19/04/2023
প্রতিশোধ
পর্ব-৩ (শেষ পর্ব)
আরো এক গ্লাস পানি খেয়ে একটা লম্বা করে শ্বাস নিলো জিসান। অতঃপর বলতে শুরু করলো,
'ইরা মারা যাওয়ার এক সপ্তাহ পর এক সকালে গ্রামে আবার হৈচৈ পড়ে গেলো। ইরা যে তেঁতুল গাছে ফাঁস নিয়েছিলো! সেই একই তেঁতুল গাছের একই ডালে রহিম আত্মহত্যা করেছে। রহিম আমাদের ফ্রেন্ডসার্কেলের একজন। খবরটা শুনে ছুটে চলে যায় আমরা, গিয়ে দেখি রহিম সেই একই ডালে ঝুলে আছে। ঘাড় একপাশে কাত করা, মুখের জিব্বা অনেকটা বেরিয়ে আছে আর চোখ দুটো খোলা। রহিমের চোখ দুটো যেনো কোটর ছেড়ে ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চাইছে। হুবহু ইরার মত রহিমের লাশের অবস্থা হয়েছে। ঘন্টাখানেকের মধ্যে পুলিশ এসে রহিমের লাশ নিয়ে গেলো। আচমকা রহিমের আত্মহত্যাতে গ্রামবাসী ধারণা করে নিলো ইরার জন্যে রহিম আত্মহত্যা করেছে। ইরার সাথে রহিমের সম্পর্ক ছিলো আর ইরার পেটের বাচ্চাটা আর কারো নয়! বরং রহিমের। যেহেতু ইরা আত্মহত্যা করে মারা গিয়েছে তাই রহিম সেটা মেনে নিতে না পেরে নিজেও আত্মহত্যা করে নিয়েছে। ইরা আর রহিমকে নিয়ে গ্রামের লোকজন আরো রসকস মিশিয়ে নানা রকম গল্প বানাতে লাগলো। রহিমের আত্মহত্যাকে সাধারণভাবে নিলো গ্রামের মানুষ। কিন্তু রহিমের মৃত্যুর তিন দিন পরে যখন সেই তেঁতুল গাছের, সেই একই ডালে তানিয়ার মৃতদেহ ঝুলতে দেখা গেলো! তখন গ্রামবাসির টনক নড়লো। ইরার মৃত্যুর পর আরো দুটো একই ঘটনা ঘটলো। এটা নরমাল কোনো আত্মহত্যা না সেটা গ্রামবাসি বুঝে গেলো। সবাই ধারণা করে নিলো এই দুটো মৃত্যুর পিছনে ইরার হাত আছে। এই ধারণাটা পুরো গ্রামে ছড়িয়ে যেতে খুব বেশি সময় লাগলো না। গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লো, গ্রামের প্রত্যেকটা মানুষ ভয়ে আছে। সন্ধ্যার পরে কেউ আর ঘর থেকে বের হয়না। গ্রামের প্রতিটা বাড়ির চালে রাতের বেলা ইটের টুকরা আর ঢিল পড়তে থাকে। পুরো গ্রামে অশরীরী আতঙ্ক বিরাজ করতে লাগলো। রাতের বেলা বাড়ির চালের উপর ঢিল কোনো মানুষ ছুড়ছে নাকি ইরা রহিম আর তানিয়ার প্রেতাত্মারা ছুড়ছে সেটা কেউ জানেনা। রাতের বেলা তাই কেউ বেরিয়ে এসে দেখার সাহস করেনি। তানিয়ার মৃত্যুর তিনদিন পরের ঘটনা। রাতের বেলা, রাত আনুমানিক দুইটা আড়াইটা হবে! নিহা তার মায়ের সাথে ঘুমিয়ে আছে। ঐ রাতের বেলা ওদের দরজায় পরপর দুটো টোকা পড়লো আর পরপর দুটো ডাক দিলো,
'নিহা বেরিয়ে আয়, আমি ইরা তোকে নিতে আসছি।'
দুইবার ডাক শেষ হতেই নিহা বিছানা থেকে নেমে গেলো, চোখ দুটো বন্ধ করা ওর। ঘুম থেকে পুরোপুরি জাগ্রত হয়নি নিহা। ঘুমের ঘোরে ঢুলু ঢুলু পায়ে হেঁটে দরজার কাছে এসে দাঁড়ালো, অতঃপর দরজা খুলে যখন বেরিয়ে যাবে! ঠিক তখনই নিহার মা এসে তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে রুমের মধ্যে টেনে দরজাটা ঠাস করে লাগিয়ে দিলো। নিহাকে রুমে নিয়ে দরজা লাগানোর সাথে সাথে বাইরে প্রচন্ড জোরে ঝড়ো হাওয়া শুরু হলো, একই সাথে রাগে কেউ গজরাতে লাগলো। এভাবে বেশ খানিকটা সময় চলার পর ঝড় থেমে গেলো আর গোঙাতে গোঙাতে কেউ নিহাদের বাড়ি থেকে চলে গেলো। এদিকে নিহা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে, তাকে তার মা বিছানায় শুইয়ে দিয়ে সারারাত নিহার মা ওর পাশে বসে থাকলো। এভাবে কেটে গেলো রাত। পরেরদিন সকালে এই ঘটনা পুরো গ্রামে ছড়িয়ে পড়লো। এতদিন সবাই ধারণা করেছিলো এইসব আত্মহত্যার পিছনে ইরার হাত আছে। ইরা ই সবাইকে রাতের বেলা ডেকে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলছে। এতদিনের ধারণা নিহার মায়ের কথাতে সত্যি প্রমানিত হলো। কিন্তু রাতের বেলা নিহার সাথে কী কী ঘটেছে, ইরা তাকে ডেকেছিলো সেসবের কিছুই নিহা জানেনা। কোনোকিছুই তার মনে নেই। গ্রামের মানুষ এবার আরো আতঙ্কের মধ্যে পড়ে গেলো। এই বিপদ থেকে কীভাবে তারা মুক্ত হবে তার কিছুই বুঝতে পারছে না কেউ কিন্তু এভাবে তো আর চলতে পারেনা। এই আতঙ্ক নিয়ে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়, সকলেই এর একটা সমাধান চাই। গ্রামের মাতব্বরেরা আলোচনা করে একটা ওঝাকে ডেকে আনলো। সেই ওঝা তাদেরকে জানালো,
'ইরার আত্মাকে আটকানো অনেকটা কঠিন, তবে অসম্ভব কিছু নয়। আমি তেঁতুল গাছটা তাবিজ করে বন্ধ করে দিয়েছি, ইরার প্রেতাত্মা আর কখনো গাছ থেকে গ্রামে এসে কারো কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।'
ওঝার কথায় সবাই যেনো প্রাণ ফিরে পেলো। মানুষের মনে যে ভয় আর আতঙ্ক জমে ছিলো! ওঝার কথায় তা দুর হয়ে গেলো। এরপর কেটে গেলো এক সপ্তাহ। গ্রামের আর কোনো অঘটন ঘটেনি। মানুষ নিশ্চিন্তে আগের মত বসবাস করতে লাগলো। আস্তে আস্তে ইরার কথা সবাই ভুলে যেতে লাগলো। কিন্তু খুব বেশিদিন গ্রামের মানুষ স্বাচছন্দে বসবাস করতে পারলো না। এক সকালে সেই ওঝার লাশ তেঁতুল গাছের ডালে ঝুলতে দেখে গ্রামে সেই ভয় আর আতঙ্ক আবার ফিরে এলো। সবাই বুঝে গেলো ইরাকে আটকানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এমন অবস্থায় কী থেকে কী করবে সেটা কেউ বুঝতে পারছে না। ইরাকে আটকানোর কারণে প্রাণ গেলো ওঝার, আবার যদি কেউ তাকে আটকানোর চেষ্টা করে তাহলে তারও যে ওঝার মত পরিনত হবে! সেটা কারো বুঝতে বাকি রইলো না। ওঝার মৃত্যুর দুইদিন পরে নিহার মৃতদেহ ঝুলতে দেখা গেলো তেঁতুলগাছে। নিহাকেও বাঁচতে দিলো না ইরা। গ্রামে এই পর্যন্ত যে কজন মারা গেছে ওঝা ছাড়া প্রত্যেকজনই যুবক যুবতী, একজনও বয়ষ্ক লোক নেই। তাহলে ধারণা করা যায় যুবক যুবতী ই ইরার টার্গেট। কিন্তু ইরা কেনো এদেরকে মারছে? ইরার সাথে কী করেছে এই মানুষগুলো? নাকি কোনো কারণ ছাড়াই ইরা এদেরকে মৃত্যুর ডাক ডেকে নিয়ে করুণভাবে মারছে? সবকিছু কেমন ধোয়াশা লাগছে। তবে ইরা এখন রক্ত মাংসের মানুষ নয়, বরং ভয়ানক এক প্রেতাত্মা। আর প্রেতাত্মারা করতে পারেনা এমন কোনো কাজ নেই কিন্তু তাই বলে শুধু যুবক যুবতীদেরকেই কেনো? অন্যন্য বয়ষ্ক মানুষদেরকে মারছে না কেনো? কেমন যেনো জট পাকিয়ে যাচ্ছে সবকিছু। সবাই যখন বুঝতে পারলো ইরা শুধু যুবক যুবতীদেরকে মারছে! তখন প্রায় যুবক ছেলেমেয়েরা গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে লাগলো। এর ভিতরে রিয়াদের মালেশিয়া যাওয়ার সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে। কয়েক দিনের মধ্যেই রিয়াদ বিদেশে পাড়ি দিলো। আমি আর সারা বাদে গ্রামে আর আমাদের বয়সি একটা ছেলেমেয়েও নেই, যে যেখানে পারছে সবাই চলে গেছে। আমারও চাকরী হয়ে গেলো এই কোম্পানীতে। আমার চাকরী হওয়াতে সারার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব দিলাম, উনারাও রাজি হয়ে গেলো। চাকরী না হলে হয়তো রাজি করাটা অনেক কঠিন হয়ে যেতো। যেহেতু সবাই রাজি তাই কোনো রকম অনুষ্ঠান ছাড়াই বিয়ে হয়ে যায়। তারপর শুরু হয় অনেক কাহিনি। যা তার বন্ধু
জিসানের মুখে সব কথা শুনে সুমন একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলতে লাগলো,
'ইরা মেয়েটার জন্য আমার খুব খারাপ লাগছে। সরল বিশ্বাসে মেয়েটা যাকে জীবনের থেকে বেশি ভালোবাসলো! যাকে নিজের দেহমন উজাড় করে দিলো, দিনশেষে সেই মানুষটাই তাকে ধোঁকা দিলো। সরল বিশ্বাসে ভালোবাসার অপরাধে জীবন গেলো ইরার। অতচ কতই না স্বপ্ন দেখেছিলো তাকে নিয়ে, বেঁচে থাকার স্বপ্ন, ঘর বাঁধার স্বপ্ন, সবকিছুই বিফলে গেলো তার। তবে শেষ পর্যন্ত রিয়াদ তার প্রাপ্য শাস্তিটা পেয়েছে, যদিও সেটা আরো আগে পাওয়ার কথা ছিলো। রিয়াদের সাথে যেটা হয়েছে একদম ঠিকই হয়েছে, আরো অনেক কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত ছিলো তার। একটা নীরিহ মেয়েকে মেরে ফেললো, কম কষ্ট নিয়ে ইরা দুনিয়া থেকে যায়নি। আপন মানুষের কাছে প্রতারিত হয়ে মরার আগেই প্রতিনিয়ত মরেছে ইরা।'
এ পর্যন্ত বলে থামলো সুমন। তারপর জিসানের দিকে তাকিয়ে বললো,
'কিন্তু কিছু বিষয় এখনো আমার কাছে পরিষ্কার হলো না ভাই।'
'কী বিষয় ভাই'
'প্রথমমত ইরা তো মারা গেলো! তারপর তার অতৃপ্ত আত্মা নিজের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ফিরেও এলো কিন্তু রিয়াদকে না মেরে অনেকগুলো নিরীহ মানুষকে মেরে ফেললো। এই কেসের সাথে যাদের কোনো হাত ই নেই, ইরার মৃত্যুর জন্য তারা কোনোভাবেই দায়ি নয়, তাদেরকে কেনো মারলো? রিয়াদকে মেরে ফেললেই তো ইরার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়া হয়ে যেতো। আর দ্বিতীয়ত, ইরা অতৃপ্ত আত্মা হয়ে ফিরে আসে, আমরা যতদুর জানি এসব নেগেটিভ এনার্জির প্রচুর শক্তি থাকে। এরা চাইলে যা কিছু করতে পারে। ইরার এত শক্তি থাকা স্বত্তেও রিয়াদকে মারতে তার তিন বছর অপেক্ষা করতে হলো কেনো? সে চাইলে তো রিয়াদ যেখানে ছিলো সেখানেই তাকে মেরে ফেলতে পারতো কিন্তু সেটা সে না করে বরং তিন বছর অপেক্ষা করলো। এটা কেনো?'
সুমনের কথার প্রতিউত্তরে জিসান বললো,
'ইরা কেনো নিরীহ মানুষগুলোকে মারলো বা কেনো জিসানের জন্য তিন বছর অপেক্ষা করলো তার কোনো সঠিক উত্তর আমার কাছে নেই। আপনার কাছে যেমন ধোঁয়াশা লাগছে! তেমনি আমাদের কাছেও ধোঁয়াশা লাগছে। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর একমাত্র ইরা ই দিতে পারবে কিন্তু সেটা জানা তো আর আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। ইরা নিজে থেকে এসে আমাদের কাছে রহস্য খোলসা করে যাবেনা, তাই কিছু রহস্য রহস্যই থাকুক। সবকিছু জানতে নেই, প্রকৃতি আমাদের সবকিছু জানায় না। তাই যতটুকু আমরা জানি ততটুকুতেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে আমাদের।'
'তা অবশ্য ঠিক বলেছেন, সবকিছু জানার অধিকার আমাদের নেই। তবে এই রহস্যটা পরিষ্কার হলে মনে শান্তি পাইতাম। সেটা তো আর হলো না, মনের মধ্যে খসখসানিটা রয়েই যাবে আজীবন। তবে ভাই আপনি যদি কোনোদিন এই রহস্য জানতে পারেন! তবে অবশ্যই আমাকে জানাবেন।'
'জানতে পারলে অবশ্যই জানাবো আপনাকে।'
এরপর আরো কিছুক্ষণ গল্প করলো তিনজন মিলে। গল্প শেষে সুমন তার হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,
'এখন আমাকে যেতে হবে ভাই, রাত তো অনেক হলো ফিরে না গেলে সবাই আবার টেনশন করবে।'
'আপনি রাতটা এখানেই থাকতে পারেন ভাইয়া। এখানে ফাঁকা অনেক রুম আছে, এত রাতে না গিয়ে বরং থেকে যাওয়াই ভালো। বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দেন আপনি এখানে থাকছেন।' সুমনকে উদ্দেশ্য করে বললো সারা।
'না ভাবি আমার থাকলে হচ্ছেনা, একটু দরকারী কাজও আছে আমার।'
'তাহলে আপনি চলে যান ভাই'
অতঃপর জিসান আর সারার থেকে বিদায় নিয়ে রিসোর্ট থেকে বেরিয়ে গেলো সুমন। জিসান সারার দিকে তাকিয়ে বললো,
'তুমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও আমি আসছি।'
'এই রাতের বেলা আবার কোথায় যাবে তুমি?'
'ম্যানেজারের সাথে একটু কথা বলতে হবে, কালকে যে আমরা এখান থেকে চলে যাবো! সেটা উনাকে জানাতে হবে তো।'
'আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি তাহলে কাজ সেরে তাড়াতাড়ি আসো আমি রুমে গেলাম।'
'আচ্ছা'
চেয়ার ছেড়ে উঠে রুমের দিকে পা বাড়ালো সারা। রুমে এসে ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে যেতে লাগলো। ওয়াশরুমের দরজা খুলে কমোডের উপর ইরাকে দেখে ভয়ে জমে গেলো সারা। সারা দেখলো ইরা কমোডের উপর বসে আছে, চুলগুলো তার এলোমেলো। ঘাড় একপাশে কাত করা, জিব্বাটাও ঝুলে আছে আর ইরার ঠিকরে বের হয়ে আসা চোখ জোড়া তার দিকে তাকিয়ে আছে। ইরার ঠোঁটের কোনে রহস্যময় এক হাসি, সারাকে দেখে যেনো মুখ বেঁকিয়ে হাসলো ইরা। সারা আর নিতে পারলো না, চোখ বন্ধ করে জোরে একটা চিৎকার দিলো। সারার চিৎকারের শব্দ শুনে ছুটে চলে এলো জিসান। এসে দেখলো ওয়াশরুমের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে চোখ দুটো ঢেকে থরথর করে কাঁপছে সারা। জিসান দৌঁড়ে এসে সারাকে বুকের সাথে জাপটে ধরলো।
'সারা কী হয়েছে তোমার? এভাবে কাঁপছো কেনো? তুমি কী ভয় পেয়েছো?'
নিজেকে জিসানের বুকে দেখে ঢুকরে কেঁদে উঠলো সারা। তারপর কাঁপাকাঁপা কন্ঠে সারা বললো,
'ঐ কমোডের উপরে আমি ইরাকে বসে থাকতে দেখেছি জিসান, খুব ভয়ংকর লাগছিলো দেখতে। আমার দিকে তাকিয়ে যেনো বিদ্রুপের হাসি হাসলো সে। আমার খুব ভয় লাগছে জিসান, ইরা হয়তো আমাকে মেরে ফেলতে এসেছে।'
এটা বলে আবারো অঝোরে কাঁদতে লাগলো সারা। জিসান ওকে কোনো রকমে শান্ত করে বললো,
'তুমি ইরাকে কমোডে বসে থাকতে দেখোনি সারা, ওটা তোমার মনের ভুল ছিলো। এতক্ষণ ধরে যে আমরা ইরাকে নিয়ে গল্প করলাম! এজন্য তোমার হ্যালোসিনেশন হয়েছে।'
'না আমি ইরাকে সত্যিই দেখেছি আর ও আমাকে মারতে এসেছে জিসান।'
'ও তোমাকে কেনো মারতে আসবে? তুমি কী ইরার কোনো ক্ষতি করেছো? ইরার মৃত্যুর জন্য কী কোনোভাবে তুমি দায়ি?'
'না।' মাথা নাড়িয়ে ছোট করে উত্তর দিলো সারা।
'তাহলে ইরা কেনো তোমাকে মারতে আসবে? বা আমাদেরকে মারতে আসবে? ইরার মৃত্যুর জন্য রিয়াদ দায়ি ছিলো আর তাকে সে মেরে ফেলেছে। ইরার প্রতিশোধও নেওয়া হয়ে গেছে তবে শুধু শুধু তোমাকে কেনো মারতে আসবে বোকা মেয়ে? ভয় পেয়ো না সারা, তোমার কিছু হবেনা, আমি তো আছি তোমার সাথে।'
সারা চোখ মুছে জিসানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
'এবার আমাকে ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে এসো, ঘুমাতে হবে তো।'
'না ছাড়বো না, ছাড়তে ইচ্ছে করছে না তোমাকে।'
'ঠিক আছে, ফ্রেশ হয়ে এসো তারপর সারারাত জাপটে ধরে থেকো।'
'হিহিহি আচ্ছা।'
হাসলো সারা। সারা হাসলে জিসানের খুব ভালো লাগে। হাসলে সুন্দরও লাগে সারাকে, ইচ্ছে করে অনন্তকাল তার দিকে তাকিয়ে থাকি। কথাটা ভেবে মুচকি হেসে বিছানায় এসে বসলো জিসান। সারা ফ্রেশ হয়ে এলে জিসান ফ্রেশ হলো। তারপর তারা নিজেদের দাম্পত্য জীবন যাপন শুরু করতে লাগলো।
(সমাপ্ত)