05/04/2023
Mathematics
গণিত নিয়ে পড়ে কি হবে ??
স্কুল জীবনে সবাই মোটামুটি একটি কমন রচনা
ইংরেজীতে লিখেছি আমরা, নাম, “এইম-ইন-লাইফ”,
লিখতে গিয়ে আমাদের প্রায় সবারই উত্তর ছিল ডাক্তার
হব, গ্রামে গিয়ে জনগণের সেবা করব, বিনা পয়সায়
চিকিৎসা করব, অথবা ইন্জিনিয়ার হব, দেশের উন্নয়ন করব।
কলেজের পর ভর্তি কোচিংও করেছি সেভাবেই।
কিন্তু বিধি বাম বা দূর্ভাগ্য যাই বলিনা কেন, ভর্তি পরীক্ষায়
অনিচ্ছাকৃত চান্স, গণিত বিভাগ। হায় কি হবে ভবিষ্যত ?!
প্রথম বর্ষেই অনেকেই বিষয় পরিবর্তন করার জন্য ক্লাস
বর্জন করে, হতাশায় ভুগে, নানান বিধ চিন্তা করে
পুণঃভর্তি হয় সেই প্রথম বর্ষেই, মাঝখান থেকে জীবনের
একটি বছর এমনিতেই যায়, আবার অনেকেই একই হতাশা
বা অনীহা বয়ে বেড়ায় পুরু অনার্স জুড়ে, ফলে পরীক্ষায়
ভাল ফলাফল আসেনা। অথচ উন্নত দেশগুলোতে গণিত
বিষয়টি সবচাইতে মেধাবীদের পছন্দের একটি বিষয় !!
কারণটা কি?? সহজ উত্তর, সেসব দেশে ভাল চাকরী
পাওয়া যায়, আমাদের দেশে যায়না, আসলে ধারণাটা
ভুল !! আজ এই বিষয়ে, মূলত: আজ আমি দেখাব গণিতের
ভবিষ্যত, দেশে ও বিদেশে।
প্রথমে দেশের কথায় আসি, গণিত পড়ে দেশেই ভাল কিছু
করা যায়। যেমন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা,
ব্যাংক, করপোরেট অফিসগুলোতেও গণিতবিদ লাগেই।
দেশে এখন ইউজিসির হিসাব অনুযায়ী যেসব সরকারী
বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আছে,
যেখানে গণিতের শিক্ষক লাগবেই, শিক্ষক সংকটের
কারণে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় গুলো সরকারী
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের হায়ার করে খন্ডকালীন
ক্লাসের ব্যবস্থা করতেছে, কারণ কোয়ালিটি সম্পন্ন
জ্ঞান দান। কিন্তু এই খন্ডকালীন শিক্ষকের প্রয়োজন
হতোনা যদি আমাদের দেশের গণিত নিয়ে পড়ার আগ্রহটা
থাকে শুরু থেকেই আমাদের মাঝে, তাহলে রেজাল্ট ভাল
হবে, গবেষণা পত্র থাকবে, যখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো
দেখবে, মাস্টার্স পাশ একজন ছাত্র রেজাল্ট ভাল
(সিজিপিএ ৩,৫০ এর উপর), ইন্টারনেশনাল জার্নালে
গবেষণাপত্র আছে, তখন লুফে নিবে তাকে। আস্তে
আস্তে চাহিদা বাড়বে। এখন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গ
ুলোতে সম্মানীও খারাপ না । পর্যায়ক্রমে এটাও বাড়বে।
তাছাড়া গবেষণা উপস্থাপনের জন্য পৃথিবীর আনাচে
কানাচে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগতো থাকছেই, তাও বিনা
খরচে অথবা স্বল্প খরচে !!! কিন্তু এর জন্য দরকার মান
সম্পন্ন গবেষণা, তাও সেটা হবে তখনই যখন প্রথম বর্ষ
থেকেই গণিতের খুঁটিনাটি বিষয়ে সিরিয়াস থাকতে
হবে।
এবার আসি, ব্যাংকগুলোতে, হ্যাঁ এটা ঠিক,
ব্যাংকগুলোতে ব্যাবসা বিষয়ে যারা পড়ে তাদের
প্রাধান্য থাকে, কিন্তু ভাল ভাল ব্যাংকগুলোতে লাখ
টাকার সম্মানীতে চাকরী করতেছে গণিতবিদরা। আর বড়
বড় মাল্টিন্যাশনাল করপোরেট অফিসগুলোতেও গণিতবিদ
লাগেই, তবে তাদের ধীরে ধীরে বুঝাতে হবে,
গণিতবিদরা বিজনেস স্টাডিস নিয়ে যারা পড়েছে,
তাদের বস !!
আর এটা তখনই হবে যখন অনার্স প্রজেক্ট বা
মাস্টার্স থিসিস এর সময় ইন্টার্নশীপ ব্যাবস্থা করে
দেওয়া হবে সেই অফিস গুলোতে, যেটা বিজনেস
ফ্যাকাল্টি করে থাকে, তাদের সাথে প্রতিযোগীতা
করে এই যায়গাটি আমাদের পাকাপোক্ত করে নিতে
হবে। ডেনমার্কের কোপেনহেগ বিজনেস স্কুল এর এমবিএ
আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত, আর সেখানে প্রথম ১ বছর
পড়ানো হয়, লিনিয়ার এলজেবরা, মাল্টি ভ্যারিয়েবল
ক্যালকুলাস, ডিফারেন্সিয়াল ইকুয়েশন, ফাংসনাল
এনালাইসিস, টপোলজি।
এবার যেটা বলেছিলাম, বিদেশে গণিত পড়লে ভাল
চাকরী পাওয়া যায়, তাই সেখানকার ভাল ভাল
মেধাবীরা গণিত পড়তে চায়। কথাটা আংশিক সত্য,
পরোপুরি না, মূলত: গণিত মানেই উন্নত দেশগুলোতে যেটা
বুঝানো হয়, গবেষণা, আর গবেষণা বাবদ আছে প্রচুর অর্থ,
এটাই চাকরী। এছাড়া আর সবই আমাদের দেশের মতই,
এখানেও দেখতেছি আই-আর বিষয় নিয়ে পড়েও ব্যাংক এ
চাকরী করতেছে। কিন্তু এদের গণিত পড়ার মূল আগ্রহ
থাকে নিজেকে একটু আলাদা করে ভাবতে, গণিত পড়তে
পারাটা এদের কাছে বিরাট সম্মানের। অনেকটা
আমাদের দেশের ইন্জিনিয়ার বা মেডিকেল এ পড়তে
পারার মত। কারণ, এরা অর্থের চাইতে সম্মানটা বড়, হয়ত
অর্থ প্রচুর আছে তাই এমন ভাবে, কিন্তু এটা সত্যিই যে,
গণিত বিষয়টা খুব কম ছেলে-মেয়েই সিলেক্ট করে।
যারা করে তারা আলাদা চিন্তাবীদ। সে যাকগে, তাতে
আমাগো কি?? আমাগো দেখা দরকার ফিউচার ইন
বিদেশ, তাই তো ?? তবে বলি, পৃথিবীর সবচাইতে বেশি
স্কলারশীপ এখন গণিতের গবেষণায়। বিশেষ করে
আমেরিকা, কানাডা, জার্মানী, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড,
ন্যাদারল্যান্ড, অষ্ট্রেলিয়া, জাপান, চীন সহ বড় বড় ভাল
অর্থনীতির সব দেশে। কিছু কিছু স্কলারশীপ আছে শুধু
গণিতবিদদের জন্যই, এই বিষয়ে আরেকদিন লিখব।
শুধু শেষ করছি,গণিত এমন একটা বিষয়, যেটা পড়লে জীবন
অচল হবেনা কোনদিনই, সেটি দেশে হোক, বিদেশে হোক।
মান নিয়ে একটু তারতম্য আছে, সেটা থাকতেই পারে।
# #গণিত থেকে কেউ চাইলে কম্পিউটার সায়ন্সে কিংবা আইটিতে ক্যারিয়ার গড়তে পারে।