03/01/2024
৪৩ তম বিসিএস বিসিএস পুলিশ ( মেধাক্রম- ৪০ ) সুপারিশপ্রাপ্ত জনাব জহিরুল ইসলাম শেয়ার করেছেন তাঁর স্বপ্নপূরণের গল্প
❤️কৃষকের ছেলের স্বপ্নজয়ের গল্প ❤️
আজকে প্রথমবারের মতো ফেসবুকে কিছু লিখতে যাচ্ছি। আজকে আপনাদের বলবো এক স্বপ্নবাজ তরুণের গল্প। আমার জীবনের জার্নিটা এতো সহজ ছিলনা। অনেক চড়াই-উতরাই এর ভিতর দিয়ে আল্লাহর অশেষ রহমতে আজকের এই পর্যায়ে এসেছি।
আমি নেত্রকোনার এক কৃষকের ছেলে। স্কুল জীবনের প্রথম অর্জন ছিল পঞ্চম আর অষ্টম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়া। সন্তান হিসাবে বাবা-মার মুখে হাসি ফুটিয়ে ছিলাম প্রথম বারের মতো। সবার দোয়ায় A+ নিয়ে মাধ্যমিক পাশ করি। আর জীবনের বড় ডিসিশনটা নিয়ে ছিলাম তখনি। অনেক ইচ্ছা আর বাসনা ছিল গ্রাম ছেড়ে শহরের ভালো কোনো কলেজে ভর্তি হব। ময়মনসিংহের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজে ভর্তি হই। এইবারও আল্লাহর রহমতে A+ পেয়ে যাই। জীবন যুদ্ধটাকে কোন দিকে নিয়ে যাব সেটাই চিন্তা করছিলাম। অনেক জল্পনা- কল্পনা শেষে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার আশায় উদ্ভাসে ভর্তি হয়ে গেলাম। এডমিশন লাইফে মাত্র ৩ জায়গায় (বুয়েট, কুয়েট ও ঢাবি) আবেদন করি। যখন বুয়েটের পরীক্ষায় আমার রোল ছিলনা, তখন অনেক মন খারাপ হয়েছিল। কিন্তু মনে আত্মবিশ্বাস ঠিকই ছিল। তাই আল্লাহ আমাকে হতাশ করেনি। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার স্বপ্নটাকে বাস্তবায়ন করতে ভর্তি হয়ে যাই কুয়েটে।
শুরু হল ভার্সিটি লাইফ। প্রথম দিকে পরিবার থেকে আর্থিক সাপোর্ট দিলেও আমার পরিবারের জন্য সেটা কষ্টদায়ক হয়ে যাচ্ছিল। নিজের ইনকাম করার পথ তখন টিউশন। সাল টা ঠিক ২০১৪। শুরু হল আমার টিউশন লাইফ। পাশাপাশি ফ্রিলান্সিংও শুরু করি। দৈনিক ১০-১২ ঘণ্টা পরিশ্রম করতে হতো। একটা সময় পরিবারকেও সাপোর্ট করা শুরু করে দেই। দেখতে দেখতে ভার্সিটি লাইফ ও শেষ হয়ে গেল। ২০১৮ সাল। পকেটে মাত্র ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে খুলনা থেকে ময়মনসিংহে আসি। এখন চাকরিতে যোগদান করার পালা। অনেক ফ্যাক্টরি/কম্পানিতে সিভি ড্রপ করি। বাট কোনো রেসপন্স পাইনি। এইভাবে কেটে যায় ৪/৫ মাস। হাত সম্পূর্ণ খালি। এক রাশ হতাশা কাজ করছিল। আর তখনি আল্লাহ আমার দিকে মুখ তুলে তাকিয়েছিলেন। পরিচিত একজনের মাধ্যমে ময়মনসিংহ শহরেই প্রথম একটা টিউশনি পাই। আমি তখন অনেক খুশি হয়েছিলাম। একই মাসে আরও একটা ব্যাচ পেয়ে যাই। আলহামদুলিল্লাহ্ আর পিছনে তাকাতে হইনি আমাকে। ভার্সিটি শেষ করে সবাই যেখানে জব প্রিপারেশন নিচ্ছিলো, আমি সেখানে টিউশন নিয়ে ব্যস্ত। টিউশনিটা নেশার মতো হয়ে গিয়েছিল। দিনে ১৩/১৪ টা ব্যাচ পড়াতাম। স্টুডেন্ট ছিল SSC আর HSC। ময়মনসিংহ শহরে আমার প্রায় ৫০০ স্টুডেন্ট ছিল। ১ বছর টিউশন করে ২০১৯ সালে আল্লাহর রহমতে নিজের বাড়িতে একটা ঘর করি, বিয়ের কাজ সম্পন্ন করি আর শখের বাইক কিনি। আলহামদুলিল্লাহ্।
২০২০ সালে করোনা সময়ে সব লকডাউন হয়ে গেল। আমার সকল ব্যাচ অফ করে দেই। ৪/৫ টা ব্যাচ শুধু অনলাইনে চালু রাখি। সারাদিন ঘরে বসে যখন বোরিং সময় পার করছিলাম, ঠিক তখনি বিসিএস দেওয়ার ইচ্ছা জাগলো। করোনার সময়ে শুরু করি জব প্রিপারেশন। বিসিএস টার্গেট নিয়ে পড়া শুরু করি। কোনো কোচিং এ ভর্তি না হয়ে সম্পূর্ণ টাইম নিজেই নিজের মতো গুছিয়ে নিয়ে পড়েছি। রিটেনের জন্য এক্সাম ব্যাচে ভর্তি হলেও পরীক্ষায় এটেন্ড করতে পারিনি। ৪১ ও ৪৩ তম বিসিএস এর প্রিলি, রিটেন দেওয়ার পর ২০২২ সালে জনতা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার জব হয়ে যায়। চাকরিরত অবস্থায় দুই বিসিএস-এর ভাইভা দেই। ৪১ তম বিসিএস- এর রিটেনের জন্য খুব ভালো প্রিপারেশন নিতে পারিনি। তারপরও আল্লাহর অশেষ কৃপায় ৪১ তম বিসিএস -এ ফ্যামেলি প্ল্যানিং ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হই। তার কয়েক মাস পরেই ৪৩ তমতে পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হই। আমার অনেক পরিশ্রমের ফল ছিল ৪৩ তম।
আমার এই দীর্ঘ যাত্রায় যারা পাশে ছিলেন, তাদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। এখনও অনেক দূর যাওয়া বাকি। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।