23/01/2024
#তোকে_অনেক_ভালোবাসি
#পর্ব_২
সকালে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লাম। ক্লাস শুরু হতে ৪৫ মিনিট সময় বাকী বাড়ি থেকে কলেজে পৌছোতে ২০ মিনিট সময় লাগে আমি আগেই বেড়িয়ে পড়েছি,আমি চাই না আদ্র ভাইয়া আমাকে নিয়ে আসুক। অসহ্য লোক একটা কারনে অকারনে আমাকে বকে। বলে কিনা আমি তোকে নিয়ে যাবো নিয়ে আসবো....আমিও কম যাই না সে ঘুম থেকে উঠার আগেই বেড়িয়ে পড়েছি হুহ।
কলেজে এসে সোজা পুকুর পাড়ে চলে এলাম এখনো ২০ মিনিট সময় আছে প্রায়। পুকুর পাড়ে এসে আমার মেজাজ বিগড়ে গেলো একমাত্র কলেজের এই জায়গাটাই আমার সব থেকে বেশি ভালো লাগে,আর এখানে এসব ছি...পুকুরপাড়ে সিঁড়িতে একটা ছেলে ও মেয়ে বসে আছে শুধু বসে নেই একে ওপরকে জড়িয়ে বসে আছে। আচ্ছা এদের কি লজ্জা বলতে কিছু নেই? কলেজে এসেও প্রেম করতে হয়!!!
ওখানে আর বসা হলো না রাগে গজগজ করতে করতে আমার ক্লাসের সামনে চলে এলাম। সবাই একে একে আসছে ক্লাসরুম খুলে দিতেই গিয়ে বসে পড়লাম। একটু পরেই মনিকা এসে আমার পাশে বসলো।
(মনিকা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড অষ্টম শ্রেণি থেকে আমরা একসাথে আছি আমি ওকে মনি বলে ডাকি আর ও আমাকে আদ্র ভাইয়ার মত আরু বলে ডাকে)
আমি কিছু বলছি না দেখে মনিকা আমাকে ধাক্কা দিয়ে বললো...আরু তুই তো এমন চুপচাপ বসে থাকার মেয়ে নয়!! কি হয়েছে মন খারাপ??
মন মেজাজ দুটোই খারাপ।
কেনো বাসা থেকে কেউ কিছু বলেছে তোকে??
বাসা থেকে কে কি বলবে,বাসার সবাই আমাকে খুব ভালোবাসে একজনই তো আছে যে মাঝে মাঝেই আমার মন খারাপের কারন হয়ে দাড়ায়।
আরু তুই কি আদ্র ভাইয়ার কথা বলছিস উনি আবার তোকে বকেছে তাইনা??
শুধু বকেনি রে ওই হনুমানটা এবার আমাকে মেরেছে। কাল তো তুই আসিস নি আসলে দেখতে পারতি।
সেকিরে কেনো মেরেছে তোকে!!!
মনিকাকে কালকের সব কথা খুলে বললাম,পুকুর পাড়ের বিষয়টাও বললাম যার কারনে আমার মেজাজ খারাপ আছে।ও সব শুনে বললো....পুকুরপাড়ে ওসব রোজই হয় কমন হয়ে গেছে ওইদিকে খেয়াল না করাই ভালো। তবে তোর কপালে যে আজ আরো দুঃখ আছে সেটা আমি বুঝতে পারছি।
আমি কপালে ভাজ ফেলে তাকিয়ে বললাম,মনি তুই কি বলতে চাইছিস হুম??
আদ্র ভাইয়া তোকে নিজে কলেজে নিয়ে আসবে বলেছে আর তুই নাচতে নাচতে চলে এসেছিস। ভেবে দেখেছিস উনি রেগে গেলে কি করবে!!
এই তুই আমার বেস্টু তো! নাকি ওই আদ্রর কিছু হস হুমম?? আমি মাঝে মাঝে ভীষণ কনফিউজড হই যে তুই আসলে কার দলের!!
আরু কি বলছিস তুই এসব!! আমি জাস্ট তোকে.....
এর মাঝেই স্যার চলে এলো মনি চুপ হয়ে গেলো আমি ফিসফিসিয়ে বললাম...আর যদি ওই হনুমানটার পক্ষ নিয়ে আমাকে কিছু বলিস তাহলে তোর সাথে আমি ব্রেকআপ করে দিবো,মনে থাকবে তো মনি বেবি?
মনিকা চোখ বড় বড় করে তাকালো কিছু বললো না আমি ওর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বললাম...এভাবে চেয়ে আছিস কেনো আমাকে না দেখে সামনে তাকা ক্লাসে মন দে।
পরাপর ৩ টা ক্লাস হলো আর বসে থাকতে মটেও ইচ্ছে করছে না আবার ক্ষিদে ও পেয়েছে।এদিকে মনিকাও চুপ করে আছে হয়তো একটু অভিমান করছে। আমি মনিকার হাত ধরে বললাম...মনি চল ক্যানটিনে যাই সকালে খেয়ে আসি নি এখন খুব ক্ষিদে পেয়েছে।
তোর ক্ষিদে পেয়েছে তো আমার কি তুই একাই যা আমি যাবো না।
আমি কোমড়ে হাত দিয়ে বললাম সত্যি যাবি না তো??
মনিকা আমার দিকে তাকিয়ে কিছু না বলে উঠে আমার আগে হাটা দিলো আমিও হেসে ওর পেছনে ছুটলাম। মনিকা খুব ভালো মেয়ে খুব তাড়াতাড়ি সবার সাথে মিশে যেতে পারে। আমার সাথে যতই ঝগড়া হোক না কেনো কখনো রেগে থাকতে পারে না। আমার ফেস দেখলেই নাকি ওর রাগ হাওয়া হয়ে যায়।
ক্যানটিনে আমি আর মনিকা সামনা সামনি বসে আছি আমি খাবার দিতে বলেছি এখনো দেয়নি। মনিকা সামনে তাকিয়ে ভীত চোখে আমাকে বলল....আরু পেছনে তাকা।
কেনো কি আছে পেছনে??
তাকা না তাহলেই বুঝতে পারবি।
আমি পেছনে তাকাতেই দেখলাম আদ্র ভাইয়া আমাদের দিকে আসছে মনে হচ্ছে খুব রেগে আছে আমি দেখেও না দেখার ভান করে চুপচাপ বসে রইলাম। এর মধ্যেই খাবারো দিয়ে গেলো আমার ফেভারিট চিকেন নুডুলস। আমি খেতে শুরু করলাম।
আরু ভাইয়া কিন্তু এদিকেই আসছে আর তুই নিশ্চিন্তে খাচ্ছিস!!
আমি একবার মনিকার দিকে তাকিয়ে আবারো খেতে লাগলাম। আদ্র ভাইয়া এসে আমার পাশের চেয়ারে বসে পড়লো। একবার মাথা তুলে তাকিয়ে দেখলাম চোখটা লাল হয়ে আছে কপালের রগ গুলো ভেসে উঠেছে উজ্জ্বল ফর্সা গায়ের রং তাই রগগুলো স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। আদ্র ভাইয়া যখন ভীষণ রেগে যায় তখনি এমনটা হয়।
আমি ভয়ে ঢোক গিললাম মনে মনে বলছি...আরু একদম ভয় পাবি না,তোর সামনে কোনো বাঘ বসে নেই যে ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিবি।
নিজেকে স্বাভাবিক রেখে হেসে বললাম ভাইয়া নুডুলস খাবেন?? টেষ্ট হয়েছে অনেক।
হাতটি টেবিলের উপর জোরে বারি দিয়ে বললো কি বললি তুই??
ননুডুলস খেতে বলেছি।
তোকে না আপনি করে বলতে না করেছি,তারপরেও তুই ওটাই বলছিস।
এবার আদ্র ভাইয়া আরো রেগে গেলো। এক কাজ করা যাক তুমি করে বলি তাহলে আর উনি রেগে থাকবে না।
সরি ভাইয়া ভুল করে বলে ফেলেছি, তুমি নুডুলস খাবে??
খাওয়াচ্ছি তোকে নুডুলস। তোকে কাল রাতে বলেছিলাম না আমি তোকে কলেজে নিয়ে আসবো,তুই সে কথা না শুনে একাই চলে এসেছিস কোন সাহসে??
তুমি তো ঘুমাচ্ছিলে তাই ডাকি নি। তাছাড়া আমি কি ছোট আছি যে আমাকে নিয়ে আসবে আবার নিয়ে যাবে। আমি যথেষ্ট বড় হয়েছি একাই চলাফেরা করতে পারবো।
আদ্র ভাইয়া উঠে দাড়িয়ে আমার দিকে ঝুকে বললো ও আচ্ছা তাই অনেক বড় হয়ে গিয়েছিস তুই!! ঠিকআছে তোর যা ইচ্ছে কর,যেখানে খুশি যা আমি কিছুই বলবো না বাট লিমিট ক্রস করবি তো মরেছিস। হাত পা ভেঙে ঘরে বসিয়ে রাখবো।
আদ্র ভাইয়া কথাগুলো বলে হনহন করে চলে গেলো সেখান থেকে আর আমি হা করে তাকিয়ে আছি উনার যাওয়ার দিকে। কি বলে গেলো? কিসের লিমিট ক্রস করবো আমি? সব সময় বাড়িয়ে কথা বলে। আজব লোক একটা।
এতক্ষণ মনিকা চুপ করে সব শুনছিলো ছিলো এখন মুখ খুললো...আরু এটা কি হলো বলতো??
কি হলো??
আমি তো ভেবেছিলাম আদ্র ভাইয়া তোর গালে আজও একটা চড় বসাবে। কিন্তু উনি তেমন কিছুই করলো না এমনকি তেমনভাবে রেগেও কিছু বললো না!!
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম মনি তুই কি চেয়েছিলি আদ্র ভাইয়া আজও আমাকে মারুক?? এই তুই আমার শত্রু হয়েছিস কবে থেকে বলতো??
আরু তুই না অলঅয়েজ উল্টোটা বুঝে নিস। আর ঠিক এই কারনেই তুই আদ্র ভাইয়ার কাছে বকা খাস। আমি কি বলেছি সেটা না বুঝে তুই বিপরীতটা ভেবে নিলি।
মনিকা ব্যাগটা নিয়ে উঠে চলে গেলো...যাহ বাবা মনির কি হলো আবার!!রাগ করে নি তো?? আমি ওকে কি একটু বেশি বলে ফেলেছি?? সব হয়েছে আদ্র ভাইয়ার জন্য উনার জন্য আমার বেস্টুটা রাগ করলো। ইচ্ছে করছে উনার মাথার সব গুলো চুল টেনে টেনে ছিঁড়তে।
রাতে সবাই মিলে ডাইনিং এ খেতে বসেছি। আমি চুপচাপ বসে খাচ্ছি একটু পর পর আড় চোখে আদ্র ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছি। উনিও খেয়ে চলেছেন কোনো কথা বলছে না,সিল্কি চুলগুলো কপালে পড়ে আছে উনার। ইসস এমন চুলগুলো আমি ছিঁড়তে চাই! উনার ফর্সা মুখের সাথে কালো চুলগুলো দারুন মানিয়েছে। আর ঠোঁটের নিচে বা পাশের কালো তিলটা উনার মুখের মাঝে এক মায়াবি আভা ফুটিয়ে তুলেছে।
এই আপু খাওয়া বাদ দিয়ে এত ভাবছো তুমি?? অথই এর কথায় একটু কেঁপে উঠলাম,কিযে ভাবছিলাম আমি ধেত। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কাকিমা আমার পাশে এসে বললো...আরিশা কি ভাবছিলি খাওয়া বাদ দিয়ে হুম?
কিছু না কাকিমা এইতো খাচ্ছি।
কিছু না বললেই হলো,খাওয়ার সময় তো পুরো ডাইনিং তুই একাই মাতিয়ে রাখিস বক বক করে আর আজ এত চুপচাপ বসে আছিস!
আসলেই তো আমি আজ এত চুপচাপ কেনো! আর কেনোই বা আদ্র ভাইয়াকে ওমন ভাবে দেখছিলাম।
আমি কাকিমাকে কিছু বলতে যাবো তার আগেই আদ্র ভাইয়া বললো
মা তোমরা অযথাই আরুকে নিয়ে ভাবছো ওর কিছু হয়নি, ও এখন বড় হয়ে গিয়েছে। কিরে আরু ঠিক বলেছি তো??
আদ্র ভাইয়ার কথাটা শুনতে কেমন যেনো লাগলো। আমি তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে নিজের রুমে চলে এলাম। এসে বেডের উপর চোখ পড়তেই খুশিতে লাফিয়ে উঠলাম আমার মন খারাপটা এক নিমিষেই উধাও হয়ে গেলো।
#চলবে.....🍁