16/11/2024
☠️💀 জ্বীন জাতির ইতিহাস ☠️💀
🟥 জ্বীন শব্দের অর্থ: গোপন, আড়াল, অদৃশ্য, লুকায়িত।
إنما سمي الجن جنا لاجتنانهم واستتارهم عن العيون
জ্বীনকে জ্বীন নামে নামকরণ করা হয়েছে। কেননা তারা মানুষের দৃষ্টির আড়ালে থাকে। যেমন আল্লাহ তায়ালা তাদের সম্পর্কে বলেছেন
اِنَّہٗ یَرٰىکُمۡ ہُوَ وَ قَبِیۡلُہٗ مِنۡ حَیۡثُ لَا تَرَوۡنَہُمۡ ؕ
নিশ্চয় সে ও তার দলবল তোমাদেরকে দেখে যেখানে তোমরা তাদেরকে দেখ না। [ সুরা: আরাফ ২৭]
পবিত্র কুরআনে ৫০বার জীনের কথা উল্লেখ করা আছে এবং সুরা জীন নামে একটা সুরা ২৯তম পারায় রয়েছে। জীনকে অসিকার করা মানে হচ্ছে কুরআনের সুরা ও আয়াতকে অসিকার করা।
🟥 মানুষ সৃষ্টির পূর্বে দুনিয়ায় জীন জাতিরা বসবাস করত।
জিন জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে হজরত আদম আ. এর ২০০০ বছর পূর্বে। হাদিসের ভাষ্যমতে জিন জাতির আদি পিতা (আবুল জিন্নাত) সামুমকে আল্লাহ তায়ালা আগুনের শিখা দ্বারা তৈরি করার পর আল্লাহ সামুমকে বলেন তুমি কিছু কামনা কর। তখন সে বলে, আমার কামনা হল আমরা মানুষকে দেখব কিন্তু মানুষরা আমাদের দেখতে পারবে না। আর আমাদের বৃদ্ধরাও যেন যুবক হয় মৃত্যুর পূর্বে। আল্লাহ সামুমের দুটি ইচ্ছাই পূরণ করেন। জিনরা বৃদ্ধ বয়সে মৃত্যুর পূর্বে আবার যুবক হয়। জিনেরা আগুণের তৈরি হলেও এরা মূলত আগুন নয়। যেমন মানব সৃষ্টির মূল উপাদান কাদামাটি হলেও মানুষ কিন্তু প্রকৃত পক্ষে কাদামাটি নয়। ঠিক তেমনি জিনের পূর্ব পুরুষ আগুণের তৈরি হলেও জিন মানেই আগুন নয়। এর প্রমাণ মুসনাদ আহমদে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সা. একটি হাদিস। তিনি বলেছেন, শয়তান নামাজের মধ্যে আমার সাথে মুকাবেলা করতে আসে তখন আমি তার গলা টিপে দেই।
عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم " إِنَّ عِفْرِيتًا مِنَ الْجِنِّ تَفَلَّتَ الْبَارِحَةَ لِيَقْطَعَ عَلَىَّ صَلاَتِي، فَأَمْكَنَنِي اللَّهُ مِنْهُ، فَأَخَذْتُهُ، فَأَرَدْتُ أَنْ أَرْبُطَهُ عَلَى سَارِيَةٍ مِنْ سَوَارِي الْمَسْجِدِ حَتَّى تَنْظُرُوا إِلَيْهِ كُلُّكُمْ فَذَكَرْتُ دَعْوَةَ أَخِي سُلَيْمَانَ رَبِّ هَبْ لِي مُلْكًا لاَ يَنْبَغِي لأَحَدٍ مِنْ بَعْدِي. فَرَدَدْتُهُ خَاسِئًا ". عِفْرِيتٌ مُتَمَرِّدٌ مِنْ إِنْسٍ أَوْ جَانٍّ، مِثْلُ زِبْنِيَةٍ جَمَاعَتُهَا الزَّبَانِيَةُ.
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, একটি অবাধ্য জ্বিন এক রাতে আমার সালাতে বাধা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে আমার নিকট আসল। আল্লাহ্ আমাকে তার উপর ক্ষমতা প্রদান করলেন। আমি তাকে ধরলাম এবং মসজিদের একটি খুঁটির সাথে বেঁধে রাখার ইচ্ছে করলাম, যাতে তোমরা সবাই স্বচক্ষে তাকে দেখতে পাও। তখনই আমার ভাই সুলাইমান (‘আঃ)-এর এ দু’আটি আমার মনে পড়লো। হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমাকে এমন রাজ্য দান করুন, যা আমি ছাড়া আর কারও ভাগ্যে না জোটে- (সোয়াদ ৩৫)। অতঃপর আমি জ্বিনটিকে ব্যর্থ এবং লাঞ্ছিত করে ছেড়ে দিলাম। জ্বিন কিংবা মানুষের অত্যন্ত পিশাচ ব্যক্তিকে ইফ্রীত বলা হয়। ইফ্রীত ও ইফ্রীয়াতুন যিব্নিয়াতুন-এর মত এক বচন, যার বহুবচন যাবানিয়াতুন।
[সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩৪২৩]
জীনেরা দুনিয়ায় ফিতনা ফাসাদ এবং হত্যাকাণ্ড রক্তপাত ঝরাতে লাগলো। আল্লাহ তায়ালা রাগান্বিত হয়ে ফিরিশতাদের পাঠালেন জীনদের হত্যা করতে। অত:পর কিছু জীনেরা সমুদ্র, পাহাড় ও মরুভূমি পলায়ন করল। আর ফিরিশতারা ছোট একটা জিনকে নিজের সাথে করে নিয়ে যায়। আর শয়তান এই জীনেরই প্রকার।
★ আদম সৃষ্টির সৃষ্টির ইচ্ছা পোষণ
وَ اِذۡ قَالَ رَبُّکَ لِلۡمَلٰٓئِکَۃِ اِنِّیۡ جَاعِلٌ فِی الۡاَرۡضِ خَلِیۡفَۃً ؕ قَالُوۡۤا اَتَجۡعَلُ فِیۡہَا مَنۡ یُّفۡسِدُ فِیۡہَا وَ یَسۡفِکُ الدِّمَآءَ ۚ وَ نَحۡنُ نُسَبِّحُ بِحَمۡدِکَ وَ نُقَدِّسُ لَکَ ؕ قَالَ اِنِّیۡۤ اَعۡلَمُ مَا لَا تَعۡلَمُوۡنَ ﴿۳۰﴾
আর স্মরণ কর, যখন তোমার রব ফেরেশতাদেরকে বললেন, ‘নিশ্চয় আমি যমীনে একজন খলীফা সৃষ্টি করছি’, তারা বলল, ‘আপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন, যে তাতে ফাসাদ করবে এবং রক্ত প্রবাহিত করবে? আর আমরা তো আপনার প্রশংসায় তাসবীহ পাঠ করছি এবং আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। তিনি বললেন, নিশ্চয় আমি জানি যা তোমরা জান না। [বাকারা ৩০]
★ আদম সৃষ্টির পর জ্বীনকে সিজদার হুকুম
وَ اِذۡ قُلۡنَا لِلۡمَلٰٓئِکَۃِ اسۡجُدُوۡا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوۡۤا اِلَّاۤ اِبۡلِیۡسَ ؕ اَبٰی وَ اسۡتَکۡبَرَ ٭۫ وَ کَانَ مِنَ الۡکٰفِرِیۡنَ ﴿۳۴﴾
আর যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললাম, ‘তোমরা আদমকে সিজদা কর’। তখন তারা সিজদা করল, ইবলীস ছাড়া। সে অস্বীকার করল এবং অহঙ্কার করল। আর সে হল কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত। [বাকারা ৩৪]
قَالَ مَا مَنَعَکَ اَلَّا تَسۡجُدَ اِذۡ اَمَرۡتُکَ ؕ قَالَ اَنَا خَیۡرٌ مِّنۡہُ ۚ خَلَقۡتَنِیۡ مِنۡ نَّارٍ وَّ خَلَقۡتَہٗ مِنۡ طِیۡنٍ ﴿۱۲﴾
তিনি বললেন, ‘কিসে তোমাকে বাধা দিয়েছে যে, সিজদা করছ না, যখন আমি তোমাকে নির্দেশ দিয়েছি’? সে বলল, ‘আমি তার চেয়ে উত্তম। আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে সৃষ্টি করেছেন কাদামাটি থেকে’।
[আরাফ ১২]
قَالَ فَاخۡرُجۡ مِنۡہَا فَاِنَّکَ رَجِیۡمٌ ﴿ۚۖ۷۷﴾
তিনি বললেন, ‘তুমি এখান থেকে বের হয়ে যাও। কেননা নিশ্চয় তুমি বিতাড়িত।
وَّ اِنَّ عَلَیۡکَ لَعۡنَتِیۡۤ اِلٰی یَوۡمِ الدِّیۡنِ ﴿۷۸﴾
আর নিশ্চয় বিচার দিবস পর্যন্ত তোমার প্রতি আমার লা‘নত বলবৎ থাকবে।
قَالَ رَبِّ فَاَنۡظِرۡنِیۡۤ اِلٰی یَوۡمِ یُبۡعَثُوۡنَ ﴿۷۹﴾
সে বলল, ‘হে আমার রব, আমাকে সে দিন পর্যন্ত অবকাশ দিন যেদিন তারা পুনরুত্থিত হবে।’
قَالَ فَاِنَّکَ مِنَ الۡمُنۡظَرِیۡنَ ﴿ۙ۸۰﴾
তিনি বললেন, আচ্ছা তুমি অবকাশপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হলে-
اِلٰی یَوۡمِ الۡوَقۡتِ الۡمَعۡلُوۡمِ ﴿۸۱﴾
‘নির্ধারিত সময় উপস্থিত হওয়ার দিন পর্যন্ত।’
قَالَ فَبِعِزَّتِکَ لَاُغۡوِیَنَّہُمۡ اَجۡمَعِیۡنَ ﴿ۙ۸۲﴾
সে বলল, ‘আপনার ইজ্জতের কসম! আমি তাদের সকলকেই বিপথগামী করে ছাড়ব।’
اِلَّا عِبَادَکَ مِنۡہُمُ الۡمُخۡلَصِیۡنَ ﴿۸۳﴾
তাদের মধ্য থেকে আপনার একনিষ্ঠ বান্দারা ছাড়া।
[সোয়াদ ৭৭-৮৩]
🟥 জ্বীনের প্রকার
🎙️১। ইবলিস: এই জ্বীন আদম (আঃ) কে সিজদা করতে অস্বীকার করেছিল বলে কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। মুসলিমরা বিশ্বাস করে, এই জ্বীন জান্নাতে থাকাকালে আদম (আঃ) কে আল্লাহর আদেশ অমান্য করতে প্ররোচিত করেছিল এবং পৃথিবীতেও সে মানুষদেরকে পথভ্রষ্ট করে।
🎙️২। ওয়ালাহান:এরা হচ্ছে একপ্রকার শয়তান জ্বীন যারা মানুষকে ওযুর সময় ওয়াসওয়াসা দেয়।
ويقول الحسن البصري -رحمه الله-: "إنَّ شيطانًا يضحك بالنَّاس في الوضوء يقال له: الولهان".
عَنْ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : " إِنَّ لِلْوُضُوءِ شَيْطَانًا يُقَالُ لَهُ : الْوَلَهَانُ، فَاتَّقُوا وَسْوَاسَ الْمَاءِ ".
رواه الترمذي بسند ضعيف ورقم الحديث ٥٧
উবাই ইবনু কাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ওযূর সময় (সন্দেহপ্রবণতা সৃষ্টি করার জন্যই) একটি শয়তান রয়েছে। তার নাম ‘ওয়ালাহান’ বলে কথিত। অতএব ওযূর সময় পানি ব্যবহারে ওয়াসওয়াসা হতে সতর্ক থাক।
[সনদ দুর্বল, ইবনু মাজাহ (৪২১)
জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৫৭]
🎙️৩। খিনযিব: এই জ্বীন সালাতরত মানুষের মনে নানারকম চিন্তা ঢুকিয়ে সালাত থেকে অমনোযোগী ও উদাসীন করে তুলে।
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ خَلَفٍ الْبَاهِلِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الأَعْلَى، عَنْ سَعِيدٍ الْجُرَيْرِيِّ، عَنْ أَبِي، الْعَلاَءِ أَنَّ عُثْمَانَ بْنَ أَبِي الْعَاصِ، أَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ الشَّيْطَانَ قَدْ حَالَ بَيْنِي وَبَيْنَ صَلاَتِي وَقِرَاءَتِي يَلْبِسُهَا عَلَىَّ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " ذَاكَ شَيْطَانٌ يُقَالُ لَهُ خِنْزِبٌ فَإِذَا أَحْسَسْتَهُ فَتَعَوَّذْ بِاللَّهِ مِنْهُ وَاتْفِلْ عَلَى يَسَارِكَ ثَلاَثًا " . قَالَ فَفَعَلْتُ ذَلِكَ فَأَذْهَبَهُ اللَّهُ عَنِّي .
ইবনু আবুল আস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললেন-হে আল্লাহর রসূল! শাইতান আমার, আমার সালাত ও কিরাআতের মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এবং সব কিছুতে গোলমাল বাধিয়ে দেয়। তখন রসুলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: এটা এক (প্রকারের) শাইতান-যার নাম ‘খিনযিব’। যে সময় তুমি তার উপস্থিতি বুঝতে পারবে তখন (আঊযুবিল্লাহ পড়ে) তার অনিষ্ট হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়ে তিনবার তোমার বাম পাশে থু থু ফেলবে। তিনি বলেন, তারপরে আমি তা করলাম আর আল্লাহ আমার হতে তা দূর করে দিলেন।
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৬৩১
🎙️৪। ক্বারীন: ক্বারিন অর্থ হচ্ছে সংগী, প্রত্যেক মানুষের সাথেই শয়তান জ্বীন লেগে থাকে, সংগী হিসেবে। এরা সবসময় বান্দার অন্তরে খারাপ চিন্তা ঢুকিয়ে দিয়ে পাপ কাজ করতে উৎসাহিত করে।
وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ : «مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ اِلَّا وَقَدْ وُكِّلَ بِه قَرِينُه مِنْ الْجِنِّ وَقَرِينُه مِنَ الْمَلَائِكَةِ» قَالُوا : وَإِيَّاكَ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ : «وَإِيَّايَ، وَلَكِنَّ اللهَ أَعَانَنِيْ عَلَيْهِ فَأَسْلَمَ فَلَا يَأْمُرُنِي اِلَّا بِخَيْرٍ». رَوَاهُ مُسْلِمٌ
ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার সাথে তার একটি জিন্ (শায়ত্বন) ও একজন মালাক (ফেরেশতা) সঙ্গী হিসেবে নিযুক্ত করে দেয়া হয়নি। সহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনার সাথেও কি? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমার সাথেও, তবে আল্লাহ তা’আলা আমাকে জিন্ শাইত্বনের ব্যাপারে সাহায্য করেছেন। ফলে সে আমার অনুগত হয়েছে। ফলে সে কক্ষনও আমাকে কল্যাণকর কাজ ব্যতীত কোন পরামর্শ দেয় না।
সহীহ মুসলিম ২৮১৪, আহমাদ ৩৮০২, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬৪১৭, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ৬৫৮।
🎙️৫। নবী সা. বলেছেন,
الحِنُّ ثَلاثَةُ أَصْنافِ فَصِنف لَهُمْ أَجْنِحَةٌ يَطِيرُونَ بِها في الهَوَاءِ وَصِنْفٌ حَيَّاتٌ وَكِلابٌ وَصِنْفٌ يَحِلُّونَ وَيَظْعَنُونَ
জ্বীন তিন প্রকার-
১। যারা শূন্যে উড়ে বেড়ায়।
২। কিছু সাপ ও কুকুর ইত্যাদি রুপ পরিবর্তন করে।
৩। মানুষের কাছে আসে ও চলে যায়।
জ্ঞাতব্য যে, দৈত্য, দানব, অসুর, রাক্ষস, দেও-পরী, ভুত-প্রেত- প্রেতিনী, প্রেতাত্মা, পিশাচ---এসব কিছু জ্বিনেরই বিভিন্ন ভাষায় অথবা বিভিন্ন গুণের উপর এক একটা নাম ।
[ত্বাবারানীর কাবীর, হা/৫৭৩, হাকেম, হা/৩৭০২, সহীহুল জামে', হা/৩১১৪]
সাপ হচ্ছে জীনের বিকৃত রূপ
الحيَّاتُ مَسْخُ الجِنِّ صورَةً ، كَما مُسِخَتْ القِردَةُ و الخنازِيرُ من بَنِي إسرائِيلَ
صحيح الجامع 3203 ابن أبي شيبة (19908 )، وابن حبان (5640 )، والطبراني في ((المعجم الأوسط)) (4269 )، وأخرجه أحمد (3255 )
কালো কুকুর হচ্ছে শয়তানের অন্তর্ভুক্ত
قُلتُ: يا أبا ذَرٍّ، ما بالُ الكَلْبِ الأسْوَدِ مِنَ الكَلْبِ الأحْمَرِ مِنَ الكَلْبِ الأصْفَرِ؟ قالَ: يا ابْنَ أخِي، سَأَلْتُ رَسولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عليه وسلَّمَ كما سَأَلْتَنِي فقالَ: الكَلْبُ الأسْوَدُ شيطانٌ. (مسلم 510)
🟥 আরবদের ভাষায় জ্বিনদের নাম ও প্রকারভেদ
ইবনে আব্দিল বার্র বলেছেন, আহলে কালাম ও ভাষাবিদদের নিকট জ্বিন জাতির বিভিন্ন প্রকারভেদ আছে। যেমন -
أسماء الجن في لغة العرب وأصنافهم
قال ابن عبد البر : " الجن عند أهل الكلام والعلم باللسان على مراتب :
1- فإذا ذكروا الجن خالصاً قالوا : جنّي .
2- فإذا أرادوا أنه مما يسكن مع الناس ، قالوا : عامر ، والجمع : عمّار .
3- فإن كان مما يعرض للصبيان قالوا : أرواح .
4- فإن خبث وتعرض ، قالوا : شيطان .
5- فإن زاد على ذلك ، فهو مارد .
6- فإن زاد على ذلك وقوي أمره ، قالوا : عفريت ، والجمع : عفاريت
[ آكام المرجان في أحكام الجان : ص7 ]
১। কেবল জ্বিনকে উল্লেখ করলে বলে, জিন্নী।
২। যে জ্বিন মাষদের সাথে বসবাস করে, তার কথা বললে বলে, আমের, বহুবচনে উম্মার।
৩। যে শিশুকে উত্যক্ত করে তার কথা বললে বলে আরওয়াহ।
৪ । খবীস আকারে উত্যক্ত করলে তাকে বলে, শয়তান।
৫। এর চাইতে বেশি ক্ষতি করলে বলে, মারেদ।
৬। এর চাইতেও বেশি দুর্ধর্ষ হলে বলে, ইফরীত; বহুবচনে আফারীত।
[ آكام المرجان في أحكام الجان : ص7 ]
🟥 জীনের আকৃতি কেমন
পবিত্র কোরআন ও হাদিসে জিনের আকৃতিবিষয়ক যেসব বর্ণনা এসেছে, তা মৌলিকভাবে তিন প্রকার।
1. দৃশ্যমান : অর্থাৎ জিনের প্রকৃত আকৃতি মানব চোখে অবলোকনযোগ্য। (তাবরানি : ৫৭৩)
2. অদৃশ্যমান : অর্থাৎ জিনের আকৃতিবিহীন শুধু শারীরিক উপস্থিতি অনুভূত হওয়া। (সুরা : আরাফ, আয়াত : ২৩)
3. বিকৃত আকৃতি : মানুষ, পশু-পাখি কিংবা বৃক্ষলতার আকৃতি ধারণ করা। (তাবরানি : ৪০১২)
🟥 জীনরা কী খায়
মানুষসহ অন্য প্রাণীরা যেমন খাওয়াদাওয়া করে, তদ্রূপ জিনরাও খাওয়াদাওয়াসহ অন্য প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণ করে থাকে। আল্লাহর নামে জবাইকৃত পশুর হাড়-হাড্ডিই হলো জিনের খাবার।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ، قَالَ قَدِمَ وَفْدُ الْجِنِّ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالُوا يَا مُحَمَّدُ انْهَ أُمَّتَكَ أَنْ يَسْتَنْجُوا بِعَظْمٍ أَوْ رَوْثَةٍ أَوْ حُمَمَةٍ فَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى جَعَلَ لَنَا فِيهَا رِزْقًا . قَالَ فَنَهَى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَنْ ذَلِكَ .
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, জিনদের একটি প্রতিনিধি দল নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট এসে বলল, হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আপনার উম্মাতকে হাড়, গোবর অথবা কয়লা দ্বারা ইস্তিন্জা করতে নিষেধ করে দিন। কারণ মহান আল্লাহ ওগুলোর মধ্যে আমাদের রিযিক নিহিত রেখেছেন। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ওগুলো দিয়ে ইস্তিন্জা করতে নিষেধ করেন।
[সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৩৯]
عَنْ عَامِرٍ، قَالَ سَأَلْتُ عَلْقَمَةَ هَلْ كَانَ ابْنُ مَسْعُودٍ شَهِدَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لَيْلَةَ الْجِنِّ قَالَ فَقَالَ عَلْقَمَةُ أَنَا سَأَلْتُ ابْنَ مَسْعُودٍ فَقُلْتُ هَلْ شَهِدَ أَحَدٌ مِنْكُمْ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لَيْلَةَ الْجِنِّ قَالَ لاَ وَلَكِنَّا كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ذَاتَ لَيْلَةٍ فَفَقَدْنَاهُ فَالْتَمَسْنَاهُ فِي الأَوْدِيَةِ وَالشِّعَابِ فَقُلْنَا اسْتُطِيرَ أَوِ اغْتِيلَ - قَالَ - فَبِتْنَا بِشَرِّ لَيْلَةٍ بَاتَ بِهَا قَوْمٌ فَلَمَّا أَصْبَحْنَا إِذَا هُوَ جَاءٍ مِنْ قِبَلِ حِرَاءٍ - قَالَ - فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ فَقَدْنَاكَ فَطَلَبْنَاكَ فَلَمْ نَجِدْكَ فَبِتْنَا بِشَرِّ لَيْلَةٍ بَاتَ بِهَا قَوْمٌ . فَقَالَ " أَتَانِي دَاعِي الْجِنِّ فَذَهَبْتُ مَعَهُ فَقَرَأْتُ عَلَيْهِمُ الْقُرْآنَ " . قَالَ فَانْطَلَقَ بِنَا فَأَرَانَا آثَارَهُمْ وَآثَارَ نِيرَانِهِمْ وَسَأَلُوهُ الزَّادَ فَقَالَ " لَكُمْ كُلُّ عَظْمٍ ذُكِرَ اسْمُ اللَّهِ عَلَيْهِ يَقَعُ فِي أَيْدِيكُمْ أَوْفَرَ مَا يَكُونُ لَحْمًا وَكُلُّ بَعَرَةٍ عَلَفٌ لِدَوَابِّكُمْ " . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " فَلاَ تَسْتَنْجُوا بِهِمَا فَإِنَّهُمَا طَعَامُ إِخْوَانِكُمْ " .
‘আমির (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
আমি ‘আলকামাকে প্রশ্ন করলাম, জিনদের সাথে সাক্ষাতের রাতে ইবনু মাস’উদ (রাঃ) কি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ছিলেন? রাবী বলেন, ‘আলকামাহ (রাঃ) বললেন, আমি ইবনু মাস’উদ (রাঃ) -কে জিজ্ঞেস করলাম, জিনদের সাথে সাক্ষাতের রাতে আপনাদের মধ্যে কেউ কি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে ছিলেন? তিনি উত্তরে বললেনঃ না, তবে আমরা এক রাতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে ছিলাম। আমরা তাঁকে হারিয়ে ফেললাম। আমরা পাহাড়ের উপত্যকায় ও গিরিপথে তাঁকে খুঁজলাম কিন্তু পেলাম না। আমরা মনে করলাম, হয় জিনেরা তাঁকে উড়িয়ে নিয়ে গেছে অথবা কেউ তাঁকে গোপনে মেরে ফেলেছে। রাবী [ইবনু মাস’উদ (রাঃ) ] বলেন, এ রাতটি আমাদের জন্য এতই দুর্ভাগ্যজনক ছিল যে, মনে হয় কোন জাতির উপর এমন রাত আসেনি। যখন ভোর হলো, আমরা তাঁকে হেরা পর্বতের দিক থেকে আসতে দেখলাম। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! আমরা আপনাকে হারিয়ে ফেললাম এবং অনেক খোঁজাখুঁজি করেও আপনার কোন সন্ধান পেলাম না। তাই সারারাত আমরা চরম দুশ্চিন্তায় কাটিয়েছি।মনে হয় এরূপ দুর্ভাগ্যজনক রাত কোন জাতির উপর আসেনি। তিনি বলেনঃ জিনদের পক্ষ থেকে এক আহ্বানকারী আমাকে নিতে আসে। আমি তার সাথে গেলাম এবং তাদেরকে কুরআন পাঠ করে শুনালাম। রাবী (ইবনু মাস’উদ (রাঃ) ) বলেন, তিনি আমাদেরকে সাথে করে নিয়ে গিয়ে তাদের বিভিন্ন নিদর্শন ও আগুনের চিহ্ন দেখালেন। তারা তাঁর কাছে খাদ্যের জন্য প্রার্থনা করল। তিনি বললেন, যে জন্তু আল্লাহর নামে যবেহ করা হয়েছে তার হাড় তোমাদের খাদ্য। তোমাদের হাতের স্পর্শে তা পুনরায় গোশতে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। উটের বিষ্ঠা তোমাদের পশুর খাদ্য।
অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (আমাদের) বললেনঃ এ দু’টো জিনিস দিয়ে শৌচকার্য করো না। কেননা এ দু’টো তোমাদের ভাইদের (জিনদের) খাদ্য।
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৮৯৩
🟥 জিনদের বিয়েশাদি এবং সন্তান প্রজনন
মহান আল্লাহ নিজ প্রজ্ঞাগুণে প্রতিটি বস্তু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। তাই জিন জাতির মধ্যেও রয়েছে নর-নারীর জোড়া। মানুষের মতো তাদেরও রয়েছে বিয়েশাদি ও বাচ্চা প্রজননের নির্ধারিত প্রক্রিয়া। পবিত্র কোরআনে জান্নাতি রমণীদের কুমারীত্বের বর্ণনায় এসেছে যে তাদের কোনো মানুষ বা জিন স্পর্শ করেনি। (সুরা : আর রহমান, আয়াত : ৫৬)
🟥 জীনদের আস্তানা বা ঘাটি সমূহ
عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِنَّ هَذِهِ الْحُشُوشَ مُحْتَضَرَةٌ فَإِذَا أَتَى أَحَدُكُمُ الْخَلاَءَ فَلْيَقُلْ أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ " .
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সাধারণতঃ পায়খানার স্থানে শয়তান এসে থাকে। সুতরাং তোমাদের কেউ পায়খানায় প্রবেশকালে যেন বলেঃ আমি আল্লাহ্র কাছে শয়তান ও যাবতীয় অপবিত্রতা হতে আশ্রয় চাইছি। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৬)
সাদ বিন মুয়াজ রা. কে প্রস্রাবের সময় জীনেরা হত্যা করল
قال ابن سعد في "الطبقات الكبرى" (7/ 274):
" أَنَّ سَعْدَ بْنَ عُبَادَةَ بَالَ قَائِمًا ، فَلَمَّا رَجَعَ قَالَ لأَصْحَابِهِ: إِنِّي لأَجِدُ دَبِيبًا ، فَمَاتَ ، فَسَمِعُوا الْجِنَّ تَقُولُ: قَتَلْنَا سَيِّدَ الْخَزْرَجِ سَعْدَ بن عبادة
رميناه بسهمين فلم نخط فؤاده " انتهى .
وقال الأَصْمَعِيُّ: " حَدَّثَنَا سَلَمَةُ بنُ بِلاَلٍ، عَنْ أَبِي رَجَاءَ قَالَ: قُتِلَ سَعْدُ بنُ عُبَادَةَ بِالشَّامِ ، رَمَتْهُ الجِنُّ بِحوْرَانَ." انتهى من "سير أعلام النبلاء" (3/ 171) .
وقال ابن الأثير رحمه الله :
" ولم يختلفوا أَنَّهُ وجد ميتًا عَلَى مغتسله، وقد اخضر جسده، ولم يشعروا بموته بالمدينة حتى سمعوا قائلًا يقول من بئر، ولا يرون أحدًا:
قتلنا سيد الخزرج سعد بْن عبادة
رميناه بسهمين فلم نخط فؤاده
فلما سمع الغلمان ذلك ذعروا، فحفظ ذلك اليوم ، فوجوده اليوم الذي مات فيه سعد بالشام " انتهى من "أسد الغابة" (2/ 441) .
وينظر : "الاستيعاب" (2/ 599) ، "تاريخ دمشق" (20/ 268) .
১. বায়তুল খালা ২. পশুঘর ৩. নোংরা নালা, জলাশয় ৪. প্রাক্তন বৃক্ষ ৫. বৃহৎ ছায়াযুক্ত বৃক্ষ ৬. বড় গাছ (এক প্রকারের বৃক্ষ যাতে লাল বর্ণের দড়ির ন্যায় অতি সরু মূল বের হয়, পাঞ্জাবে একে বলা হয় জামন বৃক্ষ) ৮. আনার বৃক্ষ ৯. ধ্বংসস্ত‚প ও বিরানভূমি ১০. নদী-নালা ১১. শ্বশান ও বিরান এলাকা ১২. গহীন বন জঙ্গল ১৩. সামুদ্রিক দ্বীপ ১৪. পর্বত ১৫. দুই পর্বতের মধ্যবর্তী উপত্যকা ১৬. অনাবাদী গৃহ ১৭. যেসব গৃহ প্রায় বন্ধ থাকে ১৮. বিভিন্ন স্থলজ সৃষ্টি যেমন সাপ-ইদুর প্রভৃতির গর্তে ১৯. কাফেরদের পূজার স্থানসমূহ (মন্দির, গির্জা প্রভৃতি) ২০. আবাদি ভূমির মধ্যবর্তী খালি স্থানসমূহ ২১. পানি বা জলাশয় ২২. গন্ধ নোংরা পানির ঝিল ২৩. ভূমির নিম্নাঞ্চল এবং ২৪. গ্রামীণ এলাকায়।
✍️ M***i Jubayer Ahmad.....