Mala's Dream

Mala's Dream ❝ আল্লাহই আমার একমাত্র ভরসা, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমার জন্য সবকিছু সহজ করে দেন ❞

07/07/2024

অনুবদ্ধ_আয়াস 💚
ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ০২

" বিয়ে প্রথম সকালেই বুঝিয়ে দিলে, তুমি ঠিক কি? শাড়ি না পড়ে আমার ইমপ্রেস করার চেষ্টা করছ? কালকে তো বড় বড় জ্ঞান দিয়েছিলে, আগে নিজেকে বুঝতে!"

চরণ জোড়া থেমে গেল। মনে হলো মাটির ফাঁক দিয়ে অদৃশ্য শিকড় এসে পা দুটো আঁটকে দিলো। সাথে সাথে পেছনে ফিরলাম। রৌধিক তখন দেয়ালে হেলান দিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। দুহাত দিয়ে নিজেকে ঢাকার চেষ্টা করে অন্যদিকে ফিরলাম। তুতলিয়ে তুতলিয়ে বললাম,
" আসলে শাড়িগুলো কোথায় রাখা আছে, জানি না।"

আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই বললেন, " জানো না, না-কি না জানার ভান ধরছো?"
বলেই এগিয়ে এলেন তিনি।‌ হাতে তার টুথব্রাশ। ওয়াশরুশে ঢুকে ব্রাশ ধুয়ে রাখলেন। ট্যাপ ছেড়ে মুখে দিয়ে কুলি করে বেরিয়ে এলো। আমার সামনে দাঁড়িয়ে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করলো কিয়ৎক্ষণ। অতঃপর আলমারি খুলে দিলো। হাত টেনে আলমারির সামনে দাঁড় করিয়ে বললেন,

" এখানে এতো এতো জামা কাপড় আর তুমি শাড়ি খুঁজে পাচ্ছো না। হাউ ফানি!"

" এগুলো তো শেফার জন্য কেনা জামা কাপড়..

" তো! কি হইছে? শেফার বরকে নিজের বর করতে পেরেছ, তার বিয়ের বেনারসী গায়ে জড়াতে পেরেছ। তাহলে এগুলো পড়তে কি সমস্যা?"
আমি মাথা নিচু করে রইলাম। একদিন নিজের এই অবস্থা, অন্যদিকে এই লোকটার কটু কথা! দুটোতেই হাঁপিয়ে উঠেছি।

রৌধিক আলমারির ভেতর থেকে একটা শাড়ি বের করে ছুড়ে ফেললো আমার উপর। কেঁপে উঠলাম আমি। কর্কট কন্ঠে বললেন,

" এবার তো শাড়ি পেয়েছো? দাঁড়িয়ে না থেকে বিদেয় হও। নাকি নিজেকে দেখানোর বাকি আছে? তাহলে আমাকে না দেখিয়ে রাস্তায় গিয়ে দেখাও, অন্তত কিছু টাকা পাওয়া যাবে!"

সাথে সাথে শরীরের লোম গুলো দাড়িয়ে গেল। শেষে একটা রাস্তার মেয়ের সাথে তুলনা করলো। নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়ে এতোটাই নিচ হয়ে গেছে, আমি তার কি হই। সেটাই ভুলে গেছে। তবে আমি চুপ রইলাম না। দ্বিগুন তেজ নিয়ে বললাম,

" হ্যাঁ! প্রয়োজনে রাস্তায় গিয়েই দেখাবো। তাদের দেখালে টাকা পাওয়া যায়। আপনি তো আর টাকা দিতে পারবেন না। দিলেও বাবার টাকাই দিবেন। নিজে তো আর উপার্জন করেন না। টাকার মর্ম কি বুঝবেন?"

বলতে দেরী হলো চড় পড়তে দেরী হলো না। আরো একটা চ'ড় মা'রতে গিয়েও থেমে গেলেন। অন্যদিকে ফিরে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করলেন। তার চোখের মণি গুলো জ্বলজ্বল করছে। শাড়িটা নিচে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আমি শাড়িটা কোনোরকম তুলে ওয়াশরুমের ভেতরে ছুটলাম।
________________

সোফার উপরে সং সেজে বসে আছি আমি। মাথায় একহাত কাপড় টেনে নত হয়ে আছি। যে যার মতো খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। আমার পাশে বসে আছে রৌধিক ভাইয়ার ছোট বোন আদ্রিতা, ফুফুতো ভাই জাবিন, জান্নুবী। জান্নুবীর বয়স সাড়ে তিন বছর। আদ্রিক আঙ্কেল নিচে নামলেন। গিয়ে টেবিলে বসলেন। আমাকেও নিয়ে বসানো হলো। আমার সোজাসুজি চেয়ারে বসে আছে রৌধিকের দাদী এবং তার পাশে দাদা। আঙ্কেল বেশ গম্ভীর মানুষ, খাবার টেবিলে একদম কথা বলা পছন্দ করেন না। এমনকি প্লেট, চামচের টুং টাং ধ্বনিও না। বেশ কিছুক্ষণের নিরবতা ভেঙ্গে আদ্রিক আঙ্কেল বললেন,
" এই বাড়িতে তোমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো?"

" না আঙ্কেল।"
আমার মৃদু স্পষ্ট জবার।

" তোমার কিছু প্রয়োজন হলে রৌদুকে বলবে। কি বলছি আমি, সেই নিজেই তো একটা অপদার্থ।
আমার বলবে। আমাকে বলতে সংকোচ হলে তোমার মাকে বলবে। তাছাড়া আদ্রু তো আছেই।"

আমি মাথা নাড়িয়ে সায় দিতেই খাবারে মনোনিবেশ করলেন। পুনরায় নিরিবিলি হয়ে গেল। পায়ের শব্দ শোনা গেল। আদ্রিক আঙ্কেল সিঁড়ির দিকে তাকালেন। রৌধিক শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে নেমে আসছে। ডাইনিং অতিক্রম করে যাওয়ার সময় ডেকে উঠলেন আঙ্কেল,

"রৌদু! দাঁড়াও!"

আঙ্কেলের গলা গম্ভীর। রৌধিক থেমে গেল। মাথা নত করে দাঁড়ালো। রৌধিক বেপরোয়া হলেও আঙ্কেলের কাছে একদম বাচ্চা। আদ্রিক আঙ্কেল উঠে গেলেন। রৌধিকের সামনে দাঁড়িয়ে গম্ভীর গলায় বললেন,

" রৌদু কোথায় যাচ্ছো তুমি?"

" ক্লাবে!" রৌধিকের একরোখা জবাব।

" কাল তোমার বিয়ে হয়েছে। বাড়ি ভর্তি মেহমান। প্রেস, মিডিয়া গিজগিজ করছে। আর তুমি ক্লাবে যাচ্ছো? তুমি জানো, এই খবরটা লিক হলে আমার মান সম্মান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?
রৌধু, তুমি বিয়ে করেছো! সংসার হয়েছে। কিছুদিন পরে বাচ্চার বাবা হবে।"

" বাবা আমি তোমার মান সম্মানের কথা ভেবে এই বিয়েতে রাজি হয়েছি। আমাকে দিয়ে সংসার কিংবা বাচ্চার চিন্তা করো না।
কালকে রাতে আমি সাফ-সাফ জানিয়ে দিয়েছি, আমার মনে কিংবা ঘরে কোথাও এই মেয়েটার জায়গা হবে না।"

রাগে পিত্তি জ্বলে উঠলো আমার। এই মেয়ে, এই মেয়ে ছাড়া কথাই বলতে পারে না সে। খাবার ছেড়ে দু'পা এগিয়ে গিয়ে বললাম,
-" এই শুনেন, আমি আপনার ঘরে কিংবা আপনার মনে থাকার জন্য মরে যাচ্ছি না। এই বাড়িতে তো আরো জায়গা আছে, আমি সেই ঘরেই থামবো।"

আমার কথা শেষ আগেই আঙ্কেল বললেন,-" না! তোমরা এক ঘরেই থাকবে। আমি চাই না, প্রেস মিডিয়া সামান্য এক বিষয় নিয়ে জল ঘোলা না করুক।
রৌধু ঘরে যাও।"

বলেই হনহনিয়ে চলে গেলেন তিনি। রৌধিক হিংস্র বাঘের ন্যায় আমার দিকে চেয়ে আছে। কিন্তু তার হিংস্রতায় আমি ভয় করি না। অন্যদিকে চেয়ে রইলাম, বেশ হয়েছে। আমাকে কথা শোনানো হচ্ছিলো না। এবার বোঝ!
রৌধিকও প্রস্থান করলেন। রৌধিক যেতেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম আমি। আঙ্কেলের উপর রাগ সব আমার উপরে ঝাড়বে।
হাতে খাবারের ট্রে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি মিনিট বিশেক হয়েছে। সামনে পা ফেলতেই গিয়েও বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে। বুক ভরে শ্বাস নিতে রুমের দরজা খুলে অন্তর্ভাগে প্রবেশ করলাম। রৌধিক বেডের মাঝ বরাবর বসে ফোন টিপছে। আমি না তাকিয়ে বুঝতে পারছি, রৌধিক তার রৌদ্রমাখা চোখে তাকিয়ে আছে। টেবিলের উপর রেখে গাঁ ছাড়া ভাব নিয়ে বললাম,-" আন্টি খাবার পাঠিয়েছে!"
বলেই উল্টো হাঁটা ধরলাম বেলকেনির দিকে‌। বেলকেনির দরজা পেরিয়ে আরেক পা ফেলতেই হাত ধরে ফেললো কেউ। এক টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন আমায়। মাথার ঘোমটা টানা কাপড় খুলে পড়লো নিচে। আমার হাত পেছনে মুচড়ে ধরলেন পেছনে।‌ দৃষ্টি ঘুরিয়ে তার মুখের দিকে চাইলাম। ত্রুব্ধ চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি চাইলেই ভয়ংকর ভাবে চোখ রাঙালো। দাঁতে দাঁত ফিসিয়ে বলল,
" কি মনে করো তুমি নিজেকে? আজ তোমার জন্য! একমাত্র তোমার জন্য বাবা আমাকে খাবারের খোঁটা দিয়েছি। তোমাকে তো ইচ্ছে করছে..

বলেই ধাক্কা দিয়ে বেলিকেনির রেলিং এর উপর ছুড়ে মারলেন। সরে আসতে নিলে আরো দৃঢ়ভাবে চেপে ধরলেন। ঝুঁলে রইলাম বেলিকেনি দিয়ে খানিকটা বাইরে। পিঠে মাঝে কিছু একটা ফোঁটার মতো ব্যাথা অনুভব করলাম। তবে দৃঢ় নয়। তার হাত সরিয়ে আসতে নিলে পুরো শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠলো। মুখ কুঁচকে গেল। চিৎকার করে আর্তনাদ করে উঠলাম। সাথে সাথে দুই বাহু খামচে ধরলাম রৌধিকের। চোখের কার্নিশ গড়িয়ে অশ্রু পড়তে লাগলো। রৌধিক সন্দিহান চোখে চাইলো। গালে হাত রেখে বলল,

" এই মেয়ে কি হয়েছে তোমার? এমন করছো কেন?"

নিভু নিভু চোখে চাইলাম। ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠছে দেহটা। ততক্ষণে সবাই এসে জড় হয়েছে রুমে। আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। নিশি আন্টি বলল,
" জোনাকি, কি হয়েছে তোমার? এমন করছো কেন?"
" আমার পিঠে!" ব্যাথিত কন্ঠে বললাম।
রক্তে পিঠের দিকটার ব্লাইউজ ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছে। সবাই ধীরে ধীরে আমাকে দেয়াল থেকে সরিয়ে আনল। গ্ৰিল বিহীন রেলিং এর সূচালো কোণায় অসাবধানতায় পিঠ আঁটকে গেছিলো। যেটা ব্লাউজ ভেদ করে উন্মুক্ত পিঠে আঘাত করেছে।

অতি সাবধানে বেডের উপর বসিয়ে দিল আমায়। রৌধিক মাথা নিচু করে রয়েছে। আদ্রিক আঙ্কেল চ'ড় বসালেন রৌধিকের গালে।

" বাবা আমি আসলে..
তেজ নিয়ে বললেন,
" চুপ! একদম চুপ! এই মেয়েটাকে আমার সম্মান বাঁচাতে আমার বাড়ির বউ করে এনেছি, আঘাত করতে আনি নি। তুমি আমার উপরের রাগ এই মেয়ের উপর দেখিয়ে কি অবস্থা করেছো দেখেছো? তোমার শেফা হলে এটা করতে পারতে? যে মেয়েটা আমার এবং আমার পরিবারের সম্মান বাঁচিয়েছে, তাকে তুমি..

রৌধিক আমার দিকে বিস্ময় নিয়ে চেয়ে রইল। দেখে মনে হচ্ছে না, আদ্রিক আঙ্কেলের কোনো কথা তার কানে পৌঁছেছে। নিভু নিভু অধর নেড়ে কিছু একটা উচ্চারণ করলো, তা শ্রবণেন্দ্রিয় পর্যন্ত পৌঁছালো না আমার। আদ্রিক আঙ্কেল রৌধিক কে রুম থেকে বের করে দিলেন। রৌধিকের অসহায় মুখ দেখে কষ্ট হচ্ছিল আমার। আমি জানি মনে হচ্ছিল, সে ইচ্ছে করে কিছু করে নি। রাগের বশে হয়ে গেছে।

[চলবে.. ইনশাআল্লাহ]

05/07/2024

" মাত্র ১৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে আমাকে কেন বিয়ে করেছো জোনাকি? শুধুমাত্র টাকার জন্য। তাহলে আমি তোমাকে ৩০ লক্ষ টাকা দিচ্ছি, ডিভোর্স পেপার সাইন করে চলে যাও।"

পায়ের উপর পা তুলে নির্বিকার স্বরে বললেন রৌধিক। মাথার ঘোমটা তুলে অবলোকন করলাম সেদিকে। ভারী শাড়ি তুলে নিচে নেমে স্বাভাবিক কন্ঠে বললাম,

"টাকা টা আমার খুব দরকার ছিলো আর আপনার বাবার সম্মান বাঁচাতে আমাকে দরকার ছিলো।"

তিনি ঘরের একপাশে থেকে অন্যপাশে পায়চারী করলেন। চোখজোড়া খিঁচে বন্ধ করে চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন,
"এই মেয়ে শোনো, তোমাকে বিয়ে করেছি ঠিকই কিন্তু আমার মনে, আমার লাইফে তোমার কোনো জায়গা নেই। বুঝতে পেরেছো তুমি?"

সদ্য বিয়ে হওয়ার বরের মুখে এমন কথা শুনে পিত্তি জ্বলে উঠলো আমার। সকলের সামনে হাঁসি মুখে বিহেবিয়ার করে বাসর ঘরে এসে এমন কথা বলছে।
দুইহাত বুকে গুঁজে জবার দিলাম,

-" তো? কি করব আমি? নাচবো? আমাকে না বুঝিয়ে আপনি নিজেকে বুঝুন, আপনি এক্সজেকলি কি চান? আপনি চাইলে বিয়েটা আটকে পারতেন।"

আমার প্রত্যুত্তরে হয়তো সামনে থাকা মানুষটির পছন্দ হলো না। দাঁতে দাঁত চেপে ক্ষুদ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে আমার পানে। অস্বস্তিতে ছেড়ে গেল দেহ। কিন্তু আমাকে পাত্তা দিলেন না তিনি। টেবিলের উপর রাখা ল্যাম্পটা বিকট শব্দে ছুঁড়ে ফেললেন নিচে। কেঁপে উঠলাম আমি। দুহাতে কান চেপে দেয়ালের সাথে মিশে রইলাম। হুট হাট শব্দ গুলোতে আমার ফোবিয়া রয়েছে। কেউ জোরে কথা বললে আমার মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দেয়।
কিন্তু আমার দূর্বলতা বুঝলেন না তিনি। গুছিয়ে রাখা ঘরের সব জিনিস পত্র গুলো একে একে মাটিতে ফেলতে লাগলেন তিনি। আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে চেঁচিয়ে বলছেন,-" এইটুকু একটা পিচ্চি মেয়ে আমার উপর গলা তুলে কথা বলার সাহস পাও কী করে? আজ তোমাকে আমার মন থেকে বের করে দিয়েছি। খুব শীঘ্রই তোমাকে আমার ঘর এবং জীবন থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিবো।"

ভাঙ্গা চোড়া জিনিসপত্র গুলো মাঝে আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন। মাটিতে ফেলে রাখা ভাঙা কাঁচের টুকরো গুলো ডিঙিয়ে চলে গেলেন তিনি। তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দু'পা এগিয়ে এলাম আমি। পরবর্তী পা ফেলার আগেই ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলাম। পিছিয়ে বসে পড়লাম বেডের উপর। রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। ধীরে ধীরে কাঁচ বের করার চেষ্টা করলাম। বেশ গভীরে না যাওয়াতে সহজে তুলে ফেলতে সক্ষম হলাম। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম আমি। এই অহংকার ছেলেটার মান সম্মান রাখতে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছে আমায়। চোখের পাতা বড্ড ভারী ঠেকছে। বালিশ টেনে বেডের এক কোণে জায়গা করে শুয়ে পড়লাম। নিজের পরিবার ছেড়ে, নিজের প্রিয় জিনিস গুলো ছেড়ে অন্য একটা ছেলের সাথে সারাজীবন এক সাথে থাকতে হবে, ভাবতেই কষ্টে কেঁপে উঠছে শরীরটা।
আমি জোনাকি। মধ্যবিত্ত পরিবারের সাধারণ একজন তরুণী। দুই বোন আর বাবাকে নিয়েই আমাদের পরিবার। বোনের জন্ম দিতে গিয়ে মা মারা গেছেন। আমাদের সুখের কথা চিন্তা করে বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন নি। ভালোই চলছিলো আমার দিনকাল। হঠাৎ একদিন বাবার শরীর খারাপ হতে শুরু করলো। তুলনামূলক শরীর ফুলে উঠছিলো। বমি বমি ভাব, উচ্চ রক্তচাপ। পরিক্ষা করে কিডনি রোগ ধরা পড়েছে। প্রতিদিন ঘরে বসে কন্টিনিউয়াস অ্যাম্বুলেটরি পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস বা সিএপিডি করতো। জয়া তাকে সাহায্য করে। তখন থেকে বাবা বেকার। আমি সংসারের হাল ধরি। ছোট বোন জয়ার স্কুলের খরচ আর বাবার ওষুধ পত্রের টাকা জোগাড় করতে করতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল আমাকে। তার উপর খাবারের টাকা। এভাবে বছর দুই পেরিয়ে যায়। মাস খানেক আগে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জবের অফার পাই। তারপরে আমাদের অবস্থান আরেকটু উন্নতি হয়।
সেদিন রাতে বাড়ি ফেরার পর জ্ঞান হীন অবস্থায় পেলাম। শতবার ডাকার পরেও সারা দেয়নি। ভয় পেয়ে গেলাম দুইজনে। জয়ী কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ লাল করে ফেলেছে। আমি জয়ীর দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিলাম। ধরাধরি করে হসপিটালের নিয়ে এলাম। কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ডাক্তার জানালো, বাবা নিয়মিত ওষুধ খেতেন না, ডায়ালাইসিস করতেন না। এতে ভেতরে তীব্র সমস্যার সৃষ্টি হয়। কিডনি প্রতিস্থাপন করতে পনেরো লক্ষ টাকা লাগবে। অসহায় হয়ে পড়েছিলাম আমি।
তখন আমার পাশে এসে দাঁড়ান অফিসের বস আদ্রিক আহম্মেদ। তার ছেলের বিয়ে উপলক্ষে সবাইকে দাওয়াত দিয়েছেন। কিন্তু বিয়ের দুই দিন আগে কনে পালিয়ে যায়। নিজের সম্মান বাঁচাতে আমাকে তার পুত্র বধূ করতে চায়।
শর্ত সাপেক্ষে বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়।
সূর্যের নরম আভা চোখে পড়তেই নিদ্রা ভঙ্গ হলো আমার। মাথা চেপে ধীরে ধীরে উঠে বসলাম। চারদিকে পর্যবেক্ষণ করতেই বুঝতে পারলাম আমি কোথায় আছি। মাথা তুলে দেয়ালের দিকে তাকালাম। সাতটা পঁয়ত্রিশ বাজে। আমার গায়ে ব্লাঙ্কেট জড়ানো। ব্লাঙ্কেট ছাড়িয়ে ফ্লোরে পা রাখতেই আঁতকে উঠলাম। সমস্ত শরীর কাঁটা দিয়ে উঠলো।‌ সাথে সাথে পা তুলে ফেললাম। পায়ে মোটা ব্যান্ডেজ করা। কিন্তু আমার যতোদূর মনে আছে, কালকে রাতে আমি পায়ের ব্যান্ডেজ তো দূরে থাক। রক্ত পর্যন্ত মুছি নি। দৃষ্টি গেল ড্রেসিং টেবিলের বড় আয়নার দিকে। নিজের গায়ে শাড়ি আর না দেখে চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো। দ্রুত ব্লাঙ্কেট দিয়ে শরীর পেঁচিয়ে নিলাম। এই রুমে আমি ছাড়া কেউ নেই। রৌধিক রাতে বেরিয়ে গিয়েছিল। দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। দৃষ্টি ঘুড়াতেই নজর পড়লো সোফার উপরে। সেখানে আরামসে ঘুমিয়ে আছে রৌধিক। তার দেহের অনেকটা অংশ সোফার বাইরে মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। খোঁচা খোঁচা দাড়ি, ঘন পাপড়ি যুক্ত গ্ৰথণ চোখ। বাম ভ্রু এর একটু উপরে লালচে তিল। যা চুলের আড়ালে ঢাকা পড়ে থাকে সর্বক্ষণ। এখনো চুল দিয়ে সম্পূর্ণ ললাট ঢেকে আছে। তবে তার ফাঁক দিয়ে তিলটা বেরিয়ে রয়েছে। পড়নে লাল টি শার্ট। নিঃপাপ মুখ টা যখন তখন যে কারো নজর কেড়ে নিতে পারে। পাশ থেকে শাড়িটা তুলে কোনো রকম শরীরে পেঁচিয়ে নিলাম। এগিয়ে গেলাম তার দিকে। হুট করেই ইচ্ছে করলো তার ঘন কালো চুলে হাত দিয়ে আলো এলোমেলো করে দেই। নিজেকে সংযত করতে চাইলেও বারবারই ব্যর্থ হলাম। চুলের হাত ছোঁয়ানোর আগেই নড়েচড়ে উঠলো সে। নিভু নিভু চোখে ঝাঁপসা আমার দিকে চেয়ে অন্যদিকে ফিরে গেলেন।
ফট করে উঠে গেলাম আমি। খুড়িয়ে খুড়িয়ে দু'পা ফেলতেই টান লাগলো আঁচলে। ধরার আগেই কাঁধ ঘেঁষে নিচে গড়িয়ে পড়লো। পেছনে ফিরে চাইলাম একনজর। রৌধিক পূর্বের ন্যায় ঘুমিয়ে আছে। তার পিঠের নিচে বেশ কিছুটা অংশ রয়েছে। আরো কাছে গেলাম তার। হাতটা চোখ মুখের সামনে বেশ কয়েকবার ঘুড়িয়ে কাঁধ থেকে পিন বিহীন শাড়িটা খুলে ফেললাম। সন্তর্পণে পা ফেলে ওয়াশরুমের ভেতরে প্রবেশ করলাম।
শাওয়ার শেষ করে বুঝতে পারলাম, সাথে কিছু আনা হয়নি। দরজা খুলে মাথা বের করলাম। ততক্ষণে পুরো ঘর আলোকিত হয়ে গেছে প্রাকৃতিক আলোয়। ঘর গোছানো। ঘুমন্ত রৌধিক নেই। বেলকেনির দরজা খোলা। বাথরোব পড়ে ভেজা ভেজা পা ফেলে বেরিয়ে এলাম শাড়ি নিতে। শাড়ি আদোও আছে কি-না, না জেনেই বের হয়েছি। এটাই ছিলো আমার দ্বিতীয় ভুল। বাবার জন্য বাধ্য হয়ে রৌধিককে বিয়ে করা ছিলো, সর্বপ্রথম ভুল।

এদিক ওদিক শাড়ি খুঁজে ব্যর্থ হয়ে যখন হার মেনে বসে পড়েছিলাম তখন শোনা গেল শক্তপোক্ত অস্পষ্ট পুরুষালী কন্ঠস্বর,

চলবে..ইনশাআল্লাহ
রেসপন্সের ভিত্তিতে দ্বিতীয় পর্ব দেওয়া হবে। রেসপন্স করার অনুরোধ রইল।

অনুবদ্ধ_আয়াস 💚
ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ০১

09/06/2024

নিজের প্রতি এতো টাই ঘৃণা জমেছে এখন আর আয়নায় নিজেকে দেখতে ইচ্ছে করে না

17/04/2024

ভালো আছি সবাই এটাই জানুক কষ্টটা নাহয় আমারি থাকুক 🙂

17/04/2024

এখন আর প্রয়োজন ছাড়া কারো সাথে তেমন কথা বলতে ইচ্ছা করে না😅

16/04/2024

সব থেকেও কি যেনো নেই🙂💔

15/04/2024

মানুষ মানুষকে কপি করে কিভাবে 🤔🤔🙄

10/04/2024

আজব দুনিয়া...!
সব মানুষ আপন হয় না যাও দু /একটা মানুষ আপন হয়..সেগুলোও সময় এর ব্যবধানে পর হয়ে যায় 🙂

তাইনা...!!



09/04/2024

কিছু কান্না শব্দহীন....!

I gained 5 followers, created 13 posts and received 11 reactions in the past 90 days! Thank you all for your continued s...
09/04/2024

I gained 5 followers, created 13 posts and received 11 reactions in the past 90 days! Thank you all for your continued support. I could not have done it without you. 🙏🤗🎉

05/04/2024

#সতীন
্ব
#অনন্য_শফিক
'
'
আহাদের কথা শুনে আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।
এসব কিভাবে একটা মানুষ করতে পারে?
সে গোপনে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে কিন্তু আমি তার প্রথম স্ত্রী হিসেবে তা মেনে নিচ্ছি না। মেনে নিচ্ছি না বলেই আমি তার ঘর থেকে এসে পড়েছি। এই জন্য কি সে আমার সঙ্গে এমন করবে?
তাছাড়া ভিডিও তো আর আজ করেনি সে। অনেক আগেই করেছে।এর মানে সে কোনদিনই ভালো মানুষ ছিল না। আগে থেকেই খারাপ লোক সে!
খারাপ লোক না হলে কি আর একটা মানুষ গোপনে তার স্ত্রীর ভিডিও ধারণ করে এবং সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার কথা বলে স্ত্রীকে হুমকি দেয় !
আমি আমার ভাগ্যের কথা ভেবে হাসছি। মেয়েরা তাদের স্বামীদের নিয়ে কতো আনন্দের দিন যাপন করে।আর আমার?
স্বামীর সংসার থেকে চলে এসেও শান্তিতে থাকতে পারছি না। হুমকি দিচ্ছে।তাও এমন কিছু দিয়ে যার সঙ্গে আমার মান সম্মান জড়িত! যা প্রকাশ হলে কাউকে মুখ দেখাতে পারবো না।সারা জীবন এই সম্ভ্রমহানী বয়ে বেড়াতে হবে আমার।
আমি কি করবো কিছুই ঠিক করতে পারছি না!
ও যদি ভিডিওটা ছড়িয়ে দেয় তখন মানুষদের মুখ দেখাবো কি করে আমি?
মরণ ছাড়া কোন উপায় থাকবে না আমার!
'
আহাদকে কল দিলাম আমি নিজ থেকেই।আহাদের ফোনে কল হলেও সে রিসিভ করে না।বার বার কল দিচ্ছি। তবুও রিসিভ করে না।
শেষে ভাবলাম, মেসেঞ্জারে ওকে একবার নক করবো। ওখানে রিকোয়েস্ট করবো ভিডিওটা যেন সে ছড়িয়ে না দেয়। কিন্তু ডাটা অন করতেই এমন কিছু দেখবো আমি ভাবিওনি।দেখি সে মেসেঞ্জারে তিন চারটা ভিডিও পাঠিয়েছে। কিছু ছবি পাঠিয়েছে।সব আমার। এসব কখন কিভাবে করেছে আমি কিচ্ছু টের পাইনি।এসব পাঠিয়ে নিচে লিখেছে,' বার বার কল দিয়ে কোন লাভ হবে না তুলি। তুমি আরো ভাবো। অনেক ভাবো।ভেবে দেখো তুমি কি করবে আসলে! তুমি মামলা করতে চাইলে, ওকে। ফাইন। এক্ষুনি করো গিয়ে। তুমি গিয়ে মামলা করবে আর আমি এদিকে তোমার ভিডিও আপলোড দিয়ে দিবো। মানুষ তোমার শরীর দেখবে। তুমি রাস্তায় বেরুলে তোমায় দেখিয়ে বলবে, এই যে এই মেয়ের ভিডিও। তোমার বাপ মানুষকে মুখ দেখাতে পারবে না। তাকে নিয়ে সবাই হাসাহাসি করবে।সবাই বলবে, এই যে এই লোকের মেয়ের ভিডিও!
এবার দেখো কি করবে! মামলা করবে? যাও যাও।মামলা করো গিয়ে।'
এসব দেখে আমার সমস্ত শরীর থরথর করে কাঁপছে। এখন কি করবো আমি? কি উপায় হবে আমার?
এ তো মানুষ না।পশু।ও যেহেতু বলেছে এসব আপলোড করে দিবে তাহলে করেই দিবে। ওকে দিয়ে কোন বিশ্বাস নাই।যে ভয় দেখাতে জানে, সে কাজটা করেও দেখাতে পারে।
আমি রিপ্লে দিলাম। বললাম,' কি চাও তুমি? আর এতো বড় সাহস তোমার কিভাবে হলো? আমায় না জানিয়ে এরকম ভিডিও তুমি কোন সাহসে করলে?'
আহাদ অনলাইনে ছিল না। সে রিপ্লে দিলো দু ঘন্টা পর।লিখলো, ' অনুমতি নিলে তুমি এসব করতে দিতে? দিতে না।আর ভিডিও যদি না করতাম তবে এই ভয় কিভাবে দেখাতাম তোমায়? আমি জানি তুমি এই ভয়েই কোনদিন মামলা করবা না।আমি চাই তুমি মামলা না করো। মামলা না করে বাপের বাড়ি থাকতে ইচ্ছে হলে ওখানেই থাকো।ডিভোর্স টিভোর্সের দরকার নাই।ডিভোর্স দিলেই ঝামেলা। অনেক গুলো টাকা দেনমোহর। এসব দিতে গেলে জমি বেচা ছাড়া উপায় দেখি না! তো ভিডিও কেন রেখেছি তো বুঝলা? আমার নিজের সেইফটির জন্য।হা হা হা!'
আমি বললাম,' মামলা করবো না।প্লিজ তবুও তুমি এসব ভিডিও পাবলিশ করো না।পা ধরি তোমার। ডিলিট করে দাও এগুলো। তুমি তো এখনও আমার স্বামী। মানুষ যদি এসব দেখে তবে লজ্জা কি আমার একার হবে বলো? '
আহাদ বললো,' এই তো বুঝেছো। ঠিক লাইনেও এসেছো এতোক্ষণে। মামলা না করলে কোন ভয় নেই। চিন্তা করো না। আমার উপর বিশ্বাস এবং ভরসা রেখো।সময় হলে আমি ডিলিট করে দিবো। ভয়ের কিছু নেই।'
এর পরদিন বাবা বললেন,' তুলি, রেডি হয়ে নে।আমরা শহরে যাবো।'
আমি বললাম,' শহরে কেন বাবা?'
বাবা বললেন,' শহরে কেন যাবো মানে? মামলা করতে যাবো।এটা নিয়ে তো গড়িমসি করে সময় নষ্ট করা যাবে না।'
আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম।
বাবা বললেন,' কি রে কিছু বলবি?'
আমি কিছুই বলতে পারলাম না। হাউমাউ করে কেঁদে উঠলাম ওখানে দাঁড়িয়েই।
বাবা বললেন,' কি রে কি হয়েছে মা? কাঁদছিস কেন তুই? কেউ তোকে হু*মকি ধামকি দিয়েছে রে?'
বাবা কিভাবে যেন আমার সব সমস্যার বিষয়ে আন্দাজ করে ফেলেন। বাবারা কেন যে এমন হোন কে জানে!
আমি বললাম,' বাবা আমি কিছু বলতে পারবো না।আমি শহরেও যাবো না। এসব বাদ দাও বাবা। মামলা মোকদ্দমায় যেতে হবে না আমাদের।'
বাবা বড় অবাক হলেন। তিনি তখন আর কিছুই বললেন না।আমায় কাছে টেনে নিয়ে আদর করে দিলেন শুধু। বললেন,' আচ্ছা যাবো না।'
এরপর তিনি বাজারে গেলেন। বাজার করে আনলেন। রাতে খাওয়া দাওয়া হলো। এরপর বাবা আমায় ডেকে তার পাশে বসিয়ে বললেন,' কে ভয় দেখিয়েছে তোকে? আহাদ না তার মা? নাকি বিথি?'
আমি চুপ করে রইলাম।
বাবা বললেন,' ভয় পাচ্ছিস কেন? আমি তোর বাবা।আমায় বল।আমায় না বললে সমাধান হবে কি করে রে মা?'
আমি কেঁদে কেঁদে বাবাকে সব বললাম।
বাবা সব শুনে বললেন,' এখন তুই কি ডিসিশন নিলি? মামলা হবে না এই তো?'
আমি বললাম,' জ্বি বাবা। মামলা করলে ও ভিডিও ছেড়ে দিবে। তখন আমার মরণ ছাড়া কোন উপায় থাকবে না!'
বাবা বললেন,' ও আমার পাগলি মেয়ে! তুই না এই যুগের মেয়ে? এই আধুনিক সময়ের মেয়ে? তোর চিন্তা ভাবনা এরকম সেকেলে ধাঁচের হলে কিভাবে হবে বল মা? ভিডিও কে করেছে? তুই না সে?'
আমি বললাম,' সে।'
বাবা বললেন,' চুরি করে গোপনে করেছে তাই তো?'
আমি বললাম,' জ্বি।'
বাবা বললেন,' এখানে কি তোর বিন্দুমাত্র দোষ আছে?'
আমি বললাম,' জ্বি না বাবা।আমি কিছুই জানতাম না।'
বাবা বললেন,' তাহলে এই ভিডিও পাবলিশ করে দিলে তুই মরবি কেন? ভিডিও সম্পর্কে তুই কিছু জানতিই না। আবার পাবলিশ তুই করতেছিস না। এখানে তোর কোন হাত নাই।তাহলে এখানে তো তোর দোষ নাই।দোষ হবে যে আপলোড করবে তার।তো তুই দোষ না করেও মরে যাবি কেন? অন্য একটা মানুষের পাপের জন্য তুই কেন মরবি বল আমায়? '
আমি কিছু বললাম না। চুপ করে রইলাম। কিন্তু টের পেলাম ভেতরটা ভয়ে শুকিয়ে গেছে।
বাবা আবার বললেন। বললেন,' তাছাড়া এমন তো না যে মামলা না করলেই সে ভিডিও কেটে দিবে। বিষয়টা এখানেই শেষ হয়ে যাবে।এটা কিন্তু এখানেই শেষ হবে না।এই ভিডিও সারা জীবন তার কাছে থাকবে। কদিন পর পর দেখবি নানা কারণে সে এই ভিডিও দিয়ে তোরে হু*মকি দিবে। নানান ফায়দা হাসিল করবে এটা দিয়ে তোর থেকে। তখন কি উপায় হবে? '
আমি চুপ হয়ে আছি। কেমন যেন নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে আমার।সাহসে কুলিয়ে উঠছে না। কিছুতেই মন স্থির করতে পারছি না। আসলে যার উপর এমন বিপদ নেমে আসে।যে এমন সমস্যায় পড়ে। সেই কেবল জানে তার নিজের পরিস্থিতি সম্পর্কে! বাইরের কেউ এসব অনুভব করতে পারবে না কোনদিন!

বাবা আমার আরো কাছে এসে বসলেন। তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,' অপরাধীর হুমকির ভয়ে চুপ থাকাও কিন্তু অপরাধ মা! আজ যদি তুই ভয়ে চুপ থাকিস। মামলা না করিস। আহাদ তখন আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে। দেখবি দুদিন পর আহাদের সাহসটা আরো বেড়ে যাবে। একটা অপরাধ করে সে সফল হয়ে নতুন আরো অনেক গুলো অপরাধ করবে।বড় বড় অপরাধ করবে। এই জন্য তুই দায়ী থাকবি মা। বিষাক্ত সাপ মাথা ভাসালে তার মাথা কেটে ফেলতে হয় সঙ্গে সঙ্গে।সাহস করে মাথা না কাটলে এক সময় এই সাপ কিন্তু এলাকা শুদ্ধ সব লোককেই দংশন করে দেয়। আহাদ একটা কালসাপ। সে সমাজের একটা বিষাক্ত কীট। তাকে বাড়তে দেয়া যাবে না।যে সঠিক মানুষ সে শুধু নিজের নিরাপত্তার কথা ভাবে না। তাকে সবার নিরাপত্তার কথা ভাবতে হবে। সবার মঙ্গলের কথাই ভাবতে হবে।তোর সাহস করতে হবে মা। তাছাড়া এইসব হু*মকি ধামকি যে দিয়েছে এর প্রমাণ দেখাতে পারলে এর জন্যও শক্ত মামলা হয়।ভয় দেখাচ্ছে দেখাক। যতো ভয় দেখাবে ততো শক্ত মামলা হবে।ততো বেশি শাস্তি সে পাবে।'
আমি তখনও কিছু বললাম না।বাবা আমার এরকম চুপচাপ অবস্থা দেখে তিনি এটা নিয়ে বাড়াবাড়িও করলেন না। তিনি নিজেও চুপচাপ ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন ।
'
বিকেল বেলা আহাদ আবার কল করলো।কল রিসিভ করলে সে বললো,' তুলি, একটা কথা শুনো। এইসব ভিডিও ফিডিওর কথা বাদ দেই।
চলো আমরা একটা সমাধানে যাই।তোমারে প্রতি মাসে আমি দশ হাজার করে আলাদাভাবে হাত খরচা দিবো। বাজারের জমি চাও তাও দিবো দলিল করে।মা রাজি এতে।মা বলেছে জমি তোমার নামে দলিল করে দিবে। ঘরের সব কিছুই থাকবে তোমার অধীনে।বিথি থাকবে তোমার দাসির মতো।আর তুমি যদি বলো এই ঘরে বিথি থাকবে না তাহলে এটাই হবে।সে এই ঘরে থাকবে না। তোমার চোখের সামনেই পড়বে না। তোমার সঙ্গে কোনদিন কথাও বলবে না। সে থাকবে তাদের ঘরে। তার মতো করে সে বাঁচবে। প্লিজ তবুও আইন আদালত এইসবে যেও না! বাবাকে তুমি বোঝ দাও। এইসব আইন আদালত করে কোন লাভ হবে বলো? '
আমি তার সঙ্গে মোটেও বাড়াবাড়ি করলাম না।রাগ দেখালাম না। শুধু বললাম,' আমি চিন্তা ভাবনা করে পরে জানাবো। এখন রাখো।'
আহাদ ফোন রাখলো।
আমি তখন বুঝতে পারলাম, আহাদ ভয় পাচ্ছে। আসলে পাপীষ্ঠরা যতো শক্তিশালীই হোক না কেন, তাদের ভেতরে সব সময়ই একটা আতঙ্ক ছড়িয়ে থাকে।পাপীষ্ঠরা সব সময়ই অশান্তিতে থাকে।
এর খানিক পরেই আমার শাশুড়ি ফোন করে আমার সঙ্গে কান্নাকাটি করলেন। বললেন,' তুমি তো আমার নিজের মেয়ের মতোই মা। আমার মেয়ের থেকে তোমারে কোনদিন আলাদা চোখে আমি দেখি নাই। তোমার কাছে তোমার এই মায়ের আকূল আবেদন, তুমি মামলা মোকদ্দমা কইরো না। তুমি যা চাও তাই পাবে মা।আমি তোমার নামে বাজারের জমির অর্ধেকটা দলিল করে দিবো। এখন চাইলে এখনই। তবুও এইসব ঝামেলায় তুমি যেও না।'
উনার কথা শুনে আমার মেজাজ এতো খারাপ হলো! আমায় লোভ দেখাচ্ছে!জমির লোভ। টাকার লোভ।
এই জমি আর মাসে মাসে টাকা দিয়ে আমার কি লাভ হবে? জমি বা টাকাই কি সব?
আমার সঙ্গে যে অনাচার হয়েছে তা কি আমি এসব দিয়ে ঢাকতে পারবো? পারবো না।
কিছু মানুষ লোভী হয়।অর্থের বিনিময়ে নিজেকে তারা বিকিয়ে দেয়। চুপচাপ সব হজম করে।
কিন্তু আমি তো এমন লোক না।আমি মুখ বুজে সব সহ্য করতে পারবো না।অন্যায় আমি কখনোই মাথা পেতে নিবো না। আমি আমার প্রতি করা অনাচারের বিরুদ্ধে লড়বোই। পুরুষ হয়েছে বলেই যে নারীর উপর জুলুম করার অধিকার তার নাই তা আমি তাকে শিখিয়ে দিবো!
আর এই জন্য আমার ভিডিও আপলোড দিলে দিয়ে দিক সে। লোকে আমায় কি বলবে, কি ভাববে তা লোকের বিষয়।আমি তো জানি আমি সৎ।যার হৃদয়ে কোনো নোংরামি নাই তার ভয় পাওয়ার কিছু নাই।আমি যদি ভালো মানুষ হয়, পাপ না করি তবে লোকের কথায় আমার কি যায় আসে?
'
রাতে বাবাকে খাবার দেয়ার সময় তার কাছে বসে আমি কথাটা বললাম। বললাম,' বাবা, আগামীকাল আমরা শহরে যাবো।গিয়ে মামলাটা করবো। কোন অপশক্তিই এর থেকে আমায় আটকে রাখতে পারবে না! '
'
#চলবে

02/04/2024

#সতীন
#৪র্থ_পর্ব
#অনন্য_শফিক
'
'
বাবা বিথিকে বললেন,' তোমরা যে বিয়ে করেছো এর প্রমাণাদি আছে?'
বিথি বললো,' আছে।'
বাবা বললেন,' কাবিননামা নিয়ে আসো দেখি।'
বিথি বেয়াদবি করলো বাবার সঙ্গে। বললো,' আপনি এসব দেখার কে? আপনি কি এই ঘরের গার্জেন? আপনাকে আমি এসব দেখাবো কেন?'
বাবার কিছু বলতে হলো না। এখানে বসে থাকা মুরুব্বিদের একজন বললেন,' চুপ হারামজাদি।চুপ! এতো বড় অঘটন ঘটাইয়াও গলা বড় করে কথা বলস!সাহস কতো বড়!'
বিথি চুপ হয়ে গেল।
আরেকজন মুরুব্বি বললেন,' যা কাগজ পত্র কি কি আছে সব নিয়ে আয় গিয়ে।'
বিথি বললো,' কাগজ তুলি ছিঁড়ে ফেলেছে।'
আমি বললাম,' এটা ফটোকপি ছিল।মেইন কপি না।'
বিথি অপারগ হয়ে কাগজ আনতে গেল ঘরে। তার পেছন পেছন তার মাও গেল।বাবা তখন একজন মুরুব্বিকে বললেন,' আপনিও সঙ্গে যান।পরে দেখা যাবে আহাদের মতো ওরাও গিয়ে লুকিয়ে পড়েছে কোথাও! এর শেষদেশ না করে এখান থেকে আমি যাবো না।'
মুরুব্বিদের একজন ওদের সঙ্গে গেলেন।
'
খানিক পর বিথি কাগজ পত্র নিয়ে এলো। কাবিননামা নিয়ে এসেছে সে।বাবা সেই কাগজ হাতে নিয়ে খুব ভালো করে দেখলেন। তারপর বললেন,' কোন কাজি অফিসে গিয়ে তোমরা বিয়ে করেছো? ঠিকানা বলো।'
বিথি বললো,' ময়মনসিংহ।সি কে ঘোষ রোড।'
বাবা বললেন,' ঠিক আছে। আমি দেখছি।'
বাবা কাবিননামা ভাজ করে তার পকেটে রেখে দিলেন।
বিথির মা বললো,' আপনি এটা পকেটে রাখলেন কেন?'
বাবা হাসলেন। বললেন,' আমি তো মামলা করবো।প্রথম পক্ষের স্ত্রীকে না জানিয়ে বিয়ে করা রাষ্ট্রীয় ভাবে বিরাট অপরাধ।আর দ্বিতীয় বিয়ে যে আহাদ করেছে এর প্রমাণ তো আদালতে পেশ করতে হবে।তাই প্রমাণটা আগে ভাগেই সংগ্রহ করে পকেটে রেখে দিলাম।'
বিথির মা রেগে গেল প্রচন্ড। বললো,' আপনি আমার বাড়িতে আইসা যা তা করে চলে যাবেন এইটা তো হবে না ভাই । এই কাগজ নিয়ে এইখান থেকে আপনি যাইতে পারবেন না! এইখানে রক্তারক্তি হইবো।'
বাবা আবারো হাসলেন। তারপর বললেন,' রক্তারক্তি অনেক পরের বিষয়। আগে দেখুন আমি কি কি করি এটা নিয়ে।'
মুরুব্বিদের কেউই কোন কথা বলছে না।
বাবা একাই কথা বলছেন। তিনি বললেন,' একটা সময় নারীর মর্যাদা ছিল না এই দেশে। নারীদের পড়াশোনার ব্যবস্থা ছিল না। নারীর উপর যেভাবে ইচ্ছে সেভাবেই নির্যাতন করতো তাদের স্বামী আর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। ওইসব দিন এখন অতীত হয়ে গেছে।আমি আমার মেয়ের সঙ্গে করা এই অনাচারের শাস্তি আপনাদের ভোগ করাবো!'
বিথির মা একেবারেই চুপসে গেল। কোন কথা বলছে না আর।বিথিও চুপচাপ।
মুরুব্বিদের থেকে একজন বললেন,' ভাই সাহেব, মামলা মোকদ্দমা করে কি হবে? এটা পারিবারিক ভাবে সমাধান করা দরকার। নয়তো আপনার মেয়েরই মান সম্মান যাবে।'
বাবা বললেন,' কিভাবে আমার মেয়ের মান সম্মান যাবে?'
মুরুব্বি বললেন,' এই যে সব লোকেরা শুনবে এসব। স্বামীর উপর মামলা করা হয়েছে।'
বাবা বললেন,' আমার মেয়ের মান সম্মান যাবে কেন? অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে, বিচার পেতে আদালতে গেলে কেন একটা মেয়ের মান সম্মান যাবে বলুন? আপনাদের মতো মানুষদের জন্যই আজ সমাজের এই অবস্থা। এই আপনারাই কিন্তু ধর্ষিতা একটি মেয়েকেও চুপ করিয়ে দেন।বলেন, মান সম্মান নষ্ট হবে। পারিবারিক ভাবে এটা শেষ হয়ে গেলেই ভালো। এরপর লাখ খানেক টাকা দিয়ে অথবা একটা ধর্ষকের সাথে ওই মেয়েটির বিয়ে দিয়ে সব কিছুর সমাধান করে ফেলেন। আচ্ছা বলুন তো আসলেই কি এটা এভাবে সমাধানের মতো কোনো বিষয়? একটা ধর্ষকের সাথে কেন ভালো একটা মেয়ের বিয়ে হবে? কেন কয়েকটা টাকার বিনিময়ে সে সবকিছু চুপচাপ মেনে নিবে? ধর্ষিতা হওয়াও কি অপরাধ? এটা কি লজ্জার বিষয়? এর জন্য রাষ্ট্রের কাছে বিচার চাওয়া যদি লজ্জার হয় তবে খু*নের জন্য কিভাবে আপনারাই আদালতে যান? কিভাবে বিচার চান? খু*ন যদি অপরাধ হয় তবে ধর্ষণ অপরাধ না? প্রথম স্ত্রীকে না জানিয়ে গোপনে আরেকটা বিয়ে করা এটা অপরাধ না? তাছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে যে আহাদ করেছে আমার মেয়ের কোন ত্রুটির জন্য করেছে? আহাদ যা করেছে তা কি বিয়ের মধ্যে পড়ে নাকি নোংরামির মধ্যে পড়ে? '
মুরুব্বি এবার বললেন,' ভাই, আপনার সব কথাই ঠিক আছে। আপনি ভুল বলেননি। কিন্তু এসব করে দিন শেষে লাভটা কি হবে বলুন? আপনার মেয়ে তো এই ঘরেই থাকবে। আহাদের সংসারই তো করবে। তাহলে বাইরের লোক হাসিয়ে কি লাভ বলুন?'
বাবা এবার রেগে গেলেন।রেগে গিয়ে তিনি বললেন,' আপনাদের কি ধারণা আমি আমার মেয়েকে এখানে রাখবো? এরকম নোংরা, চরিত্রহীন একটা লম্পটের সঙ্গে আমার মেয়েকে সংসার করতে দিবো? '
মুরুব্বিদের কেউই কিছু বললো না।
বাবা বললেন,' আমার মেয়েকে আমি আজকেই সঙ্গে করে নিয়ে যাবো।'
এরপর বাবা আমার ননদের নম্বরে কল দিলেন।ননদ রিসিভ করলে বাবা বললেন,' তোমার মার কাছে ফোন দেও। জরুরী কথা আছে।'
আমার শাশুড়ি ফোন রিসিভ করলে বাবা বললেন,' বোন, আমি আমার মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছি। আপনার ছেলে যে অন্যায় আমার মেয়ের সঙ্গে করেছে এর শাস্তি আমি দিবো না।আদালত দিবে।'
আমার শাশুড়ি এই কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে বললেন ,' আমি আজকের মধ্যে আসতেছি। আপনি থাকেন। এইটার সমাধান আমি করবো।বিথি হারামজাদিরে ঘাড় ধরে ঘর থেকে বের করবো আমি।'
বাবা বললেন,' আমার মেয়ে বাজারের পঁচা জিনিস না বোন। আপনার ছেলের মতো এমন লম্পটের সঙ্গে আমার মেয়ে সংসার করবে না। আপনার ছেলের উপযুক্ত বউ বিথিই। দুজনকে বেশ মানাবে। আপনি বাড়িতে এসে নতুন বউকে বরণ করে নিন দ্রুত। কারণ, আপনার ছেলের হাতে একেবারে সময় কম। সে খুব দ্রুত জেলখানার মেহমান হবে। আপনি এর আগেই সবকিছু সম্পূর্ণ করে নিন এসে।'
বলে বাবা রেখে দিলেন। তারপর আমায় বললেন রেডি হয়ে নিতে।বাবা আমায় সঙ্গে করে নিয়ে চলে যাবেন।
আমার শাশুড়ি এরপর অবশ্য অনেক বার কল করলেন।বাবা ফোন রিসিভ করলেন না। আমার ফোনেও ফোন করলেন। আমিও রিসিভ করিনি। এখানে থাকা মুরুব্বিদের সবাই বাবাকে বোঝ দেয়ার চেষ্টা করলেন।বাবা কারোর কথাই শুনলেন না।
বাবা আমায় নিয়েই বাড়ি ফিরলেন।ফেরার আগে বিথিকে ডেকে বাবা শুধু এটুকুই বললেন,' এই যে তুমি একটা মেয়ের সুন্দর সংসার নষ্ট করলা, এর শাস্তি তোমায় আল্লাহ দিবেন। আল্লাহ ছাড় দেন, ছেড়ে দেন না কখনোই।'
আর বিথির মাকে বাবা বললেন,' ছেলে মেয়ে শুধু জন্ম দিলেই হয় না বোন।ছেলে মেয়েকে মানুষ করা শিখতে হয়।আর আপনাকে কি আর বলবো! আপনি নিজেই তো --!
বাবা কথা শেষ করলেন না।
আমরা চলে এলাম বাড়িতে। কিন্তু বাড়িতে এলেই কি সব শেষ হয়ে যায়? বাবার মতো কি আর সবাই এসব বিষয় সহজে মেনে নিতে পারে?
আমি বাড়িতে আসার পরদিনই আমাদের পাশের ঘরের এক দাদি এসে আমার পাশে বসে বললেন,' এই, তোর নাকি আর কোনদিন বাচ্চা হবে না? ডাক্তার নাকি বলছে? এই জন্যই নাকি তোর জামাই আরেকটা বিয়ে করছে? '
আমি তার কথার কোন উত্তর দিলাম না।দাদি এবার সুযোগ পেয়ে বললো,' আজকালকার মেয়েদের ধৈর্য্য নাই। পুরুষ মানুষ চাইর বিয়ে করতে পারে।তোর জামাই আরেকটা বিয়ে করছে করছেই এতে দোষের কি? খাওয়াইলে পরাইলে তো সে-ই খাওয়াবে। তোরে ভরণ পোষণ ঠিক মতো করতে পারলে বিয়ে দুইটা করলে সমস্যা কি? তোর বাচ্চা হয় না। এরপরেও তো তোরে তালাক দেয় নাই।তালাক যেহেতু দেয় নাই তাইলে হাসিমুখে এই সংসার তোর করা উচিৎ আছিলো।তোর বাপ একটা মাথামোটা লোক।বুঝে দুই লাইন বেশি।সে আজকে আছে, কাইল নাই।টুপ করে যাইবো মইরা। এরপর তোর কি উপায় হইবো? তোরে দেখবো কে? পালবো কে? '
উনার কথা শুনে আমার এতো রাগ লাগলো। আমি রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে উঠে উনাকে বললাম,' আপনি এক্ষুনি আমার সামনে থেকে যান।আর আমাদের ঘরে আসবেন না। এখানে কথা লাগাতে আসছেন! শয়তান মহিলা কোথাকার!'
উনি মুখ কালো করে সঙ্গে সঙ্গে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।
এরপর দিন সকাল বেলা কথা নাই বার্তা নাই হুট করে এসে আহাদের মা আর বোন আমাদের বাড়িতে উপস্থিত।বাবা তাদের খুব যত্ন করে খাওয়ালেন। তারপর বললেন,' বোন, শুনেছিলাম আপনি ভীষণ অসুস্থ। কয়েকদিন লাগবে সুস্থ হতে। আল্লাহর কি রহমত, দেখি একদিনেই আপনি সুস্থ হয়ে পড়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ।'
আহাদের মা বাবার এই টিটকারি বুঝতে পারলেও হজম করলেন। তারপর বাবাকে অনুরোধ করলেন, বললেন, 'আমি সবকিছুর সমাধান করবো। তবুও আপনি মামলা মোকদ্দমায় যাইয়েন না ভাই!'
বাবা বললেন,' কিভাবে সমাধান করবেন শুনি? বিথির কি হবে? ওর গর্ভে যে বাচ্চা ওটার কি হবে? মানলাম বিথি দোষ করেছে। মারাত্মক দোষ। কিন্তু অনাগত বাচ্চাটার কি দোষ? '
আহাদের মা আর বোন বাবার মন গলাতে না পেরে মনমরা হয়ে চলে গেল।
ওরা চলে যাবার পর বাবা আমায় ডেকে বললেন,' তুই ভয় পাইস না মা। চিন্তা করিস না।সত্যের পক্ষে আল্লাহ সব সময়ই থাকেন।আমরা মামলা করবো।আহাদের উপযুক্ত শাস্তি সে পাবেই পাবে।'
আমি বাবার কথায় খুব ভরসা পেলাম।
কিন্তু সমস্যাটা হলো সন্ধ্যার পর।আহাদ হুট করেই আমার নম্বরে কল দিতে শুরু করলো।আমি রিসিভ করি না তবুও সে কল দিয়েই যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত অপারগ হয়ে কল রিসিভ করলে সে বললো,' তুলি, পাগলামি করো না।যা হয়েছে তা তো হয়েই গেছে।বিথিকে আমি ডিভোর্স দিয়ে দিবো। কথা দিলাম তোমায়। তুমি তোমার বাবাকে বোঝাও।'
আমার প্রচন্ড রাগ পেয়ে গেল তখন।রাগ নিয়েই আমি বললাম,' তোরে জেলের ভাত না খাইয়ে আমি শান্ত হবো না। তাছাড়া তোর মতো নোংরা লোকের সাথে বিথির মতো মেয়েই যায়।তুই জেল খেটে এসে বিথির সঙ্গে ঘর সংসার করিস।আমায় আর কখনো ফোন দিয়ে বিরক্ত করিস না!'
এরমধ্যে আহাদ ওই ভয়ংকর কথাটা বললো। সে বললো,' তুলি, আমায় জেল খাটানো অতো সহজ না।আমি তোমার স্বামী। স্বামীর কাছে স্ত্রীর গোপন অনেক কিছুই থাকে। স্ত্রীর অনেক গোপন ছবি। গোপন ভিডিও।আমি আগেই জানতাম তোমার বাপ এসব নিয়ে ঝামেলা করবে। থানা পুলিশ করবে। আচ্ছা থানা পুলিশ করো গিয়ে সমস্যা নাই।জেল যদি খাটতেই হয় তবে খাটবো। পুরুষ মানুষের জেল খাটা দোষের না।গর্বের। কিন্তু এর আগে জগতের সব লোকরে তোমার ওইসব ভিডিও দেখিয়ে নিবো। এখন চিন্তা ভাবনা করে দেখো, জগতের সব লোকরে তোমার ওইসব দেখাতে দিবা নাকি মামলা মোকদ্দমা বাদ দিয়ে আইসা আমার সংসার করবা। তোমার কাছে দুইটাই অপশন আছে। তোমারে আমি জোর করবো না। তোমার যা ভালো মনে হয় ঠিক তাই করো।'
বলে আহাদ ফোন কেটে দিলো।
'
#চলবে
'
(এই যে এসব গোপন ভিডিওর বিষয়টা এটা কিন্তু এই সময়ে সত্যিই বিরাট একটা সমস্যা। কদিন পর পর এর স্ক্যান্ডাল ওর স্ক্যান্ডাল বেরুচ্ছে। আমাদের মেয়েদের অনেকেই বয়ফ্রেন্ড বা হাসব্যান্ডকে এসব ভিডিও করার বা ছবি তোলার অনুমতি দিয়ে দেয়। এরপর থেকেই কিন্তু বয়ফ্রেন্ড বা হাসব্যান্ড ব্লাকমেইল করতে শুরু করে নিয়মিত।আমি গল্পে এই বিষয়টা প্রায়ই নিয়ে আসি। নিয়ে আসার প্রধান কারণ আপনাদের সতর্ক করা।সব সময় সাবধান থাকবেন।মনে রাখবেন, ভালো মানুষেরা কখনোই এরকম ছবি কিংবা ভিডিও চাইবে না!

Address

Khulna

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Mala's Dream posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Mala's Dream:

Videos

Share

Category