09/08/2022
১০ই মহররম আশুরা.
যে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেকে সত্যের সৈনিক হিসেবে কুরবান করার শপথ নিতে হবে। সে ইতিহাস না পড়ে, না বুঝে খিচুড়ী আর মুরগী খাওয়ায় ব্যস্ত।
মহররমের এই দিবস বর্তমান বিশ্বজগৎ এর সৃষ্টির সূচনা লগ্ন থেকে হয়রত হোসাইন (রাঃ) পর্যন্ত অনেক ইতিহাস রয়েছে। কিন্তু কারবাল প্রান্তরের যে ঘটনা তার পটভূমি এবং পরবর্তী ইতিহাস নিয়ে খুব কমজনই ভাবেন! আর বলতে পারেন তারও কমজন!
হযরত হোসাইন (রাঃ) এর শাহাদাতকে মহানবী হযরত মোস্তফা মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দৌহিত্র শাহাদাতকে হিসেবে মূল্যায়িত করে থাকেন। অর্থাৎ এখানে একটি সম্পর্ককে প্রাধান্য দিয়ে তার শাহাদাতকে নিয়ে বিদআত প্রচলিত রয়েছে। যেমন মাতম করা, কাল্পনিক লাশ নিয়ে মিছিল করা, পাড়ায় পাড়ায় খিচুড়ীর আয়োজন করা, ফাতেহা করে মুরগী জবাই ইত্যাদি। এলাকাভেদে বিদআতগুলো ভিন্ন রকম, আর পীরভেদে আরও আরও বেশী রকম বিদআতী কাজ।
কিন্তু হযরত হোসাইন (রাঃ) এর শাহাদাত এর পটভূমি এবং পরবর্তী ইতিহাস পর্যালোচনা করলে অনেক বিষয় আপনাদের দৃষ্টিগোচর হবে। আমি সব বিষয়ে দৃষ্টিগোচর করব না, বিশেষ ১ বা ২টি বিষয়ে হযরত হোসাইন (রাঃ) এর শাহাদাত আগে ও পরের সময়ে দৃষ্টিগোচর করব।
(১) হযরত আবু বকর (রাঃ) থেকে হযরত আলী (রাঃ) এর সময় পর্যন্ত কিভাবে খলিফা নির্বাচিত হতো তা কি কখনও ভেবে দেখেছেন? যদি না ভেবে থাকেন আর না জেনে থাকেন! তবে মজলিসে শূরা সম্পর্কে আপনাদের মনে করিয়ে দিতে চাই। মজলিসে শূরা দ্বারা খলিফা নির্বাচন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের যাবতীয় কার্য পরিচালনা করতো। মজলিসে শূরার পরামর্শ ও অনুমোদন ছাড়া খলিফার কোন হুকুম চলতো না।
কিন্তু দেখুন হযরত আলী (রাঃ) এর শাহাদাতের পর মুয়াবীয়ার ক্ষমতা দখল এবং মজলিশে শূরার ভেঙ্গে নিজের মতো করে রাষ্ট্র পরিচালনায় লোক নিয়োগ করে। যা ইসলামী রাষ্ট্রের ভিত্তিই নষ্ট করে দিয়েছিল।
(২) হযরত আবু বকর (রাঃ) থেকে হযরত আলী (রাঃ) এর সময় পর্যন্ত খলিফা নির্বাচনে কোন উত্তোরাধিকার দেখা যায় নি, মানে নিজের ছেলে বা নিজের ভাই এরকম কাউকে দেখা যায় নি। কারন হলো ঐ মজলিসে শূরা। মজলিসে শূরা ইসলামী রাষ্ট্রের জন্য যোগ্য ব্যক্তিকেই বাছাই করে খলিফা নির্বাচন করতো।
কিন্তু দেখুন হযরত হোসাইন (রাঃ) এর শাহাদাত পূর্বেই মুয়াবীয়া খিলাফতকে উত্তোরাধিকার সম্পত্তি বানিয়ে এজিদকে খলিফা নির্বাচনের মাধ্যমে মূলত রাজতন্ত্রের সূচনা করে যায়।
হযরত হোসাইন (রাঃ) তার দূরদৃষ্টি দিয়ে এই দুইটি বিষয় ছাড়াও আরও অনেক বিষয় বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, আইন শাসকগোষ্ঠী, এর সাথে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, ধনী ব্যক্তিদের নিকট কুক্ষিগত হয়ে যাবে। ইসলামের মহানুভবতা হারিয়ে যাবে। ইসলামের খোলসে রাজতন্ত্রের নতুন শোষণ-বঞ্চনা শুরু হবে। আর তাই তিনি জিহাদ করে সত্যের পথে নিজেকে কুরবানী করে জানিয়ে দিয়েছিলেন, সত্য কখনও মাথানত করে না।
অথচ আমরা এই শাহাদাত দিবসকে শোক দিবস হিসেবে পালন করে যাই জাতীয়ভাবে। এটা শোকদিবস নয়, এটা সত্যমিথ্যার পার্থক্যকারী দিবস। যে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেকে সত্যের সৈনিক হিসেবে কুরবান করার শপথ নিতে হবে। সে ইতিহাস না পড়ে, না বুঝে খিচুড়ী আর মুরগী খাওয়ায় ব্যস্ত।
আর ১০ই মহররম উপলক্ষে একের অধিক রোজার রাখার সহীহ হাদীস রয়েছে। আর তাই আমরা পরিবারের সকল সদস্য, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী, সমাজকে সাথে রোজা আদায় করতে চেষ্টা করব।
#আলরাজির_উপলব্ধি