16/07/2024
সূরা আল হাদীদ আয়াত. 16
أَلَمْ يَأْنِ لِلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ أَن تَخْشَعَ قُلُوبُهُمْ لِذِكْرِ ٱللَّهِ وَمَا نَزَلَ مِنَ ٱلْحَقِّ وَلَا يَكُونُوا۟ كَٱلَّذِينَ أُوتُوا۟ ٱلْكِتَٰبَ مِن قَبْلُ فَطَالَ عَلَيْهِمُ ٱلْأَمَدُ فَقَسَتْ قُلُوبُهُمْ وَكَثِيرٌ مِّنْهُمْ فَٰسِقُونَ
যারা ঈমান এনেছে তাদের হৃদয় কি আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য নাযিল হয়েছে তার কারণে বিগলিত হওয়ার সময় হয়নি ? আর তারা যেন তাদের মত না হয়, যাদেরকে ইতঃপূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল, তারপর তাদের উপর দিয়ে দীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হল, অতঃপর তাদের অন্তরসমূহ কঠিন হয়ে গেল। আর তাদের অধিকাংশই ফাসিক।
-----------------------------------------
Tafsir Fathul Mazid
১৬-১৯ নম্বর আয়াতের তাফসীর : পূর্বের আয়াতে মু’মিন ও মুনাফিকদের পারলৌকিক অবস্থা বর্ণনা করার পর এখানে মু’মিনদেরকে তাঁর স্মরণে আরো বেশি মনোযোগী হওয়া ও কুরআন থেকে নিদের্শনা গ্রহণের প্রেরণা দিচ্ছেন। خشوع অর্থ : নরম অন্তরে আল্লাহ তা‘আলার দিকে ঝুঁকে পড়া। حق (সত্য) হলো কুরআনুল কারীম। এ আয়াত থেকে একশ্রেণির দরবেশ, ফকীর ও পীর বুজুর্গরা দলীল গ্রহণ করে সালাত, সিয়াম, খাবার, পোশাক পরিচ্ছেদ ও সংসার সব বর্জন করে আল্লাহ তা‘আলার যিকিরের নামে নিজেদের তৈরি করা ভণ্ডামী হৈ-হুল্লায় মগ্ন থাকে যা ইসলামী শরীয়ত সমর্থিত নয়। মূলত আয়াতে এরূপ কিছু নির্দেশ দেওয়া হয়নি, কারণ আয়াতগুলো নাযিল হয়েছে মূসা ও ঈসা (আঃ)-এর অনুসারী মু’মিনদের ব্যাপারে যারা তাদের নাবীদের ওপর ঈমান এনেছে কিন্তু নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি ঈমান আনেনি। এ আয়াতটি (وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِاللّٰهِ وَرُسُلِه۪) ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনে’ এ আয়াতের পরে এসেছে। অর্থাৎ যারা তাওরাত ও ইঞ্জিলের প্রতি ঈমান এনেছে তাদের কি এখনো সময় হয়নি যে, তাদের অন্তর কুরআনের জন্য নম্র হবে (কুরতুবী)। তারপর মু’মিনদেরকে ইয়াহূদ ও খ্রিস্টানদের মত হতে নিষেধ করছেন যাদের ওপর দিয়ে বহুকাল অতিক্রম হয়ে যাওয়ার পর স্বহস্তে আল্লাহ তা‘আলার কিতাব পরিবর্তন করেছে এবং তা পেছনে নিক্ষেপ করে ধর্ম যাজকদেরকে মা‘বূদ বানিয়ে নিয়েছে। ফলে তাদের অন্তর কঠিন হয়ে গিয়েছিল। কোন ওয়াজ নসিহত তাদের কাজে আসেনি। (يُحْيِي الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا) ‘আল্লাহই পৃথিবীকে তার মৃত্যুর পর জীবন দান করেন’ এ অংশ প্রমাণ করছে আল্লাহ যেমন মৃত জমিনকে বৃষ্টির পানি দ্বারা পুনরায় জীবিত করতে পারেন তেমনি মানুষকে পথভ্রষ্টের পর হিদায়াত দিতে পারেন, দুঃখের পর সুখ দিতে পারেন, কঠিন অন্তরকেও নরম করে দিতে পারেন এবং মানুষের মুত্যৃর পর পুনঃজীবিত করতে পারেন। মৃত্যুর পর হিসাব-নিকাশ করে মু’মিনদেরকে জান্নাত আর কাফিরদেরকে জাহান্নাম দেওয়ার জন্য অবশ্যই সকলকে পুনরুত্থিত করবেন।(يُّضَاعَفُ لَهُمْ) অর্থাৎ এক-এর বদলে কমপক্ষে দশগুণ এবং তার চেয়েও বেশি সাতশত গুণ বরং তার থেকেও অধিক মাত্রায়। যেমন আল্লাহ বলেন : (مَثَلُ الَّذِیْنَ یُنْفِقُوْنَ اَمْوَالَھُمْ فِیْ سَبِیْلِ اللہِ کَمَثَلِ حَبَّةٍ اَنْۭبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِیْ کُلِّ سُنْۭبُلَةٍ مِّائَةُ حَبَّةٍﺚ وَاللہُ یُضٰعِفُ لِمَنْ یَّشَا۬ئُﺚ وَاللہُ وَاسِعٌ عَلِیْمٌ) “যারা আল্লাহর পথে তাদের মাল খরচ করে তাদের উদাহরণ হচ্ছে একটি শস্যদানা যা সাতটি শীষ উৎপন্ন করে। প্রত্যেক শীষে এক শত শস্যদানা থাকে আর আল্লাহ যাকে চান তাকে বাড়িয়ে দেন। আল্লাহ প্রশস্তকারী, মহাজ্ঞানী।”(هُمُ الصِّدِّيْقُوْنَ) এ আয়াতের তাফসীর মুফাসসিরে কেরাম দু’ভাবে করেছেন : ১. আল্লামা ইবনু কাসীর ও সা‘দী (রহঃ)-সহ অনেকে বলেছেন : আয়াতটি (هُمُ الصِّدِّيْقُوْنَ) এখানে পরিপূর্ণ। ইবনু আব্বাস (রাঃ)-ও এ কথা বলেছেন। অর্থ হল : যারা আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের প্রতি সত্যিকার ঈমান এনেছে তারা সিদ্দীক। আর শহীদরা তাদের প্রতিপালকের নিকট শহীদের মর্যাদায় রয়েছে শহীদের মর্যাদা সম্পর্কে যেভাবে হাদীসে বলা হয়েছে।২. আল্লামা ইবনু জারীর (রহঃ) বলেন : আয়াতটি (لَهُمْ أَجْرُهُمْ وَنُوْرُهُمْ) এখানে পরিপূর্ণ। অর্থ হল : যারা আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের প্রতি সত্যিকার ঈমান এনেছে তারা সিদ্দিক ও শহীদ। তাদের জন্য রয়েছে তাদের প্রাপ্য পুরস্কার ও জ্যোতি। যেমন হাদীসে এসেছে : জান্নাতে একশতটির মত মর্তবা রয়েছে। এক মর্তবা থেকে অন্য মর্তবার দূরত্ব হল আকাশ-জমিনের মত দূরত্ব। এসব আল্লাহ তা‘আলা তাঁর পথে জিহাদকারীদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন। প্রথমটি অধিক সঠিক, কারণ প্রত্যেক সত্যিকার মু’মিন সিদ্দিক হতে পারে কিন্তু শহীদ হতে পারে না। (আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন) আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় : ১. বেশি বেশি আল্লাহ তা‘আলার যিকির করা উচিত। ২. আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় দান করার ফযীলত জানলাম। ৩. যারা প্রকৃত ঈমানদার তারাই সিদ্দিক। যেহেতু তারা আল্লাহ তা‘আলা, রাসূল ও দীনের সব কিছু সত্য বলে স্বীকার করে নিয়েছে। ৪. শহীদদের মর্যাদা জানতে পারলাম।৫. শরীয়ত গর্হিত পন্থায় ইবাদত করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।