আমি রাতের বেলায় রংধনু দেখছি। রংধনুর বাহারী রঙের মতোই লঞ্চ গুলো বাহারি সাজে সজ্জিত। কোনটা দিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্য রওনা করবো ভেবে পাচ্ছিনা। তারপর দেখলাম মানামী লঞ্চটা বেশি সুন্দর। তারপর উঠেগেলাম, আর ৬০০ টাকা দিয়ে চালকের পাশে একটা ঘুমানোর জায়গা দিলো। আমি সবকিছু রেখে হেটে হেটে সবকিছু দেখলাম। আমার সোবার জায়গা থেকে নদীর পানি দেখা যায়, আমার বেশ লাগছিল কিন্তু ভয়ে ঘুম আসেনা এই বুঝি ডুবলো। মনটাও কিছুটা খারাপ ছিলো, সাথে কেউ নেই, একা একা, এতদূর যাচ্ছি, মাথাগোঁজার মতো কোনো মানুষ নেই, এতো চিন্তা ভাবনার ভিরে ছিলো কিছু স্বপ্ন, নিজ ক্যাম্পাসে ঘুরেবেড়ানোর প্রবল ইচ্ছে।
এসব ভাবতে ভাবতেই রাত পেরোলো। ঘুমহীন চোখে, চাপা রোমাঞ্চ নিয়ে সেদিন ক্যাম্পাসে পা রেখেছিলাম।
অবশেষে ক্যাম্পাসে পৌঁছলাম। নিজের বুকের ধুকপুকানি টের পেয়ে নিজেরই হাসি পাচ্ছিল। হাত-পা ঘামছিল। ভাবছিলাম, স্বপ্ন পূরণের দিনটা বোধ হয় এমনই হয়।
এর আগেও ক্যাম্পাসে এসেছিলাম পরিক্ষা দেওয়ার জন্য। কিন্তু ছাত্র হিসেবে যাওয়ার অনুভূতিটা একেবারে অন্য রকম। গিয়ে শের-ই বাংলা হল ২তে উঠলাম, সেখানে নিজের একটা বিছানা জানলার পাশে পেয়ে গেলেম। আমার জানলা দিয়ে গাছের ছায়া বাতাস,সামনে সুন্দর ফুলের বাগান দেখা যায়।এই দৃশ্য দেখে আমার মন খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেছিলো।
আমি তারপর নতুন বিছানা, জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখতে শুরু করলাম নিজের মতন করে, আর কিছুক্ষণ পর পর একজন বন্ধু আসছে, নতুন পরিচয়ে আপন রুপে।যে বন্ধু দের বাবা মা আত্মীয়স্বজন দূর দুরান্ত থেকে এসেছে তাকে নিয়ে, এসে যখন রেখে চলে যাচ্ছে কি হৃদয়বিদারক দৃশ্য! তাদের চোখে পানির যেন এক বৃষ্টি বিলাস। রাতের মধ্যে সবাই চলে এলো, সবার সাথে পরিচিত হয়ে, কিছুক্ষণ গল্প করে পরের দিনের অরিয়েন্টেশনের জন্য সবাই ঘুমিয়ে পড়লাম। আবার পরের দিন ও ছিলো হলের অরিয়েন্টেশন। অরিয়েন্টেশনে বড় ভাই-আপুরা ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় এবং আমাদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা ও উপদেশমূলক কথা বলেন। বিভাগের প্রতিটি শিক্ষকের অনুপ্রেরণামুলক কথা আমার ভিতর আলোড়ন সৃষ্টি করে। অপরিচিত ক্যাম্পাস, অপরিচিত সহপাঠী, অপরিচিত শিক্ষক, এ যেন এক নতুন জগত। ধীরে ধীরে পরিচিত হলাম প্রত্যেক সহপাঠীর সাথে। সব মিলেয়ে মনে হচ্ছিল একটি পরিবার ছেড়ে আরেকটি পরিবারে।
প্রতিদিনি যেনো আনন্দের মেলা বসে, একেক জন একেক রকমের আনন্দ বিক্রি করে, এই আনন্দের হাট বসে গণরুমে। কিছুদিন পর পিঠা উৎসব হলো আবার সিনিয়র ভাইদের রেগ ডের অনুষ্ঠান হলো। সে দিন দেখলাম বড় ভাই বোনদের গায়ে রঙ মেখে আনন্দ-উল্লাস, হৈ-হুল্লোড় করতে। সাথে বাদ্যযন্ত্র বাজছিল, আর একজন আরেক জনের সাদা টি শার্টে মার্কার দিয়ে কিছু লিখে দিচ্ছিল। কেউ লিখছিল আবেগের কথা, কেউবা দুষ্টুমির ছলে কোনো কথা, কেউবা বন্ধুর জীবনে ভালো কিছু কামনা করে কিছু কথা। আমরাও সেই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণেন সুযোগ পেয়ছিলাম। কিন্তু আনন্দের সময় নাকি তাড়াতাড়ি কেটে যায়।
দেশ পরে গেলো মহামারী করোনার ভয়াবহ থাবায়। সব কিছু বন্ধ দিয় দিলো, এখন অব্দি বন্ধ, জানিনা করোনা মহামারীর যুদ্ধে জয়ী হয়ে আবার ক্যাম্পাসে ফিরতে পারবো কিনা। সবার জন্য অনেক দোয়া রইলো যেনো সবাই সুস্থ পৃথিবীতে, সুস্থ থেকে ক্যাম্পাসে ফিরতে পারি।
আর আমি যদি আবারও ফিরতে পারি তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজার হাজার স্মৃতি তৈরি করবো, কারণ এই স্মৃতি গুলো আমাকে একসময় বাঁচিয়ে রাখবে।
!সাব্বির আহমেদ সৌরভ।
বিএএম -১৭