12/01/2024
গল্পঃ বেস্টফ্রেন্ড যখন বউ
পর্ব_০১+২+৩
লেখকঃ আরিয়ান আহমেদ শুভ
সকালবেলা ঘুমাইতেছি এমন সময় পুরো খাট কাঁপতেছে, আমি ভাবছি ভূমিকম্প হইতেছে। তাড়াতাড়ি উঠে দৌড় দিছি, একটু দূরে গিয়ে দেখি ভূমিকম্প টা শুধু আমার বিছানার উপর হইতেছে। গিয়ে দেখি মোবাইলে কল আসছে। সালার মোবাইল vibration mode ছিলো আমার জানা ছিলো না। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি তন্নির কল। কলটা রিসিভ করতেই বলতে শুরু করলো….
তন্নিঃ ওই কুত্তা, কল ধরিস না কেন?
আমিঃ সরি রে ঘুমে ছিলাম। এবার বল এতো সকাল সকাল কল দিলি কেন?
তন্নিঃ আজকে একটু তাড়াতাড়ি ক্যাম্পাসে আছিস। তোদের একটা গুড নিউজ দিবো।
আমিঃ কি গুড নিউজ?
তন্নিঃ সেটা ক্যাম্পাসে এলে দেখতে পারবি। আর সানি, আয়মানকেও বলে দিস, তাড়াতাড়ি আসার জন্য। আমি ফারিয়াকে বলে দিছি।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে। এখন ফোন রাখ, ফ্রেশ হবো।
তন্নিঃ ওকে
টুট টুট টুট কলটা কেটে দিলো। আমি উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। চলেন ফ্রেশ হতে হতে আপনাদের পরিচয় টা দিয়ে দিই। আমি জুয়েল, আপাতত স্টুডেন্ট লাইফে আছি। একটু আগে যে কল করেছিলো সে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড তন্নি।
ফ্রেশ হওয়া শেষ। নাস্তা করে ক্যাম্পাসে চলে গেলাম। গিয়ে দেখি আমি ছাড়া সবাই বসে আছে। আমি যাওয়ার পর পরই তন্নি রাগ লুক নিয়ে আমাকে বললো…
তন্নিঃ কিরে হারামি তোকে আজকে একটু তাড়াতাড়ি আসতে বললাম আর তুই আজকে দেরি করে আসলি?
আমিঃ সরি রে, রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিলো।
সানিঃ তোর জন্য তো সব সময় জ্যাম থাকে। আমরা রাস্তা দিয়ে আসি না?
আমিঃ এই হারামখোর তুই চুপ থাক। সব সময় শুধু চামচামি করস।
ফারিয়াঃ আচ্ছা বাদ দেনা, এখন তন্নি কি বলবি তাড়াতাড়ি বল। আমরা ক্লাসে চলে যাবো।
তন্নিঃ আজকে কোনো ক্লাস হবে না। আজকে আমরা একটা পার্টি দিবো।
সানিঃ দেখ এখন এগুলো করার সময় নেই। অন্যদিন করবো। আগে বল তোর কি কথা আছে।
তন্নিঃ দোস্ত আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। ছেলে অনেক বড় ব্যবসায়ী। কালকে আমাকে রিঙ পড়িয়ে দিয়ে গেছে।
তন্নির কথা শুনে আমার মাথার উপর যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। সেই কলেজ লাইফ থেকে তন্নিকে আমি অনেক ভালোবাসি কিন্তু ফ্রেন্ডশিপ নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে কখনো বলতে পারিনি। আমি চেয়েছিলাম আগে নিজে নিজের পায়ে দাঁড়াই, ভালো একটা চাকরী পাই তারপর তন্নিকে আমার মনের কথা বলবো। কিন্তু এটা কি হলো। না আমি কিছু ভাবতে পারছি না। আমার মাথা ব্যথা করতেছে।
এদিকে সানি, আয়মান আর ফারিয়া তন্নিকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। আমার নীরবতা দেখে তন্নি বললো…
তন্নিঃ কিরে তোর আবার কি হইছে? তুই খুশি হসনি?
আমি তাড়াহুড়া করে বললাম…
আমিঃ হুম আমি অনেক খুশি হইছি।
তন্নিঃ তাহলে তুই এইভাবে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
আমিঃ দোস্ত তুই সত্যিই বিয়েটা করবি?
তন্নিঃ হুম অবশ্যই, এর থেকে ভালো ছেলে আর কোথায় পাবো আর তাছাড়া বিয়ের বয়সও হয়ে গেছে।
আমিঃ………. (চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম)
আয়মানঃ আচ্ছা বাদ দেতো, এখন বল বিয়ে কখন?
তন্নিঃ এইতো আগামী শুক্রবার। তোরা সবাই অবশ্যই আসবি। এই নে কার্ড।
একথা বলে আমাদের সবাইকে একটা করে কার্ড দেয়। আমার কেন জানি বুক ফেটে কান্না আসছে। মনে হচ্ছে আমার জীবন থেকে অনেক বড় কিছু একটা চলে যাচ্ছে। নিজের অজান্তেই চোখের কোণে পানি চলে আসলো। আমার এমন অবস্থা দেখে তন্নি বললো…
তন্নিঃ কিরে কি হইছে তোর? কাঁদতেছিস কেন!
আমি তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে বললাম…
আমিঃ আরে না, এমনি। তোর বিয়ে হবে শুনে খুশিতে চোখে পানি চলে আসলো।
তন্নিঃ পাগল! আচ্ছা শুন। রায়হান কল দিচ্ছে। আমি একটু বাইরে যাচ্ছি। তোরা থাক।
আয়মানঃ এই রায়হান টা আবার কে?
তন্নিঃ আরে তোদের দুলাভাই। আচ্ছা থাক পরে কথা হবে, Bye Bye
তন্নি চলে গেলো, আমি অভাব দৃষ্টিতে ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। আস্তে আস্তে চোখটা ঝাপসা হয়ে গেলো। মনে হয় আবার পানি এসে জমা হয়ে গেছে।
এমন সময় ফারিয়া বললো….
ফারিয়াঃ আচ্ছা আমি ক্লাসে যাচ্ছি। তোরা কেউ যাবি?
সানিঃ তুই যা, আমরা একটু পর আসছি।
ফারিয়াঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
তারপর সানি আর আয়মান আমার কাছে এসে বলে…
সানিঃ কিরে ঘটনা কি?
আমিঃ কিসের ঘটনা?
আয়মানঃ তোর চোখে পানি কেন?
আমিঃ এমনি পানি চলে আসছে।
সানিঃ তুই কি ভাবছিস আমরা কিছু বুঝি না? আমরা তোর বন্ধুনা?
আয়মানঃ এখনো সময় আছে, বলে দে তুই যে তন্নিকে ভালোবাসিস।
আমিঃ কিসব বলছিস তোরা?
সানিঃ দেখ এখন নাটক করার সময় নেই, যদি সত্যিই ভালোবাসিস তাহলে তাকে বলে দে। কিছু হবে না, আমরা আছি।
আমি আর কিছু না বলে সোজা ক্যাম্পাস থেকে বাসায় চলে আসলাম। সোজা রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। তন্নির কথা ভাবছি আর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। ওর কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি মনে নেই।
ঘুম থেকে উঠে দেখি সন্ধ্যা হয়ে গেছে। সেই ১১.০০ টার সময় ঘুমাইছি আর এখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। তন্নির কথা মাথা থেকে কিছুতেই যাচ্ছে না। এরমধ্যে আম্মু আমার রুমে আসে এবং বলে…
আম্মুঃ কিরে এই অবস্থা হইছে কেন তোর?
আমিঃ কি হইছে আমার!
আম্মুঃ চোখ, মুখ লাল হয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে তুই কান্না করেছিস.
আমিঃ আরে পাগল নাকি, আমি কেন কান্না করবো! অসময়ে ঘুমাইছি তাই হয়তো চোখ লাল হয়ে আছে। পানি দিলে ঠিক হয়ে যাবে।
আম্মুঃ আচ্ছা ঠিক আছে ফ্রেশ হয়ে আয়, আমি চা নিয়ে আসতেছি।
এরপর ফ্রেশ হয়ে চা খেয়ে সাদে চলে গেলাম। এককোণে গিয়ে বসলাম আর চাঁদটার দিকে তাকিয়ে আছি। মনের মধ্যে শুধু তন্নির সাথে কাটানো সময় গুলো উঁকি দিচ্ছে।
খুব ইচ্ছে করছে চিৎকার দিয়ে বলি “তন্নি আমি তোকে ভালোবাসি, অনেক ভালোবাসি। কিন্তু পারছি না। মনের মধ্যে অজানা একটা ভয় চেপে রেখেছে। একটু পর দেখলাম তন্নি কল করেছে। কলটা ধরতে ইচ্ছে করছে না। কয়েকবার দেওয়ার পর রিসিভ করলাম…..
চলবে,,,,
গল্পঃ বেস্টফ্রেন্ড যখন বউ
পর্বঃ 02
লেখকঃ আরিয়ান আহমেদ শুভ
তন্নিঃ কিরে তুই কল ধরিস না কেন?
আমিঃ একটু ব্যস্ত ছিলাম। কি বলবি বল।
তন্নিঃ শুননা দোস্ত কালকে আমরা শপিং করতে যাবো। তুইও আমাদের সাথে যাবি।
আমিঃ সরি আমি পারবো না। তুই সানি বা আয়মানকে নিয়ে যা। তাছাড়া ফারিয়াতো তোর সাথে আছেই।
তন্নিঃ না ওরা কেউ যাবে না। প্লিজ তুই চল।
আমিঃ দেখ আমার একটু কাজ আছে। আমি যেতে পারবো না।
তন্নিঃ আমি এতো কিছু বুঝি না, তুই যাবি।
এরপর সে কলটা কেটে দিলো। এমনিতে ওর জন্য অনেক কষ্ট হচ্ছে, এরমধ্যে যদি শপিং এ যাই তাহলে আমার মাথা আরো খারাপ হয়ে যাবে। না কিছুই মাথায় ঢুকছে না। যা হওয়ার তা পরে হবে। আমি কালকেই তন্নিকে আমার মনের কথা বলে দিবো।
পরেরদিন ঘুম ভাঙ্গলো তন্নির কলে, মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি ২২ টা কল দিছে। তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে তন্নিকে একটা টেক্সট পাঠালাম যে আমি আসছি।
সারাদিন তন্নির সাথে শপিং করলাম, কথা গুলো বলতে চেয়েও পারলাম না। কেমন জানি অস্বস্তি লাগছে। তন্নির দিকে খেয়াল করে দেখলাম ও অনেক খুশি। এখন কথা গুলো কিভাবে বলবো, যদি ফ্রেন্ডশিপ নষ্ট করে ফেলে?
আমি আর কিছু না ভেবে সোজা বাসায় চলে আসলাম। চিন্তা করলাম এখানে আর থাকবো না। তন্নিকে চোখের সামনে অন্য কারো হতে দিতে পারবো না।
মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম তন্নিকে সব কথা খুলে বলবো, যদি সে রাজি হয় তাহলে এখানে থেকে যাবো আর যদি রাজি না হয় তাহলে দেশের বাইরে চলে যাবো। তাড়াতাড়ি করে আম্মুর কাছে গেলাম। গিয়ে বললাম….
আমিঃ আম্মু আমি বাইরে চলে যাবো। এখানে আর পড়ালেখা করবো না।
আম্মুঃ তুই না বলেছিলি এখানে তুই বন্ধুদের সাথে থাকবি, বাইরে যাবি না।
আমিঃ সেটা আগে বলেছিলাম। এখন আমি আর দেশে থাকবো না। তুমি আব্বুকে ভিসা প্রসেসিং করতে। আমি শুক্রবারের আগে চলে যাবো।
আম্মুঃ এতো তাড়াতাড়ি কি হবে? সময় লাগবে।
আমিঃ এতো কিছু আমি জানি না। আমি শুক্রবারের আগে যেতে চাই।
আম্মুঃ আচ্ছা তোর আব্বু বাসায় আসুক আমি তারসাথে কথা বলবো।
আমি আর কিছু না বলে সোজা নিজের রুমে চলে গেলাম। বসে বসে ভাবতে লাগলাম তন্নিকি আমাকে মেনে নিবে? নাকি আমাদের বন্ধুত্বটাই নষ্ট করে দিবে!
যেটা হবে হোক, আমি বলবোই। এইভাবে ২ দিন চলে গেলো। তন্নির বিয়ের তারিখটাও চলে আসলো। বৃহস্পতিবার বিকালবেলা সানি আর আয়মান আমাদের বাসায় এসে বসে আছে। কারণ একসাথে তন্নির হলুদে যাবে। আমার মোবাইল বন্ধ দেখে বাসায় চলে আসছে।
আমিও গেলাম, দেখলাম ওরা বাবার সাথে কি যেন আলাপ করতেছে,আমাকে দেখে সবাই চুপ হয়ে গেলো। এরপর বাবা আমাকে বললো….
বাবাঃ তন্নির বিয়ে আগে বলতি, তোর ফ্লাইট কয়েকদিন পরে করতাম।
আমি কিছু না বলে উঠে চলে যাচ্ছিলাম এমন সময় বাবা বলে…
বাবাঃ শুন কোথায় যাচ্ছিস?
আমিঃ বাবা ওদের সাথে যাচ্ছি।
বাবাঃ আচ্ছা যেখানেই যা, তাড়াতাড়ি আসিস। আজরাত ৯.০০ টায় তোর ফ্লাইট। কথাটা যেন মাথায় থাকে।
সানি আর আয়মান আমাদের কথা শুনে হা করে দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো ভাবছে এতো অল্প সময়ের ভিতরে কিভাবে কি করলাম। এবং ওদের না জানিয়ে, এরপর আমি উঠে রেড়ি হয়ে ওদের সাথে তন্নির বাসায় চলে গেলাম।
ওখানে যাওয়ার পর আমাদের আরো অনেক গুলো বন্ধুকে দেখলাম। সানি আর আয়মান ব্যস্ত হয়ে গেছে। আমি একপাশে গিয়ে বসে আছি। আর তন্নিকে খুঁজতেছি। কিন্তু দেখতেছি না, মনে হয় সাজতেছে।
একটু পর তন্নি বের হয়ে আসলো, সাথে আরো কতোগুলো মেয়ে সহ। আজকে তাকে অনেক সুন্দর লাগছে। যেকেউ দেখলেই প্রেমে পড়ে যাবে। আমারও আর ব্যতিক্রম কিছু হলো না। ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছি।
একটু পর তার ধাক্কায় বাস্তবে ফিরে এলাম…
তন্নিঃ কিরে এইভাবে হা করে কি দেখছিস?
আমিঃ কিছু না। (মাথা নিচু করে)। তন্নি তোর সাথে আমার কিছু সিরিয়াস কথা আছে।
তন্নিঃ কি কথা বল!
আমিঃ এখানে না, সাদে চল।
তন্নিঃ এখন সাদে যাবো! আচ্ছা ঠিক আছে চল।
তারপর আমি আর তন্নি সাদে গেলাম, গিয়ে আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম। আমার নীরবতা দেখে তন্নি বললো…
তন্নিঃ কিরে চুপ কেন, কি বলবি তাড়াতাড়ি বল। আমার নিচে অনেক কাজ আছে।
আমিঃ তন্নি তোকে আমি ভালোবাসি, সেই যেদিন তোকে প্রথম দেখেছিলাম সেদিন থেকে। তোর আমার ফ্রেন্ডশিপ নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে আমি এতো দিন কিছু বলিনি।
তন্নিঃ দেখ এখন মঝা করার সময় না। কি বলবি বল, আমি নিচে চলে যাচ্ছি।
আমিঃ তন্নি বিশ্বাস কর আমি সত্যিই তোকে অনেক ভালোবাসি।
তন্নিঃ দেখ ফাইজলামি বন্ধ কর, নাটক দেখে দেখে তুইও নাটক শুরু করে দিয়েছিস।
আমিঃ আমি সত্যিই তোকে অনেক ভালোবাসি। তন্নি তোকে ছাড়া আমি আমার জীবন কল্পনা করতে পারি নারে। প্লিজ তুই বিয়েটা বন্ধ করে দে।
তন্নিঃ দেখ তোর ড্রামা বন্ধ কর। কালকে আমার বিয়ে আর তুই বলছিস বিয়ে বন্ধ করতে! ছিঃ তুই এতো নিছু আগে জানতাম না। তুই জাস্ট আমার ফ্রেন্ড এর থেকে বেশি কিছু না।
আমিঃ আমি তোকে অনেকবার বলতে চেয়েও পারিনি। আমি সত্যি বলছি আমি তোকে অনেক ভালোবাসি।
একথা বলে আমি তন্নির গালে একটা কিস বসিয়ে দিই, আর সে রাগি ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে অনেক জোরে একটা ধাক্কা দেয়। এবং ঠাসসসস ঠাসসসস, দু গালে চড় বসিয়ে দেয়। আর বলতে থাকে….
তন্নিঃ ছিঃ আমার ভাবতেই অবাক লাগে তোর মতো ছেলের সাথে আমি ফ্রেন্ডশিপ করেছি তাও আবার বেস্ট ফ্রেন্ড।
আমিঃ……….
তন্নিঃ কালকে আমার বিয়ে আর তুই আজকে এসেছিস আমাকে প্রপোজ করতে! তোর একটুও লজ্জা সরম নেই?
আমিঃ তুই আমার কথাটা শোন।
তন্নিঃ তোর কোনো কথাই আমি শুনবো না, তুই এখনিই আমাদের বাসা থেকে চলে যা তোকে যেন আর কোনো দিন আমার সামনে না দেখি, তোর আর আমার ফ্রেন্ডশিপ এখানেই শেষ। আজ থেকে তুই আমার সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগ করার চেষ্টা করবি না।
আমিঃ তন্নি প্লিজ আমার কথাটা শোন…..(পুরোটা বলতে না দিয়ে)
তন্নিঃ তোর সাথে আর কোনো কথা নাই। তুই এখান থেকে চলে যা নাহলে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো।
আমি আর কিছু না বলে চোখ মুছতে মুছতে সেখান থেকে বেরিয়ে গেলাম।
এরপরেই তো…….
চলবে…….
গল্পঃ বেস্টফ্রেন্ড যখন বউ
Part: 03
লেখকঃ আরিয়ান আহমেদ শুভ
এরপর বাসায় গিয়ে রেড়ি হয়ে বাবা আর আমি এয়ারপোর্ট এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। সানি, আয়মান কাওকে কিছু জানালাম না। এরপর এয়ারপোর্ট থেকে বাবার কাছে থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলাম দেশ ছেড়ে। অনেক কষ্ট হচ্ছিলো প্রিয় মানুষ গুলোর জন্য, কিন্তু আমি এখানে থাকলে হয়তো আরো বেশি কষ্ট পাবো।
যাওয়ার আগে নিজের ভার্চুয়াল জগৎ এর সব কিছু ডিলিট করে দিলাম। একটা নাম্বারও ওপেন রাখলাম না। সেখানে গিয়ে বেশ কিছু দিন মন খারাপ করে বসে ছিলাম। পরে নতুন বন্ধু, নতুন ক্যাম্পাস পেয়ে তন্নির কথা প্রায় ভুলেই গেলাম। আসতে আসতে ওখানকার পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিলাম।
দেখতে দেখতে ২ বছর চলে গেলো, আমার পড়ালেখাও শেষ। চিন্তা করলাম এখানেই কোনো চাকরী করবো, কিন্তু সেটা আর হলো না। আব্বু আম্মু কল দিয়ে কান্নাকাটি করতেছে। আব্বুকে অনেক বার বলছি আমি এখানে চাকরি করবো বাট আব্বু বললো নিজেদের ব্যবসা দেখাশুনা করার জন্য। সেদিন রাতে বসে বসে ল্যাপটপ এ কিছু কাজ করছি এমন সময় বড় খালা আসলো (আমি বিদেশে বড় খালার কাছেই থাকি আর ওখান থেকেই পড়ালেখা করি) আমার রুমে, আমি খালাকে দেখে বললাম…
আমিঃ খালামনি ঘুমাও নি এখনো?
খালাঃ নারে বাবা ঘুম আসছে না। তুই কি করতেছিস?
আমিঃ কিছু না খালামনি, একটু কাজ করতেছি। কিছু বলবে?
খালাঃ হুম বাবা একটা কথা বলতাম যদি তুই অনুমিত দিস।
আমিঃ আরে কি আজব! আমার সাথে কথা বলার জন্য তোমাএ অনুমিত লাগবে নাকি? বলো কি বলবে।
খালাঃ দেখ বাবা আমার কোনো সন্তান নেই, তুই আমার নিজের সন্তানের মতোই। তুই যেদিন এখানে এসেছিলি আমি যে কি পরিমাণ খুশি হইছি তোকে বলে বোঝাতে পারবো না। আমি ভাবছি তোকে আমি সারাজীবন আমার কাছেই রেখে দিবো কিন্তু সেটাতো অসম্ভব।
আমিঃ কেন অসম্ভব? আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাচ্ছি না। আর তোমার সন্তান নেই কে বলেছে আমিই তোমার সন্তান।
খালাঃ কাল রাতে তোর আম্মু কল করেছিলো।
আমিঃ হুম, কি বলেছে?
খালাঃ অনেক অসুস্থ, সারা দিন বাসায় থাকতে থাকতে ওর অনেক কষ্ট হয়। তোর বাবাও বাইরে বাইরে থাকে। তাই আমি বলছিলাম কি! তুই দেশে ফিরে যা। তোর মায়ের কাছে থাক। আর একটা ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে করে ফেল। তোর মা বাবাও অনেক খুশি হবে।
আমিঃ খালামনি সব কিছু ঠিক আছে বাট আমি দেশেও যাচ্ছি না এন্ড বিয়েতো ইম্পসিবল।
এরপর খালামনি আমার হাত ধরে বললো….
খালাঃ প্লিজ বাবা এমন করিস না। তোর মা বাবার কথা একবার চিন্তা কর। ওদের কি ইচ্ছে করেনা ছেলের বউ এর সাথে সময় কাটাতে, নাতিদের সাথে একটু খেলা করতে। প্লিজ বাবা তুই দেশে ফিরে যা। প্রয়োজন এ মাঝে মাঝে এখানে আসিস। কিছদিন থাকবি ঘুরবি ভালো লাগবে। প্লিজ বাবা না করিস না।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে দেখি।
খালাঃ দেখি না, তুই কালকেই যাবি। এই নে টিকেট।
এ কথা বলে আমার হাতে একটা টিকেট ধরিয়ে দিলো। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম…
আমিঃ খালামনি এটা কখন করলে?
খালাঃ তোর এতো কিছু জানার দরকার নেই, আর শুন আমি কিছু জিনিষ কিনে রেখেছি ওগুলো নিয়ে যাবি। এখন ঘুমা।
পরের দিন সব কিছু ঠিকঠাক করে খালামনির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম দেশে। বাবা মা আগে থেকেই এয়ারপোর্ট এ ছিলো, আমাকে দেখেই কান্না শুরু করে দিলো।
মায়ের দিকে তাকিয়ে আমি অবাক হয়ে গেলাম, অনেক অসুস্থ, ঠিকমতো দাঁড়াতেও পারছে না। বাবার অবস্থাও আগের মতো নেই।
এরপর বাব আর মায়ের সাথে বাসায় গিয়ে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়লাম। আগের সিমটা আবার ওপেন করলাম। কল আর মেসেজ এসে পুরো সিম ফুল হয়ে আছে। একটা জিনিষ দেখে খারাপ লাগলো। তন্নি একটি বার কলতো দূরের কথা একটা মেসেজও দেয়নি। হয়তো অনেক সুখে আছে। অনেক ভালো আছে, তাই আমাকে আর প্রয়োজন মনে করেনি। চোখের কোণে পানি এসে জমা হয়ে গেলো।
আমি সানির নাম্বারটাতে কল দিলাম, কয়েকবার দেওয়ার পর কল ধরেই সানি বলতে শুরু করলো….
সানিঃ কিরে তুই বাঁইচা আছিস?
আমিঃ কেন মরলে খুশি হতি নাকি?
সানিঃ এই সালা কথা বলবি না তুই। তোর সাথে কোনো কথা নাই। আমি তোর কেউ না।
আমিঃ প্লিজ ভাই রাগ করিস না। তোকে আমি সব কিছু বলবো।
সানিঃ কিচ্ছু বলতে হবে না তোর। তুই তোর মতো থাক।
আমিঃ আচ্ছা শুন বিকেলে কফিশপ এ আয়, তোদের সাথে দেখা করবো আর কিছু কথা আছে। আয়মান আর ফারিয়াকে একটু কষ্ট করে বলে দিস।
সানিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
একথা বলে কলটা কেটে দিলাম। বিকালবেলা বের হয়ে কফিশপের দিকে রওনা দিলাম। রাস্তাঘাট সব কিছু কেমন যেন চেইঞ্জ হয়ে গেছে।
একটু পর কফিশপে গেলাম গিয়ে দেখি সবাই বসে আছে। আজকেও আমার লেইট হয়ে গেছে। আমাকে দেখেই ওরা দৌড় দিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে ফেলে। এরপর ৩ জনে মিলে ১০ মিনিট কিল আর ঘুসি দেয়
এতো দিনের জমানো সব গুলো একসাথে দিয়ে দেয়। ওদের সাথে কৌশল বিনিময় করলাম। তারপর সানিকে বললাম…
আমিঃ তো তোর আর কি অবস্থা? চাকরী বাকরি কিছু করিস নাকি?
সানিঃ হুম, একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে আমি আর ফারিয়া একসাথে জব করি।
আমিঃ গুড, আয়মান তুই কি করিস?
আয়মানঃ কি আর করবো! বাবার সাথেই আছি ব্যবসা নিয়ে। তো তুই কি করবি দেশে থাকবি নাকি আবার উধাও হয়ে যাবি?
আমিঃ আরে না, তোদের ছেড়ে আর যাচ্ছি না। তো তোর বউ কোথায়?
আয়মানঃ আরে আমি এখনো বিয়ে করিনি। তবে আব্বা ওনার বন্ধুর মেয়ের সাথে ঠিক করে রাখছে। ওর পড়ালেখা শেষ হলে তারপর বিয়ে।
আমিঃ আচ্ছা ভালো, তোদের দুজনের কি অবস্থা? (সানি আর ফারিয়াকে বললাম)
দেখি দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হাসতেছে। এরপর আয়মান বললো…
আয়মানঃ মামা ওরা নিজেরা নিজেরা সারাই ফেলছে!
আমিঃ কিহ! তোরাও এই কাজ করলি। যাক খুশি হলাম, সারাজীবন একসাথে ছিলি এখনও থাকবি। ভালো হইছে।
সানিঃ তো তুই কবে করছিস?
আমিঃ হা হা হা আমার মতো ছেলেকে কে মেয়ে দিবে বল?
ফারিয়াঃ ধুর ফাইজলামি করিস না।
আমিঃ এই তন্নি কেমন আছেরে? মনে হয় অনেক সুখে আছে তাই না?
একথা শুনার পর ওরা ৩ জন একে অপরের দিকে তাকাতে লাগলো, এরপর আয়মান বললো….
আয়মানঃ আসলে তন্নির বিয়ে হয়নি!
আমিঃ মানে! মস্করা করছিস তাই না? দেখ জোকস এখন ভালো লাগেন।
ফারিয়াঃ নারে, আয়মান ঠিক বলছে ওর বিয়ে হয়নি।
আমিঃ কি বলছিস তোরা? বিয়ে হয়নি কেন?
আয়মানঃ তুই তো সেদিন চলে গিয়েছিলি, তাহলে তুইও দেখতি কেন বিয়ে হয়নি।
আমিঃ এতো কথা না বলে বিয়ে কেন হয়নি সেটা বল।
আয়মানঃ আসলে রায়হান ছেলেটা অন্য একটা মেয়ের সাথে রিলেশন ছিলো। বিয়ের দিন সে ওই মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যায়।
আমিঃ তারপর!
চলবে,,,,,