02/01/2024
⭕ নামাজের ভিতরে এবং বাহিরে ফরজ হচ্ছে ৭+৬=১৩ টি এবং ওয়াজিব হচ্ছে ১৪ টি। এই ১৩ টি ফরজের মধ্যে কোন একটি ভুলক্রমে বাদ পড়ে গেলে নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। আবার পুনরায় সেই নামাজটি আদায় করে নিতে হবে।
🔲 আর ১৪ টি ওয়াজিবের মধ্যে কোনো ১ টি ওয়াজিব ভুলক্রমে বাদ পড়লে কিংবা ওয়াজিব আগে পরে হয়ে গেলে সাহু সিজদা দিয়ে নামাজ পূর্ণ করতে হবে। সাহু সিজদা দিতেও ভুলে গেলে সেই নামাজটি আবার পুনরায় আদায় করে নিতে হবে। [ফাতাওয়া শামী- ১/৪৪৭]
⭕ নামাজের বাহিরে সাতটি ফরজ হচ্ছেঃ-
১) শরীর পবিত্র হওয়া। [সুনানে তিরমিযী- ১/৩]
২) কাপড় পবিত্র হওয়া। [সুরা মুদ্দাসসির- ৪]
৩) নামাজের জায়গা পবিত্র হওয়া। [বাকারা- ১২৫]
৪) সতর ঢাকা (পুরুষের নাভি থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত এবং নারীদের চেহারা, দুই হাত কবজি পর্যন্ত ও পায়ের পাতা ছাড়া গোটা শরীর ঢেকে রাখা ফরজ) [আহমাদ- ৬৭৫৬]
৫) কিবলামুখী হওয়া। [সহীহ বুখারী- ৬২৫১]
৬) ওয়াক্ত মতো নামাজ পড়া। [সুরা নিসা- ১০৩]
৭) অন্তরে নির্দিষ্ট নামাজের নিয়ত করা। [সহীহ বুখারী- ১]
🔰 নামাজের ভিতরে ছয়টি ফরজ হচ্ছেঃ-
১) তাকবিরে তাহরিমা অর্থাৎ শুরুতে আল্ল-হু আকবার বলা। [সহীহ বুখারী- ৮৩৩]
২) ফরজ ও ওয়াজিব নামাজ দাঁড়িয়ে পড়া। [সহীহ বুখারী- ১১১৭]
৩) কিরাত পড়া। (অর্থাৎ চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাতে এবং ওয়াজিব, সুন্নত ও নফল নামাজের প্রতি রাকাতেই ক্বিরাত পড়া ফরজ)। [সুরা মুজ্জাম্মিল- ২০]
৪) নামাজের প্রত্যেক রাকাতে রুকু করা। [সুরা বাকারা- ৪৩]
৫) প্রত্যেক রাকাতে দুই সিজদা করা। [সুরা হজ্জ- ৭৭]
৬) শেষ বৈঠক (নামাজের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পরিমাণ সময় বসা) [আবু দাউদ- ৯৭০]
➡️ বিঃদ্রঃ- নামাজি ব্যক্তির নিজস্ব কোনো কাজের মাধ্যমে (যেমন সালাম ফেরানো ইত্যাদির মাধ্যমে) নামাজ থেকে বের হওয়াও একটা ফরজ। [আল বাহরুর রায়েক- ১/৫১৩]
🔲 নামাজের মধ্যে কোনো ফরজ ভুলক্রমে বাদ পড়লেও নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে সাহু সিজদা করলেও নামাজ সহীহ হবে না। [ফাতাওয়া শামি- ৪৪৭]
⭕ নামাজের মধ্যে ১৪ টি ওয়াজিবসমূহ হচ্ছেঃ-
🔰 নামাজের ওয়াজিবগুলো তুলনামূলক একটু কঠিন। তাই প্রতিটি পয়েন্ট মনযোগ সহকারে একাধিক বার পড়ে দেখবেন। তাহলে ওয়াজিবগুলো বুঝতে সহজ হবে এবং তা আয়ত্ত্বে চলে আসবে ইন শা আল্লাহ 💞✅
১) ফরজ নামাযের প্রথম দুই রাকাতে এবং সুন্নত, নফল, ওয়াজিব নামাজের প্রত্যেক রাকাতেই সূরা ফাতিহা পাঠ করা ওয়াজিব। আর ৪ রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজের শেষের ২ রাকাতে শুধুমাত্র সূরা ফাতিহা পাঠ করা সুন্নত। (মোট কথা সূরা ফাতিহা প্রত্যেক নামাজের প্রতি রাকাতেই পাঠ করতে হবে) [বুখারি- ৭৫৬]
২) ৪ রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য যেকোনো একটি সূরা বা কমপক্ষে ছোট তিন আয়াত পাঠ করা ওয়াজিব। [মুসলিম- ৪৫১]
🔸 [বাকি ২ রাকাতে শুধুমাত্র সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে। অন্য কোনো সূরা পাঠ করতে হবে না।]
৩) ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাতকে কিরাতের জন্য নির্দিষ্ট করা ওয়াজিব। [বুখারী- ৭৭৬]
৪) সূরা ফাতিহা অন্য সূরার আগে পাঠ করা ওয়াজিব। [মুসলিম- ৪৯৮]
৫) তারতীব অর্থাৎ ধারাবাহিকতা রক্ষা করে নামায আদায় করা ওয়াজিব। অর্থাৎ নামাযে যে সকল কাজগুলো বারে বারে আসে ঐ সমস্ত কাজগুলোর ধারাবাহিকতা ঠিক রাখা ওয়াজিব।
🔹 [অর্থাৎ রুকু এবং সিজদা যা নামাযের প্রতি রাকাতে বারে বারে আসে। কিরাত পাঠ করা শেষে রুকু করা, রুকু করে দাঁড়িয়ে আবার সিজদা করা। এই যে ধারকবাহিকতা রয়েছে, এর ব্যতিক্রম হলে নামায নষ্ট হয়ে যাবে এবং নতুন করে নামায আদায় করতে হবে। [তিরমিযী- ২৪৬]
৬) ৩ অথবা ৪ রাকাত বিশিষ্ট নামাজের ২ রাকাত শেষ করে আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করতে যতটুকু সময় লাগে, সে পরিমাণ সময় পর্যন্ত বসে থাকা ওয়াজিব। [বুখারী- ৮২৮]
৭) ৩ অথবা ৪ রাকাত বিশিষ্ট নামাজের উভয় বৈঠকেই আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করা ওয়াজিব। [বুখারী- ৮৩০]
৮) নামাজের ফরজ এবং ওয়াজিবগুলো নিজ নিজ স্থানে আদায় করা ওয়াজিব। [অর্থাৎ দ্বিতীয় সিজদা প্রথম সিজদার সঙ্গে করা, প্রথম বৈঠকে আত্তাহিয়াতু পড়া শেষ করে তৎক্ষণাৎ তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যাওয়া ইত্যাদি] [তিরমিযী- ৩০২, ৩০৩]
🔸 [এক্ষেত্রে কোনো রাকাতে একাধিকবার রুকু করে ফেললে কিংবা ৩ টি সিজদা দিয়ে ফেললে অথবা ৪ রাকাত বিশিষ্ট নামাজের প্রথম বৈঠকে তাশাহুদের পর দুরূদ শরীফের অর্ধেক বা সম্পূর্ণ দুরূদ পড়ে ফেললে ওয়াজিব তরক করা হবে, তাই এক্ষেত্রে সাহু সিজদা দিয়ে নামাজ পূর্ণ করতে হবে]
৯) নামাজের সব রুকন ধীরস্থিরভাবে আদায় করা [অর্থাৎ রুকু, সিজদা ও রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে এবং দুই সিজদার মাঝখানে সোজা হয়ে বসে কমপক্ষে এক তাসবীহ সুবহা-নাল্ল-হ বলা পরিমাণ সময় দেরি করা] ওয়াজিব। [মুসলিম- ৩৯৭]
১০) বেতের নামাজের তৃতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য আরেকটি সূরা মিলিয়ে, হাত ছেড়ে দিয়ে আবার হাত উঠিয়ে তাকবীর দেওয়া ওয়াজিব। তাকবীর দিয়ে পুনরায় হাত বেধে দোয়ায় কুনুত পড়া হচ্ছে সুন্নতে মুয়াক্কাদা। [বুখারী- ১০০২]
🔸 [দোয়ায় কুনুত না পারলে দোয়ায় কুনুতের স্থানে কুরআনে বর্ণিত যেকোনো একটি দোয়া পড়া। যেমন- রব্বানা আতিনা ফিদনইয়া.. দোয়াটি পড়া এবং দোয়ায় কুনুত মুখস্থ করার দৃঢ় চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া]
১১) জামাতে নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে ইমামের জন্য যোহর, আসর এবং দিনের বেলায় সুন্নত ও নফল নামাজে কিরাত আস্তে পড়া। আর ফজর, মাগরিব, এশা, জু'মআ, দুই ঈদ, তারাবি ও রমজান মাসের বিতর নামাজে কিরাত শব্দ করে পড়া ওয়াজিব। [মুসলিম- ২৫৯, নাসাঈ- ৯৭০, তিরমিজি ১/১০৬]
🔹 [মনে রাখতে হবে, আস্তে পড়ার অর্থ মনে মনে পড়া নয়। বরং আওয়াজ না করে মুখে উচ্চারণ করে পড়াকে বুঝানো হয়েছে। কারন মনে মনে কিরাত পড়লে নামাজ শুদ্ধ হবে না। আর মহিলারা সব সময় এভাবে আওয়াজ না করে মুখে উচ্চারণ করে সূরা কিরাত পাঠ করবে]
১২) দুই ঈদের নামাজে অতিরিক্ত ছয় তাকবীর বলা ওয়াজিব। [মুসনাদে আহমাদ- ১৯৭৩৪]
১৩) দুই ঈদের নামাজে দ্বিতীয় রাকাতে অতিরিক্ত তিন তাকবীর বলার পর রুকুতে যাওয়ার সময় ভিন্নভাবে তাকবীর বলা ওয়াজিব। [মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক- ৫৬৮৬] [তবে এই তাকবীরটি অন্যান্য নামাজে সুন্নত]
১৪) নামায শেষে “আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্ল-হ” বলে নামায শেষ করা ওয়াজিব। [বুখারী- ৮৩৭]
🔲 উপরে উল্লিখিত ওয়াজিবগুলোর মধ্যে কোনো একটি ওয়াজিব ভুলে ছুটে গেলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে। সাহু সিজদা দিলে নামাজ পূর্ণ হয়ে যাবে। আর সাহু সিজদা না দিলে নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। [ফাতাওয়া শামী- ৪৫৬]
⭕ সাহু সিজদা দেয়ার নিয়ম হচ্ছে, নামাজের শেষ রাকাতে বসে তাশাহুদ (আত্তাহিয়্যাতু..) পড়ে শুধু ডান দিকে সালাম ফিরিয়ে আবার ২ টি সিজদা দিতে হবে। সিজদা দিয়ে বসে এরপরে আবার তাশাহুদ, দুরুদ শরীফ ও দোয়া মাসুরা পড়ে উভয় দিকে সালাম ফিরাতে হবে। [সুনানে তিরমিযি- ৩৬১]
🔸 সাহু সিজদা দেওয়ার দ্বিতীয় নিয়মটি হচ্ছে, নামাজের শেষ বৈঠকে তাশাহুদ, দুরূদ শরীফ ও দোয়ায় মাসূরা পড়ে, আবার দুটি সিজদা দেওয়া। সিজদা দিয়ে বসে উভয় দিকে সালাম ফিরিয়ে নেওয়া। তাহলেও সাহু সিজদা আদায় হয়ে যাবে এবং নামাজ শুদ্ধ হয়ে যবে। [সহীহ বুখারী- ১২২৪]
🔹 সাহু সিজদা দেওয়ার তৃতীয় নিয়মটি হচ্ছে, শেষ বৈঠকে তাশাহুদ, দুরূদ শরীফ, দোয়ায় মাসূরা পড়ে উভয় দিকে সালাম ফিরিয়ে এরপরে আবার ২ টি সিজদা করা। তাহলেও সাহু সিজদা আদায় হয়ে যাবে। [বুখারী- ১২২৬]
🔲 উপরোক্ত তিনটি পদ্ধতিই সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমানিত। তাই যেকোনো একটি পদ্ধতি অনুসরণ করলেই সাহু সিজদা আদায় হয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ। তবে হানাফি মাযহাব অনুযায়ী আমরা প্রথম পদ্ধতিটি অনুসরণ করে সাহু সিজদা দিয়ে থাকি। আর এটিই উত্তম পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত। তাই প্রথম পদ্ধতিটি অনুসরণ করার পরামর্শ থাকবে 💞✅