29/09/2023
তামিম ছারা বিশ্বাকাপ হবে ফাকা। ম্যানেজমেন্ট থেকে তামিমকে ৯ টা ম্যাচের মধ্যে ১ টা ম্যাচে(আফগানদের বিপক্ষে) মিডল অর্ডারে ব্যাট করা অথবা রেস্টের প্রস্তাব দিয়েছিলো। তিনি মানতে পারেননি এবং তামিমের ভাষ্যমতে, তিনি মেজাজ হারিয়ে ফেলেন এবং বিশ্বকাপ দল থেকে তাকে বাদ দিতে বলেন। বিষয়টা তামিমের ইগোতে আঘাত করেছে পরিষ্কার।
তামিম সিদ্ধান্তটা মানতে চান নি, ইটস ফাইন। তবুও একজন দর্শক হিসেবে মনে হয়, তামিম কি ম্যানেজমেন্টের এই প্রস্তাবটা রাখতে পারতেন কিনা? বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ আফগানিস্তানের সাথে। এবং তাদের সাথে তামিম ইকবাল সর্বশেষ যে কয়টি ম্যাচ খেলেছেন তার প্রত্যেকটিতে ব্যর্থ হয়েছেন, বিশেষ করে তাদের ওপেনিং বোলার ফয়জাল ফারুকীর বিপক্ষে তামিম প্রত্যেকবার পরাস্ত হয়েছেন। এখন, ম্যানেজমেন্ট থেকে তাকে দেয়া প্রস্তাবটা, তামিমের বিশ্বকাপ যাত্রায় বাধা দেয়ার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে নাকি একটা ট্যাকটিক্যাল পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই প্রস্তাব দেয়া হয়েছে সেটা কোনভাবেই পরিষ্কার না।
একই সাথে এটাও মাথায় রাখা জরুরি, সদ্য এশিয়া কাপে বাংলাদেশ হঠাৎ করে মেহেদী মিরাজকে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওপেন করিয়েও বড় সাফল্য পেয়েছে। সেই বিবেচনায়, ম্যানেজমেন্টের এই সিদ্ধান্তটা মেনে নিলে কি খুব ক্ষতি হতো তামিমের? আমি আবারও বলছি, তামিম যেহেতু চাননি, এটা একান্তই তার ব্যক্তি স্বাধীনতা। তবে তামিমের ভাষ্যমতেই, ম্যানেজমেন্ট কিন্তু তাকে বলেনি যে নয়টা ম্যাচেই মিডল ওর্ডারে খেলতে হবে।
২০১৯ বিশ্বকাপে সাকিব আল হাসান তিন নম্বর পজিশনে ব্যাট করে দারুন পারফর্ম করেছেন। অথচ এরপরে কিন্তু ঠিকই তিনি শান্তকে তিন নম্বর পজিশনটা ছেড়ে দিয়েছেন এবং প্রয়োজন অনুসারে কখনো চারে, কখনো পাঁচে কখনো আরো নিচেও নামতে দ্বিধা করেননি। সাকিবের কথা বাদই দিলাম। এই এশিয়া কাপেও বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখলে পরিষ্কার বোঝা যায়, এই দলের ব্যাটিং লাইন আপ অনেক ফ্লেক্সিবল রাখার দিকে ম্যানেজমেন্টের ঝোক আছে। তাওহীদ হৃদয়, শান্ত, মুশফিক প্রত্যেকটা ব্যাটসম্যানকেই পরিস্থিতি বিবেচনায় নিজস্ব পজিশন থেকে ভিন্ন পজিশনে খেলতে হয়েছে। বিগত কয়েকটা ম্যাচে যদি আমরা স্কোর বোর্ড ফলো করি, সেটাই চোখে পরে।
দেশ ছাড়িয়ে যদি বাইরেও তাকাই, ভারতের প্রবাদ প্রতিম ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার কখনো চারে বা তিনে ব্যাটিং করেছেন, আবার ওপেনিং করেছেন। বিরেন্দর শেবাগ দলে আসার পর, গাংগুলি, শেবাগ, টেন্ডুলকার বা দ্রাবিড় প্রচুর ইন্টারচেঞ্জ করেছেন ব্যাটিং পজিশন নিয়ে। এমনকি, সম্প্রতি গম্ভীরও বলেছেন যে, ধোনী যখন ভারতীয় ক্রিকেটে আসেন, তার মধ্যে তিনে নিজের পজিশন সেট করার সকল সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু দলের প্রয়োজনে নিজেকে ফিনিশার রোলে নিয়ে গেছেন। যে কারণে তার নিজস্ব ক্রিকেট ক্যারিয়ারে খুব বেশি রান করার সুযোগ পান নাই।
মূল ব্যাপার এটাই। যেহেতু কি কি ঘটেছে তার সবকিছু জানাও সম্ভব না। তাই তামিম যে ঘটনাটুকু প্রকাশ করলেন তার ওপর ভিত্তি করে বললে, এটিই মনে হয় যে তিনি নিজের ইগোর সাথে কম্প্রোমাইজ করতে চাননি। অথবা তার মনে হয়েছে, ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্তটা যতটা না ট্যাকটিকাল, তার চাইতে বেশি- তাকে ঘিরে নতুন কোন ষড়যন্ত্র। এখানেই খানিকটা আফসোস হয়। তামিম কি আরেকটু পজেটিভ থাকতে পারতেন? অথবা রেগে না গিয়ে তিনি কি ফ্লেক্সিবল হয়ে এই ম্যাচটা তে রেস্ট নেয়া অথবা ব্যাটিং পজিশন চেঞ্জ করাটা মেনে নিতে পারতেন? এমনকি এই ম্যাচ না খেললেও আরো আটটা ম্যাচে তিনি থাকতেন।
সবচাইতে আফসোসটা এখানেই লাগছে যে, ফুল ফিট না হলেও, পর্যাপ্ত পরিমাণ সক্ষমতা তার ছিল বলেই মনে হচ্ছে। যেখানে আমাদের ওপেনিংয়ে ভয়াবহ দুর্দশা, সেখানে তামিমকে আমাদের অবশ্যই প্রয়োজন ছিল। তামিম নিজেও বলেছেন যে এই একই প্রস্তাব যদি তাকে আরেকটু ভিন্নভাবে কেউ দিত, তাহলে হয়তো তিনি এভাবে রেগে যেতেন না। এই জায়গায় নিশ্চয়ই বোর্ড খুব ভালো রোলপ্লে করতে পারতো। বিগত কয়েক মাসের বিভিন্ন ঘটনায় তামিম ইকবাল মানসিকভাবেও নানা ঘটনার ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলেন। সেই জায়গায় তাকে আরেকটু ওয়েলকামিং পরিবেশ দেয়াটা বোর্ডের অবশ্যই দায়িত্ব ছিল। সর্বশেষ যেটা বলতেই হয়, একটা মাত্র ম্যাচের একটা মাত্র সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের পুরো বিশ্বকাপ যাত্রায় এত বড় পরিবর্তন হওয়াটা সাধারণ দর্শক হিসেবে অনেক বেশি খারাপ লাগার জন্ম দেয়। তামিম কি এখানে আরেকটু সেনসিবল হতে পারতেন? কোচ কি তাকে আরো ভালোভাবে এপ্রোচ করতে পারতো? অথবা বোর্ডের আসলে কতখানি দায়িত্ব ছিলো? এখন, কার দায় কতোটা এইসব হিসেব করার বদলে সাধারণ দর্শক হিসেবে শুধু মন খারাপটাই করতে পারি আমরা।
Shakib Al Hasan Tamim Iqbal Team Bangladesh