02/09/2024
#আগমনীর_প্রেক্ষাপটে
১৯৪৬ সালের কথা।বিংশ শতাব্দীর অত্যুন্নত ব্রিটিশ রাজত্বকাল। বাংলার রাজধানী কলিকাতা মহানগরীর বুকে অভিশপ্ত আগস্টে হিন্দু-মুসলমানের সাম্প্রদায়িক প্রত্যক্ষ সংগ্রামের নাটকীয় বীভৎস লীলা।তৎকালীন ঘরে-বাইরে নানা বিপদ-আপদ ও ঝঞ্ঝাটের দরুন শ্রীশ্রীঠাকুরের স্বাস্থ্য কিছুদিন যাবৎ ভালো যাচ্ছিল না। রক্তচাপ ও হৃৎপিণ্ডের দুর্বলতা জনিত নানান উপসর্গে তিনি খুবই কষ্ট পাচ্ছিলেন।এই অবস্থায় চিকিৎসক,আত্মীয়-স্বজন ও শিষ্যদের অনুরোধে তাঁকে বায়ু পরিবর্তনের জন্য কোন স্বাস্থ্যকর স্থানে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ হলো।এই জন্য কৈলোরে একটি বাড়ি ভাড়াও করা হয়েছিল কিন্তু শ্রীশ্রীঠাকুর স্বয়ং বৈদ্যনাথধামে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন তাই সেখানে যাওয়াই স্থির হলো।
১৯৪৬ সালের ৩০সে আগস্ট বিকালবেলা হটাৎ শ্রীশ্রীঠাকুর সুশীলচন্দ্র বসুকে বললেন-"আমি দেওঘর যাবো।আজই আপনি রওনা হয়ে কলকাতায় গাড়ি রিজার্ভের ব্যবস্থা করে রওনা হয়ে যান,বাড়ি ঠিক করার জন্য।"
তাঁর এই কথাতে তখনও আপামর ভক্তগন কেউই বুঝতে পারিনি যে,তিনি তাঁর প্রিয়তম জন্মভূমি এবং তাঁরই সৃষ্ট আশ্রম ত্যাগ করে চিরতরে চলে যাওয়ার উদ্যোগ করছেন।তাঁকে প্রশ্ন করলেন সুশীল দা-"গাড়ি রিজার্ভ করতে হবে কোন ক্লাসের এবং কত লোকের জন্য আর দেওঘরে যে বাড়ি ঠিক করার কথা বললেন সেই বাড়িই বা কিরূপ হবে এবং কত লোকের বাসোপযোগী হওয়া দরকার?
উত্তরে শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন-"যত বড় বাড়ি পান যাতে বহুলোকের স্থান হতে পারে এরূপ বাড়ি ভাড়া করবেন।কারন,কারন আমার সঙ্গে এরা সকলেই যাবে।আর ট্রেনে upper ক্লাস এর এবং third ক্লাস এর গোটা বগী রিজার্ভ করুন।
সুশীল চন্দ্র বসু সেই রাতেই বীরেন মিত্র ও রাজেন মজুমদারকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতায় গেলেন। পরদিন
E. I. রেলওয়ে স্টেশনের general ম্যানেজারের সাথে দেখা করে তাকে প্রয়োজনের কথা জানাতে তিনি বললেন -"আপনার upper ক্লাস রিজার্ভেশন হতে পারে কিন্তু থার্ড ক্লাসের বগি রিজার্ভেশন হবে না।
সুশীল দা বললেন-"কেন হবে না? মহাত্মাজী সারা ভারত পরিভ্রমন করেন third class বগি রিজার্ভ করে,তা হয় কি করে?
তিনি বললেন-"exception has been made in case of Mahatma Gandhi".
সুশীলচন্দ্র বসু-"if exception has been made in one case,why it should not be done in Sree Sree Thakur's case also"?
কথাবার্তা এবং আলোচনার পর তিনি নিমরাজি মতো হলেন।শ্রীভোলানাথ সরকার ও রাজেন্দ্রনাথ এর উপর এই ভার দিয়ে সুশীল বসু ও বীরেন্দ্রলাল মিত্র ৩১ আগস্ট রাতের ট্রেনে রওনা হয়ে তার পরদিন সকালবেলা দেওঘর পৌঁছে ইষ্টপ্রাণ সৎসঙ্গী সুরেন্দ্রনাথ সেনকে নিয়ে বাড়ির অনুসন্ধানে বের হলেন। তার কাছ থেকে সন্ধান পাওয়া গেল-শহরের একপ্রান্তে "বড়াল বাংলো" নামে একটি প্রকাণ্ড বাড়ি আছে তাতে এককালে ময়মনসিংহের মহারাজা আচার্য শশীকান্ত চৌধুরী বসবাস করতেন।বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে কিছুদিন বাস করেছেন। এই বিশাল বাড়ি এবং তার সংলগ্ন বিস্তীর্ন প্রাঙ্গণ দেখে পছন্দ হওয়াতে তত্ত্বাবধায়ককে বাড়ি ভাড়া বাবদ ১০০ টাকা অগ্রিম দিয়ে সুশীলদা তাকে অনুরোধ জানালেন- এক্ষুনি লোক লাগিয়ে একদিনের মধ্যে সমস্ত বাড়িটা চুনকাম করে দিতে হবে, দরকার হলে ডে-লাইট জ্বালিয়ে কাজ করে দিতে হবে" ।
এতগুলো লোক আসবে এদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা কি হবে এই চিন্তা করে স্থানীয় "রামকৃষ্ণ ভান্ডার" থেকে সব জিনিস-চাল,ডাল,মশলা এবং কয়লার দোকান থেকে কয়লা ইত্যাদি সংগ্রহ করে আনা হলো। অনুরূপভাবে চিড়ে,গুড় ইত্যাদি সংগ্রহ করে রাখা হল কেননা ক্ষুধার্ত যাত্রীদল এলেই তাদের কিছু আহার্যের প্রয়োজন হবে, রান্নাবান্না করে খেতে অনেক দেরি হয়ে যাবে। পয়লা সেপ্টেম্বর ১৯৪৬,শ্রীশ্রীঠাকুর সবাইকে নিয়ে আশ্রমের বিশিষ্ট কর্মীগণসহ ঈশ্বরদী থেকে নির্দিষ্ট সময়ে রিজার্ভ বগিতে রওনা হলেন।বগিতে এত ভিড় হয়েছিল যে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।নৈহাটির সৎসঙ্গীরা ঠাকুর আসছেন জানতে পেরে তাদের খাবারের যথেষ্ট আয়োজন করেছিলেন এবং সকলকে আহার্য দান পরিতৃপ্ত করেছিলেন। ব্যান্ডেলে ওই রিজার্ভ বগি মোঘলসরাই প্যাসেঞ্জারের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হল।ট্রেন পরদিন সকাল ন'টায় দেওঘরে স্টেশনে এসে পৌছালো।সুশীলদা শ্রীশ্রীঠাকুর ও অন্যান্য সকলকে নিয়ে স্টেশন থেকে বড়াল-বাংলোয় নিয়ে এলেন।
১৯৪৭সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গ বিভাগ হল। তার এক বছর আগেই যখন কেউ কল্পনাও করতে পারেনি যে দেশ এভাবে অপ্রত্যাশিতভাবে বিভক্ত হবে তখন পরমদয়াল শ্রীশ্রীঠাকুরের দৃষ্টিতে সেটা বোধহয় ধরা পড়েছিল তাই তিনি ঐরূপ দুদৈব সংঘটিত হওয়ার আগেই তার প্রিয় জন্মভূমি এবং বহু বাধা বিঘ্নের ভেতর দিয়ে গড়ে তোলা আশ্রম হঠাৎ ত্যাগ করে চলে এলেন সুদূর দেওঘরে।
কপর্দকশূন্য অবস্থা থেকে,যে বিরাট আশ্রম তিনি গড়ে তুলেছিলেন যার মূল্য হবে প্রায় দেড় কোটি টাকা-তাঁর সেই অতি সাধের আশ্রম তিনি এমনভাবে ত্যাগ করে চলে আসায় তাঁর মনে এতটুকু বিকার দেখা গেল না! শ্রীশ্রীঠাকুরের এই ত্যাগের মূর্তি দেখে সেদিন সবাই বিস্মিত হয়েছিলেন।তারপরেও কোনদিনও এরজন্য বিন্দুমাত্র আক্ষেপ করতে তাঁকে দেখা যায়নি।এটা যেন একটা অতি তুচ্ছ ব্যাপার। এমন নিঃস্পৃহতা এবং অনাসক্ততা শুধু তাঁর পক্ষেই সম্ভব।
স্বাস্থ্যের কারনে শ্রীশ্রীঠাকুর তখন পাবনা থেকে বৈদ্যনাথ ধাম গিয়েছিলেন এবং পরে ভারত বিভাগের পরে পাবনা পূর্বপাকিস্তানের("বর্তমানে বাংলাদেশ) অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় তিনি বৈদ্যনাথ ধামেই রয়ে গেলেন।এটা অনেকের ধারণা, কিন্তু তাঁর কার্যকলাপ, কথাবার্তা পর্যালোচনা করলে স্পষ্টই বোঝা যায় যে শ্রীশ্রীঠাকুর নিজ প্রজ্ঞাবলে, ভারতের নেতৃবৃন্দের অদূরদর্শীতার দরুন,তৎকালীন রাষ্ট্রীয় পরিস্থিতিতে বাংলার ভবিষ্যৎ আগে থেকেই প্রত্যক্ষ করেছিলেন এবং প্রাণান্ত চেষ্টা করেও তিনি ব্যর্থ হন।হিন্দু সম্প্রদায়ের সংখ্যালঘুত্ব দূর করে ভারত-বিভাগ আন্দোলন নাকচ করার চেষ্টা করেছিলেন আপ্রাণ ভাবে। ডাক্তার শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী, ব্যারিস্টার এন.সি. চ্যাটার্জী প্রমুখ বাংলার তদানীন্তন বিশিষ্ট নেতাগনকে তিনি এজন্য অবিরাম যে প্রেরণা ও বুদ্ধি দিয়েছিলেন তা অনেকেরই সুবিদিত। নেতৃবৃন্দের উদাসীনতা ও সহযোগিতার জন্য উপস্থিত বিপদ থেকে রক্ষা করতে অবশেষে তিনি শুধুমাত্র পাবনার হিন্দু সংখ্যা বৃদ্ধি করে জন্মভূমিকে পাকিস্তানের কবল থেকে বাঁচানোর জন্য উঠেপড়ে লাগলেন।কিন্ত বিধি প্রতিকূল।হিন্দুই হিন্দুর শত্রু হয়ে দাঁড়ালো। পারিপার্শ্বিক হিন্দু জমিদারগনের প্রবল বিরুদ্ধতায় তাঁর সবরকম চেষ্টা ব্যর্থ হলো। অনন্যপায় হয়ে শ্রীশ্রীঠাকুর আর্যধর্ম, ও কৃষ্টি রক্ষার উদ্দেশ্যে বাল্য ও কৈশোরে অতিপ্রিয় ক্রীড়াভূমি, যৌবন ও পৌঢ় দশার সাধনক্ষেত্র-সারা ভারতের গৌরব-তাঁর অতি সাধের হিমাইতপুরের সেই সৎসঙ্গ মহাপ্রতিষ্ঠান ত্যাগ করতে বাধ্য হলেন।
কি নিদারুণ মনদুঃখে শ্রীশ্রীঠাকুর পাবনা ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন তা তাঁর পরবর্তীকালে অনেক কথার মধ্যেই বেশ বুঝতে পারা যায়!কথাপ্রসঙ্গে একদিন বড় দুঃখ করে তিনি বলছিলেন-"চেষ্টা করেছিলাম প্রানপণ যাতে হিমাইতপুর না ছাড়তে,কিন্তু অত্যাচারিত হলাম ভীষণ,পারলাম না কিছুতেই।বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিল, মানুষ খুন করে ফেলল ওখানকার সব লোকের বিরুদ্ধতার জন্য পারলাম না। সকলের ভালো করতে গিয়ে আমি একেবারে জাহান্নমে গেলাম"।
আর একদিন বলেছিলেন-"আমরা হিন্দুরাই পাকিস্তানের স্রষ্টা। আমরা আরো চেষ্টা করেছি যাতে আমরা সকলেই মুসলমান হয়ে যাই।পাকিস্তান হওয়ায় হিন্দু মুসলমান উভয়েরই কি ভীষণ ক্ষতি না হল।হিন্দুরা চলে আসায় মুসলমানদের কি লাভ হয়েছে?হিন্দু culture মুসলিম culture এর মধ্যে তো কোনো পার্থক্যই নেই। উভয় সম্প্রদায়ের prophets -রা তো সেই এক অদ্বিতীয়ের একই বার্তাবাহী"।
শ্রীশ্রীঠাকুর এই প্রসঙ্গে আরো বললেন-"আত্মরক্ষা করার মতো সাহস,বীর্য, প্রস্তুতি ও সংহতি যদি না থাকে সেটা কিন্তু একটা অপরাধ।শয়তানি বুদ্ধি ও পশুবলের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করার মধ্যে ধর্ম নেইকো। অহিংসার মধ্যে আমরা যদি দুর্বলতার প্রশয় দিই, হিংসাকে নিরস্ত করার মত শক্তি ও সংহতি যদি আয়ত্ত না করি তাহলে তা দিয়ে পরক্ষে হিংস্রতাকে উৎসাহিত করা হয়।আমরা বলি মেরোও না আর অন্য কেউ তোমাকে মারতে সাহস পায় এমনতরো প্রস্তুতিহীন হয়েও থেকো না বরং নিজে বাঁচুন অন্যকে বাঁচান। আত্মরক্ষার প্রস্তুতি প্রতিষ্ঠা না করে অন্যের হাতে নির্বিরোধী মৃত্যুবরণ করাটা যদি অহিংসা হয়,তাহলে আত্মহত্যা একটা বড় ধরনের অহিংসা।
কথা বলতে বলতে বলতে শ্রীশ্রীঠাকুরের চোখ মুখ লাল হয়ে উঠল।তারপর ক্ষোভের সঙ্গে বললেন আপনারা বুঝেও যেমন প্রচন্ডভাবে লাগা দরকার তা কিন্তু লাগেননি আমি অনেকদিন আগে থেকেই কিন্তু আভাস দিয়ে আসছি অনেকদিন আগেই আমি স্বস্তিসেবক তৈরীর কথা বলেছিলাম!"
এদিকে আশ্রমে ধীরে ধীরে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকল।এক একটি কামরায় এক একটি পরিবারেরও ঠাঁই দিয়ে কুলিয়ে ওঠা যাচ্ছেনা।তবুও মাসে ৪০০০ টাকা লাগছে বাড়িগুলোর ভাড়া দিতে।টাকা সংগ্রহ করতে শ্রীশ্রীঠাকুর একদিন নিজেই খালি পায়ে সৎসঙ্গীদের দোরে দোরে ভিক্ষা করতে বেড়িয়ে পড়লেন।যারা এসেছে কপর্দকশূন্য হয়ে তাদের থাকার জায়গা, খাওয়ার ব্যবস্থা,রোগীর পরিচর্যা সব শ্রীশ্রীঠাকুর নিজের কাঁধের উপরে তুলে নিলেন।ভাবতেও অবাক লাগে যার কোটি টাকার বেশি সম্পত্তি হিমাইতপুর আশ্রমে অন্য লোকজন লুট করছে- #সেই_তিঁনি_দেওঘরে_ভিক্ষায়_রত।
পরবর্তীকালে 'রঙ্গন ভিলা' বাড়িটা ভাড়া নেওয়া হল। একদিন সন্ধ্যাবেলায় 'বড়াল বাংলা'র ডানদিকের আমগাছের তলায় শ্রীশ্রীঠাকুর চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছেন।এমন সময় 'রঙ্গন ভিলা'র মালিক একজন ভদ্রলোককে সঙ্গে নিয়ে সেখানে উপস্থিত হলেন।তাদের দেখে খুশি হয়ে শ্রীশ্রীঠাকুর বিনীতভাবে জিজ্ঞাসা করলেন-"কেমন আছেন?কুশল তো?"
ভদ্রলোকটি বললেন-তাহার এক আত্মীয়ের টনসিল হয়েছে সেজন্য ডাক্তারের উপদেশ এখানে চলে আসার জন্য,তাই আপনি যদি আমার বাড়িটা খালি করে দেন তবে খুব ভালো হয়।শ্রীশ্রীঠাকুর ব্যথিত কণ্ঠে বললেন-"দেখুন দাদা ভারতের প্রায় ৫০ হাজার লোক আমার মুখের দিকে চেয়ে আছে,তাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সবই আমার উপর নির্ভর করছে।আমার অবস্থা যে কেমন সেই শুধু বোঝে প্রাণ যার আমাতে বলিদান।এখানে লোকের অবস্থা এমন যে তারা যদি এক মুঠো ভাতের সঙ্গে একটা লঙ্কা পোড়া পায় তাহলে পরম তৃপ্তির সঙ্গে আহার করতে পারে কিন্তু তাও জোটে না।এমন আমার অবস্থা যে আপনি যদি বাড়িখানা নাও দিতেন তাহলেও আমাকে জোর করে বাড়ি অধিকার করে নিতে হতো। ভেবে দেখুন এখন যদি আমার বাড়ি ছেড়ে দিতে হয় তাহলে আমরা কি ভীষণ বিপদে পড়বো। আমি ব্রাহ্মণ সন্তান,আমার সংসার ছিল,আমার বাড়ি ছিল, আমি কোনদিন চিন্তাও করিনি কখনো আপনাদের কাছে শিয়াল কুকুরের মত একটু আশ্রয়ের জন্য এরকম ভাবে আমাকে প্রার্থনা করতে হবে।আমার এই অপরাগতার বিরুদ্ধে আপনাদের কাছে যে আমি নালিশ করতে পারলাম এই আমার তৃপ্তি। আপনাকে আমি আশীর্বাদ করছি আপনি সুদীর্ঘজীবী হন,দীর্ঘকাল সুখে শান্তিতে থাকুন,আপনি ধনী হন, রাজরাজেশ্বর হন,আর আপনার কাছে আমরা যেন আশ্রয় নিয়েই থাকতে পারি। টাকা দিয়েই হোক আর যাই করেই হোক আপনি অসময়ে আমাদের আশ্রয় দিয়েছেন,আর আপনাদের প্রয়োজনের সময় আমি যে বাড়িটা ছেড়ে দিতে পারছিনা এর থেকে আমার কাছে লজ্জার আর কি থাকতে পারে।আমি আমার নিজের কথা বলিনা এখানকার প্রত্যেকটি মানুষ আপনার চেয়ে লাখগুন বিপন্ন আমরা ওখান থেকে নিরাশ হয়ে এসেছি। আপনি দয়া করে আশ্রয় দিয়েছেন বলেই কোনোরকমে আছি। এর বেশি আর কি বলতে পারি। দেখুন আমি পাশের 'এশিয়াটিকা হাউস' ভাড়া নেওয়ার চেষ্টা করছি,সেটা পেলেই আপনার বাড়ি ছেড়ে দেবো তবে কবে ছেড়ে দিতে পারব ঠিক কথা দিতে পারছিনা"।কথাগুলো শ্রীশ্রীঠাকুর যেন এক নিঃশ্বাসেই বলে গেলেন।বাড়ির মালিক আর কিছু বললেন না।
কালের নিয়ম হয়ত এমনই।প্রেরিত পুরুষ যারাই এই ধরাধামে অবতীর্ণ হয়েছেন তাঁরা যেখানেই পা দিয়েছেন সেখানেই পবিত্র লীলাক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মথুরা থেকে বৃন্দাবন যাত্রা,হজরত রসূলের মক্কা থেকে মদিনা গমন,পরমদয়াল শ্রীশ্রীঠাকুরের পাবনা ছেড়ে দেওঘর আগমন যেন বারেবারেই একই সূত্রে বাধা পড়েছে!ভারী অবাক ব্যাপার!তাঁরা যেখানে গেছেন সেখানেই মানুষ ছুটেছে বাঁচার তাগিদে।শুরু হয়েছে নতুন করে গুছিয়ে নিয়ে পথ চলা।যোগ্যতা হয়তো এমনি করেই তৈরী হয় পরমদয়ালের সান্নিধ্যে থাকতে থাকতে।তবে জন্মস্থান ত্যাগের দুঃখ থাকলেও প্রাণের সবটুকু ভালোবাসা নিয়েই শ্রীশ্রীঠাকুর চলে এসেছিলেন প্রবাসে -বৈদ্যনাথধামে।বৃহত্তর সমাবেশে আবার সেই সবটুকু ভালবাসাই বেঁধে রেখে এসেছিলেন স্বদেশের মাটিতে-হিমাইতপুরে।নিয়ে এলেন সবটুকু ভালোবাসা-রেখেও এলেন সবটুকুই।পূর্ন থেকে পূর্ন নিলে পূর্ণই থেকে যায়।
তাই দিনটি বিহারবাসী মহাসমারহে পুরুষোত্তমের পবিত্র আগমনের বন্দনা করে।উৎসব আনন্দে মেতে থাকে।এমন দিনে আবালবৃদ্ধবনিতা পদব্রজে শোভাযাত্রায় বেরিয়ে এই আনন্দ উৎসবে গা ভাসায়।।
©অমিয়_মৃধা। (তথ্য সূত্র-মানসতীর্থ পরিক্রমা,শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র) ( #ছবি-রোহিনী রোডের এই পথ ধরেই শ্রীশ্রীঠাকুর পাবনা হয়ে বৈদ্যনাথ ধাম থেকে বড়াল বাংলোতে এসে ওঠেন)