08/07/2023
আবার বিল্ডিংটা থেকে আরেকটা ডেডবডি বের করানো হল। এর
আগে আরো২ জনের ডেডবডি বের করে আনা হয় সেখান
থেকে। তিনজনই নাকি হুজুর। তাদের মৃত্যু হয়েছে বড়ই
রহস্যজনকভাবে। তাদের শরীরের কোনো ক্ষতের দাগ
পাওয়া যায়নি। ডাক্তারের রিপোর্ট অনুযায়ী শারীরিক কোনো
প্রকার সমস্যা মৃত্যুর কারণ ছিল না তাদের। এদিকে পুলিশ শরীফ
আঙ্কেলের সাথে কিছুক্ষন কথা বলে, শেক-হ্যান্ড করে
চলে গেলেন। আমি ফয়সাল এতক্ষন দৃশ্যগুলো দেখছিলাম।
আমি ফয়সালকে বললাম,
- দোস্ত, এই ঘটনাগুলো তো শরীফ আঙ্কেলের
ফ্ল্যাটেই হচ্ছে। হুম...বড়ই রহস্যজনক...
- হুম। ছয়দিনে তিনজন লোকের মৃত্যু! আর তিনজনই নাকি হুজুর।
সবচেয়ে রহস্যজনক ব্যাপার হল সবার মৃত্যু হল একইভাবে।
- আচ্ছা, উনার বাসায় গিয়ে এই নিয়ে কথা বললে কেমন হয়?
- তুই গিয়ে বলিস। আমি এখন যাচ্ছি, সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে।
আমি ঘটনাগুলো বাড়ির সবাইকে পরিষ্কারভাবে সব বুঝিয়ে বললাম।
মা বলেন "হয়ত জায়গাটাতে জ্বীনের নজর-টজর আছে।"
আমি সোফায় বসে ব্যাপারটা সম্পর্কে চিন্তা করতে লাগলাম। মা
আমার এমন অবস্থা দেখে বললেন, "কিরে, তুই আবার এর
রহস্যটা অনুসন্ধান করার কথা ভাবছিস নাকি?? সাবধান, বান্দরবান থেকে
তুই এই টাইপের রহস্য অনুসন্ধান করতে গিয়ে যে আঘাত
পেয়েছিস মনে আছে??"
আমি মাকে বললাম, "আমি এসব বিষয়ে নিজেকে জড়াচ্ছি নাহ। এখন
ভাত দাও, খিদা লাগছে।
আগের মোবাইলটা পানিতে নষ্ট হয়ে যাবার কারণে নিজের
সামর্থ্য অনুযায়ী একটা জাভা মোবাইল কিনলাম। ভালো করে
ফেসবুক পর্যন্ত চালানো যায় না। ঘড়িতে দেখলাম রাত ১২:৩০।
ফয়সাল এতক্ষনেও জেগে থাকে। আমি বিছানায় শুয়ে তাকে
কল দিলাম। অনেক্ষন রিং পড়ার পর ওপাশ থেকে ঘুম জড়ানো
কন্ঠে ফয়সাল বলল,
- হ্যালো
- কিরে, তুই ঘুমাচ্ছিস নাকি??
- হুম। আজকে শরীরটা একটু খারাপ পড়েছে। বল, ফোন
কেনো দিয়েছিস?
- কাল আমরা ওখানে যাব, শরীফ আঙ্কেলের ফ্ল্যাটে।
ফয়সালের চোখ থেকে মনে হয় ঘুম চলে গেলো আমার
কথা শুনে।
- আমরা মানে?? আমি গিয়ে কি করব?(ফয়সাল)
- হুম। না গেলে তোকে টেনে টেনে নিয়ে যাব।
আমি ফোন কেটে দিলাম। শরীফ আঙ্কেল থাকেন আমাদের
এলাকার একটি বিল্ডিং এর তিনতলার ৩০২ নং ফ্ল্যাটে। তার বাসায় কখনো
না গেলেও, তার সাথে ভালোই যোগাযোগ হয় আমার। বড়ই
ভদ্র মানুষ। তার ফ্ল্যাট থেকে তিনজনের রহস্যজনক মৃত্যু।
তিনজনই হলেন হুজুর। না না ব্যাপারটা ফেলে দেবার মত নয়।
আমি আর ফয়সাল এখন শরীফ আঙ্কেলের বিল্ডিংটার নিচে
দাঁড়িয়ে আছি। ভেতরে গেলাম। এক তলা হল পার্কিং এরিয়া। আহ!
পার্কিং এরিয়া যদি এতই সুন্দর হয়, তাহলে ঘরের ভেতরটা কিরকম
হবে.....
দুতলায় দুটো ফ্ল্যাট, ২০১-২০২। উভয়ের দরজায় সুন্দর কারুকাজ
করা। হঠাৎ সিড়িতে কারোর পায়ের আওয়াজ পেলাম। উপরে
তাকিয়ে দেখলাম পেস্ট কালারের ইউনিফর্ম পড়া একজন লোক
নামছেন। সামনে আসতেই চিনতে পারলাম। এটা সেই পুলিশটা,
যাকে শরীফ আঙ্কেলের সাথে দেখেছিলাম। তার মানে তিনি
শরীফ আঙ্কেলের ফ্ল্যাট থেকে আসছেন। আমি দরজা
বান্ধ করার আওয়াজও পেলাম। তাকে কিছু না বলে তিন তলায় চলে
এলাম। সেখানেও দুটো ফ্ল্যাট, ৩০১-৩০২। তবে দরজায় কোন
কারুকাজ নেই। তখন আর বুঝতে বাকি রইল না যে ২তলায় জমিদার
মশাই থাকেন। ফয়সাল আমাকে পাশ থেকে বলল, "তুই কি সিওর??
এই বিষয়ে কথা বললে উনি কিছু মনে করবেন না তো??"
আমি হেসে বললাম, "হায়রে ফইন্নি, No চিন্তা, just play.."
আমি কলিং বেলে প্রেস করলাম। কিছুক্ষন পর মধ্য বয়স্ক এক
মানুষ দরজা খুললেন। আমাদের দেখে বললেন, "কিরে,
তোমরা এখানে??"
আমি বললাম, "আপনার বাসায় তো কখনো আসা হল না আমার।
সেইজন্যে আজকে আসব বলে চিন্তা করলাম।"
তিনি আমাদের ভেতরে আসতে বললেন। আমরা জুতা খুলে
ভেতরে গেলাম। একটা লাল রঙের সোফায় বসলাম। আমাদের
সামনে শরীফ আঙ্কেল বসলেন। তিনি গলা উঁচিয়ে "মুনতাহা"
বলে এক ডাক দিলেন। কিছুক্ষন পর একজন মেয়ে হাতে ট্রে
নিয়ে এসে সামনে থাকা টেবিলে রাখল। যথেষ্ট সুন্দরি সে।
আমাদের দিকে একটুও তাকালো না সে। তবে আমি ফয়সালের
দিকে তাকিয়ে দেখলাম, সে মুনিতাহার দিকে হা করে তাকিয়ে
আছে। আমি ফয়সালকে কনুই দিয়ে একটা ধাক্কা মারলাম। এতক্ষন
পর তার হুশ এলো। শরীফ আঙ্কেল তার সাথে আমাদের পরিচয়
করিয়ে দিলেন। সে নাকি তার একমাত্র মেয়ে।
আমরা অনেক্ষন ধরব এই-সেই বিষয় নিয়ে কথা বললাম। এরপর
আমি বললাম, "আঙ্কেল, আপনার ফ্ল্যাটে তো ৬ দিনে ৩
জনের মৃত্যু হয়েছে। আর তিনজনই হলেন নাকি হুজুর টাইপের।
আমার ব্যাপারটা বড়ই রহস্যজনক মনে হচ্ছে। ব্যাপারটা একটু খুলে
বলবেন??
তিনি বললেন, "আচ্ছা, তবে তা যেন বাইরের কেউ জানতে না
পারে।"
আমি বললাম, "আচ্ছা, ঠিকাছে।" ফয়সালও আমাকে সমর্থন করল।
এরপর তিনি বলতে শুরু করলেন....
চলবে....
ভুতুরে এডভেঞ্চার (ফ্লাট ৩০২)
পর্ব ১
হৃদয়(ছদ্দনাম)
(প্রথম পর্ব, তাই বেশি বেশি কমেন্ট চাই। তাহলে পরবর্তী
পর্ব পোস্ট করার উৎসাহ পাব।)