06/08/2024
*ঘুষমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে*
১৯৭১ সালে মহন স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয়েছিল আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি। দেশ স্বাধীন হলেও, দেশের মানুষগুলো শুরু থেকেই ছিল পরাধীন। ক্ষমতার পালা বদলে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এলেও বরাবরই তারা জনতার প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। জনগণই যেখানে একটা দেশের মূল শক্তি, সেখানে জনগণকে উপেক্ষা করা হয়েছে বারবার।
১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হয়েছিল, ২০২৪ এর বিজয়ে স্বাধীন হয়েছে দেশের মানুষ। tiktok এ নাচানাচি করা, ফ্রী ফায়ার ও পাবজি খেলা একদল ছাত্র/ ছাত্রী, যাদের দেখে এতদিন পর্যন্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলে এসেছি, মনে মনে শঙ্কিত হয়েছি এদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কিন্তু কোনদিন চিন্তাও করতে পারিনি ৫ ইঞ্চি মোবাইল স্ক্রিনের শত্রুদের পরাস্ত করতে করতে বুকের ভেতর কি পরিমান আগুন নিয়ে এরা বড় হচ্ছে। শত অন্যায় অবিচার সহ্য করতে করতে যখন আমাদের জেনারেশন, মাথা পেতে নেয়াটাকে নিয়তি ধরে নিয়েছিল, তখনই খুদে খুদে এই বাচ্চারাই জোনাকি পোকার মত আলো দিয়ে আমাদের পথ দেখালো।
এত শক্তির উৎস যেখানে, আমি মনে করি সেখানে কোন অন্যায় অবিচার থাকতে পারে না। নব্য স্বাধীনতার রাতেই যে অরাজকতার সৃষ্টি হয়েছিল, তাতে আবার মনের ভিতর ভয় ঢুকে গিয়েছিল। কিন্তু পরদিনই নতুন করে দেখলাম ওদের। দেখলাম আর ভাবলাম, কেউ যদি পারে তাহলে এরাই পারবে।
সময় এসেছে দেশকে ঢেলে সাজানোর। বড় বড় ইমারত, ফ্লাইওভার, ব্রিজ আর টানেল করাই একটা দেশের উন্নতির মাপকাঠি হতে পারে না। আমার মনে হয় কাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের জনগণের মানসিকতার উন্নয়নটাও একটা বড় বিবেচ্য বিষয়। আর এটাই আমাদের সবচেয়ে দুর্বল দিক।
আমাদের অনেক জ্ঞানীগুণী লোকজন রয়েছেন। তারা নতুন বাংলাদেশ নতুন করে ঢেলে সাজাবে, সে বিশ্বাস আমাদের সবারই আছে। আমি শুধু একটা বিষয়েই বলব, সেটা হলো, চলুন আজ হতেই আমরা একটা ঘুষমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলি। আজ থেকে একটি টাকাও কাউকে ঘুষ দেবো না এবং কারো কাছ থেকে ঘুষ নেবো না। ঘুষ নেবার অপরাধে সমাজের একটা বিশেষ শ্রেণীকে বার বার দায়ী করা অন্যায়। দায়ী আমরা নিজেরাও, যারা বিভিন্ন প্রয়োজনে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য দিনের পর দিন বিভিন্ন মহলকে ঘুষ দিয়ে আসছি।
আসুন, অনৈতিক যেকোনো ধরনের টাকার লেনদেন আমরা পরিহার করি। হোটেলে খাবার খেয়ে ওয়েটারকে দশ টাকা বকশিশ দেওয়া বা আপনার গাড়িটা পার্কিং এ সাহায্য করার জন্য রাস্তায় দাঁড়ানো গার্ডকে বিশটি টাকা দেওয়াও অন্যায়। এভাবেই শুরু হয়। মনে রাখবেন প্রত্যেকটি কাজ করার জন্য নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের আলাদা করে মাস শেষে বেতন হয়। আপনার আমার দেওয়া সামান্য কিছু টাকা এদের অভ্যাস নষ্ট করে। আর এভাবেই শুরু হয়।
আমার মনে হয় নব্য গঠিত বাংলাদেশের প্রতিটি থানা লেভেলে অনৈতিক অর্থনৈতিক লেনদেনের বিষয়ে অভিযোগ কেন্দ্র থাকা উচিত। যেখানে যেকোনো অনৈতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন শাস্তি ব্যবস্থা হওয়া উচিত চাকরিচ্যুতি। কঠোর পদক্ষেপ না নিলে যে অভ্যাস গত ৫০ বছরে গড়ে উঠেছে সেটা পাঁচ দিনে নষ্ট করা যাবে না।
আর ছাত্র সমাজ বা যুবা সমাজের কথা নাইবা বললাম। আপনারা সমাজ পতিদের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছেন। এই ধারা অব্যাহত থাকলে, আমার মনে হয় না ভবিষ্যতে কেউ আপনাদের কাছে ঘুষ চাইবার সাহস করবে। আর এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় সুযোগ। এই সুযোগ কাজে লাগিয়েই ঘুষহীন রাষ্ট্রের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
আসুন, আপনি, আমি আমরা সবাই মিলে একটা সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলি। বিদেশি সিস্টেমের কথা না বলে আমরাই অনুকরণীয় সিস্টেম তৈরি করে বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দেই। আফগানিস্তান পারলে, শ্রীলঙ্কা পারলে, আমরাও পারবো। ভীত-সন্ত্রস্ত ১৬ কোটি জনগণের বুকে যে মশাল আপনারা জ্বালিয়েছেন, তার আলোয় আলোকিত করতে চাই পুরো দেশকে।
জন্মভূমিকে ভালোবেসে এত আনন্দ আগে কোনদিন পাইনি। তাই, আসুন সবাই মিলে দেশটিকে ভালোবাসি।