10/12/2024
বই সংগ্রহের নেশা কি ইতিবাচক?
আজকাল অনেকেরই অভিযোগ, এত বই বিক্রি হচ্ছে, এত কেনাকাটা হচ্ছে—কিন্তু বই আসলে লোকে পড়ে না। বই যদি পড়তই, তাহলে তো সমাজের এত দুরবস্থা থাকে না।
বই কেনে, সংগ্রহ করে কিন্তু পড়ে না—কেন?
জাপানি ভাষায় এই ধরনের অভ্যাসের একটা নাম আছে—তসুন্দোকু। মানে যত সংগ্রহ করা হয় ততটা না পড়া। অবশ্য, যারা শুধু কেনে, মোটেও পড়ে না, তাদের আসক্তিকে বলে ‘বিব্লিওম্যানিয়া’।
এমনিতে বইপ্রেমীদের একটি সাধারণ অভ্যাস হলো ক্রমাগত পড়ার তালিকা বাড়ানো। একটি বই পড়ে শেষ করার পর, তালিকায় নতুন পাঁচ বা দশটি বই যোগ করা যেন এক অনিবার্য প্রক্রিয়া।
প্রশ্ন হলো, এটি কি ভালো অভ্যাস, না খারাপ? জাপানি সংস্কৃতিতে তসুন্দোকু শব্দটি নিরপেক্ষ। তবে কেউ যদি একগাদা অপঠিত বইয়ের মালিক হন, তবে তা নিয়ে সামান্য পরিহাস তো করাই যায়। একইসঙ্গে জীবনের সীমাবদ্ধতাকেও তুলে ধরে।
কেন আমরা পড়ার সুযোগ না পেয়েও বই জমাই?
যারা বই সংগ্রহ করেন কিন্তু পড়েন না, তাদের পিছনের কারণগুলো নানা রকম:
হয়তো আত্মপ্রদর্শন; ১৯শ শতকে ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার মর্যাদার প্রতীক ছিল। আজও, অনেক বই থাকা কাউকে বুদ্ধিমান মনে করে।
অথবা সংগ্রহের আনন্দ; কেউ কেউ বিরল বই বা প্রিয় লেখকের কাজ খুঁজে বের করার জন্য বই সংগ্রহ করেন। বিশেষ কিছু বই হয়তো জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের স্মারক। তা ছাড়া বইপ্রেমীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়া বা নিজের পরিচয় তুলে ধরার মাধ্যম হিসেবেও বই সংগ্রহ করা হয়।
তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তসুন্দোকু আসে বইয়ের প্রতি ভালোবাসা থেকে। এটা অনেকটা রেস্তোরাঁয় গিয়ে মেনুর প্রতিটি আইটেম চেখে দেখার মতো, সাধ্যে কুলায় না বলে বা পেট ভরা থাকায় সবগুলো নেওয়া সম্ভব হয় না।
তাই বলে অপঠিত বই কি অপ্রয়োজনীয়?
অনেকে তা-ই মনে করে। তবে নাসিম নিকোলাস তালেব তার বই ‘ব্ল্যাক সোয়ান’-এ বলেছেন, অপঠিত বইগুলো আসলে আমাদের শেখার আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। এগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমরা কত কিছু জানি না।
পড়ার ইচ্ছায় যারা বই সংগ্রহ করেন, তারা অপঠিত বইয়ের দিকে তাকিয়ে বিনম্র বোধ করেন। এটি এক ধরনের আত্মশিক্ষা—আমরা যতই শিখি, ততই বুঝি কত কিছু রয়ে গেছে শেখার।
বই সংগ্রহের সুপ্ত কিছু সুবিধাও আছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব পরিবারে বই বেশি থাকে, সেখানে বেড়ে ওঠা শিশুদের ভাষাগত, গাণিতিক ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা বেশি উন্নত হয়।
এ ছাড়া, বই সংরক্ষণ করার ফলে জ্ঞান হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমে। পুরোনো গ্রন্থাগারগুলো আমাদের তা-ই জানায়। এমনকি যদি প্রতিটি বই পড়া নাও হয়, তবুও সেই স্তূপ একদিন কাজে লাগবেই।
তসুন্দোকু আমাদের শেখায়, বইয়ের সংগ্রহ শুধু শখ নয়; এটি সম্ভাবনার, শিক্ষার ও বিনম্রতার প্রতীক। আমাদের অপঠিত বইগুলোও আমাদের জীবনের অংশ।
কনটেন্ট কার্টেসি: রকমারি।
ফটোগ্রাফি : ridi zilsana