30/12/2024
পর্ব-১
নিশিতাও আজ কেমন কেমন ভাবে তাকাচ্ছে। নীল বুঝতে পারলো আদৃতার মাধ্যমে তার দেওয়া চিরকুটটি হয়ত নিশিতার কাছে পৌছানো হয়েছে। এই ভেবে সে আরো লজ্জাবোধ করলো। কোন রকম ১ ঘন্টার ক্লাস ৩০ মিনিট করে নীল শরীর খারাপের অযুহাত দেখিয়ে সবাইকে ছুটি দিয়ে দেয়।।নিশিতা নীলের দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হাসি দিয়ে ক্লাস ত্যাগ করলো । কারন সবাই আসলে শরীর খারাপ অযুহাতের কথা জানলেও নিশিতা কিছুটা আত করতে পেরেছিল কেন তাদের আজ তাড়াতাড়ি ছুটি দেওয়া হয়েছিল।
প্বিরতিদিনের মত বিকালে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে নীল সন্ধায় বাসায় ফিরল।রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে শুয়ে মোবাইলে ফেসবুকের নিউজফিড দেখতেছিল। হঠাৎ তার মোবাইলে নিশিতার আম্মুর নাম্বার থেকে কল আসলো। নীল হাতের ঘড়িটার দিকে তাকালো । ঘড়ির কাটা তখন রাত ৯.০০ টা ছুঁইছুঁই। এত রাতে কেন নিশিতার আম্মু কল দিবে? ভয়ে যেন হার্টভিট আরো বেশি করে কাপতে লাগলো।তাহলে নিশিতা কি বাসায় সব জানিয়ে দিলো? কি হবে এখন? সবাই যদি জেনে যায় তাহলে তার এত দিনের অর্জিত মান সাম্মান !যাহোক, অনেক ভাবাভাবির পর ফোনটা রিসিভ করলো।
-হ্যালো (কাঁপা কাঁপা স্বর নিয়ে নীল রিসিভ করে এ পাশ থেকে বললে)
-কেমন আছেন? ঐ পাশ দিয়ে মিষ্টি শুরে নিশিতা জিজ্ঞেস করলো।
-ভালো,তুমি কেমন আছো?(একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল কারন নীল যা মনে করেছিল তা নয়)
-ভালো,আপনার শরীর সেড়েছে? নীল ভাবতে লাগলে নিশিতা কি তাকে নিয়ে মজা করতেছে নাকি সিরিয়াসলি জিজ্ঞেস করতেছে।
-ভালো,এমনি খারাপ লাগছিল তাই ছুটি দিয়ে দিয়েছিলাম।
-ও , আজকে যে ইংরেজি পড়া দেন নাই। কালকে কি পড়া নিবেন না?
-না,যেহেতু পড়া দেইনি তাই পড়া নিবো না।
-আচ্ছা।
-নিশিতা?
-জ্বি বলেন।
-Can I ask a question if you don’t mind?
-না বলেন।
-Are you alone?
-হুম।
-আদৃতা তোমাকে কিছু বলেছে?
-হুম।
-তাহলে সবইত জানো। আসলে এটার জন্যই অন্য কিছু মনে কইরো না।মনের উপর জোর নয় জাস্ট ভেবে দেইখো।
-আচ্ছা।কালকে প্রাইভেটে যাব না।
-কেন?
-এমনি।
-আসোলেই আসবা না?
-আচ্ছা আসবো। রাখি তাহলে?
– নীলের যেন প্রেসারটা একটু বেড়ে গেছে।কারন নিশিতার সাথে আজকের মত কোনদিন এমনভাবে কথা হয়নি।একটু চিন্তায় পড়ে গেল নিশিতা কি আদৌ রাজি হবে? রাজি না থাকলে ত আজ এভাবে কথাও বলত না।তাহলে কি নিশিতা রাজি! যাহ,এলোমেলো লাগছে সব। লাইট অফ করে আজ আগবাগেই শুয়ে পড়লো। কিন্তু ঘুম আর আসছে না। শুধু নিশিতার কথা মনে পড়ছে আর তারা মায়াবী চেহারাটি ভেসে আসছে। এটাই ভালোবাসা মনে হয় মনের টান, এটাই প্রেম আর এটাই হয়ত ভালোবাসা।
“মনের মাঝে শুধুই তুমি,
বাঁধানো সুখের বাগান,
সাজিয়ে গুছিয়ে রাখবো যে তা
রেখে বাজি নিজের প্রাণ।”
নিজের অজান্তেই কোন এক প্রেমের কবিতার কয়েকটি চরণ বলতে লাগলো।শুয়ে শুয়ে নিশিতার কথা ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমের রাজ্যে চলে গেছে নীল টেরই পায়নি।
পরদিন যখন কলেজের ব্যাচে আদৃতা পড়তে আসল,নীল তাকে প্রাইভেট শেষ করে একটা কথা শুনে যেতে বললো।
-চিরকুট কি নিশিতাকে দিয়েছিলে নাকি?
-হ্যা,ভাইয়া দিয়েছি ত(আদৃতা হাসি দিয়ে উত্তর দিলো)। কিন্তু আমাকে ত তেমন কিছুই বলে নাই মানে কোন উত্তর। বলছে দেখা যাক।
-তুমিও কি পড়ছো নাকি চিরকুট?মানে দুই বোন যদি আমার মিলেমিশে পড় আর কি।
-না ভাইয়্যা, কি যে বলেন!। ওকে জাস্ট চিরকুটটি দিয়ে আপনার কথা বলেছি। আর ভেবে দেখতে বলেছি বিষয়টি।
-ধন্যবাদ ভাইয়্যা।
-শুধু ধন্যবাদ।
-হুম,আচ্ছা তোমার কাজটাও ভাইয়ে করে দিবো টেনশন নিও না।
-দিলেই হয়।তারপর আদৃতা চলে যায়।
বিকেল ৪.০০টা বাজে। স্কুলের ব্যাচের আসার সময় হয়েছে।এই ব্যাচেই নিশিতা পড়ে। নীলের মনে কিছুটা লজ্জাবোধ আর আতংক ঠুকতে থাকে। ইদানিং কেন জানি পড়াতে সমস্যা হচ্ছে তার ।ছাত্রছত্রীদের দিকে তাকালেই নিশিতার চোখচোখি। লজ্জায় যেন লাল হয়ে যায়। অনেক কষ্টে ক্লাস চালিয়ে যেতে হয়। নিশিতাও আজকাল কেমন করে নীলের দিকে তাকায়। এ তাকানো কি ভালোবাসার নাকি তাকে তিরস্কার করার সেটা এখনো সে বুঝে উঠতে পারেনি। এভাবে কেটে যায় আরো দুদিন।
এক বৃহস্পতিবার রাতে আবার নিশিতা তার আম্মুর মোবাইল দিয়ে কল দেয় নীল কে।
-কেমন আছেন?
-কে,নিশিতা নাকি?
-কেন,চিনেন না?
-নাহ,এটাত তোমার আম্মুর নাম্বার তাই কে কল দেয় সেটাই বুঝে উঠা মুশকিল।এজন্য জিজ্ঞেস করতে হয়।
-আগামীকাল কি পড়াবেন?
-পড়াবো বলছিলাম।কারন শনিবার ভার্সিটিতে পরীক্ষা আছে তাই।
-নাহ,আমরা কাল খালার বেড়াতে যাবো তাই।
-প্রাইভেট শেষ করে যাও?
-দেরী হয়ে যাবে।
-তাহলে তুমি একটু তাড়াতাড়ি আইসো।পড়াগুলা আগে বলে সবার সাথে গণিত ক্লাসটি করে চলে যাওয়ো।
-আচ্ছা।
-শোন?
-Are you alone?
-হ্যা।
-আমার ব্যাপারটি ভেবে দেইখো।
-আচ্ছা।তাহলে রাখি। (নিশিতা মোবাইল রেখে দেয় হয়ত তার আম্মু পাশে ছিল)
-আচ্ছা।
নীল মোবাইল রেখে ভাবতে থাকতে তার স্বপ্নের রাণী হয়ত মোটামুটি রাজি নাহয় তাকে এড়িয়ে যেত।এ ব্যাপারে বললে ত সে আর নেগেটিভ উত্তর দেয় না। যাহোক সে আদৌ জানে না তার কপালে কি আছে।
পরদিন ঠিকই নিশিতা আগে পড়তে আসে। কিছুটা লাজুকভাবে থাকলেও পড়াগুলো ঠিকমতই দেয়। পড়া নিতে নিতে বাকী ছাত্রছাত্রী চলে আসে। সামনা সামনি এ ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করার আর সময় হয়ে উঠে না।নিশিতা একটু আগেবাগেই ছুটি নিয়ে চলে যায়। নীল বন্ধুদের নিয়ে বিকালে যখন পাশের গ্রামের রাস্তা দিয়ে হাটতেছিল। হঠাৎ এক সি এন জি মধ্য থেকে হাত বাড়িয়ে ইশারা করতে লাগলো। সি এন জি কাছে আসতেই দেখলো নিশিতা,তার ছোট ভাই আর আম্মু পাশের গ্রাম থেকে খালার বাড়ী থেকে নাকি বেড়িয়ে এসেছে। নিশিতাকে আজ সত্যি অনেক সুন্দর লাগতেছে। তার চোখেই সুন্দর নাকি সবার চোখে? যাহোক তার চোখেই নিশিতাকে পরীর মত সুন্দর লাগে। এভাবেই লুকুচুরির মধ্য দিয়ে কাটতে থাকে আরো কিছু দিন।
(চলবে)
৷।পর্ব-২।।
নিশিতা এখন নীলের নিয়মিত ছাত্রী।কোন ছাত্রছাত্রী আদৈ টের পায়নি তাদের ব্যাপারটা।
প্রতিদিন কোচিং ছাড়া এভাবে আর কোথাও দেখা হয় না নীল ও নিশীতার।
কথা হয় তবে তেমন কথা নয়, আড় চোখে। সবার আড়ালে।মাঝে মাঝে নীল কোচিং থেকে নিশিতা যাওয়ার সময় একটা চোখ মেরে দেয়।
নিশিতাও মুচকি হেসে চলে যায়।
একদিন রাত ১০ টা কল আসে নিশিতার।
-কেমন আছেন?
-আমরা আর কেমন থাকব।
-কেন,কি হয়েছে আপনার?
-না,কিছু না।
-তোমার কি খবর?
-ভালো।শুনেন, আজকে রাত ১১ টায় আপনাকে কল দিব।কথা আছে। এখন রাখি।
-আচ্ছ।
(নীল বুঝতে পারলো,সবুজ সংকেত হয়ত তার জন্য অপেক্ষা করিতেছে।
নীলও সব কাজ শেষ করে ১১ টা বাজার আগেই মোবাইল নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল,কখন নিশিতা কল দিবে।)@??
অবশেষে সেই মহেন্দ্রক্ষন আসলো।
১১ টা বাজার ২ মিনিট পর নিশিতার কল আসলো।
মোবাইল টা বাজতে শুরু করল।নীল তাড়াতাড়ি করে কল রিসিভ করল।
-কেমন আছেন?
-ভালো।
-শুনেন, আপনাকে কিছু কথা বলার জন্য কল দিছি।মাইন্ড করবেন না।
-আচ্ছা বলো।
-আপনি ত জানেন আমার বাবা নাই
-হ্যা,জানি।
-আমার মাইই সব।
-আমি এমন কোন কাজ করিনা, যাতে আম্মু কষ্ট পায়।
একটা কথা কি জানেন আমি সব কথাই আম্মুর কাছে শেয়ার করি বন্ধুর মত।
-কি বলো! তাহলে আমার সমপর্কে কি বলে দিছো?
-নাহ,এসব কি বলা যায়।আর বললে আমাকে ঠিক মেরেই ফেলবে।
-যাহোক ভাই বাচালে।
-শুনুন।তাই আমি চাই না আম্মু কষ্ট পাক।
-আমিও চাই না তোমার আম্মু কষ্ট পাক।
-আমি এমিন কোন কাজ করব না যাতে তোমার বা তোমাদের ফেমিলির মান সম্মান নষ্ট হয়।তবুও ভেবে দেখো আমার ব্যাপারটা। যদি সময় নিতে চাও নিতে পারো কোন সমস্যা নাই।
- আচ্ছা,কিছু শর্ত দিলে মানবেন?
-হ্যা,বলো কি করতে হবে?
-মনে করেন, আমি যে কথা বলি অথবা আমি আপনার সাথে ধরুন রিলেশন করলাম এটা কোন ভাবেই আমার বন্ধু/বান্ধবদের শেয়ার করা যাইবে না।
-না, করলাম।
-আর কোনদিন আমার আম্মু যদি জেনে যায় ঐদিন আর আমার কিছু করা থাকবে না। ঐদিন থেকে সম্পর্ক টুটালি বাদ।
-হুম, শর্তে রাজি। তবুও তুমি রাজি হও।
-আর আদৃতা আপু অথবা হামিম ভাইকে বলা যাবে না।কারন হামিম ভাই যে দুষ্ট।ওনি জানলে সবাইকে মাইক দিয়ে জানায় দিবে।
-আচ্ছা,রাজি।তবুও একটা কথা বলি সম্পর্ক করলে কোন না কোন এক সময় জানতেই পারে তাই বলে জেনে যাবে বলে সম্পর্ক একদম বাদ তা কি হয়?
-আমার ক্ষেত্র ভিন্ন।আমি আগেই বলেছি আমার বাবা নেই।আর আম্মু আমাকে অনেক বিশ্বাস করে।
-আচ্ছা শর্তে রাজি।
-দেইখেন আবার।
-আচ্ছা।আমি কি তাহলে ধরে নিব......
-কি?
-আমি যাকে পছন্দ করি সেও রাজি।
-জানি না।
-জানিনা মানেই ত সেটা।
-আপনার মাথা।
-তোমার মন্ডু।
-আচ্ছা রাখি।
-কথাই ত শেষ হলো না, তুমি রেখে দিতে চাইছো।
-কি বলবেন বলেন।
-এমন করলে কিভাবে বলি।
-আচ্ছা বলুন।
-তুমি যে বললে না আমি কি ধরে নিব।
- কি,কি ধরে নিবেন।
-হ্যা নাকি না।
-জানিনা।
-আসলেই বল না।
-আপনি কি মনে করেন।
-আমি যা মনে করি তা কি তুমি মানবা?
-হ্যা, বলুন।
-আমিত মনে করি আমার পাখিটি আমার প্রস্তাবে রাজি।
-ইশ,সখ কত!
-যেটা সত্য সেটাই ত।
-আচ্ছা রাজি হলেই বা কি হবে বলুন ত?
-কিছু হবে না।সব জায়গায় লাভ খুজলে কি আর কেউ রিলিশন করে?
-আচ্ছা মনে করেন আমি রাজি,এখন কি হবে?
-মনে করেন না, সত্যি রাজি হতে হবে।
-হ্যা রাজি।
-না বিশ্বাস করলাম না।
-কি করলে বিশ্বাস করবেন?
-একবার বাংলায় বলতে হবে আমি তোমাকে ভালোবাসি।
-যান, আমি পারবো না।
-আচ্ছা আমার সাথে বলো। আমি.............তোমাকে.............ভালোবাসি।
-পারবো না।
-আচ্ছা ইংরজিতে বলো।
-সেটাও পারবো না।
-চেষ্টা করে দেখো।
-I........
-হ্যা,বলো।
-hate.......... you.
-ঠিক করে বলো।
-পারবো না।
-আচ্ছা বাংলায় আমার সাথে ভেংগে ভেংগে বলো।
-পারতাম না।
-চেষ্টা করে দেখোই না।
-না, পারবো না।
-আচ্ছা, একটু একটু বলো।
-বলেন।
-আমার সাথে সাথে বলবা।
-আচ্ছা
-আমি.......
-আমি.......
-তোমাকে......
-আপনকে.....
-এটা কি হলো?
-কি?
-আমি বললাম তোমাকে,আর তুমি বললে আপনাকে।
-আমি কখনই বলতে পারবো না।
পর্ব-৩
পরের দিন নিশতা একটু মুচকি হাসি দিয়েই ক্লাসে প্রবেশ করে।ক্লাসের ফাকে ফাকে আড়চোখে তাকায় মেয়েটি নীলের দিকে।নীলও চোখ ফিরিয়ে নেয়।
পরের ব্যাচে আদৃতাও পড়তে আসে। পড়া শেষ হলে আদৃতা বসে থাকে নীল কে কিছু বলবে বলে।
-কি আদৃতা, কিছু বলবে নাকি?
-হ্যা, ভাই। ছেলেটার সাথে কথা বলেছিলেন?
-হ্যা,বলেছিলাম।
-কি বলছে?
-আমিই তাকে অনুরোধ করেছিলাম যাতে তোমার সাথে ব্রেক আপ না করে।কারন তুমি তাকে অনেক লাভ করো।
-কী বলছে?
-তেমন কিছু বলে নাই।তবে চেষ্টা করবে নাকি তোমাকে যাতে কষ্ট না দেয়।
-আচ্ছা ভাই।ধন্যবাদ আপনাকে।আর শুনেন, নিশিতা কি আপনার সাথে যোগাযোগ করেছে?
-না
নিশিতা আগেই শর্ত দিয়েছিল যাতে কেউ তাদের ব্যাপারে না জানে।এমনকি আদৃতাও।যদি কোনদিন জেনে ফেলে তাহলে ঐদিন থেকেই ব্রেক আপ! কি মারাত্মক শর্ত! তবুও রাজি হয়েছে নীল।কারণ নিশিতার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য যে কোন শর্তেই রাজি নীল। তাই মিথ্যের আশ্রয় নিতে হয় নীলের।
-যোগাযোগ করার কথা তো!
-এখনো করেনি। আচ্ছা করলে তোমাকে তো জানাবোই।
-দেইখেন, আমাদের ছাড়াই এগিয়ে যান আবার।
-আরে না,কী যে বলো না।আমার মনে হয় নিশিতা রাজি না।রাজি থাকলে ত তোমাকেই বলত।
-কী জানি ভাই,আমার তো রাজি মনে হয়েছে।
-কীভাবে বুঝলে?
-আপনার সম্পর্কে অনেক পজিটিভ পজিটিভ কথা বলে।
-তাই নাকি?
-হ্যা ভাই।
-আচ্ছা, অপেক্ষায় থাকলাম।
আদৃতা চলে যাবার পর নীলও কোচিং সেন্টার বন্ধ করে পাশের গ্রামের বাজারে আড্ডা দিতে চলে যায়।
রাতে ৯.০০ টায় নিশিতাদের মোবাইল থেকে এসএমএস আসে।
"Ajke raat 11 Tay cll dibo.Opekkha koiren"
নীল উত্তর দেওয়াদ সাহস পায় না।কারন যদি আবার নিশিতার আম্মু জেনে ফেলে এই ভয়ে।
নীল তারাতাড়ি খেয়েদেয়ে মোবাইল নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে কখন নিশিতা কল দিবে।
নিশিতা ঠিক ১১ টায় কল দেয়-
-আসসালামু আলাইকুম।
-ওলাইকুম আসসালাম।
-কেমন আছেন?
-ভালো, তুমি কেমন আছো?
-ভালো,আচ্ছা আপনি ক্লাসের সময় একটিবারও আমার দিকে তাকালেন না কেন?
-ইচ্ছে করেই।যদি কেউ বুঝে ফেলে তাই।
-তবুও একবার তাকানো যায় না?
-আচ্ছা,এরপর থেকে তাকাবো।
-জানেন, আজকে ইংরেজি প্রাইভেটে অনেক মজা করছি আমরা বান্ধুবীরা।
-তাই নাকি?
-আমরা তাহারার জন্মদিন পালন করেছি।অনেকে অনেক গিফট উপহার দিয়েছে আবার অনেকে কেক মুখে মেখে দিয়েছে।কী যে হৈ হল্লুর!
-তাহারা কে?
-আমার বান্ধুবী।সেও রিলেশন করে!
-তাই নাকি?
-আমগো ব্যাচের মধ্যে আমি আর রিমি বাদে সবাই রিলেশন করে।
-রিমি করে না কেন?
-আমার মনে হয় করে। কিন্তু কারো সাথে শেয়ার করে না।
-তোমার মত।
মেয়েটি খিল খিল হাসতে থাকে।
-ঐ,তোমার আম্মু শুনে ফেলবে ত।
-শুনবে না। আমার আম্মু পাশের রুমে।ঘুমিয়ে আছে।আর আমি বড় ফ্যানটি লাগিয়ে দিয়েছি যাতে করে আওয়াজে আম্মু যেন কিছুই টের না পায়।
-তুমি ত ভালোই চালাক।
আবার হাসতে থাকে মেয়েটি।খুব হাসে।নীল বিরক্ত হয় না।কারণ মেয়েটিকে প্রচুর ভালোবাসে সে।
-এত হাসো কেন?
-হুম,আমি প্রচুর হাসি।হাসি আটকিয়ে রাখতে পারিনা।
-ভালো তো।হাসি স্বাস্থ্যের জন্য উপকার।
-দেখেন না আমার কেমন স্বাস্থ!
-হুম, এটাই ভালো।
-আচ্ছা রাখি।
-এত তারাতাড়ি রেখে দিবা?
-হুম,সকালে আবার প্রাইভেট আছে।
-কিছুক্ষন থাকো না?
-না,রাখি।
-শুনো?
-বলেন।
- I love you.
-হুম।
-তুমি বলবে না?
-I hate you.
- বলো না।
-আমি পারবো না।আচ্ছা,রাখি।আল্লা হাফেজ।
পর্ব-৪
এভবে কয়েকদিন চলে যায়।নিশিতা আর নীল রোজকরে রাতে অনেকক্ষন কথা বলে।প্রায় ১ টা ২ টা বেজে যায়।সকালে টিউশিনি থাকে আবার মাঝেমাঝে ভার্সিটি যেতে হয়। তবুও খারাপ লাগে না নীলের।
পহেলা জানুয়ারি, হ্যাপি ইয়ার।এই দিন সব ছাত্রছাত্রীদের বিরানি খাওয়াবে।কয়েকজন ছাত্রছাত্রীদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আয়োজন করার।কিন্তু নীলের এইদিন আবার প্রেজেন্টেশন রয়েছে।তাই সকাল সকাল ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। কিন্তু ২ টা বেজে গেছে এখনো প্রেজেন্টেশন শেষ হয় নি।
হুট করে মোবাইলে নিশিতার মেসেজ আসে।
-Apni ki aj asben na?
- হ্যা,আসবো ত।
-ekhono j asen na?
-শেষ হলেই রওনা দিবো।তোমরা কি আয়োজন করে ফেলছো?
-hmm,ranna shesh prai.
- কোথায় রান্না করতেছো?
-Adrita apuder ekhane.
-গুড,আচ্ছা অপেক্ষা করো আসতেছি।
নীলের প্রেজেন্টেশন শেষ হলে স্যারকে বলে রওনা দেয় বাড়ির উদ্দেশ্যে।তার ছাত্রছাত্রীরা তাকে অনেক কল দিতেছে কারণ ইতিমধ্যেই ৪ টা বেজে গেছে। নীল তাদের অপেক্ষা করতে বলে।আর খাওয়া দাওয়া করে নিতে বলে।যদিও ছাত্রছাত্রীরা মানতে রাজি ছিল না তবে তার অনুরোধে খাওয়া দাওয়া শেষ করে নেয়।
নীল আসতে আসতে প্রায় ৫ টা বেজে যায়।সবাইকে নিয়ে কেক কেটে নববর্ষ পালন করে।নীল খেয়ে এসেছে বলে বিরানি খাওয়া হয়নি।
কিন্তু ছাত্রছাত্রীরা পিরাপিরি শুরু করে খাওয়ার জন্য।নীল খেতে রাজি ছিল না কারন ইতিমধ্যেই সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
আদৃতা বললো একটা কাজ করেন ভাই।
-খাবারগুলো নিশিতারদের বাসায় থাকুক আপনি রাতে খেয়ে যাবেন।
-আরে না। খেতে হবে না।
-না ভাই, আপনি না খেলে কেমন দেখায়।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
নীলের খাবারগুলো নিশিতাদের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।নীল মুখে মানা করলেও মনে মনে খুশিই হয়েছিল।কারণ এই সুযোগে নিশিতাদের বাসায় যাওয়া হবে।
সবাইকে বিদায় করে নীলও পাশের গ্রামের বাজারে চলে যায়।বন্ধুদের সাথে পাশের গ্রামেই খিরাখেত থেকে খিরা খেতে যায়।খেয়ে দেয় ঐ গ্রামেই নাকি এক মহিলা পিঠা বানায় বিভিন্ন রকম ভর্তা দিয়ে।বন্ধুরা মিলে খাচ্ছিল।এমন সময় নিশিতাদের মোবাইল থেকে কল আসে।
-আসসালামু আলাইকুম।
-আসসালামু আলাইকুম।(নিশিতার কন্ঠ)
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।
-আপনি আসবেন না?
-হ্যা, আসবো ত।বাসায় যাওয়ার সময় দেখা করে যাবো।
-কোন সময় আসবেন?
-এইত কিছুক্ষন পর।
-আচ্ছা।(নিশিতা মোবাইল কেটে দেয়)
নীল বন্ধুদের সাথে পিঠা খাচ্ছিল।প্রায় ১০/১২ জন।পিঠা আসলেই অনেক মজার ছিল।খেয়েদের বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।এর প্রায় ৩০ মিনিট পর আবার নিশিতাদের মোবাইল থেকে কল আসে।
-আসসালামু আলাইকুম।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।(এবার নিশিতার আম্মুর কল)
-জ্বি আন্টি বলেন।
-কখন আসবা?
-এইত আন্টি আসবো। আসলে আমরা গ্রামের ভিতর আসছিলাম পিঠা খেতে।এখনই চলে আসবো।