28/07/2024
যুগে যুগে যত সরকার, যত ব্যাবসা প্রতিষ্টান কিংবা বড় বড় entity ডাউনফল করেছে। তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফল করেছে একটা জেনারেশনের পর আরেকটা জেনারেশনের ট্রানজিশনটা ধরতে না পারায়।
জেনারেশন জেড, কিংবা Gen Z, এই জেনেরেশনের ব্যাপারে আমার প্রচুর পড়াশোনা করতে হয়। কারণ মূলত ওরাই আমার ফরমাইসি লেখা এবং প্রোডাক্ট দুইটারই টার্গেট কনজিউমার।
ওরা সম্পূর্ণ আলাদা ধাঁচে বড় হয়েছে। ওরা সোশ্যাল মিডিয়া আর ইন্টারনেট দিয়ে ওদের জীবন চালায়। ওদের কোন ব্যারিয়ার নাই। ওরা Global Citizen। দেশের সীমানা ওদেরকে আটকায় না।
আপনি টিভিতে যা খুশি দেখান। লাভ নাই। কারণ, ওরা টিভি দেখেই না! একারণে এরা স্বাধীন এবং স্বশিক্ষিত। ওদের learning source ওরা নিজেরাই। শেয়ারিং ব্যাসিসে একজন আরেকজনের কাছ থেকে শিখে এবং পাশে থাকে।
এ কারনেই Ten Minutes School এর মতন প্রতিষ্টান এত জনপ্রিয়। ওরা ওদের মতই কারো কাছ থেকে শিখতে চায় এবং খুব দ্রুত শিখতে চায়। দশ মিনিটেই শিখতে চায়।
এই যে দেশের IT সেক্টর নিয়ে আমরা এত বড়াই করি। এই সেক্টরের লাইফ লাইন কারা? এই Gen Z-ই তো। আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কি এগুলো শেখানো হয়?
না হয় না! তাইলে এরা শিখলো কিভাবে?
ওরা নিজে নিজে শিখেছে। মাসে লাখ লাখ টাকা কামাই করছে তাদের স্বশিক্ষা দিয়ে। যা আপনার আমার মতন পুরোনো প্রজন্মের কাছে কল্পনাতীত। তাই আমরা এখনো প্রাগৈতিহাসিক শিক্ষা প্রতিষ্টানের গৌরব নিয়ে বড়াই করি।
এই যে মুগ্ধ ছেলেটা কপালে গুলি খেয়ে মারা গেল, তার ফাইভার প্রোফাইল দেখলাম। সে নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেতন স্কেলের চেয়ে বেশি টাকা মাসে আয় করতো।
সে কেন এসেছিলো আন্দোলনে? সে দেখেছে তার বন্ধুরা স্ট্রাগল করছে। সে এসেছিলো ভলান্টিয়ার হিসেবে। নিজের কামাই করা টাকায় পানি কিনে দিচ্ছিল। পানি খাওয়াতে এসে, কপালে গুলি খেল!
IUTএর একটা ছেলে মারা গেল। প্যারালাল ল্যান্ডিং করতে পারে ড্রোন বানিয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ১২ লাখ টাকার মতন। কে শিখিয়েছে তাকে এসব? সে নিজে নিজে শিখেছে।
বাকি আন্দোলনকারীদের খোঁজ নেন। দেখবেন বেশিরভাগই এরকম। স্বশিক্ষিত ছেলেমেয়ে। যারা উল্টাপাল্টা সহ্য করতে পারে না।
এই যে স্বশিক্ষা এবং self dependency এই দুইয়ের কারণে এদের আত্মমর্যাদা প্রচন্ড রকমের। আপনি জাস্ট তাদেরকে অপমান করতে পারবেন না পূর্ববর্তী জেনারেশনেগুলোর মতন।
Gen Z এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে একটি হল ওরা খুব ডিরেক্ট। যা চায় সরাসরি বলবে, যা করতে চায় সরাসরি করবে।
ঘুরানো প্যাচানো diplomacy তে ওরা খুব বিরক্ত হয়। এবং যেহেতু ওরা পৃথিবীর সবকিছুরই কম বেশি জ্ঞ্যান রাখে, (মিনিটে মিনিটে Google করে) ওরা খুব ভালো করেই বোঝে কোনটা মুলা ঝোলানো আর কোনটা আন্তরিকতা।
এর আরেকটা উদাহরণ দেই, জাফর ইকবালের মতন বুদ্ধিজীবিকে মোটামুটি মুছে দিতে তাদের ১ দিনও সময় লাগে নাই। এরকম ভয়ংকর বুদ্ধিবিত্তিক পতন বাংলাদেশের ইতিহাসে আর একটাও ঘটে নাই আমার জানামতে।
এর কারণ জাফর ইকবাল ডিরেক্ট না। উনার ভুলকে ভুল, ঠিককে ঠিক বলার মতন সাহস কিংবা ইচ্ছে ছিল না। এর ফলে উনার বুদ্ধিজীবী থেকে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীতে রুপান্তরিত হতে এক দিনও লাগে নাই!
মিলেনিয়ালদের মধ্যে যদি আপনি খোঁজ নেন দেখবেন ২০ জনে হয়তো একজন নিজের জীবনের বাইরে বর্তমান পৃথিবীর খবর রাখছে। কিন্তু Gen Z প্রতি দশে ৫ জনেই এসব খবর কম বেশি রাখে।
এই যে গত ৬-৭ বছরে অনেকগুলো আন্দোলন হলো দেশে, দুইদফা কোটা, একদফা সড়ক আন্দোলন,ছোট একটা কোভিড আন্দোলন । ওদের কথা একটাই ছিল, বদলান। পরিবর্তন আনেন। হয় করেন, না পারলে সরেন।
সরকার পরিবর্তন তো চায় নাই ওরা। চেয়েছিলো সরকারের মনমানসিকতার পরিবর্তন। একটু চিন্তা করেন। যখন সরকার নিজেকে মডিফাই করতে অস্বীকার করলো, তখন ওরা বললো, এবার তাহলে হোক সরকার পরিবর্তন।
এইটা তো রেগুলার Gen Z বিহেভিওর। রাষ্ট্র বোঝেই নাই তাদের সাইকোলজি। কারণ রাস্ট্রের পলিসি মেকারদের কাছে কোন প্রপার রিসার্চ নাই। সেই প্রাগৈতিহাসিক divide and rule দিয়ে তাদেরকে দমন করতে গিয়ে উল্টো আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছেন!
এই যে পুলিশের সাথে ক্লেশ হলো। পুলিশের কাজ ওদের ভালো লাগে নাই। ওরা শ্লোগান দিলো, "পুলিশ চুদি না।"
আপনি আমি নিবো এইটাকে গালি হিসেবে। কিন্তু ওরা বোঝাচ্ছে আমরা পুলিশকে কেয়ার করি না। । ঘুম থেকে উঠে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত ওরা দিনে কম করে হলেও ২০ বার " I dont give a f**k(I dont care)" কথাটা শুনে। তারই স্রেফ বাংলা অনুবাদ এইটা।
এই যে গালি। এইটা ওদের রাগ, ক্রোধ প্রকাশের ভাষা। এই ভাষাকে অস্বীকৃতি দিতে পারেন কিন্তু অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই।
একইভাবে তাদের উপর গুলি করার পর তারা "বন্দুক চুদি না" বলে বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। আপনি আমি হয়তো অনেক লম্বা শব্দ চয়ন করতাম।
যেমন ধরেন, "যুগে যুগে বন্দুকের নল কিংবা বুলেট দিয়ে কোনদিন কোন রাস্ট্র ছাত্র আন্দোলন দমিয়ে রাখতে পারে নি। অথবা আমারা বীর বাঙালী ছাত্র সমাজ এসব বন্দুকের গুলির পরোয়া করি না।" সাথে ৫২, ৬৯, ৭১ এরকম কতকিছুই।
কিন্তু ওরা এক লাইনে শেষ করে দিয়েছে, "বন্দুক চুদি না"!
ধরেন রাষ্ট্র গালি খেয়ে গুলি করে দিলেন। এবার যেমন করেছেন। তখন ওরা কি ভয় পায়? না! পায় না! কারণ রাস্ট্র তাদের আত্মসম্মানে আঘাত করেছে। তারা জানে রাষ্ট্র ভুল এবং রাষ্ট্রকে তার ভুল সংশোধন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে অপমান করেছেন। তারা রাস্তায় আন্দোলনে চলে এসেছে। ছাত্রলীগ তাদেরকে পিটিয়েছে, ওরা আরও বেশি অপমানিত হয়েছে, আন্দোলন আরও তীব্র হয়েছে। আর গুলি করাটা ছিল ভীমরুলের চাকে ঢিল মারার মতন!
ওরা তখন বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রেখে ডিরেক্ট জিজ্ঞেস করেছে, "খানকির পোলা, গুলি করলি কেন?"
এই ডিরেক্টনেস এর কারণে তারা প্রথাগত chain of command ভাঙতে একটুও দ্বিধাবোধ করে না।
একটা জিনিস লক্ষ্য করেছেন কিনা। এই শিক্ষার্থীরা আগে নিজেরা আন্দোলনে নেমেছেন। তারপর তাদের বাবা-মা'দেরকেও সে আন্দোলনে নিয়ে এসেছেন। এইটা যে কি ভীষন রকমের একটা বিপ্লব না চিন্তা করলে বোঝা যাবে না।
একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করেন ব্যাপারটা। যেখানে নিরাপত্তার জন্যে পরিবার আন্দোলনে যেতে বাঁধা দেয়। সেখানে তারা পরিবারকে উল্টো নিয়ে এসেছে আন্দোলনে। এদের এই ডিরেক্টনেস এই অদ্ভুত লিডারশিপ এবিলিটি নিয়ে এসেছে।
কারণ এদের ডিসিশান মেকিং খুবই খুবই ফাস্ট। যেসব তথ্য উপাত্ত ঘেটে একটা সিধ্যান্তে যেতে হয়। তারা অলরেডি সেগুলো মাথায় নিয়ে ঘুরে। এই কারণেই তাদের অপিনিয়ন পরিবারের কাছে এখন প্রায়োরিটি পায়।
এরকম একটা সিনারিও বলি, মনে করেন অফিসের বস তাকে পাত্তা দিচ্ছে না বা তার চাহিদা মেটাচ্ছে না। এই অবস্থায় ওরা ডিরেক্ট ওই বসের উপরের লেভেলের বসের কাছে তার দাবী নিয়ে চলে যাবে। কিভাবে ? ইমেইল করবে কিংবা লিংকডইনে সরাসরি যোগাযোগ করবে।
এরপরেও না পোষালে সরাসরি চাকরি ছেড়ে দিবে। কিন্তু, যদি, অথবা এসব প্যাচানো বিশ্লেষন দিয়ে তাদের বোঝানো যায় না। পারবেনও না। ওরা সোজা সাপ্টা মানুষ। প্যাচ কম।
এর কারণ হচ্ছে, ওরা জন্মের পর থেকেই মাল্টিপল অপশনের দুনিয়াতে বড় হয়েছে। মুভি দেখছে, পছন্দ হয় নাই, ক্লোজ করে আরেকটায় চলে যাবে।
নেটফ্লিক্স এর মতন প্লাটফর্মের কারণে তাদের কাছে লাখ লাখ অপশন। একই ব্যাপার গান শোনা, বই পড়া, রাজনীতি, নেতা থেকে শুরু করে প্রেম ভালোবাসা পর্যন্ত। না পোষালে আবেগের ভার নিয়ে এরা বসে থাকে না। They just quit and move on.
গতকালকে জানলাম ওরা ইউটিউব, নেটফ্লিক্স কিংবা টুইটারে ভিডিও দেখে 1.5x গতিতে। মানে যে গতিতে ভিডিওটা করা হয়েছে তার দেড় গুণ গতিতে। কারণ স্লো কোনকিছুই এই জেনারেশন পছন্দ করে না।
মোটামুটি সব বড় গবেষনায়ই দেখা গেছে যে, অনলাইনে ৭ সেকেন্ড হচ্ছে তাদের এটেনশন টাইম। এই টাইমের মধ্যে তাদের এটেনশন ধরতে পারলে পেরেছেন, না পারলে they just move on to the next thing।
তো এই হচ্ছে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম। ওরা নেতা হিসেবে বুর্জোয়া Diplomat চায় না। ওরা চায় clean, fair and precise মানুষদেরকে নেতা হিসেবে যারা কথা কম বলে to the point কাজ করবে এবং প্রায়োরিটি ব্যাসিসে একশান নেবে। একইভাবে ওরা পলিসি মেকিংয়েও এসব মারফতি প্যাঁচ ঘোঁচ চায় না।
সামনের সময়টা খুব কঠিন আমাদের পূর্ববর্তি জেনারেশনের নেতাদের জন্যে। বিশেষ করে Boomers কিংবা Gen X দের জন্যে। ২০০০ পুর্ববর্তী জেনারেশনগুলোর মতন বাজেভাবে এই জেনারেশনকে ট্রিট করলে আমও থাকবে না, ছালও থাকবে না!
Courtesy: Zadhid Ahmed Powell