06/10/2024
খারেজিরা হজরত আলী (রা)-কে কাফের ঘোষণা দিয়ে হত্যা করেছিলো। আলী (রা)-এর বিরুদ্ধে যেসব খারেজি বিদ্রোহ করেছিলেন, তাদের প্রায় সবাই ছিলো কোর’আনে হাফিজ। খারিজিদের মুখে ছিলো লম্বা দাঁড়ি, এবং কপালে ছিলো নামাজের দাগ। খারিজিদের নেতা আবদুল্লাহ ইবনে ওহাব রাসিবী এতো বেশি ইবাদাত ও সিজদা করতো যে, তার সিজদার স্থানসমূহের চামড়া শুকিয়ে গিয়েছিলো।
খারিজিদের মধ্যে যারা আলী (রা)-কে হত্যা করা পরিকল্পনা করেছিলো, তারা আলী (রা)-কে হত্যা করার জন্যে রমাজান মাস আসার অপেক্ষা করেছিলো। তাদের ধারণা ছিলো, রমাজান মাসে একটা কাফির হত্যা করতে পারলে বেশি সাওয়াব পাওয়া যাবে।
কিতাম বিনতে শাজানাহ নামক যে সুন্দরী নারী বলেছেন, “আমাকে বিয়ে করতে হলে আলীকে হত্যা করতে হবে”, সে নারী দিনরাত সারাক্ষণ মসজিদে ইবাদাত-বন্দেগীতে নিমগ্ন থাকতেন।
আলী (রা)-এর হত্যাকারী ইবনে মুলজিম তার সহযোগী শাবীবকে বলেন – “তুমি কি দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ লাভ করতে চাও? যদি চাও, তাহলে আলীকে হত্যা করতে হবে।
ইবনে মুলজিম যখন আলী (রা)-এর মাথায় তলোয়ার দিয়ে আঘাত করছিলো, তখনো সে জোরে জোরে কোর’আনের আয়াত তেলোয়াত করেছিলো। আলী (রা)-কে হত্যা করার সময়ে সে বলছিলো – “আল্লাহ ছাড়া কারোও হুকুম করার অধিকার নেই। হে আলী! তোমারও নেই এবং তোমার অনুসারীদেরও নেই”। হত্যাকারী তখন সূরা বাকারার ২০৭ নং আয়াত পড়ছিলো – “মানুষের মধ্যে এমন লোকও আছে, যে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভার্থে আত্ম-বিক্রয় করে থাকে। আল্লাহ তাঁর বান্দাগণের প্রতি অত্যন্ত দয়ার্দ্র”।
খারিজিদের মূল কাজ হলো, তারা নিজেদেরকে সবচেয়ে ভালো মুসলিম দাবী করে, এবং অন্য সবাইকে কাফির বা ভ্রান্ত ঘোষণা করে। এমন চরিত্রের মানুষ এখনো আমাদের সমাজে বিদ্যমান। খারিজিদের বিরুদ্ধে নাহরাওয়ান যুদ্ধ শেষ করে ফেরার পথে সৈন্যরা আলী (রা)-এর কাছে এসে বলতে লাগলেন, “হে আমীরুল মুমিনীন! সেই আল্লাহর প্রশংসা যিনি খারিজীদের মূলোৎপাটন করে দিয়েছেন”। আলী (রা) তখন তাদেরকে বললেন, “কখনো না, আল্লাহর কসম! তারা অবশ্যই পুরুষ লোকের পৃষ্ঠদেশে এবং মেয়ে লোকের গর্ভে বিদ্যমান আছে। যখন তারা তাদের বাবা-মা থেকে বেরিয়ে আসবে, তখন তাদের সাথে যার-ই সাক্ষাৎ হবে, তার উপর প্রাধান্য বিস্তারের জন্যে তারা ফিতনা সৃষ্টি করতে থাকবে।” আলী (রা)-এর এই ভবিষ্যৎ বাণী আমরা এখনো দেখতে পাই৷
ছবি পরিচিতি : ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়ায় খারেজি সম্প্রদায়ের ঈদে মিলাদুন্নবী বিরোধী মিছিল।