![গল্পঃ সন্তান পর্বঃ ০৯ (শেষ) রাকিব + ফাহিম Probashi Fahim """মুমু আমায় জড়িয়ে ধরে আছে । একটু পরে যখন ও স্বাভাবিক হলো তখন ...](https://img4.medioq.com/019/640/122216386280196407.jpg)
22/01/2025
গল্পঃ সন্তান
পর্বঃ ০৯ (শেষ)
রাকিব + ফাহিম Probashi Fahim
"
"
"
মুমু আমায় জড়িয়ে ধরে আছে ।
একটু পরে যখন ও স্বাভাবিক হলো তখন আমায় ছেড়ে দিলো ।
আমিঃ নিচে যাও। রুহী একা আছে । ভয় করবে।
মুমুঃ হুম ।
মুমু নিচে চলে আসলো।
আমি আরও কিছু সময় ছাঁদে একা একা দাড়িয়ে থাকলাম ।
রাত হয়ে গেছে। মনে হয় রুহী মুমুও ঘুমিয়ে পড়ছে ।
আমি নিচে চলে আসলাম ।
আমার রুমে এসে দেখি রুহী নেই ।
তাহলে পাশের রুমে আছে ।
নক করলাম ।
আমিঃ আসবো?
মুমুঃ হুম আসুন ।
ভিতরে গিয়ে দেখি মুমু আর রুহী গল্প করছে ।
আমিঃ এখনো ঘুমাও নি কেন?
রুহীঃ ঘুম পাচ্ছে না। জানো বাপি আম্মু অনেক সুন্দর সুন্দর গল্প জানে।
আমিঃ ওহহ তাই ।
রুহীঃ হুম । আর তুমি তো কিছুই জানো না ।
আমিঃ হুম ।
রুহীঃ বাপি আম্মুর নাকি আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছে । সাথে আমার ও।
আমিঃ এতো রাতে আইসক্রিম খাওয়ার দরকার নেই । শীত করবে ।
রুহীঃ কিছু হবে না । তুমি আমায় আইসক্রিম নিয়ে দাও।
মুমুর দিকে তাকালাম ও শুধু রুহীর দিকে একবার তাকাচ্ছে আর একবার আমার দিকে ।
উপায় নাই
মেয়ে আইসক্রিম খেতে চাইছে এখন নিয়ে আসতেই হবে । নয়তো আমার বাসায় থাকা হারাম হয়ে যাবে।
বাইরে আসলাম আইসক্রিম নেওয়ার জন্য ।
পাশের দোকানটা বন্ধ থাকায় একটু দূরের একটা দোকান থেকে আইসক্রিম নিয়ে বাসায় ফিরলাম ।
বাসায় ফিরে ওদের দরজায় নক করলাম ।
মুমুঃ আসুন ।
আমি ভিতরে আসলাম ।
কিন্তু রুহী ঘুমিয়ে পড়ছে।
আমিঃ কখন ঘুমালো?
মুমুঃ একটু আগেই । আপনার এতো দেরি হলো কেন?
আমিঃ পাশের দোকানটায় ছিলো না । তাই দূরের দোকান থেকে নিয়ে আসলাম ।
মুমুঃ ওহহ।
আমিঃ এই নাও। ( আইসক্রিম গুলো মুমুর দিকে এগিয়ে দিয়ে । ) ফ্রিজে রেখে দাও। আর আমি ঘুমাতে গেলাম ।
আমি পিছনে ফিরলাম আসার জন্য । মুমু পিছনে থেকে আমার হাত টেনে ধরলো ।
আমিঃ কিছু বলবা?
মুমুঃ এখনে থেকে গেলে হয় না?
আমিঃ আমি এখানে থাকলে তোমার সমস্যা হতে পারে ।
মুমুঃ আমার কোনো সমস্যা হবে না । আপনি এখানেই থাকেন। শুয়ে পড়ুন। আমি ফ্রিজে রেখে আসছি।
আমি রুহীর এক পাশে শুয়ে পড়লাম ।
মুমু আইসক্রিম গুলো ফ্রিজে রেখে আসলো। এরপর ও রুহীর অন্য পাশে শুয়ে পড়লো।
আজ মনে হচ্ছে আমাদের পরিবার টা কতটা সুখী ।
রাতে প্রতিদিনের মতোই রুহী আমার বুকের উপর উঠলো। আর মুমুও আমার দিকে চেপে এসে আমার হাতের উপর মাথা রেখে আমায় জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো।
সকাল বেলা আমার ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি হলো।
ঘুম থেকে উঠে দেখি রুহীর স্কুলের সময় পেরিয়ে গেছে ।
উঠে তাড়াহুড়ো করে রেডি হচ্ছি।
মুমুঃ এতো তাড়াহুড়ো করছো কেন?
আমিঃ রুহীকে স্কুলে রাখতে হবে ।
মুমুঃ আমি রেখে আসছি। এতো তাড়াহুড়ো করার দরকার নেই । বাথরুমে গিয়ে ধীরে ফ্রেশ হয়ে আসো। আমি নাস্তা বেড়ে দিচ্ছি ।
আমিঃ হুম ।
রুহী শুধু শুধু মুমুকে আম্মু ডাকে নি । মুমু হুবহু রুহীর আম্মুর মতোই । আজ ওর চুলের স্টাইল দেখে মনে হচ্ছিল যেন স্বয়ং রুহীর আম্মু আমার সামনে দাড়িয়ে আছে ।
যাই হোক। বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসলাম ।
খাওয়া করে রেডি হওয়ার জন্য রুমে আসলাম ।
খাটের উপর আগে থেকেই একটা ড্রেস রাখা আছে ।
ডাইনিং থেকে মুমু বললো
মুমুঃ ওখানে যে ড্রেস টা রাখা আছে সেটাই পড়বা।
আমি তাড়াতাড়ি ড্রেস টা পড়ে অফিসে চলে আসলাম ।
কতই না সুন্দর দিন কাটছিলো আমাদের ।
মুমু রুহী আর আমার সুন্দর সুখের একটা স্বপ্ন ময় পরিবার ।
মুমুর পেটের বাচ্চার বয়স সাত মাস হলো ।
তবে এর মাঝে মুমু বেশ কয়েক বার বাচ্চাটাকে নষ্ট করতে চেয়েছিলো। ওর কথা কোনো বে*ই*মা*নে*র বাচ্চা ও ওর গর্ভে লালন করবে না ।
একদিন অফিসে কাজ করছি।
হঠাৎ রুহী ফোন দিলো।
আমিঃ হ্যাঁ আম্মু বলো।
রুহীঃ বাপি আম্মু কেমন জানি করছে আম্মুর খুব কষ্ট হচ্ছে ।
রুহী কথা গুলো বলছে আর কান্না করছে ।
আমিঃ আম্মু কান্না করিও না আমি আসছি । আমি এখনি আসছি। তুমি আম্মুর পাশে থাকো।
হঠাৎ করে মুমুর আবার কি হলো।
কাজ সব বাদ দিয়ে বাসায় আসলাম ।
বাসায় এসে দেখি মুমু পেটের ব্যাথায় চিৎকার করছে ।
প্রচন্ড পেটে ব্যাথা হচ্ছে ।
ওকে তাড়াতাড়ি গাড়িতে তুলে হাসপাতালে নিয়ে আসলাম ।
এখন রীতিমতো আমাকেও একটু ভয় লাগছে ।
পেটের বাচ্চার বয়স সাত মাস । এই সময় পেটে ব্যাথা হওয়া টা খুবই খারাপ লক্ষন।
ডাক্তার সব কিছু চেক-আপ করলো।
এরপর একটা ইনজেকশন দিয়ে ওর ব্যাথা টা শীতল করে দিলো এবং মুমু ঘুমিয়ে পড়ছে ।
ডাক্তারঃ উনি জেগে উঠলে আল্ট্রাসাউন্ড করে নিয়ে আসবেন ।
আমিঃ জ্বি । রোগীর অবস্থা এখন কেমন?
ডাক্তারঃ আপাতত ভালো । তবে মনে হচ্ছে না খুব বেশি ভালো । আপনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রিপোর্ট গুলো আমায় দেখান।
বেশ কিছু সময় পরে মুমু জেগে গেলো।
এরপর ওর আল্ট্রাসাউন্ড করে নিয়ে রিপোর্ট ডাক্তার কে দেখালাম ।
আমিঃ ডাক্তার কোনো সমস্যা?
ডাক্তারঃ হুম । যেটা ভেবেছিলাম সেটাই ।
আমিঃ কোনো মেজর সমস্যা?
ডাক্তারঃ ওনার পেটে যে বাচ্চাটা ছিল সেটা মরে গেছে । যার ফলে পেটে ব্যাথা হচ্ছে ।
( ডাক্তারের কথা শুনে একটু শক খেলাম)
আমিঃ কিন্তু ডাক্তার ও তো তেমন কোনো কাজ ও করে নি তাহলে বাচ্চা মারা গেলো কিভাবে?
ডাক্তারঃ ওনার বাচ্চা কোনো কাজ করার জন্য নষ্ট হয় নি ।
আমিঃ তাহলে?
ডাক্তারঃ ওনার সামান্য কোনো অসুখ হলেও ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ঔষধ সেবন করতে হতো। কিন্তু উনি সবসময় হায়ার এন্টিবায়োটিক সেবন করছেন। যার ফলে আজ এই অবস্থা ।
ডাক্তারের কথা শুনে বুঝতে পারলাম এটা কোনো অনিচ্ছা কৃত ভুল না। মুমু ইচ্ছে করে এমন টা করছে ।
আমিঃ ডাক্তার এখন তাহলে কি করবো?
ডাক্তারঃ একটা অপারেশন করতে হবে । অপারেশন করে ওনার পেটের ময়লা গুলো বের করে ফেলতে হবে ।
আমিঃ ওহ। কখন করবেন অপারেশন ?
ডাক্তারঃ আপনারা চাইলে আজই।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে । আপনি অপারেশন এ ব্যাবস্থা করেন।
সেদিন রাতে মুমুর অপারেশন করে পেটের ময়লা গুলো বের করে ফেললো। সারারাত হসপিটালে ছিলাম ।
সকাল বেলা একজন নার্সকে কিছু টাকা দিয়ে ওকে দেখতে বলে বাসায় আসলাম ।
বাসায় এসে রুহীকে স্কুলে রেখে আসলাম ।
যদিও বা ও যেতে চাইছিলো না তবুও জোর করে রেখে আসলাম ।
এরপর একটু ঘুমালাম ।
দুপুর বেলা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে হাসপাতালে আসলাম কিছু ফল নিয়ে । ।
মুমুর কেবিনে এসে ওর পাশে বসলাম ।
আমিঃ এখন কেমন লাগছে?
মুমুঃ হুম ভালোই । শরীর টা একদিনে এতটা শুকিয়ে গেছে কিভাবে?
আমিঃ সারারাত বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম ।
মুমুঃ ওহহ।
আমিঃ এমনটা কেন করছো?
মুমুঃ কি করলাম?
আমিঃ জেনে বুঝে বাচ্চা টা কে মেরে ফেললা?
মুমুঃ তোমায় তো বলছি কোনো বে*ই*মা*নে*র সন্তান আমার গর্ভে পালন করবো না ।
আমিঃ আমি তো তোমায় রাখতে বলছিলাম ।
মুমুঃ না। ও যদি থাকতো তবে আমি কখনো ওকে ভুলতে পারতাম না । তাই ওর শেষ স্মৃতি টা ও মুছে দিলাম ।
আমিঃ ডাক্তার বললো তুমি আর কখনো মা হতে পারবে না ।
মুমু কিছু সময় চুপ থাকলো।
আমিঃ আমি জানি তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে ।
মুমুঃ খুব না। কিছুটা। কারণ আমার খুব ইচ্ছে ছিলো তোমার অস্তিত্ব আমার মাঝে বহন করার। হয়তো আমার ভাগ্য এতটাও ভালো নয়। কিন্তু তাতে কি হইছে রুহী তো আছে । হয়তো আমি ওকে গর্ভে ধারণ করি নি । কিন্তু আমার কাছে ও আর ওর কাছে আমি গর্ভে ধারণ করা মা সন্তানের থেকে কম নই।
আমিঃ হুম । ওকেই আমরা দুজন মিলে আমাদের মতো করে বড় করবো।
মুমুঃ আমাদের নয়। ওকে তোমার মতো করে মানুষ করবো। আমার সন্তান তোমার মতো করে বেড়ে উঠবে।
আমিঃ হুম ।
মুমু আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে আমার হাতটাকে শক্ত করে ধরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।
"
"
"
"
"
সমাপ্ত ।💝💝💝💝💝💝 । যারা এই গল্পের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পাশে থেকেছেন তাদেরকে বিশেষ ধন্যবাদ ।