15/05/2025
১০০ টাকায় শান্তি কেনা!
অফিস শেষ করে বাসার দিকে ফিরছি। মাঝপথে ফাঁকা রাস্তায় আমাকে হাত নেড়ে ইশারা করল ছেলেটি। একটু দূর থেকেই হাটার চলন দেখে বুঝতে অসুবিধে হলোনা ছেলেটি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তি (প্রতিবন্ধী)।
আমার মোটরসাইকেলে উঠবে। আমি গাড়ি থামিয়ে মোটরসাইকেলে উঠালাম। জিজ্ঞেস করলাম, কই যাবা? কোন উত্তর দিলনা। আবার পেছনে মাথা ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কোথায় নামবা বলো? কোন উত্তর না দেওয়াতে বুঝতে পারলাম ছেলেটি বাক প্রতিবন্ধী!
সামনে কয়েকজন পিচ্চিকে দেখলাম। ওদের জিজ্ঞেস করলাম এই ছেলেকি কথা বলতে পারেনা? ওরা কয়েকজন একসাথেই উত্তর দিলো, ও কথা বলতে পারেনা। ওর বাড়ি ওই যে সামনে! ওখানে নেমে যাবে। আমি তাদের মধ্যে থেকে ছোট একটা পিচ্চিকে গাড়িতে উঠতে বললাম। উঠল, বাকি পিচ্চিরা আমাকে সালাম দিয়ে যেতে বলল।
কিছুদূর গিয়ে ছোট ছেলেটি বলল, এখানে নামাই দেন। ওই যে এই বাড়িটার পরেই ওর বাড়ি। নাম সম্ভবত মোবারক। ছোট ছেলেটি নামার পর সে আর নামেনা। আমাকে ইশারা করল, সে সামনের বাজারে যাবে। দাড়িয়ে থাকা এক মুরুব্বিকে বললাম, চাচা ওকে কি বাজারে নিয়ে যাওয়া যাবে? তিনি বললেন, ও এখন বাজারেই যাবে। বাজারে গিয়ে নেমে যাবে।
আমি গাড়ি টানতেছি, খানিকটা পথ গিয়েই বাজারে এলাম। আবার ইশারা করলাম, কোথায় নামবে? সে হাত দিয়ে দেখায় দিল সামনের একটি মোড়ে নামবে। আমি সেখানে নামানোর পর পকেট থেকে ১০০ টাকার একটা নোট বের করে তার হাতে দিলাম।
সে ১০০ টাকার নোটটি দেখে এতটাই অবাক হয়েছে যে, কি করবে বুঝে উঠে পারছিলনা!! নোটটি হাতে দিলাম। টাকাটা নিয়ে সে আমাকে কিভাবে কৃতজ্ঞতা জানাবে শুধু এই অভিব্যক্তিটা দেখে আমি কেঁদে ফেলেছি! টলমল চোখে আমার কাছে এসে মাথায় হাত দিয়ে কি যেনো বলতেছে। আমি বললাম, যাও। আমি চলে আসলাম। কিন্তু এতটাই মনে প্রশান্তি এসেছে যে, কিছুটা পথ গিয়ে আবার ফিরে এলাম একটা ছবি তুলব বলে। কিন্তু এসে দেখি সে নাই! যেখানে নামছে সেখানে এবং আশপাশে খুঁজলাম। অটো চালকদের জিজ্ঞেস করলাম। তারা বললো, এখন-ই এখানে ছিল দেখেন পাবেন।
দেখতে দেখতে ঠিকই পেয়ে গেলাম। এবার তার সামনে দাঁড়াতেই সে হঠাৎ চমকে উঠল! হয়ত ভাবছিল টাকাটা আবার ফেরৎ নিতে আসছি কিনা!! তারে বললাম, কি খাবে ? সে একটা আইসক্রিমের দোকানে নিয়ে গেলো। দুটো আইসক্রিম নিলো। বললাম, খেয়ে নাও? সে ইশারা করল, বাড়িতে নিয়ে খাবে। প্যাকেটে বাড়ি নিয়ে গেলো। বললাম, একটা ছবি তুলি তোমার সাথে?
চুলটা হাত দিয়ে স্টাইল করে আমার সাথে দাঁড়াল। হাসতে বললাম, দুজনে হেসে হেসে ছবি তুললাম। ভেতরের অনুভূতি বোঝাতে পারবনা। অল্প টাকায় মনের প্রশান্তি কিনলাম। চোখ ভিজে যাচ্ছে অজানা কারণে......….!!!