21/12/2022
সাইবার সিকিউরিটি কি। সাইবার সিকিউরিটি সর্ম্পকে প্রয়োজনীয় তথ্যসমূহ।
বর্তমান ডিজিটাল যুগে আমরা প্রত্যেক এই প্রতিনিয়ত কোনো না কোনোভাবে ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল। আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে তথ্য আদান-প্রদান করতে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস এবং ইন্টারনেটের ব্যবহার করে থাকি।
সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু চক্র যারা একটি নেটওয়ার্ক বা ইন্টারনেট এবং একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইসের সাহায্য নিয়ে নানা-ধরণের সাইবার অপরাধ বা সাইবার ক্রাইম করে থাকে।
প্রযুক্তির উন্নতির সাথে পাল্লা দিয়ে সাইবার অপরাধের দৌরাত্ব্য ও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কয়েকটি সাধারণ সাইবার অপরাধগুলো হলো- ইমেইল এবং ইন্টারনেট জালিয়াতি
পরিচয় জালিয়াতি ( যেখানে ব্যাক্তিগত তথ্য চুরি করা হয় এবং ব্যবহার করা হয় )
আর্থিক বা কার্ড পেমেন্ট ডেটা চুরি
কর্পোরেট তথ্য চুরি এবং বিক্রয়
সাইবার এক্সটর্শন ( হুমকিপূর্ণ আক্রমণা প্রতিরোধে অর্থ দাবি করে )
র্যানসমওয়্যার আক্রমণ ( একধরণের সাইবার এক্সটর্শন )
কম্পিউটার বা ডিভাইস হ্যাক করা
অবৈধ ভাবে সিস্টেমে প্রবেশ করে ডাটা নষ্ট করা
ডাটা চুরি করা
বিভিন্ন অন্যান্য Malicious attacks
নেটওয়ার্ক হ্যাক করা ইত্যাদি
ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে আর অনেক ধরণের সাইবার ক্রাইম সংগঠিত হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আমাদের জীবনের গতি থেমে যেতে পারে না। আমরা আমাদের ব্যাক্তিগত তথ্য, ডাটা ইত্যাদি সুরক্ষিত রেখে যাতে ইন্টারনেট ও প্রযুক্তির ব্যবহার করতে পারি সেইজন্য আমাদের সাইবার সিকিউরিটি প্রয়োজন।
এজন্য সাইবার সিকিউরিটির সর্ম্পকে আমাদের ভালোভাবে জ্ঞান থাকতে হবে। আজকে আমরা সাইবার সিকিউরিটি সর্ম্পকে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আজকে আমরা যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করব তা হলো-
সাইবার সিকিউরিটি কি?
সাইবার সিকিউরিটি কিভাবে কাজ করে?
সাইবার অ্যাটাক ধরণসমূহ।
সাইবার সিকিউরিটি কেন জরুরি?
সাইবার সিকিউরিটি প্রকারগুলো কি কি?
সাইবার সিকিউরিটির লাভ ও সুবিধা।
সাইবার সিকিউরিটি কি?
ডিজিটাল জগতে যেসব কর্মকান্ডের মাধ্যমে তথ্য ও নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা দেওয়া হয় তাই হচ্ছে সাইবার সিকিউরিটি, অর্থাৎ সাইবার সিকিউরিটি হলো এমন কিছু প্রযুক্তির প্রক্রিয়া এবং অনুশীলনের অংশ যেসব ব্যবহার করে নেটওয়ার্ক, ডিভাইস, প্রোগ্রাম এবং তথ্য এর সুরক্ষা প্রদান করা হয়, এবং এগুলোকে বিভিন্ন ধরণের সাইবার আক্রমণ, ডাটা চুরি এবং সিস্টেম এ অবৈধ প্রবেশ থেকে রক্ষা করে।
আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় তথ্য, গোপন ফাইল, ডকুমেন্ট ইত্যাদি আমাদের কম্পিউটারে সংরক্ষিত থাকে। আর যখন সেই কম্পিউটারের মধ্য ইন্টারনেট ব্যবহার করা হয় তখন তা একটি বিশাল নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হয়ে যায়।
একজন হ্যাকার তখন এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আপনার কম্পিউটারে প্রবেশ করে জরুরি ডাটা ও ফাইল চুরি করে নেওয়া বা সেগুলো নষ্ট করে দিতে পারে। সাইবার সিকিউরিটির মাধ্যমে ইন্টারনেটের মধ্য আপনার ডিভাইস ও নেটওয়ার্ককে সুরক্ষিত রাখতে পারে।
সাইবার সিকিউরিটি কিভাবে কাজ করে
সাইবার সিকিউরিটি আমাদের জন্য খুবই জরুরি একটি প্রক্রিয়া। সাইবার সিকিউরিটি আমাদের কম্পিউটারে থাকা বিভিন্ন জরুরি তথ্য, প্রোগ্রাম ইত্যাদিকে সাইবার অ্যাটাক থেকে রক্ষা করে।
সাইবার সিকিউরিটি সেবা প্রদান করার জন্য Cyber Security Expart দল বা সংগঠন রয়েছে। যারা বিভিন্ন ধরণের প্রোগ্রাম, সফটওয়্যার বা হার্ডওয়্যার ইত্যাদি ব্যবহার করে আমাদের কম্পিউটার, ডিভাইস, নেটওয়ার্ক ইত্যাদির মধ্য কিছু Layers of protection যোগ করেন।
এই Layers of protection গুলো যোগ করার ফলে আমাদের Networks, Computer System, Program, Data / Server ইত্যাদি সুরক্ষিত থাকে এবং হ্যাকাররা কোনো রকম হ্যাকিং করতে পারে না।
এই প্রক্রিয়া তে একটি কম্পিউটার সিস্টেম এর সমস্যা এবং দুর্বলতাগুলোকে খুজে বের করা হয় এবং Security Violations থেকে সিস্টেমকে রক্ষা করা হয়।
সাইবার অ্যাটাক ধরণসমূহ
প্রথমে আমাদের জানতে হবে কোন ধরণের সাইবার অ্যাটাক বা হুমকি আমরা পেতে পারি। যদি আমরা সাইবার অ্যাটাক সর্ম্পকে না জানি, তাহলে সাইবার সিকিউরিটি সর্ম্পকে অজ্ঞতা রয়ে যাবে।
ডিভাইস এবং নেটওয়ার্কের উপর অনেক ধরণের সাইবার অ্যাটাক হতে পারে। সাইবার অ্যাটাকগুলোকে সাধারণত ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। তাহলো-Confidentiality
Integrity
Availability
Attacks On Confidentiality
ব্যাক্তিগত তথ্য, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদি তথ্য চুরি করা এই আক্রমণের আওতায় পড়ে। সাইবার অপরাধীরা এসব তথ্য সংগ্রহ করে অন্যদের ব্যবহার করার জন্য ডার্ক ওয়েবে বিক্রি করে।
Attacks On Integrity
এটি দ্বারা সাধারণত বোঝায় ডিভাইসে অবৈধ ভাবে প্রবেশ করে সেখানে সংরক্ষিত থাকা ব্যাক্তিগত তথ্য, গোপন ফাইল বা ডকুমেন্ট প্রকাশ্যে নিয়ে আসা। যাতে উক্ত ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানে সম্মানহানী হয় এবং জনগনের বিশ্বাস হারানোর জন্য প্রভাবিত করে।
Attacks On Availability
এ ধরনের সাইবার অ্যাটাকে অপহরণের সাথে তুলনা করা যায়। যেখানে ব্যবহারকারীর নিজস্ব ডাটা বা অ্যাক্সেস চুরি করে টাকার বিনিময়ে এগুলো ফেরত দেয়। সাধারণত সাইবার ক্রিমিনাল আপনার নেটওয়ার্কে প্রবেশ করে গুরুত্বপূর্ণ ডাটা অ্যাক্সেস থেকে আপনাকে অবরুদ্ধ করে দেয়। যার ফলে আপনি আপনার ডাটাগুলোর অ্যাক্সেস পান না।
সাইবার সিকিউরিটি কেন জরুরি
কম্পিউটারে সংরক্ষিত থাকা ফাইল, ডাটা, ইনফরমেশন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের সাইবার অ্যাটাক থেকে রক্ষা করার জন্য সাইবার সিকিউরিটি প্রয়োজন।
হ্যাকার বা সাইবার ক্রিমিনালদের সংখ্যা বর্তমানে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের মাধ্যমে সংগঠিত বিভিন্ন সাইবার অপরাধের হাত থেকে নিজেদের ডিভাইসের মধ্য রাখা তথ্য সংরক্ষিত রাখতে সাইবার সিকিউরিটি জরুরি।
ব্যাকিং এবং বিভিন্ন ধরণের Financial সেক্টরগুলোকে সাইবার ক্রিমিনালদের হাত থেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য সাইবার সিকিউরিটি অতীব জরুরি।
সাইবার সিকিউরিটি দেশের ডিফেন্স সিস্টেমকে সুরক্ষিত রাখার ক্ষেত্রে সাইবার সিকিউরিটির ভূমিকা অপরিহার্য।
সরকারি এবং বেসরকারি অফিসে বিভিন্ন ধরণের তথ্য বর্তমান কম্পিউটারে সংরক্ষিত থাকে। যা হ্যাকারদের দ্বারা হ্যাকিং হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। তাই সরকারি দপ্তরে বিভিন্ন কোম্পানির তথ্য বেহাত হতে রক্ষা করতে সাইবার সিকিউরিটি প্রয়োজন।
সাইবার সিকিউরিটি প্রকারগুলো কি কি
আলাদা আলাদা ডিজিটাল environment এর মধ্য আলাদা আলাদা রকমের সিকিউরিটি ইস্যু এর উপর ভিত্তি করে সাইবার সিকিউরিটি ইউজারদের সেবা প্রদান করে।
বিভিন্ন ধরণের সাইবার অপরাধগুলোকে প্রতিহত করার জন্য সাইবার সিকিউরিটির প্রকারকে ৬টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
Network and Getway Security
Application Security
Data Loss Prevention ( DLP )
Email Security
Network Access Control ( NAC )
Antivirus Security
Network and Getway Security একটি নিরাপদ ওয়েব গেটওয়ে কোম্পানির নীতি প্রয়োগ করে এবং ইন্টারনেট বাউন্ড ট্রাফিক ফিল্টার করে, অনলাইন নিরাপত্তা হুমকি এবং আক্রমণ থেকে একটি নেটওয়ার্ককে রক্ষা করে।
একটি নিরাপদ ওয়েব গেটওয়ে হলো একটি অন প্রিমিস বা ক্লাউড ডেলিভারি নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা পরিসেবা। যা ব্যবহারকারী এবং ইন্টারনেটের মধ্য বিভিন্ন ধরণের অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং ফিসিং লিংকগুলোর হাত থেকে নেটওয়ার্ককে রক্ষা করে।
যেমন: URL ফিল্টারিং অ্যাপলিকেশন নিয়ন্ত্রণ, ডাটা চুরি প্রতিরোধ, অ্যান্টিভাইরাস এবং https পরিদর্শন।
Application Security Application Security মাধ্যমে নেটওয়ার্কের মধ্যে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরণের অ্যাপলিকেশনগুলোকে একটি সুরক্ষা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিয়ে বিভিন্ন ধরণের সাইবার অ্যাটাকের হাত থেকে রক্ষা করা।
যদি কোন অ্যাপলিকেশন এর মধ্য কোন ধরণের ক্রটি দেখা দেয় যা নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ তাকে সিস্টেম থেকে বের করে দেয়া।
Data Loss Prevention ( DLP )এই প্রক্রিয়ায় ইউজারের ডাটা ইনকোড করে তা বিভিন্ন ধরণের সাইবার অ্যাটাক থেকে রক্ষা করে তথ্যের সুরক্ষা প্রদান করে। যার ফলে ডাটা চুরি হওয়ার কোনো ভয় থাকে না।
Email Security আমরা লক্ষ্য করেছি যে, আমাদের জিমেইলে একটি Spam Folder রয়েছে। ইমেইল সিকিউরিটি ব্যবস্থা নেটওয়ার্কে সংযুক্ত থাকার কারণে যেকোনো ধরণের সাইবার হুমকি যা ইমেইল সাইবার তথ্যের জন্য ঝুকিস্বরূপ তা সরাসরি Spam Folder এ চলে যায়।
Network Access Control ( NAC ) নেটওয়ার্ক অ্যাক্সেস নিয়ন্ত্রণ হলো অপরিচিত এবং অননুমোদিত ব্যবহারকারী এবং ডিভাইসগুলোকে একটি ব্যাক্তিগত নেটওয়ার্কের বাইরে রাখার কাজ। যে কোম্পানিগুলো কোম্পানির বাইরে থেকে নির্দিষ্ট ডিভাইস বা ব্যবহারকারীদের মাঝে মাঝে নেটওয়ার্কে অ্যাক্সেস দেয় তারা এই ডিভাইসগুলো কর্পোরেট নিরাপত্তা সম্মতি বিধিগুলো পূরণ করে তা নিশ্চিত করতে নেটওয়ার্ক অ্যাক্সেস নিয়ন্ত্রণ ব্যবহার করতে পারে।
নেটওয়ার্ক অ্যাক্সেস নিয়ন্ত্রণের একটি সুবিধা হলো যে ব্যবহারকারীদের মাল্টি-ফ্যাক্টর নিশ্চিতকরণের প্রয়োজন হতে পারে, যা আইপি অ্যাড্রেস বা ব্যবহারকারীর নাম এবং পাসওর্য়াড সংমিশ্রণের উপর ভিত্তি করে ব্যবহারকারীদের সনাক্ত করার চেয়ে অনেক বেশি নিরাপদ।
Antivirus Security Antivirus হলো একধরণের সফটওয়্যার যা কম্পিউটার থেকে ভাইরাস প্রতিরোধ, স্ক্যান, সনাক্ত এবং ভাইরাস ডিলিট করার জন্য ব্যবহৃত হয়। একবার ইনস্টল হয়ে গেলে, বেশিরভাগ Antivirus সফটওয়্যার ভাইরাস আক্রমণের বিরুদ্ধে রিয়েল-টাইম সুরক্ষা প্রদান করতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখে।
Antivirus সুরক্ষা প্রোগ্রামগুলো আপনার ফাইল এবং হার্ডওয়্যারকে ম্যালওয়্যার যেমন ওয়ার্ম, ট্রোজান হর্স এবং স্পাইওয়্যার থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে এবং কাস্টমাইজযোগ্য ফায়ারওয়াল এবং ওয়েবসাইট ব্লক করার মতো অতিরিক্ত সুরক্ষা ও দিতে পারে।
তাই প্রত্যেকের কম্পিউটারে একটি Antivirus সফটওয়্যার থাকা অনেক জরুরি।
সাইবার সিকিউরিটির লাভ ও সুবিধা
জরুরি ডাটা এবং তথ্যগুলোকে হ্যাকিং করার হাত থেকে সুরক্ষিত রাখা। যেকোনো ডিভাইস এর মধ্যে বিভিন্ন রকমের threats গুলো আক্রমণ করতে পারে। যেমন: Virous, Spyware, Worms, Adware ইত্যাদি Virous and Malware গুলোর থেকে হতে পারা ক্ষতি থেকে বাচতে পারবেন।
Online transaction গুলোকে সুরক্ষিত ভাবে করা সম্ভব।
নেটওয়ার্কের মধ্য সুরক্ষা প্রদান করা হয় এবং অননুমোদিত ইউজার বা হুমকিগুলোকে নেটওয়ার্কের মধ্য ঢুকতে দেওয়া হয় না।
পরিশেষে বলতে পারি, বর্তমান সময়ের জন্য সাইবার সিকিউরিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাইবার সিকিউরিটি না থাকলে আমরা প্রতিনিয়ত ডাটা, তথ্য ইত্যাদি প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়ে প্রতিনিয়ত বিভ্রান্তিতে পড়তে হতো।
সাইবার সিকিউরিটি ব্যবহার এর ফলে আমরা উপরোক্ত সুবিধাগুলো পেয়ে থাকি। ফলে আমাদের তথ্য চুরি, হ্যাকিং ইত্যাদির ভয় থাকে না।