04/11/2024
যখন মোবাইল ছিল না তখন জগদীশচন্দ্র বসু ছিলেন।
যখন ই মেল ছিল না তখন রবীন্দ্রনাথ ছিলেন।
যখন ইউ টিউব ছিল না, তখন সত্যজিৎ, মৃণাল, ঋত্বিক ছিলেন।
যখন শুধুই রেডিও ছিল তখন হেমন্ত, দেবব্রত, সুচিত্রা, কণিকা ছিলেন।
যখন হলদিরাম ছিল না, তখন নকুড়, দ্বারিক, পুঁটিরাম ছিলেন।
যখন মেট্রো ছিল না, তখন কবিরা ডবল ডেকারে রাত্রিশাসন করতেন।
যখন ওলা, উবর ছিল না, তখন বিদ্যাসাগর হেঁটে পাড়ি দিতেন দূরের পথ।
যখন সেলফি ছিল না, তখন মানবজমিনের ছবি আঁকতেন লালন ফকির।
যখন ডিজে বক্স ছিল না, তখন জবাকুসুম ভোরে মদনমোহন তর্কালঙ্কার গাইতেন, পাখি সব করে রব।
যখন বহুতল ছিল না, তখন বাংলায় ছিল জসীমউদ্দিনের ধু ধু প্রান্তর।
আমরা তা হলে কীসে এগোলাম? এই যে সভ্যতার বিপুল আয়োজন, এই যে দূরকে নিকট করার হাজার ফিকির, এই যে মোবাইল ফোনেই বিশ্বের বিপুল তরঙ্গ, এর নিট ফল কী?
বিভূতিভূষণ লিখেছেন, যে নদীর জলে আমি প্রথম স্নান করলাম, যে গাছের নীচে বসে আমি হাওয়া খেলাম, সেটাই আমার কাছে নতুন।
কিন্তু এখন তো নতুন কিছু নেই। কোনও বিস্ময় নেই। ইঁদুরের গর্ত, শকুনির ডিম, বীরু রায়ের বটতলা, হরিহরের পুঁটুলি সব আমার মুঠোয়। মুখের কথা ফুটল কি ফুটল না, আমি সব আবিষ্কার করে ফেললাম। আমার মধ্যে কোনও বিস্ময় নেই, আমি কান পেতে দূরের রেলগাড়ির আওয়াজ শুনিনি। সব আমি মোবাইলেই দেখে ফেলেছি। চিলের কান্না, কোকিলের বিরহ, নেড়ি কুকুরের ডাক আমি মোবাইলেই শুনে ফেলেছি। আমার কোনও বিস্ময় নেই। আমি বলতে পারছি না, 'বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান।' আকাশভরা সূর্যতারার নীচে আমি পাগলা দাশু, পাগলা বিশু, পাগলা জগাই কেউ নই।
আমি তা হলে কে?
কে জানে!
|Π| ।। উন্নত প্রযুক্তি।। |Π|