24/11/2023
মৃত্যুঞ্জয়ী এক রত্নের গল্প!.....................................
মৃত্যুকে হয়তো পার্থিব জীবনাচারে পুরোপুরি এড়িয়ে যাওয়া যায় না ; তবে জয় করা যায়। আর এই কাজটি যারা করতে পারেন তারাই সত্যিকারের মৃত্যুঞ্জয়ী বীর বা অমর রত্ন। ধরুন সেই সাউথ আফ্রিকার প্রথম কালো প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলার কথা, যিনি ত্রিশ বছর শুধু জেল-ই খেটেছেন বর্ণবাদের বৈষম্যকে নির্মূল করার জন্য। ত্রিশটি বছর তো অনেকে স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্যই পায় না! আবার আমাদের দেশের স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথাই যদি বলা হয়, দেখবেন তাঁর জীবন বলতেও ছিলো আন্দোলন আর জেল-হাজত। তিনিও প্রায় তের বছর ন'মাস বিভিন্ন মেয়াদে কারাবরণ করেছেন। তো একটা মানুষের জীবনে বেচে থাকবার জন্য আর থাকেই বা ক'দিন। হ্যাঁ থাকে, তাঁদের জীবনেও বেচে থাকা থাকে ; যে বেচে থাকাকে বলা হয় অমরত্ব। তারা মৃত্যু এবং জীবনকে জয় করে, সকল কিছুকে পেছনে ফেলে অমর হন। তাঁদেরকেই নতুন প্রজন্ম এবং ইতিহাস রত্ন হিসেবে চেনে। মূল্যায়ন করে। (আর যে জাতি বা তার ইতিহাস তাদের রত্নকে যতন করে না বা মূ্ল্যায়ন করেনা সে জাতি একদিন আস্তাকুঁড়ে পতিত হয়।)
আমরা হবিগঞ্জবাসী গর্বিত, যে এমনই একজন রত্ন ১৯৬৩ সালের ০৩ মার্চ এ জেলায় জন্ম গ্রহন করেছেন। পিতা আলহাজ্ব আমীর আলী ও মাতা ফজল নেছার গর্বিত এ সন্তান যদিও জন্ম গ্রহন করেছিলেন সদর উপজেলার রিচি গ্রামে; তবে আজ তিনি হবিগঞ্জ জেলার প্রতিটি গ্রামের প্রত্যেক সাধারণ মানুষের আপনজন।
নেলসন ম্যান্ডেলা বা বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের সাথে আমার গল্পের নায়কের মিল দেখানোটা আমার উদ্দেশ্য নয় এবং উচিতও হবে না। আমি শুধু এতটুকুই মনে করি আমাদের ছোট্ট পরিমন্ডলে, হবিগঞ্জবাসীর আপামর মানুষের কাছে আবু জাহির সত্যিকার অর্থেই একজন ''মাদিবা বা খোকা''।
হবিগঞ্জবাসীর উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য মুক্তির লক্ষে, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে উড্ডীন রাখতে তাঁকেও জেল খাটতে হয়েছে, ১৯৮৪, ১৯৮৭ এবং ২০০২ সালে। সৈরাচারদের নির্যাতন সইতে হয়েছে ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৯০ সাল অব্দি। এমনকি এসব জালিমদের নির্যাতনের স্ট্রীম রোলার তাঁকে আজীবনের মতো শেষ করে দিবার প্রত্যয়ে আঘাত হানে ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারী। তাঁর বাবা- মায়ের দোয়া আর হবিগঞ্জের সহজ- সরল মানুষের আহাজারি, মোনাজাতে ফেলা অশ্রুবিন্দুর প্রতিটি ফোটা তাঁকে বাঁচিয়েছে। সেসব জালিম কুলাঙ্গারেরা সেদিন হবিগঞ্জের বৈদ্যের বাজারকে কলঙ্কিত করেছে ঠিকই; কিন্তু কেড়ে নিতে পারেনি হবিগঞ্জের এ বীর সন্তানকে।
তিনি মৃত্যুকে জয় করেছেন। গ্রেনেডের শতাধিক স্প্লিন্টারের শারীরীক ব্যাথাকে ভুলে থেকে; মনেরেখে চলেছেন হবিগঞ্জের মানুষকে, মানুষের উন্নয়নকে।
আর এই উন্নয়নের ধারাকে আরো বেগবান এবং বাস্তবে রূপ দিতেই ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেন। বিজয়ীও হন বারবার। শুধুই কী বিজয়? না, না। হবিগঞ্জ সদর, লাখাই এবং শায়েস্তাগঞ্জের মানুষ তাঁকে কতটা ভালোবাসেন, নির্বাচনের ভোট সংখ্যাই তার প্রমাণ।
তারা, ২০০৮ এর নির্বাচনে নিকটতম প্রার্থী থেকে ৯১ হাজার ভোট বেশি দিয়েছে, ২০১৪ সালে দিয়েছে ৭৭ হাজার ভোট বেশি আর ২০১৮ সালে দিয়েছে ৭১ শতাংশ ভোট।
হবিগঞ্জের মানুষের কাছে মৃত্যুকে জয় করে আসা মানুষটি আজ রত্ন। খাটি রত্ন।
আবু জাহির আজ হবিগঞ্জের উন্নয়নের ইতিহাসের মূল ভিত্তি। হবিগঞ্জের উন্নয়নের ইতিহাস তাঁকে ছাড়া লিখা অসম্ভব প্রায়।
কেনো জানেন?
---হবিগঞ্জের প্রতিটা রাস্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, ব্রীজ, কালভার্ট এমনকি অজপাড়া গা'ও তাঁর উন্নয়নের সাক্ষ্য দেবে।
বলবে, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎতায়নের কথা, বলবে তাদের সন্তানদের ভবিষ্যত সুনিশ্চিত করতে বৃন্দাবন কলেজে অনার্স, মাষ্টর্স কোর্স চালুর কথা, ১০ টি বেসরকারী কলেজ আর ১২টি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা। বলবে, শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ আর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা, বলবে আধুনিক স্টেডিয়াম এবং হাইটেক পার্কের কথা!
হবিগঞ্জের এতো উন্নয়নের কথা শুনে হয়তো গ্রামের অনেক সহজ-সরল মানুষ ভাববেন এটা কোনো রাজধানী বা বিভাগের উন্নয়নের গল্প। ভাববেন, হয়তো কোনো বড় মন্ত্রীর কাজ এসব!
কিন্তু আবু জাহির আবার মনে করিয়ে দেবেন আমাদের, না, তিনি বড় কোনো মন্ত্রী নন, ছিলেনও না ; তিনি হবিগঞ্জের বীর সন্তান, তিনি হবিগঞ্জবাসীর জন্য কাজ করাকে ইবাদত মনে করেন। তাঁর এই মহান ইবাদত এবং হবিগঞ্জবাসীর দোয়া-ই তাকে একদিন অমরত্ব দান করবে। মৃত্যুকে যে জয় করতে পারে, সে অমর হবে এটাই তো স্বাভাবিক।
লেখক : রামীম ইমাম
শিক্ষক ও সমাজকর্মী।