নীলফামারী জেলার পটভূমি
দুই শতাধিক বছর পূর্বে এ অঞ্চলে নীল চাষের খামার স্থাপন করে ইংরেজ নীলকরেরা। এ অঞ্চলের উর্বর ভূমি নীল চাষের অনুকূল হওয়ায় দেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় নীলফামারীতে বেশি সংখ্যায় নীলকুঠি ও নীল খামার গড়ে ওঠে। ঊণবিংশ শতাব্দীর শুরুতেই দুরাকুটি, ডিমলা, কিশোরগঞ্জ, টেঙ্গনমারী প্রভৃতি স্থানে নীলকুঠি স্থাপিত হয়।
সে সময় বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের মধ্যে নীলফামারীতেই বেশি পরিমাণে শস্য উৎপাদিত হত
ো এখানকার উর্বর মাটির গুণে। সে কারণেই নীলকরদের ব্যাপক আগমন ঘটে এতদঅঞ্চলে। গড়ে ওঠে অসংখ্য নীল খামার। বর্তমান নীলফামারী শহরের তিন কিলোমিটার উত্তরে পুরাতন রেল স্টেশনের কাছেই ছিল একটি বড় নীলকুঠি।
ধারণা করা হয়, স্থানীয় কৃষকদের মুখে ‘নীল খামার’ রূপান্তরিত হয় ‘নীল খামারী’তে। আর এই নীলখামারীর অপভ্রংশ হিসেবে উদ্ভব হয় নীলফামারী নামের।
নীলফামারী একটি প্রাচীন জনপদ। ঐতিহাসিক বিভিন্ন নিদর্শন ও প্রাচীন গ্রন্থাদি থেকে এ অঞ্চলে আদিম জনবসতির অস্তিত্বের কথা জানা যায়। খ্রিস্টপূর্ব নবম শতকে খননকৃত বিরাট রাজার দীঘি অপভ্রংশে বিন্নাদীঘি নীলফামারীর প্রাচীন ইতিহাসের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এছাড়াও বিলুপ্তপ্রায় ধর্মপালের গড়, হরিশচন্দ্রের পাঠ, ভীমের মায়ের চুলা, ময়নামতির দূর্গ এ জেলার ঐতিহাসিক নিদর্শন।
হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত নীলফামারী জেলা হিমালয় পর্বত বাহিত পলল দিয়ে গঠিত। করতোয়া, আত্রাই ও তিস্তা নদের পলিমাটি এ অঞ্চলের মৃত্তিকা গঠন ও ভূমির উর্বরতা বৃদ্ধি করেছে।নীলফামারীর এ ভূ-পৃষ্ঠকে পাদদেশীয় পাললিক সমভূমি বলা হয়। বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিবর্তনে নীলফামারীর নদীপথ বারংবার গতিপথ পরিবর্তন করে ক্রমশঃ উর্বর সমভূমি অঞ্চলে পরিণত হয়েছে।
বহু ঘটনার প্রাণ কেন্দ্র নীলফামারী। বিভিন্ন প্রত্ন, প্রস্ত থেকে নীলফামারী জেলার মৃত্তিকাগর্ভে অদিম জনবসতির অস্তিস্ব অনুমান করা যায়। উর্বর ভূগর্ভের ফলে অত্র অঞ্চলে বিভিন্ন স্থানের লোকের আগমন ঘটে। কালের পরিক্রমায় যুদ্ধবিগ্রহের মধ্য দিয়ে তারা স্থায়ীভাবে এখানে বসবাস স্থাপন করে। কৃষক বিদ্রোহ, নীল বিদ্রোহ, তেভাগা আন্দোলন, ৫২ এর ভাষা আন্দোলন ও ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ নীলফামারীর ইতিহাসে অন্যতম অধ্যায়। প্রত্যেকটি বিদ্রোহ-সংগ্রামে নীলফামারীর লোকজন ছিল প্রতিবাদমুখর।
প্রায় বিশ লক্ষ জনসংখ্যা অধ্যুষিত নীলফামারী জেলা একটি অবহেলিত, দারিদ্রপিড়ীত ও পিছিয়ে পড়া অঞ্চল হিসাবে পরিচিত। অসম ভূমি মালিকানা, ভূমিহীনদের সংখ্যাধিক্য, কৃষি নির্ভরতা, শিল্পায়নের অভাব এবং বেকারত্ব এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক অনগ্রসরতার মূল কারণ। আর্থ-সামাজিক ও অবকাঠামোগত অনেক সমস্যা থাকা সত্বেও জমির উর্বরতা, তিস্তা ব্যারেজের মাধ্যমে নদীর পানি নিয়ন্ত্রন করে কৃষি কাজে ব্যবহার, জনশক্তির প্রাচুর্য প্রভৃতি কারণে এ অঞ্চল এখনও দেশের অন্যতম খাদ্য উদ্বৃত্ত অঞ্চল হিসাবে পরিগনিত। শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করে জনশক্তির সঠিক ব্যবহার ও শিল্পোন্নয়নের মাধ্যমে এ অঞ্চলকে একটি সম্ভাবনাময় অঞ্চল হিসাবে গড়ে তোলা সম্ভব।
এক নজরে নীলফামারী
রাজধানী ঢাকা থেকে উত্তর পশ্চিম দিকে প্রায় ৪০০ কিঃমিঃ দুরে ১৮২১-বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট এ জেলার অবস্থান,যা কর্কটক্রান্তি রেখার সামান্য উত্তরে অবস্থিত। এ জেলার পূর্বে রংপুর ও লালমনির হাট, দক্ষিণে রংপুর ও দিনাজপুর,পশ্চিমে দিনাজপুর ও পঞ্চগড় এবং উত্তরে ভারতের শিলিগুড়ি জেলা । কৃষি নির্ভর এ জেলার ৯০% সহজ সরল মানুষ কোন না কোন ভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল। নীলফামারীর দীগন্ত বিস্তৃত সমতল ভূমিতে প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে ধান, গম, আলু, তামাক এবং আরও বিভিন্ন প্রকার ফসল উৎপন্ন হয়। এ জেলায় শিল্পী হরলাল রায়, মহেশ চন্দ্র রায়, রথীন্দ্র নাথ রায় -এর মত গুণীজনের জম্ম। এ জেলায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা সেচ প্রকল্প সেচ ও সম্পুরক সেচ সুবিধা দিয়ে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিশেষ ভুমিকা রাখছে। জেলার উত্তর পূর্বদিক দিয়ে বহমান তিস্তা নদী জেলার দু’টি উপজেলার (ডিমলা-জলঢাকা) জন্য এখনও অভিশাপ হিসেবে বিদ্যমান। বৃহত্তর রংপুর দিনাজপুরের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত এ জেলার সৈয়দপুর এর ক্ষুদ্র শিল্প গোটা দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। দেশের বৃহত্তম রেলওয়ে কারখানা সৈয়দপুরে অবস্থিত। উত্তরা ইপিজেড এলাকার কর্মসংস্থানে ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। নীলসাগর নামীয় বিশাল দিঘী এলাকার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। সম্প্রতি চালুকৃত নীলসাগর আন্তঃনগর এক্মপ্রেস ও চিলাহাটী এক্সপ্রেস ট্রেন যোগাযোগের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে ।
০১. আয়তন: ১৬৪৩.৪০ বর্গ কিলোমিটার
০২. ভৌগলিক অবস্থান: ২৫০৪৪/ হতে ২৬০১৯/ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮০৪৬/
০৩. লোকসংখ্যা : ২০,৯২,৫৬৮ জন। (২০২২ সালের জনশুমারী ও গৃহগণনা অনুযায়ী)
পুরুষ : ১০,৪১,৮০২ জন
মহিলা : ১০,৫০,৭১২ জন
হিজড়া : ৫৪ জন
০৪. জনসংখ্যার ঘনত্ব: প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১২৭৪ জন
০৫. পেশা: কৃষক ৪৫.২৮%, কৃষি শ্রমিক ২৭.৮১%, দিনমজুর ০৩.৪২%, ব্যবসায়ী ০৮.৬৫%, চাকুরীজীবি ০৬.০৭%, অন্যান্য ০৮.৭৭%
০৬. ধর্ম : মুসলিম ৮৪.২৯%, হিন্দু ১৫.৬৬%, খ্রীষ্টান ০.০৫%, বৌদ্ধ ০.০২%, অন্যান্য ০.০০৪%
০৭. জাতীয় সংসদে আসন সংখ্যা : ০৪ টি
০৮. উপজেলা: ০৬ টি। (নীলফামারী সদর, সৈয়দপুর, ডোমার, ডিমলা,জলঢাকা, কিশোরগঞ্জ)
০৯. পৌরসভা: ০৪ টি। (নীলফামারী সদর, সৈয়দপুর, ডোমার, জলঢাকা)
১০. ইউনিয়ন: ৬০ টি
১১. মৌজা: ৩৭০ টি
১২. গ্রাম: ৩৭৮ টি
১৩. ভারতের সাথে সীমান্তের দৈর্ঘ্য: ৫০.৯০ কিলোমিটার
১৪. বি.ও.পি.’র সংখ্যা: ১১ টি
১৫. মোট জমির পরিমাণ: ১,৫৮,৫৭৭.৭৭ হেক্টর
১৬. মোট আবাদি জমির পরিমাণ: ১,২৬,১৩৩ হেক্টর
১৭. সেচকৃত জমির পরিমাণ: ১,১৪,০০০ হেক্টর
১৮. মোট বনভূমির পরিমান: ১৩৪৬.১৫ একর
১৯. মোট জলাভূমির পরিমান: ১১০৯.০৩ একর
২০. শহরাঞ্চলের আয়তন : ৯৬.৫৬১ বর্গ কিলোমিটার (নীলফামারী-২৪.৫০ বর্গ কি:মি:, জলঢাকা-২৮.২২ বর্গ কি:মি, ডোমার-৯.৪২১ বর্গ কি:মি:, সৈয়দপুর-৩৪.৪২ বর্গ কি:মি)
২১. খাদ্য উদ্বৃত্ত: ২,৮৫,৯০৬ মে. টন
২২. হাসপাতালের সংখ্যা: ০৯ টি
২৩. ডায়াবেটিক ক্লিনিক: ০২ টি
২৪. মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র: ০২ টি
২৫. পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র: ৫৫ টি
২৬. প্রাথমিক বিদ্যালয়: ৯৪০টি।(সরকারি৪৭২টি,বেসরকারি ৪৩৯টি, কমিউনিটি ২৯টি
২৭. মাধ্যমিক বিদ্যালয়: ২৯৫ টি। (সরকারি ০৫ টি, বেসরকারি ১৯২টি, নিম্নমাধ্যমিক ৯৮ টি)
২৮. মহাবিদ্যালয়: ৪৫ টি। (সরকারি ০৪ টি, বেসরকারি ৪১টি )
২৯. কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র: ১৯ টি (সরকারি ২টি, বেসরকারি ১৭টি )
৩০. পি.টি.আই.: ০১ টি
৩১. মাদ্রাসা: ১৬৪ টি।(কামিল মাদ্রাসা-০১টি, ফাজিল মাদ্রাসা১৪, আলিম মাদ্রাসা২৪টি, দাখিল মাদ্রাসা ১১৫টি
৩২. শিক্ষার হার: ৬৯.২৩% (২০২২ সালের জনশুমারী ও গৃহগণনা অনুযায়ী)
৩৩. পাকা রাস্তা: ৪৭০ কিলোমিটার
৩৪. কাঁচা রাস্তা: ৩,৫৯২ কিলোমিটার
৩৫. রেলস্টেশন: ০৯ টি।
৩৬. রেলপথ: ৬৩ কিলোমিটার
৩৭. রেলওয়ে কারখানা: ০১ টি
৩৮. বিমান বন্দর: ০১ টি
৩৯. পাবলিক লাইব্রেরি: ০৬ টি
৪০. ধর্মীয় উপাসনালয়: মসজিদ২৫১৪ টি, মন্দির ৩৭১ টি, গীর্জা ০২ টি
৪১. রেজিস্টার্ড এন.জি.ও: ২৮ টি
৪২. এতিমখানা: ০৮ টি
৪৩. ফায়ার সার্ভিস: ০৩ টি
৪৪. কোল্ড স্টোরেজ: ০৬টি
৪৫. খাদ্য গুদাম: ৩৪ টি(এল.এস.ডি.৭)
৪৬. হাট-বাজার: ৯৮ টি
৪৭. ডাকঘর ১০৭ টি
৪৮. সেনানিবাস ০১ টি
৪৯. জেলার দর্শনীয় স্থান নীলসাগর, হরিশচন্দ্রের পাঠ, ধর্মপালের গড়, কুন্দপুকুর মাজার, ময়নামতির দূর্গ, ভীমের মায়ের চুলা ইত্যাদি
৫০. ইউনিয়ন ভূমি অফিস ৬০টি
৫১. পৌর ভূমি অফিস ০৩ টি
৫২. প্রধান নদ-নদী তিস্তা, বুড়িতিস্তা, বুড়িখোড়া,চাড়ালকাটা, দেওনাই,বামনডাংগা
৫৩. তিস্তা প্রকল্পের খালের দৈর্ঘ্য ১০০৪ কিলোমিটার
৫৪. আশ্রয়ন প্রকল্প ০৭ টি
৫৫. আদর্শ গ্রাম ৪২ টি
৫৬. আশ্রয়ন প্রকল্পে পুনর্বাসিত পরিবার ১০৯০ টি
৫৭. রেড ক্রিসেন্ট ০১ টি
৫৮. শিল্পকলা একাডেমী ০১ টি
৫৯. চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি ০১ টি
তথ্য নেওয়া হয়েছেঃ https://www.nilphamari.gov.bd/bn/site/page/VGht-%E0%A6%8F%E0%A6%95-%E0%A6%A8%E0%A6%9C%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%A8%E0%A7%80%E0%A6%B2%E0%A6%AB%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%80