Voice of MOLLA BBC Network.

Voice  of MOLLA BBC Network. Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from Voice of MOLLA BBC Network., Media, Mizmizi, siddirgonj, Narayanganj.

27/09/2022
11/09/2022
11/06/2022
29/05/2022
11/05/2022

ইমাম হাসান (আঃ)'র প্রতি মাওলা হযরত আলী (আ.)'র কিছু অমূল্য উপদেশ

আমিরুল মু'মিনিন আলী (আ.)' পুত্র হাসান (আ.)-কে লিখেছেন: প্রিয় পুত্র আমার! আমি তোমাকে আল্লাহকে ভয় করে চলার এবং তাঁকে স্মরণের মাধ্যমে তোমার অন্তরকে গড়ে তোলার এবং তাঁর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরার সুপারিশ করছি। তোমার এবং আল্লাহর মাঝে যে দৃঢ় বন্ধন রয়েছে তার থেকে দৃঢ়তর কোন বন্ধন নেই। আর তাই তা গ্রহণ ও সংরক্ষণ করবে।

তোমার অন্তরকে উপদেশ দিয়ে জীবিত করো এবং সংযমের মাধ্যমে তাকে দমন করো। আর নিশ্চিত বিশ্বাসের মাধ্যমে তাকে শক্তিশালী করো। আর মৃত্যুকে স্মরণে রেখে তাকে অপদস্থ করো, জগতের বিনাশের প্রতি তার স্বীকারোক্তি আদায় করো। আর পার্থিব বিপর্যয়গুলো দেখে তাকে চক্ষুষ্মান করে তোল এবং দুনিয়ার আক্রমণ ও তার দিন ও রাত্রির প্রকাশ্য আবর্তন (আনন্দ-বেদনার প্রভাব) থেকে তাকে দূরে রাখ। পূর্বগামীদের ইতিকথাকে তার কাছে তুলে ধর। অতীতের লোকদের ওপর কি নেমে এসেছে সেগুলো তাকে স্মরণ করিয়ে দাও। তাদের জনপদগুলো ও ধ্বংসস্তুপের মাঝে ঘুরে বেড়াও এবং দেখ তারা কি কি করেছে ও কোথায় তাদের অধঃপতন ঘটেছে এবং কোন্ কোন্ জিনিস থেকে দূরে সরে গেছে। নিশ্চয়ই তুমি তাদেরকে দেখতে পাবে যে তারা প্রিয় বন্ধুদের কাছ থেকে দূরে সরে গেছে এবং একটি অচেনা ঘরের তথা কবরের বাসিন্দা হয়েছে। তাদের ঘর-বাড়ির মাঝে চিৎকার করে বল,

হে শূন্য ঘর-বাড়ি! কোথায় তোমাদের বাসিন্দারা? এরপর তাদের কবরগুলোর ওপর দাঁড়াও এবং বল : হে পচা দেহগুলো এবং ছিন্নভিন্ন অঙ্গগুলো! তোমরা যে ঘরের বাসিন্দা হয়েছ সেটাকে কেমন পেয়েছ?

আলী (আ.)' পুত্র হাসান (আ.)-কে আরো লিখেছেন: প্রিয় পুত্র আমার! অচিরেই তুমিও তাদের তথা কবরবাসীদের একজন হবে। নিজের শয়নস্থলের কাজকে সমাধান করো এবং তোমার পরকালকে তোমার দুনিয়ার মূল্যে বিক্রি করো না। যা কিছু জান না তা বল না। যা তোমার কর্তব্য নয় তা বলতে যেও না। আর যদি কোনো পথে পথভ্রষ্ট হওয়ার ভয় করো, তা হলে তা থেকে বিরত থাক। ভালো কাজের নির্দেশ দাও যাতে তা পালনকারী হও। নিজের জিহ্বা ও হাত দিয়ে মন্দ কাজে বাধা দান করো। যারা সে কাজ করে তাদের থেকে যথাসম্ভব পৃথক হয়ে যাও। আর আল্লাহর রাস্তায় যথাচিতভাবে জিহাদ করো। আর আল্লাহ্ প্রসঙ্গে কোনো তিরস্কারকারীর তিরস্কার যেন তোমার ওপর প্রভাব না ফেলে। নিজেকে তুমি সত্যের ঘূর্ণাবর্তে নিক্ষেপ করো তা যেখানেই থাকুক না কেনো। ধর্মের গভীর জ্ঞান অর্জন করো। নিজেকে ধৈর্যধারণে অভ্যস্ত করো। আর তোমার প্রত্যেক কাজে আল্লাহর আশ্রয়ী হও, তা হলে নিজেকে মজবুত আশ্রয়স্থলে এবং অজেয় দুর্গের মধ্যে রাখতে পারবে।

আর একাগ্র নিষ্ঠার সঙ্গে সবকিছুকে তোমার প্রতিপালকের কাছ থেকে চাও, সব দান-অনুদান তাঁরই হাতে। আল্লাহর কাছ থেকে মঙ্গল প্রার্থনা করো। জেনে রেখ, যে জ্ঞান উপকার দেয় না তা ভালো নয়। আর কেউ জ্ঞান থেকে উপকার পায় না যতক্ষণ তা প্রচার ও বিশ্বাস করা হয় না।

আলী (আ.)' পুত্র হাসান (আ.)-কে আরো লিখেছেন: নিশ্চয়ই যুবকদের অন্তর হলো চাষ না করা উর্বর জমির মত। তার ওপর যা কিছু ছিটানো হয় তা গ্রহণ করে। তাই আমি তোমার অন্তরকে প্রশিক্ষণে ব্রতী হয়েছি তা কঠিন হয়ে ওঠার আগে এবং তোমার চিন্তাশক্তি অন্য কিছুর মাধ্যমে পূর্ণ হওয়ার আগেই যাতে বেশি বেশি চেষ্টা-সাধনায় লিপ্ত হও।

প্রিয় পুত্র আমার! আমার উপদেশ থেকে সবচেয়ে পছন্দনীয় যে জিনিসটি তুমি গ্রহণ করবে সেটা হলো খোদাভীতি এবং যা তিনি তোমার ওপর আবশ্যক করেছেন তার ওপর অটল থাকবে আর সেই পথকে আঁকড়ে ধরবে তোমার পিতৃপুরুষরা এবং তোমার ধর্মের অনুসারী যোগ্যতম পুরুষগণ যে পথে চলেছেন। কেননা, তারা নিজেদের কল্যাণ চিন্তাকে ত্যাগ করেন নি যেমনভাবে তুমি নিজের জন্য কল্যাণ চিন্তা করো এবং তাঁরাও চিন্তায় রত হয়েছেন যেমনভাবে তুমি চিন্তারত হও। আর এ ব্যাপারে তাঁদের চিন্তার ফলাফল হয়েছে এটা যে, যা কিছু জেনেছেন সেটাকে কাজে লাগাবেন। আর যা কিছু তাদের কর্তব্য নয়, তা থেকে বিরত থাকবেন।

আলী (আ.)' পুত্র হাসান (আ.)-কে আরো লিখেছেন: আর সত্য পথ বা মত অনুসন্ধানের চিন্তার ক্ষেত্রে তোমার উপাস্যের সাহায্য প্রার্থনা করো এবং তাঁর তৌফিকের মুখাপেক্ষী হও। আর যে কোনো কলুষতা যা ভুল-ত্রুটির কারণ হয় এবং তোমাকে পথভ্রষ্ট করে তা তোমার থেকে দূর করো। যে ভুল ও বিভ্রান্ত পথে চলে এবং সত্যের সাথে মিথ্যার মিশ্রণ করে সে দীনের কামনাকারী ব্যক্তি নয় ।

প্রিয় পুত্র আমার! জেনে রাখ যে, মৃত্যুর মালিকই হলেন জীবনের মালিক এবং স্রষ্টাই হলেন মৃত্যুদাতা; আর বিনাশকারীই হলেন প্রত্যাবর্তনকারী। আর রোগদাতাই হলেন উপশমকারী। আশ্রয় গ্রহণ করো তাঁর যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং রুজি দান করেছেন এবং তোমাকে সুআকৃতি দান করেছেন। তোমার অন্তরকে তাঁরই পানে নীত করবে এবং তাঁরই প্রতি অনুরক্ত হবে এবং তাঁকেই ভয় করে চলবে।

আলী (আ.)' পুত্র হাসান (আ.)-কে আরো লিখেছেন:

জেনে রাখ (প্রিয় পুত্র আমার!), আল্লাহর পক্ষ থেকে কেউই তেমন সংবাদ দেয়নি যেমনটা সংবাদ দিয়েছেন আমাদের নবী (সা.)। তাঁকে মুক্তির পথের দিশারী ও নেতা হিসাবে গ্রহণ করো। জেনে রাখ, সত্যিই যদি তোমার প্রতিপালকের কোনো অংশীদার থাকত, তা হলে তার প্রেরিত-পুরুষরাও তোমার কাছে আসতো এবং তুমি তার রাজত্ব ও কর্তৃত্বের নিদর্শনগুলোকে প্রত্যক্ষ করতে এবং তার গুণ-বৈশিষ্ট্য ও কার্যকলাপকে জানতে পারতে। কিন্তু আল্লাহই হলেন একমাত্র মাবুদ যেমনভাবে তিনি নিজেকে বর্ণনা করেছেন। কেউই তাঁর এ মর্যাদার বিরোধিতা করতে পারে না এবং তাঁর বিরুদ্ধে কোনো যুক্তি প্রমাণও দাঁড় করাতে সক্ষম হবে না।

আলী (আ.)' পুত্র হাসান (আ.)-কে আরো লিখেছেন: যখন তুমি এ সারসত্যকে জানবে তখন ঐ রূপ করবে যেমনটা তোমার মতো ব্যক্তির জন্য সাজে; তুমি হলে হীন বল এবং তোমার মর্যাদা তুচ্ছ, তাঁর প্রতি তোমার মুখাপেক্ষিতা অনেক বেশী। আর তাই তোমার মত ব্যক্তির উচিত তাঁরই আনুগত্য করা এবং তাঁকেই ভয় করে চলা এবং তাঁর ক্রোধ থেকে ভীত সন্ত্রস্ত থাকা। কেননা, তিনি ভালো ছাড়া তোমাকে কোনো নির্দেশ দেন না আর মন্দ ছাড়া কোন কিছু থেকে বিরত রাখেন না ।

আলী (আ.)' পুত্র হাসান (আ.)-কে লিখেছেন: নিশ্চয়ই দুনিয়ার দৃষ্টান্ত হলো একদল মুসাফিরের মত যারা একটি কঠিন ও দুর্ভিক্ষপীড়িত মঞ্জিলে আক্রান্ত; সেখান থেকে তারা একটি প্রাচুর্যময় দেশে যেতে উদ্যত। তাই তরা পথের কষ্ট, বন্ধুদের বিরহসহ সফরের মধ্যে খাদ্যাভাব ও ঘুমের কষ্ট বরণ করতে প্রস্তুত যাতে সুপরিসর আবাসনে ও নিজ ঘরে পৌঁছে যায়। কাজেই এরা কোনো কষ্টকেই অনুভব করে না এবং এর পেছনে ব্যয় করাকে লোকসান মনে করে না। তাদের কাছে তাদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের কাছে যাওয়ার চেয়ে আনন্দের বিষয় কিছুই নেই। যারা দুনিয়ার মাধ্যমে প্রতারিত তাদের দৃষ্টান্ত হলো ঐ লোকদের মতো যারা নেয়ামতভরা প্রাচুর্যময় মঞ্জিল থেকে কষ্ট ও দুর্ভিক্ষপীড়িত মঞ্জিলে যেতে চায়। এখন তারা যেখানে আছে, তাদের কাছে তা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার এবং সেখান থেকে অনত্র যাওয়ার ও রওনা হওয়ার চেয়ে খারাপ ও দুঃখজনক কিছু নেই।



আলী (আ.)' পুত্র হাসান (আ.)-কে আরো লিখেছেন: নিজেকে কখনও পণ্ডিত মনে করবে না এবং যদি কিছু তোমার সামনে পড়ে তুমি সেটাকে চিনতে পারো, তা হলে এ নিয়ে গর্ব অনুভব করবে না। কারণ, জ্ঞানী হলো সেই ব্যক্তি যে বুঝতে পারে যে, যা কিছু সে জানে সেগুলো তার অজানা বিষয়ের বিপরীতে খুবই নগণ্য। ফলে নিজেকে সে অজ্ঞ মনে করে এবং নিজের চেষ্টায় যা কিছু সে বুঝতে পারে তার মাধ্যমে জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য সচেষ্ট থাকে ও তা থেকে উপকৃত হয়। সে জ্ঞানীদের জন্য বিনয়ী ও মনোযোগী থাকে। তাদের সামনে নীরব থাকে এবং ভুল-ত্রুটি থেকে দূরে থাকে ও লজ্জাশীল হয়। যদি এমন কিছুর মুখোমুখি হয় যা বুঝতে পারে না, তা হলে সেটাকে অস্বীকার করে না। কেননা, সে নিজ অজ্ঞতার ব্যাপারে সচেতন।

আলী (আ.)' পুত্র হাসান (আ.)-কে আরো লিখেছেন: নিশ্চয়ই অজ্ঞ হলো সেই ব্যক্তি যে নিজেকে তার অজানা বিষয়েও জ্ঞানী বলে মনে করে এবং নিজ মতামতকেই যথেষ্ট মনে করে। এমন মানুষ সব সময় জ্ঞানীদের থেকে দূরে থাকে ও তাদেরকে তুচ্ছ ভাবে এবং তার বিরোধীদেরকে ভ্রান্ত বলে মনে করে। আর যা কিছু সে বুঝতে পারে নি সেটাকে পথভ্রষ্টতা বলে মনে করে। যখনই তার সামনে যে বিষয়টি সে বুঝতে পারে নি সেটা তুলে ধরা হয় অমনি সে তা অস্বীকার করে এবং সেটাকে মিথ্যা বলে ভাবে। নিজের অজ্ঞতা থেকে বলে- আমি এটা বুঝি না ও বিশ্বাস করি না এবং মনে করি যে, তার অস্তিত্ব নেই। এটা তার নিজের ওপর আস্থা ও নিজের অজ্ঞতার সম্পর্কে অসচেতনতার কারণেই ঘটে। যা কিছু সে বিশ্বাস করেছে তার থেকে পৃথক হবে না যা সে ভুল করেছে। এ কারণে যা কিছু সে জানতে পারে নি তার থেকে উপকৃত হয় না এবং সত্যকে অস্বীকার করে ও অজ্ঞতার মধ্যে দিশেহারা থাকে। ফলে সে জ্ঞান অর্জন করতে অস্বীকৃতি জানায় ও অহংকার দেখায়।

আলী (আ.)' পুত্র হাসান (আ.)-কে আরো লিখেছেন: আমার উপদেশকে বোঝো এবং নিজেকে তোমার নিজের ও অন্যদের মাঝে দাঁড়িপাল্লা হিসাবে দাঁড় করাও এবং অন্যের জন্য সেটাই চাও যা নিজের জন্য চাও। অন্যের জন্য তা কামনা করো না যা নিজের জন্য কামনা না করো। অত্যাচার করো না যেমনভাবে তুমিও চাও না অত্যাচারিত হতে এবং সদাচার করো যেমনভাবে কামনা করো তোমার প্রতিও সদাচার করা হোক। নিজের থেকে সেগুলোকে মন্দ মনে করো যেগুলো অন্যদের জন্য মন্দ মনে করে থাক।

তিনি আরো লিখেছেন: মানুষের জন্য সেটাই পছন্দ করো যা তোমার নিজের জন্য পছন্দ করে থাক। যা জান না তা বলতে যেও না। এমনকি যা কিছু জান সেগুলোও বলতে যেও না। সে কথা বলতে যেও না যা তুমি চাও না যে, তোমার সম্পর্কে বলা হোক। জেনে রাখ যে, আত্মকেন্দ্রিকতা হলো সঠিক বুঝের পরিপন্থী এবং বিবেকগুলোর জন্য ব্যাধিস্বরূপ। যখনই লক্ষ্যে পৌঁছবে, তোমার প্রতিপালকের জন্য অশেষ বিনয়ী হবে।

আলী (আ.)' পুত্র হাসান (আ.)-কে আরো লিখেছেন: জেনে রাখ, তোমার সামনে রয়েছে কঠিন ও দূরের এবং ভয়সঙ্কুল বন্ধুর পথ। সত্য কথা হলো তোমার জন্য সঠিক দূরদৃষ্টি পোষণ, পরিমাণমতো পাথেয় গ্রহণ এবং হালকা বোঝা গ্রহণ ছাড়া কোনো গতি নেই। এমন বোঝা তোমার কাঁধে নিও না যা পৌঁছানোর ক্ষমতা তোমার নেই। যখনই কোনো অভাবীকে দেখতে পাবে যে, তোমার পাথেয়কে গ্রহণ করবে তোমার প্রয়োজনের সময়ে তা ফিরিয়ে দেবে তা হলে সে সুযোগকে ছেড় না।

এটাকে গনীমত গণ্য করবে যে, তোমার সামর্থ্যের সময় তোমার থেকে কেউ ধার নেবে। তা পরিশোধের সময়কালকে তোমার অভাবের সময় নির্ধারণ করো।

জেনে রাখ সামনেই রয়েছে মোড়। অগত্যা সেখান থেকে হয় বেহেশত না হয় দোযখে যাবে। যার বোঝা হালকা সে সেখানে ভারী বোঝাওয়ালার চেয়ে আনন্দিত থাকবে।

তার মধ্যে নামার আগেই নিজেকে সামলাও। জেনে রাখ, যার হাতে দুনিয়া ও পরকালের ভাণ্ডার রয়েছে তিনি অনুমতি দিয়েছেন তাঁর কাছে প্রার্থনা করতে তিনি নিশ্চয়তা দিয়েছেন তাতে সাড়া দানের।

আলী (আ.)' পুত্র হাসান (আ.)-কে আরো লিখেছেন: আল্লাহ তোমাকে নির্দেশ দিয়েছেন তাঁর কাছে আবেদন করতে যাতে তিনি তোমাকে দান করেন। তিনি দয়ালু দাতা। তিনি পর্দার আড়ালে অন্তরীণ নন এবং তোমাকে নিরূপায় করেন নি যে, তুমি তাঁর দরবারে কোনো মধ্যস্থতা খুঁজবে। খারাপ কাজ করলেও তিনি তোমার তওবার পথ বন্ধ করেন না; তোমাকে তিরস্কার করেন না এবং তোমায় শাস্তি দিতে তড়িঘড়ি করেন না। যখন লাঞ্ছনার কবলে পড় তখন তোমাকে লাঞ্ছিত করেন না। তোমায় জরিমানা করেন না এবং তোমাকে অনুগ্রহ থেকে নিরাশ করেন না। তওবার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি করেন না। পাপ বর্জনকে উত্তম বলে গণ্য করেছেন। তিনি তোমার পাপকে কেবল একটি ও তোমার ভালো কাজকে দশটি গণনা করেছেন।

আলী (আ.)' পুত্র হাসান (আ.)-কে লিখেছেন: আল্লাহ তোমার জন্য তওবার এবং পুনরায় শুরু করার দরজা খুলে দিয়েছেন। যখনই চাও তিনি তোমার মিনতি ও অনুনয়-বিনয়কে শোনেন। তোমার অভাবকে তাঁর কাছে পেশ করো এবং নিজের থেকে তাঁকে অবগত করো, তোমার দুঃখ-কষ্ট তাঁকে জানাও। তোমার প্রত্যেক কাজে তাঁর সাহায্য চাও। মানুষের থেকে যেসব বিষয় তোমার কাছে গোপন রয়েছে তা তাঁর কাছে বল। এরপর তিনি তাঁর ভাণ্ডারের চাবি তোমার হাতে সোপর্দ করেছেন। তোমার আবেদনে পীড়াপীড়ি করো যাতে অনুগ্রহের দরজা তোমার সামনে খুলে যায়। কারণ, তিনি তোমাকে আবেদন করার অনুমতি দিয়েছেন। তুমি যখনই চাও দোয়ার মাধ্যমে তাঁর মহাভাণ্ডারের দরজাগুলোকে তোমার সামনে খুলতে অনড় থাক, যদি তোমার উত্তর দিতে দেরি করেন, তা হলে নিরাশ হয়ো না।

আলী (আ.)' পুত্র হাসান (আ.)-কে আরো লিখেছেন: আল্লাহর দান হলো আবেদনের অনুপাতে। তিনি হয়তো তোমার উত্তর দানে দেরি করেন যাতে তুমি তোমার আবেদনকে দীর্ঘায়িত করো ও এর ফলে তিনি তোমাকে বেশি দান করেন। আবার হয়তো তুমি এমন কিছুর আবেদন করেছ যা তিনি তোমাকে না দিয়ে তার চেয়ে উত্তম কিছু দান করবেন। আবার হয়তো বা তুমি এমন কিছুর জন্য আবেদন কর যার মধ্যে তোমার ধর্মের ধ্বংস রয়েছে। তাই তোমার আবেদন হতে হবে সেই জিনিসের যা তোমার জন্য উপকারী। সেই জিনিস যার সৌন্দর্য তোমার জন্য অবশিষ্ট থাকবে ও তার ক্ষতি তোমার থেকে দূর হয়ে যাবে। অর্থ বা টাকা-পয়সা তোমার জন্য থাকবে না, তুমি ও তার জন্য থাকবে না। নিশ্চয়ই অচিরেই তোমার পরিণামকে দেখতে পাবে ভালো হোক বা মন্দ হোক। অথবা দয়াল ক্ষমাশীল ক্ষমা করেন।

আলী (আ.)' পুত্র হাসান (আ.)-কে আরো লিখেছেন: জেনে রাখ, তুমি পরকালের জন্য সৃষ্ট হয়েছ, দুনিয়ার জন্য সৃষ্ট হওনি এবং ধবংসের জন্য সৃষ্ট হয়েছ, অবশিষ্ট থাকার জন্য সৃষ্ট হওনি এবং মৃত্যুর জন্য সৃষ্ট হয়েছ, বেঁচে থাকার জন্য সৃষ্ট হওনি। তুমি ক্ষণিকের জন্য অবতরণ করেছ কয়েকদিনের বাড়িতে, তুমি আসলে পরকালের পথিক। নিশ্চয়ই মৃত্যু তোমাকে ধাওয়া করছে। এমন মৃত্যু যার থেকে পালানোর কোনো উপায় নেই। অনিবার্যভাবে সে একদিন তোমাকে ধরে ফেলবে। কাজেই তার থেকে সতর্ক থাক যেন পাপরত অবস্থায় তোমাকে পাকড়াও না করে, এমন পাপ যার সম্পর্কে তুমি মনে মনে বলতে তার থেকে তওবা কর, মৃত্যু তোমার এবং তওবার মাঝে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ানোর আগেই। তওবার আগেই মৃত্যু মানে তোমার ধ্বংস। বেশি বেশি মৃত্যুকে স্মরণ করো, স্মরণ করো তার আকস্মিক আগমণকে এবং মৃত্যুর পর তুমি যার মুখোমুখি হবে। মৃত্যুকে তোমার সামনে রাখ যাতে তুমি সব সময় ও যে কোনো সময় তার আকস্মিক আগমনের ব্যাপারেও সতর্ক থাক। এমন না হয় যে, সহসাই তা তোমাকে ছিনিয়ে নেয়।

আলী (আ.)' পুত্র হাসান (আ.)-কে আরো লিখেছেন: বেশি বেশি পরকালকে স্মরণ করো এবং (স্মরণ করো) তার মধ্যে যে নেয়ামত ও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে তাকে। কারণ, এই স্মরণ তোমাকে দুনিয়ার ব্যাপারে লোভমুক্ত করবে এবং তাকে তোমার চোখে তুচ্ছ করবে। যদিও আল্লাহ তোমাকে দুনিয়ার তুচ্ছতার বিষয়টি জানিয়েছেন, সে নিজেও নিজের পরিচয় দিয়েছে এবং তার মন্দগুলোকে ফাঁস করে দিয়েছে। এমন না হয় যে, দুনিয়াদাররা যার ওপর নির্ভর করে এবং যা নিয়ে পরস্পরে বিবাদে লিপ্ত হয় তুমি তারই ধোঁকার কবলে পড়বে। নিশ্চয়ই দুনিয়াদাররা হলো ঘেউ ঘেউ করা কুকুর ও দংশনকারী হিংস্র পশু। একটি আরেকটির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং শক্তিশালীরা দুর্বলদেরকে বড়রা ছোটদেরকে খেয়ে ফেলে। দুনিয়া তার বন্ধুদেরকে সুপথ থেকে বিচ্যুত করেছে এবং অন্ধত্বের পথে নিয়েছে ও সঠিক পথ থেকে তাদের দৃষ্টিকে অবরুদ্ধ রেখেছে। ফলে তারা তার (দুনিয়ার) বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে পড়েছে এবং তাঁর নৈরাজ্যের মধ্যে ডুবে আছে। তারা তাকে নিজের প্রতিপালক হিসেবে গ্রহণ করেছে। ফলে সে তাদের সাথে খেলেছে তারাও তার সাথে খেলেছে এবং এর পরিণামকে ভুলে গেছে।

আলী (আ.)' পুত্র হাসান (আ.)-কে আরো লিখেছেন: প্রিয় পুত্র আমার! এমন না হয় যে, দুনিয়ার অসংখ্য কালিমা তোমাকে অসুন্দর করে দেয়। দুনিয়াবাদীরা হলো একদল বেঁধে রাখা পশু ও আরেকদল ছেড়ে দেয়া। এদের সবারই বিবেকবুদ্ধি লোপ পেয়েছে। এরা পথহীন ঠিকানাবিহীন খোলা-প্রান্তরে হেঁটে চলেছে। উদ্বিগ্ন-দিশাহারা রোগাক্রান্ত অবস্থায় শক্ত-কঠিন প্রান্তহীন মাঠে চরে বেড়াচ্ছে। তাদের যত্ন নেয়ার কোনো রাখাল নেই। জেনে রাখ আল্লাহ্ দুনিয়ার ধ্বংস পরকালের সমৃদ্ধি ছাড়া কিছুই চান না।

আলী (আ.)' পুত্র হাসান (আ.)-কে আরো লিখেছেন: আল্লাহ্ দুনিয়ার যেসব বিষয়ে অনাসক্তি চেয়েছেন সেগুলোর প্রতি অনাসক্ত থাক এবং নিজেকে তা থেকে বিরত রাখ। যদি তার ব্যাপারে তুমি আমার উপদেশকে গ্রহণ না করো, তা হলে নিশ্চিত জেনে রাখ কখনোই তোমার আশা পূরণ হবে না এবং তোমার মৃত্যুকে এড়াতে পারবে না। তুমি তাদেরই পথে রয়েছ যারা তোমার আগে ছিল। দুনিয়ার কামনায় ধীর-স্থির হও। তা অর্জনে সংযমী হও। কেননা, কতো কামনা রয়েছে যা পুঁজি হারানোর কারণ হয়। প্রত্যেক কামনাকারীই সফল হয় না। প্রত্যেক ধীরপন্থী অভাবগ্রস্ত হয় না। নিজেকে সব নিকৃষ্টতা থেকে রক্ষা করো যদিও তা তোমাকে তোমার কাঙ্ক্ষিত বস্তুতে পৌঁছে দেয়। কারণ, যা কিছুই নিজের সত্তা থেকে দান করবে তার কোনো বিনিময় নেই। অন্যের দাস হয়ো না যখন আল্লাহ্ তোমাকে স্বাধীন করেছেন। ঐ ভালোর মধ্যে কি ভালো রয়েছে যা মন্দের মাধ্যমে অর্জিত হয়? ঐ স্বস্তির মধ্যে (কি কল্যাণ রয়েছে) যা কষ্ট ছাড়া অর্জিত হয় না?

আলী (আ.) পুত্র হাসান (আ.)-কে আরো লিখেছেন: এমন না হয় যে, কামনার বাহনগুলো তোমাকে তাড়িয়ে বেড়ায় এবং ধ্বংসের প্রান্তসীমায় নিয়ে যায়। যদি পার তোমার এবং আল্লাহর মাঝে কোনো নেয়ামতদানকারীকে না রাখতে, তা হলে সেটাই করবে। কেননা, এ ক্ষেত্রে তুমি নিশ্চিতভাবে তোমার অংশ পাবে এবং কখনই তা থেকে বঞ্চিত হবে না (নতুবা সে তোমার অংশকে নিয়ে যাবে এবং তোমার থেকে উপকার আদায় করবে)। আল্লাহর থেকে তুমি সামান্য লাভ করলেও তা তাঁর সৃষ্টির থেকে বিপুল পরিমাণে লাভ করা থেকেও অনেক বেশি। যদিও সবই তাঁর থেকে। (যদিও আল্লাহর জন্যই রয়েছে সর্বোচ্চ মর্যাদা) তদুপরি যদি তোমরা রাজা-বাদশাদের থেকে যা কিছু চাও তার সঙ্গে তাদের চেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তিদের কাছে যা চাও তার তুলনা কর তবে বুঝবে যে, রাজা-বাদশাহদের সামান্য দানও গৌরবের কারণ হয়, অথচ নিকৃষ্টদের প্রচুর দানও অপমানের কারণ হয়। তোমার কাজকর্মে মিতচারী হও, পরিণাম ভালো হবে। তোমার ধর্ম ও সম্ভ্রমকে কোনো মূল্যেই বিক্রয় করবে না। লোকসানকারী হলো সেই ব্যক্তি যে আল্লাহর থেকে প্রাপ্য বিষয়ে লোকসান করে। দুনিয়া থেকে সেটাই গ্রহণ করো যা আসে। ছেড়ে দাও সেটাকে যা চলে যায়। যদি এটা না করো, তা হলে তা কামনার ক্ষেত্রে ধীর-স্থির ও সংযমী হও।

আলী (আ.) পুত্র হাসান (আ.)-কে আরো লিখেছেন: খবরদার এমন কারো সাথে ওঠাবসা করো না যে তোমার ধর্মের ব্যাপারে বিপজ্জনক। শাসক থেকে দূরে থাকো। শয়তানের ধোঁকা থেকে এই ভেবে নিশ্চিন্ত থেকো না যে মনে মনে বলবে, যখন কোনো মন্দ দেখব কেবল তখনই বিরত হব। কারণ, এ পথেই তোমার পূর্ববর্তী মুসলমানরা ধ্বংস হয়েছে। অথচ তারা পরকালের প্রতি নিশ্চিত বিশ্বাস পোষণ করত। যদি তাদের কারো সঙ্গে দুনিয়ার বিনিময়ে পরকালকে বিকিয়ে দেবার কথা উত্থাপন করতে তা হলে তারা তা পছন্দ করত না। এরপর শয়তান ধোঁকার মাধ্যমে কল্পনার জাল বুনতো এবং তাদেরকে ধ্বংসের দুনিয়ার তুচ্ছ পণ্যের বিনিময়ে ধ্বংসের প্রান্তসীমায় টেনে নিয়ে যেত। এভাবে তাকে একটি মন্দ কাজ থেকে আরেকটি মন্দ কাজে ঠেলে দিত। ফলে তাকে আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হওয়ার পর্যায়ে এনে তাকে নিরাশ বানিয়ে ফেলত এবং তার জন্য ইসলাম ও এ সংক্রান্ত বিধি-বিধান লঙ্ঘনের পথকে মসৃণ করে দিত।

আলী (আ.) পুত্র হাসান (আ.)-কে আরো লিখেছেন: যদি তোমার মন দুনিয়ার সাথে বন্ধুত্ব ও শাসকের নৈকট্য পেতে এবং আমি যা কিছু থেকে তোমাকে বারণ করলাম সেই সঠিক পথ ছেড়ে ভিন্ন পথে চলতেই চায়, তা হলে তোমার জিহ্বাকে অবশ্যই সংযত রাখবে।

নীরব থাকা অনুতাপ থেকে মুক্তি দেয়। নীরব থেকে যে ক্ষতি হয় তা পূরণ করা কথা বলার কারণে যে ক্ষতি হয় তা পূরণ করার চেয়ে সহজ। কোনো পাত্রের মধ্যে যে জিনিস থাকে তা সুরক্ষা পায় পাত্রের মুখ শক্তভাবে এঁটে দেবার মাধ্যমে। অন্যের হাতে যা কিছু রয়েছে সেটা চাওয়ার চেয়ে তোমার হাতে যা কিছু রয়েছে সেটা রক্ষা করা আমার কাছে বেশি পছন্দনীয়। বিশ্বাসী ও নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো থেকে কিছু বর্ণনা কর না, তা হলে মিথ্যাবাদী বলে গণ্য হবে। মিথ্যাবাদিতা হলো লাঞ্ছনা। স্বল্প রুজি দিয়ে সুষ্ঠু পরিচালনা, অপচয়ের মাধ্যমে প্রাচুর্যের চেয়ে উত্তম। সুখ থেকে নিরাশ হওয়া মানুষের কাছে হাত পাতার চেয়ে শ্রেয়। পেশায় সততা ও ত্যাগ থাকা এমন পাপপূর্ণ আনন্দ-খুশির চেয়ে উত্তম।

আলী (আ.) পুত্র হাসান (আ.)-কে আরো লিখেছেন: মানুষকে তার গোপন কথা রক্ষায় অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে। অনেক লোক এমন কিছুতে চেষ্টাশীল যা তার জন্য ক্ষতি বয়ে আনবে। যে বেশি কথা বলে সে অযাচিত কথা বলে। যে চিন্তা করে সে বিচক্ষণতা লাভ করে। মানুষের জন্য সর্বোত্তম প্রাপ্তি হলো সৎ সঙ্গ। তাই সৎ ব্যক্তিদের সাথে ওঠাবসা করো যাতে তাদেরই দলের হও। অসৎদের থেকে দূরে থাক যাতে তাদের মত না হও। কু ধারণা তোমাকে যেন পেয়ে না বসে যা তোমার এবং কোনো বন্ধুর মাঝে মিল-মীমাংসার পথ রাখে না। যদিও কথায় বলে কুধারণা হলো সতর্কতা। হারাম কতই না মন্দ খাদ্য! দুর্বলের ওপর অত্যাচার হলো জঘন্যতম অত্যাচার। অশ্লীলতা হলো তার নিজের নামের মতোই নোংরা। অসঙ্গ কাজে ধৈর্যধারণ হলো মনোপীড়ার কারণ, যখন নমনীয়তা কঠোরতা বলে গণ্য হয়, তখন কঠোরতা অবলম্বনই নমনীয়তা। অনেক ক্ষেত্রে ঔষধই হলো ব্যথা ব্যথাই হলো ঔষধ এবং অনেক সময় এমন ব্যক্তি উপদেশ দেয় যার থেকে উপদেশ আশা করা যায় না যার কাছ থেকে উপদেশ চাওয়া হয়েছে সে হলো প্রতারক। আশার ওপর নির্ভর করো না কারণ তা হলো বোকার পুঁজি এবং দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ থেকে বাধাদানকারী। তোমার মনকে আদব ও শিষ্টাচার দিয়ে পরিশুদ্ধ করো যেমনভাবে আগুন কাঠকে পরিশুদ্ধ করে।

আলী (আ.) পুত্র হাসান (আ.)-কে আরো লিখেছেন: রাতের কাঠকুড়ানী এবং পথের ধুলিকণার মতো হয়ো না। নেয়ামতের অকৃতজ্ঞতা হল হীনতা, মূর্খদের সাথে ওঠাবসা অশুভকর। বুদ্ধিমত্তা হলো অভিজ্ঞতাকে সংরক্ষণ। সর্বোত্তম অভিজ্ঞতা হলো যা তোমাকে উপদেশ দেয় (অর্থাৎ যে অভিজ্ঞতা থেকে তুমি শিক্ষা গ্রহণ কর)। কোমল চরিত্রের হওয়া মহত্ত্বের পরিচায়ক। সুযোগকে সঠিকভাবে কাজে লাগাও দুঃখ আসার আগে।

দ্বিধা-দ্বন্দ্বহীন সিদ্ধান্ত গ্রহণ দূরদৃষ্টির লক্ষণ। আলস্য হলো বঞ্চনার কারণ। সব কামনাকারীই তা লাভ করে না। সব মুসাফিরই ফিরে আসে না। পাথেয়কে বিনষ্ট করা হলো ধ্বংসকামীতা। প্রত্যেক কাজের একটা পরিণতি রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সামান্যও প্রচুরের চেয়ে কল্যাণময় হয়। যা তোমার জন্য নির্ধারিত রয়েছে তা তোমার কাছে পৌঁছবেই।

আলী (আ.) পুত্র হাসান (আ.)-কে আরো লিখেছেন: যে সাহায্যকারী অপমান করে তার মধ্যে মঙ্গল নেই। কোনো কাজে ধোঁকা খেয়ো না ও উদ্বিগ্নতায় রাত যাপন করো না। যে প্রজ্ঞাবান হয় সে মহৎ হয়। যে বুঝতে চেষ্টা করে তার জ্ঞান বাড়ে। ভালো লোকদের সাথে সাক্ষাৎ অন্তরগুলোকে উজ্জীবিত করে তোলে।

সময়ের সাথে ততদিন মানিয়ে চলো যতদিন সে তোমার সাথে মানিয়ে চলে। এমন না হয় যে, জেদের পিঠে সওয়ার হয়ে বসবে। যদি কোনো পাপে লিপ্ত হও তা হলে শিগগিরই তওবা করে তা ধুয়ে ফেল।

আলী (আ.) পুত্র হাসান (আ.)'র কাছে আরো লিখেছেন: যে তোমার কাছে আমানত রেখেছে তার খেয়ানত করো না, এমনকি যদি সে তোমার খেয়ানতও করে থাকে। তার গোপন কথাকে ফাঁস করো না, যদিও সে তোমার গোপন কথাকে ফাঁস করে থাকে। বেশি পাওয়ার আশায় হাতের জিনিসকে বিপদের মুখে ফেল না। চেষ্টা করো, কেননা, যা তোমার জন্য বরাদ্দ রয়েছে তা তোমার কাছে আসবে। গুণ অর্জন করো, উত্তমরূপে দান করো। মানুষের জন্য সুন্দর কথা বল। (বাজনা)

আলী (আ.) পুত্র হাসান (আ.)-কে আরো বলেছেন: সত্যই একটি প্রজ্ঞাময় পরিপূর্ণ কথা হলো নিজের জন্য যা চাও মানুষের জন্যও তা-ই চাইবে নিজের জন্য যা অপছন্দ করো মানুষের জন্যও তা-ই অপছন্দ করবে। নিশ্চয় এমনটা কমই হয় যে, তুমি কারো ওপর তড়িঘড়ি করার অনুশোচনা থেকে মুক্ত থাক।

জেনে রাখ যে, অঙ্গীকার পালন এবং পরিবারের মর্যাদা ও সম্ভ্রম রক্ষা করা হলো মহত্ত্বের পরিচায়ক। পৃষ্ঠপ্রদর্শন হলো শত্রুতার লক্ষণ। বেশি আপত্তি উত্থাপন সংকীর্ণ চিন্তার লক্ষণ। কোন কোন সময় দয়া ও মমতার সাথে তোমার ভাইকে কিছু দেয়া থেকে বিরত থাকা, কটুমুখে তাকে কিছু দেয়ার চেয়ে উত্তম। আত্মীয়তার সম্পর্ক জোড়া লাগানো মহৎ কাজ। তুমি যদি নিজে থেকে সম্পর্কচ্ছেদ করো, তা হলে কে তোমার সাথে সম্পর্কে আশাবাদী হবে কিংবা আস্থা পোষণ করবে? মেলামেশা থেকে বিরত থাকা হলো সম্পর্কচ্ছেদের নামান্তর।

আলী (আ.) পুত্রকে আরো বলেছেন: যখন তোমার ভাই তোমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে তখন তুমি নিজেকে তার সাথে সম্পর্ক পুনস্থাপনে বাধ্য করো। যখন মুখ ফিরিয়ে নেয়, তখন দয়া ও মমতা প্রদর্শন এবং তার ভালো-মন্দ জিজ্ঞাসার মাধ্যমে, যখন রুঢ় আচরণ করে, তখন মিষ্ট ভাষার মাধ্যমে, যখন দূরে সরে যায় তখন তার কাছে গিয়ে, যখন কঠিন হয় তখন নরম হয়ে, যখন তোমার প্রতি কোনো অপরাধ করে তখন তাকে ক্ষমার মাধ্যমে সম্পর্ক পুনপ্রতিষ্ঠা কর; এক্ষেত্রে এতদূর এগুবে যে যেন তুমি তার গোলাম এবং সে যেন তোমার মনিব। এমন না হয় যে, এ সদাচরণকে অপাত্রে এবং অযোগ্যের জন্য করো।

আলী (আ.) পুত্র হাসান (আ.)-কে আরো বলেছেন: তোমার বন্ধুর শত্রুকে বন্ধু করো না যাতে তোমার বন্ধুর সাথে শত্রুতা না করো। ধোঁকাবাজি করো না, এটা নীচদের স্বভাব। সব ক্ষেত্রেই তোমার ভাইকে নিঃস্বার্থভাবে উপদেশ দিও। সব সময় তার সহায় হও এবং তার সাথে ঘুরো। তোমার ভাইয়ের শাস্তি চয়ো না। এমনকি যদি সে তোমার মুখে মাটিও ছোঁড়ে। তোমার শত্রুর সঙ্গে সদাচার করো, এটা তার ওপর তোমার জয়লাভে সহায়ক হবে। সদাচরণের মাধ্যমে জনগণের অনিষ্টতা থেকে নিজেকে রক্ষা করো।

ক্রোধের আগুনকে গিলে ফেল। কেননা, আমি পরিণতিতে এর চেয়ে মিষ্ট কোনো স্বাদ আস্বাদন করি নি এবং এর চেয়ে সুস্বাদু কিছু দেখি নি। তোমার ভাইকে নিছক সন্দেহের বশে মাটিতে নিক্ষেপ করো না। বিনা অভিযোগে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করো না।

আলী (আ.) পুত্রকে আরো বলেছেন: যে তোমার সঙ্গে কঠোর আচরণ করে, তুমি তার প্রতি দয়ালু হও, অচিরেই সেও তোমার প্রতি নরম হবে। এটা কতই না খারাপ ব্যাপার হয় সম্পর্ক স্থাপনের পর তা ছিন্ন করা, বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্ব স্থাপনের পর অপমান করা, ভালোবাসার পর শত্রুতা করা, যে ব্যক্তি আমানত রক্ষা করেছে তার খেয়ানত করা, যে ব্যক্তি তোমার প্রতি আশাবাদী তাকে নিরাশ করা যে ব্যক্তি তোমার আশ্রয়ে এসেছে তার সঙ্গে বিশ্বাস ভঙ্গ করা। যদি তোমার বন্ধুর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করাই তোমার ওপর চেপে বসে, তা হলে তোমার মনের মধ্যে মিলনের কিছু আশা অবশিষ্ট রেখে দাও। যাতে যদি কোনো দিন অনুতপ্ত হও, তা হলে যেন ফেরার পথ থাকে। কেউ যদি তোমার সম্পর্কে সুধারণা রাখে, তা হলে তার ধারণাকে সঠিক বলে প্রমাণ করো। বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়ে তোমার ভাইয়ের অধিকার নষ্ট করো না। তোমার কারণে তোমার পরিবার যেন সবচেয়ে দুর্ভাগা সৃষ্টিতে পরিণত না হয়।

আলী (আ.) পুত্রকে আরো বলেছেন: যে তোমার থেকে বিমুখ তার আসক্ত হয়ো না, যে তোমার আসক্ত তার থেকে বিমুখ হয়ো না, যদি সে তার উপযুক্ত হয়ে থাকে। যেন এমন না হয় যে, তোমার ভাইয়ের কাছে তোমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার সপক্ষেই বেশি শক্তিশালী দলিল থাকে। কিংবা তোমার সঙ্গে তার খারাপ আচরণ ও ক্ষতি করার ক্ষমতা (ও সম্ভাবনা) তোমার প্রতি ভালো আচরণ ও উপকার করার চেয়ে বেশি থাকে, কিংবা তোমার সাথে তার কার্পণ্য করার ক্ষমতা (ও সম্ভাবনা) তোমার সঙ্গে দাক্ষিণ্য প্রদর্শনের চেয়ে বেশী থাকে, কিংবা তার দোষ তোমার গুণের চেয়ে শক্তিশালী থাকে। জালিমদের অত্যাচার যেন তোমার জন্য অসহ্য ও কঠিন মনে না হয়, কারণ, তার চেষ্টা নিজের ক্ষতি ও তোমার উপকারে রূপ নেয়। যে তোমাকে খুশী করে তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার শোভন নয়। রুজি হলো দু’টি : একটিকে তুমি চাও আরেকটি তোমাকে চায়। এটা (দ্বিতীয়টি) হলো এমন যে, যদি তুমি তার কাছে নাও যাও সে তোমার কাছে আসে।

আলী (আ.) আরো বলেছেন: প্রিয় পুত্র আমার! সময় সবসময় বদলায়। কাজেই তার মতো হয়ো না (মানুষের প্রতি অবিচার ও অসদাচরণের কারণে) যার তিরস্কারকারী বেশি, অথচ মানুষের কাছে তার ক্ষমা প্রার্থনার নজির কম। অভাবের সময় বিনয় প্রকাশ ও সমৃদ্ধির সময়ে অপমান করা কতই না জঘন্য! দুনিয়া থেকে তোমার পাওনা শুধু ততটুকুই যা পরকালে কাজে আসবে। হক পথে খরচ করো, অন্যের কোষাধ্যক্ষ হয়ো না। যদি কোনো কিছু হারানোর জন্য আফসোস ও ক্রন্দন করো, তা হলে যা কিছু অর্জিত হয় নি তার জন্যও আফসোস ও ক্রন্দন করো। যা ছিল তা দিয়ে যা ছিল না তার ওপর প্রমাণ উপস্থাপন করো। কারণ, বিষয়াদি সবই এক ও অনুরূপ। মনিবের (নেয়ামতদাতা) প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়ো না। কারণ নেয়ামতকে অস্বীকার করা নিকৃষ্টতম কুফুরি কাজ।

আলী (আ.) আরো বলেছেন: ক্ষমা প্রার্থনাকে গ্রহণ করো। তাদের মধ্যে হয়ো না যারা উপদেশকে গ্রহণ করে না যদি না তাকে বাধ্য করা হয়। কারণ, বিবেকবানই শিষ্টাচার থেকে কল্যাণ বা শিক্ষা নেয়, জন্তু-জানোয়ার আঘাত ছাড়া সোজা হয় না। যে তোমার অধিকারকে মূল্যায়ন করে তুমিও তার অধিকারকে মূল্যায়ন করো, হোক সে ঊর্ধ্বতন বা উত্তম অথবা অধস্তন বা অধম।

আলী (আ.) পুত্র হাসান (আ.)-কে আরো বলেছেন: তোমার ওপর যে দুঃখই নেমে আসুক না কেনো ধৈর্যশীল সিদ্ধান্ত সুনিশ্চিত বিশ্বাস রেখে তা দূর করবে। যে ন্যায়পরায়ণতাকে এড়িয়ে চলে সে স্বেচ্ছাচারিতা করে। অল্প তুষ্টি মানুষের জন্য কতই না চমৎকার গুণ! মানুষের সঙ্গে থাকা নিকৃষ্টতম জিনিস হলো হিংসা। নিরাশ হওয়া দূষণীয় কাজ। কৃপণতা তিরস্কার আনে। বন্ধু হতে হবে উপযুক্ত। বন্ধু হলো সেই ব্যক্তি যে আড়ালে সঠিক কথা বলে। রিপু হলো অন্ধত্বের অংশীদার। দিশেহারা অবস্থায় বিচলিত না হওয়া একটি ভালো গুণ। নিশ্চিত বিশ্বাস কতই না দুঃখ নিবারক! মিথ্যার পরিণাম হলো তিরস্কার। সত্যের মধ্যে রয়েছে নিরাপত্তা মিথ্যার পরিণাম হলো শোচনীয় পরিণাম।

আলী (আ.) আরো বলেছেন: অনেক দূর বা দূরের মানুষ রয়েছে যা কাছের বা আত্মীয়ের চেয়েও আপন আবার অনেক নিকট (আত্মীয়) রয়েছে যা দূরের (অপরিচিতদের) থেকেও দূরতর বা পর। পরবাসী হলো সেই ব্যক্তি যার কোনো বন্ধু নেই। (অন্যের সম্পর্কে) তোমার খারাপ ধারণা যেন (তোমাকে) বন্ধু থেকে বঞ্চিত না করে। যে ব্যক্তি সংযমী হয়ে চলে সে নিরাপদ থাকে। যে ব্যক্তি সত্যকে অতিক্রম করে সে সংকীর্ণতার মধ্যে ডুবে থাকে।।।

30/04/2022
29/04/2022

💐বিদ্যা সহজ, শিক্ষা কঠিন,
বিদ্যা আবরণে,শিক্ষা আচরণে।।

29/04/2022
29/04/2022
25/04/2022

আমাদের ছোটো নদী
__রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে
বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে।
পার হয়ে যায় গোরু, পার হয় গাড়ি,
দুই ধার উঁচু তার, ঢালু তার পাড়ি।

চিক্ চিক্ করে বালি, কোথা নাই কাদা,
একধারে কাশবন ফুলে ফুলে সাদা।
কিচিমিচি করে সেথা শালিকের ঝাঁক,
রাতে ওঠে থেকে থেকে শেয়ালের হাঁক।

আর-পারে আমবন তালবন চলে,
গাঁয়ের বামুন পাড়া তারি ছায়াতলে।
তীরে তীরে ছেলে মেয়ে নাইবার কালে
গামছায় জল ভরি গায়ে তারা ঢালে।

সকালে বিকালে কভু নাওয়া হলে পরে
আঁচল ছাঁকিয়া তারা ছোটো মাছ ধরে।
বালি দিয়ে মাজে থালা, ঘটিগুলি মাজে,
বধূরা কাপড় কেচে যায় গৃহকাজে।

আষাঢ়ে বাদল নামে, নদী ভর ভর
মাতিয়া ছুটিয়া চলে ধারা খরতর।
মহাবেগে কলকল কোলাহল ওঠে,
ঘোলা জলে পাকগুলি ঘুরে ঘুরে ছোটে।
দুই কূলে বনে বনে পড়ে যায় সাড়া,
বরষার উৎসবে জেগে ওঠে পাড়া।।

কবিতা পড়ুন আমাদের ওয়েবসাইটেঃ www.cherapata.net

আমাদের ইনস্টাগ্রামঃ https://instagram.com/chera__pata?utm_medium=copy_link

আমাদের ফেসবুক গ্রুপঃ https://www.facebook.com/groups/499747754667405/?ref=share
#ল্যাম্পপোস্ট
#রবীন্দ্রনাথঠাকুর

15/04/2022
13/04/2022

Address

Mizmizi, Siddirgonj
Narayanganj
1430

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Voice of MOLLA BBC Network. posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Voice of MOLLA BBC Network.:

Share

Category



You may also like