বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে অবস্থিত ফেনী জেলাকে ঘিরে রয়েছে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম। দক্ষিণে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। এখানে ভাষার কিছু বৈচিত্র্য খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন ফেনীর কথ্য ভাষায় মহাপ্রাণ ধ্বনিসমূহ উচ্চারণের ক্ষেত্রে বায়ুপ্রবাহের চাপ কম থাকায় মহাপ্রাণ ধ্বনিসমূহ অল্পপ্রাণ ধ্বনির মত উচ্চারিত হয় আবার অল্পপ্রাণ ধ্বনিসমূহ উচ্চারণের ক্ষেত্রে বায়ুপ্রবাহের চাপ বেশি থাকায় অল
্পপ্রাণ ধ্বনিসমূহ মহাপ্রাণ ধ্বনির মত উচ্চারিত হয়। বর্ণ উচ্চারণে সহজতর বর্ণ ব্যবহার করা হয় অধিক হারে এবং প্রয়োজনে বর্ণকে ভেঙে কাছাকছি অবস্থান উচ্চারণ অবস্থান বেছে নেয়া হয় অর্থাত্ ভাষা সহজীকরণের প্রবণতা সুসপষ্ট। এর অন্যতম আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বাংলাদেশের যে কোন অঞ্চলের মানুষ ফেনীর আঞ্চলিক ভাষাকে সহজভাবে বুঝতে পারে এবং সহজেই এ আঞ্চলিক ভাষাটিকে নিজের কণ্ঠে ধারণ করতে পারে। ফেনীর ভাষার সাথে পার্শ্ববর্তী চট্টগ্রাম সংলগ্ন মিরেশ্বরাই এবং এর সংলগ্ন নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার ভাষার অনেকটাই সামঞ্জস্য রয়েছে ফেনীর আঞ্চলিক ভাষার সাথে। ফেনী-মুহুরী-কহুয়ানদীর গতিপ্রকৃতি ও ছোট ফেনী-কালিদাস-পাহালিয়া খালের খরস্রোত, নদীভাঙন, বন্যা, চরাঞ্চল এবং বঙ্গোপসাগরের নোনা হাওয়া, ছাগলনাইয়া অঞ্চলের পাহাড়ী লালমাটি ফেনী জেলার মানুষের আচার-আচরণ, খাদ্যাভ্যাস, ভাষা, সংস্কৃতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। এ অঞ্চলের মানুষগুলো ধর্মভীরু-সহজ-সরল-অতিথি পরায়ণ। সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি এ অঞ্চলের মানুষের মজ্জাগত। মানুষের মুখে মুখে ছড়াকাটা, ধাঁধাঁ, বচন ইত্যাদি প্রচলিত। প্রাচীন ভুলভুলাইয়া নদীর তীরবর্তী মানুষগুলোর বাণিজ্যযাত্রা ও বণিকের নিয়তি ও প্রেমকাহিনী নিয়ে রচিত ভুলুয়ার পালা এ অঞ্চলের প্রাচীন সংস্কৃতির নিদর্শন। পালা গান, কবি লড়াই, ঢাকী নৃত্য এর পাশাপাশি পুঁথিসাহিত্যে শমসের গাজীর কিচ্ছা, ভুলুয়ার কিচ্ছা প্রভৃতি সুপরিচিত।
প্রাচীন ঐতিহ্যের স্মৃতি: জেলার ঐতিহ্যের ধারক হিসাবে স্মৃতি বহন করছে শমশের গাজী দীঘি, কৈয়ারা দীঘি, রাজাঝির দীঘি, বিজয়সিংহ দীঘি, ফুলগাজী দীঘি, মহিপাল দীঘি, শমসের গাজীর কেল্লার ধ্বংসাবশেষ, শতবর্ষের ঐতিহ্য ফেনী সরকারি পাইলট হাইস্কুল, ফেনী সরকারি কলেজ, ছাগলনাইয়ার মোগল আমলের ঐতিহাসিক চাঁদগাজী ভূঁঞা মসজিদ জেলার ঐতিহ্য বহন করছে।