20/07/2019
আজ থেকেই আপনার শিশুকে বাইরের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করুন। আপনিও দুধ খাওয়া ছেড়ে দিন সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত। হোক সেটা তরল, পাস্তুরিত কিংবা গুড়া দুধ। তবে যাদের নিজের গাভী দুধ দেয় তারা খেতে পারেন, শিশুকেও খাওয়াতে পারেন। কেন? কারণ...
১। বিএসটিআইএর নিবন্ধন পাওয়া ১৪ কোম্পানির ১১টির পাস্তুরিত দুধেই সীসার অস্তিত্ব মিলেছে। এছাড়া, বাজারে পাওয়া তরল দুধের প্রায় সবগুলোতেই ক্যাডমিয়ামের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আর এ পরীক্ষা চালিয়েছে সরকারের নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে জমা দিয়েছে সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে জানা গেছে, বিএসটিআইয়ের অনুমোদন নিয়ে পাস্তুরিত দুধ বাজারজাত করছে মিল্কভিটা, প্রাণ, ফার্মফ্রেশ, আফতাব মিল্ক, ডেইরি ফ্রেশ, ইগলু, আল্ট্রা মিল্ক, আড়ং ডেইরি, আইরান, পিউরা ও সেইফ মিল্ক। সম্প্রতি এসব কোম্পানির পাস্তুরিত দুধ সরকারি- বেসরকারি ছয়টি গবেষণাগারে পরীক্ষা করে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। সো ভুল হওয়ার কোন চান্স নেই।
আরো ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো, বিএসটিআইয়ের আইনজীবী আদালতকে জানান, নিবন্ধিত ১৪ কোম্পানির পাস্তুরিত দুধের মান দেখার দায়িত্ব তাদের। তবে, এসব কোম্পানির পাস্তুরিত দুধের বাইরে বাজারের খোলা তরল দুধের মান দেখার এখতিয়ার বিএসটিআইয়ের নেই। বুঝেন অবস্থা!!
২। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক স্যার দুই দফায় পাস্তুরিত তরল দুধ পরীক্ষা করেন। পরীক্ষায় ১০টি নমুনার ১০টিতেই ৪ ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, উচ্চ মাত্রার এসব অ্যান্টিবায়োটিক মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
৩। তারো আগে আমদানি করা গুড়া দুধ পরীক্ষা করে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষায় ধরা পরে কোন কোন দুধে ৫০ থেকে ২০০ গুন পর্যন্ত ক্ষতিকর মাত্রার সীসা। এটা নিয়ে তখনো হইচই পড়ে যায়। দেশ বিদেশ থেকে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে আক্রমণ করা হয়। নিউজিল্যান্ড থেকে চিঠি পাঠানো হয় দিল্লি দূতাবাসে। চিঠিতে দাবি করা হয়, তাদের দুধ নিরাপদ। কিন্তু আমরা জেনেছি, অনেক ব্যবসায়ী শুধু মুনাফার জন্য মেয়াদ না থাকা দুধ আমদানি করেন। উল্লেখ্য বাংলাদেশে নিউজিল্যান্ডের দূতাবাস নেই। দিল্লি আঞ্চলিক কার্যালয়। বাংলাদেশ যেসব দেশ থেকে গুড়া দুধ আমদানি করে নিউজিল্যান্ড অন্যতম। হইচই শুরু হলে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।
কেন দুধে এসব ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া যাচ্ছে? দুধেতো পাওয়া যাওয়ার কথা চর্বি, পানি, প্রোটিন,ল্যাকটোজ ইত্যাদি। কারণ আমরা নির্বিচারে নিজেরা যেমন ওষুধ বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক খাই তেমনি গরুকেও খাওয়াই। শুধু তাই নয়, আমরা মাছ মুরগিকেও দ্রুত বড় করার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়াই। ট্যানারির বর্জ্যে তৈরি খাবার খাওয়াই।
মনে রাখবেন, এটা দেশে ধংস কিংবা সরকার হটানো কিংবা বহির্বিশ্বের কোন ষড়যন্ত্র নয়। এটা আমাদের অজ্ঞতার ফল, সক্ষমতার অভাবের ফল, আমাদের অধিক মুনাফার লোভের ফল। গত কয়েক দিনে দুধ বিক্রি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। আরো কমুক। সবার টনক নড়ুক। কার্যকর পদক্ষেপ সবাই নিক। নিরাপদ হোক দুধ। নিরাপদ হোক আগামী। নিরাপদ হোক বাংলাদেশ।