01/07/2022
মা আমার বিয়ে ঠিক করেছেন তার পাঁচ বছর ধরে যেই ছেলের সাথে অবৈধ সম্পর্ক তার সাথে। কোনো ভাবেই এটা মেনে নেওয়া সম্ভব না। কখনোই মানতে পারব না এই বিয়ে, রাতের পর রাত যেই মাকে দেখেছি আমার পাশ থেকে উঠে গিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে তার কচি প্রেমিকের সাথে দেখা করছেন। সব দেখে বুঝেও না বুঝার না দেখার ভান করে ছিলাম। আর সেটাই এখন আমার জিবনে কাল হয়ে দাড়িয়েছে।
আমি রাখি, ১২ বছরের মতো হয় আমার বাবা মোহাব্বাত আলী মারা গেছেন। সেই থেকেই মা নাজমা বেগম আমাকে আগলে রেখেছেন। আমার বাবা বেশ ধার্মিক লোক ছিলেন একটা মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। আমার আরো দুই বোন আছে কোনো ভাই নেই। বড় আপুকে বাবাই বিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন মেজো আপুকে এই বছর কয়েক হয় চাচারা ভালো সমন্ধ দেখে বিয়ে দিয়েছেন।
এখন আমার মা আর আমি দুজনেই থাকি। আমি যখন ৭ম শ্রেনীতে তখন আমি আমাদের গ্রামের একটা ছেলের কাছে প্রাইভেট পড়তাম। সে এবার দ্বাদশ শ্রেণিতে প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমি লেখাপড়ায় মোটামুটি ভালো পড়া লেখায় যেনো উন্নতি হয় এর জন্য সজিব ভাইয়ার কাছে পড়তে দিয়েছেন। সজিব ভাইয়া লেখাপড়ায় অনেক ভালো গ্রামের প্রায় স্টুডেন্ট তার কাছে পড়ত।মা তার সুনাম শুনে আমাকেও সেখানে পড়তে দেয়। প্রতিদিন আমি আমার বান্ধবীদের সাথে পড়তে যেতাম। কিছু দিন পর সজীব ভাইয়ার সাথে আমার খুব ভালো একটা বন্ধুত্ব হয়ে যায়।
--- এই যে রাখি বাড়িতে বসে সব অংক গুলো করবে। আর তোমার আম্মুর কাছে আমার ফোন নম্বর আছে যদি কোনো সমস্যা হয় আমাকে এসএমএস দিবে আমি কল দিয়ে তোমাকে বুঝিয়ে দিবো।
--- আচ্ছা ভাইয়া।
ঐদিন রাত ৯টার দিকে ভাইয়ার নম্বর থেকে একটা মেসেজ আসে।
---কি করো রাখি? হোমওয়ার্ক যেগুলো দিয়েছিলাম সব গুলো করেছো?
খুব ভাবনায় পড়ে গেলাম ভাইয়াকে কি মেসেজের উত্তর দিবো নাকি! অনেক চিন্তা-ভাবনা করে ১টাকার ৫০ টা মেসেজ কিনলাম।তারপর ভাইয়াকে উত্তর দিলাম।
--- জ্বী ভাইয়া করেছি সব গুলোই।
--- ওহহ ভেরি গুড। তো রাতের খাবার খেয়েছো?
--- জ্বী ভাইয়া।
ঐদিন রাতে ভাইয়ার সাথে আমার এইটুকুই কথা হয়।
সজিব মনে মনে চিন্তা করে আহারে মেয়েটা আমাকে রিপ্লাই করছে ওর মনে হয় টাকা কেটেছে। কালকে ওকে কিছু এসএমএস কিনে দিবো।
সকালে আমি মায়ের ফোন হাতে নিতেই দেখি ৫০০ এসএমএস ১মাসের জন্য। আমি কিছুক্ষণের জন্য পাথরের মতো দাড়িয়ে রইলাম। আজব এতো গুলো এসএমএস কে দিলো? ভুলে আসলো নাকি? আচ্ছা সজীব ভাইয়া দিছে কিন্তু তিনি কেনো দিবে? এসব ভাবতে না ভাবতেই সজীব ভাইয়ার ফোন থেকে মেসেজ আসল।
---রাখি শুভ সকাল, ৫০০ মেসেজ গেছে তোমার ফোনে?
--- জ্বী ভাইয়া।
--- আচ্ছা সকালে ঠিক মতো নাস্তা করে স্কুলে যাও আর মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করবে।
--- ওকে ভাইয়া।
আমি স্কুলে যাওয়ার জন্য উঠোনে নামতেই নজীব ভাইয়া মানে সজীব ভাইয়ার বড় ভাই সামনে দাড়ায়।
সামনের দাঁত গুলো বেড় করে রাখি কেমন আছো? কই যাও?
--- ভালো। স্কুল ব্যাগ কাঁধে নিয়ে নাচতে যাচ্ছি যত্তসব।
কিরে রাখি বাইরে কে?
--- মা নজীব ভাইয়া আসছে।
নাজমা বেগম -- ওহহ নজীব বস ঐ খানে আসতেছি আমি৷
--- মা আমি স্কুলে গেলাম।
--- কি রে নজীব তোর খবর কি? চাচীরে একটু দেখতেও আসো না।
--- ঐ একটু কাজে ব্যাস্ত চাচি।
--- হা হা হা তোর আবার কি কাজ এতো এই বয়সে? সারাদিন টো টো কোম্পানির ম্যানেজারের মতো ঘুরো লেখা পড়া করতি তাহলেও বুঝতাম যে পড়া লেখা করো।
--- এদিকে এসেই বা কি করব, তোমার যে মেয়ে কথায় প্রচুর ধার। কিছু বলার আগেই তেলে বেগুনে এক হয়ে যায়।
--- ছোট মানুষ তো একটু জিদ বেশি আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।
নজীবের সাথে নাজমা বেগমের কথা বার্তা বাড়তে থাকে। আঁখিদের বাড়ীতে আসলে ঘন্টার পর ঘন্টা পার করে দিতো আঁখির মায়ের সাথে।
২.
সজীব আঁখি কে প্রথম দেখাই পছন্দ করে ফেলে। লেখা পড়ায়ও বেশ ভালো।
সজীবের ডায়রী লেখার অভ্যাস ছিলো কিছু হলেই ডায়রি তে টুকে রাখতো। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যাতিক্রম হয়নি।
"আঁখি তোমার ঐ মায়াবী চোখে আমি হারিয়ে গেছি। তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে আমি হাজার বছর কাটিয়ে দিতে পারব। তোমার বাদামী বর্ণের দু চোখের মায়ায় পড়ে থাকতে চাই আঁখি। "
তোমাকে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছি আঁখি। কিন্তু এখন তোমাকে কিছুই বলব না। তুমি খুব ছোট,আমারো একটা ক্যারিয়ার আছে।আমিও প্রতিষ্ঠিত হই। তুমিও ভালোভাবে লেখা পড়া করো।একদিন তোমাকেই আমার ঘরের বউ করে আনব৷
লাল একটা বেনারসি পরে আলতা রাঙা পায়ে আমার ঘরে তুমি আসবে আমার অর্ধাঙ্গিনী হয়ে। তুমি আমার মনের রানী, তুমি আমার ঘরের রানী।
সজীব ডায়রি লেখা রেখে পড়ালেখায় মনোযোগ দেয়। নিজেই নিজের মনকে বলে হে! সজীব এখন একা নও তোমার মন চুরি হয়ে গেছে,এখন তোমাকে অনেক পড়ালেখা করতে হবে তারপর ভালো কিছু করতে হবে।
আমার স্কুল শেষ হলে প্রতিদিন আমি বান্ধবীদের সাথে সজীব ভাইয়ার কাছে পড়তে যেতাম। ভাইয়া সব সময় আমার খোঁজ খবর নিতো। প্রতিদিন আমাদের এসএমএসে কথা হতো।
এইভাবে প্রতিদিন চলতে ছিলো। আমি ৭ম শ্রেনী থেকে অষ্টম শ্রেনীতে উঠি। এবারে আমার রেজাল্ট অনেক ভালো হয়। সজীব ভাইয়া বলেছিলো রেজাল্ট ভালো হলে আমাকে গিফ্ট দিবেন। তাই হলো ভাইয়া আমাকে কলম,কাগজ,পেন্সিল, রবার,সাথে আরো মাথার চুল বাধার জন্য ১০টি ব্যান্ট দিয়েছিল। গিফ্ট পেতে কার না ভালো লাগে? আমারো সেদিন খুব ভালো লেগেছিল।
ক্লাস এইটে উঠার পর কয়েকদিন পড়তে যেতে পারিনি জ্বর ছিলো৷ সজীব ভাইয়া আমার জ্বরের কথা শুনে আমাদের বাড়িতে আসে আমাকে দেখতে। আমি যা যা পছন্দ করতাম ভাইয়া তার সাধ্যের মধ্যে কিনে এনেছিলেন।
যতই পছন্দের জিনিস আনুকনা কেনো জ্বরের সময় সবই তিতা লাগে৷ সেদিন সজীব ভাইয়া আর নজীব ভাইয়া মুখোমুখি হয়।
সজীবঃ- ভাইয়া তুই এই খানে?
নজীবঃ- এমনি আঁখি কে একটু দেখতে এলাম।ঔষধ পত্র তো আমি এনে দিছি আঁখি কে আর চাচীর সাথেও একটু কথা ছিলো৷
সজীবঃ- ওহহ আচ্ছা।
সজীব নজীব কে দেখে খুব চিন্তিত অবস্থায় বাড়িতে আসে। বারাবর শুধু এটাই ভাবত নজীব ভাইয়া ঘনঘন কেনো আঁখিদের বাড়িতে যায়। আঁখি কে একটা এসএমএস দিয়ে জিজ্ঞেস করব ভাইয়া কি করে ওখানে? ঐখানে কেনো যায়?
না এখন না আঁখি অসুস্থ। সুস্থ হোক পড়তে আসলে আঁখিকে সাবধান করতে হবে৷ আমার ভাই তো আমি জানি তার স্বভাব কেমন।
পাঁচ ছয়দিন লেগেছিলো আমার সুস্থ হতে।সজীব ভাইয়া প্রতিদিন আমাকে একবার করে দেখে যেত৷ কিন্তু যখনি আসত নজীব ভাইয়ার সাথে দেখা হতো।এমনকি সন্ধ্যার পরে আসলেও দেখতো নজীব ভাইয়া বসে বসে আম্মুর সাথে কথা বলত। বড় ভাই এর জন্য সজীব ভাইয়া কিছু বলত না। কিন্তু মুখে নজীব ভাইয়াকে দেখে তার একটা বিরক্তির ছাপ দেখা যেতো।
সুস্থ হয়ে যখন ভাইয়ার কাছে পড়তে গেলাম তখন ভাইয়া আমাকে জিজ্ঞেস করল
---আচ্ছা আঁখি আমার বড় ভাই তোমাদের বাড়িতেই কি থাকে সারাক্ষণ?
--- সব সময় বলতে কতক্ষণ পর পর আসে রাত দিন নেই তার কাছে।
--- শোনো আঁখি একটা কথা বলি ভাইয়াকে তোমাদের বাড়িতে বেশি আসতে দিবে না। ও কেমন তা আমি ভালো করে জানি সাবধান!
--- ভাইয়া একটা কথা বলব?
--- হুমম বলো।
--- আপনার বড় ভাইকে আমার একটুও সহ্য হয়না। সারাদিন আমাদের বাড়িতে এসে গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর করে। আর পান চিবুই আপনার ভাইয়ের কোনো কাজ নেই? মাঝে মাঝে আমার খুব বিরক্ত লাগে আবার আপনার বড় ভাই তাই বেশি কিছু বলি না।
--- শোনো তুমি ভাইয়ার থেকে সাবধানে থাকবে। আর তোমাদের বাড়িতে ওরে বেশি আসতে দিবে না। --- ওকে ভাইয়া।
---এখন পড়ায় মনোযোগ দেও।
স্কুল প্রাইভেট পড়ে ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাড়িতে ঠুকতেই দেখি নজীব ভাইয়া এসে হাজীর।পিছন থেকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করল।
--- কিরে আঁখি কই গেছিলা?
--- নাচতে গেছিলাম দেখেননা কাঁধে স্কুল ব্যাগ। আপনি কেনো আবার আসছেন এখানে? বাড়িতে কাজ নাই? আমাদের বাড়িতে এসে বসে থাকেন৷
ঘরের মধ্যে ঠুকলে আপনার খবর আছে৷
বলেই আমি ভিতরে গিয়ে দরজা আঁটকে দিলাম,,,,,,,,
চলবে,,,,
অবশেষে_তুমি
০১
ইসরাত_জাহান_এশা