04/11/2022
জীবদেহ ও জীবাত্মার মধ্যে পার্থক্য কি ??
জীবদেহঃ অচেতন।
জীবাত্মাঃ চেতন।সমস্ত দেহে পরিব্যপ্ত এবং সকল চেতনার উৎস।
জীবদেহঃ পঞ্চভূতের সমন্বয়ে গঠিত।
জীবাত্মাঃ জড় উপাদান শূন্য,চিন্ময়,চিতকন, অবিভাজ্য রূপ।
জীবদেহঃ সদা পরিবর্তনশীল,প্র
তিদিনই দেহের রূপান্তর হয়।বৃদ্ধি-ক্ষয় প্রভৃতি ৬টি পরিবর্তনের অধীন।
জীবাত্মাঃ চির অপরিবর্তনশীল,অব
্যয়,অবিকারী বৃদ্ধি-ক্ষয় প্রভৃতি পরিবর্তনহীন।
জীবদেহঃ নশ্বর,বিনাশশীল ও অনিত্য।
জীবআত্মাঃ অবিনশ্বর, নিত্য ও শ্বাশ্বত।
জীবদেহঃ ঈশ্বরের বহিরঙ্গা ও অপরা জড়া প্রকৃতির সৃষ্টি।
জীবাত্মাঃ ঈশ্বরের অবিচ্ছেদ্য অংশ,তটস্থা শক্তি,পরা প্রকৃতিসম্ভূত ।
জীবদেহঃ স্থূল ও পরিমাপযোগ্য।
জীবাত্মাঃ সূক্ষ্ম ও অপরিমেয়।
জীবদেহঃ ইন্দ্রিয় দ্বারা অনুভবযোগ্য।
জীবাত্মাঃ জড় ও ইন্দ্রিয়ের অগোচর।
জীবদেহঃ অস্ত্রাদির দ্বারা বিনাশযোগ্য।
জীবাত্মাঃ অচ্ছেদ্য, অদাহ্য, অক্লেদ্য ও অশোষ্য।
জীবদেহঃ অজ্ঞান বস্তুপিণ্ড।
জীবাত্মাঃ জ্ঞানময় সকল গুণাবলীর আধারের উপযুক্ত।
জীবদেহঃ ব্যাক্তিত্বহীন যন্ত্র।
জীবাত্মাঃ মূল ব্যাক্তি ও ব্যক্তিত্বের কেন্দ্র।
জীবদেহঃ দুখঃ-ক্লেশের আধার ও নিরানন্দময়।
জীবাত্মাঃ আনন্দময়।
জীবদেহঃ পরিচালিত যন্ত্র।
জীবাত্মাঃ পরিচালক।
জীবদেহঃ মনন ,অনুভব ও সামর্থ্যহীন।
জীবাত্মাঃ অনুভূতিশীল এবং অনুভবের কেন্দ্রবিন্দু।
জীবদেহঃ ইচ্ছা,দ্বেষ,বাসনা ও সক্রিয়তা শূন্য।
জীবাত্মাঃ ইচ্ছা,দ্বেষ,মান
,অভিমান,বাসনা,সক্রিয়তা যুক্ত।
জীবদেহঃ মিথ্যা অহঙ্কার নামক সূক্ষ্ম উপাদান সমন্বিত।
জীবাত্মাঃ মিথ্যা অহঙ্কার বিহীন ও প্রকৃত আমি।
জীবদেহঃ জড় ইন্দ্রিয়যুক্ত।
জীবাত্মাঃ চিন্ময় ইন্দ্রিয়যুক্ত।
জীবদেহঃ মন ও বুদ্ধি জড়।
জীবাত্মাঃ মন ও বুদ্ধি চিন্ময়।
জীবদেহঃ অস্থায়ী পোশাক ও বিরূপ।
জীবাত্মাঃ শাশ্বত ও ব্যাক্তি স্বরূপ।
জীবদেহঃ ইহায় মিথ্যা।
জীবাত্মাঃ ইহায় চিরন্তন সত্য।
# আত্মার মুখ্য কিছু বৈশিষ্ট্য !!
আত্মার আয়তন ,, কেশাগ্রের দশ হাজার ভাগের এক ভাগ।কেশাগ্র শতভাগস্য শতধা কল্পিতস্য চ !! শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ৫/৯ !!
আত্মার অবস্থান ,, আত্মার অবস্থান জীবের মনে ,, সেখান থেকে সারা দেহে পরিব্যাপ্ত হয় তার চেতনা।
আত্মা অবিনশ্বর ,,আত্মা বিনাশরহিত।অর্থ্যাৎ কোনো -ভাবেই তাকে ছেদন/দহন/সিক্ত/
ধ্বংশ করা যায় না।শাশ্বত ,,জন্ম -মৃত্যুহীন এবং চিরনিত্য।জন্ম-মৃত্যু জড় শরীরের হয় আত্মার নয়।শ্রীমদভগবদগীতা ২/২০ এর উক্তি অনুসারে আত্মা অজ ,নিত্য,শাশ্বত,পুরানো ,আদি -অন্তহীন।
আত্মার শাশ্বত রূপ ,, আত্মা সৎ চিৎ আনন্দময় ,দিব্য রূপ ,ইহা জীবের দিব্য শরীরে রয়েছে।জরাব্যাধি ,, মৃত্যুগ্রস্থ ,,অসৎ ,,অচিৎ ,,নিরানন্দময় জড় শরীরে অবস্থানই আত্মার সকল দুঃখদুর্শশার কারণ।আত্মা দুঃখদুর্শশাগ্রস্থ হলে ব্যাক্তি দুঃখদুর্শশাভুক্ত হয়।জড় শরীরে দূষিতভাব সেই ব্যাক্তিত্বের প্রকাশিত হয়।আত্মা সেই ব্যাক্তিত্বের উৎস।এক ব্যাক্তি যেভাবে নিজ জড় শরীরকে পাপগুণে দূষিত করবে সে শ্রবণ,পঠন প্রভৃতি যেভাবে হউক না কেনো ,, তা ইচ্ছায় হউক বা অনিচ্ছায় সেই পাপগুণ তার নিজ শরীরের সাথে তার ব্যাক্তিত্বের বা আত্মাকেও দূষিত করে।এরজন্য সবচেয়ে পবিত্র আত্মা হল অবুঝ শিশু কিন্তু বয়স বৃদ্ধির সাথে তার ব্যাক্তিত্ব পরিবেশের পাপগুনে দ্বারা দূষিত হয় এবং সেও অসৎ মানুষ হয়ে উঠে।এই অসৎ হওয়ার দরুণ সে তার নিজ দেহে অবস্থিত পরমআত্মার অংশ নিজ আত্মাকে দূষিত করতে থাকে এর ফলে তার পাপের ঘড়া আস্তে আস্তে পূর্ণ হতে থাকে।তাই আত্মার বিকাশ হলো সেই ব্যাক্তির মনুষ্যত্বের বিকাশ।
আত্মা অবিকারী ,, প্রতিটি আত্মা,শাশ্বত,ব্যাক্তিত্ব -সম্পন্ন,কোন কালেই সেই ব্যক্তিত্ব ধ্বংশ হয় না,ব্রহ্মে -লীন হয়ে যায় না।উদাহরণ স্বরুপ ,,সবুজ পাখীটি সবুজ গাছে প্রবেশ করলেই পাখীটি হারিয়ে যায় না কেবল তাকে আর কল্পনা করা যায় না।শ্রীকৃষ্ণ শ্রীমদ্ভগবদ -গীতায় বলেছেন ২/২১- অব্যয় ,,অবিকারী ও সনাতন।
আত্মা অব্যক্ত ,,আত্মা জড় ইন্দ্রিয়ের প্রত্যক্ষীভূত নয়, তাই আত্মাকে বলা হয়েছে অব্যক্ত।
আত্মা অচিন্ত্য ,,জড়ধারণায় আবিষ্টদের অনুভবের অতীত।সেজন্য আত্মা অচিন্ত্যনীয়,অচিন্ত্য।
আত্মা পূর্ণের প্রকৃতিবিশিষ্ট ,, চিৎ -কণ আত্মা পরম চেতন ব্যক্তিত্ব ,,পরম ব্রহ্ম ঈশ্বরের অংশ।সেজন্য পূর্ণের বৈশিষ্ট্য অণুরূপে প্রকাশ পায় অংশের মধ্যে।বদ্ধ ভগবৎদ্বেষী জীব ভগবানের অনুকরণের চেস্টা করে, শুদ্ধ কলুষমুক্ত আত্মা ও ভক্তিযুক্ত ভাব ও জ্ঞানে স্থিত হলে নিত্য ভগবৎদাস জীবাত্মা সচ্চিদানন্দময় স্বরূপ লাভ করে।
প্রতিটি আত্মার শেষ ঠিকানা সেই পরমআত্মার সাথে মিশে যাওয়া বা মুক্তি বা মোক্ষ।মানুষের জীবন এক বড় পরীক্ষা মাত্র ,,এই পরীক্ষাতে যে উতীর্ণ বা পাশ করবে সেই একমাত্র মুক্তি পাবে !!এই পরীক্ষায় পাশ করতে হলে শুধুমাত্র ৩ বেলা পূজাপাঠ বা ৩ বেলা হরিনাম বা গুরুনাম জপ করলেই চলবে না।সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ নিজ আত্মা বা ব্যাক্তিত্বের পরিশোধন করা।মানুষকে নিজ কর্মগুনে নিজ আত্মার পরিশোধন করতে হবে ,, যাতে তা পরমাত্মার স্বরূপ লাভ করতে পারে এবং পরমাত্মার সাথে মিশে যেতে পারে।মনে রাখতে হবে জলের সাথে জল মিশে যায় কিন্তু তেলে জলে তা কখনোই মিশে না।যদি সে মুক্তি না পায় ,, তবে সে পুনরায় জীবন মৃত্যুর চক্রে জীবদেহ স্থাপিত হবে।
তথ্য সূত্র শ্রীমদ্ভগবদগীতা এবং ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।
জয় রাধে।