17/08/2024
গণইতিহাস দূরে থাক, শেখ হাসিনার আওয়ামীলীগের পক্ষে ঠিকমতো একটা দলীয় ইতিহাস লেখাও সম্ভব না। তাদের প্রচারিত ইতিহাসে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক নাই, সোহরাওয়ার্দী নাই, মাওলানা ভাসানী নাই, সিরাজুল আলম খান নাই, তাজউদ্দীন নাই; আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ, কামরুদ্দীন আহমদ, অলি আহাদ, আবুল মনসুর আহমদ, মুহাম্মদ আতাউর রহমান খান নাই! মেজর জিয়া তো রীতিমতো পাকিস্তানপন্থী!
অথচ এদের অধিকাংশই কিন্তু আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। ভাসানী ও সিরাজুল আলম খান ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের প্রধান দুই রূপকার। এই গণঅভ্যুত্থানই শেখ মুজিবকে আগরতলা মামলা থেকে অব্যাহতি দেয় এবং তিনি কারামুক্ত হন। এই গণঅভ্যুত্থান না ঘটলে শেখ মুজিবের ‘বঙ্গবন্ধু’ হওয়া হতো না।
অথচ মুনতাসীর মামুনরা ইতিহাস লিখেছেন শেখ মুজিব নাকি একটি ‘অনিচ্ছুক’ জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন! সত্যের খাতিরে বলতে হয়, বাংলাদেশের জনগণ একজন ‘অনিচ্ছুক’ নেতাকে স্বাধীনতার অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত করেছিলেন।
ইতিহাস ভালো করে পড়লে দেখা যায়, ৭ মার্চের ভাষণে শেখ মুজিব ‘স্বাধীনতা’ শব্দটি (এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম) উচ্চারণ করেছিলেন ছাত্রনেতাদের চাপে। মঞ্চের পেছন থেকে নাকি তার পায়জামা ধরে টান দিচ্ছিলেন ছাত্রনেতাদের কেউ কেউ। যেন তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে যখন রাজপথ উত্তাল, শেখ মুজিব বন্দি অবস্থায় প্যারোলে আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছিলেন। তখনই রাজপথে স্লোগান ওঠে:
“গোলটেবিল না রাজপথ? রাজপথ, রাজপথ!” আন্দোলনকারী ছাত্র-শ্রমিকদের চাপে বন্দি অবস্থায় মুজিব আর আলোচনায় বসতে পারেন নাই। অর্থাৎ রাজপথ, আন্দোলন মুজিবকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে বাধ্য করেছিল; এর উল্টোটা নয়।
আওয়ামী সমর্থক ভাই/বোনেরা, ইতিহাসের এসব রূঢ় সত্যের মুখোমুখি হওয়ার হিম্মত আপনাদের থাকতে হবে। থরোথরো আর পুতুপুতু আবেগকে ‘ইতিহাস’ নামে চালানোর চেষ্টা আর কইরেন না। ধোপে টিকবে না। ইতিহাস প্রসঙ্গে আমাদেরকে আদালত দেখাবেন না। শেখ মুজিবের জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না কিসিমের নলামার্কা বিশ্বাস থেকে বের হয়ে আসেন।
বাহাত্তর-পচাত্তর রেজিম সম্পর্কে সত্য ইতিহাসের মুখোমুখি হন। আওয়ামীলীগ সমর্থন করেন, কিন্তু ইতিহাসের বিআওয়ামীকরণ তথা গণতন্ত্রীকরণ কবুল করেন।
আইনি-বেআইনি বলপ্রয়োগ করে ইতিহাসের টুঁটি চেপে ধরে রাখার দিন শেষ, সোনার বাংলাদেশ।
Sarwar Tusher