10/12/2023
১৯৭১ সালের এই দিনে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ফরিদপুর জেলার কানাইপুর ইউনিয়নের করিমপুরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। এতে মুক্তিযোদ্ধা কাজী সালাউদ্দিন আহম্মেদ, মেজবাউদ্দিন নৌফেলসহ সাতজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করায় হত্যা করা হয় আরও চারজন গ্রামবাসীকে। এই যুদ্ধে আহত হয় অর্ধশতাধিক মুক্তিযোদ্ধা। আর পাকিস্তানি বাহিনীর বেশ কিছু সৈনিকও নিহত হয় তখন।
যশোরে তখন স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়ছে। হানাদার বাহিনী পিছু হটে ঢাকা ফিরছে।
নতুনদিয়া ক্যাম্প থেকে সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল করিমপুর সংলগ্ন সিএন্ডবি রাস্তায় একটি সেনা গাড়িকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড চার্জ করে উড়িয়ে দেয়। এমন সময় পাকসেনাদের গাড়ির লম্বা বহর এসে গেলে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে এসে একটি বাড়িতে আশ্রয় নেয়।
স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাকসেনারা ঐ বাড়ীটি ঘিরে ফেলে। আতাহারের নেতৃত্বে ৫ জন গুলি করতে করতে বেরিয়ে আসে। তখন বিকেল। সালাউদ্দিন তখনও এলএমজি দিয়ে গুলি করছিল। এ খবর পেয়ে নতুবদিয়া ক্যাম্প থেকে হেমায়েতের নেতৃত্বে একটি ১৫/২০ জনের গ্রুপ এবং গৌড়দিয়া ক্যাম্প থেকে মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াসের নেতৃত্বে আরো একটি গ্রুপ অগ্রসর হয়।
তুমুল যুদ্ধের এক পর্যায়েতরুণ যোদ্ধাদের অস্ত্রের স্বল্পতা দেখা দেয়। একই সময়ে কমান্ডার সালাউদ্দিনের পায়ে শত্রুর গুলি এসে আঘাত করে। মুক্তিযোদ্ধা হেমায়েত আহত হওয়ায় শেষ প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়্ মুক্তিযোদ্ধা নৌফেল তখন ইউ ও টি সির শিক্ষা অনুসারে দলের বাদবাকি সবাইকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে কমান্ডার সালাউদ্দিনকে কাঁধে নিয়ে নিকটস্থ গ্রামের একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন। হানাদার বাহিনী পুরো এলাকাটি ঘিরে ফেলে। তার পর কিছু রাজাকারের সহায়তায় কমান্ডার সালাউদ্দিন এবং তার ডেপুটি মেজবাহ উদ্দিন নৌফেলসহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজে বের করে নির্মম ভাবে নির্যাতন করে হত্যা করে।
এছাড়াও গ্রামবাসীদের মধ্যে শহীদ হন তিন সহদর ভাই বাকেলউদ্দীন মন্ডল, হযরতউদ্দীন মন্ডল, হাশেম আলী মন্ডল ও স্থানীয় কৃষক আবু খাঁ। ঐ যুদ্ধে মোমিন ও তবিবুর রহমান মারাত্মকভাবে আহত হন। করিমপুর যুদ্ধে এছাড়াও অংশগ্রহন করেন মুক্তিযোদ্ধা ডা. রুনু, আবু বকর সিদ্দিক, আমিনুর রহমান ফরিদ, সামসুদ্দিন, কাজী ফরিদউদ্দিন, আকরাম আলী প্রমুখ।
বিজয়ের পর ১৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালের সকালে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের দেহাবশেষ উদ্ধার করে ফরিদপুরের আলীপুর গোরস্থানে দাফন করা হয়।
নিহত পরিবারর ও মুক্তিযোদ্ধারা করিমপুরের যুদ্ধ স্থলে ১টি স্মৃতি সৌধ নির্মানের দাবী জানিয়েছে। তাদের দাবী এখানে একটি স্মৃতি সৌধ নির্মান হলে আগামী প্রজন্ম করিমপুর যুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারবে।
© Faridpur City