18/06/2023
السَّـــــــلَامُ عَلَيــْــكُمْ وَرَحْمَةُ اللّٰهِ وَبَرَكَـــاتُهُ
(( জিজ্ঞাসা ))
জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশদিনের আমল ও ফযীলত!
(( উত্তর/জবাব ))
জিলহজ্ব মাসের চাঁদ উদিত হওয়ার পর থেকে দশ তারিখ পর্যন্ত যত দিন সম্ভব নফল রোযা রাখা আর রাতের বেলা বেশী বেশী ইবাদত করা যথা নফল নামায,কুরআন তিলাওয়াত, তাসবীহ-তাহলীল, তাওবা-ইস্তিগফার ও রোনাজারী ইত্যাদি ইবাদতের মাধ্যমে রাত কাটানো।
ফযীলত
عن أبي هريرة عن النبي صلى الله عليه و سلم : قال ما من أيام أحب إلى الله أن يتعبد له فيها من عشر ذي الحجة يعدل صيام كل يوم منها بصيام سنة وقيام كل ليلة منها بقيام ليلة القدر
হযরত আবু হুরায়রা রা.থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জিলহজ্বের দশ দিনের ইবাদত আল্লাহর নিকট অন্য দিনের ইবাদত তুলনায় বেশী প্রিয়,প্রত্যেক দিনের রোযা এক বছরের রোযার ন্যায় আর প্রত্যেক রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের ন্যায় ।{তিরমিজী শরীফ,হাদীস নং-৭৫৮, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৩৭৫৭, কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল আফআল, হাদীস নং-১২০৮৮}
عن ابن عباس عن النبي صلى الله عليه و سلم أنه قال ما العمل في أيام العشر أفضل من العمل في هذه
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-এই দশ দিনের আমল অপেক্ষা অন্য দিনের আমল প্রিয় নয়। {বুখারী শরীফ,হাদীস নং-৯২৬}
২–
যারা কুরবানী করার ইচ্ছে পোষণ করছেন, তারা জিলহজ্ব মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার পর থেকে হাত পায়ের নখ, মাথার চুল ও অবাঞ্ছিত চুল ইত্যাদি কাটবে না, যদি ৪০ দিন না হয়ে থাকে এগুলো না কাটার মেয়াদ। যদি ৪০ দিনের বেশি হয়ে থাকে, তাহলে এসব কেটে ফেলা আবশ্যক। নতুবা ১০ দিন পর কুরবানীর পর পরিস্কার করবে। এ কাজটি সুন্নাত।
عن أم سلمة أن النبي صلى الله عليه وسلم قال اذا دخلت العشر فأراد أحدكم أن يضحي فلا يمس من شعره ولا من بشره شيئا
অনুবাদ-হযরত উম্মে সালমা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন যে, যখন [জিলহজ্বের প্রথম] ১০ দিনের সূচনা হয়, আর তোমাদের কেউ কুরবানী করার ইচ্ছে করে, সে যেন চুল-নখ ইত্যাদি না কাটে। {সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-৪৪৫৪, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৩১৪৯, সুনানে বায়হাকী, হাদীস নং-১৮৮০৬, মুসনাদুল হুমায়দী, হাদীস নং-২৯৩, মুসনাদে আবী আওয়ানা, হাদীস নং-৭৭৮৭, মুসনাদুশ শাফেয়ী, হাদীস নং-৮৪৬, মাশকিলুল আসার, হাদীস নং-৪৮১১}
৩-
যারা হজ্বে যায়নি, তাদের জন্য জিলহজ্ব মাসের নয় তারিখ রোযা রাখা সুন্নাত।
ফযীলত
صيام يوم عرفة أحتسب على الله أن يكفر السنة التي قبله والسنة التي بعده
অনুবাদ-হযরত আবু কাতাদা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-আরাফার দিনের রোযার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, এ রোযা তার পূর্বের ও পরের বৎসরের গোনাহ মুছে ফেলবে। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৭৪০}
তবে যারা হজ্বে গিয়েছেন, তাদের জন্য এদিন রোযা না রাখা উচিত।
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- نَهَى عَنْ صَوْمِ يَوْمِ عَرَفَةَ بِعَرَفَةَ
অনুবাদ-হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ আরাফার দিনে আরাফার ময়দানে রোযা রাখতে নিষেধ করেছেন। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২৪৪২, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৮১৭২, কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আক্বওয়াল ওয়াল আফআল, হাদীস নং-২৩৯২৩, আল মুজামুল আওসাত, হাদীস নং-২৫৫৬}
أُمَّ الْفَضْلِ – رضى الله عنها – تَقُولُ شَكَّ نَاسٌ مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- فِى صِيَامِ يَوْمِ عَرَفَةَ وَنَحْنُ بِهَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- فَأَرْسَلْتُ إِلَيْهِ بِقَعْبٍ فِيهِ لَبَنٌ وَهُوَ بِعَرَفَةَ فَشَرِبَهُ.
অনুবাদ-হযরত উম্মুল ফযল রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-লোকেরা আরাফার দিন নবী কারীম সাঃ রোযা রেখেছেন কি না? তা নিয়ে সন্দেহে পতিত হলে আমি রাসূল সাঃ এর পানীয় প্রেরণ করলাম, আর নবীজী সাঃ তা পান করলেন। [ফলে সবাই নিশ্চিত হলেন যে, রাসূল সাঃ রোযা রাখেন নি। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৬৫১}
৪-
তাকবীরে তাশরীক বলা।
যিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখের ফজর থেকে তের তারিখের আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর একবার তাকবীর বলা ওয়াজিব। পুরুষের জন্যআওয়াজ করে,আর মহিলাদের জন্য নীরবে।
তাকবীর হল-আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ।
প্রমাণ-
ফাতওয়া শামী-তৃতীয় খন্ড,৬১ পৃষ্ঠা,সালাত অধ্যায়,ঈদ পরিচ্ছেদ,
ইলাউস সুনান, সালাত অধ্যায়, তাকবীরাতুত তাশরীক পরিচ্ছেদ, ৮ম খন্ড, ১৪৮ পৃষ্ঠা}
ফযীলত
عن بن عباس : أنه كان يكبر من غداة يوم عرفة إلى آخر أيام التشريق
হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ আরাফার দিন তথা ৯ ই জিলহজ্বের ফজর থেকে আইয়ামে তাশরীকের শেষ দিন পর্যন্ত পর্যন্ত তথা ১৩ ই জিলহজ্ব [আসর নামায] পর্যন্ত তাকবীরে তাশরীক পড়তেন। {সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৬০৭১, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৫৬৮১}
৫-
ঈদুল আজহার রাতে বেশি বেশি ইবাদত করা উত্তম।
ফযীলত
عن أبي أمامة عن النبي صلى الله عليه و سلم قال ( من قام ليلتي العيدين محتسبا لله لم يمت قلبه يوم تموت القلوب )
অনুবাদ-যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার রাতে সওয়াবের নিয়তে জাগরিত থেকে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকবে, তাহলে যে দিন অন্যান্য দিল মরে যাবে সেদিন তার দিল মরবে না। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৭৮২, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩৭১১, কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আক্বওয়াল ওয়াল আফআল, হাদীস নং-২৪১০৫, জামিউল আহাদীস, হাদীস নং-২৩২৯৬}
[এ হাদীসটি দুর্বল]
৫-
ঈদের দিনের সবচে বড় আমল হল ঈদের নামায শেষে কুরবানী করা।
১০, ১১ম ১২ যিলহজ্বের যে কোন একদিন,কোন ব্যক্তির মালিকানায় যদি নিত্য প্রয়োজন অতিরিক্ত সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ, অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রোপা বা এর সমমূল্যের সম্পদ থাকে, {বর্তমান বাজার মূল্যে যা ৮৪,০০০/= প্রায়} তাহলে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।
পুরুষ-মহিলা সকলের উপরই এ বিধান প্রযোজ্য।
প্রমাণ-ফাতওয়া শামী-৯/৪৫৩, ৪৫৭
•••==•◐◉✦❀✺❀✦◉◑•==•••