18/07/2022
আমার দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের অবস্থা!
ইজরাইলের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা যখন নতুন মৌল আবিস্কার করে, তখন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা লাইব্রেরিতে গিয়ে প্রেম করে! বিশ্বের ১ নম্বর হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সারা বছরে কোন কনসার্টের খবর পাওয়া যায় না। আর আমাদের ভার্সিটিতে কত কত কনসার্ট... এল.আর.বি, জেমস, শিরোনামহীন, অ্যাশেজ, তাহসান, ওয়ারফেজ.-একটার পর একটা প্রোগ্রাম হয়। (সংযুক্ত: কনসার্ট হয়, কিন্তু কখনোই এটা নিয়ে অতিরিক্ত মাতামাতি হয় না।)
নাচ, গান, হোলি উৎসবও হয় এখন। ফাক ইউ, হট বেবি, ক্রাশ খাইছি, মাস্তি, ইয়াবা, বিয়ার, গাজা এই শব্দগুলো এখন ছেলে-মেয়েদের কাছে অতি পরিচিত।
অন্যান্য দেশে জ্ঞানী মানুষরা, বিজ্ঞানীরা কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বেশ কয়েকবার অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিবেটে অংশগ্রহণ করেন।
আর আমাদের?
বিজ্ঞানী মকসুদুল আলম কয়টা সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যেতেন? আমাদের বর্তমান বিজ্ঞানী মুহাম্মদ আশরাফুল আলম কয়টি সমবর্তন অনুষ্ঠানে যান? (যিনি ব্যাক্টেরিয়া শনাক্তকরণের সেন্সর তৈরি করেছেন. "যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্স" জার্নাল এ তার গবেষণা ছাপা হয়েছে)
বা ‘জিন’ ত্রুটি নির্ণয়ে অভাবিত সাফল্য অর্জন করেছেন বাংলাদেশের যে তিন গবেষক। তারা হলেন— ডা. কেএম ফোরকান উদ্দিন ও ডা. মোঃ রোবেদ আমিন ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান বৈজ্ঞানিক ডক্টর মোহাম্মদ উদ্দিন ড্যাফিল। তারাও কি ভার্সিটির কোনো সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যাবেন? তাদেরকে কি বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকা হবে?
তাদের কাউকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকবে না। কারণ- নাইলা নাঈম আর সানি লিওনদের দাম এখানে বেশি অথবা দালালী আর দাসত্বের বীজ বহনকারী মেরুদণ্ডহীন বুদ্ধিজীবীরা - যারা এদেশের মানুষকে রোহিঙ্গার মতো করতে চায়। স্টিভ জবসের স্পিচ পাওয়া যায় ইউটিউবে। সমাবর্তনে বক্তব্য দিয়েছিলেন তিনি।
বিলগেটস একজন ভালো বক্তা।
মার্ক জুকারবার্গও একজন মোটিভেশনাল স্পীকার!
আজকে চীন বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি হতে যাচ্ছে। ইন্ডিয়া আইটি সেক্টরে ডমিনেট করছে। তাদের ছেলে মেয়েরা গুগলে কাজ করে। আর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেরা মাস্তি করে আর মেয়েরা হিন্দি সিরিয়াল দেখে সময় পার করে।
ভারত যখন বসে বসে সিইও তৈরি করে আমরা তখন বসে বসে ক্যাম্পাসে ক্যাডার তৈরি করি। আমেরিকা যখন নতুন নতুন ফাইটার জেটের নকশা করে, তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা যখন প্রতিরক্ষা-নিরাপত্তা মেলার আয়োজন করে আমরা তখন ক্যাম্পাসে মিথিলার - তাহসান ডিভোর্স নিয়ে আন্দোলন করি এবং ইউটিউবে লুল ভিডিও দেখি।
মায়ানমার যখন প্রতিবেশী দেশের সীমান্ত থেকে খনিজ সম্পদ আহরণের যন্ত্র আবিষ্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে - তখন আমাদের ছেলেমেয়েরা বোটানিক্যল গার্ডেনে বসে প্রেম করছে।
আমাদের দেশে প্রেমের নাটক করে হিট হওয়া ছেলেটা হলো বড় সেলেব্রেটি। আর ময়দা সুন্দরী হচ্ছেন হট কেক।
এখানে লাইব্রেরিতে গিয়ে অন্তরঙ্গ হওয়ার ভিডিও ফাঁস হয়।
সদ্য বিদেশ ফেরত আমাদের এক শিক্ষক বলেছিলেন, ওদের দেশে কলেজ লেভেলের ছেলে মেয়েদের যে দক্ষতা আমাদের দেশে মাস্টার্স পাস করা ছেলেমেয়রাও এতোটা ক্রিয়েটিভ এবং দক্ষ হয় না।
আমরা মাসে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে ১০০ টির বেশি TV চ্যানেল (আমাদের একটা চ্যানেলও ভারতে দেখানো হয় না) সংযোগ দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষা দিচ্ছি----
অফিস টাইমে কিভাবে মেয়ে পটাতে হয়।
কিভাবে বেস্ট ফ্রেন্ডকে প্রপোজ করতে হয়।
কিভাবে বন্ধুর গার্ল ফ্রেন্ডের সাথে ফ্লার্ট করতে হয়।
কেন বাংলাদেশ থেকে গবেষক তৈরি হয় না?
কেন আমরা ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিংয়ে জায়গা পাই না?
কেন আমাদের ইন্টারন্যাশনাল কোন সেলেব্রেটি নাই?
প্রেম করার জন্য বার আছে, সী বিচ আছে, লং ড্রাইভ আছে---। বিশ্ববিদ্যালের লাইব্রেরিতো প্রেমের জায়গা না! হিন্দি চ্যানেল দেখার জায়গা এটা নয়! সবার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার দরকার নেই।
বিশ্ববিদ্যালয় হলো সক্ষমতা অর্জনের জায়গা। মায়ানমার ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে, ভারত- আসাম থেকে ৮০ লাখ বাঙালি মুসলিমদের আমার দেশে ডুকিয়ে দেয়ার আয়োজন করছে! ভারত পারমাণবিক বোমা বানালে - আমরা কি হাইড্রোজেন বোমা বানাবো কি না?
কিভাবে প্রতিবেশী রাস্ট্রের সাম্প্রদায়িকতা ও আধিপত্যবাদ হতে মুক্তি পাব? চীনের সাথে আমাদের প্রতিরক্ষানীতি কেমন হবে? আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে- মেয়েদের এসব বিষয়ে ধারণা না থাকলেও- প্রশ্ন আউট করে পরীক্ষায় Golden A+ পাওয়া, ইন্টারনেটে সারারাত Girl Friend নিয়ে ডুবে থেকে জাতিকে মেরুদণ্ডহীন করার পাঁয়তারা আধিপত্যবাদীরা ঠিকই ঢুকিয়ে দিতে পেরেছে!
(লেখক, শিক্ষার্থী
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়)