30/04/2020
ব্রেইনস্টর্মিং কিভাবে করবেন? ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে ক্লায়েন্টের জন্য কিভাবে একটি ইউনিক আইডিয়া বা ডিজাইন করবেন?
আমি সবসময় কিছু জিনিস ফলো এবং মেইনটেইন করে কাজ করি, যার ফলে কিছু ইউনিক আইডিয়া আমার মাথায় আসে এবং কিছু ডিজাইন এর কনসেপ্ট ভাবতে পারি। অনেকে অনেক রকম জিনিস ফলো করে, আমার সাথে মিল নাও থাকতে পারে। আমি শুধুমাত্র আমার টেকনিক গুলো শেয়ার করছি, হয়তো অনেকেরই কাজে লাগতে পারে।
১। ঘুমের আগে এবং ঘুমের পরে
আমরা অনেকেই ঘুমে যাওয়ার আগে ফেসবুক চালাই কিংবা গান শুনি অথবা দেখি, অনেকে জামাই / বৌ / গার্লফ্রেন্ড / বয়ফ্রেন্ড এর সাথে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পরি। এতে কি হয়? আপনি যখন ঘুমাচ্ছেন তখন সারাক্ষন আপনি ঘুমের ঠিক আগ মুহূর্তে যা করেছিলেন তা ভাবছেন এবং একিভাবেপরের দিন আপনি অন্য কিছু করেছেন ঘুমের আগে এবং ঠিক তেমনি ভাবে ঐটা নিয়ে ভাবছেন।
আসলে আমরা যা বেশি করি বা দেখি তা নিয়েই ভাবতে থাকি বেশি। ধরুন ঘুমের আগে আপনি নেটফ্লিক্সে কোনো মুভি দেখছেন, এবং মুভি দেখার পর আপনি ফেসবুকে একটা পোস্ট দিয়েছেন "ওয়াচিং এক্সট্রাকশন", সেই পোস্ট এ অনেক লাভ, হাহা, লাইক পেয়েছেন, ঠিক তেমনি ভাবে অনেক ভালো এবং খারাপ কমেন্টও পেয়েছেন। এখন আপনি ঘুমের মধ্যেও সেগুলো নিয়ে ভাববেন, ঘুমের থেকে উঠেও আপনি আপনার স্ট্যাটাস চেক করবেন। ঠিক একই ভাবে বই পড়ছেন কোন কিংবা খেলা দেখছেন সব কিছু আপনার মাথায় থেকে যায় এবং তা নিয়েই আপনি ভাবতে থাকেন। বাসায় ঝগড়া ঝাটি হলে তো কোন কথাই নাই। টেনশন করতে থাকেন সেই গুলো নিয়েই।
এখন ভাবুন যদি এরকম হতো যে আপনি ঘুমের ঠিক আগে ড্রিবল কিংবা বিহেন্সে ১০০ রকমের ডিজাইন দেখলেন কিংবা থিম্ফরেস্টে ১০০ রকমের ডিজাইন দেখলেন, যে কিভাবে বাটন ব্যাবহার করা হচ্ছে, কিভাবে শেপ গুলো নিচ্ছে, কিভাবে গ্যালারি সাজাচ্ছে, কিভাবে ল্যান্ডিং পেজ গুলো হাইরারকি অনুযায়ী সাজাচ্ছে, কোন রকমের টাইপগ্রাফি ব্যাবহার করছে, কিরকম কালার কম্বিনেশন ব্যাবহার করছে, কিভাবে কোন কোন টেক্সট কে ফোকাস করছে কিংবা হভার অথবা একটিভ জিনিশগুলো কাজ করছে কিভাবে তাহলে ঘুমের মধ্যেও আপনি সেগুলো নিয়ে ভাবতে থাকবেন। এইবার ঘুমের মধ্যে আপনি একটা ডিজাইন করে ফেলতে পারেন, এবং ওই ১০০ রকম ডিজাইন থেকে যেই ডিজাইন গুলো আপনার চোখে ভাসছে সেগুলো দিয়ে হেডার, ফুটার, সেকশন সাজাতে থাকুন। যেই কালার এবং টাইপগ্রাফি টা আপনার ভালো লেগেছিল সেই টা ব্যাবহার করুন।
এবার আপনি সকালে ঘুম থেকে উঠেই ফেসবুক না খুলে ওই ১০০ রকম ডিজাইন ওপেন করবেন এবং রিভাইস করবেন, যেন আপনার চোখের মধ্যে আগের রাতের ধারনা গুলো চলে আসে। এবার যা যা হালকা হালকা ঘুমের মধ্যে ভেবেছিলেন তা খাতায় অথবা অন্য কোথাও আকাবুকি শুরু করুন। এইবার এই আকাবুকির উপর ভিত্তি করে ফটোশপ কিংবা পেইন্ট এ কিংবা যেকোনো অনলাইন টুলস এর মাধ্যমে একটা ইনিশিয়াল ওয়ারফ্রেম তৈরী করে ফেলুন। প্রথমেই ডিজাইন করতে যাবেন না।
এরপর প্রসেস যা টানা একমাস ফলো করুন, এবং এক পর্যায়ে দেখবেন আপনি একটি সুন্দর ল্যান্ডিং পেজ অথবা যেকোনো ডিজাইন তৈরী করে ফেলেছেন। প্রথমেই সব পেজ বানাতে যাবেন না। ল্যান্ডিং পেজ হয়ে গেলে বাকিগুলো করতে আপনার সময় লাগবেনা। পরবর্তীতে এইটা যখন আপনার একটা হেবিট হয়ে যাবে তখন দেখবেন আপনি ১০০ রকমের ইউনিক বা যেকোনো ইউনিক ডিজাইন করতে সক্ষম হয়েছেন।
২। মানুষকে শেখান এবং মানুষের কাছ থেকে শিখুন
আপনি যা পারেন সেটা যখন আরো দশজনকে শেখাবেন বা নিজে নিজে ইউটিউব এ ভিডিও দিয়ে সবাইকে শেয়ার করবেন, অথবা ছোট ছোট ব্লগ লেখা বা টিপস শেয়ার করবেন কিংবা নিজের যেকোনো ডিজাইন বা কাজ ফেসবুকে পোস্ট করুন যেভাবে "ওয়াচিং এক্সট্রাকশন" পোস্ট করেছিলেন, ওখানে পোস্ট করার পর অনেকেই আপনাকে নেগেটিভ কিংবা পসিটিভ ফিডব্যাক দিবেন। সেগুলো নিয়ে ভাবতে থাকুন। এবং সেগুলোর উপর কাজ করতে থাকুন, এইটাকে ইউএক্স এর ভাষায় "এজাইল টেস্টিং" বলে, আবার আপনি যদি দুটো ডিজাইন পোস্ট করে কোনটা ভালো বা মন্দ হয়েছে সেটা সবাইকে বলতে বলেন তাহলে তাকে ইউএক্স এর ভাষায় "এবি / স্প্লিট টেস্টিং" বলে। তাই এভাবে নিজেকে ইনভল্ভ রাখুন ডিজাইন এর সাথে অথবা যা নিয়ে আপনি ক্যারিয়ার করতে চান সেগুলোতে। উদহারণ স্বরূপ কামরুজ্জামান শিশির (Kamruzzaman Sishir) ভাইকে ফলো করতে পারেন, উনি ডিজাইন নিয়ে সারাক্ষন ঘুমায়। ডিজাইন ওনার কাছে একটা ভালোবাসা বলতে পারেন। তাই আপনি যাই করেছেন তাকে ভালোবাসতে হবে মন থেকে মুখ দিয়ে না।
৩। গ্রূপ কিংবা কমিউনিটি ফলো করুন:
ফাইভার বাংলাদেশের মতো বিভিন্ন গ্রূপ যেগুলো আছে সেগুলোতে জয়েন করুন, সেখানে মানুষ কিভাবে সাহায্য করছেন কিংবা কি কি টিপস শেয়ার করছেন তা মন দিয়ে পড়ার সাথে সাথে লিখে ফেলুন। বিভিন্ন ডিজাইন রিলেটেড গ্রূপ আছে সেগুলোতে জয়েন করুন, সেখানে মানুষের ডিজাইন গুলো দেখুন এবং সেভ করে পিসিতে নিজের ফোল্ডারে রেখে দিন, এভাবে ১০০ রকম ডিজাইন কালেক্ট করে এরকম আরো একটা ফোল্ডার তৈরী করুন। ফোল্ডার এর ভিতরে ডিজাইন গুলো কে ভাগ করে ফেলুন, সাব ফোল্ডার তৈরী করুন যেমন: লোগো ডিজাইন এর জন্য একটা, ফ্লায়ার একটা, ইউআই একটা, ওয়েবসাইট একটা ইত্যাদি। এইবার ফোল্ডার অনুসারে পড়ালেখা শুরু করুন। এক ফোল্ডার ভালো মতো দেখা হলে সেখান থেকে কি কি শিখলেন তা নোটডাউন করুন। এইবার আরেক ফোল্ডার ধরুন। এভাবে পড়ালেখা কিংবা রেফারেন্স রিসার্চ করতে থাকুন কিন্তু কোনো কিছু কপি করবেন না। ইউএক্স এর একটি মেথড আছে "কে ডব্লিউ এইচ এল " মেথড তা ফলো করতে পারেন।
৪। ইউনিক আইডিয়া কিংবা বিজনেস শুরু করার আগে, প্রব্লেম আইডেন্টিফাই করুন
কিভাবে আপনার আইডিয়া অথবা বিজনেস দেশের কিংবা একজন ইউজার এর প্রব্লেম সল্ভ করবে? আপনার টার্গেট অডিয়েন্স কারা হবে?, আপনার বিজনেস মডেল কি হবে?, কোম্পানির ভিশন, টিম মেম্বার, কোম্পানির প্রোফাইল, প্রোডাক্ট / সার্ভিসের মার্কেট সাইজ ইত্যাদি রিসার্চ করুন। তারপর এর উপর ভিত্তি করে একটা বিজনেস প্রপোসাল অথবা পিচডেক বানিয়ে ফেলুন। এভাবে আপনি আপনার স্টার্টআপ কিংবা বিজনেস নিয়ে রিসার্চ করতে গিয়ে একধাপ এগিয়ে যাবেন।
এই সব কিছু নিয়ে যত বেশি কাজ এবং রিসার্চ করবেন ততো আপনি নতুন নতুন কিছু ব্রেইনস্টর্মিং করতে পারবেন। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসেও আপনি তখন ক্লায়েন্টের জন্য ইউনিক ডিজাইন করার একটা ধারনা পেয়ে যাবেন। :)
এছাড়াও আপনারা কিভাবে ইউনিক ডিজাইন করেন কিংবা ব্রেইনস্টর্মিং করে নতুন কিছু করে থাকেন তা পারলে কমেন্টে জানাবেন যেন সবার উপকার হয়।
-
ধন্যবাদ।
রিফাত এম হক