08/12/2023
কক্সবাজারে সিএনজি টমটমে বারকোড দেয়া আছে। ক্যামেরা দিয়ে Scan করে ড্রাইবারের Details নিয়ে, কাছের কাউকে ম্যাসেজ দিয়ে রাখবেন। যে কোন বিপদ আপদে পরে হেল্প হবে।
২. কক্সবাজার গেলে মেরিন ড্রাইবে অবশ্যই গাড়ি নিয়ে ঘুরতে যাবেন।
a) প্রথমে থামবেন, Paraselling/দরিয়ানগর পয়েন্টে।
তারপর সরাসরি হিমছড়ি পয়েন্টে।
B)Lunch সেরে নিবেন সাম্পান পয়েন্টে। হিমছড়ির একটু পরে। এই বীচটাতে যেতে হাটতে হবে। কিন্তু খুবই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন।
C) তারপর সরাসরি যাবেন, গোয়ালিয়া-মিনি বান্দরবন, রেজুব্রিজের ঠিক আগে, বামের রাস্তা।
D) এটা শেষ করে, বিকালে রেজুব্রিজের নীচে কায়াকিং বা নৌকা ভ্রমন করতে পারেন।
E) রেজুব্রিজ পার হয়ে ৫ মিনিট পরে মেরিন ড্রাইবের যে মোড়টা আছে, এটাকে সোনারপাড়া বীচ বলে। এই বীচটার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এখানে প্রচুর কাকড়া আছে। জেলেরা মাছ ধরছে দেখতে পারবেন।
F) পরের স্পট ইনানী বীচ।
G) রয়েল টিউলিপ বীচ + Water Park
H) পাটুয়ারটেক বীচ।
এ পর্যন্তই সাধারনত পর্য়টকরা যায়। তবে, এই স্পটের পর লোকজনের আনাগোনা কম। গাড়ী কম। তাই
যারা নিজেরা গাড়ী ড্রাইব করেন, তাদের আসল খেলা শুরু এই স্পট থেকে টেকনাফের জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত। টেকনাফের দিকে যত যাবেন, বাংলাদেশের মানচিত্রে দেখবেন, লেজ ততই চিকন। তার মানে কি?
কক্সবাজারের পাহাড় এবং সাগর একেবারে কাছাকাছি, মাঝখানে মেরিন ড্রাইব। আপনি ড্রাইব করছেন। আহ্! কি শান্তি। আমি যে কতবার ড্রাইব করেছি এই রাস্তায়। আমার মনে আছে ২০১৭ তে আমার স্কুল বন্ধুরা হঠাৎ বায়না ধরল, আমার গাড়ীতে ঘুরার। রাত তখন ২.৩০ টা।
আমরা কক্সবাজারের এক হোটেলে ছিলাম। বন্ধুদের বললাম, চলো হিমছড়ি থেকে ঘুরে আসি।
কিছুক্ষণ গাড়ি চলার পর, এক বন্ধু বলল, আর কতক্ষণ ? এখনো হিমছড়ি পৌছায়নি?
আমি হেসে বললাম, বন্ধু পাটুয়ারটেক ফেলে এসেছি, অনেক আগে। ঘুটঘুটে অন্ধকার। হঠাৎ, গাড়ি থামিয়ে, স্টার্ট অফ করে দিলাম রাস্তার মাঝখানে।
বললাম, দোস্তরা, গাড়ি সমস্যা দিচ্ছে। সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। আশেপাশে কোন মানুষ নেই। বললাম, কি আর করার দোস্তরা, রাত টা মনে হয় এখানেই কাটাতে হবে, রাস্তার উপর। গাড়ি থেকে সব বের হও।
গাড়ির লাইট অফ! ঘুটঘুটে অন্ধকার। সবাই লাইন ধরে, রাস্তায় শুয়ে আছি চিত হয়ে। পাশেই সাগরের ঢেউয়ের শু শু হাওয়া, উপরে আসমান, ঝলমলে তারা, ভরা পুর্নিমা। আস্তে আস্তে সব ক্লিয়ার হতে লাগলো।
হঠাৎ, এক বন্ধু গাইতে লাগলো। পরে সবাই ধরলো গান। হঠাৎ, একজন বলল, সে একটা গান করবে। গানের শুর করলো- হুক্কা হুয়া হুক্কা হুয়া, আমরা রাতের শেয়াল...
যারা নিজেরা ড্রাইব করে, দামী গাড়ি আছে, কিন্তু মেরিন ড্রাইবে ড্রাইব করেনি- তাদের বলব, আপনার ড্রাইবার হিসাবে জীবন বৃথা।
আমি বছরখানেক আগে Cornwall গিয়েছিলাম, সপ্তাহের জন্য। ওখানকার বীচগুলো কিছুটা Coxsbazar এর মতো। কিছুটা ঢেউ আছে। কিন্তু পানি অনেক ঠান্ডা। নেমেসাতার কাটা যায় না। সাদা লোকজনের চামড়া আমাদের চাইতে ভিন্ন। তারা পারে। আমদের কষ্ট হয়, ঐ পানিতে।
পাটুয়ারটেক কানারাজার গুহার নাম শুনেছেন? মেরিনড্রাইব শামলাপুর বাজার কেন বিখ্যাত জানেন? টেকনাফের কাছাকাছি? সাবরাংয়ে বাচ্চাদের একটা বিশাল পার্ক রয়েছে অনেক খেলনা দোলনা সহ। টেকনাফের কাছাকাছি যেতে মেরিন ড্রাইভে দুপাশে দেখবেন শাড়ি শাগি রং বেরঙের বোট। সিনেমার মতো।
কিছুক্ষণ পর বন্ধুদের নিয়ে রওয়ানা করলাম, টেকনাফ জেটির উদ্দেশ্যে। ভোরবেলা গিয়ে পৌছালাম। জেটি হতে গেলাম, নাফ নদীর উপরে।ঐ তো দেখা যায়, বার্মা।
আসার সময়, একটা টঙের দোকানে দাড়ালাম। সকালবেলা গ্রামের দোকানে বাগগোলা বিক্রি হচ্ছে। আমাদের এক বন্ধুর খিতা নাম- বাগ্গোলা। সেই স্কুলজীবনে হোস্টেলে থাকতাম সবাই। আর কেউ জানেনা, এই নাম, আমরা ছাড়া। দোকানের সামনে গাড়ী থামাতেই, সো দুহাত দিয়ে মুখ লোকালো।
হঠাৎ চেচিয়ে আমাদের অবাক করে দিয়ে বলল, আজ সবাইকে আমি বাগ্গোলা খাওয়াব। বিল আর কেউ দিতে পারবে না। ঐদিকে হোটেল থেকে বাকী বন্ধুরা বার বার কল দিচ্ছিল, ওদেরকে কেন ফেলে আসলাম। আসলে, আমি ও তো প্লেন করি নাই টেকনাফ আসব এত রাতে। কফিলকে বললাম, দোকানের সব বাগ্গোলা কিনে ফেল। গাড়ীতে খাব আর বাকী বন্ধুদের জন্য নিয়ে নিব।
সময় ৭.৩০-৮টা , মেরিন ড্রাইবে উঠলাম। টেকনাফ হতে কক্সবাজার। হঠাৎ উচু পাহাড়ের দিকে সবার দৃষ্টি গেল। পাহাড়ের উপরে ঘন ভারী মেঘের ফাক দিয়ে সুর্যের ঝলক চিকচিক করছে। আহ্! কি অপুর্ব! কি অপুর্ব।
সে ই সৌন্দর্য ছেড়ে, লন্ডন পড়ে আছি শীতের দেশে। Southend on sea, Clacton on Sea, Whistable beach, এগুলো আমার লন্ডনের বাড়ীর কাছে। মাঝে মাঝে যায় বাচ্চাদের নিয়ে। এগুলো নাকি সাগর?
বীচের পাড়ে বসে, শৈশবের কথা ভাবি। লাবনী বীচ, আর বালিকা মাদ্রাসার যে বীচ, আমাদের শৈশবে ঐ দুটি বীচ ই ছিল। বালিকা মাদ্রাসার আর্মি ক্যাম্পের ওখানে, ঝাউবাগানের ভেতর দিয়ে একটা পানির ছড়া ছিল। ওখানেই আমরা সাতার কাটতাম। ঝাউগাছের ঢালে চড়তাম। বয়স তখন ৮-১২ হবে হয়তো। জয়নব্ নামের এক প্রতিবেশী বান্ধবীকে খুব ভাল লাগতো। আমরা বাহারছড়া স্কুলে ক্লাস থ্রিতে পড়ি। কেউ কোনদিন কারো সাথে কথা বলি নি। কিন্তু সবাই জানতো, আমি তাকে পছন্দ করি। সে ও হয়তো করতো।
একদিন শুনতে পেলাম, সে মারা গিয়েছে। ঝাউগাছে উঠে ম্যাকগাইবার ম্যাকগাইবার খেলতে গিয়ে, গাছের ঢাল থেকে জাস্প করেছিল। পড়েছিল নাকি, আর সহপাঠির গায়ে। এবার কক্সবাজার গিয়ে কক্সবাজারে নিজের বাড়ীতে উঠতে পারি নি। আমার চিরচেনা বাহারছড়া মসজিদ, আমার কাছে কত অপরিচিত। এই মসজিদে আমার মক্তব, আমার তাবলিগে হাতেকড়ি। পাকিস্তানী তাবলীগের মুরব্বীদের হতে কত খাবার খেয়েছি। ইশার নামায না পড়ায়, আব্বা মসজিদের পাশে কানে ধরে দাড় করিয়ে রেখেছিল। মসজিদ হতে মানুষ বের হয়, আর আমাকে জিগ্গাসা করে। এই মসজিদের পাশেই কবরস্হনে যয়নব শায়িত। এখনো তার জন্য দোআ করি। জীবনের প্রথম ভাল লাগা।
আপনারা যারা কক্সবাজারে গিয়ে ১/২ দিন থেকে চলে আসেন, তাদের বলব, জীবনে একবার হলে ও পুরা এক সপ্তাহের জন্য কক্সবাজার যান। নিজের বউকে নিয়ে যান। হালাল হলিডে করুন। Spiritual হলিডে করুন। সাগর আর পাহাড়ের মাঝখানে আবিষ্কার করুন নিজেকে আরেকবার। স্রষ্টার কাছে সপে দিন নিজেকে পরুপুর্নভাবে।
সাগরের পাড়ে বসে ভাবুন! জীবনে কি হতে চেয়েছিলেন, কি হলেন, কি হতে চান? কিভাবে হবেন?
এত দুর আসবেন, কিন্তু রিলাক্স করে ঘুরবেন না। হৈ হৈ করে আসবেন, হৈ হৈ করে চলে যাবেন। এর কোন অর্থ হয় না।
ইনানীতে থাকলে ২/৩ দিনে সব স্পট আরাম করে ঘুরতে পারবেন। আর গাড়ী নিয়ে আসলে, আপনাদের অবশ্যই অবশ্যই ইনানীর দিকে থাকা উচিত।
copy