24/03/2020
#পূণ্যবান_স্ত্রী
আপনি তো জানতেন, এই মুহূর্তে আমার আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ। খুব কঠিন সময় পার করছি, আমার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া মানে ছিল স্বেচ্ছায় নিজেকে কষ্টের সম্মুখীন করা। আপনি চাইলে খুব সুখের জীবন কাটাতে পারতেন। কোনো কিছুরই অভাব থাকত না।
(বাসর ঘরে ঢুকে নতুন স্ত্রীকে প্রশ্ন করল মিজান)
·
স্ত্রী কিছুক্ষণ নিরব রইল, তারপর বলল,
·
“আলহামদুলিল্লাহ-সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য!
·
“পরহেজগারদের সাথে দারিদ্রতার একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে, এই সম্পর্ক এত সহজে ভাঙতে চায় না। আপনার সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি, আপনি আল্লাহকে যথার্থ ভয় করে থাকেন, হালাল-হারাম বেছে চলেন,সব সময় তাকওয়া অবলম্বন করেন। আত্মীয়তার-সম্পর্ক অটল রাখেন, মিসকীনকে অন্ন দান করেন, এতিমের সহায়ক হোন। সবার সাথে সদাচরণ করেন। আল্লাহর রাস্তায় জীবন মরণের তামান্না রাখেন।
·
জানেন, সালাফরা যখন দ্বীনদার কাউকে পেতেন তখন তাঁর সাথে তাঁদের কন্যাদের বিয়ে দিয়ে দিতেন, সে দরিদ্র এটা জেনেও তাঁরা বিবাহ দিতেন, কেন দিতেন? তাঁরা তো জানতেন একরকম দরিদ্র কারও হাতে আদরের কন্যাকে তুলে দিলে সে দুঃখে-কষ্টে দিন পার করবে। না খেয়ে কত রাত অতিবাহিত করতে হবে। এক কাপড়ে দীর্ঘদিন কাটিয়ে দিতে হবে। এসব জেনেও তাঁরা কেন এরকম করতেন? কারণ তাঁরা দুনিয়ার বিনিময়ে আখিরাতকে ক্রয় করেছিলেন।
·
আমিও কি তাঁদের কন্যাদের মতো হব না?
আজ যদি আমি এমন কারও সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতাম যার থাকত বিশাল বড় বাড়ি, গাড়ি, কাজের জন্য থাকত কত মানুষ। চাওয়া মাত্রই সব চাহনি পূরন হত। তখন আমার দ্বীন কোথায় থাকত? আমার ইমানের কি অবস্থা হত? দুনিয়ার বিলাসিতায় ডুবে থাকতাম।
·
আমার প্রয়োজনের চেয়ে একটুও বেশি কিছু চাই না, পার্থিব সব কিছুতে কম্প্রোমাইজ করতে রাজি। তবে আমাকে ঈমানী পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। এর চেয়ে বেশি কিছু চাওয়ার নেই।"
·
স্ত্রীর এমন কথা শুনে মিজান খুশিতে আত্মহারা, কি করবে, কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। এমন স্ত্রী পাওয়া সত্যি ই ভাগ্যের ব্যাপার।
·
মিজান আর রেশুর বিয়েটা হয়েছিল কোনো আয়োজন ছাড়া ই। অল্প খরচেই বিয়েটা সমাপ্ত হয়। মোহরানাও ছিল স্বাভাবিক। মিজানের সাধ্যের মধ্যেই।
·
উস্তাদ Mohammad Hoblos এর লেকচারের একটি কথা মনে করিয়ে দিতে চাই, তিনি বলেছিলেন,
·
"বিয়ের পাত্র নির্বাচনের সময় আমাদের অনেক বোন ফ্যান্টাসিতে থাকেন। নবিজি (সা) এর মতো, সাহাবিদের মতো কাউকে তারা স্বামী হিসেবে চান। কিন্তু সত্যি সত্যি যদি সেই সাহাবিদের মতো জীর্ণ-শীর্ণ জামা, ধুলোমাখা পা, সহায় সম্বলহীন কেউ সামনে দাঁড়ায়, তখনও কি আমরা এরকম কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পছন্দ করব? 'আদর্শ স্বামী' নির্বাচনের মানদণ্ড কি তখনো একই থাকবে? আমার মেয়ের, বোনের হাত কি এমন কারো হাতে তুলে দিব? নাকি দুনিয়ার মানদণ্ডে 'পুরুষ' হওয়ার যে ক্রাইটেরিয়া আমরা বানিয়ে নিয়েছি, সেগুলোই বিবেচ্য হবে?"