23/09/2023
📚একটি ঘুমের গল্প📚
ইমাম বুখারী (আল্লাহ তার প্রতি রহম করুন এবং তাকে ক্ষমা করুন) কীভাবে মারা যান?
ইমাম আল-বুখারী তার জীবনের শেষ দিকে পূর্ব ইসলামী বিশ্বের শহরগুলোর শাসকদের কাছ থেকে বিশেষভাবে প্রচণ্ড নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন; অর্থাৎ নিশাপুর, বুখারা, সমরকন্দ.. এর শাসকদের পক্ষ থেকে।
তার মৃত্যুর অনেক কারণের মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে,
1- তিনি শাসকের প্রাসাদে এসে তাদের সন্তানদের পড়াতে অস্বীকার করেন। তিনি সুলতানদের কাছে যেতে অস্বীকার করলেন এবং বললেন:
“যেখানে জ্ঞান দেওয়া হয় সেখানে আসতে হয়, জ্ঞান কারো দরজায় যায় না।”
2- কিছু লোক তার খ্যাতি ও সুনামকে হিংসা করত।
এছাড়াও আরো ছিল অন্যান্য কারণ..
ইমাম বুখারী যখন 62 বছর বয়সে উপনীত হন, তখন তিনি নিশাপুরের শাসকের কাছ থেকে হিংসার শিকার হয়েছিলেন। ইমামকে শাসক সেখান থেকে বের করে দিয়েছিলেন। তিনি সেখান থেকে বোখারার উদ্দেশ্যে চলে যান।
কিন্তু শীঘ্রই বুখারার শাসক তার খ্যাতিতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং নিশাপুরের শাসকের কাছ থেকেও বার্তা আসে যে ইমামকে বোখারা থেকেও বহিষ্কার করা প্রয়োজন, যেমন তাকে পূর্বে নিশাপুর থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।
শহরের শাসনকর্তার দূত ইমাম বুখারীর বাড়িতে পৌঁছে তাকে জরুরীভাবে শহর ছেড়ে চলে যেতে বলেন। নির্দেশ ছিল যে "এখন" তাকে শহর ছেড়ে চলে যেতে হবে, ইমামের বইগুলো সাথে সংগ্রহ করে নেয়ারও সময় নেই। তার বই এবং সেগুলি সাজানোর সুযোগ নেই। তাই তিনি শহর ছেড়ে তার উপকণ্ঠে একটি তাঁবুতে তিন দিন অবস্থান করেন। সেখানে তিনি তার বইগুলি সামঞ্জস্য করেন ও সাজিয়ে রাখে?!
অতঃপর ইমাম আল-বুখারী সমরকন্দ শহরের দিকে চলে গেলেন, কিন্তু তিনি নিজে শহরে প্রবেশ করেননি, বরং ইব্রাহিম বিন মাকিলের সাথে তার আত্মীয়দের অতিথি হওয়ার জন্য খারতাঙ্ক নামক একটি গ্রামের দিকে রওনা হন।
ইমাম যে বাড়িতে থাকতেন সেই বাড়ির দরজায় শাসকের বাহিনী পৌঁছাতে বেশি সময় লাগেনি, এই সময় সমরকন্দের শাসকের কাছ থেকে তাদের মাধ্যমে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, ইমাম বুখারীকে সমরকন্দ ও এর গ্রাম ত্যাগ করতে হবে!!
এটি ছিল ঈদুল ফিতরের রাত, কিন্তু নির্দেশ ছিল যে তাকে ঈদের পরে নয় "এখন" বাইরে চলে যেতে হবে। ইমামের ভয় ছিল যে তিনি তার আত্মীয়দের কোনো ক্ষতির কারণ হবেন যারা তাকে সম্মান করেছিলেন, তাই তিনি বের হয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন। তার ছাত্র ইব্রাহিম বিন মাকিল সফরের সব ব্যবস্থা করলেন। তার জন্য বই তার প্রথম বাহণের উপরে এবং দ্বিতীয়টি ইমামের চড়ার জন্য তিনি প্রস্তুত করেন।
তারপর ইবনে মাকিল ইমাম বুখারীকে বাইরে নিয়ে আসতে শুরু করেন। যখন তারা সওয়ারী পশুর দিকে হাঁটতে থাকেন তখন প্রায় 20 কদম চলার পর ইমাম বুখারী আরও বেশি ক্লান্ত বোধ করেন, তাই তিনি ইবনে মাকিলকে বললেন তাকে বিশ্রামের জন্য কয়েক মিনিট সময় দিতে।
ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ রাস্তার পাশে বসলেন, তারপর ঘুমিয়ে পড়লেন... মাত্র কয়েক মিনিট কেটে গেছে যখন ইবনে মাকিল ইমামকে জাগাতে চাইলেন, তিনি দেখতে পেলেন যে তার আত্মা আল্লাহর কাছে চলে গেছে, সর্বশক্তিমান আল্লাহ তার প্রতি রহম করুন।
ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ 1 শাওয়াল, 256 হিজরিতে ঈদুল ফিতরের রাতে রাস্তার পাশে মারা যান। তাকে এক শহর, তারপর আরেক শহর অতঃপর তৃতীয় শহর থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তখন তার বয়স ছিল 62 বছরের কিছু বেশি। তিনি কেবল নির্ভর করেছিলেন সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর। লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।
আজ হয়ত সে সময়কার নিশাপুর, বুখারা এবং সমরকন্দের শাসকদের নাম অনেকেই জানে না... কিন্তু সবাই জানে ইমাম বুখারি রাহিমাহুল্লাহকে...
আল্লাহ ইমাম আল-বুখারীর প্রতি রহম করুন এবং নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও নেককারদের সাথে জান্নাতে তাকে জায়গা করে দিন।
📚ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আ’লামিন নুবালা।
শায়েখ আবু বকর জাকারিয়া হাফিজাহুল্লাহ্ এর পেজ হতে।