05/05/2021
আবারও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে হেফাজত নেতাদের সাক্ষাৎ
দেশজুড়ে গ্রেপ্তার হওয়া নেতাদের ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ নিয়ে হেফাজতে ইসলামের ছয় নেতা আবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে দেখা করেছেন।
মঙ্গলবার রাতে হেফাজতের বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব ও সাবেক কমিটির মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদীর নেতৃত্বে সংগঠনটির নেতারা মন্ত্রীর ধানমণ্ডির বাসভবনে প্রায় তিন ঘণ্টা বৈঠক করেন।
বৈঠকে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান উপস্থিত ছিলেন। এতে হেফাজতের চট্টগ্রামের তিন জন এবং ঢাকার তিন জন নেতা অংশ নেন।
কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক দলটির নেতাদের মুক্তির পাশাপাশি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে মাদ্রাসা খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। এর আগে হেফাজত নেতাদের পুলিশ গ্রেপ্তার করতে শুরু করলে ১৯ এপ্রিলও তারা মন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলেন।
মঙ্গলবার রাতের বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তারা (হেফাজত নেতা) অনেক কথা বলছেন। তাদের নেতাকর্মীদের ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেছেন। তারা বলেছেন, কাজ করতে গিয়ে কিছু ভুল হয়েছে। আর অনুপ্রবেশকারীরা এসব কাজ (জ্বালাও পোড়াও, ভাংচুর) করেছে।“
আপনি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের কী বলেছেন জিজ্ঞাসা করলে ফরিদুল হক খান বলেন, “উনারা উনাদের কথা বলেছেন। আমরা বলেছি, ভিডিও ফুটেজ দেখে ধরা হচ্ছে। আবার সন্দেহ করে কাউকে ধরলেও ছেড়ে দেওয়া হয়।“
যেসব নেতা এসেছিলেন তাদের নামে মামলা আছে কিনা জানতে চাইলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, “মনে হয় নেই। থাকলে তো আসতে....।“
বৈঠক শেষে হেফাজতের বর্তমান কমিটির সদস্য সচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের মুক্তি এবং মাদ্রাসা খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
হেফাজতের নেতারা মঙ্গলবার রাত ৯টা ২০ মিনিটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমণ্ডির বাসভবনে ঢোকেন। বের হয়ে আসেন রাত ১২টার দিকে।
নুরুল ইসলাম জিহাদীর ছেলে মাওলানা রাশেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চট্টগ্রামের তিন নেতার পাশাপাশি তার বাবাসহ অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান ও মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী মন্ত্রীর বাসায় গিয়েছিলেন।
এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু জানান, হেফাজতের নেতা নুরুল ইসলাম জিহাদী, মুফতি মাওলানা জসিমউদ্দীন, মাওলানা ইয়াহিয়া, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান, মাওলানা মাইনুদ্দিন, মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী এসেছিলেন।
“ধর্মপ্রতিমন্ত্রী ছাড়া তারা ছয়জন এসেছিলেন। মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন।“
এর আগে ১৯ এপ্রিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের নেতারা। ওই বৈঠকেও ছিলেন আহ্ববায়ক কমিটির সদস্য সচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী।
ওই সময় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরের বিরোধিতার করে বিক্ষোভকালে সহিংসতার অভিযোগে হেফাজতের নেতাদের গ্রেপ্তার করছিল পুলিশ। গ্রেপ্তার বন্ধের দাবিতে ১৯ এপ্রিল রাতে হেফাজত নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় যান।
ওই বৈঠকের সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, হেফাজতের নেতা কর্মীদের যাতে 'গণগ্রেপ্তার' করা না হয় সেই বিষয়ে বলেছেন। মন্ত্রী তখন তাদের জানিয়েছেন কোনো গণগ্রেপ্তার হচ্ছে না। যারা অপরাধী তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকা হেফাজতের নেতারা গত বছরের শেষ দিকে ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতায় নেমে ফের আলোচনায় আসেন। সংগঠনটির নেতা মামুনুল হক ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুমকি দিয়েছিলেন। পরে তিনি হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিবের পদ পাওয়ার পাশাপাশি ঢাকা কমিটির সাধারণ সম্পাদকও হন।
গত মাসের শেষ দিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের বিরোধিতায় নেমে নতুন করে আলোচনায় আসে হেফাজত। সংগঠনটির বিক্ষোভ ও হরতালে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামে সহিংসতায় বেশ কয়েকজন নিহত হয়।
এরপর অর্ধশত মামলার পর মামুনুলসহ হেফাজতের ডজন খানেক কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে।
পুলিশের দাবি, হেফাজত নেতারা নাশকতার বড় ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছিলেন, যার চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল রাষ্ট্রক্ষমতা দখল।
এনিয়ে চাপে থাকার মধ্যে গত ২৫ এপ্রিল রাতে দলটির আমির জুনাইদ বাবুনগরী হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে পাঁচ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন।