Islamer tori

Islamer tori welcome to your page we provide world news Islamic story Islamic history motivational educational s..

 াগুনের_গল্প    #পর্বঃ-০২সানজিদা চলে গেল, না না সানজিদা নয় সেই মেয়ে চলে গেছে। নামটা জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল কিন্তু জিজ্ঞেস...
17/07/2024

াগুনের_গল্প
#পর্বঃ-০২

সানজিদা চলে গেল, না না সানজিদা নয় সেই মেয়ে চলে গেছে। নামটা জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল কিন্তু জিজ্ঞেস করা হয়নি, সবকিছু শুনে কেমন একটা অচেতন ঘোরের মধ্যে গেছিলাম।

- রকি বললো, মেয়েরা কতটা রূপ ধারণ করতে পারে দেখলি তো সজীব? এ জন্য এসব প্রেম কেন যেন তুচ্ছ মনে হয়, মনে হয় ভালবাসা বলতে কিছু নেই জগতে।

- বললাম, সানজিদা আমার সাথে এমনটা করবে কেন রকি? আমি তো তার কোন ক্ষতি করিনি তবে কেন সে এমন করলো আমার সাথে?

- বহুরূপী মেয়েদের কাছে এগুলো জিজ্ঞেস করে লাভ নেই সজীব, চল বাসায় যাই। আজকে ভালবাসা দিবস সেটা মন থেকে মুছে ফেল, আর মনে কর যে আজকে ফাগুনের শুভেচ্ছা নিতে এসেছি। চট্টগ্রাম থেকে যখন এসেছিস তখন কিছুদিন থাক এখানে তারপর সবকিছু ঘুরে ঘুরে দেখে চলে যাবি।

- আমি সানজিদার সাথে একটু মুখোমুখি দেখা করে কিছু প্রশ্ন করতে চাই।

- কি লাভ? শুধু শুধু কেন এসব নিয়ে থাকবি? দেখ সজীব সবকিছু স্বাভাবিক ভাবে মনে কর তাহলে দেখবি সব ভালো লাগবে। কিন্তু যত বেশি এসব নিয়ে ভাবতে যাবি ততই কিন্তু কষ্ট হবে।

- তবুও এসেছি যখন আমি তার সাথে দেখা করে আমার অপরাধ জেনে তারপর যাবো।

- ঠিক আছে দেখ তোর যেটা ভালো মনে হয় সেটাই কর সমস্যা নেই আমি তোর সাথে আছি।

- ধন্যবাদ বন্ধু।

রকির সাথে বেশি তর্কে জড়িয়ে লাভ নেই কারণ রকিও একটা মেয়েকে ভালবেসে অনেক বড় আঘাত পেয়েছে। আমরা যখন চট্টগ্রামে পড়াশোনা করতাম তখন রকি আমাদের ডিপার্ট্মেন্টের একটা মেয়ের সাথে রিলেশন করতো। আড়াই বছর প্রেম করার পর মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেল একটা জার্মান প্রবাসীর সঙ্গে। সেই মেয়ে বিয়ে করে স্বামীর সাথে জার্মান চলে গেল আর রকি তখন এতটা ভেঙ্গে পরেছিল যেগুলো এখনো মনে পরলে খারাপ লাগে।

যেহেতু ফেব্রুয়ারী মাসের মাঝামাঝি তাই শীতের প্রকোপ নেই বললেই চলে। হয়তো গ্রামের বাড়িতে হালকা শীতের আবহ থাকতে পারে কিন্তু শহরে আর তেমন ঠান্ডা নেই। তবুও রাস্তার পাশে নানান মানুষ শীতের পিঠা বানিয়ে বসে আছে, এদের মধ্যে হয়তো বেশিরভাগ গরীব পরিবারের। এরা দিনরাত লড়াই করে যাচ্ছে শুধু দুবেলা পেট ভর্তি করে খাবার খেয়ে রাতে একটু শান্তিতে ঘুমানোর জন্য।

বাসায় ফিরে রাতের খাবার খেতে ইচ্ছে করছে না তবুও রকি আর তার মা-বাবার অনুরোধে না খেয়ে পারলাম না। শুধু বারবার সানজিদার এমন নিষ্ঠুর আচরণ মনে পরছে, চোখ দিয়ে পানি আসতে চায় কিন্তু আসে না। মনের মধ্যে ঠিকই কান্না এসেছে, রুমের মধ্যে এসে বেলকনিতে বসে বসে পিছনের কিছু স্মৃতি মনে পরছে।

আট মাস আগে "স্নিগ্ধ শিশির" নামের একটা আইডি থেকে ফেসবুকে একটা গ্রুপের মধ্যে ভালো সচেতনতা মূলক পোস্ট করা হয়েছিল। আমি সেই পোস্টে একটা রচনা মূলক মন্তব্য করেছিলাম, আর তারপর সেই কমেন্ট রিপ্লাই করতে করতে মেসেজ করা আরম্ভ। তারপর থেকে বন্ধুত্ব আর সেই বন্ধুত্ব থেকে ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।

কতক্ষণ পেরিয়ে গেছে জানি না, মোবাইলের শব্দে চমকে উঠে তাকিয়ে দেখি বাবা কল দিয়েছে। আমি রিসভ করে বললামঃ-

- হ্যালো বাবা?

- কিরে কেমন আছো? কোথায় তুই?

- বাবা আমি একটু খুলনা শহরে এসেছি, একটা বন্ধু আছে এখানে তার সাথে দেখা করতে আসলাম।

- আমি তো ভেবেছিলাম তোর কোন বন্ধুর কাছে চট্টগ্রামেই আছিস, তোর মা পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে কি যেন বললো বুঝতে পারলাম না।

- চিন্তা করো না বাবা, আমি চলে আসবো কিছুদিন দেরি হতে পারে।

- চাকরির কোন ব্যবস্থা হলো?

- না বাবা।

- আচ্ছা আমি আমার এক পরিচিত ব্যক্তির সাথে কথা বলেছিলাম, সে তোকে দেখা করতে বলেছে। তুই চট্টগ্রামে ফিরেই তার সাথে দেখা করবি, মনে হয় ব্যবস্থা হয়ে যাবে।

- এর আগেও তোমার তিনজন বন্ধুর সাথে চাকরির জন্য যোগাযোগ করেছি বাবা, সবাই কিন্তু দেখছি, দেখি ইত্যাদি বলে রেখেছে।

- তবুও চেষ্টা করেছে তারা।

- তাদের সেই চেষ্টা করার জন্য আমি চিরকৃতজ্ঞ।

- আচ্ছা ভালো থাকিস বাবা।

- তুমিও ভাল থেকো, নিজের যত্ন নিও।

মনটা শক্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা করছি তবুও তাকে কোনরূপে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। জগৎ সম্পুর্ণ অদ্ভুত, এখানে দিনশেষে কেউ কেউ একাকীত্বে সুখ খুঁজে নেয় আবার কেউ বা ব্যস্ততায় খুঁজে পাচ্ছে তার সকল সুখ। হঠাৎ করে কেউ হারিয়ে গিয়ে অনেকটা ভালো থাকে, কেউ কেউ খুব প্রিয়জন হারিয়ে যাবার বেদনায় কষ্টের সঙ্গে বাস করে। একটা কথা চিরন্তন সত্য তা হচ্ছে, আমি আপনি সবাই মিলে সুখে থাকার অভিনয় করে যাই মাত্র। আর কি আশ্চর্য দেখুন..!
"সুখের ব্যাখ্যাগুলো আমাদের সবার জীবনে ভিন্ন!"

রাত এগারোটার কিছুক্ষণ পরে বইমেলায় দেখা হওয়া সেই সানজিদার বান্ধবী কল দিল। আমি একটু অবাক হলাম, পরক্ষণেই মোবাইল রিসিভ করে কানের কাছে ধরে চুপ করে রইলাম।

- মেয়েটা বললো, শুনতে পাচ্ছেন?

- হ্যাঁ পাচ্ছি, বলেন।

- কি করছেন?

- একা একা বাতি বন্ধ করে ভাবনার জগতে বিচরণ করছি, জগতের সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার নিয়ে ভেবে দেখি।

- আপনি তো আবার কবি মানুষ তাই আপনাদের চিন্তা চেতনা একটা ভিন্ন ধরনের, তাই না?

- সম্পুর্ন সঠিক না, তবে কিছুটা সত্যি।

- ডিনার করেছেন?

- হ্যাঁ করেছি, আপনি?

- হ্যাঁ।

- আপনার বান্ধবী মানে রুমমেইট করেছে?

- হ্যাঁ আমরা দুজনেই একসাথে খেয়ে তারপর এই মাত্র ফ্রী হলাম, সানজিদা পাশের রুমে গিয়েছে তাই সুযোগ পেয়ে কল দিলাম আপনার কাছে।

- কেন? যার জন্য এতটা কষ্ট করেছি, সুদূর চট্টগ্রাম থেকে এতটা পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি সেই মানুষটা যখন আমার কষ্ট বুঝলো না তখন আপনি আর কেন শুধু শুধু।

- আসলে আপনার কাছ থেকে চলে আসার সময় আপনার দুচোখ ভর্তি প্রচুর মমতা দেখতে পেলাম। সেই চোখের মধ্যে অসংখ্য কষ্ট লুক্কায়িত মনে হলো আমার কাছে তাই কৌতুহল বোধ থেকে কল দিলাম। এতে যদি আপনি বিরক্ত হন তাহলে আমি দুঃখিত, ক্ষমা করবেন আমাকে।

- প্লিজ ভুল বুঝবেন না, আমি এভাবে কথাটা বলতে চাই নাই।

- ঠিক আছে সমস্যা নেই, আসলে আপনার মনের অবস্থা ভালো না তাই এই মুহূর্তে আপনার তিক্ত ব্যবহারেও কিছু মনে করবো না।

- ধন্যবাদ আপনাকে।

- একটা কৌতুহল জনিত প্রশ্ন করবো?

- হ্যাঁ অবশ্যই।

- আপনি বইমেলায় আমাকে তুমি তুমি বলে ডেকে এখন মোবাইলে আপনি করে বলছেন কেন?

- আমি তো ভেবেছিলাম আপনি সানজিদা তাই তো তুমি করে বলা হয়েছে নাহলে তো বলতাম না।

- ওহহ আচ্ছা।

- একটা সাহায্য করবেন আমাকে?

- কিরকম সাহায্য? আপনি বলেন, আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।

- সানজিদার সাথে একটিবার দেখা করতে চাই, আপনি যেভাবেই হোক ব্যবস্থা করে দিবেন প্লিজ?

- কিন্তু ও রাজি হবে না।

- আপনি বাসায় যাবার পর আমার কথা কিছু কি জিজ্ঞেস করেনি?

- নাহহ তেমন কিছু না, আপনার বিষয় সানজিদার কোন আগ্রহ নেই।

- আপনি কি একটু ব্যবস্থা করবেন? আমি একটা বার তাকে দেখতে চাই।

- দেখুন আমি বুঝতে পারছি আপনার আবেগ কিন্তু কি করবো বলেন? আমি নিরুপায়।

- আচ্ছা ঠিক আছে সরি।

- ভালো থাকবেন সবসময়, রাখলাম।

- আপনিও ভালো থাকবেন।

রাতের বেলা সানজিদার নাম্বারে কয়েকবার কল দিলাম কিন্তু রিসিভ করলো না। তারপর একটা খুব ইমোশনাল মেসেজ দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা আরম্ভ করে দিলাম।

★★

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে দৈনিক পত্রিকা পড়ছিলাম। রকির বাবা রিটায়ার্ড সরকারি চাকরিজীবি, তাই তিনি নিয়মিত দৈনিক পত্রিকা পড়েন। বেশিরভাগ সরকারি অফিসে দৈনিক পত্রিকা রাখা হয় আর সেখান থেকেই তাদের অভ্যাস হয়ে যায়। রকির বাবা সৎ লোক, নিজের সন্তানকে চাইলে ঘুষ দিয়ে একটা সরকারি চাকরি ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। কিন্তু তিনি সেটা করবেন না কারণ যেই চাকরি হারাম টাকা লেনদেন করে শুরু হবে সেটা সারাজীবন হারাম বয়ে আনবে এটাই তার বিশ্বাস।

সকাল সাড়ে নয়টার দিকে সানজিদার বান্ধবী কল দিল আবারও, আমি অবাক হলাম না, মনে হয় ধরে নিয়েছিলাম তিনি কল দিবেন। কিন্তু তার নামটা জানা হচ্ছে না, আমি রিসিভ করে আবারও চুপ করে রইলাম।

- সে বললো, শুনছেন?

- গতকাল রাতের মতো আবারও সেই বাক্য, আমি বললাম হ্যাঁ শুনছি কেমন আছেন?

- শুভ সকাল, আমি ভালো আছি আপনি?

- আমিও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ, নাস্তা করা হয়েছে?

- হ্যাঁ অনেক আগেই করেছি।

- ওহহ আচ্ছা।

- একটা কথা বলার জন্য কল দিলাম।

- জ্বি বলেন।

- আপনি চট্টগ্রামে যাচ্ছেন কবে?

- সানজিদার সাথে দেখা না করে আমি যাবনা, আমি জানি তাকে আমি কোনদিন পাবো না তবুও তার সাথে একটা বার দেখা করতে চাই।

- আমি যদি আজকে আরেকবার আমার সাথে দেখা করতে বলি তাহলে আপনি কি আমার সঙ্গে দেখা করবেন?

- আপনি দেখা করতে চান?

- হ্যাঁ যদি আপনি চান তবে।

- ঠিক আছে দেখা হবে, কিন্তু কোন যায়গা? কালকে যেখানে গেছিলাম সেই বইমেলায়?

- নাহহ, রূপসা ব্রীজের উপর। আপনার মনে আছে সানজিদা আপনাকে বলেছিল যে আপনি আসলে আপনাকে সে রূপসা সেতু ঘুরিয়ে দেখাবে? আপনি নাকি সবসময় অনলাইনে দেখেছেন, তাই আপনার খুব ইচ্ছে রূপসা সেতু দেখবেন।

- হ্যাঁ বলেছিলাম কিন্তু আপনি?

- আমি তো ওর রুমমেইট তাই এসব কিছু কিছু জানি আমি।

- ওহহ আচ্ছা, আসলে ২০১৩ সালে আমি প্রথম বিটিভিতে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান "ইত্যাদি"এর মধ্যে হানিফ সংকেতের উপস্থাপনায় রূপসা সেতু দেখি। সেবার ইত্যাদি অনুষ্ঠান ধারণ করা হয়েছিল ব্রীজের নিচে। তারপর যখন আমার বন্ধু রকি চট্টগ্রামে বসে তার সাথে পরিচয় হলো। তার মোবাইলে একদিন দেখি অনেক গুলো ব্রীজের উপর দাঁড়িয়ে ছবি তোলা হয়েছে, তখন থেকে অনেক ইচ্ছে ছিল।

- ঠিক আছে তাহলে আজকে বিকেলে সেখানে আমাদের দেখা হচ্ছে।

- আমি আপনাকে পাবো কীভাবে? আর আমি তো চিনিনা।

- আপনার বন্ধুর বাসা কোথায়?

- জোরাগেট, আমি তো গতকাল জোরাগেট বলে রিক্সায় উঠেছিলাম।

- ঠিক আছে আপনি বিকেলে ঠিক সাড়ে চারটার দিকে জোরাগেটের ওখানে দেখবেন একটা বিমান এর প্রতিক আছে সেখানে দাঁড়াবেন। আমি এসে আপনাকে সেখান থেকে নিয়ে যাবো।

- আমার বন্ধু যদি সাথে যায়?

- তাকে না নিলে হয় না?

- আচ্ছা ঠিক আছে আমি একাই আসবো।

- ওকে রাখলাম তাহলে?

- ঠিক আছে ভালো থাকবেন।

★★

রকির কাছে সবকিছু খুলে বললাম, সব শুনে রকি বললো, " সমস্যা নেই তুই চলে যা দেখা করতে, মনে হয় মেয়েটা ভালোই আছে। যদি সেখানে গিয়ে কোন সমস্যা হয় তবে কোনরকমে একটা কল দিবি আমি উড়তে উড়তে চলে যাবো। "

বললাম, " ঠিক আছে বন্ধু তাই হবে। "

বিকেল বরাবর সাড়ে চারটার দিকে আমি বাসা থেকে বেরিয়ে জোড়াগেটের সামনে বিমানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তাটা তিন মুখো, শহরের ভিতর থেকে এসে এখান থেকে দু'দিকে বিভক্ত হয়ে গেছে। মেয়েটার আসতে দেরি হচ্ছে, সকালে কল দিয়েছে তখনও নাম জিজ্ঞেস করা হয়নি। তার সাথে কথা বলতে গেলে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায় নাকি? কি সাংঘাতিক ব্যাপার, এটা কেন হচ্ছে?

মেয়েটা আসলো চারটা পঞ্চাশ মিনিটে, ইজিবাইক থেকে নেমে আমার সামনে এসে বললো, চলুন এখন আবার নতুন করে গাড়িতে উঠতে হবে।

আমরা রাস্তার এপাড়ে এসে একটা মাহিন্দ্রায় উঠে গেলাম, মেয়েটা বললো রূপসা যাবো।

আজকে সে নীল রঙের ড্রেস পরে এসেছে, একদম সবকিছু নীল। পা থেকে মাথা পর্যন্ত যা কিছু চোখে দেখতে পাচ্ছি সবকিছু মনে হয় নীল। নীল রঙের ড্রেস পরে মেয়েটাকে খুব সুন্দর লাগছে, চলন্ত মাহিন্দ্রার মধ্যে বাতাসে তার চুল গুলো বাতাসে উড়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে আমার মুখে পরছে, সে একটু পর পর সেগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাচ্ছে। আমার মনে নামটা জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে না, কেন করছে না জানিনা। তাই কিছু না বলে চুপচাপ বসে রইলাম দুজনেই।

রূপসা এসে সেখান থেকে আবার ইজিবাইকে করে যেতে হচ্ছে, ব্রীজের কাছে যখন নামলাম তখন ঘড়ি বলছে বরাবর পাঁচটা ত্রিশ।

আমি মুগ্ধ হয়ে খুলনা শহরের অন্যতম সৌন্দর্য রূপসা সেতু চোখের সামনে দেখছি। পাশে একজন নীল রঙের ড্রেস পরা সুন্দরী রমণী, যদিও তার সাথে আমার আপনি বলা সম্পর্ক তবুও কেউ তো আর সেটা জানছে না। আশেপাশে আরো কয়েকটা প্রেমিক প্রেমিকা দেখা যাচ্ছে, আমরা আস্তে আস্তে সিড়ি দিয়ে ব্রীজের উপর উঠলাম। হাঁটতে হাঁটতে ব্রিজের ওপারে গিয়ে নামার আগেই মাগরিবের আজান দিয়ে দিল। ফেব্রুয়ারী মাস দিন অনেকটা ছোট, প্রায় এক কিলোমিটার এর বেশি পথ দুজনেই কথা বলতে বলতে পার করে দিলাম। ওপাড়ে গিয়ে আবারও সিড়ি বেয়ে নিচে নামলাম।

- মেয়েটা বললো, আমি যতদুর জানি আপনি মনে হয় নিয়মিত নামাজ পড়েন। ওইযে দেখুন পুরুষেরা মাগরিবের নামাজ পড়ছে, আপনি তাদের সাথে গিয়ে নামাজ পড়ুন।

- দেখলাম সত্যি সত্যি ব্রিজের নিচে একটা পিলারের পাশে খানিকটা স্থানে নামাজে দাঁড়িয়ে গেছে সবাই। তার পাশেই একটা ড্রামের মধ্যে পানি দিয়ে কেউ কেউ অযু করছে। আমি সেখান থেকে অযু করে সবার সাথে জামাতে নামাজ আদায় করলাম আর মেয়েটা একটু পাশেই দাঁড়িয়ে রইলো।

নামাজ শেষ করে দুজনেই হাঁটতে হাঁটতে একটু পিছনে সবুজ ঘাসের উপর গিয়ে বসলাম। মেয়েটা ব্যাগের ভেতর থেকে একটা বাটি বের করলো, আমি তাকিয়ে আছি, তারপর আমার হাতে দিয়ে বললো,

- সানজিদা আপনার জন্য নুডলস রান্না করে পাঠিয়ে দিয়েছে, আপনি খেলে খুব খুশি হবে সে।

- সে দেখা করবে না?

- জানিনা আমি।

- তাহলে খাবো না।

- প্লিজ খেয়ে নিন, আমি চেষ্টা করবো আপনার সাথে ওর দেখা করিয়ে দিতে।

- সত্যি বলছেন?

- হ্যাঁ সত্যি বলছি এবার খান, সানজিদা বলছিল নুডলস আপনার নাকি খুব পছন্দের তাই সে আমার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে।

- ওহহ আচ্ছা, একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?

- করুন।

- আপনার নাম কি?

- হাহাহা, দুদিন পর আপনার নামের দরকার?

- না আসলে জিজ্ঞেস করা হয়নি।

- অন্য একদিন বলবো।

- আপনার ইচ্ছে।

নুডলস রান্না খুবই ভালো হয়েছে, ব্যাগের ভেতর চামচ পানির বোতল সবকিছু ছিল। একা একা সম্পুর্ণ বাটি খালি করে দিলাম, মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে নাকি অন্যদিকে তা জানিনা।

খাবার শেষে তার মোবাইলে কল এলো, আমার দিকে নাম্বার দেখিয়ে বললো সানজিদা কল দিয়েছে। তারপর রিসিভ তার সাথে কথা বললো।

কথাগুলো এমনঃ-

হ্যাঁ দেখা হয়েছে, আমরা একসাথে আছি, সে এখন নুডলস খাচ্ছে, না না তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো। ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।

খাবার শেষ করে আমরা উঠে আবারও হাঁটতে শুরু করেছি, সিড়ি বেয়ে উঠে পিছনের দিকে যাচ্ছি। সে বললো, " চলুন তাহলে ফেরা যাক? " আমিও তার সাথে সম্মতি দিয়ে হাঁটতে লাগলাম। সেতু পার হয়ে নিচে এসে আমরা আবারও ইজিবাইকে করে রওনা দিলাম।

আমরা সরাসরি বাসার দিকে না গিয়ে সানজিদার বান্ধবী আমাকে নিয়ে একটা মার্কেটের দিকে এলো। আমাকে বললো, এটা নাকি ডাক বাংলােরমোড় হিসেবে পরিচিত। আমি তার পিছনে পিছনে হাঁটছি, হঠাৎ করে একটা কাপড়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে গেল। ভিতরে একটা হিন্দু মহিলা (মাথায় সিঁদুর পরা, হাতে সাখা) বসে আছে এবং সাথে দুটো লোক আছে। আমি বাহিরে দাঁড়িয়ে রইলাম আর সে মহিলার কাছে গিয়ে একটা হাতের ব্যাগে নিয়ে এলো। ব্যাগ দেখে মনে হচ্ছে এর মধ্যে হয়তো কাপড় আছে, কিংবা অন্য কিছু।

আমরা ইজিবাইকে করে জোড়াগেট এসে নামলাম, মেয়েটা আমার হাতে ব্যাগটা দিয়ে বললোঃ- এগুলো সবকিছু আপনার জন্য।

- মানে কি?

- আজকে সকালে আপনাকে কল দিয়ে দেখা করতে বলার পর আপনি যখন রাজি হলেন। তখন আমি সানজিদা আর আমাদের একটা বান্ধবী এসে এগুলো কিনেছিলাম। সবকিছু আপনার সানজিদা আপনার জন্য পছন্দ করে কিনেছে।

- কি কি আছে এর মধ্যে?

- দুটো প্যান্ট, দুটো শার্ট, দুটো গেঞ্জি, একটা ঘড়ি, এক জোড়া জুতা, একটা সানগ্লাস, আর একটা পারফিউম।

- এতকিছু?

- কেন নিবেন না?

- না।

- কেন?

- সানজিদাকে বলবেন আমি তার সাথে দেখা করার জন্য এতদূর এসেছি। সে যদি আমার সাথে দেখা না করে তাহলে কি লাভ এতকিছু দিয়ে মিথ্যা কষ্ট বৃদ্ধি কর?

- আপনি সত্যি সত্যি নিবেন না?

- নাহহ।

- যদি সানজিদার সাথে দেখা করিয়ে দেই তাহলে কি নিবেন?

- হ্যাঁ।

- ঠিক আছে সানজিদার সাথে দেখা হবে, কিন্তু তার আগে একটা শর্ত থাকবে।

- কি শর্ত?

- সানজিদা আপনার সাথে দেখা করবেবে, তারপর থেকে সানজিদাকে আপনার ভুলে যেতে হবে এবং তার সাথে কিংবা আমার সাথে কখনো দেখা করতে বা কথা বলতে চাইতে পারবেন না।

- আমি রাজি, সানজিদার সাথে একটাবার দেখা করে তারপর আমি চলে আসবো। কথা দিচ্ছি আর কোনদিন আপনাকে কিংবা আপনার বান্ধবীকে আমি সজীব বিরক্ত করবো না।

- ঠিক আছে চলুন তাহলে।

আমরা আবারও ইজিবাইকে করে রওনা দিলাম, মিনিট পনের পরে আমরা নামলাম। সামনে একটা রাস্তার পাশে কলেজ দেখতে পাচ্ছি, কলেজের গেটে লেখা "সিটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট"। আমরা কলেজের পাশ দিয়ে হেঁটে একটু ভিতরে একটা মাঠে প্রবেশ করলাম। বুঝতে পারলাম এটা একটা স্কুল মাঠ, স্কুলের নাম লেখা আছে "রোটারি স্কুল"।

- সে বললো, আপনি এখানে অপেক্ষা করুন আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যে সানজিদাকে নিয়ে আসবো।

আমি 'আচ্ছা' বলে দাঁড়িয়ে রইলাম। কিন্তু পাঁচ মিনিটে কেউ আসলো না বরং কুড়ি মিনিট পরে মোবাইলে কল এলো। তাকিয়ে দেখি সানজিদা কল দিয়েছে, আমি রিসিভ করে হ্যালো বলার আগেই পিছন থেকে একটা মেয়ে বললো,

- আপনার নাম সজীব তাই না?

- আমি তাকিয়ে দেখি একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে, বললাম, হ্যাঁ আমি সজীব, আপনি?

- আমি ফারজানা মুন্নী, আপনি সানজিদার জন্য দাঁড়িয়ে আছেন তাই না?

- জ্বি।

- সানজিদা আসবে না।

- কেন? আর তার বান্ধবী কোথায়?

- ভাইয়া আপনি সানজিদা নামের যাকে চিনেন আসলে সেই সানজিদা নামে বাস্তবে কেউ নাই। যার সাথে আপনি এতদিন কথা বলেছেন তার না অন্য কিছু।

- মানে?

- ঠিকই বলছি, আপনি গতকাল যার সাথে দেখা করেছেন আর আজকে বিকেল থেকে এতক্ষণ যার সাথে ছিলেন সেই আপনার কথিত সানজিদা। তবে তার নাম অন্য কিছু।

- নামের মধ্যে কিছু যায় আসে না কিন্তু আমার সাথে যার দেখা হয়েছে সেই যদি সানজিদা হয় তাহলে সে আমার সাথে লুকোচুরি করছে কেন?

- কারণটা অনেক বড় ভাইজান।

- আমি কি জানতে পারি?

- আপনি যাকে সানজিদা নামে জানেন ওর নাম অর্পিতা বিশ্বাস মানে সে হিন্দু। আর ও হিন্দু এবং আপনি মুসলমান তাই অর্পিতা আপনাদের এই সম্পর্কে এগিয়ে নিতে চায় না। অর্পিতা ভাবতে পারে নাই প্রেমটা এত গভীর হয়ে যাবে, কিন্তু যখন সে বিষটা শেষ করতে চেয়েছে তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। যার ফলে আজকের এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, আমি অর্পিতার হয়ে ক্ষমা চাই। আপনার সাথে গতকাল আপনার ভালবাসার মানুষ দেখা করেছে, আজকে সকালে আমি আর অর্পিতা গিয়ে আপনার জন্য এগুলো কিনেছি। সবকিছু অর্পিতা পছন্দ করে কিনেছে, আপনার জন্য ও খুব কষ্ট পাচ্ছে। কালকে দেখা করে এসে অনেকক্ষণ কান্না করেছে, আজকে যখন পছন্দ করে কিনেছে তখনও চোখের পানি ফেলেছে। বিশ্বাস করুন ভাই, আপনি সানজিদা নামটা যতটা ভালবাসেন অর্পিতা ঠিক ততটাই আপনাকে ভালবাসে। কিন্তু হিন্দু মুসলিমের এর দুই ধর্মের দুজনের ভালবাসা যখন সফলতা পাবে না তখন রেখে কি লাভ? তাই অর্পিতা আপনার কাছ থেকে সরে যেতে চাচ্ছে। আপনি ওর এই সামান্য উপহার গ্রহণ করে এগুলো নিয়ে চলে যান। আবারও বলছি তাকে ক্ষমা করবেন প্লিজ, অর্পিতা আপনাকে ওর নিজের চাইতেও বেশি ভালবাসে। এখন আমি রুম থেকে আসার সময় দেখেছি রুমের মধ্যে বসে বিছানায় শুয়ে চিৎকার করে কান্না করছে।

চলবে....

লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম

- আমার ছাত্রী গত মাসের টিউশনির টাকাটা দিয়ে বললো, স্যার টাকা দিয়ে কালকে ভালবাসা দিবসে আপনার গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে...
16/07/2024

- আমার ছাত্রী গত মাসের টিউশনির টাকাটা দিয়ে বললো, স্যার টাকা দিয়ে কালকে ভালবাসা দিবসে আপনার গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যাবেন তাই না? আপু খুব সুন্দরী মনে হয়, সে কার মতো দেখতে স্যার?

- আমি বললাম, আমি যে দেখা করতে যাবো সেটা তুমি জানলে কীভাবে?

- স্যার ক্ষমা করবেন, আপনি যখন ওয়াশরুমে ছিলেন, তখন আপনার মোবাইলের মেসেঞ্জার থেকে আমি কিছু পুরাতন মেসেজ পড়েছি। সেখান থেকে বুঝতে পারলাম যে আগামীকাল ভালবাসা দিবসে আপনি তার সাথে দেখা করবেন।

- আমার ছাত্রীর নাম মারিয়া, আমি বললাম, মারিয়া তুমি কি জানো এটা অন্যায়?

- সরি স্যার, আসলে আপনি ছিলেন না তখন কিছু মেসেজ এসেছে আর আমি তো আপনার মোবাইলে প্যাটার্ন লক জানি। তাই কৌতূহল বশত অনৈতিক কাজটা হয়ে গেছে, প্লিজ মাফ করবেন।

- আচ্ছা ঠিক আছে, আর আমি তিনদিন তোমাকে পড়াতে আসবো না নিজের দায়িত্বে একটু ভালো করে পড়াশোনা করিও। ঠিক আছে?

- তিনদিন আসবেন না কেন?

- আমি যার সাথে দেখা করতে যাবো তার বাসা অনেক দুরে, যেতে আসতে দুদিন পার হয়ে যাবে।

- তার বাসা কোথায় স্যার?

- তার বাসা বাগেরহাট জেলা কিন্তু সে খুলনা শহরে থেকে পড়াশোনা করে তাই তার সাথে দেখা করতে খুলনা যেতে হবে।

- ওহহ আচ্ছা বুঝতে পেরেছি, তবে আজকেই রওনা দিবেন নাকি?

- হ্যাঁ আজকেই, রাতের গাড়িতে যাবো গত মাসের টাকা আমি তোমার কাছে রেখেছিলাম কারণ আমি আমার কাছে রাখলে খরচ হয়ে যেত। তাই তোমার বাবা পাঁচ তারিখে টাকা দেবার পরেও তোমার কাছে গচ্ছিত রেখে দিছিলাম।

- ওহ্হ আচ্ছা স্যার বুঝতে পারছি।

★★

জি.ই.সি মোড় থেকে "হানিফ এন্টারপ্রাইজ" এর টিকিট সংগ্রহ করে বাসায় যাচ্ছি, বাস ছাড়বে রাত আটটায়। আমার বাসা মুরাদপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে একটু ভিতরে, মা-বাবা আর ছোট দুটো ভাই বোন আছে। অবশ্য আমার আপন মা নয়, আমার মা মারা গেছে আমি তখন চার বছরের ছোট। তখন থেকেই সৎ মায়ের সংসারে মানুষ, বাবার দ্বিতীয় সংসারে এক ছেলে এক মেয়ে আছে। আমি চট্টগ্রাম ভার্সিটি থেকে অনার্স কমপ্লিট করে বর্তমানে চাকরির ব্যবস্থা করতে আপ্রাণ চেষ্টা করছি।

আপাতত তিনটি টিউশনি আছে, আর দিনের বেলা এক পরিচিত বন্ধুর দোকানে ফ্লেক্সিলড, মেমোরি কার্ড লোড ইত্যাদি করে হেল্প করি। ওর সাথে সকাল আর দুপুরের খাবার হোটেলে খাই, রাতের বেলা শুধু সৎ মা'কে কষ্ট দিতে হয়। আমার সৎ মা আমাকে সেই রাতের একবেলা খাবার থেকে কীভাবে বঞ্চিত করবেন দিনরাত সেই প্রচেষ্টা করছেন। আশা করি তিনি খুব তাড়াতাড়ি সফল হবেন কারণ হুট করে একটা চাকরি হয়ে গেলে হারিয়ে যাবো তাদের চোখের আড়ালে।

যেই ছাত্রীর কাছ থেকে মাত্র আসলাম সে ক্লাস টেনে পড়ে, পড়াশোনায় মনোযোগী খুব তাই তেমন কষ্ট করতে হয় না। দেখতে শুনতে মাশাল্লাহ, তবে এখনো কারো সাথে রিলেশনে জড়ায়নি, কিংবা হয়তো সে জড়িয়েছে আমি জানিনা। আমার সাথে খুব ভালো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, মারিয়া বাদে বাকি দুটো টিউশনির দুটোই ছেলে মানে ছাত্র।

যার সাথে দেখে করতে যাবো তার নাম সানজিদা, আট মাস আগে তার সাথে আমার ফেসবুকে পরিচয় হয়েছে। দুই মাস ফ্রেন্ডশিপ তারপর সানজিদা নিজে আমাকে প্রপোজ করেছে। আমিও তার প্রতি দুর্বলতা অনুভব করেছি তাই হ্যাঁ বলে দিয়েছি। কিন্তু আমি আজও সানজিদাকে দেখিনি তবে সে আমাকে দেখে নিয়েছে অনেকবার। কারণ ফেসবুকে আমার অনেক ছবি পোস্ট করা আছে, কিন্তু সানজিদা কখনো ছবি দেয় নাই। আমিও কখনো জোর করিনি, নাম্বারে, ইমোতে, হোয়াটসঅ্যাপ এ প্রায় সবগুলোতে কথা হয়েছে আমাদের। কিন্তু কখনো দেখা হয়নি তাকে, তবে এবার আমি জোরপূর্বক তার সাথে দেখা করতে যাচ্ছি আগামীকাল।

আসলে সত্যি বলতে, আমি আট মাসে তাকে যখন দেখি নাই তখন এসব নিয়ে আমার বন্ধুরা আমার সাথে উপহাস করে। তাদের দাবি হচ্ছে মেয়ে হয়তো দেখতে খুব কালো, কিংবা বয়স অনেক বেশি বা বিবাহিতা কোন মহিলা। ওদের কথা আমি কখনো গুরুত্ব দিতাম না কিন্তু মাঝে মাঝে হঠাৎ করে আমি নিজেই ভাবতাম যে কেন সানজিদা দেখা করতে চায় না? কেন সে তার কোন ছবি দিতে চায় না? আসলে কি তাহলে বন্ধুদের কথা সঠিক?

ইত্যাদি নানা কারণে আমারও কেন যেন সন্দেহ হচ্ছে তবে সানজিদার প্রতি তীব্র ভালবাসা রয়েছে। এতটা ভালবেসে ফেলেছি যে সে যত কুৎসিত চেহারার হোক তবুও তাকেই চাই।

আগামীকাল দেখা করতে সানজিদা রাজি হতে চায় নাই, কিন্তু আমার জোরাজোরিতে সে আর না করতে পারে নাই। আমি রাতের গাড়িতে খুলনা যাবো, আর সেখানে গিয়ে রেস্ট নিয়ে তারপর আগামীকাল বিকেলে তার সাথে দেখা করার কথা রয়েছে। আমি ভার্সিটিতে পড়ার সময় খুলনার একটা বন্ধু ছিল আমার সাথে পড়তো, তার নাম রকি। রকি এখন খুলনাতে আছে, সেও আমার মতো আপাতত চাকরি খুঁজে দিন অতিবাহিত করে দিচ্ছে। তার সাথে কথা হয়েছে, খুলনা গিয়ে ওর বাসাতেই থাকবো, তারপর সেখান থেকেই দেখা করতে যাবো।

বাসায় গিয়ে নিজের সামান্য কাপড় ব্যাগের ভেতর নিয়ে গুছিয়ে প্রস্তুত হলাম। ছয়টা পার হয়ে গেছে তাই এখনই বেরিয়ে পরতে হবে, রাস্তায় সন্ধ্যা বেলা জ্যাম থাকে প্রচুর তাই আধা ঘণ্টা আগে টার্মিনালে গিয়ে অপেক্ষা করাই ভালো।

- বাসা থেকে বের হবার সময় মা বললো, কোথায় যাচ্ছ তুমি?

- আমি একটু খুলনা যাচ্ছি একটা জরুরি কাজ আছে, ফিরতে দু তিনদিন দেরি হবে।

- হঠাৎ করে খুলনা কেন?

- বললাম তো কাজ আছে।

- তা বাবার কাছ থেকে কত টাকা নেয়া হয়েছে?

- বাবার কাছ থেকে কোন টাকা নেই নাই, আমার টিউশনির টাকা দিয়ে যাচ্ছি।

- পাও তো মাস শেষে সামান্য কিছু টাকা, তা দিয়ে আবার বড়াই করা হচ্ছে? চাকরি বাকরি কিছু কি কপালে আছে নাকি এভাবে শুধু বসে বসে খাবে?

- জ্বি চেষ্টা করছি আমি।

- চেষ্টা চেষ্টা করে তো এতদিন গেল, পরনের কাপড় গুলো পর্যন্ত গন্ধে ভরা। বলি সবকিছু বাদ দিয়ে তাড়াতাড়ি একটা চাকরি নিয়ে বাবার সঙ্গে সংসার হাল ধরো। এভাবে ছেড়া কাপড় পরে আর কতকাল ঘুরে বেড়াবে?

- আপনার যদি সমস্যা হয় তাহলে আপনি কিছু নতুন কাপড় কিনে দিয়েন। এ কথা বলে আমি দরজা খুলে বাহিরে বেরিয়ে গেলাম, কারণ এখন আস্তে আস্তে তার সাথে ঝগড়া বৃদ্ধি পাবে।

★★

বাস ছাড়তে এখনো বিশ মিনিট বাকি আছে, আমি মোবাইল বের করে সানজিদার কাছে কল দিলাম। তিনবার কল বেজে কেটে যাবার পর চতুর্থ বারে সে রিসিভ করলো। আমার মনের মধ্যে চঞ্চলতা বিরাজ করছে কারণ এতদিন পরে তার সাথে দেখা হবে। কতদিন ওর জন্য পাগলের মতো করেছি, আজও হঠাৎ করে তার কথা ভাবলে মনটা ভালো হয়ে যায়।

- হ্যালো, সজীব বলো।

- কি করো তুমি?
- একটু বিজি ছিলাম, তুমি কি করো?

- আমি তো বাসের জন্য অপেক্ষা করছি, আর বিশ মিনিট পর বাস ছাড়বে।

- তুমি সত্যি সত্যি আসবে?
- হ্যাঁ সত্যি সত্যি তো, কেন তুমি চাও না?

- না না চাইবো না কেন?
- তাহলে?

- আসলে হয়েছে কি জানো? মা-বাবা আমাকে তো খুব শাসন করে, তাদের ধারণা কালকে ভালবাসা দিবসে আমি যদি কারো সাথে ঘুরতে যাই? তাই বিকেলে বড় আপু এসেছে খুলনায়। আপু এখন আমার রুমে আছে আর আমি তোমাকে কল পেয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এসেছি।

- তাহলে কি আগামীকাল দেখা হবে না?

- আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো তোমার সাথে দেখা করার জন্য,।

- আচ্ছা ঠিক আছে সমস্যা নেই, তোমাকে বলেছি না আমার একটা বন্ধু আছে? আমি ওর বাসায় গিয়ে উঠবো। যতদিন তোমার সাথে দেখা না হবে ততদিনে আমি চট্টগ্রামে ফিরবো না। দরকার হলে কলেজের সামনে গিয়ে দেখে চলে আসবো।

- আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে আসো।

- রাতটা শুধু অপেক্ষা করো আমি আসছি।

★★

নির্দিষ্ট সময়ে বাস যাত্রা শুরু করেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গ্রান্ট ট্রাংক্ট রোড দিয়ে গাড়ি সো সো করে এগিয়ে যাচ্ছে। গাড়ি ফেনী, কুমিল্লা, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা যাত্রাবাড়ী হয়ে মাওয়া ঘাটে যখন আসলো তখন রাত দুইটা বাজে।

ফেরির মধ্যে উঠে বাস থেকে বেরিয়ে গেলাম খুব চাপ এসেছে তাই চাপ কমাতে হবে। আমি বাথরুমের সামনে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ অবস্থা কারণ ৭/৮ জন মানুষ সিরিয়াল দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সবার সম্মুখে যিনি দাঁড়িয়ে আছে তিনি একজন হুজুর, পাঞ্জাবি পাজামা পরিহিত ভদ্রলোক বারবার এদিক সেদিক তাকিয়ে উসখুস করছে। তাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে তার অবস্থা সিরিয়াস, কিন্তু ভিতরের ব্যক্তি বাহির হবার নাম গন্ধ নেই। আমি তার সামনে গিয়ে আস্তে করে আলাপ জমানোর চেষ্টা করছি কারণ যদি তার মাধ্যমে সিরিয়াল ছাড়া ঢুকতে পারি!

ভদ্রলোকের কাছে গিয়ে বললাম, ভাইজান দরজাটা জোরে একটু নাড়াচাড়া দেন ভিতরে ঢুকে মারা গেছে নাকি? এদিকে সবাই সিরিয়াস অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে, সমস্যা কি ভিতরের?

ভদ্রলোক আমার দিকে রাগান্বিত অবস্থায় তাকিয়ে থেকে বললেন, ভদ্র ভাবে কথা বলুন ভিতরে কিন্তু আমার স্ত্রী। আপনি কার নামে কার কাছে কি বলেন বুঝতে পারছেন?

আমি হিরো হতে গিয়ে সম্পুর্ন জিরো হয়ে বেরিয়ে এলাম, মুখ দিয়ে টু শব্দ বের করলাম না। আমার চাপ কোথায় উধাও হয়ে গেছে বুঝতে পারছি না।

|
|

খুলনার সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে যখন নামলাম তখন বাজে সকাল সাড়ে ছয়টা। একটা রিক্সা নিয়ে রকির বাসায় রওনা দিলাম, রকি বলে দিয়েছে 'জোড়াগেট' বললেই যেকোনো রিক্সায় নিয়ে যাবে। নিউমার্কেট পেরিয়ে নাকি সামান্য সামনে গিয়ে নামতে হবে, তাই আমিও পঞ্চাশ টাকা দিয়ে একটা রিক্সা নিয়ে রওনা দিলাম।

বাসায় গিয়ে সানজিদার সাথে কথা হয়েছে, তার কথা হচ্ছে সে সুযোগ পেলেই আমাকে কল করবে। আমি গোসল করে ফ্রেশ হয়ে ঘুমানোর জন্য বৃথা চেষ্টা করছি কিন্তু দুচোখের ঘুম নিরুদ্দেশ।

সারাদিন পেরিয়ে গেল, দুপুরের খাবার খেয়ে আমি আর রকি অনেকক্ষণ টিভি দেখলাম। তারপর রকি বললো, বইমেলায় যাবে। যেহেতু ফেব্রুয়ারী মাস আর তাছাড়া আজকে ভালবাসা দিবস তাই দুজন মিলে বের হলে ভালোই লাগবে।

সাড়ে চারটার দিকে হঠাৎ করে সানজিদা কল দিয়ে বললো, বয়রা খুলনা বিভাগীয় গণগ্রন্থাগারের সামনে বইমেলায় দেখা করতে। আমি তো খুশিতে একদম আত্মহারা হয়েছিলাম, রকিকে সাথে নিয়ে তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে পরলাম। জোরাগেট থেকে মাহিন্দ্রা করে আমরা গিয়ে বইমেলায় নামলাম। সানজিদার নাম্বারে কল দিয়ে দেখি নাম্বার বন্ধ, মনটা খারাপ হয়ে গেল। বারবার কল দিয়েও খোলা পেলাম না।

মন খারাপ করে রকি আর আমি আধা ঘণ্টার মতো হাঁটাহাঁটি করলাম আর একটু পর পর সানজিদার নাম্বারে কল দিচ্ছিলাম কিন্তু নাম্বার বন্ধ।

হঠাৎ করে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল এলো, আমি কল রিসিভ করলাম কিন্তু অপরপ্রান্ত থেকে কোন কথা বলছে না। আমি কিছুক্ষণ হ্যালো হ্যালো করে কল কেটে দিলাম, পিছনে গ্রন্থাগার থেকে কমিটির পক্ষ থেকে আয়োজন করা অনুষ্ঠান চলছে। একে একে মাইকে বক্তৃতা কিংবা কবিতা আবৃত্তি করছেন। আমি সবার পিছনে দাঁড়িয়ে একটা কবিতা আবৃত্তি শুনছিলাম হঠাৎ একটা মেয়ে পিছন থেকে বললোঃ-

- আপনার নাম সজীব?

আমি পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখি সম্পুর্ণ সাদা ড্রেস পরা একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চুলগুলো হালকা বাতাসে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে, ঠোঁটে মিস্টি কালার এর লিপস্টিক, দুহাত ভর্তি চুড়ি, চোখে কাজল, কপালে ক্ষুদ্র কালো টিপ, দুধে আলতা বর্ণের চেহারা দেখে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।

- বললামঃ- জ্বি আমার নাম সজীব, আপনি?

- আমি সানজিদা।

- আমি সাথে সাথে বাচ্চাদের মতো একটা হাসি দিয়ে দিকশূন্য হয়ে সবার সামনে তাকে জড়িয়ে ধরলাম। চারিদিকে অনেকে হয়তো তাকিয়ে আছে কিন্তু আমার সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। সানজিদা হয়তো কল্পনা করতে পারেনি যে আমি তাকে এভাবে জড়িয়ে ধরবো।

- সানজিদা বললো, প্লিজ ছাড়ুন সবাই তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে।

আমি তাকে ছেড়ে দিয়ে অপরাধীর মতো তার দিকে মুগ্ধ নেত্রে তাকিয়ে আছি। আমি ঠিক যতটা কল্পনা করেছি তারচেয়ে অনেক অনেক সুন্দরী সানজিদা। এতদিনের সন্দেহ দূরীভূত হয়ে গেল।

আমরা দুজনেই অবাক হলাম কারণ স্টেজ থেকে মাইকে বলা হচ্ছে, পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা নীল শার্ট পরা ছেলে আর সাদা ড্রেস পরা মেয়েটা মঞ্চে আসুন তাড়াতাড়ি।

আমি সামান্য ভয় পেলাম, আমার সাথে রকি ছিল সে সামনে সামনে গেল। সবার সামনে রকি তারপর আমি তারপর সানজিদা হাঁটছে, উৎসুক জনতা সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। রকি মঞ্চে গিয়ে আস্তে করে কি যেন বললো বোঝা যাচ্ছে না।

- মাইক্রোফোন হাতে থাকা লোকটা বললো, তুমি কি জানো একটু আগে তোমরা দুজন একটা অপরাধ করেছো?

- বললাম, জ্বি জানি আমি এবং সেজন্য আমি ক্ষমা প্রার্থী এবং অনুতপ্ত।

- ক্ষমা করতে পারি কিন্তু তোমাকে একটা সুন্দর কবিতা আবৃত্তি করতে হবে। সবার কাছে যদি সেই কবিতা ভালো লাগে তাহলে তোমরা মাফ পাবে।

- বললাম, আমি যদি আমার নিজের লেখা একটা কবিতা আবৃত্তি করি তাহলে সমস্যা হবে?

- তোমার নিজের কবিতা লেখা আছে?

- জ্বি মাঝে মাঝে লিখি ডায়েরিতে।

- তাহলে তাই হোক।

আমার হাতে মাইক্রোফোন তুলে দেয়া হয়েছে, আমি একবার সানজিদার দিকে তাকিয়ে আবারও সামনে তাকালাম। ভার্সিটিতে পড়ার সময় আমি অনেকবার স্টেজে কবিতা আবৃত্তি করেছি তাই সাহস আছে। কিন্তু নতুন পরিবেশ নতুন শহর তাছাড়া আজকে সানজিদা আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তবুও নিজ হাতে লেখা প্রিয় একটা কবিতা আবৃত্তি করা আরম্ভ করলাম।

কবিতার নামঃ- এক ফাগুনের গল্প।

পেয়েছি তোমাকে আমি
অনেক সাধনার পরে।
হারাতে দেবো না কখনো আর
রাখবো বুকে ধরে।

না দেখেই বেসেছি ভালো
বেঁধেছি হাজার বাসা।
তোমায় নিয়ে হারিয়ে যাবো
অনেক দিনের আশা।

মনের কুটিরে অনেক কথা
বলবো সবই আজ।
পেরিয়ে যাবে গোধূলি বিকেল
ফুরিয়ে যাবে সাঝ।

ফাগুনের বসন্ত নেমেছে
কোকিল ডেকেছে ডালে।
মাঝরাতে আজ জোৎস্না দেখবো
পদ্মফুলের বিলে।

কবিতার ছন্দে ডাকছি তোমায়
সময় অনেক স্বল্প।
আজ দুজনে তৈরি করবো
এক ফাগুনের গল্প।

উপস্থিত অনেকে হাততালি দিচ্ছে, প্রতিক্রিয়া দেখে বোঝা যাচ্ছে কবিতা আবৃত্তি তাদের পছন্দ হয়নি। কিন্তু তাতে আমার কোন সমস্যা নেই কারণ আমার সাথে সানজিদা আছে, এবং তার সাথে আমার সত্যি সত্যি অনেক কথা জমা।

স্টেজ থেকে বেরিয়ে আমরা এদিকের বইয়ের দোকান গুলোর দিকে আসলাম। রকি বললো, সে আশেপাশে থাকবে, এবং কোন সমস্যা হলে আমি যেন তাকে কল করি। আমি আর সানজিদা তখন পাশাপাশি হাঁটছি, আমার মনে আনন্দ ধরে না কিন্তু সানজিদার মুখে কোন হাসি নেই। একরাশ বিষন্নতা তাকে ঘিরে রেখেছে মনে হয়, আমি তার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে বললামঃ-

- কিছু বলছো না যে?

- এমনি প্রথম দেখা তাই কেমন লাগছে, তবে একটা কথা না বললেই নয়। আপনি কবিতা আবৃত্তি করতে পারেন খুব সুন্দর করে, সত্যি সত্যি আমার অনেক ভালো লেগেছে।

- একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?

- করুন।

- তুমি তো মোবাইলে সবসময় আমাকে তুমি তুমি করে ডাকতে তাহলে এখন সামনাসামনি আপনি করে বলছো কেন?

- আসলে সরাসরি কথা বলতে কেমন যেন লাগছে তাই সমস্যা হচ্ছে, কিছু মনে করবেন না সবকিছু আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।

- না না কি মনে করবো? সত্যি বলতে তোমাকে দেখে আমি এতটা আবেগপ্রবণ হয়ে গেছি যে আমার সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। এতদিন পরে যে তোমার সাথে এভাবে পাশাপাশি হাঁটছি সেটা বিশ্বাস করতে পারি না।

- আপনাকে তো আমি আগেই দেখেছি তাই নতুন করে কিছু বলার নেই। তবে সত্যি সত্যি আপনি ছবির চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর, আগে জানলে অনেক আগে থেকে নিজে দেখা দিতাম।

- এখন থেকে সবসময় ভিডিও কলে কথা বলবে তো?

- আচ্ছা চেষ্টা করবো।

- তুমি মোবাইলে কথা বলার সময় কত চঞ্চল এবং দ্রুত আর রাগান্বিত হয়ে কথা বলতে কিন্তু এখন সম্পুর্ন আলাদা। সেই চঞ্চলতা নেই, রাগের কোন চিন্হ নেই, শান্তশিষ্ট ভাবে খুব গুছিয়ে আস্তে আস্তে কথা বলছো। তোমার এই পরিবর্তন আমাকে অবাক করে দিচ্ছে সানজিদা, সত্যি আমি মুগ্ধ। আমার ভালবাসা স্বার্থক হয়েছে, আমি ঠিক যেভাবে একটা মানুষ চেয়েছিলাম সেরকম একজন পেয়েছি।

- হাহাহা হাহাহা।

- তোমার হাসিটাও অনেক সুন্দর, কোই মোবাইলে তো এভাবে কখনো হাসতে শুনিনি?

- হয়েছে হয়েছে, এবার চলুন আপনাকে একটা বই উপহার দেবো। আমি আমার পছন্দের একটা বই উপহার দিতে চাই নিবেন আপনি?

- হ্যাঁ নেবো।

- হুমায়ুন আহমেদ এর "কোথাও কেউ নেই" এটা পড়েছেন আপনি?

- না পড়া হয়নি।

- ঠিক আছে তাহলে সেটাই দেবো।

সানজিদা আমাকে দিল "কোথাও কেউ নেই" আর আমি তাকে দিলাম বিভূতিভূষণের "আরণ্যক"। সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে, বইমেলা থেকে বেরিয়ে যেতে হবে কারণ সানজিদা বাসায় চলে যাবে। আমি রকির কাছে কল দিলাম, রকি একটু পরে আমাদের সামনে হাজির হলো। আমরা সামান্য কিছু খাবার জন্য মেলার মধ্যে একটা চটপটির দোকানে গেলাম।

চটপটি অর্ডার করে তিনজনে টেবিলে বসে আছি, হঠাৎ করে দুটো মেয়ে সানজিদাকে ডাক দিল। কিন্তু কি নাম ধরে ডাকলো ঠিক বোঝা গেল না তবে সানজিদা বলে ডাকেনি সেটা নিশ্চিত। সানজিদা টেবিল থেকে উঠে গিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে তাদের সাথে কথা বলছে, আমি আর রকি বসে আছি। হঠাৎ করে টেবিলের পাশে রাখা সানজিদার ব্যাগের পাশে মোবাইল বেজে উঠলো। সানজিদা টেবিলে বসে মোবাইল আর হাতের ব্যাগ রেখে দিয়েছে।

দুইবার কল বেজে কেটে গেল, তৃতীয় বারে যখন কল এলো তখন আমি সানজিদার দিকে তাকালাম। তাই সানজিদা এখনো কথা বলছে, আমি মোবাইল হাতে নিয়ে স্ক্রিনে তাকিয়ে অবাক হলাম। কারণ স্ক্রিনের মধ্যে সানজিদার সঙ্গে আমি যে নাম্বার দিয়ে সর্বদা কথা বলতাম সেই নাম্বার থেকে কল এসেছে। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কল কেটে গেল আবারও। আবারও যখন কল এলো তখন আমি রিসিভ করে কানের কাছে নিলা, আর ওপাশ থেকে একটা মেয়ে বলছেঃ-

" কিরে কল রিসিভ করিসনা কেন? তুই এখন কোন যায়গা আছো? দেখা হয়েছে তার সাথে? "

আমি কল কেটে দিয়ে মোবাইল রেখে দিলাম, মনে মনে এই রহস্যের সমাধান খুজতে লাগলাম কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছি না। সানজিদা আসলো, সঙ্গে সঙ্গে চটপটি এলো, আমরা চুপচাপ খাওয়া আরম্ভ করলাম।

বইমেলার গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, সানজিদা এখন চলে যাবে। আমি তার দিকে অপলক নয়নে তাকিয়ে দেখি তার চোখ ছলছল করছে, মনে হয় সেই চোখ অনেক কিছু বলতে চায়।

- বললাম, আগামীকাল কি দেখা হবে? আজকে তাড়াহুড়ো করে ফুল আনতে পারিনি, যদি সুযোগ দাও তাহলে আগামীকাল ফুল দিয়ে সাজিয়ে দিতে চাই তোমাকে।

- সানজিদা বললো, আমাদের আর কখনো দেখা হবে না সজীব ভাই।

- আশ্চর্য হয়ে বললাম, মানে কি?

- আমাকে ক্ষমা করবেন প্লিজ, আমি সানজিদা না, আমি সানজিদার বান্ধবী এবং রুমমেইট। আমি আপনাকে শুরুতে বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু যে আমি সানজিদার বান্ধবী। কিন্তু আপনার কাছে আমি সানজিদা বলার সাথে সাথে আপনি আমাকে জড়িয়ে ধরেছেন তাই "আমি সানজিদার বান্ধবী" এই বাক্যের বান্ধবী শব্দটা আর উচ্চারণ করতে সুযোগ পাইনি।

- তাহলে সানজিদা কোথায়?

- ও আসবে না, আপনি কিছু মনে করবেন না ভাই। সানজিদা আপনার সাথে এতদিন এমনিতেই টাইম পাস করেছে। ও এমন আরো কয়েকজনের সঙ্গে রিলেশন করে, আপনার সাথে কথা বলতে আমি সবসময় দেখতাম। আপনার ছবি দেখাতো আমাকে, তাই আপনাকে আমি চিনতে পেরেছি, তবুও কিন্তু শিওর হওয়ার জন্য কল করেছিলাম। সানজিদা আপনার সাথে দেখা করবে না, ওর ইচ্ছে ছিল যে আপনার সাথে কথা বলা সিমটা বন্ধ করে দেবে। কিন্তু আমি বললাম যে সবকিছু বলে তারপর সম্পর্ক ইতি করতে, তবে ও রাজি হলো না। তাই জানিনা কেন যেন নিজেই ওর কাছ থেকে নাম্বার নিয়ে আমি আপনাকে বলতে এসেছি। কিন্তু বলার আগেই আপনি আমাকে সানজিদা ভেবেছেন তাই এতক্ষণ ঘোরাঘুরি হলো। আপনি অনেক ভালো একটা মানুষ তাই আপনাকে বলছি, সানজিদাকে ভুলে গিয়ে নতুন করে জীবন আরম্ভ করুন।

চলবে....
#এক ফাগুনের গল্প

#পর্বঃ-০১

Address

Mymensingh

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Islamer tori posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Islamer tori:

Share

Category


Other Video Creators in Mymensingh

Show All