রুদ্রিকা বেদী - Rudrika Bedi

রুদ্রিকা বেদী - Rudrika Bedi ভালোবাসি লিখতে, ভালোবাসি প্রিয়কে, ভালোবাসি কল্পনাকে, সাদা কালো জীবন হোক রং এর ক্যানভাস,যেখানে লিখিবো রুদ্রির রুপকথা
~রুদ্রিকা বেদী

 #শুধুই_তুমি #লেখনীতে_রুদ্রিকা_বেদী. #পর্ব_০৫"অরু স্যার, তোকে বলছে।" আয়শা পাশ থেকে ফিসফিস করে বলল। কথাটা অরুর কানে যাওয...
30/01/2025

#শুধুই_তুমি
#লেখনীতে_রুদ্রিকা_বেদী.
#পর্ব_০৫
"অরু স্যার, তোকে বলছে।" আয়শা পাশ থেকে ফিসফিস করে বলল। কথাটা অরুর কানে যাওয়া মাত্র সোজা হয়ে বসল কিন্তু রুদ্রের দিকে তাকালো না।রুদ্র ব্যাপারটা দেখে বাঁকা হাসল তারপর অরুর একদম সামনে এসে দাঁড়ালো। অরু তখনও চুপ চাপ দৃষ্টি অন্যদিকে নিক্ষেপ করে রইল। রুদ্র নিজের শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো,

"উঠো!" অরু সাথে সাথে উঠে দাঁড়ালো। মুখ তুলে রুদ্রের দিকে তাকালো। রুদ্র শান্ত এবং স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। এবং পুরো ক্লাস ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। রুদ্র আবার বলে উঠল,

"তোমার নাম যেন কী?" অরু কিছুক্ষণ চুপ থেকে স্লান কন্ঠে বলল,

"অরুণিমা ইফতি!" ছোট করে উত্তর দিয়ে আবার নিচে তাকালো অরু। কেন জানি আজ ওর কিছুই ভালো লাগছে না। তার পছন্দের রুদ্র স্যার ভালো ভাবে কথা বলার পরেও সে সেটা হজম করতে পারছে না। রুদ্র নামটা শুনে মাথাটা হালকা নাড়িয়ে নিজের হাস্কি কন্ঠে বলল,

"সো অরুণিমা,ইউ উইল বি দ্যা CR!"রুদ্রের দেওয়া আদেশ অরুর কানে আসতেই অরু মাথা তুলে বিস্ফারিত চোখে তাকালো রুদ্রের মুখের পানে। রুদ্রের মুখে এক তৃপ্তির হাসি। চোখের দৃষ্টি অরুর উপর। অরু আমতা আমতা করে বলল,

"স্যার! আ..আমি,আমি?"

"হ্যাঁ! তুমি! তুমি মেয়েদের পক্ষ থেকে এবং ছেলেদের পক্ষ থেকে,,"বলেই পুরো ক্লাসের সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে একজন ছেলের উপর দৃষ্টি স্থির করল। তার পর চোখের ইশারায় তাকে উঠে দাঁড়াতে বলা হলো। অরুসহ পুরো ক্লাস ছেলেটির দিকে তাকালো। ছেলেটি হাসি হাসি মুখে উঠে দাঁড়ালো। রুদ্র তাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

"তোমার নাম কি?"

"স্যার! আমার নাম রাশেদ খান।" উৎসাহিত কন্ঠে প্রায় চেঁচিয়ে উঠলো। তার চোখে উৎকন্ঠা স্পষ্ট। রুদ্র তাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

"তুমি হবে ছেলেদের পক্ষের CR।" কথাটা রাশেদের কানে যাওয়া মাত্রই রাশেদ প্রায় লাফিয়ে উঠল। তার কান্ড দেখে পুরো ক্লাস হেসে ফেললো সাথে অরুও। রুদ্র তাকিয়ে থাকল আগের মতো করেই। রাশেদ নিজেকে শান্ত করে উৎসাহিত কন্ঠে বলল,

"ওকে স্যার!" রুদ্র ব্যাপারটা বুঝেছে এমন ভান করে মাথা নাড়াল তারপর নিজের জায়গায় ফিরে যাচ্ছিলো তখনই অরু আস্তে করে স্যারকে থাকল। ইতিমধ্যে ক্লাসে আবারও হইচই পরে গিয়েছে। রুদ্র অরুর দিকে তাকালো তারপর ওর দিকে এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। অরু একটু হেসে আমতা আমতা করে বলল,

"স্যার,আমি CR হতে চাই না। আমি এতো বড় দায়িত্ব পালন করতে পারবনা। প্লীজ আপনি অন্য কাউকে দেন।"

"এই জন্যই তো তোমাকে দিচ্ছি। আমি জানি তুমি দায়িত্ব জ্ঞানশূন্য একটা মেয়ে। সেই কারণে তোমাকে আমি CR দিচ্ছি যাতে তুমি একটু দায়িত্ব সম্পর্কে জানো এবং সময় মতো ক্লাসে উপস্থিত হতে পারো।"

নিজের রাশ ভারি কন্ঠে অরুর আবেদন উপেক্ষা করে ভাবলেশহীন ভাবে বলল রুদ্র। অরু রুদ্রের বলা কথাগুলো শুনে রাগে অপমানে লাল হয়ে উঠলো। রুদ্র নিজের অবস্থানে প্রস্থান করল। অরু ওর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইল। ক্লাসের বাকিরা রুদ্রের শোনানো কথা না শুনলেও পাশে বসে থাকা আয়শা আর সিয়ামের কানে কথাগুলো ঠিকই গিয়েছে। সিয়ামের কানে কথা গুলো তীরের মতো লাগলো। অরু বসে পড়ল। আয়শা পাশ থেকে ওর হাত ধরে কাঁধে মাথা রেখে গলা কিছুটা নামিয়ে বলল,
"বান্ধবী রাগ করিস না। স্যার মানুষ আর কিইবা এক্সপেক্ট করতে পারি।"

অরু এখনো সামনে তাকিয়ে আছে। আয়শার কথা যেন ওর কানেই গেলো না। অরু কেমন অন্যমনস্ক হয় ঝিম ধরা কন্ঠে বলল,

"ঠিকই কথা শুনিয়ে দিলো।" আয়শা কি বলবে বুঝতে উঠতে পারল না। ও চুপ করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকল। সিয়ামও তাকিয়ে আছে। ওর মনে অরুর জন্য খারাপ লাগা আর রুদ্রের উপর মেজাজ গরম হওয়া দুই অনুভূতি কাজ করছে।

"ওকে, সাইলেন্ট স্টুডেন্ট'স, আমি.......

হঠাৎ রুদ্রের ফোন বেজে উঠল। পুরো ক্লাস এক মুহুর্তের জন্য চুপ। রুদ্র প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বের স্ক্রিনে দিকে তাকালো। ফোনের স্ক্রিনে 'আপি' নামটা জ্বলজ্বল করছে। রুদ্র অবাক হলো। বিথী তো এই টাইমে ফোন করে না। রুদ্র আর কিছু না ভেবে ফোন রিসিভ করল,

"হ্যালো ভাইয়া! তাড়াতাড়ি বাড়িতে আয় মা ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ডাক্তার আংকেল এসেছেন,তুই তাড়াতাড়ি আয়।"

রুদ্রর কিছু বলার আগেই ফোনের অপর পাশ থেকে বিথী ভয়ার্ত কন্ঠে কথাগুলো বলে উঠলো। রুদ্র স্তব্ধ হয়ে গেল। অপর পাশে বিথী ইতিমধ্যে ফোন কেটে দিয়েছে। ক্লাসে হইচই পড়ে গেল। তাতে রুদ্র হুঁশ ফিরল। রুদ্র এক মুহুর্ত দেরি না করে ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে গেল। ক্লাসের প্রত্যেকটা স্টুডেন্ট বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইল। অরু আয়শা দুইজন দুইজনের মুখের পানে চাইল। অরুর যতই রাগ থাকুক লোকটার উপর, এইরকম হন্তদন্ত হয়ে বেড়িয়ে যাওয়া মোটেও ভালো লাগলো না। কোনো অঘটন ঘটল নাকি। কে জানে? সিয়াম একটু হাঁপ ছাড়ল।

রুদ্রের ক্লাস শেষ। ক্লাসের বাকি সময় রুদ্র আর আসেনি। ওর জায়গা আরেক জন প্রফেসর এসে ওর ক্লাস হ্যান্ডেল করেছে। তিনি রুদ্রের ব্যাপারে তেমন কিছু বলতে পারি নি শুধু বলেছে কোনো একটা সমস্যা হয়েছে যার জন্য চলে গিয়েছে। পরবর্তী ক্লাস শুরু হতে এখনো এক ঘন্টা বাকি। একটা ব্রেক পাওয়া গেছে। তিনজনে ক্লাস থেকে বেরিয়ে ভার্সিটির বটতলা যেয়ে বসেছে। অরু একবার তানিয়াকে ফোন দিয়েছে। তানিয়া ফোন ধরেনি, তানিয়া ক্লাসে রয়েছে। সবার মুড তেমন একটা ভালো না। আয়শা মাঝেমাঝে পরিবেশ ভালো করার জন্য মজার মজার কথা বলে উঠছে কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হচ্ছে না উল্টে সিয়াম ওর দিকে আড়চোখে গিলে ফেলার দৃষ্টিতে তাকিয়েছে। যার জন্য আয়শাও চুপ হয়ে বসে রয়েছে। অরু এইসবের কোনো কিছুতেই পাত্তা দিলো না। ওর মনে শুধু একটা কথা ঘুরছে রুদ্র হঠাৎ ওমন ভাবে বেরিয়ে গেল কেন? কী সমস্যা হতে পারে? সিয়াম ওর দিকে তাকিয়ে ছিল। অরুকে হারিয়ে থাকতে দেখে বলল,

"এখনো রাগ করে আছো স্যারের কথায়?" আয়শাও আগ্রহসহ দৃষ্টিতে অরুর দিকে তাকালো। সিয়ামের কথায় অরুর চটকা ভেঙ্গে গেল ,সে সিয়াম আর আয়শার পানে চাইল, তারপর হাসার চেষ্টা করে বলল,

"না তো! স্যারের কথায় আমি বিন্দু মাত্র রাগ করিনি। স্যার তো কোনো ভুল কথা বলেননি, যার জন্য রাগ করবো।"

"হ্যাঁ মানছি স্যার ভুল কথা বলেননি কিন্তু স্যার ওই ভাবে না বলেও তো পারতেন, ভুল তো যে কারো হতে পারে,উনি নিজে কি বিন্দু মাত্র ভুল করেন না?" উত্তেজিত হয় পড়ল সিয়াম।

"উনি সেটা বলতে চাননি। পরপর দুদিন লেট করে আসলে যে কারো মনে হতে পারে সামনের ব্যক্তি দায়িত্ব জ্ঞানশূন্য। আমারও মনে হতো। এইটা ন্যাচেরল। উনি আমার শিক্ষক উনার কথায় রাগ করলে তো কিছু শিখতে পারব না।" অরুর বলা কথাগুলো সিয়ামের মনে অরুর জন্য আরো অনুভূতি শক্ত করে দিল। কি সরল সহজ মেয়ে। কি সুন্দর ভাবে মানুষের স্বভাবকে বোঝে। ওর চোখে এক তৃপ্তি খেলে গেল। যে করেই হোক এই মেয়েকে জয় করতে হবে তার। সিয়াম বলল,

"তুমি এখনও স্যারের পক্ষে কথা বলছ?"

"এখানে তো কারো পক্ষ হয়ে কথা বলার বিষয় না। আমি শুধু বলছি স্যার যা করেছেন ঠিক করেছেন হয়তো আমার জন্য সেটা কিছুক্ষণের জন্য খারাপ লেগেছিল কিন্তু এখন আমি ঠিক আছি এবং পরবর্তীতে নিজেকে আরো দায়িত্বশীল করে তোলার চেষ্টা করবো।" হেসে কথা গুলো বলল অরু। অরুর কথা শুনে সিয়াম কিছু বলতে যাবে তার আগেই আয়শা উঠে দাঁড়িয়ে বলা শুরু করল,

"আমি অরুর সাথে একদম একমত। স্যারের দিক থেকে স্যার একদম ঠিক আছেন।" বলেই বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলো আয়শা। সিয়াম উঠে দাঁড়ালো, আয়শার মাথা একটা চাটি মেরে ভ্রু জোড়া উঁচু করে বলল,

"তুমি তো স্যারের সাইড নিবেই, তোমার প্রিয় ব্যক্তি বলে কথা।" সিয়ামের কথা শুনে মুখগুলো ফুলিয়ে উঠল আয়শার, সে মুখ বাঁকিয়ে বললো,

"মোটেও না সিমুর বাচ্চা, (সিয়ামকে মজা করে সিমু বলা হয়) যেটা ঠিক সেটাকে ঠিক বলেছি। তোর কি অনেক জ্বলছে।"

দুইজনের একপর্যায়ে ঝগড়া বেঁধে গেল। কিন্তু অরুর সেই দিকে কোনো খেয়াল নেই। সে নিজেও জানে না কেন বারবার আশেপাশের জগত থেকে বিছিন্ন হয়ে পড়ছে। অরু দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ল,,,

বৃহস্পতিবার,
গত সপ্তাহের বুধবার রুদ্রকে শেষ দেখেছিল অরু। আজ বৃহস্পতিবার,আজ নিয়ে আট দিন হয়েছে রুদ্র ভার্সিটিতে আসে না। মাঝে এই নিয়ে ক্লাসের সবার মধ্যে চর্চা হচ্ছিল। কিন্তু এখন সেটাও থেমে গিয়েছে। এই লোকটার ব্যক্তিগত জীবন সমন্ধে তেমন ভাবে ডিপার্টমেন্টের কোনো প্রফেসরই জানে না। অরুদের ক্লাসে সবার মধ্যে কৌতুহলী হলেও ফার্স্ট ইয়ার বলে কেউ জিজ্ঞেস করার সাহস করছে না। সিনিয়র হলেও যে করা যেত তেমন কোনো কথা নেই। সবার নিজের ব্যক্তিগত জীবন আছে এবং তাতে প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু হয়েই চলেছে। অরুও এখন তেমন একটা মাথা ঘামাচ্ছে না। সে প্রায় ভুলেই গিয়েছে।
তিনজন ক্যান্টিনে বসে আছে। আজকের মতো ক্লাস শেষ। অরু অপেক্ষা করছে তানিয়ার। তানিয়া আয়শা আর সিয়ামের কাউকেই চেনে না। আজ ওদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে। তানিয়া লাস্ট ক্লাস চলছে। আর আধা ঘন্টা। বড় ক্যান্টিন। চারটি সাড়িতে টেবিল রয়েছে। দুই রো করে ভাগ করা, মাঝখান দিয়ে লম্বালম্বি যাতায়াতের পথ। প্রত্যেকটা টেবিলে চারটে করে চেয়ার। ক্যান্টিনের দেওয়ালের রং খসে পড়েছে। দেখে বোঝায় যায় পুরাতন। মাথার উপর রয়েছে প্রতিটি চারটে টেবিলে একটি করে ফ্যান। শীতের সময় বলে যা এখন বন্ধ রয়েছে। মাঝখানে রয়েছে বড়ো এলিডি লাইট। আপাতত ক্যান্টিনের চার দেওয়ালে বড়ো বড়ো জানালা দিয়ে আসা আলোতে সব কিছু সুস্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যার জন্য লাইটি বন্ধ। বসে নানা বিষয়ে আড্ডা দিচ্ছে তিন জনে। তার মধ্যেই সিয়াম একটা প্রস্তাবনা দিয়ে বসেছে। আগামী দুই দিন ভার্সিটি বন্ধ। তাই হাতে সময় রয়েছে ভালোই যেহেতু এখনো কেউ টিউশনিতে বা পার্টটাইম জবে যায়নি, এবং নতুন বন্ধুত্ব হওয়ায় বারবিকিউ পার্টি করার। ভার্সিটির স্টুডেন্টদের জন্য এইটা নরমাল পার্টি। অরু আর আয়শা প্রস্তাবনা শুনে খুশিই হয়েছে। সবাই রাজি পার্টি করার জন্য। এর অরু একটু অপ্রস্তুতভাব নিয়ে বলল,

"ভালো আইডিয়া। কিন্তু আমার একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিল।"

"একটা কথা কেন যত খুশি তত কথা বল।" উৎসাহিত প্রায় চিৎকার করে বলল আয়শা। আশেপাশের টেবিলে বসা ছাত্র ছাত্রী তাদের দিকে তাকালো। তাতে আয়শার বিন্দু মাত্র যায় আসে। সে নিজের গতিতেই কথা বলতে থাকল।

"এক্সুয়ালি, এই পার্টিতে কি আমি আমার ফ্রেন্ড তানিয়াকেও ডাকতে পারি?" সংকোচের সুরে জিজ্ঞেস করল অরু। সিয়াম ওর বিপরীতে বসে ছিল। ওর দিকে হালকা ঝুঁকে এসে বলল,

"অবশ্যই পারবে। যত জন খুশি ডাকতে পারো। বেশি ফ্রেন্ড হলেই তো বেশি মজা হবে। তোমার অন্য কোনো ফ্রেন্ড থাকলে তাদেরকেও আসতে বলতে পারো। এর জন্য আবার জিজ্ঞেস করার কি আছে।" সিয়ামের কথায় আয়শা বাচ্চাদের মতো মাথা নেড়ে একমত পোষণ করল। তাকে থেকে অরু আর সিয়াম হেসে ফেলল। কি বাচ্চাম্তি করতে পারে আয়শা!
আরো বেশ সময় ধরে ওদের আড্ডা চলল। তারই মধ্যে এসে আড্ডায় যোগ দিয়েছিল তানিয়া।অরু সবার সাথে তানিয়ার পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। একদিনেই তারা বেশ ভালো বন্ধু হয়ে গেলো। অরু মনে মনে নিজের ভাগ্যের প্রশংসা করতে ভুলল না। ভাগ্য করে এমন বন্ধু পেতে হয়। যেটা তার আছে।
বারবিকিউ পার্টিটা আগামীকাল দুপুর বেলায়। বিকালে করতে চেয়েছিল কিন্তু বেশি রাত হয়ে যাবে বলে পার্টিটা দুপুরেই রাখা হয়েছে। পার্টি আয়শার বাড়িতে হবে। ওর মা হেল্প করবে ওদের।

তিনদিন হয়েছে ঘরের একমাত্র জানালায় পর্দা লাগিয়েছে। ভার্সিটি থেকে আসার সময় নিউমার্কেট থেকে অরু আর তানিয়া পছন্দ করে বেবি ব্লু রং এর দুইটা পর্দা কিনেছে। ভীষণ সুন্দর দেখতে। পুরো সাদা ঘরে ওই একমাত্র রঙিন জীবন। পর্দায় সুন্দর করে সাদা সুতো দিয়ে পাতার কাজ করা রয়েছে,যা পর্দাকে আরো সুন্দর করে তুলছে। পর্দা টাঙানোর পর থেকে ঘরে জীবন এসেছে। ঘরে কেবল মাত্র দেওয়াল ঘড়ির টিক টিক শব্দ হচ্ছে। আয়শা ঘুমাচ্ছে। তার পাশে আধ শোয়া হয়ে বই পড়ছে অরু। মিসির আলী,দেবী বইটি। হুমায়ূন আহমেদ স্যারের লেখা এতো সহজ সরল হয় কিভাবে সেটাই মাঝে মাঝে ভেবে পায় না অরু। স্বল্প এবং সরল ভাষায় নিজের মনের ভাব প্রকাশ করা যায় তা হুমায়ূন স্যারের বই না পড়লে জানতে পারতো না অরু। তার গল্পের বই পড়ার হাতে খড়ি হয় হুমায়ূন স্যারের 'ছেলেটা' বই দিয়ে। ভীষণ প্রিয়।।
সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে বইয়ে ডুবে ছিল অরু হঠাৎ তার সাইলেন্ট করা ফোন ভাইব্রেটিং হতে শুরু করল। অরু খেয়াল হতেই বইটি সযত্নে পাশে রেখে ফোনটি হাতে নিলো। স্ক্রিনে ' মা ♥️' নাম দিয়ে সেফ করা নাম্বারটি জ্বলজ্বল করে উঠলো। অরুর ঠোঁটের কোণে হাঁসির রেখা দেখা গেলো। সে সঙ্গে সঙ্গে কল রিসিভ করল।

"কেমন আছিস মা?" কলের অপর পাশ থেকে খাদিজা বেগম বলে উঠলেন।

" ভালো আছি। তুমি কেমন আছো? বাড়ির সবাই কেমন আছে?" শান্ত এবং মিষ্টি ভাব বজায় রেখে প্রশ্ন করল অরু।

"ভালো আছি রে! আর বাড়ির সবাই ভাল আছে। তোকে খুশির খবর দেওয়ার আছে।" উৎসাহিত কন্ঠে বলল খাদিজা বেগম।

"কি খুশির খবর?" কৌতুহলী এবং উত্তেজিত কন্ঠে বলল অরু।

খাদিজা বেগম কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
" আনিকার বিয়ে ঠিক হয়েছে, কালকেই বিয়ে। ঘরোয়া ভাবে হবে সম্পূর্ণ ভাবে। আজ সন্ধ্যায় গায়ে হলুদ। তুই বিকালের বাস ধরে চলে আয়।" খাদিজা বেগম নিজের কন্ঠ স্বর এমন খাদে নামালেন যেন ওনার কথা অন্য কেউ না শুনতে পায়। অরু কিছুটা অবাক হলো। এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে বিয়ে ঠিক করল আনিকা আপুর। সে কি এই বিয়েতে রাজি। প্রশ্ন গুলো আর চেপে রাখতে না পেরে খাদিজা বেগমের কাছে একের পর এক প্রশ্ন করে ফেলল অরু। প্রশ্নের প্রতি উত্তরে খাদিজা বেগম বললেন,

"ছেলে ভালো, পরিবার ভালো। একমাত্র ছেলে। শহরের সম্মানিত ব্যক্তি ছেলের বাবা। এমন ছেলে আর পরিবার এখন সচরাচর পাওয়া যায় না। আর আনিকার তো সামনের মাসেই মাস্টার্স শেষ হবে। বিয়ের কথা তো এমনই হচ্ছিল বাড়িতে। সমন্ধ এসেছে আনিকার কাছে জিজ্ঞেস করা হয়েছে সেও মর্জি জানিয়েছে। আর ছেলের পরিবার চায় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে করে মেয়েকে নিয়ে যাবে। তোর এতো কিছু জানতে হবে না, তুই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বেরিয়ে পর। সাথে তানিয়াকে নিয়ে আসিস।" খাদিজা বেগম বলা শেষ করলেন।

অরু বুঝতে পারল ছেলের পরিবারের অনেক তাড়া আছে তাই এতো তাড়াহুড়ো। কিন্তু এতো সর্ট নোটিশে কিভাবে কি করবে? এই কথা বলতেই খাদিজা বেগম তেজ দেখিয়ে বললেন,

"আমি কোনো কথা শুনে চায় না। তুই এক্ষুনি বেরিয়ে পরবি। বাসস্টপে তোর ভাইয়া আর বাবা তোকে নিতে যাবে।" বলে ফোনটা কেটে দিলেন খাদিজা বেগম। অরু নিরাশ হয়ে পুরোপুরি শুয়ে পড়ল। মাকে কীভাবে বোঝাবে এতো তাড়াতাড়ি আসা সম্ভব না তার পক্ষে। কিন্তু বাড়ির একমাত্র বড়ো মেয়ের বিয়ে বলে কথা বাড়ির একমাত্র ছোট মেয়ে সেই বাড়িতে উপস্থিত না থাকলে কেমন যেন হয়ে যাবে ব্যাপারটা। ব্যাপারটা ভেবে নিজের মনেই হেসে উঠলো,অরু। তাহলে যেতেই হয়। এখন সবার আগের কাজ তানিয়াকে তার কাঁচা নিন্দা ভঙ্গ করিয়া উঠানো।।
অরু তার মিশনে লেগে পড়ল।
তানিয়া তো মহানন্দে লাফালাফি জুড়ে দিয়েছে। কতো দিন পর এমন বিয়ে যাবে সে। দুই জন প্রায় তাড়াহুড়ো করে এদিকে ওদিকে ছুটাছুটি করছে। ফ্লাটের মালকিনকে বলেছে,

"আন্টি দুদিনের জন্য আমরা আমার বাড়িতে যাচ্ছি।"

তিনি অবাক হয়ে বললেন,

"হঠাৎ? কোনো ঝামেলা হয়েছে নাকি বাড়িতে?"

"না,না, আন্টি তেমন ব্যাপার না। আমার বড়ো আপুর বিয়ে তাই যেতে হবে।"

অরুর কথা শুনে বেশ খুশী হলো ফ্লাটের মালকিন। তিনি অরুর আপুর জন্য দোয়া করে দিয়ে বললেন,

"তোমার আপু সারাজীবন খুশি হবে দেখো! আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি। তোমরা তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়ো আর সমাধানে যেও।" বলে তিনি নিজের ঘরে চলে গেলেন।
অরু খুশি মনে জামা কাপড় গুছিয়ে নিলো সাথে তানিয়াও।।

চলবে.....

[কালকে যেহেতু পর্ব দেওয়া হয়নি তাই আজ একসাথে একটু বড়ো করে দিলাম, কেমন লেগেছে জানাবেন ♥️]

 #শুধুই_তুমি #লেখনীতে_রুদ্রিকা_বেদী #পর্ব_০৪সকাল সাড়ে আটটা,পিটপিট করে অ্যালার্ম বেজে উঠল। অরুর প্রশান্তিময় ঘুমের ব্যাঘ...
30/01/2025

#শুধুই_তুমি
#লেখনীতে_রুদ্রিকা_বেদী
#পর্ব_০৪

সকাল সাড়ে আটটা,
পিটপিট করে অ্যালার্ম বেজে উঠল। অরুর প্রশান্তিময় ঘুমের ব্যাঘাত ঘটিয়ে দিলো অ্যালার্মের বিকট শব্দ। অরু চোখ বুজেই মাথার কাছে রাখা ফোনটা হাতে নিয়ে ঝাপসা চোখে তাকালো। মোবাইলের স্ক্রিনে 08:15 সংখ্যা স্পষ্ট দৃশ্যমান। অরু অ্যালার্ম বন্ধ করে চোখ বন্ধ করল। অরু একবার নিজের পাশে হাত বুলাতে লাগলো। না পাশে তানিয়া নেই। অরু তাড়াহুড়ো করে উঠে বসল। সে চোখ সব কিছু ঝাপসা দেখছে। সে নিজের বাম হাতের আঙ্গুল দিয়ে চোখ ডলছে। এতো সকালে তানিয়া কই গেল? ও তো এতো সকালে উঠার মেয়ে নয়? নিজের মনেই বিড়বিড় করতে লাগলো অরু। অরু একবার পুরো ঘরে চোখ বুলিয়ে দেখল। সাদামাটা ঘর। জিনিস বলতে তেমন কিছু নেই। শুধু একটা খাট,বসে পড়ার জন্য একটা কাঠের টেবিল আর চেয়ার,রয়েছে একটা চৌকি,যাতে অরু আর তানিয়ার মধ্যে যেকোনো একজন খাটে বসে পড়তে পারে। অরু চাদর সরিয়ে খাট থেকে নেমে ওয়াশ রুমের উদ্দেশ্যে বাইরে গেল। বাইরে এসে তানিয়াকে কোথাও দেখতে পেলো না ও। অরু আর কিছু না ভেবে ওয়াশ রুমে গেল।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে অরু। ওর কোমর পর্যন্ত ঘন কালো ঢেউ খেলানো চুলগুলো এখন উস্কো খুস্কো হয়ে রয়েছে। সে আয়নায় দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল তারপর ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসলো। বাইরে এসে কিছুটা অবাক হলো, রান্না ঘর থেকে কেমন টুং টাং শব্দ ভেসে আসছে। সে একবার ফ্লাটের মালকিন ঘরের দিকে চাইলো। দরজা বন্ধ,তার মানে এখনো উঠি নাই তাহলে রান্না ঘরে কে? অরু সে দিকে এগিয়ে গেল, তানিয়া রান্না ঘরে ডিম ভাজি করছে। অরু কিছুটা অবাক হলো। এতো সকাল সকাল তানিয়া রান্না বান্না করার মেয়ে তো নয়। অরু শান্ত কন্ঠে বলল,

"কি রে? এতো সকাল সকাল রান্না করছিস যেয়ে?
তানিয়া অরুর গলা পেয়ে কিছুটা অবাক হলো। সে ঘাড় ফিরিয়ে পিছনে তাকালো। তারপর হাঁপ ছাড়া কন্ঠে বলল,

"কখন উঠলি?"

"এই তো,একটু আগে। তুই আমার প্রশ্নের উত্তর দে?"

"আরে! তেমন কিছু না আজ থেকে আমারও ক্লাস শুরু,আর তুই তো জানিস আমি বাইরের খাবার খেতে পারি না,তাই আম্মু আমাকে কালকেই বলে দিয়েছিল সকাল সকাল উঠে দুইজনের কিছু রান্না করে নিতে,তাই আর কি!" ডিম ভাজিটা প্লেটে সাবধানে উঠাতে উঠাতে বলল তানিয়া। অরু সব শুনে মাথা নাড়িয়ে বলল,

"তা ভালো করেছিস। আজ তাহলে আর পাউরুটি খেয়ে থাকতে হবে না।" তানিয়া অরুর কথা শুনে পিছনে ফিরে মিষ্টি করে হাসলো, তারপর তাড়া লাগিয়ে বলল,

"তুই দাড়িয়ে আছিস কেন? যা রেডি হয়ে নে! ভার্সিটিতে যেতে হবেনা।"
তানিয়ার কথা শুনে অরু কিছুটা অবাক হয়ে বলল,

"যেতে তো হবে কিন্তু এখন রেডি হবে কেন? এখনতো সময় আছে।"বলে তানিয়ার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। তানিয়া ওর দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে বলল,

"তোমার হাতে সময় আছে সেটা জানি কিন্তু ঢাকার জ্যামের কোনো সময় নেই। নয়টা বাজতে গিয়েছে, অফিসের দিন, জ্যাম বাঁধবে ফর সিওর। যে গন্তব্যে পৌঁছাতে আধা ঘন্টা লাগার কথা, সেখানে যদি ঢাকার জ্যামে আটকা পড়া হয় তাহলে সেটা আধা ঘন্টা থেকে তিন ঘণ্টা আর কখনো কখনো তারও বেশি সময় লাগে সে তুমিও জানো আমিও জানি।" এক নিঃশ্বাসে গড়গড় করে বলল তানিয়া। অরু আবার মাথা নাড়ায়। হ্যাঁ কথায় যুক্তি আছে। তার উপরে সে প্রথম দিনেই লেট করেছে আবার লেট করলে খবর হয়ে যাবে। অরু আর কিছু না বলে তানিয়ার দিকে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে নিজের ঘরে রেডি হতে চলে গেল।
চৌধুরী ভিলা,

রাবেয়া চৌধুরীর মেজাজ অত্যন্ত বিগড়ে রয়েছে। কারণ,এই পরিবারের সবাই। কেউ তার একটা কথাও শোনে না। বিশেষ করে তার ছেলে আব্রাম চৌধুরী রুদ্র। এতো বড়ো বাড়ি সব কিছু তার একারই সামলাতে হয়। মেয়ের দোষ দেওয়া যায় না। মেয়ে দুইদিকে সামলিয়ে আর কতো পারবে। ছেলেটা যদি বিয়ে করতো তাহলে তার আর এতো কিছু নিয়ে ভাবতে হতো না। রাবেয়া চৌধুরী উঠে দাঁড়ালেন। তার চোখে এক যোদ্ধার ন্যায় দৃষ্টি। সে আজ একটা না একটা কিছু করে ছাড়বে। আসুক রুদ্র একবার,। কিন্তু কি বলবে ছেলেকে? পরমুহূর্তেই নিরাশ হয়ে আবারও বসে পরলেন চেয়ারে। তার পার্লস রেট বেড়ে যাচ্ছে। সে বুঝতে পারছে। সে জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিচ্ছেন। এতো উত্তেজিত হওয়া ঠিক হয়নি তার। সে কোন ভাবে "বিথী"বলে ডাক দিলেন। বিথী নিচেই ছিল। মায়ের গলার শব্দ পেয়ে দৌড়ে মায়ের কাছে এলো। রাবেয়া চৌধুরী তখনও জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিচ্ছেন। কথা বলতে পারছেন না। বিথী রাবেয়া চৌধুরীকে দেখে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। বাড়িতে ও আর চাকর বাদে আর কেউ নেই।
তানিয়া যা বলেছিল তাই হলো। বিগত বিশ মিনিট ধরে জ্যামে আটকা পরে রয়েছে তানিয়া আর অরু। দশ মিনিটের মধ্যে যদি জ্যাম না ছাড়ে তাহলে আজও লেট হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আর যদি রুদ্র স্যারের ক্লাস পড়ে তাহলে তো কথাই নেই। অরু থেকে থেকে শুরু দোয়া পড়ছে যাতে বাস ছেড়ে দেয় আর আজ প্রথমেই রুদ্র স্যারের ক্লাস না বাদে। তানিয়ার তেমন সমস্যা নেই,ও হাতে বেশ সময় নিয়ে বেরিয়েছে। একঘন্টা লেট হলেও সমস্যা নেই কিন্তু অরুর তো ক্লাস দশটা পনেরোতে আর এখন ঘড়িতে বাজে নয়টা দশ। অরু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সিটে হেলান দিলো।
যে ভয়টা পাচ্ছিল সেটাই হলো। অরু জ্যামের কারণে অলরেডি দশ মিনিট লেট হয়ে গেছে। ইতি মধ্যে আয়শা চারবার ফোন দিয়েছে। প্রত্যেকবার একই প্রশ্ন "কোথায় তুই,এতো দেরি কেন হচ্ছে?" আর প্রত্যেকবার অরু একই উত্তর দিয়েছে "জ্যামের কারণে দেরি হয়ে গিয়েছে,আমি এক্ষুনি আসছি।"
অরু দৌড়াতে দৌড়াতে কোনরকম ক্লাসের সামনে যেয়ে দাঁড়ালো। সে হাঁপাচ্ছে রীতিমতো। এই ক্লাসরুম গুলো খুঁজে পাওয়াও একধরনের হ্যাপা। রুমের দরজা বন্ধ। তারমানে স্যার ভিতরে। যদি আবারও রুদ্র স্যার হয়? প্রশ্নটা মাথায় আসতেই এক মুহুর্তের জন্য কেঁপে উঠলো অরু। অরু নিজেকে সংযত করল। জোরে নিঃশ্বাস নিলো। তারপর নিজেকে একপ্রকার বুজ দিয়ে ভিতরে ঢোকার জন্য দরজায় নক করে,দরজা হালকা খুলে নিজে মাথা গলিয়ে স্যারের দিকে চাইল। চাওয়া মাত্রই অরু স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। খেয়েছে! আজও রুদ্র স্যার! অরু চোখে ভয়।
অরুর দরজায় নক করার শব্দে রুদ্র সহ পুরো ক্লাস দরজার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। আয়শা আর সিয়াম অরুকে দেখেই কপালে হাত দিয়েছে। রুদ্র অরুর আবারও দেরি করে আসার বিষয়টি এখন কিভাবে নেই সেটাই প্রশ্ন। রুদ্র অরুর দিকে রাগান্বিত চোখে না তাকিয়ে হাসি মাখা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়েছে। যাতেই অরুর আত্মা শুকিয়ে কাঠ। অরু একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে, কাঁপা স্বরে বলল,

"স্যার আসবো?"
অরুর প্রশ্নে পুরো ক্লাস রুদ্রের দিকে তাকালো। রুদ্র কি বুঝে একটা বাকা হাসি হেসে, হাস্কি স্বরে বলে উঠল,

"ইয়েস কাম!"

অরু তাড়াহুড়ো করে ঢুকে আয়শা আর সিয়ামের পাশে বসতে গেল তখনই রুদ্র নিজের হাস্কি কন্ঠে বলে উঠলো,

"দাঁড়াও! আমি তো তোমাকে বসতে বলিনি!"

অরুও দাঁড়িয়ে গেল। দাঁড়িয়ে গিয়েছে বললে ভুল হবে পা বরফ হয়ে গেছে। অরু নিজেকে ভিতরে ভিতরে কয়েক খানা গালি শুনাল। তারপর রুদ্রের দিকে তাকালো। রুদ্রর বাদামি চোখ আজ ক্লান্ত, দেখে মনে হচ্ছে রাতে ঘুম হয়নি। চোয়াল শক্ত। একটু পর কিছু একটা কঠিন শুনাবে বলে মনে হচ্ছে। আজ নীল রঙের একটা শার্ট। যার হাতা গুটিয়ে রাখা হয়েছে কুনুই পর্যন্ত। হাতে স্টেইনলেস স্টিলের ব্রাক সিলভার কালারের ঘড়ি। কালো ওয়েভি চুলগুলো আজ কেমন যেন এলোমেলো। কিন্তু তারপরও চেহারার শান্ত চাহনির সঙ্গে দারুণ যায়। অরু অপেক্ষা করছে রুদ্রর পরবর্তী কথার জন্য। তাই হলো রুদ্র পুরুষ স্বভাবী কন্ঠে বলে উত্তর,

"আজ কেন লেট হলো,জানতে পারি?"

"জ্যামের কারণে লেট হয়ে গিয়েছে।"
কোনো রকম বলে শেষ করল অরু। ওর গলা শুকিয়ে আসছে। কেন যে ওর সাথেই এমন হয়!
রুদ্র অরুর উত্তর শুনে কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বাঁকা হেসে অরুর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। অরু একটা ঢোক গিলে মাথা নিচু করে নিল। কি ভয়ংকর। রুদ্র শান্ত কন্ঠে বলল,

"ওকে! নিজের জায়গায় যেয়ে বসো।"

পুরো ক্লাস অবাক সাথে অরুও। কি হলো ব্যাপারটা স্যার আজ কিছু না বলেই ছেড়ে দিচ্ছে কেন? পর পর দুই দিন লেট করার পরও কোনো শাস্তি দিলো না কেন? অবশ্য দেবে উপস্থিতীতে। তার অলরেডি এক মার্ক কাটা যাওয়ার কথা! কে জানে তার কপালে সামনে আরো কি কি অপেক্ষা করছে? অরু চুপচাপ করে আয়শার পাশে যেয়ে বসলো। আয়শা আর সিয়াম দুই জনই ওর দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বেচারীর জন্য মায়া হলো সিয়ামের আর সাথে ভীষণ রাগ আসল ওই রুদ্র স্যারের উপর।

"ওকে, স্টুডেন্ট'স। আজ থেকে তোমাদের মেইন ক্লাস শুরু। যেহেতু আজকেও আমার প্রথমে ক্লাস তাই সিআর অফ ক্লাস ঠিক করে দেওয়ার দায়িত্বও আমার।" রুদ্রর কন্ঠ কানে আসতেই অরু সামনে তাকালো। পুরো ক্লাস মনোযোগ দিয়ে রুদ্রর কথা শুনছে একমাত্র সিয়াম বাদে। সিয়ামের দৃষ্টি আবদ্ধ অরুর দিকে।

"আই হোপ,তোমরা সবাই জানো সিআর মানে। আর যারা জানো না তাদের জন্য বলছি সিআর অর্থ class representative. অর্থাৎ পুরো ক্লাসের পক্ষ হয় যে বা যারা প্রতিনিধি হবে। সো স্টুডেন্ট'স তোমরা কারা কারা CR হতে চাও?" পুরো ক্লাসের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করল রুদ্র কিন্তু তার চোখ আবদ্ধ অরুর মাথা নিচু করে বেঞ্চের উপর ঠেকানো মাথার উপর।
রুদ্র প্রশ্নের উদ্দেশ্যে উত্তর হিসেবে প্রায় পুরো ক্লাস হাত তুলেছে গুটি কয়েক জন ছাড়া। তারপর অরু আর সিয়াম একজন। আয়শাও হাত তুলেছে। রুদ্র একটু চাপা হেসে বলল,

"ওকে স্টুডেন্ট'স, হাত নামাও। আমি জানি পুরো ক্লাসের কম বেশি সবাই এই পদে আসতে চাও কিন্তু সবাইকে দিলে তো হবে না। তাই যেকোনো দুই জন‌‌‌। একজন মেয়ে এবং একজন ছেলে।"

রুদ্রর কথা শুনে পুরো ক্লাসের মধ্যে একটা হইচই পড়ে গেল। রুদ্র সে দিকে খেয়াল দিয়ে বলে উঠলো,

"সাইলেন্ট! একটাও কথাও না। আমি ঠিক কে হবে সেই দুই জন‌‌‌ এবং এই ইয়ার শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারাই থাকবে।" নিজের শান্ত গলায় কথা গুলো শেষ করে সামনের দিকে এগিয়ে আসল রুদ্র। আজ প্রথম বেঞ্চেই বসেছে ওরা তিনজন। রুদ্র হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে হাস্কি কন্ঠ বলল,

"তুমি! সামনের বেঞ্চ, রেড ড্রেস,,,,,,,

চলবে............

 #শুধুই_তুমি #লেখনীতে_রুদ্রিকা_বেদী #পর্ব_০৩"দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা        দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁ...
26/01/2025

#শুধুই_তুমি
#লেখনীতে_রুদ্রিকা_বেদী
#পর্ব_০৩

"দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা
দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা
তারে ধরি ধরি মনে করি
ধরতে গেলেম, আর পেলেম না
ধরি ধরি মনে করি
ধরতে গেলেম, আর পেলেম না
দেখেছি-
দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা
দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা"

রুমে মধ্যে চুপচাপ খাটের এক কোণে বসে নিজের প্রিয় গান বারবার শুনছে অরু। আজ এই গানের প্রত্যেকটা লাইন তার কাছে অনেক আপন লাগছে, কেন লাগছে তার কারণ সে জানে না,জানতে চায়ও না। এই অনুভূতি তার অনেক ভালো লাগছে। শীতের রাত অনেক গভীর। ঢাকা শহর এখানে নিস্তব্ধ। অবশ্য এখানে তেমন শীত নায়। একটা চাদর পায়ের উপর দিয়ে বসে আছে অরু। আর বারবার বেজে চলছে একই সংগীত। এমন সময় রুমে খাবার হাতে প্রবেশ করল তানিয়া। অরুর সাথে সাবলেট হিসেবে উঠেছে সে। অরুর সঙ্গে একই ইয়ারে ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের ছাত্রী তানিয়া।

" কীরে আর কতো বার একই গান শুনবি আর বাইরের মানুষদের শুনাবি?!"

" যতক্ষণ আমার মন না ভরে!" বলে সামনে এগিয়ে এসে বসল অরু পাশে তানিয়া।

" তাহলে তো এই গান আজ আর বন্ধ হচ্ছে না তাইলে!" হেসে বলল তানিয়া। অরু কথা শুনে মুখ টিপে হেসে গান বন্ধ করল।

" তো প্রথম দিন ভার্সিটিতে কেমন গেল?" খাবারের প্লেট এগিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল তানিয়া।

"মোটামুটি!" মুখটা কালো করে উত্তর দিলো অরু। তানিয়া ভ্রূ কুঁচকে তাকালো অরুর দিকে তারপর বলল,
" কেন? মোটামুটি গিয়েছে কেন?"
"প্রথম দিনেই যদি স্যারের কাছ থেকে বকা খেতে হয় আর সারা ক্লাসের সামনে কৈফিয়ত দিতে হয় তাহলে মোটামুটি যাবে না তো কেমন যাবে!" খাবারের দিকে বাচ্চাদের মতো তাকিয়ে উত্তর দিলো।

"বকা কেন শুনতে হয়েছে?" কৌতুহলী চোখে জিজ্ঞাসা করল তানিয়া। অরু কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তাকে সব কিছু খুলে বলল। অরুর কথা শুনে তানিয়া হাসতে হাসতে মেঝেতে শুইয়ে পরার উপক্রম। তানিয়ার এসে অবস্থা দেখে বিরক্ত চাহনিতে প্রশ্ন করল,

" এতে এতো হাসার কি আছে শুনি?"
" প্রথম দিনেই লেট করে ক্লাসে যেয়ে বকা খেয়ে সেই স্যারের উপর লাট্টু হওয়ার কাহিনী তো কম শুনেছি তাই হাসি এসে গিয়েছে কিছু আবার মাইন্ড করিস না!" বলে আবারও হেসে উঠলো তানিয়া।

" তোকে বলাই আমার ভুল হয়েছে,আর যদি কিছু বলি তোকে!" রাগে গজগজ করতে করতে বলল অরু।
" আরে রাগ করিস কেন,সরি! আর হাসবো না,রাগ করিস না প্লিজ!" ঠোঁট উল্টিয়ে বলল তানিয়া। তানিয়ার এই রকম মুখ দেখে নিজের রাগ আর পুষে রাখতে পারল না অরু। সেও হেসে ফেললো।

ধূসর রঙের দেওয়ালের ঘরটায় আলো বলতে টেবিলে জ্বলন্ত ল্যাম্প লাইট। তার সামনে বসে সিগারেটে সুখটান দিচ্ছে রুদ্র। বাড়িতে আসতে না আসতে রাবেয়া চৌধুরী বিয়ের প্রসঙ্গ তোলায় বিরক্তির চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেয়েছে সে। না খেয়েই রুমে এসে বসে রয়েছে রুদ্র। বাড়িতে তাকে বোঝার মতো একজনও নায়। মাথাটাও ধরেছে। এখন যদি একটা হেড ম্যাসেজ পাওয়া যেতো তাহলে বেশ ভালো হতো। এমন সময় মাথায় কারো হাতের স্পর্শে পেয়ে মুচকি হাসে রুদ্র। চোখ বন্ধ করে ক্লান্ত কন্ঠে বলল,

" কী ভাবে জানলি আমার মাথা ব্যাথা করছে?"

" তুই আমার ভাই,আমি তোকে তোর থেকেও ভালো করে জানি। তোর আমাকে আলাদা করে কিছু বলতে হবে না। আমি সব বুঝি!" নরম স্বরে বলল বিথী। রুদ্র মাথা থেকে বিথীর হাত টেনে ধরে চুমু দিয়ে বলল,

" আই লাভ ইউ আপি!"

" আই এলসো লাভ ইউ ভাই! এখন নিচে চল, কিছু খাবি।"বলল বিথী

" খিদে নেই আপি।"

বিথী রুদ্রর সামনে এসে দাঁড়ালো তারপর ওর মুখে আলতো করে হাত বুলিয়ে বলল,

" মায়ের কথায় রাগ করিস না, মা তো আর তোর অতীত সম্পর্কে জানে না। কিন্তু আমি জানি তুই কিসের মধ্যে দিয়ে গিয়েছিস কিন্তু আর কতোদিন শুনি? আর কতোদিন তুই এক অতীতের জন্য নিজের আজ নষ্ট করবি?"

" জানি না !"

" জানি না বললে তো হবে না, দেখ মায়ের তো একজন সঙ্গী দরকার।"

" হ্যাঁ! দরকার আছে বলেই তো আল্লাহ বাবাকে পাঠিয়েছে।"

" ধুর মিয়া! আমি জীবন সঙ্গীর কথা বলছি না,আমি মায়ের অবসরের সঙ্গীর কথা বলছি।" একটু বিরক্ত হয়ে উঠল বিথী। তাই দেখে বিথীর চোখের আড়ালে মুচকি হাসলো রুদ্র। তারপর সিগারেটে আরেকটা টান দিলো সে।

" তার জন্য তো তুই আছিস।" ধোঁয়া ছেড়ে বলল রুদ্র

বিথী একটি দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। রুদ্র যে কী ভাবে তার ভাই হলো সেটাই ভেবে পায় না সে। হসপিটালে কি সিজারের সময় অদলবদল হয়ে গিয়েছিল নাকি?

" দেখ কথা ঘুরাইস না। আমি আছি কিন্তু কতো দিন আমার নিজের সংসার বলে তো কিছু আছে নাকি? আর বাবা থাকে ব্যবসা আর রাজনীতি নিয়ে, তুই থাকিস নিজের কাজ নিয়ে, মায়ের সময় কীভাবে কাটে একটু ভেবে দেখেছিস?" কথাগুলো বলেই খাটে যেয়ে বসল বিথী। রুদ্র চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো বিথীর সামনে। ভাইয়ের এহেন গম্ভীর চাহনি দেখে নিজেরই ভয় লাগে। বাকিদেরকে কি দোষ দিবে।
রুদ্র শান্ত কন্ঠে বলল,

" তাহলে তোরা কি চাচ্ছিস আমি মায়ের একাকীত্ব দূর করার জন্য এখন বিয়ে করি?"

" অবশ্যই! শুধু মায়ের কেন তোর একাকীত্ব দূর করার জন্য জীবন সঙ্গীকে পাশে দরকার ভাই!"

" আর যদি সেই জীবন সঙ্গী মাঝ পথেই ছেড়ে চলে যায় তাহলে?" রুদ্রের এতো শান্ত গলায় বলা প্রশ্নের কি উত্তর দিবে বুঝতে পারলো না বিথী। হঠাৎ দরজার বাইরে থেকে একটা বাচ্চা কন্ঠ ভেসে আসল,

" মামা! মামা!" ইভান এসে দাঁড়িয়েছে রুদ্র আর বিথীর মাঝখানে। ঘাড় উঁচু করে তাকিয়ে আছে পাঁচ বছরের বাচ্চা নিজের মামার দিকে। ইভানকে দেখে রুদ্রের মুখে এক শান্তির হাসি ফুটে উঠল। ইভানকে কোলে তুলে রুদ্র বলল,

" কী হয়েছে ভাগ্নে?"

" মামা! আমি আইস্ক্রিম খাবো!" পিটপিট করে তাকিয়ে বলল ইভান। ওর কথা শুনে বিথী খাটের থেকে উঠে দাঁড়ালো। চোখ পাকিয়ে বলল,

" ইভাননন!!" হুংকার দিলো বিথী। ইভান একটা ছোট ঢোক গিলে মায়ের দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকালো। খেয়েছে ঘরে এতো কম আলোতে মা যে এখানে তা সে মোটেও খেয়াল করে নাই। " তোমাকে কতোবার বলেছি, আইস্ক্রিম খাবে না তারপরও মামার কাছে এসে আইস্ক্রিমের বাইনা করছো? তোমার না ঠান্ডার সমস্যা!"

" ইস্! বকছিস কেন? প্রতিবাদ করে বলল রুদ্র,
" বাচ্চা মানুষ,জেদ করবেই তাই বলে কি এইভাবে বকবি!"

" বকবো না তো কি করছো!একটার পর একটা অসুখ বাঁধিয়ে রেখেছে ছেলেটা,বললেও শোনে না।" বলেই কানটা ধরে টানলো। ইভান সাথে সাথে"আহ্" শব্দ করে নিজের কান মায়ের কাছ থেকে ছাড়িয়ে রুদ্রকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। এখন একমাত্র মামাই পারে তাকে মায়ের হাত থেকে বাঁচাতে।

" হয়েছে! আর বকতে হবে না আপি! ইভান!" রুদ্রের ডাকে ইভান মুখ তুলে তাকালো। তার মুখে মায়ের ভয় পুরো পুরি লক্ষ্যণীয়। রুদ্র নিজের হাতের সিগারেটের শেষের অংশটুকু অ্যাশট্রেতে রেখে ভাগ্নের দিয়ে তাকিয়ে বলল,

"মা ইজ রাইট, আমাদের আইস্ক্রিম খেতে পারবো না বাট চকলেট মিল্কসেক তো খেতে পারবো।" মামার কথা শুনে ইভানের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। সে আনন্দিত স্বরে রুদ্রকে জড়িয়ে বলল,

" আই লাভ ইউ মামা! ইউ আর দ্যা বেস্ট!"

" আর আমি?" অবাক হয়ে প্রশ্ন করল বিথী।

" ইউ আর দ্যা অ্যাংরিয়েস্ট মাদার।' খোঁচা মেরে বলল রুদ্র। বিথী কথাটা শুনে মুখ ফুলিয়ে রুদ্রের হাতে আসতে করে চাপড় পারল। তারপর তিনজনই হেসে উঠলো।
ছাদে রেলিং উপর বসে পূর্ণিমার চাঁদের দিকে এক পলক চেয়ে আছে সিয়াম। আজ যেন তার জীবনের নতুন অধ্যায় খুলেছে। বারবার প্রাণ ভরে শ্বাস নিচ্ছে সে। এই সময় সে আটকিয়ে রাখতে চায়। এখন যদি পাশে অরু বসে থাকতো তাহলে অনুভূতিটা আরো বেশি ভালো হতো। মেয়েটাকে কি কল করা যায়? ভেবে রেলিংয়ের উপর দাঁড়িয়ে প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বের করে স্ক্রিনের দিকে তাকালো। এখন প্রায় সাড়ে নয়টা। অরু কি ঘুমিয়ে পরেছে? না এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে ঘুমোবে? আর কিছু না ভেবে প্রিয় বলে সদ্য সেভ করা নাম্বারটায় কল দিলো। বুকের মধ্যে কেমন যেন করছে তার। যদি না ধরে? আর যদি ধরে তাহলে কী বলবে সে,কেন ফোন করেছে? এইসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ফোনের অপর পাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠ ভেসে আসল।

" হ্যালো!" সিয়াম কিছুক্ষণ থমকে দাঁড়িয়ে থাকল তারপর আমতা আমতা করে বলল,

"হ্যা.. হ্যালো! অরু! কেমন আছো?" কি বলবে বুঝতে পারছেনা কিন্তু এইটা ঠিক বুঝতে পারছে তার মুখ দিয়ে সব উল্টা পাল্টা বেরোচ্ছে।
অরু কিছুটা অবাক হলো সিয়ামের কথায়, আজ সকালেই তো কথা হলো তাহলে আবার হালহকিকত জিজ্ঞেস করছে কেন? সে আর কিছু না ভেবে শান্ত গলায় বলল,

" ভালো আছি! তুমি কেমন আছো?"

" আ... আমিও ভালো আছি। খেয়েছ রাতে?"

" হুম! খেয়েছি। তুমি?"

" না,খাবো!"

" ও!"

তারপরই কিছুক্ষণ দুই পক্ষই চুপ কেউ বুঝতে পারছে না তারা কি বিষয়ে কথা বলবে। একদিনের পরিচয়,এতোটা ঘনিষ্ঠ তারা হতে পারিনি যাতে অপর জনের পার্সোনাল বিষয়ে জিজ্ঞেস করবে।
অরু আমতা আমতা করে বলল,

"কোনো সমস্যা হয়েছে কী?"

" না, না, কোনো সমস্যা হয়নি। যাস্ট কথা বলতে ইচ্ছে করছিল তাই ফোন দিয়েছিলাম, ডিস্টার্ব করার জন্য সরি!" হর হর করে বলতে থাকলো সিয়াম।

" না,না,সরি কেন বলছ! তুমি যখন ইচ্ছে ফোন করতে পারো……এই অরু এই দিকে একটু আয় তো"হঠাৎ ফোনের ওপাশ থেকে আরেকটি মেয়ের গলা আসলো। অরুকে ডাকছে। অরু তাড়াহুড়ো করে বলল,

" আচ্ছা তাহলে পরে কথা বলি! আমার ফ্রেন্ড ডাকছে।"

" হ্যাঁ.. হ্যাঁ পরে কথা বলব।" বলা মাত্রই অরু ফোন কেটে দিল। সিয়াম কিছুক্ষণ ফোনের স্ক্রিনের দিকে চেয়ে থাকল। তারপর নিজের মাথায় একটা চাপড় মেরে নিজের মনে নিজেকে হাজারো গালি দিলো। অরুর সাথে কথা বলার সময় এমন সব আবোল তাবোল বলল, মেয়েটা কি ভাবলো? ভেবেই কুল পেলো না।

চলবে………

 #শুধুই_তুমি #লেখনীতে_রুদ্রিকা_বেদী #পর্ব_০২নিজেকে সংযত করে সোজা হয়ে দাঁড়ালো অরু। কী বলবে স্যারের প্রশ্নের প্রতি উত্তর...
25/01/2025

#শুধুই_তুমি
#লেখনীতে_রুদ্রিকা_বেদী
#পর্ব_০২


নিজেকে সংযত করে সোজা হয়ে দাঁড়ালো অরু। কী বলবে স্যারের প্রশ্নের প্রতি উত্তরে বুঝতে উঠতে পারছে না। ঝগড়া দেখতে যেয়ে দেরি হয়ে গেছে বললে যাও সম্মান আছে তাও থাকবে না! অরু কিছু ভেবে কাঁপা স্বরে বলল,

" স্যার! এক্সুয়ালি আমরা এসেছিলাম। তখন ক্লাস শুরু হয়নি,আধা ঘন্টা বাকি ছিল তাই একটু আশেপাশে গিয়েছিলাম তাতেই লেট হয়ে গেছে।"

কোনা রকম বলে হাঁপ ছাড়ল অরু সঙ্গে আয়শা আর সিয়ামও। ক্লাসের প্রত্যেকটা স্টুডেন্ট তাদের দিকে তাকানো। ক্লাসের মাঝখানে দাঁড়িয়ে এইরকম কৈফিয়ত দিতে হবে তা অরু জীবনেও ভাবিনি। তার থেকে বড়ো কথা সামনের ব্যাক্তি তাকে নিয়ে কি ভাবছে? অরু একপলক সামনে থাকা কালো শার্ট পরিহিত ব্যাক্তির দিকে চেয়ে মাথা নিচু করে নিলো।

" তোমাদের দেওয়া 'কারণে' যুক্তি দিয়ে অনেক ভাবে প্রতিবাদ করা যায় কিন্তু সেটা আমি করবো না। প্রথম দিন সবার সমস্যা হতেই পারে কিন্তু এই সেম মিস্টেক যেন আর দ্বিতীয় বার না হয়।"ধারালো কন্ঠে বলল সামনের ব্যাক্তি। তিন জনে একসঙ্গে মাথা নাড়িয়ে সাঁই দিলো যে এই ভুল আর হবে না। তিনি আরো বললেন,
" শুধু তোমাদের নয় এই ক্লাসের প্রত্যেকটা স্টুডেন্টদের উদ্দেশ্যে বলছি,এইরকম ভুল যেন না হয়।"

" স্যার বসবো?"হঠাৎ আয়শা মুখ ফসকে প্রশ্নটা করে বলল। প্রশ্নটা করেই বুঝতে পারল ভুল সময় ভুল কথা বলে ফেলেছে। অরু আর সিয়াম দুইজনই অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করল আয়েশার উপর। আয়শা কাচুমাচু হয়ে দাঁড়ালো। ব্যাক্তিটি সব দেখে মুচকি হেসে বলল,

" অবশ্যই বসবে!" বলেই নিজের আগের অবস্থানে ফিরে গেল তিনি

" থ্যাংকিউ স্যার!' স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তাড়াতাড়ি একটি বেঞ্চে বসলো তিনজনে। আয়েশার মাজা ভীষণ ব্যাথা করছে,সে মাজায় হাত দিয়ে মুখ কুঁচকে সামনের হাই বেঞ্চে হাত রাখলো। অরু সিয়াম ব্যাপারটা লক্ষ্য করল না।

" ওকে স্টুডেন্টস! অ্যাটেনশন প্লীজ! আজ যেহেতু ফাস্ট ইয়ার অর্থাৎ তোমাদের প্রথম দিন এবং প্রথম ক্লাস তাই আজ বেশি কিছু হবে না এই ক্লাসে! হবে শুধু পরিচয় এবং এর পরের ক্লাসে হবে তোমাদের অরেন্টেশন যা তোমাদের সিনিয়ররা করবে! আই হোপ তোমরা সবাই এক্সাইটেড?" পুরো ক্লাসের উদ্দেশ্যে করে বলল ব্যাক্তিটি।

" ইয়েস স্যার!" পুরো ক্লাস এক সংগে উৎসাহিত কন্ঠে বলল। অরুরও ভীষণ ভালো লাগছে। ভার্সিটি লাইফ যে এতো সুন্দর হবে সেটা কল্পনার বাইরে ছিল। কিন্তু এতো সবের মধ্যেও তার দৃষ্টি একজনের উপর আবদ্ধ। এতো সুন্দর একজন ব্যক্তি কীভাবে হতে পারে? মনে প্রশ্ন খেলতে শুরু করল অরুর। সে নিজের মনের প্রশ্নের ঝুড়িকে সাইডে রেখে আবারও সামনের ব্যাক্তির কথায় মনোযোগী হলো,

"পরিচয় পর্বের শুরুটা তাহলে আমি করি,আমি আব্রাম চৌধুরী রুদ্র! ইকোনমি থেকে গ্রাজুয়েশন দ্যান বিসিএস এন্ড নাউ শিক্ষকতায় আছি। "

"আব্রাম চৌধুরী রুদ্র!" নিজের অজান্তেই বলে বসল অরু তারপর নিজের উপর হেসে ফেললো।

আব্রাম চৌধুরী রুদ্রর ক্লাসের পর আরো একটা ক্লাস ছিল যেখানে ডিপার্টমেন্টের সিনিয়ররা এসে অরেন্টেশনের পর্ব কমপ্লিট করেছে। অরেন্টেশনের দরুন তারা দুইটা করে লাল গোলাপ পেয়েছে আর পেয়েছে ছোট ছোট কিউট চকলেট। যা দেখে আয়শার ব্যাথা গায়েব হয়ে গেছে। অরুর ক্লাসে আরো কয়েকজনের সাথে পরিচয় হয়েছে। সবাই খুব ফ্রেন্ডলি।
অরু আয়শা আর সিয়াম তিন জন যাচ্ছে ক্যান্টিনের উদ্দেশ্যে। সবার বেশ খিদে পেয়েছে। সেই সকালে অল্প কিছু খেয়ে বেরিয়েছে খিদে তো লাগবেই।
ক্যান্টিনে বেশ ভীড়। তারই মাঝে অরুরা কোনো রকমে একটা টেবিলে যেয়ে বসেছে। সিয়াম গিয়েছে অর্ডার করতে। অরুকে পাশ থেকে খোঁচা দিয়ে আয়শা বলল,

" রুদ্র স্যার কী হ্যান্ডসাম না রে? দেখলে মনে হয় শুধু দেখতে থাকি! উফ্ কি পার্সোনালিটি কি অ্যাটিটিউড। আর কন্ঠ,যাস্ট জোস!" কথা গুলো বলেই চেয়ারে হেলে পড়ল আয়শা মনে হলো কোনো ঘুমের জগতে প্রবেশ করেছে। অরু মুখ টিপে হাসল তার মানে এই অবস্থা শুধু তার একার হয়নি আশয়ারও হয়েছে। অরু উৎসাহিত কন্ঠে বলল,

" তা ঠিক বলেছিস! স্যারের পারসোনালিটি আছে!"

" তুমিও?!" হঠাৎ অরুর কথার মধ্যে পিছন থেকে বিরক্ত কন্ঠে সিয়াম বলে উঠলো,
" তুমিও এই সেম কথা বলছ অরু,আর পারা যাচ্ছে না। যেখানে যাচ্ছি সেখানেই রুদ্র স্যার! রুদ্র স্যার আর রুদ্র স্যার কি আছে এই রুদ্র স্যারের মধ্যে যার জন্য মেয়েরা এতো পাগল?

"কেন আবার কি হয়েছে!" সিয়ামের সামনে ঝুঁকে এসে আস্তে করে গম্ভীর কন্ঠে প্রশ্ন করল আয়শা,

" কী হবে আর! অর্ডার দিতে গিয়েছি সেখানেও মেয়েরা,
রুদ্র স্যার কি হ্যান্ডসাম। ক্রাশ খেয়েছি ব্লা ব্লা আরো অনেক কিছু!" মুখ বাঁকিয়ে বললো সিয়াম। ওর কথা বলার ভঙ্গি দেখে হেসেই ফেলল দুইজনে। ইস্ কি জ্বলছে! সেই জ্বলন্ত আগুনে আরো ঘি দিতে আয়শা বলল,

" তা ভুল কোথায় বলেছে শুনি? সত্যি কথাই তো বলেছে। আজ প্রমাণ হলো সত্যি সব সময় তিতা লাগে!" বলেই আবারও হেসে উঠলো আয়শা সাথে অরুও।

সিয়াম বিরক্তের পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে এবং বুঝেছে এদের সাথে তর্ক করে সে পারবে না। নিজেকে শান্ত করে এক পলক অরুর দিকে তাকালো। অরুর হাসি মাখা মুখটা দেখে সব বিরক্তিকর অনুভূতি দূর হয়ে গেছে। মনে শুধু বইছে প্রেমের অনুভূতি। এইটাই কী তাহলে লাভ এ্যাট ফাস্ট সাইড? কই এতো জন মেয়েদের সাথে রিলেশন করেছে কখনো এই অনুভূতি কাজ করেনি তার মনে তাহলে কি সে নিজের 'প্রিয়' কে খুঁজে পেয়েছে? এইসব ভাবছিল হঠাৎ অরু হাসতে হাসতে ওর চোখের দিকে তাকালো তখনই সিয়াম স্তব্ধ হয়ে গেলো। নিজেকে সামলিয়ে নিলোও সঙ্গে সঙ্গে।

দরজার সামনের বোর্ডে লেখা প্রফেসর আব্রাম চৌধুরী রুদ্র! ভিতরে চেয়ারে বসে মাথা হেলিয়ে ছাদের পানে চেয়ে আছে রুদ্র। একবছর হয়েছে সে জয়েন্ট করেছে ভার্সিটিতে অ্যাজ আ প্রফেসর। হঠাৎ ফোন বেজে উঠাই সোজা হয়ে বসল রুদ্র। ফোনের স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছে "মা" বলে সেফ করা নাম্বারটা। নাম দেখেই রুদ্রর রাশভারী চেহারায় একটা তৃপ্তির হাসি ফুটলো। নিজের কালো শার্টের হাতা গুটিয়ে কুনুই পর্যন্ত ভাঁজ করে কল ধরল,

"বলেন!" গলায় দুষ্টুমি খেলা করছে রুদ্রর।

" কি বলবো শুনি! তুমি কি কিছু বলার মতো রেখেছ?" ছেলের কথা শুনে ক্ষ্যাপা স্বরে ফোনের অপর পাশে থেকে বলল রুদ্রের মা মিসেস রাবেয়া চৌধুরী।

" আমি যদি কিছু না বলার মতো রাখি তাহলে এতো কথা বললে কিভাবে মা জননী?" টেবিলের উপর হাত রেখে কিছুটা ঝুঁকে বলল রুদ্র।

" মসকরা করছিস তুই আমার সাথে? তোর এই ছেলেমানুষীর চক্করে নিজের নাতি নাতনির মুখ না দেখে কেটে পড়তে হবে এই দুনিয়া থেকে,বয়স তো কম হলো না!"

" তুমি কি আমাকে বুড়ো বলছো?"

" তোকে বুড়ো বলতে যাবো কেন! আমি আমার আর তোর বাপের কথা বলছি, বয়স তো কম হলো না তারউপরে হ্যার্টের পেশেন্ট,এখন যদি নিজের ছেলের বউকে আর নাতি নাতনি না দেখে এই ধরিত্রীকে বিদায় জানাই ওপরে আল্লাহর কাছে কি জবাব দিবো…?" তিরিক্ষি স্বরে বললেন মিসেস রাবেয়া চৌধুরী।

" কি বলবে! এখন যা বলছ উপরে যেয়েও তাই বলবে।" বলেই নিঃশব্দে চাপা হাসলো রুদ্র।

" তারমানে তুই আমাকে আর তোর বাবাকে বৌমার মুখ না দেখিয়ে উপরওয়ালার কাছে চলে যেতে বলছিস, ছিঃ বাবু! ছিঃ!" কান্না কান্না ভাব নিয়ে বললেন মিসেস চৌধুরী। নিজের মায়ের এহেন অভিনয়ে রুদ্র খুব ভালো করে অভ্যস্ত। আবারও হেসে গলায় গাম্ভীর্য বজায় রেখে বলল,

" আমি কি তা একবারের জন্যও বলেছি মা। তোমার অভিনয় কবে থামাবে একটু বলবা?"

" যবে তুই বিয়ে করবি তবেই অভিনয় থামাবো!"
" আচ্ছা এই বিষয়ে বাড়িতে যেয়ে কথা বলি আমার এখন ক্লাস রয়েছে,ক্লাসে যেতে হবে।"

" হ্যাঁ! তুমি অন্যের পোলাপানের ক্লাস নাও নিজের বাচ্চাকাচ্চাদের আর নিতে হবে না।"
বলে ফোন কেটে দিলেন মিসেস চৌধুরী।

রুদ্রও চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। তার মা যদি তার তিক্ত অতীতের ব্যাপারে জানতো তাহলে আর বিয়ে কথা বলতো না। সে কী এই রকম রগচটা লোক ছিল? না তাকে বানিয়ে দিয়ে চলে গেছে তার প্রিয়তমা যে এখন তার জীবনের দুঃস্বপ্ন। এই দুঃস্বপ্নের মধ্যে সে তো আর কাউকে ভালোবাসতে পারবে না,বিয়ে তো দূরের কথা! খালি খালি একটা মেয়ের জীবন নষ্ট! এই ভেবে নিজের মনেই হাসলো রুদ্র।

চলবে,,,,

Address

Jessore

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when রুদ্রিকা বেদী - Rudrika Bedi posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share