12/08/2023
_*কলির প্রকোপে
*১ | আত্মীয় স্বজন কমেছে ।*
*২ | বন্ধু বান্ধব সম্বন্ধ কমেছে ।*
*৩ | রাতের ঘুম কমেছে ।*
*৪ | কমেছে মাথায় চুল ।*
*৫ | মানুষে মানুষে ভালোবাসা কমেছে ।*
*৬ | কমেছে বিশ্বাস ।*
*৭ | অঙ্গের বস্ত্র কম হয়েছে ।*
*৮ | কম হয়েছে লজ্জা ।*
*৯ | মর্যাদা কমেছে ।*
*১০ | শিশুদের সংখ্যা কমেছে ।*
*১১ | ঘরের খাবার খাওয়া কমেছে ।*
*১২ | বই পড়ার অভ্যাস কমেছে ।*
*১৩ | ভাই ভাইয়ের ভালোবাসা কমেছে ।*
*১৪ | হাঁটাচলার অভ্যাস কমেছে ।*
*১৫ | খাবারের পরিমাণ কমেছে ।*
*১৬ | ঘি মাখন খাওয়া কমেছে ।*
*১৭ | তামা -- পেতলের বাসনপত্র কমেছে ।*
*১৮ | সুখ শান্তি কমেছে ।*
*১৯ | অতিথি অভ্যাগত কমেছে ।*
*২০ | সত্যের পরিমাপ কমেছে ।*
*২১ | কমেছে ভদ্রতা সভ্যতা ।*
*২২ | কমেছে মনের মিল ।*
*২৩ | সমর্পণের ভাব কমেছে ।*
*২৪ | কমেছে শ্রদ্ধা ।*
*২৫ | সবচেয়ে বেশি কমেছে ধৈর্য্য ।*
খুবই দুঃখজনক, কিন্তু আজকের এই পরিস্থিতির জন্য আপনার সন্তানদের কোন দোষ নেই । ওদের দোষ দেবেন না ।
আপনিই তো ওদের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়িয়েছেন । ইংরিজি বলতে শিখিয়েছেন । বার্থ ডে, ম্যারেজ এ্যানিভার্সারির মতো জীবনের শুভ প্রসঙ্গগুলোকে বিদেশী কালচারকেই শ্রেষ্ঠ মেনে পালন করতে শিখিয়েছেন । বাবা মা-কে 'মাম্মি - ড্যাডি' বলতে শিখিয়েছেন ।
আজ ইংরিজি শিক্ষায় শিক্ষিত সেই ছোটরাই বড় হয়ে আপনাকে সময় দেয়না, আপনার চিন্তা ভাবনার মূল্য বোঝেনা । আপনি কিছুই বোঝেন না ভেবে আপনাকে তুচ্ছ - তাচ্ছিল্য করে, মুখে - মুখে তর্ক করে, আর আপনি আজ নিজেরই সন্তানদের মধ্যে কোন সংস্কার দেখতে পাননা..._
এই অবস্থায় সন্তানদের কোন দোষ না দিয়ে, বরং নিভৃত নিরালায় গিয়ে প্রাণ খুলে কাঁদুন ।
কারণ, ছেলে মেয়ের এক বছরের বয়স থেকেই ভারতীয় সনাতনী সংস্কারে প্রদীপ জ্বেলে পায়েস খাইয়ে মুখ মিষ্টি করার পরিবর্তে কেক কেটে, ফুঁ দিয়ে মোমবাতি নিভাতে শিখিয়েছেন......._
শেখাননি, যজ্ঞের অগ্নিতে কিভাবে ঈশ্বরের প্রতি পরম শ্রদ্ধায় "ইদম্ আগ্নেয় স্বাহা...ইদং ন মম"..মন্ত্রে আহুতি দেয়া হয়...
মন্দির, যাগ-যজ্ঞ, পূজার্চনা, আদর - সৎকারের শিক্ষা দেওয়ার বদলে, আপনার সন্তানের শুধুই চোস্ত ইংরিজি ভাষায় ফটর - ফটর করাকে গর্বের বিষয় ভেবে আনন্দে আত্মহারা হয়েছেন......গর্বের সাথে পরিচিত জনকে বলেছেন, আমার সন্তান তো বাংলা বলতেই পারেনা.....
যেদিন আপনার সন্তান প্রথমবার ঘরের বাইরে পা রাখলো, প্রনাম - আশীর্বাদের বদলে তাকে 'বাই বাই' বলতে শিখিয়েছেন সেই আপনিই.....
স্কুল কলেজের পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় পরিবারের ইষ্টদেব বা গুরুজনদের পা ছুঁয়ে প্রনাম করার বদলে 'বেস্ট অফ লাক' বলে পরীক্ষা কেন্দ্র পর্যন্ত ছেড়ে আসতেন আপনিই....._
পরীক্ষায় সফল হলে পরিবারে সকলের সাথে বসে আনন্দ করার বদলে, 'জাইকা' - 'আর্সেলান' বা অন্য কোন হোটেলে পার্টি করার প্রথাকে প্রত্যেকবার উৎসাহ দেওয়ার কাজটাও করেছেন আপনিই ।
ছেলেমেয়ের বিয়ের পর তাদের 'কুল দেবতা বা দেব দর্শনে' পাঠানোর বদলে তাদের হনিমুনে, বিদেশের ট্যুরে যাওয়ার উৎসাহদাতা আপনি....
এমনই বহু ইংলিশ কালচার আমাদের অজান্তেই আমাদের মনে ঘর করে নিয়েছে, নিজেদের অজান্তেই আমরা ঐ সব ফরেন কায়দা কানুন স্বীকার করে নিয়েছি.....
এখন ছোটরা লজ্জা পায়, তাদের আত্মসম্মানে বাধে বড়দের পা ছুঁতে.....
কার ভুল, কার ? ইংরিজি ইন্টারন্যাশনাল ভাষা, না শিখলে চলে ? যদিও সত্যিই এমন কোন বাধ্য - বাধকতা নেই । ঠিক আছে, ইংরিজি শিখুক তারা, শুধু ভাষাটা শেখার আছে । নিজের ঐতিহ্যশালী পরম্পরা ত্যাগ করে, ঐ বিদেশী সংস্কৃতি, বিদেশী আদব কায়দা শেখার সত্যিই কোন প্রয়োজন আছে কি ?
গত করোনা মহামারীর সময় দেখা গেছে বহু তথাকথিত ধণাঢ্য বাঙ্গালী, যাঁরা সন্তানদের পড়িয়ে লিখিয়ে দিগ্গ্বজ বানিয়ে বিদেশের মাটিতে 'মানুষ' হতে পাঠিয়েছিলেন, তারা বিদেশী চাকরি, সুখ - স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়ে সেই মাটি ছেড়ে দেশে ফিরতে পারেনি । তারা এতটাই বড় 'মানুষ' হয়ে গেছে, যে দুর্বিপাকের দিনে একা - একা মরতে বসা বাবা মা-কে সঙ্গ দিয়ে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি । তাঁদের এখানকার প্রপার্টি ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ, রামকৃষ্ণ মিশন প্রভৃতি ধর্মীয় / আধ্যাত্মিক সংগঠনের হাতে তুলে দিয়ে মরে বেঁচেছেন ।
আপনিও ভাবুন, বিচার করুন, নিজের পরিবারের অভিজ্ঞতার সাথে নিজেও মিলিয়ে দেখুন । আপনার পরিবার, আপনার সন্তান, সে তো এই দেশেরই নাগরিক, সেই দেশের সমাজ সংস্কৃতির সাথে তাকে ওতপ্রোত হয়ে বাড়তে উৎসাহ দেবেন, না বিদেশী বাসন মাজতে শেখাবেন, সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত ।