সকল গল্পের লিংক

সকল গল্পের লিংক আসসালামু আলাইকুম 🥀

23/03/2023

বিয়ে খাওয়ার মাঝখানে খবর এসেছে বর পালিয়ে গেছে চারিদিকে তুলকালাম কান্ড। এইদিকে আমার প্লেটে মাংস কম পরেছে চারিদিকে চেয়েও মাংস দেয়ার মত কাউকে পেলাম না। অবশেষে অনেক উঁকিঝুঁকির পর দেখি কন্যারে ঘিরে সবাই দাঁড়িয়ে আছে প্লেট হাতে নিয়ে বাবুর্চি টাইপের এক লোকরে বললাম, ভাইসাব গরুর মাংসের হাড়ি কোথায়? সে আমার দিকে তাকিয়ে কর্কশ স্বরে বলে উঠলো, ছেলে উদাও হয়ে গেছে আর আপনি খাবারের পিছনে এখনো পরে আছেন।

বুঝলাম না ছেলে গেছে তো কি হইছে আমারে দাওয়াত দেয়া হইছে আমি খেতে এসেছি। এইদিকে কন্যা চিৎকার করে বলছে, আমি বিয়ে না করে উঠবোনা এক্ষুনি আমাকে বিয়ে দিতে হবে। আমিও প্লেট হাতে নিয়ে বললাম, হক কথা বারবার কন্যা সাজা ভালো লক্ষণ না আজই বিয়ে হওয়া উচিত। দেখলাম দুইতিনজন সহমত জানিয়ে মাথা নাড়া দিলো।

কন্যা আবার বলে উঠলো, এই মুহুর্তে আমার বিয়ে না হলে আমি গলায় দড়ি দিবো। আমি মুরগির রানে কামর দিয়ে বললাম, দেয়াই উচিত এভাবে অপমান মেনে নেয়া যায়না। এবারও কয়েকজন পাব্লিক মাথা নেড়ে বললো, ঠিক ঠিক।

কন্যা কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো, আব্বা আমি কিন্তু এক কথা দুইবার বলবো না। তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা করেন নয়তো অঘটন ঘটে যাবে। মাংস শেষ হাড্ডিতে কামড় দিয়ে বললাম, দ্রুত ব্যবস্থা না হলে ভাংচুর হবে। এবার সবাই মিলে আমার দিকে ঘুরে তাকালো কন্যার বাপ আমার হাত ধরে বললো, করো কি? আমি বললাম, কিছু করিনা মাংসের হাড়িটা কোথায় বলতে পারেন? সে টাইট করে হাত চেপে বললো, টাকা দুই লাখ দিবো ব্যবসা করবা আর এক্ষুনি আমার মেয়েকে বিয়ে করবা। আশেপাশের সবাই বললো, ঠিক ঠিক বিয়ে করা উচিত।

আমি দুইলাখ কেন দশলাখ দিলেও বিয়ে করবোনা বলতে গেছিলাম কিন্তু সবার চোখের দিকে তাকিয়ে ভিতরের কথা ভিতরে রয়ে গেছে। হবু শ্বশুর আব্বা টেনে চেয়ারে বসিয়ে বললেন, এই জামাইরে মাংস দিয়া যাও। মাংস দূরে থাক পানিও এখন গলা দিয়ে নামছেনা। এ কি মুসিবতে পরলাম দয়াল।
😭😭😭😭😭

08/03/2023

"বন্ধ্যা"

আজ আমার স্বামীর গায়ে হলুদ, ওর গায়ে প্রথম হলুদ আমিই ছুঁইয়ে দিলাম। ক'টা নারী এত সৌভাগ্য নিয়ে পৃথিবীতে আসে! ছলছল দুটি নয়ন নিয়ে নয়না তার স্বামীর কপালে হলুদ ছুইয়ে দিলো। রবির চোখ দুটোও শুষ্ক নয়, প্রচুর বৃষ্টির পরে মাটি যেমন ভিজে থাকে ঠিক তেমন হয়ে আছে রবির চোখ দুটো।

রবিকে বাসর ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে আমি আমার বেড রুমে এলাম। কি বিশাল শূন্য লাগছে ঘরটাকে! এত আসবাব পত্রের মাঝেও ঘরটা শূন্য ফাঁকা। এই আট বছরের মধ্যে আজকেই প্রথম আমি রবিকে ছাড়া ঘুমাবো। ঘুম কি আসবে আজ? বা কোনো কালেও কি ঘুম আসবে এই দু চোখে?

শূন্য বিছানায় হাত রেখে ছুইয়ে দেখছি এইখানে মানুষটা শুয়ে থাকতো। আট বছরের কত খুনসুটি, কত স্মৃতি, কত ভালোবাসা সব এই ঘরটার সাথে জড়িয়ে আছে। মনে পড়ছে আমার বাসর রাতের কথা। কত লাজুক লাজুক সেই অনুভূতি! চোখ তুলে রবির দিকে লজ্জায় তাকাতে পারছিলাম না, আর রবিও হুট করে সেদিন লাজুক হয়ে গেছিল। দু'জনই আসামীর মত মাথা নিচু করে বসে ছিলাম। সেই দিনটার স্মৃতি আজ চোখ ভরা জল নিয়ে ভাবছি।
মনে পড়ছে আমাদের টুইন বেবির গল্প, মনে পড়ছে বেবিদের নাম রাখা নিয়ে আমাদের সেই টক মিষ্টি ঝগড়ার কথা। সব আজ স্মৃতি হয়ে গেছে শুধুই স্মৃতি।
হে আল্লাহ এত কিছু সইবার ক্ষমতা কেন দিচ্ছো? সব সহ্য ক্ষমতা তুলে নাও! কি লাভ এত কিছু সহ্য করে এই বেঁচে থেকে? একজন অক্ষম নারী তার স্বামীকে অন্য একটা নারীর সাথে বাসর ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে কতটা নির্লজ্জের মত বেঁচে আছে! এই লজ্জা এই অপমান নিয়ে আমি এখনও নির্লজ্জের মত শ্বাস নিচ্ছি।

আমি বন্ধ্যা, আমার এই অক্ষমতা ঢাকবার মত পৃথিবীতে এমন কোনো গোপন স্থান আছে কি? নেই, কোত্থাও নেই। আট বছরের সংসার জীবনে আমাদের কোনো সন্তান হয়নি। একটা বেবি এডপট করতে চেয়েছিলাম কিন্তু শ্বাশুড়ী মা সরাসরিই রবিকে বললেন-
--কার না কার পাপের ফল অনাথ আশ্রমে রাইখা আসে, বৈধ সন্তান হইলে ঠিকই কোনো না কোনো আত্মীয় ওই বাচ্চার দায়িত্ব নিতো। আর ওইসব পাপ আমি আমার সংসারে রাখতে পারব না। বউ বাচ্চা দিতে পারতেছে না এইটা তার অক্ষমতা তাই তাকে বল, তোর দ্বিতীয় বিয়েতে সে যেন সম্মতি দেয়।

আমি আর রবি দু'জনই আম্মার রুমে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনছি। কথাগুলো শুনছি আর আঁচল দিয়ে চোখ মুছতেছি। রবি সংসারের কোনো ব্যাপারে কথা বলে না কিন্তু একটা এডপট বেবী আমিই ওর কাছে আবদার করে ছিলাম। কিন্তু এই বাড়িতে শ্বাশুড়ী মায়ের বিনা হুকুমে কিছুই হয় না। তাই "একটা এডপট বেবি চাই" সেই দরখাস্ত নিজের মায়ের কাছে দিতে গিয়েই এত কথা শুনতে হলো রবিকে। অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর রবি বলল-
--আম্মা দত্তক বাচ্চা বাসায় উঠতে দেবেন না ঠিক আছে তাই বলে সন্তানের জন্য দ্বিতীয় বিয়ে করব এটা কেমন কথা?
--এইটা কেমন কথা বলতেছিস তুই রবি? তুই আমার একটাই ছেলে আর সে যদি নিঃসন্তান হয় তাহলে বংশ তো এখানেই শেষ! আট বছর অপেক্ষা করেছি আর নয় এবার আমি নাতীর মুখ দেখতে চাই!
--আম্মা একটু বোঝার চেষ্টা করেন, এই যুগে মানুষ দ্বিতীয় বিয়েটাকে ভালো চোখে দেখে না। আর নয়নার কি হবে?
--মানুষের ভালো দেখাদেখি দিয়ে তো আর আমার চলবে না! আর নয়না তোর দ্বিতীয় বিয়ের পর যদি এই বাড়িতে থাকতে চায় তবে থাকবে আর না চাইলে বাপের বাড়ী চলে যাবে।
--এটা কেমন কথা আম্মা? এটা তার সাথে অন্যায় করা হবে!
--তোকে ন্যায় অন্যায় নিয়ে ভাবতে হবে না। তুই যদি বিয়ে না করিস তবে এই মুহূর্ত থেকেই আমি আহার ত্যাগ করলাম।

দু'দিন হলো আম্মা পানি পর্যন্তও খায়নি। বয়স্ক মানুষ সুগার আছে, অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ডাক্তার আনা হয়েছিল কিন্তু ডাক্তারকে উনি তার রুমে ঢুকতে দেননি। সারাবাড়ি জুড়ে অশান্তি বিরাজ করছে। রবির মুখের দিকে তাকাতে পারছি না, কি যে বলব বুঝেই উঠতে পারছি না। দু'দিন ধরে আমরা দুটো মানুষ দুই ধরনের লজ্জায় কেউ কারো মুখের দিকে তাকাতে পারছি না। আমার লজ্জা আমি বন্ধ্যা আর রবির লজ্জা তার মা তাকে দ্বিতীয় বিয়ে দেবার জন্য এত কঠোর একটা পণ করেছেন সেটা। আমি কিভাবে সব কিছু ম্যানেজ করব ভেবে পাচ্ছি না আর রবিকেই বা আমার কি বলা উচিত! তবুও কিছু বলাটা জরুরি কারণ নিজেকে অপরাধী রূপে আর দেখতে পারছি না। একটা সন্তান জন্ম দিতে পারছি না, বংশ রক্ষা করতে পারছি না এই কষ্ট কি একাই ওদের? আমার কি কষ্ট হয় না? আমার হৃদয় কি ক্ষতবিক্ষত হয় না?
মা হতে না পারার অক্ষমতার যন্ত্রণা বুকে চেপে রেখে বললাম-
--তুমি দ্বিতীয় বিয়ে করো রবি!

কথাটা বলতে মুখ না আটকালেও বুকটা যে আটকালো সেটা শ্বাস নিতে গিয়েই টের পেলাম। রবির আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল-
--তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে নয়না?
--একবার ভেবে দেখো রবি, আম্মা অসুস্থ হয়ে পড়েছে এভাবে আর দু'দিন চললে উনি আর বাঁচবেন না। আর আমি কারও মৃত্যুর দায়ভার নিতে পারবো না।
--কিন্তু আমি কীভাবে আরেকটা বিয়ে করতে পারি বলো?
--পারবে, অনেকেই পারে।
--অনেকের কথা জানি না, আমি জানি তোমাকে ছাড়া অন্য নারীর কথা আমি ভাবতেও পারি না।
বুকে পাথর চেপে বললাম,
--আমি এসব শুনতে চাই না রবি।
--একটা অশান্তি নিভাতে গিয়ে আমি চিরকালের অশান্তি বাড়িতে আনতে পারি না।
--কি করবে তাহলে? যাও তোমার মাকে সুস্থ করো।
--আমি কি করব নয়না তুমি বলে দাও?
কথাটা বলেই রবি হাউ মাউ করে কাঁদতে শুরু করল। কি সান্ত্বনা দেবো তাকে? আর নিজেকেই বা কি বলে বোঝাবো? তবুও আমার কিচ্ছু করার নেই। আমার সামনে এই একটাই অপশন হলো আমি নিরুপায়।

আমি শ্বাশুড়ী মায়ের রুমে গিয়ে বললাম-
--আম্মা আপনার ছেলে বিয়ে করতে রাজী হয়েছে আর আমিও রাজী। আপনি প্লিজ এখন খেয়ে নিন!
--বাচ্চা ভোলাতে এসেছো? রবি এসে আমার মাথায় হাত রেখে কসম করলে তবেই আমি খাবো। এখন তুমি যাও আর অকারণে আমার রুমে আসবা না।

আমি হতাশ হয়ে ফিরে এলাম। ছলছল জল নিয়ে রবির দিকে তাকিয়ে বললাম-
--প্লিজ একবার রাজী হয়ে যাও!

রবি অসহায়ের মত আমার দিকে চেয়ে আছে। শ্বাশুড়ী মায়ের শারীরিক অবস্থা সত্যিই খুব খারাপ কারণ উনি খাবারসহ ঔষধ খাওয়াও ছেড়ে দিয়েছেন। আজ যদি উনার নিজের মেয়ে থাকত আমার পজিশনে তবে কি উনি এমনটা করতে পারতেন?
আমি রবির পায়ে পড়ে হাউ মাউ করে কাঁদতে শুরু করলাম। রবি আমাকে টেনে দাঁড় করিয়ে বলল-
--এই পাগলি নিজের কথা ভেবেছো একটিবার?

যে নারী সন্তান জন্মদানে ক্ষমতা রাখে না তার বোধহয় নিজের কথা ভাবা উচিত নয়। আমি নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম-
--ভেবেছি তো! আমি জানি তুমি সারাটা জীবন আমাকে ভালোবাসবে। আর তোমার সন্তানকে বুকে নিয়েই আমি মাতৃসুখ অনুভব করব।

আমার কথা শুনে রবি কাঁদতে শুরু করল। মনে মনে বললাম, "আমি জানি তুমি সারাজীবন আমাকে ভালোবাসতে পারবে না। আমি এই পরিবারের ছাই ফেলা ভাঙা কুলো হয়ে যাব।"
অবশেষে রবির খালাত বোন ভূমিকে বিয়ে করতে রাজী হলো রবি।
এইসব নানান ভাবনায় আমার রাত শেষ হলো।

ভোর হয়ে গেছে, ছাদে গেলাম প্রকৃতির সাথে আলিঙ্গন করতে। কিন্তু আকাশ বাতাস প্রকৃতি সব কিছুকেই ধূসর মনে হলো তাই চলে এলাম। নাস্তা রেডি করলাম। এতটা বছর ধরে এই সংসারের সব কাজ আমিই করেছি, অথচ আজ নিজেকে বাড়ির বুঁয়া মনে হচ্ছে। কি আজব মানুষের অনুভূতি! স্বামী থাকলে কাজ করাকে সংসার করা মনে হয় আর স্বামী বিহীন কাজগুলো দাসী বানিয়ে দেয়। অথচ এই সংসারটার জন্যই আমি উচ্চ শিক্ষিত হওয়া শর্তেও কোনো চাকরি করিনি আর সেই সংসারেই আমি আজ গ্র‍্যাজুয়েট দাসী।
আমি টেবিলে খাবার রেডী করতেই নতুন বউ রুম থেকে বাহিরে এলো। ভূমির চোখেমুখে লাজুক লাজুক খুশি ছড়িয়ে আছে। সেটাই তো স্বাভাবিক কারণ বাসর রাত একজন নারীর জীবনে শত জনমের শ্রেষ্ঠ্য রাত। একটা রাত একই বাড়িতে দুটো নারীর দুই ভাবে পোহালো।
আমি রবির জন্য অপেক্ষা করছি, সে কখন বাহিরে আসবে! সারাটা রাত তাকে দেখিনি। সারারাত কি অনেক দীর্ঘ সময়? আমার কাছে তো এক যুগ মনে হয়েছে।

রবি আধা ঘন্টা পরে বেরিয়ে এলো। আমার চোখের সাথে সে চোখ মেলাতে পারছে না কিন্তু আমি অপলক তার দিকে চেয়ে আছি। আমি খাবার বেড়ে দিতে যেতেই ভূমি আমার হাত থেকে খাবারের বাটি নিয়ে বলল-
--আমি দিচ্ছি

আমি ওখান থেকে সরে আসতেই রবি বলল-
--নয়না খাবার বেড়ে দাও!

রবির কথা শুনে আমার চোখে জল চলে এলো। মরার চোখে যে কি হয়েছে কারণে অকারণেই শ্রাবণ বয়! আমি মাথা নিচু করে রবিকে খাবার বেড়ে দিচ্ছি হঠাৎ টপটপ করে কয়েক ফোটা অশ্রু রবির হাতে পড়তেই রবি চমকে উঠে আমার দিকে তাকাল। আমি চোখ মুছে রুমে চলে গেলাম।
কি করে আমার রাত দিন কাটবে রবি? কীভাবে আমি বেঁচে থাকব তোমাকে ছাড়া? এত বড় জীবনটা কবে ফুরাবে?
রবি নাস্তা না করেই আমার রুমে এলো। আমি নিজেকে সামলে নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বললাম-
--উঠে এলে কেন? যাও নাস্তা করে নাও!
রবি কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকল। আমার মনে পড়ে গেল, আমার বিয়ের পরের দিনের কথা। রবি নাস্তার প্লেট রুমে এনে বলেছিল-
--এই যে দেখো নাস্তার প্লেট, কি ভেবেছ তোমার জন্য এনেছি? উহু এখন তুমি আমাকে খাইয়ে দেবে।

নতুন বিয়ে হয়েছে, কি লজ্জার কথা! তবুও সেদিন রবি জোর করে আমাকে খাইয়ে দিতে বাধ্য করেছিল। এছাড়াও এই আট বছরে অসংখ্যবার আমি তাকে খাইয়ে দিয়েছি। আমাদের মধ্যে সব ছিল, ভালোবাসা, মায়া, শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, শুধু একটা সন্তানই ছিল না। একটা শূন্যতা এতগুলো পূর্ণতাকে ভুল প্রমান করে দিয়েছে। এত এত স্মৃতি আমি কোথায় লুকিয়ে রাখব আল্লাহ্? কোথায় বা নিজেকেই লুকাব?
--রাতে একটুও যে ঘুমাওনি সেটা তোমার চোখ বলে দিচ্ছে নয়না।
--তুমিও তো ঘুমাওনি তাই না?

আমার কথা শুনে রবি অপরাধীর মত মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। এই কথাটা বোধহয় আমার বলা উচিত হয়নি। নিজে তো কষ্ট পাচ্ছি আর সারাটা জীবন এই কষ্ট বয়ে বেড়াবো তাই বলে মানুষটাকেও কষ্ট দেবো? নাহ এটা অনাচার হবে। মানুষটার চোখ দুটোও জলে ভরে গেছে। আমি নিজেকে স্বাভাবিক করে বললাম-
--আজকেও কি তোমাকে আমার খাইয়ে দিতে হবে?

আমার কথা শুনে রবি আমাকে জড়িয়ে ধরে আকুতি করে কাঁদতে শুরু করল। আমিও আর নিজেকে সামলে নিতে পারলাম না। রবির বুকে মুখ গুঁজে আর্তনাদ করে কাঁদলাম। জানি এরপর হয়ত আর কখনোই তার বুকে মুখ গুঁজে কাঁদার ভাগ্য আমার আর হবে না। স্বামীর ভাগ দিইনি আমি, আমার স্বামী পুরোটাই অন্যের হয়ে গেছে।

বিয়ের একমাস পর রবির নতুন বউ কন্সিভ করল। সারা বাড়িতে খুশির হাওয়া বইছে। রবির মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম যে, আট বছর ধরে এই খুশিটাকে সে আড়ালে লুকিয়ে রেখেছিল। আমি অভাগীনি বলেই এতটা বছর এই খুশিটাকে বাহিরে আনতে পারিনি। হয়ত সে অনেক কষ্টও চেপে রেখেছিল যা আমাকে কখনো টের পেতেও দেয়নি।

আজকাল সবাই নতুন বউ ভূমিকে নিয়ে খুব ব্যস্ত। আমার চোখের সামনে আমার ভালোবাসার মানুষটিও একটু একটু করে বদলে গেল। রবিও নিজের গর্ভবতী বউয়ের যত্নের ত্রুটি রাখে না। টাইমলি খাবার খাওয়ানো, ঔষধ খাওয়ানো সবকিছুর সে খেয়াল রাখে। আমার কথা ভাবার মত কেউ নেই এ বাড়িতে। আমি খেলাম কি খেলাম না তার খোঁজ কেউ রাখে না। বরং ভূমির যত্নের ত্রুটি হলে রবির কাছে আমাকে জবাবদিহি করতে হয়। শ্বাশুড়ীমা ভূমির ঘরে আমাকে যেতে দেন না, যদি আমি ভূমির গর্ভের সন্তানের কোনো ক্ষতি করে ফেলি সেই ভেবে। যার ভেতরের মা হবার এত আকাঙ্ক্ষা, সে কি করে পারবে কোনো অনাগত শিশুর ক্ষতি করতে? সতীনরা বোধহয় এমন নিম্নশ্রেণীর কাজ করতেই পারে!

আমি এ বাড়ির পার্মানেন্ট বুঁয়া হয়ে গেলাম। দিনরাত পরিবারের সবার খেয়াল রাখাটা বোধহয় বুঁয়ার কাজ নয়। কিন্তু স্বামী বিহীন এই সংসারে আমার অবস্থান কোথায় সেটা কি কেউ বলতে পারবে?
আমার বাবা বহুবার এসেছেন আমাকে নিতে কিন্তু আমি যাইনি। কিছু না হোক রোজ তো রুবিকে দেখতে পাই এইটুকুই বা কম কিসে? কিন্তু এ বাড়ির কেউ এইটুকুও আমাকে দিতে চায় না।

রবির ছেলে অবিকল রবির মত দেখতে হয়েছে। আমার স্বামীর সন্তান অথচ ওই সন্তানের মা আমি নই, এমনকি ওই বাচ্চাটাকে আমার কোলে নেয়ারও কোনো অধিকার নেই। আমি বন্ধ্যা তাই কল্যাণ অকল্যাণ বলেও তো কিছু কথা থাকে। আজকাল সেই কল্যাণ অকল্যাণ রবিও মানে। সেটা দেখে অবশ্য আমি অবাক হই না। কারণ নিজের সন্তানের প্রতি এমন দূর্বলতা প্রতিটা বাবারই থাকে। রোজ নিজের এই অবহেলিত রূপ দেখে দেখেও আমি মাটি কাঁমড়ে এবাড়িতেই পড়ে আছি। কিন্তু বাচ্চাটার অসুখ করলেই ভূমি বলে, আমার মত বাঁজা নারীর দৃষ্টি লেগে নাকি বাচ্চা অসুস্থ। আল্লাহ আর কত লাঞ্ছনা আমার কপালে লিখে রেখেছ? নিজের স্বামীকে ভালোবাসার দায়ে এরচেয়ে যদি আমার ফাঁসি হতো তবুও হয়ত সম্মান নিয়ে মরতে পারতাম। আর এই ধরনের কথা রবিও বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। একদিন রবি আমার রুমে এসে বলল-
--নয়না আমি একটা বাসা দেখেছি তুমি গোছগাছ করে নাও, এখন থেকে তুমি ওখানেই থাকবে।
--কেন রবি?
--রোজ অফিস থেকে ফিরে একই রকমের অশান্তি আর ভাল্লাগে না।
--আচ্ছা ঠিক আছে।

কথাটা বলেই রবি চলে যাচ্ছিল। আজকাল রবি আমার রুমে আসাই ভুলে গেছে। আমি তাকে পেছন থেকে ডেকে বললাম-
--সেই নতুন বাসাতে মাঝে মাঝে তুমি যাবে তো?

সে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল-
--যাব, তোমার খরচাদি দিতে যেতে তো হবেই।

এক বছর ধরে আমি এই নতুন বাসাতে একা থাকি না, একটা পথশিশুকে নিজের কাছে রেখেছি। তার নাম রেখেছি আঁখি। পাঁচ বছরের আঁখি রাস্তায় ভিক্ষা করত। একদিন তার সাথে আমার দেখা হয় রাস্তায়, ভিক্ষা চাইছিল। সে জানেই না তার বাবা মা কে। এমন কি তার নিজের নামটাও ছিল না। কত বছর ধরে সে পথে পথে ভিক্ষা করত সেটাও সে জানত না।
আমি একটা বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকতা করছি, আঁখিকেও স্কুলে ভর্তি করেছি। আঁখি আমাকে মা বলে ডাকে। রবি মাসে এক দু'বার আসে কিন্তু দশ পনেরো মিনিটের বেশি থাকে না। আমি আর রবির থেকে কোনো টাকা নিই না। আমাদের মা মেয়ের সংসার আমার অল্প রোজগারেই বেশ চলে যায়। রবির টাকার দরকার আমার কোনোকালেও ছিল না, চেয়েছিলাম রবিকেই। সেই রবি আমাকে ভুলে যায়নি, বাস্তবতা রবির মন থেকে নয়নাকে মুছে দিয়েছে। আর বাস্তবতাই হয়ত একজন বন্ধ্যা নারীকে আঁখির মা বানিয়ে দিয়েছে।

সমাপ্ত

08/03/2023

লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে ইতিয়া গিয়ে তার মায়ের কাছে বললো,
-"মা আমার একজন কে খুব ভালো লাগে!আমি তাকে বিয়ে করতে চাই!

এ কথা শুনে মা ইতিয়ার বাবার কাছে বললেন।
জাকির সাহেব ভ'য়ংকর রেগে বললেন,
-"কে ঐ ছেলে? এক্ষুনি ডাকো তোমার মেয়েকে!

ইতিয়া ভয়ে কেঁপে কেঁপে বললো,
-"বাবা উনি অনেক বড় গ্রপ+পেইজের সম্মানিত এডমিন! তুমি জানো না বাবা উনার গ্রুপে+পেইজে লক্ষ লক্ষ ফ্যান,ফলোয়ার!আর সবার চোখের মণি এডমিন।সব মেয়েরা উনাকে প্রতিদিন কয়টি চিঠি পাঠায় তার কোন ইয়ত্তা নেই।

মেয়ের মুখে এতো প্রশংসা শুনে জাকির সাহেবের মন কিছুটা নরম হলো।ঘটক ঠিক করে এডমিন এর বাসায় প্রস্তাব পাঠালেন!

এমন ভালো ঘর থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসায় বেশ চমকিত হলেন ইসমাইল সাহেব। এরপরের দিন তিনি মেয়ে দেখতে চলে এলেন!
জাকির সাহেব বেশ আয়োজন করে খাতির যত্ন করলেন মেয়ের হবু শ্বশুর বাড়ির লোকজন কে।
কথায় কথায় ইসমাইল সাহেব বললেন,
-"আচ্ছা ভাই কি দেইখা আমার ছেলেরে আপনাদের পছন্দ হলো?

জাকির সাহেব হাসতে হাসতে বললেন,
-"মজা নিচ্ছেন বেয়াই সাহেব? এমন নামিদামি হিরের টুকরো ছেলেরে পছন্দ না হয় কেমনে কন তো?

এ কথা শুনে বেশ চিন্তায় পড়ে গেলেন ইসমাইল সাহেব।তার মাথায় আসছে না এমন অকর্মা ছেলেকে নামিদামি হিরের টুকরো বলে কোন হিসেবে?
গ্রামের সহজ-সরল মানুষ তাই জিজ্ঞাসা করেই বসলেন,
-"ভাই আমার ছেলে তো পড়াশোনা ক‌ইরা চাকরি ও একখান জোটাতে পারতাছে না। তাইলে নামিদামি হ‌ইলো কেমনে?

এ কথা শুনে জাকির সাহেবের মাথায় বাজ পড়লো যেন! সন্দিহান দৃষ্টিতে বললো,
-"ভাই আন্নের ছেলে না কতো বড় বড় গুরুপের এডমিন?আন্নে তো জানার কতা!

ইসমাইল সাহেব মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললেন,
-"এডমিন হেইয়া আবার কি ভাই?

জাকির সাহেব পরে গেলেন বেপাকে, আসলেই তো এডমিন মানে কি সে তো নিজেই জানেন না?

এর সমাধানের জন্য একজন বিজ্ঞ লোক ডাকা হলো। তিনি এসে দুই বাবা'কে বুঝিয়ে দিলেন এডমিন কাকে বলে?এর কাজ কি?এর ইনকাম শূন্যর চেয়েও শূন্য!

অতঃপর,
জাকির সাহেব তার মেয়েকে খুঁজতেছেন!

অপরদিকে,
ইসমাইল সাহেব তার সম্মানিত এডমিন ছেলে কে লাঠিচার্জ করতে পুরো গ্রাম দৌড়ে বেড়াচ্ছেন!

সম্মানিত এডমিন

08/03/2023

-বৌমা একটু চ্যাপা শুটকির ভর্তা করতো ।
-মা দুপুরের রান্না হয়ে গেছে। রাতে করে দিব ? আমার শরীরটা খুব খারাপ লাগছে।
-তোমার শরীর কবে ভালো থাকে বলতো ! দুই তিন আইটেমের বেশি কিছু করতে বললেই শুনি তোমার শরীর ভালো নেই । আমাদের সময় আমরা কাজের জন্য ঠিকমত খাবার সময় পেতাম না। সকালের নাস্তা খেতাম দুপুরে, দুপুরের খাবার বিকালে আর রাতের খাবার সেই দুপুর রাতে। এত আরামে থাক তারপরেও তোমার কষ্টের শেষ নাই । বলেই আমার শাশুড়ি মা দমাদমা পা ফেলে নিজের রুমে গিয়ে কাউকে ফোন করে আমার নামে যা নয় তাই বলতে লাগলেন। আমি একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে রান্নাঘরে ঢুকে গেলাম। এই যে মা বলল আমাকে বেশি কিছু রান্না করেতে বললে আমি করি না। এইরকম আরও অনেক দোষ আছে আমার । অথচ সেই দোষগুলোর কিছুই আমি করিনা। রান্না করার আগে মা বলে দেন এটা এটা রান্না কর। আর মাঝে মাঝে রান্না শেষ করে বের হলেই উনার অন্য কিছু রান্নার কথা মনে হয়। আমি কখনই কিছু বলিনা। চুপচাপ সেই কাজ করে ফেলি। কোন এক অজানা কারণে মা আমার কোন কাজই পছন্দ করেন না। আবার যদি বলি মা আপনি দেখিয়ে দেন তাহলে সেই মত করবো । তাহলেও সমস্যা উনি দেখাবেন না। বলেন কেন তোমার মা তোমারে বাইশ বছর পর্যন্ত কি শিখাইছে ? আমার বিয়ে হয়েছে দুই বছর। আমার বিয়ের চারদিন পর থেকে পুরো বাসার সকল কাজের দায়িত্ব আমার কাঁধে চলে আসছে। রনি আমাকে বলে দিয়েছে আমার মা কোন কাজ করবে না । তুমি পারলে করবে না পারলে ফেলে রাখবে। আমি পারলেও করি না পারলেও করি। তারপরেও আমার দোষের কোন শেষ নাই। সেইসব দোষ আবার মা আমাকে বলেন না। উনার ছেলেকে আমার পিছনে বলেন। আর উনার ছেলে তাই নিয়ে আমার সাথে অশান্তি করে। আমি অবাক হয়ে দেখি কিভাবে একজন মানুষ অবলীলায় আরেকজনের নামে মিথ্যা কথা বলেন। আমি যতই রনিকে বলি আমি এই কাজ করি নাই । কিছুতেই সে আমার কথা বিশ্বাস করে না। এমন না যে, আমার প্রেমের বিয়ে। আমার শাশুড়ি মা নিজে আমাকে পছন্দ করে এনেছেন। তারপরেও কেন এমন আমি বুঝি না। আজকে সকাল থেকেই জ্বর জ্বর লাগছে। তাই বলেছিলাম ভর্তাটা রাতে করি। তাতেও এতকথা শুনতে হল। শুটকি টালতে টালতে মাথাটা ঘুরাতে লাগলো । চারপাশের সব অন্ধকার হয়ে আসলো। কিছুতেই আর দাঁড়াতে পারছিনা। বাথরুমে পেয়ে গেল সাথে সাথে। আমি চুলা থেকে তাওয়া নামিয়ে রেখে বাথরুমের দিকে দৌড়ে গেলাম। কোনমতে ফ্রেশ হয়ে দাঁড়াতেই আর পারলাম না। দড়াম করে বাথরুমে পড়ে গেলাম। গলা দিয়ে শুধু একটা চিৎকার বের হয়ে আসলো। ঠিক কত সময় পরে জ্ঞান আসলো বুঝতে পারলাম না । জ্ঞান ফিরে দেখি রনি আমার পাশে বসে আছে। মা একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে রাগি রাগি মুখ করে। এটা অবশ্য নতুন না। বিয়ের পর থেকেই আমার শরীর খারাপ হলে মার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। তাই এখন আর শরীর খারাপ লাগলে কাউকে বলিনা। আর বলেও কি হবে? শরীর খারাপ থাকলেও সব কাজ আমাকেই করতে হয়। শুধু শুধু বলে মায়ের মেজাজ খারাপ করার কি দরকার।
-কিভাবে পড়ে গেলে সাথী ?
-মাথাটা ঘুরে উঠেছিল । শরীর খারাপ থাকলে এতকিছু করার কি দরকার ? মা সাথে সাথে বলে উঠলেন তোর বউ কি কোন কথা শুনে ? যা মনে চায় করে। কিছু হলে বলেও না। আমি অবাক হয়ে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম – মা আমিতো আপনাকে বলেছিলাম আমার শরীর ভালো না।
- কি বললে !! কখন বলেছ ? তুমি বলতে চাচ্ছ আমি ইচ্ছা করে চেয়েছি তুমি পড়ে যাও ?
- আমিতো সে কথা একবারো বলিনি মা । আমি বলেছি আপনাকে আমার শরীরটা ভালো নেই । মা আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলেন রনি তার আগেই মাকে থামিয়ে দিয়ে বলল – মা মনে হয় শুনতে পায় নাই। যাক যা হবার হয়ে গেছে । আমি উঠে বসতে যাবো সেই সময় বুঝতে পারলাম ডান পা নাড়াতে পারছিনা। ব্যাথায় আমি কুঁকড়ে গেলাম। রনি পা টা ভালো করে দেখে বলল –সাথী পা তো ফুলে গেছে। মনে হয় মচকে গেছে। দাঁড়াও আমি পায়ে পানি পট্টি বেঁধে দিচ্ছি। কিন্তু ক্রমশই আমার ব্যাথা বাড়তে লাগলো। একসময় আমি অসহ্য হয়ে গেলাম। সন্ধ্যার সময় রনি খুব বিরক্ত হয়ে বলল – চল একটা এক্সরে করে দেখি। যা অবস্থা পা টা ভেঙ্গে গেছে নাকি আল্লাহ ভালো জানেন।
এক্সরে করে ডাক্তার কে দেখানোর পরে ডাক্তার বলল প্লাস্টার করতে হবে। পা ভেঙ্গে গেছে উনার। একমাস প্লাস্টার রাখতে হবে। একমাস পরে আসবেন। আর ব্যাথা কমানোর ঔষধ দিয়ে দিলেন।
প্লাস্টার করে বাসায় চলে আসলাম। আমার হাঁটা চলা একদম বন্ধ। পরেরদিন ব্যাথা একটু কমার পরেই আমি চিন্তায় পড়লাম ঘরের কাজ কে করবে ? আমার শ্বশুর সকাল বেলায় নাস্তা না খেয়েই অফিসে চলে গেলেন। রনি নিচ থেকে পাউরুটি নিয়ে আসলো। আমরা তাই দিয়ে নাস্তা খেলাম। রনি ফ্রিজ দেখে বলল – রান্না করা লাগবে না । যা আছে তাই দিয়ে দুপুরে হবে। রাতে আমি অফিস থেকে এসে কিছু একটা করে নিবো। রনি অফিসে চলে গেলো। সারাদিনে মা একবারও আমার রুমে আসে নাই। ছুটা বুয়া ঘর মুছে ,কাপড় ধুয়ে যাবার সময় আমাকে বলল – ভাবি আপনারে টেবিলে ভাত দিয়া যাই । আমি বললাম আচ্ছা । বিকালে মা আমার বিছানার পাশের টেবিলে এক কাপ চা এনে দিয়ে চলে গেলেন। আমি অবাক হয়ে ভাবতে লাগলাম দুই বছরেও আমার উপরে এই বাসার কারো কোন মায়া হলনা কেন ! আমি কি কম করেছি উনাদের জন্য ? রনি ও সারাদিনে একবার ফোন করে জানতে চায়নি আমি খেয়েছি কিনা বা শরীরের এখন কি অবস্থা । বিয়ের পর থেকেই লক্ষ্য করেছি রনি আমাকে নিয়ে বেশি আহ্লাদ দেখায় না। নতুন বিয়ে হলে বউয়ের প্রতি স্বামীদের যে একটা আবেগ কাজ করে সেটা রনির ভিতরে ছিল না। ও সবসময় চুপচাপ থাকে আমার সামনে। কিন্তু ওর বাবা, মা অন্য আত্মীয়দের সামনে ও অনেক কথা বলে। আমি মাঝে মাঝে বলি – চল আজকে রাত জেগে ছবি দেখি । ও বলে না রাত বেশি জাগলে সকালে অফিস যেতে সমস্যা হবে। কিন্তু মাঝে মঝেই দেখি অনেক রাত পর্যন্ত আমার শ্বশুর আর ও মিলে ডিসকভারিতে কোন প্রোগ্রাম দেখে । যদি বলি চল দুইজনে মিলে একটু ঘুরে আসি ও সাথে সাথে মাকে গিয়ে বলে- মা চল আমরা বাহিরে যাবো। আমি প্রথম প্রথম ভাবতাম একমাত্র ছেলে তাই বাবা মাকে রেখে কোথাও যেতে চায়না। কিন্তু তাই বলে আমাকে নিয়ে ও কখনই বেড়াতে যাবেনা !! স্বামীর মুখ থেকে নিজের প্রশংসা কে না শুনতে চায়। তাই আমিও মাঝে মাঝে ও অফিস থেকে আসার আগে একটু সেজে থাকি। কিন্তু আজ পর্যন্ত রনি আমাকে আদর করে বলেনি সাথী তুমি খুব সুন্দর। আমি যে দেখতে খারাপ তাও না। পরে পরে মনে হতে লাগলো রনির মনে হয় বিয়ের আগে কারো সাথে কোন সম্পর্ক ছিল। তাই আমাকে ওর ভালো লাগেনা। কৌশলে একদিন আমার ননাসের কাছে এই ব্যপারে জানতে চাইলাম । উনি বললেন – না,না আমার ভাই কখনো কোন মেয়েকে পছন্দ করলে আমরা তো তার সাথেই রনিকে বিয়ে দিতাম। ও সবসময়ই মায়ের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করবে বলেছে। অবশেষে বুঝতে পারলাম আমার প্রতি রনির অনীহার মুল কারণ আমার শাশুড়ি মা। উনি রনির কাছে নিয়মিত ভাবে আমার নামে সত্যি মিথ্যা বানিয়ে নানা কথা বলেন। আর উনার বাধ্য সন্তান সেগুলো বিশ্বাস করে আমার থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখে। রাতে শুধু ডিম ভাজি আর ডাল দিয়ে ভাত খেল সবাই। অথচ আমি ভালো থাকতে এ খাবার উনারা কোনভাবেই খেতে পারতেন না।
এভাবেই দুইদিন কেটে গেলো। তিনদিনের দিন সকালে মায়ের সেকি চিৎকার। আমি পারবনা তোদের এসব কাজ করতে। পা ভেঙ্গেছে তো কি হয়েছে ? সারাদিন বিছানায় শুয়ে বসে থাকতে হবে? আস্তে আস্তে উঠে এটা সেটা করা যায়না ? আমি কি তোর বউয়ের চাকর যে রান্না করে তোর বউয়ের সামনে খাবার দিয়ে আসতে হবে ? আমি পারবনা বলে দিলাম। কিছুক্ষণ পরেই রনি আমার কাছে এসে বলল- সাথী যে কয়দিন তোমার পা ভালো না হচ্ছে তুমি তোমাদের বাসায় গিয়ে থাকো। রনির কথা শুনে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। এই দুইবছরে যতই খারাপ লাগুক আমি চিৎকার করে রনির সাথে কখনো কথা বলি নাই। ওকে বুঝাতে চেষ্টা করেছি আমার কথাগুলো। কিন্তু আজকে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না । আমি চিৎকার করে রনিকে বললাম – কেন রনি আমি অসুস্থ হলে আমাকে আমাদের বাসায় চলে যেতে হবে কেন ? কয়েকদিন আগে যে আমার আম্মা অসুস্থ হলেন সে সময়ত আম্মার সেবা করার জন্য তোমরা আমাকে আমাদের বাসায় গিয়ে থাকতে দেওনি । মা আমাকে বলেছে তোমার আম্মাকে সেবা করতে যাবা আর আমাকে দেখবে কে ? আমি আমার মায়ের সেবা করতে যেতে পারবোনা। তাহলে এখন আমি কিভাবে মায়ের সেবা নিতে যাব ? এই দুই বছর আমি সবরকম ভাবে তোমাদের সাথে মিশার চেষ্টা করে আসছি। কিন্তু কোনভাবেই তোমরা আমাকে আপন ভাবতে পারছনা। মানুষ নিজেদের বাসায় কুকুর,বিড়াল পুষলেও তো মায়া হয়। ওরা অসুস্থ হলে ওদের খেয়াল করে। আমি কি কুকুর বিড়ালেরও অধম রনি ? আমি অসুস্থ হলে কখনই মা সেটা মেনে নিতে চায়না। এমনকি তুমি নিজেও বিরক্ত হও। তোমার বোনের সামান্য মাথা ব্যাথা হলেও মা তোমাকে নিয়ে দৌড়ে দেখতে চলে যায়। আর আমি গায়ে জ্বর নিয়ে রান্নাবান্না থেকে শুরু করে সব করি। তাতে তোমাদের কিছুই যায় আসেনা। এখন আমার পা ভেঙ্গে গেছে। আমি একেবারেই চলতে পারিনা। তোমাদের কাজ আমি করতে পারিনা তাই আমাকে এখন আর তোমরা বাসায় রাখবে না। আমাকে ভালো হবার জন্য আমার মায়ের কাছে জেতে হবে। ভালো হয়ে এসে আবার তোমাদের সেবা করতে হবে। কেন রনি ? এমন কেন ? তোমাদের কিছু হলে আমি সব করি তাহলে আমি অসুস্থ হলে তোমরা কেন আমাকে দেখতে পারবেনা? স্বামী হিসেবে কি তোমার কোন দায়িত্ব নেই। আমি অনেক চেষ্টা করেছি তোমাদের আপন হতে। তোমার মনে আমার জন্য একটু জায়গা করে নিতে। কিন্তু আমি সফল হতে পারি নাই রনি। পা ভালো হওয়া পর্যন্ত না আমি সারাজীবনের জন্য তোমার জীবন থেকে চলে যাব। বলেই আমি আমার বড় ভাইকে ফোন করে আসতে বললাম। রনি বুঝতে পারলো আমি সত্যি সত্যি চলে যেতে চাইছি। তাই ও আমার পাশে বসে আমার হাত ধরে বলল – সাথী কে বলেছে আমার মনে তোমার জন্য জায়গা নেই। আমি একটু চাপা স্বভাবের তাই হয়তো তোমাকে সে রকম করে ভালবাসি বলা হয় নাই। কিন্তু আমি তোমাকে ভালবাসি বিশ্বাস কর।
-না, রনি ভালবাসি মুখে বলতে হয়না। ব্যবহারেই বুঝা যায় তুমি আমাকে কেমন ভালোবাসো। আজ পর্যন্ত তুমি আমার কোন কথা বিশ্বাস করনি। মা তোমাকে সত্যি মিথ্যা যা বলেছেন তাই নিয়ে তুমি আমাকে কম কথা শুনাও নাই। আমি বারবার তোমাকে বুঝাতে চেয়েছি তোমার এ রকম ব্যবহারে তোমার সাথে আমার দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু তুমি আমার কোন কথায় কান দেওনি। আমি তোমাকে কখনো বলি নাই তুমি তোমার মা,বাবাকে ভালবেসনা। তুমি উনাদের পাশাপাশি আমাকেও একটু ভালোবাসো। এমন তো না যে আমাকে ভালবাসলে উনাদের ভালবাসায় কম পড়ে যাবে। বাবা মায়ের প্রতি ভালবাসা আর বউয়ের ভালবাসা কি এক ? কিন্তু তুমি আমার ভালো লাগা মন্দ লাগার দিকে কখনো দেখ নাই। তোমার মা , বোন অসুস্থ হলে তুমি যে পেরেশান হয়ে যাও আমার বেলায় তার দশ ভাগের একভাগ পেরেশান তুমি কখনো হও নাই। দুই বছরে যখন তোমার ভিতরে আমি ঢুকতে পারি নাই তাহলে আরও বারো বছরেও পারবোনা। তাই শুধু শুধু এক ছাদের নিচে থাকার কোন মানে হয়না । এই সময় মা রুমে ঢুকে বললেন – কি হয়েছে বৌমা এমন চিৎকার করছ কেন ? আর কি বলছ তুমি রনির সাথে তুমি আর থাকবেনা ? কি এমন হয়েছে ? এক সংসারে থাকতে গেলে এমন অনেক কিছু মেনে নিতে হয়। আমি সবসময় তোমাদের ভালো চেয়েছি। আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম – কি ভালো চেয়েছেন মা ? আপনি যে আপনার ছেলের কাছে আমার নামে নালিশ করেন কেন করেন? আপনি ভালো করেই জানেন আপনার ছেলে আপনার কথা অন্ধের মত বিশ্বাস করবে। আপনার ধারনা ছেলেকে বশে রাখলেই আপনার ভালো। তাই, যা নয় তাই বলে ছেলেকে সবসময় আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন। আপনার চেষ্টা সফল হোল । আমি সবসময়ের জন্য দূরে চলে যাচ্ছি। আর মানিয়ে নেয়ার কথা বললেন না । মানিয়ে নিতে আমি অনেক কিছু এই দুই বছরে ছাড় দিয়েছি। কোন লাভ হয় নাই। ভবিষ্যতেও হবেনা। আমাদের দেশের মেয়েরা মানিয়ে নিতে নিতে এমন অবস্থা হয় যে তাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়। ততদিনে তাদের দুই তিনটা ছেলে মেয়ে হয়ে যায়। তখন তাদের এক দল ডিভোর্সের চিন্তা করে আর একদল মরে মরে সারা জীবন বেঁচে থাকে। যারা বাচ্চা হবার পরে ডিভোর্সের চিন্তা করে তাদের ডিভোর্সের পরে সবচেয়ে বেশি মানুষিক বিপর্যয়ে পড়ে সন্তানরা। আর যারা মরে মরে সংসার করে তাঁরা একজীবনে স্বামী, শ্বশুরবাড়ির লোকদের কথা শুনে আর পরবর্তীতে সন্তানদের কথা শুনে। কারণ সন্তানরা ছোট থেকে তাদের মায়ের অসন্মান দেখে বড় হয় । তাই তারাও মনে করে এর কোন সন্মান নেই। আমি তাদের মত হতে চাইনা। তাই যে সম্পর্কে সন্মান নেই সন্তান হবার আগেই আমি সেই সম্পর্ক থেকে নিজেকে মুক্ত করতে চাই। মরে মরে নয় আমি বাঁচার মত করে বাঁচতে চাই। বউ হয়েছি তো কি হয়েছে আমিও মানুষ।
(সমাপ্ত)
আমিও মানুষ

08/03/2023

শরীরটা ভালো লাগছিলো না তাই ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি হয়ে গেলো। পুকুরঘাটে এসে দেখি শ্বাশুড়ি হাড়ি পাতিল পরিষ্কার করছে। আমি যখন শ্বাশুড়িকে বললাম,
--মা, আপনি কেন এইগুলো পরিষ্কার করছেন? আমিই তো একটু পর পরিষ্কার করতাম।
শ্বাশুড়ি রেগে গিয়ে পাতিলটা আছাড় মেরে বললো,
-"আমার কপাল যে খুব ভালো তাই শখে এইকাজ গুলো করছি। ছেলেকে বিয়ে করানোর আগেও আমি এই সংসারে বান্দীগিরি করেছি। আর বিয়ে করানোর পরেও এই সংসারে বান্দীগিরি করা লাগছে।"

আমি কিছু না বলে চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম। শ্বাশুড়ি তখন আরো রেগে গিয়ে বললো,
-"আমার সামনে এইভাবে তালগাছের মতো দাঁড়িয়ে না থেকে যাও তো"

আমি আর কিছু না বলে উনার সামনে থেকে চলে গেলাম। বারান্দায় বসে আছি আর ভাবছি আমার অন্যায়টা কোথায়? শ্বাশুড়ি সারাক্ষণ আমায় কেন ঝাড়ির উপর রাখে? কোন কাজ করতেও দিবে না আবার আমি কাজ না করলেও বকা দিবে।
একটু পর দেখি শ্বাশুড়ি হাড়িপাতিল গুলো পরিষ্কার করে বারান্দায় রাখলো। আমায় বসে থাকতে দেখে ধমক দিয়ে বললো,
-"বলি এইভাবে বকের মতো এক পা তুলে বসে না থেকে বাড়ির উঠানটা তো একটু ঝাড়ু দিতে পারতে। চোখ মেলে কি দেখা যায় না উঠান জুড়ে কত ময়লা পড়ে আছে।"

আমি ঝাড়ুটা হাতে নিয়ে বললাম,
--এখনি মা আমি ঝাড়ু দিয়ে দিচ্ছি।

শ্বাশুড়ি আমার হাত থেকে ঝাড়ুটা কেড়ে নিয়ে বললো,
-"থাক তোমার আর ঝাড়ু দিতে হবে না। তুমি ঝাড়ু দিলে তো আবার উঠান পরিষ্কার হয় না। ঝাড়ু আমি দিচ্ছি তুমি চুলায় আগুনটা একটু ধরাও আমি এসে রান্না বসাবো"

শ্বাশুড়ির কথাশুনে আমি কিছুটা অবাক হয়ে বললাম,
--মা, এই রোজার সময় এতো সকালে রান্না বসাবেন? বিকালের দিকে রান্না বসালেই হবে। তাহলে ইফতারের পরেও ভাত গরম থাকবে। এখন ভাত রান্না করলে ঠান্ডা হয়ে যাবে।

শ্বাশুড়ি আমায় আবার একটা ঝাড়ি দিয়ে বললো,
-"তোমায় যা করতে বলছি করো। এতো মাতব্বরি করতে হবে না তোমাকে"

আর আর কিছু না বলে পাকঘরে চলে গেলাম। চুলোয় অনেকক্ষণ ধরে আগুন জালাবার চেষ্টা করছি কিন্তু আগুন ধরছে না। শুধু ধোয়া বের হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর শ্বাশুড়ি এসে নিজের কপাল নিজে চাপরে বললো,
-"কোন শখে যে মোড়ল বাড়ির মেয়েকে ঘরের বউ করে এনেছিলাম আল্লাহ মাবুদ জানে। যে মেয়ে চুলায় আগুন পর্যন্ত ধরাতে পারে না সেই মেয়ে কিনা আবার সংসার করে খাবে। যাও মেয়ে তুমি ঘরে তোমার স্বামীর কাছে যাও। আমি তো আছিই বান্দীগিরি করার জন্য"

শ্বাশুড়ির কথাগুলো কেন জানি আর সহ্য করতে পারছিলাম না। তাই রাগেই উনার সামনে থেকে চলে আসলাম। ঘরে যখন মনমরা হয়ে বসে ছিলাম তখন স্বামী এসে শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে আমায় বললো,
-"কি হলো মন খারাপ করে বসে আছো কেন?"
আমি বললাম,
--আমি বুঝতে পারছি না আপনার মা কেন আমায় সারাক্ষণ বকাঝকা করে। আমায় কোন কাজ করতে না দিয়ে উনিই সব কাজ করবে আবার নিজেই বলবে উনি নাকি এই সংসারের কাজের লোক
আমার স্বামী তখন হেসে বললো,
-"আরে আমার মায়ের কথায় কিছু মনে করো না। মা এমনি একটু খিটখিটে মেজাজের। তবে আমার মায়ের মনটা খুব ভালো। আচ্ছা আমি একটু দরকারে বাজারে গেলাম। গরুগুলো না খেয়ে আছে। যদি পারো গরুগুলোকে খেতে দিও।"

কথাটা বলে স্বামী চলে গেলো। আমি গরুগুলোকে খড় দিচ্ছিলাম। এমন সময় শ্বাশুড়ি ছুটে এসে বললো,
-" তুমি গরুকে খাওয়াচ্ছো কেন? ঘরের ভিতর যে একটা গরু আছে সেই গরুটা কই?"
শ্বাশুড়ির কথা শুনে আমি কেন জানি হেসে দিলাম। শ্বাশুড়ি যখন রাগী চোখে আমার দিকে তাকালো তখন আমি আমতা-আমতা করে বললাম,
-- কি একটা দরকারে উনি একটু বাজারে গেছেন। আমায় বললো গরুগুলোকে খাবার দিতে।

আমার কথা শুনে শ্বাশুড়ি বিড়বিড় করে কি যেন একটা বললো। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
-"রান্না হয়ে গেছে। তুমি হাত মুখ ধুয়ে খেয়ে নাও।"

শ্বাশুড়ি কথা শুনে আমি অবাক হয়ে বললাম,
--না মা আমি তো...
শ্বাশুড়ি আমায় থামিয়ে দিয়ে বললো,
-"বিস্কুট খেয়ে দিন পার না করে ভাত খেয়ে নাও। আমি শ্বাশুড়ি হলে কি হবে আমিও তো মেয়ে মানুষ। আমি তো বুঝি সব। আর মেয়ে মানুষের প্রতি মাসে মাসিক হবে এটা স্বাভাবিক। এইসময় রোজা রাখা যায় না। তোমার যেহেতু এই সমস্যাটা হয়েছে এখন রোজা না রেখে আমার ভয়ে রোজা রাখার অভিনয় করতে হবে নাকি? যাও মা তুমি খেয়ে নাও আমি গরু গুলোকে খাওয়াচ্ছি।"

ঘরে এসে দেখি শ্বাশুড়ি ভাত তরকারি বেড়ে রেখেছে। আমি ভাতের প্লেটটা হাতে নিয়ে যখন খেতে যাবো তখন শুনি আমার শ্বাশুড়ি আমার স্বামীকে সমানে বকে যাচ্ছে আর বলছে,
-" আমি এতো শখ করে মোড়ল বাড়ির মেয়েকে বিয়ে করিয়ে এনেছিলাম গরুকে ঘাস খাওয়ানোর জন্য নাকি? তুই কোন সাহসে ঘরের বউকে বলিস গরুকে ঘাস খাওয়াতে? তুই কি তোর বাপের মতো তোর বউকেও এই সংসারে বান্দীগিরি করাতে চাস? তোর বাপ তো সারাজীবন আমারে দিয়ে এই সংসারে বান্দীগিরি করিয়েছে। কিন্তু আমি বেঁচে থাকতে তুই তোর বউয়ের সাথে এমন করতে পারবি না। তোর বাপ যা আমার সাথে করছে। অনেক শখ করে ফুলের মতো মেয়েটাকে এই বাড়ির বউ করে এনেছি"

আমি শ্বাশুড়ির কথাগুলো শুনছিলাম আর নিরবে চোখের জল ফেলছিলাম। আমার অজান্তেই আমার শ্বাশুড়ি আমায় কতটা ভালোবাসে অথচ কিছুক্ষণ আগে পর্যন্ত আমি তার ভালোবাসাটা বুঝি নি। আমি শুধু উনার খিটখিটে মেজাজটাই দেখেছি। মনের ভিতর ভালোবাসাটা বুঝি নি....

পরের দিন ঘুম থেকে উঠে দিখে শ্বাশুড়ি উঠান ঝাড়ু দিচ্ছেন। আমি তখন শ্বাশুড়িকে বললাম,
--মা আপনি কেন ঝাড়ু দিচ্ছেন? আমিই তো ঝাড়ু দিতাম।
শ্বাশুড়ি রেগে বললো,
-"বান্দীর কপাল নিয়ে জন্মাইছি তো তাই বান্দীগিরি করছি"
শ্বাশুড়ির কথা শুনে আমি জোরে জোরে হাসতে লাগলাম। শ্বাশুড়ি আমার হাসি দেখে ঝাড়ু আছাড় মেরে ফেলে দিয়ে বারান্দায় বসে বললো,
-"করলাম না এই সংসারে বান্দীগিরি।"

আমি উঠান ঝাড়ু দিচ্ছি আর মুচকি মুচকি হাসছি। শ্বাশুড়ি বারান্দায় বসে বিড়বিড় করছে আর রাগে জ্বলছে...

আমাদের সংসার জীবনে সব শ্বাশুড়িই যে রিনা খানের মতো অত্যাচারী হয় তা কিন্তু না। কিছু কিছু শ্বাশুড়ি মনিরা মিঠুর মত খিটখিটে হলেও খুবই মমতাময়ী হয়

খিটখিটে শ্বাশুড়ি

08/03/2023

আমার স্বামী ঘর থেকে বের হবার সময় আমি তাকে বলেছিলাম আমার জন্য যেন একটা ক্রিম আনে। এই কথাটা আমার শ্বাশুড়ি শুনে ফেলেছিলো। স্বামী চলে যাবার পর আমার শ্বাশুড়ি আমায় বললো,
-”লাগাও, মুখে আরো বেশি করে ক্রিম লাগাও। এই রুপ দেখিয়েই তো আমার ছেলের মাথাটা খেয়েছিলে। তা না হলে আমার ছেলেকে কি এমন ছোটঘরে বিয়ে করাতাম। কত বড় বড় ঘর থেকে আমার ছেলের বিয়ের সম্বন্ধ এসেছিলো আমার ছেলে বিয়ে করলো না। শেষে এই রূপ দেখে পাগল হয়ে আমার ছেলে বিয়ে করলো”

আমি কিছু না বলে চুপচাপ নিজের রুমে চলে আসলাম।

বিকালের দিকে বারান্দায় বসে ননদীর চুলে তেল দিয়ে দিচ্ছিলাম। পাশে আমার শ্বাশুড়ি বসা।এমন সময় স্বামী এসে আমার দিকে ক্রিমের প্যাকেটটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
-”এই নাও তোমার ক্রিম।”
আমি বললাম,
- আমার কোন ক্রিম লাগবে না।
স্বামী কিছুটা অবাক হয়ে বললো,
-”লাগবে না তাহলে আনতে বলেছিলে কেন?এখন যেহেতু এনেছি নিতে বলছি নাও–

তখন বারান্দায় বসে থাকা শ্বশুড়ি চেঁচিয়ে বললো,
-” এক কাজ কর বউকে সাজিয়ে গুছিয়ে আলমারিতে তুলে রাখ। কারণ তোর বউয়ের তো এই রূপটা বাদে আর কিছু নাই। না পারে সংসারের কোন কাজ আর না পারে বাপের বাড়ি থেকে কিছু আনতে।”

ননদী তখন আমার স্বামীর হাত থেকে ক্রিমের প্যাকেটটা নিয়ে বললো,
-”ভাবী যেহেতু নিতে চাইছে না তুমি জোর করছো কেন? এটা আমি নিয়ে নিলাম।”

আমার স্বামী কোন কিছু না চুপচাপ চলে গেলো। আমি ননদীর চুলে তেল দিচ্ছি আর আনমনে ভাবছি একটা মেরুদন্ডহীন পুরষকে বিয়ে করেছি। চোখের সামনে নিজের বউকে কত কি বলে অপমান করে অথচ কিছু বলার সাহস নেই—-

আমার ননদীর বিয়ে ঠিক হয়েছে। কয়েকদিন ধরে শ্বাশুড়ি আমায় খুব চাপ দিচ্ছে আমি যেন আমার বাবার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা এনে দেই উনার মেয়ের বিয়ের জন্য। আমি যখন আমার স্বামীকে বিষয়টা বললাম তখন আমার স্বামী হ্যা না কিছু বলে নি। শুধু চাপচাপ শুনেছে। তাই বাধ্য হয়েই বাবাকে ফোনে টাকার কথাটা বললাম। পরেরদিন বাবা ঠিকই ৫০ হাজার টাকা নিয়ে এসে আমার হাতে দিয়েছিলো। আর আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলেছিলো,
-”তুই চিন্তা করিস না মা আমি আছি তো।”
আমি বুঝতে পারছিলাম টাকাটা জোগাড় করতে আমার গরীব বাবার খুব কষ্ট হয়েছে। আমারও তো কিছু করার নেই নিরবে চোখের জল ফেলা বাদে—-

পুকুরঘাটে কাপড় ধুচ্ছি তখন শ্বাশুড়ি আমার কাছে এসে আরো একগাদা কাপড় দিয়ে বললো এইগুলোও ধুয়ে দিতে। আমি উনার দিকে না তাকিয়েই একমনে কাপড় ধুতে লাগলাম। তখন শ্বাশুড়ি কিছুটা রেগে বললো,
-”তোমার বাবাকে বলো নি ইফতারি পাঠাতে?”
আমি মাথা নিচু করে বললাম,
– বাবার অবস্থা তো এমনিতেই খারাপ। কয়দিন আগেই তো বাবা ৫০ হাজার টাকা দিলো। এখন বাবা ইফতারের জন্য টাকা পাবে কোথায়?
-” ৫০ হাজার টাকা দিয়ে মনে হয় উদ্ধার করে ফেলেছে। মেয়েকে তো ঠিকই বিনা পয়সায় বিয়ে দিয়েছে। আমার ছেলে যদি তোমার রুপ দেখে পাগল না হতো তাহলে আমার সরকারি হাই স্কুলের মাস্টার ছেলেকে এমন বড় ঘরে বিয়ে করাতাম যে ওদের কাছে কিছু চাইতে হতো না। ওরা এমনিতেই দিতো—

আমি শ্বাশুড়ির অপমান আর অত্যাচার সহ্য করতে পারছিলাম না। রাতে স্বামীকে যখন বলি ইফতারের বিষয়টা তখন ও কিছু না বলে চুপচাপ বিছানায় শুয়ে পড়ে। বাধ্য হয়ে বাবাকে কাঁদতে কাঁদতে ফোনে বললাম, বাসায় ইফতার পাঠাতে।

কয়েকদিনের মধ্যেই বাবা ছোটভাইকে দিয়ে ইফতার পাঠায়। এতো ইফতার দেখেও আমার শ্বাশুড়ির মন ভরে নি। উনি শুধু বারবার বলছে, “ইফতার তো কম হয়ে গেলো। আরেকটু বেশি ইফতার পাঠালে এখান থেকে আমার মেয়েকেও পাঠাতে পারতাম।”

আমি আর শ্বাশুড়ির কথাগুলো নিতে পারছিলাম না। রেগে গিয়ে উনাকে বললাম,
-আমার বাবার বাড়ি থেকে আনা ইফতার কেন আপনার মেয়েকে দিবেন? নিজের মেয়েকে নিজের টাকা খরচ করে ইফতার কিনে দেন না। কিছু হলেই শুধু আমায় বলেন বাবার বাড়ি থেকে নিয়ে আসতে।আমার বাবার তো টাকার গাছ নেই যে আপনারা যখন খুশি চাইলেন আর আমার বাবা গাছ থেকে টাকা পেড়ে আপনাদের দিলো। নিজের মেয়ের বিয়ে দিবেন অথচ আমার বাবার টাকা দিতে হলো। কেন নিজের মেয়ের বিয়ে নিজেদের টাকায় দেন না। ছোটলোকের মতো আমার বাবার থেকে কেন আনতে চান।

শ্বাশুড়িকে যখন এই কথাগুলো বলছিলাম তখন আমার স্বামী তড়িঘড়ি করে এসে আমায় বললো,
-” কি সব যা তা বলছো মাকে। বাদ দাও না দয়া করে। একটু মানিয়ে নাও না কষ্ট করে।”
তারপর শ্বাশুড়িকে বললো,
-”ওরে মাফ করে দাও। ওর ভুল হয়ে গেছে।”

আমি রাগী গলায় আমার স্বামীকেও বললাম,
-” আমি আর একদিনেও মানিয়ে সংসার করতে পারবো না। স্কুলে তো ছেলে মেয়েদের শিক্ষা দেন অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে, যৌতুককে না বলতে। অথচ নিজে ছোট লোকের মতো শ্বশুর বাড়ির জিনিস আশা করেন। আপনার মতো মেরুদন্ডহীন মানুষের সাথে একদিনও সংসার করতে পারবো না।”

আমি সেদিনেই শ্বশুর বাড়ি থেকে রাগে বাপের বাড়ি চলে আসি। বাবা আমার মুখ থেকে সবটা শুনে আমায় বললো,
-”জামাইকে শুধু শুধু ভুল বুঝিস না। আমি যে তোকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি কিংবা ইফতারি পাঠিয়েছি এইগুলো কিন্তু কোনটাই আমার নিজের টাকায় কিনা না।সব জামাই আমায় দিয়েছে। জামাই আমায় বলেছিলো আমি যেন এই কথাটা তোকে না বলি। তাই এতোদিন বলি নি। তুই বিশ্বাস কর মা আমি যা যা তোর শ্বাশুড়িকে দিয়েছি সেগুলো একটাও আমার নিজের না। সব জামাইয়ের। আমি শুধু তোদের বাসায় পৌঁছে দিয়েছি এই যা। শুধু শুধু নিজের এতো ভালো স্বামীটাকে ভুল বুঝিস না।”

কথাগুলো বলে বাবা চলে গেলো।আমার নিজের ভুলের জন্য খুব খারাপ লাগছিলো। আমি আমার স্বামীকে ফোন দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললাম,
--কাল এসে আমায় এইখান থেকে নিয়ে যাবেন।
আমার স্বামী তখন বললো,
-”আমার মতো মেরুদন্ডহীন পুরুষের সাথে কি তুমি আর সংসার করবে।আমি বড়জোর তোমায় বলতে পারি মানিয়ে নাও আর মাকে বলতে পারি মাফ করে দাও”
আমি রাগী গলায় বললাম,
-”আমি এতো কিছু বুঝি না। তুমি কাল সকালেই আমাদের এইখানে আসবে।”
স্বামী মুচকি হেসে বললো,
-”যদি না আসি?”
আমিও হেসে দিয়ে বললাম,
--তাহলে আমি একাই চলে আসবো।

শেষটা সুন্দর

Address

Kishoreganj

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when সকল গল্পের লিংক posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share

Category