09/09/2024
আগামী ১১ সেপ্টেম্বর শ্রী রাধাষ্টমী ।
আগের দিন সংকল্প করবেন নিচের ছবিতে দেওয়া এই মন্ত্র অনুযায়ী । রাধাষ্টমীর আগের দিন এবং পরের দিন অবশ্যই নিরামিষভোজন করবেন ।
প্রশ্নঃ--রাধা অষ্টমী কি?? আমাদের কেন রাধা অষ্টমী ব্রত পালন করা উচিত???
==================================
উত্তরঃ--রাধা অষ্টমী হচ্ছে শ্রীমতি রাধারানীর আবির্ভাব তিথী। রাধারানী ভাদ্রমাসের শুক্লাষ্টমী তিথীতে ধরিত্রীকে পবিত্র করে আবির্ভুত হয়েছিলেন। বৈষ্ণব সম্প্রাদায়ের মধ্যে এই অষ্টমী তিথী মহাসমারোহে দীর্ঘদিন ধরে উদযাপিত হয়ে আসছে। তবে সাধারন মানুষের মধ্যে এর প্রভাব খানিকটা কম। ভগবান শ্রী কৃষ্ণের হ্লাদিনী শক্তির প্রতিরুপ স্বরূপা হচ্ছেন রাধাঠাকুরানী।
রাধাষ্টমী ব্রত পালনের কথা বর্নিত করে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তির জীবনে একবারের জন্যেও এ মহান ব্রত পালন করেন তবে তার কোটি জন্মার্জিত ব্রহ্মহত্যাদির মত মহাপাপও তৎক্ষণাৎ ক্ষমা হয়ে যান। শত সহস্র একাদশী ব্রত পালনে যে ফল লাভ হয়, রাধাষ্টমী ব্রত পালনে তার শতাধিক ফল লাভ হয়। পুরানে আরো বর্নিত রয়েছে যে, কোন পাপিষ্ট ব্যাক্তি যদি হেলায় বা অশ্রদ্ধায় এ মহান ব্রত পালন করেন তাহলে ও তার বৈকুণ্ঠলোকে গতি হয়। পদ্মপুরাণের সর্গখন্ডের চল্লিশতম অধ্যায়ে এমনই এক কাহিনী বর্ণিত রয়েছে।
পুরাকালে সত্যযুগে লীলাবতী নামে এক পতিতা বাস করতেন।একদিন সকালে নগর ভ্রমনকালে এক সুসজ্জিত মন্দিরে রাধাঠাকুরানীর পূজা উদযাপন দেখতে পেয়ে ব্রতীদের কাছে ঐ পতিতা ছুটে গেলেন। গিয়ে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, "হে পূণ্যাত্মা সকল তোমরা এত সাত সকালে অতি যত্ন সহকারে কোন ব্রত উদযাপন করছ"? তদত্তুরে রাধাব্রতীগণ বলতে লাগলেন যেহেতু ভাদ্র মাসের সীতাষ্টমীতে শ্রীমতি রাধিকা আবির্ভুত হয়েছিলেন, আমরা সেই রাধাষ্টমী ব্রত পালন করছি। এই অষ্টমীব্রত গোঘাত জনিত পাপ, ব্রহ্মহত্যা জনিত অথবা স্ত্রী হত্যা জনিত পাপ সহ সকল পাপই নাশ করতে সক্ষম।
তাদের কাছ থেকে রাধাষ্টমীর মহিমা শ্রবণ করে সেই পতিতাও স্বেচ্ছায় ব্রত পালনে সংকল্প বদ্ধ হলেন এবং ভক্তগণের সহিত যথাযথভাবে ব্রত পালন করলেন। পরদিন সর্পদংশনে সেই পতিতার মৃত্যু হল। যমদূতেরা ক্রুদ্ধচিত্তে তাকে বন্ধন করে সাথে নিয়ে যমালয়ের দিকে যাত্রা শুরু করলেন। পথিমধ্যে শঙ্খ, চক্র, গদ, পদ্মধারী ভগবান বিষ্ণুর দূতগণ উপস্হিত হয়ে লীলাবতীর সকল বন্ধন ছেদন করে দিলেন এবং তাকে সঙ্গে করে রাজহংসযুক্ত দিব্য বিমানে বৈকুণ্ঠলোকে গমন করলেন। এই ভাবে অধঃপতিত বেশ্যাও কেবল মাত্র রাধাষ্টমী পালন করার ফলে সকল পাপ থেকে মুক্ত হয়ে সরাসরি বৈকুণ্ঠ ধামে গমন করলেন।
যে এ রাধাষ্টমী ব্রত পালন করেন না শতকোটি কল্পেও তার নরক হতে নিষ্কৃতি নেই। তারা চিরতরে নরকে পতিত হবেন।পরবর্তীতে জন্ম হলেও বিধবা হয়। এখন আপনারাই স্বয়ং বিচার করুন এই মহান ব্রত পালন করবেন কি না???
***************রাধে রাধে****************
শ্রীরাধার নামাবলী
= = = = = = = =
হে রাধে(১ ) করুণা করি হৃদয়ে আমার ।
উদয় হইয়া কর স্বনাম প্রচার ।।
অশেষ কল্যাণদাত্রী(২) অশেষ জ্ঞানদা(৩) ।
আহ্লাদিনী (৪)মহাভাগরূপা(৫) শ্রীমানদা(৬) ।।
ইন্দ্রানী(৭) মোহিলা(৮) ইন্দুরেখা(৯) ইন্দুমুখী(১০) ।
ইন্দিরা(১১) ইন্দিরাপরা (১২)কৃষ্ণানন্দ সুখী(১৩) ।।
ঈশাধীশা(১৪ ) সর্বেশ্বরী(১৫ ) উচ্চ পয়োধরা(১৬ ) ।
উর্জ অধিষ্ঠাত্রী (১৭ )শ্যামা(১৮ ) শ্যাম মনোহরা(১৯ ) বজ্র অধীশ্বরী (২০) ।।
ঋতরূপা(২১ ) ঋতুবতী(২২ ) ঋদ্ধা উর্জেশ্বরী(২৩ ) ।
ঋ রূপা(২৪ ) ঋ প্রমোদিনী (২৫ )ঋ মুগ্ধকারী(২৬ ) ।।
একরূপা(২৭ ) একাশ্রয়া(২৮ ) এনস নাশিনী(২৯ ) ।
ঐশ্বর্যরূপিনী(৩০ ) দেবী ঐশ্বর্যদায়িনী(৩১ ) ।।
ঐকান্তিক ভাবরূপা(৩২ ) ওঙ্কার রূপিনী(৩৩ ) ।
ঔৎসুক্যমানসা(৩৪ ) নিত্য বজ্র বিলাসিনী(৩৫ ) ।।
ঔদাসীন্য ভাবরতা(৩৬ ) ত্রিগুন রহিতা(৩৭ ) ।
মায়াতীতা(৩৮ ) মহালক্ষ্মী(৩৯ ) শুদ্ধসত্ত্বম্বিতা(৪০ ) ।।
কৃত্তিকানন্দিনী (৪১ )নন্দা কমলা অংশিনী (৪২ )।
কৃষ্ণ বিমোহিনী(৪৩ ) শ্রেষ্ঠা রতিবিনোদিনী(৪৪) ।।
কলাবিলাসিনী(৪৫ ) কৃষ্ণকান্তা শিরোমণি(৪৬) ।
খঞ্জর গঞ্জনী(৪৭) মান্যা(৪৮) খঞ্জরলোচনী (৪৯)।।
গান্ধর্বী বা মানময়ী(৫০ ) গোষ্ঠবিহারিণী(৫১ ) ।
গদাধর প্রিয়া(৫২ ) গদ্যবাক্য বিলাসিনী(৫৩ ) ।।
গীর্বাণ বন্দিতা(৫৪ ) হরা ঘূর্ণিত নয়না(৫৫ ) ।
চক্রপানি প্রসবিনী(৫৬ ) শ্রীচন্দ বদনা(৫৭ ) ।।
চিচ্ছক্তি রূপিনী(৫৮ ) চন্দ্রা(৫৯ ) চিণ্ময়ী বিদ্রূপা(৬০) ।
চিত্তবিনোদিনী(৬১ ) চিন্তা প্রণয় স্বরূপা(৬২) ।।
চাসপক্ষনিভ(৬৩) চিদাম্বর ধরা পরা(৬৪) ।
ছলনাকারিনী(৬৫) জগদযোনি(৬৬) মনোহরা(৬৭) ।।
জগদীশা(৬৮ ) জগরূপা জল্পন চতুরা(৬৯ ) ।
জ্ঞানরূপা(৭০ ) জ্ঞানপ্রদা (৭১ )জ্ঞেয়া প্রেমাভূরা(৭২ ) ।।
বৃষকেতু রূপ(৭৩) ঋষ গর্ববিনাশিনী(৭৪ ) ।
ঝাট বিলাসিনী(৭৫ ) কৃষ্ণ টঙ্কাররূপিনী (৭৬)।।
ধমকিনী ঠাকুরানী (৭৭)ডমরু কারিনী (৭৮ )।
ঢোড়নী তরুণা(৭৯) তক্র বিক্রয়িনী(৮০) ।।
তপন তনয়াতীর(৮১ ) ধীর বিহারিণী(৮২ ) ।
তান্ডবিনী লালা (৮৩ )তারা হার বিধায়িনী(৮৪) ।
দক্ষিণা দরপহন্ত্রী(৮৫ ) ধরা ধীরা ধরা(৮৬ ) ।
নয়নরূপা(৮৭ ) নর্মসখী (৮৮ )নটিনী প্রবরা(৮৯ ) ।।
নটী নিতম্বিনী(৯০ ) পরা পণ্ডিত পুন্যসা(৯১ ) ।
প্রমত্তা প্রমোদ(৯২ ) শেষ্ঠা প্রেমোদা প্রমদা(৯৩ ) ।।
ফলরূপা(৯৪ ) ভানুকন্যা(৯৫ ) বানী ভগবতী(৯৬ ) ।
ভক্তিরূপা(৯৭ ) ভগবতী(৯৮ ) মঞ্জুলা সুমতি(৯৯ ) ।।
যোগেশ্বরী(১০০ ) যোগপ্রদা(১০১ ) যে সে রাসেশ্বরী(১০২ ) ।
লীলাবতী(১০৩ ) প্রেমরূপা(১০৪ ) সর্বগোপীশ্বরী (১০৫)।।
শর্মদা সরলা(১০৬ ) সাধবী হরি প্রানাধিকা(১০৭) ।
হরিণাক্ষী ব্রজধীশা সর্বরসালিকা(১০৮ ) ।।
বৃন্দাবন বিলাসিনী শ্রীরাধা সুন্দরী ।
শ্রীরাধা নামাবলী হয় সর্বোপরি ।।
গৃহে বা বনেতে থাকি ত্রিসন্ধ্যা যে জন ।
শ্রীরাধার নামাবলী করেন পঠন ।।
তাঁর প্রতি কৃষ্ণকৃপা হয় সুনিশ্চয় ।
সর্বশাস্ত্রে এই কথা বার বার কয় ।।
প্রভু প্রেমলীলাত্মজ দীনানাথ দাস ।
শ্রীরাধার নামাবলী করিল প্রকাশ ।।
রাধাষ্টমীর ব্রত মাহাত্ম্য♦
পদ্মপুরাণে শ্রীনারদ মনির নিকট শিবজি বলেছিলেন, "হে দেবর্ষি, ব্রহ্মা সহ প্রমুখ যিনি সকলের নিত্য মহা আরাধ্য, দেবতাগণ দূর থেকে যার সেবা করতে ইচ্ছা করেন, সেই শ্রীমতি রাধারানীকে সতত ভজনা করা উচিত। যে ব্যাক্তি এই রাধানাম শ্রীকৃষ্ণের নামের সঙ্গে কীর্তন করেন, তার মাহাত্ম্য এতোই বিশাল যে, আমিও তা কীর্তন করতে সক্ষম নই, এমনকি শ্রী অনন্তদেবও নন।"
প্রপঞ্চ লীলায় পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অন্তরঙ্গা স্বরূপশক্তি গোলোকেশ্বরী শ্রীমতি রাধারাণী ভাদ্র মাসের শুক্লা অষ্টমী তিথিতে অনুরাধা নক্ষত্রে সোমবারে মধ্যাহ্ন কালে ব্রজমণ্ডলে শ্রীগোকুলের অনতিদূরে রাভেল নামক গ্রামে শ্রীবৃষভানু রাজা ও কীর্তিদা মায়ের ভবনে সকলের হৃদয়ে আনন্দ দান করে আবির্ভূত হন। শ্রীমতি রাধারানীর প্রাননাথ স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ব্যাতিত এই রাধাষ্টমী তিথির সম্যক মাহাত্ম্য সম্পুর্ণ রুপে কেউই বর্ণনা করতে পারেনা।
শ্রী পদ্মপুরাণে (ব্রহ্মখণ্ড ৭/৮) বলা হয়েছে-
একাদশ্যাঃ সহস্রেন যং ফলং লভতে নরঃ।
রাধা জন্মাষ্টমী পুণ্যং তস্মাং শত গুণাধিকম্।।
"একহাজার একাদশী ব্রত পালন করলে যে ফল লাভ হয়, শ্রীরাধাষ্টমী ব্রত পালন করলে তার চেয়ে শতগুন অধিক ফল লাভ হয়ে থাকে।"
অর্থাৎ ১ বার রাধাষ্টমী ব্রত পালনে ১০ কোটি একাদশীর সমান ফল লাভ হয়।
পদ্মপুরাণে আরও বলা হয়েছে
(১) কোটি জন্মের অর্জিত পাপরাশি ভক্তিপূর্ণ রাধাষ্টমী ব্রত ফলে বিনষ্ট হয়।
(২) সুমেরু পর্বত সমান সোনা দান করলে যে ফল লাভ হয় একটি মাত্র রাধাষ্টমী ব্রত পালন করলে তার শতগুন অধিক ফল লাভ হয়।
(৩) গঙ্গা ইত্যাদি সমস্ত পবিত্র তীর্থে স্নান করলে যে ফল লাভ হয় একমাত্র বৃষভানুকন্যার জন্মাষ্টমী পালন করলে সেই ফল লাভ হয়।
(৪) পদ্মপুরাণে আরো বলা হয়েছে--
রাধাষ্টমী ব্রতং তাত যো ন কুর্য্যাচ্চ মূঢ়ধী।
নরকান্ নিষ্কৃতি নাস্তি কোটিকল্পশতৈরপি।।
"যে মূঢ় মানুষ রাধাষ্টমী ব্রত করে না, সে শতকোটি কল্পেও নরক থেকে নিস্তার পেতে পারেনা।"
(৫) স্ত্রীয়শ্চ যা না কৃবন্তি ব্রতমেতদ্ সুভপ্রদম। রাধাকৃষ্ণপ্রীতিকরং সর্বপাপপ্রনাশম্।।
অন্তে যমপুরীং গত্বা পতন্তি নরকে চিরম্।
কদাচিদ্ জন্মচাসাদা পৃথিব্যাং বিধবা ধ্রুবম্।।
"যে নারী রাধাকৃষ্ণের প্রীতিকর সর্ব পাপনাশক এই শুভপ্রদ মহাব্রত পালন করে না, সে জীবনের অন্তকালে নরকে গিয়ে চিরকাল সেখানে যাতনা ভোগ করে। পৃথিবীতে থাকাকালীনও সে দুর্ভাগিনী হয়।"
এই মহাব্রত পালন করলে শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণের অভয় পাদপদ্মে অচলা ভক্তি লাভ হয়ে থাকে।
হরে কৃষ্ণ, 🙏।
ভালো লাগলে সবাই শেয়ার করবেন