
30/01/2025
#শুধুই_তুমি
#লেখনীতে_রুদ্রিকা_বেদী.
#পর্ব_০৫
"অরু স্যার, তোকে বলছে।" আয়শা পাশ থেকে ফিসফিস করে বলল। কথাটা অরুর কানে যাওয়া মাত্র সোজা হয়ে বসল কিন্তু রুদ্রের দিকে তাকালো না।রুদ্র ব্যাপারটা দেখে বাঁকা হাসল তারপর অরুর একদম সামনে এসে দাঁড়ালো। অরু তখনও চুপ চাপ দৃষ্টি অন্যদিকে নিক্ষেপ করে রইল। রুদ্র নিজের শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো,
"উঠো!" অরু সাথে সাথে উঠে দাঁড়ালো। মুখ তুলে রুদ্রের দিকে তাকালো। রুদ্র শান্ত এবং স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। এবং পুরো ক্লাস ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। রুদ্র আবার বলে উঠল,
"তোমার নাম যেন কী?" অরু কিছুক্ষণ চুপ থেকে স্লান কন্ঠে বলল,
"অরুণিমা ইফতি!" ছোট করে উত্তর দিয়ে আবার নিচে তাকালো অরু। কেন জানি আজ ওর কিছুই ভালো লাগছে না। তার পছন্দের রুদ্র স্যার ভালো ভাবে কথা বলার পরেও সে সেটা হজম করতে পারছে না। রুদ্র নামটা শুনে মাথাটা হালকা নাড়িয়ে নিজের হাস্কি কন্ঠে বলল,
"সো অরুণিমা,ইউ উইল বি দ্যা CR!"রুদ্রের দেওয়া আদেশ অরুর কানে আসতেই অরু মাথা তুলে বিস্ফারিত চোখে তাকালো রুদ্রের মুখের পানে। রুদ্রের মুখে এক তৃপ্তির হাসি। চোখের দৃষ্টি অরুর উপর। অরু আমতা আমতা করে বলল,
"স্যার! আ..আমি,আমি?"
"হ্যাঁ! তুমি! তুমি মেয়েদের পক্ষ থেকে এবং ছেলেদের পক্ষ থেকে,,"বলেই পুরো ক্লাসের সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে একজন ছেলের উপর দৃষ্টি স্থির করল। তার পর চোখের ইশারায় তাকে উঠে দাঁড়াতে বলা হলো। অরুসহ পুরো ক্লাস ছেলেটির দিকে তাকালো। ছেলেটি হাসি হাসি মুখে উঠে দাঁড়ালো। রুদ্র তাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
"তোমার নাম কি?"
"স্যার! আমার নাম রাশেদ খান।" উৎসাহিত কন্ঠে প্রায় চেঁচিয়ে উঠলো। তার চোখে উৎকন্ঠা স্পষ্ট। রুদ্র তাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
"তুমি হবে ছেলেদের পক্ষের CR।" কথাটা রাশেদের কানে যাওয়া মাত্রই রাশেদ প্রায় লাফিয়ে উঠল। তার কান্ড দেখে পুরো ক্লাস হেসে ফেললো সাথে অরুও। রুদ্র তাকিয়ে থাকল আগের মতো করেই। রাশেদ নিজেকে শান্ত করে উৎসাহিত কন্ঠে বলল,
"ওকে স্যার!" রুদ্র ব্যাপারটা বুঝেছে এমন ভান করে মাথা নাড়াল তারপর নিজের জায়গায় ফিরে যাচ্ছিলো তখনই অরু আস্তে করে স্যারকে থাকল। ইতিমধ্যে ক্লাসে আবারও হইচই পরে গিয়েছে। রুদ্র অরুর দিকে তাকালো তারপর ওর দিকে এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। অরু একটু হেসে আমতা আমতা করে বলল,
"স্যার,আমি CR হতে চাই না। আমি এতো বড় দায়িত্ব পালন করতে পারবনা। প্লীজ আপনি অন্য কাউকে দেন।"
"এই জন্যই তো তোমাকে দিচ্ছি। আমি জানি তুমি দায়িত্ব জ্ঞানশূন্য একটা মেয়ে। সেই কারণে তোমাকে আমি CR দিচ্ছি যাতে তুমি একটু দায়িত্ব সম্পর্কে জানো এবং সময় মতো ক্লাসে উপস্থিত হতে পারো।"
নিজের রাশ ভারি কন্ঠে অরুর আবেদন উপেক্ষা করে ভাবলেশহীন ভাবে বলল রুদ্র। অরু রুদ্রের বলা কথাগুলো শুনে রাগে অপমানে লাল হয়ে উঠলো। রুদ্র নিজের অবস্থানে প্রস্থান করল। অরু ওর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইল। ক্লাসের বাকিরা রুদ্রের শোনানো কথা না শুনলেও পাশে বসে থাকা আয়শা আর সিয়ামের কানে কথাগুলো ঠিকই গিয়েছে। সিয়ামের কানে কথা গুলো তীরের মতো লাগলো। অরু বসে পড়ল। আয়শা পাশ থেকে ওর হাত ধরে কাঁধে মাথা রেখে গলা কিছুটা নামিয়ে বলল,
"বান্ধবী রাগ করিস না। স্যার মানুষ আর কিইবা এক্সপেক্ট করতে পারি।"
অরু এখনো সামনে তাকিয়ে আছে। আয়শার কথা যেন ওর কানেই গেলো না। অরু কেমন অন্যমনস্ক হয় ঝিম ধরা কন্ঠে বলল,
"ঠিকই কথা শুনিয়ে দিলো।" আয়শা কি বলবে বুঝতে উঠতে পারল না। ও চুপ করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকল। সিয়ামও তাকিয়ে আছে। ওর মনে অরুর জন্য খারাপ লাগা আর রুদ্রের উপর মেজাজ গরম হওয়া দুই অনুভূতি কাজ করছে।
"ওকে, সাইলেন্ট স্টুডেন্ট'স, আমি.......
হঠাৎ রুদ্রের ফোন বেজে উঠল। পুরো ক্লাস এক মুহুর্তের জন্য চুপ। রুদ্র প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বের স্ক্রিনে দিকে তাকালো। ফোনের স্ক্রিনে 'আপি' নামটা জ্বলজ্বল করছে। রুদ্র অবাক হলো। বিথী তো এই টাইমে ফোন করে না। রুদ্র আর কিছু না ভেবে ফোন রিসিভ করল,
"হ্যালো ভাইয়া! তাড়াতাড়ি বাড়িতে আয় মা ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ডাক্তার আংকেল এসেছেন,তুই তাড়াতাড়ি আয়।"
রুদ্রর কিছু বলার আগেই ফোনের অপর পাশ থেকে বিথী ভয়ার্ত কন্ঠে কথাগুলো বলে উঠলো। রুদ্র স্তব্ধ হয়ে গেল। অপর পাশে বিথী ইতিমধ্যে ফোন কেটে দিয়েছে। ক্লাসে হইচই পড়ে গেল। তাতে রুদ্র হুঁশ ফিরল। রুদ্র এক মুহুর্ত দেরি না করে ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে গেল। ক্লাসের প্রত্যেকটা স্টুডেন্ট বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইল। অরু আয়শা দুইজন দুইজনের মুখের পানে চাইল। অরুর যতই রাগ থাকুক লোকটার উপর, এইরকম হন্তদন্ত হয়ে বেড়িয়ে যাওয়া মোটেও ভালো লাগলো না। কোনো অঘটন ঘটল নাকি। কে জানে? সিয়াম একটু হাঁপ ছাড়ল।
রুদ্রের ক্লাস শেষ। ক্লাসের বাকি সময় রুদ্র আর আসেনি। ওর জায়গা আরেক জন প্রফেসর এসে ওর ক্লাস হ্যান্ডেল করেছে। তিনি রুদ্রের ব্যাপারে তেমন কিছু বলতে পারি নি শুধু বলেছে কোনো একটা সমস্যা হয়েছে যার জন্য চলে গিয়েছে। পরবর্তী ক্লাস শুরু হতে এখনো এক ঘন্টা বাকি। একটা ব্রেক পাওয়া গেছে। তিনজনে ক্লাস থেকে বেরিয়ে ভার্সিটির বটতলা যেয়ে বসেছে। অরু একবার তানিয়াকে ফোন দিয়েছে। তানিয়া ফোন ধরেনি, তানিয়া ক্লাসে রয়েছে। সবার মুড তেমন একটা ভালো না। আয়শা মাঝেমাঝে পরিবেশ ভালো করার জন্য মজার মজার কথা বলে উঠছে কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হচ্ছে না উল্টে সিয়াম ওর দিকে আড়চোখে গিলে ফেলার দৃষ্টিতে তাকিয়েছে। যার জন্য আয়শাও চুপ হয়ে বসে রয়েছে। অরু এইসবের কোনো কিছুতেই পাত্তা দিলো না। ওর মনে শুধু একটা কথা ঘুরছে রুদ্র হঠাৎ ওমন ভাবে বেরিয়ে গেল কেন? কী সমস্যা হতে পারে? সিয়াম ওর দিকে তাকিয়ে ছিল। অরুকে হারিয়ে থাকতে দেখে বলল,
"এখনো রাগ করে আছো স্যারের কথায়?" আয়শাও আগ্রহসহ দৃষ্টিতে অরুর দিকে তাকালো। সিয়ামের কথায় অরুর চটকা ভেঙ্গে গেল ,সে সিয়াম আর আয়শার পানে চাইল, তারপর হাসার চেষ্টা করে বলল,
"না তো! স্যারের কথায় আমি বিন্দু মাত্র রাগ করিনি। স্যার তো কোনো ভুল কথা বলেননি, যার জন্য রাগ করবো।"
"হ্যাঁ মানছি স্যার ভুল কথা বলেননি কিন্তু স্যার ওই ভাবে না বলেও তো পারতেন, ভুল তো যে কারো হতে পারে,উনি নিজে কি বিন্দু মাত্র ভুল করেন না?" উত্তেজিত হয় পড়ল সিয়াম।
"উনি সেটা বলতে চাননি। পরপর দুদিন লেট করে আসলে যে কারো মনে হতে পারে সামনের ব্যক্তি দায়িত্ব জ্ঞানশূন্য। আমারও মনে হতো। এইটা ন্যাচেরল। উনি আমার শিক্ষক উনার কথায় রাগ করলে তো কিছু শিখতে পারব না।" অরুর বলা কথাগুলো সিয়ামের মনে অরুর জন্য আরো অনুভূতি শক্ত করে দিল। কি সরল সহজ মেয়ে। কি সুন্দর ভাবে মানুষের স্বভাবকে বোঝে। ওর চোখে এক তৃপ্তি খেলে গেল। যে করেই হোক এই মেয়েকে জয় করতে হবে তার। সিয়াম বলল,
"তুমি এখনও স্যারের পক্ষে কথা বলছ?"
"এখানে তো কারো পক্ষ হয়ে কথা বলার বিষয় না। আমি শুধু বলছি স্যার যা করেছেন ঠিক করেছেন হয়তো আমার জন্য সেটা কিছুক্ষণের জন্য খারাপ লেগেছিল কিন্তু এখন আমি ঠিক আছি এবং পরবর্তীতে নিজেকে আরো দায়িত্বশীল করে তোলার চেষ্টা করবো।" হেসে কথা গুলো বলল অরু। অরুর কথা শুনে সিয়াম কিছু বলতে যাবে তার আগেই আয়শা উঠে দাঁড়িয়ে বলা শুরু করল,
"আমি অরুর সাথে একদম একমত। স্যারের দিক থেকে স্যার একদম ঠিক আছেন।" বলেই বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলো আয়শা। সিয়াম উঠে দাঁড়ালো, আয়শার মাথা একটা চাটি মেরে ভ্রু জোড়া উঁচু করে বলল,
"তুমি তো স্যারের সাইড নিবেই, তোমার প্রিয় ব্যক্তি বলে কথা।" সিয়ামের কথা শুনে মুখগুলো ফুলিয়ে উঠল আয়শার, সে মুখ বাঁকিয়ে বললো,
"মোটেও না সিমুর বাচ্চা, (সিয়ামকে মজা করে সিমু বলা হয়) যেটা ঠিক সেটাকে ঠিক বলেছি। তোর কি অনেক জ্বলছে।"
দুইজনের একপর্যায়ে ঝগড়া বেঁধে গেল। কিন্তু অরুর সেই দিকে কোনো খেয়াল নেই। সে নিজেও জানে না কেন বারবার আশেপাশের জগত থেকে বিছিন্ন হয়ে পড়ছে। অরু দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ল,,,
বৃহস্পতিবার,
গত সপ্তাহের বুধবার রুদ্রকে শেষ দেখেছিল অরু। আজ বৃহস্পতিবার,আজ নিয়ে আট দিন হয়েছে রুদ্র ভার্সিটিতে আসে না। মাঝে এই নিয়ে ক্লাসের সবার মধ্যে চর্চা হচ্ছিল। কিন্তু এখন সেটাও থেমে গিয়েছে। এই লোকটার ব্যক্তিগত জীবন সমন্ধে তেমন ভাবে ডিপার্টমেন্টের কোনো প্রফেসরই জানে না। অরুদের ক্লাসে সবার মধ্যে কৌতুহলী হলেও ফার্স্ট ইয়ার বলে কেউ জিজ্ঞেস করার সাহস করছে না। সিনিয়র হলেও যে করা যেত তেমন কোনো কথা নেই। সবার নিজের ব্যক্তিগত জীবন আছে এবং তাতে প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু হয়েই চলেছে। অরুও এখন তেমন একটা মাথা ঘামাচ্ছে না। সে প্রায় ভুলেই গিয়েছে।
তিনজন ক্যান্টিনে বসে আছে। আজকের মতো ক্লাস শেষ। অরু অপেক্ষা করছে তানিয়ার। তানিয়া আয়শা আর সিয়ামের কাউকেই চেনে না। আজ ওদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে। তানিয়া লাস্ট ক্লাস চলছে। আর আধা ঘন্টা। বড় ক্যান্টিন। চারটি সাড়িতে টেবিল রয়েছে। দুই রো করে ভাগ করা, মাঝখান দিয়ে লম্বালম্বি যাতায়াতের পথ। প্রত্যেকটা টেবিলে চারটে করে চেয়ার। ক্যান্টিনের দেওয়ালের রং খসে পড়েছে। দেখে বোঝায় যায় পুরাতন। মাথার উপর রয়েছে প্রতিটি চারটে টেবিলে একটি করে ফ্যান। শীতের সময় বলে যা এখন বন্ধ রয়েছে। মাঝখানে রয়েছে বড়ো এলিডি লাইট। আপাতত ক্যান্টিনের চার দেওয়ালে বড়ো বড়ো জানালা দিয়ে আসা আলোতে সব কিছু সুস্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যার জন্য লাইটি বন্ধ। বসে নানা বিষয়ে আড্ডা দিচ্ছে তিন জনে। তার মধ্যেই সিয়াম একটা প্রস্তাবনা দিয়ে বসেছে। আগামী দুই দিন ভার্সিটি বন্ধ। তাই হাতে সময় রয়েছে ভালোই যেহেতু এখনো কেউ টিউশনিতে বা পার্টটাইম জবে যায়নি, এবং নতুন বন্ধুত্ব হওয়ায় বারবিকিউ পার্টি করার। ভার্সিটির স্টুডেন্টদের জন্য এইটা নরমাল পার্টি। অরু আর আয়শা প্রস্তাবনা শুনে খুশিই হয়েছে। সবাই রাজি পার্টি করার জন্য। এর অরু একটু অপ্রস্তুতভাব নিয়ে বলল,
"ভালো আইডিয়া। কিন্তু আমার একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিল।"
"একটা কথা কেন যত খুশি তত কথা বল।" উৎসাহিত প্রায় চিৎকার করে বলল আয়শা। আশেপাশের টেবিলে বসা ছাত্র ছাত্রী তাদের দিকে তাকালো। তাতে আয়শার বিন্দু মাত্র যায় আসে। সে নিজের গতিতেই কথা বলতে থাকল।
"এক্সুয়ালি, এই পার্টিতে কি আমি আমার ফ্রেন্ড তানিয়াকেও ডাকতে পারি?" সংকোচের সুরে জিজ্ঞেস করল অরু। সিয়াম ওর বিপরীতে বসে ছিল। ওর দিকে হালকা ঝুঁকে এসে বলল,
"অবশ্যই পারবে। যত জন খুশি ডাকতে পারো। বেশি ফ্রেন্ড হলেই তো বেশি মজা হবে। তোমার অন্য কোনো ফ্রেন্ড থাকলে তাদেরকেও আসতে বলতে পারো। এর জন্য আবার জিজ্ঞেস করার কি আছে।" সিয়ামের কথায় আয়শা বাচ্চাদের মতো মাথা নেড়ে একমত পোষণ করল। তাকে থেকে অরু আর সিয়াম হেসে ফেলল। কি বাচ্চাম্তি করতে পারে আয়শা!
আরো বেশ সময় ধরে ওদের আড্ডা চলল। তারই মধ্যে এসে আড্ডায় যোগ দিয়েছিল তানিয়া।অরু সবার সাথে তানিয়ার পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। একদিনেই তারা বেশ ভালো বন্ধু হয়ে গেলো। অরু মনে মনে নিজের ভাগ্যের প্রশংসা করতে ভুলল না। ভাগ্য করে এমন বন্ধু পেতে হয়। যেটা তার আছে।
বারবিকিউ পার্টিটা আগামীকাল দুপুর বেলায়। বিকালে করতে চেয়েছিল কিন্তু বেশি রাত হয়ে যাবে বলে পার্টিটা দুপুরেই রাখা হয়েছে। পার্টি আয়শার বাড়িতে হবে। ওর মা হেল্প করবে ওদের।
তিনদিন হয়েছে ঘরের একমাত্র জানালায় পর্দা লাগিয়েছে। ভার্সিটি থেকে আসার সময় নিউমার্কেট থেকে অরু আর তানিয়া পছন্দ করে বেবি ব্লু রং এর দুইটা পর্দা কিনেছে। ভীষণ সুন্দর দেখতে। পুরো সাদা ঘরে ওই একমাত্র রঙিন জীবন। পর্দায় সুন্দর করে সাদা সুতো দিয়ে পাতার কাজ করা রয়েছে,যা পর্দাকে আরো সুন্দর করে তুলছে। পর্দা টাঙানোর পর থেকে ঘরে জীবন এসেছে। ঘরে কেবল মাত্র দেওয়াল ঘড়ির টিক টিক শব্দ হচ্ছে। আয়শা ঘুমাচ্ছে। তার পাশে আধ শোয়া হয়ে বই পড়ছে অরু। মিসির আলী,দেবী বইটি। হুমায়ূন আহমেদ স্যারের লেখা এতো সহজ সরল হয় কিভাবে সেটাই মাঝে মাঝে ভেবে পায় না অরু। স্বল্প এবং সরল ভাষায় নিজের মনের ভাব প্রকাশ করা যায় তা হুমায়ূন স্যারের বই না পড়লে জানতে পারতো না অরু। তার গল্পের বই পড়ার হাতে খড়ি হয় হুমায়ূন স্যারের 'ছেলেটা' বই দিয়ে। ভীষণ প্রিয়।।
সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে বইয়ে ডুবে ছিল অরু হঠাৎ তার সাইলেন্ট করা ফোন ভাইব্রেটিং হতে শুরু করল। অরু খেয়াল হতেই বইটি সযত্নে পাশে রেখে ফোনটি হাতে নিলো। স্ক্রিনে ' মা ♥️' নাম দিয়ে সেফ করা নাম্বারটি জ্বলজ্বল করে উঠলো। অরুর ঠোঁটের কোণে হাঁসির রেখা দেখা গেলো। সে সঙ্গে সঙ্গে কল রিসিভ করল।
"কেমন আছিস মা?" কলের অপর পাশ থেকে খাদিজা বেগম বলে উঠলেন।
" ভালো আছি। তুমি কেমন আছো? বাড়ির সবাই কেমন আছে?" শান্ত এবং মিষ্টি ভাব বজায় রেখে প্রশ্ন করল অরু।
"ভালো আছি রে! আর বাড়ির সবাই ভাল আছে। তোকে খুশির খবর দেওয়ার আছে।" উৎসাহিত কন্ঠে বলল খাদিজা বেগম।
"কি খুশির খবর?" কৌতুহলী এবং উত্তেজিত কন্ঠে বলল অরু।
খাদিজা বেগম কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
" আনিকার বিয়ে ঠিক হয়েছে, কালকেই বিয়ে। ঘরোয়া ভাবে হবে সম্পূর্ণ ভাবে। আজ সন্ধ্যায় গায়ে হলুদ। তুই বিকালের বাস ধরে চলে আয়।" খাদিজা বেগম নিজের কন্ঠ স্বর এমন খাদে নামালেন যেন ওনার কথা অন্য কেউ না শুনতে পায়। অরু কিছুটা অবাক হলো। এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে বিয়ে ঠিক করল আনিকা আপুর। সে কি এই বিয়েতে রাজি। প্রশ্ন গুলো আর চেপে রাখতে না পেরে খাদিজা বেগমের কাছে একের পর এক প্রশ্ন করে ফেলল অরু। প্রশ্নের প্রতি উত্তরে খাদিজা বেগম বললেন,
"ছেলে ভালো, পরিবার ভালো। একমাত্র ছেলে। শহরের সম্মানিত ব্যক্তি ছেলের বাবা। এমন ছেলে আর পরিবার এখন সচরাচর পাওয়া যায় না। আর আনিকার তো সামনের মাসেই মাস্টার্স শেষ হবে। বিয়ের কথা তো এমনই হচ্ছিল বাড়িতে। সমন্ধ এসেছে আনিকার কাছে জিজ্ঞেস করা হয়েছে সেও মর্জি জানিয়েছে। আর ছেলের পরিবার চায় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে করে মেয়েকে নিয়ে যাবে। তোর এতো কিছু জানতে হবে না, তুই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বেরিয়ে পর। সাথে তানিয়াকে নিয়ে আসিস।" খাদিজা বেগম বলা শেষ করলেন।
অরু বুঝতে পারল ছেলের পরিবারের অনেক তাড়া আছে তাই এতো তাড়াহুড়ো। কিন্তু এতো সর্ট নোটিশে কিভাবে কি করবে? এই কথা বলতেই খাদিজা বেগম তেজ দেখিয়ে বললেন,
"আমি কোনো কথা শুনে চায় না। তুই এক্ষুনি বেরিয়ে পরবি। বাসস্টপে তোর ভাইয়া আর বাবা তোকে নিতে যাবে।" বলে ফোনটা কেটে দিলেন খাদিজা বেগম। অরু নিরাশ হয়ে পুরোপুরি শুয়ে পড়ল। মাকে কীভাবে বোঝাবে এতো তাড়াতাড়ি আসা সম্ভব না তার পক্ষে। কিন্তু বাড়ির একমাত্র বড়ো মেয়ের বিয়ে বলে কথা বাড়ির একমাত্র ছোট মেয়ে সেই বাড়িতে উপস্থিত না থাকলে কেমন যেন হয়ে যাবে ব্যাপারটা। ব্যাপারটা ভেবে নিজের মনেই হেসে উঠলো,অরু। তাহলে যেতেই হয়। এখন সবার আগের কাজ তানিয়াকে তার কাঁচা নিন্দা ভঙ্গ করিয়া উঠানো।।
অরু তার মিশনে লেগে পড়ল।
তানিয়া তো মহানন্দে লাফালাফি জুড়ে দিয়েছে। কতো দিন পর এমন বিয়ে যাবে সে। দুই জন প্রায় তাড়াহুড়ো করে এদিকে ওদিকে ছুটাছুটি করছে। ফ্লাটের মালকিনকে বলেছে,
"আন্টি দুদিনের জন্য আমরা আমার বাড়িতে যাচ্ছি।"
তিনি অবাক হয়ে বললেন,
"হঠাৎ? কোনো ঝামেলা হয়েছে নাকি বাড়িতে?"
"না,না, আন্টি তেমন ব্যাপার না। আমার বড়ো আপুর বিয়ে তাই যেতে হবে।"
অরুর কথা শুনে বেশ খুশী হলো ফ্লাটের মালকিন। তিনি অরুর আপুর জন্য দোয়া করে দিয়ে বললেন,
"তোমার আপু সারাজীবন খুশি হবে দেখো! আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি। তোমরা তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়ো আর সমাধানে যেও।" বলে তিনি নিজের ঘরে চলে গেলেন।
অরু খুশি মনে জামা কাপড় গুছিয়ে নিলো সাথে তানিয়াও।।
চলবে.....
[কালকে যেহেতু পর্ব দেওয়া হয়নি তাই আজ একসাথে একটু বড়ো করে দিলাম, কেমন লেগেছে জানাবেন ♥️]