আমি মোহাম্মদ সজীবুর রহমান সজীব লস্কর পাপেল। বর্তমানে চীনের শানশি প্রদেশের আনকাং বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ের উপর B.Sc অনার্স করছি। আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া ট্রিবিউন এবং আর্টিকেল ফর পিপলের ইডিটর। এছাড়াও আমি Our Brahmanbaria App ও Online Trending Shop এর প্রতিষ্ঠাতা।
আমি ১৯৯# সালের ৪ই জানুয়ারী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের বুড্ডা নামক এক গ্রামে জন্মগ্রহন করি। আমার পিতার নাম মোঃ ছাদেকুর রহমান ও মাতার নাম সাহেলা বেগম রহমান। ৩ ভাই-বোনের মাঝে আমি সবার বড়, আমার এক ছোট ভাই (মোঃ সম্রাট লস্কর) ও এক ছোট বোন (জান্নাত রহমান মীম) রয়েছে।
আমার শিক্ষাজীবনের শুরু হয় আমার গ্রামের প্রাইমারি স্কুল থেকে। সেখানে আমি ১ম শ্রেনী থেকে ৩য় শ্রেনী পর্যন্ত পড়াশোনা করি। তারপর আমার পড়াশোনা ও বাবার কাজের সুবিধার্থে চলে আসি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার সাতবর্গে, যেটি হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার সাথে সংযুক্ত। চতুর্থ শ্রেনীতে আবার ভর্তি হয় সাতবর্গ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর সাতবর্গ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৩ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে SSC সম্পন্ন করি।
ছোটবেলা থেকে অনেকের অনেক ধরনের স্বপ্ন কাজ করত। আমি বরাবরের মতই একটু ভিন্ন চিন্তাশীল মানুষ। বড় হওয়ার সাথে সাথেই ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার ভূত মাথায় চাপলো। তাই SSC পাস করার পর পরই পলিটেকনিকের ভর্তি পরিক্ষা দেয়। মেধাতালিকায় সিলেট পলিটেকনিক ইন্সটিউটে ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশোনা করার সুযোগ পায়। অবশেষে, ২০১৭ সালের শেষের দিকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট থেকে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করি।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরের দিকে ঢাকায় চলে আসি ইন্টার্নশিপের উদ্দেশ্যে। ইন্টার্নশিপ করি BASIS & Leads Technology Limited এর পার্টনারশীপ প্রোগ্রামে এন্ড্রয়েড এপ ডেভেলপমেন্ট এর উপর। এরপর ধীরে ধীরে এপ ডেভেলপমেন্ট রপ্ত করি। একইসাথে একটি নতুন স্টার্টআপের সাথে কাজ চালিয়ে যায়। আমার চাকরিজীবনের প্রথমদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি সংবাদ মাধ্যমের কনটেন্টমেকার হিসেবে কাজ করি। প্রায় ৬ মাস কাজ করার পর সেটি ছেড়ে দেই।
তারপর ‘শিখবে সবাই’ নামক একটি বাংলাদেশী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ পায়। একইসাথে বাংলাদেশ সরকারে আইসিটি মন্ত্রনালয়ের গেইম-এপ প্রজেক্টের অধীনে ‘App Monetization & App Management including Marketing’ নামে দুইমাস ব্যাপী একটি ট্রেনিং গ্রহন করি ঢাকার সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে। ‘শিখবে সবাই’ এ বেশ কয়েক মাস কাজ করার পর ছেড়ে দেয় কারন ইতিমধ্যে চীনে উচ্চতর পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়ে যায়। চীনে আসার আগে SEIP এর অধীনে আবার বেসিসে Searching Engine Optimization (SEO) এর উপর দুই মাসের ট্রেনিং করার সুযোগ পাই। সর্বশেষ আরিফ মইনুদ্দিন স্যারের Decodes Lab থেকে ইথিক্যাল হ্যাকিং এর ট্রেনিং নেয়।
তারপর ২০১৯ সালের মার্চের ১০ তারিখ চীনে চলে আসি উচ্চতর পড়াশোনা জন্য। চীনে আসার পর B.Sc এর সাথে চাইনিজ ভাষা শেখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। একইসাথে আনকাং বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেন স্টুডেন্ট কমিউনিটির প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি।
Professional Career
মাধ্যমিক শিক্ষাজীবন শেষ করার পর, মাথায় নানান ধরনের ঘুণপোকারা বাসা বাঁধতে শুরু করেছিল। আমার বেইচমেইট যারা ছিল তারা সবাই বিভিন্ন কলেজে ভর্তি হয়ে যায়। আর আমি পলিটেকনিকে ভর্তি হয়ে যায়। পলিটেকনিকের প্রথমবর্ষের শেষের দিকে আমি প্রথম নতুন একটা শব্দের সাথে পরিচিত হয়, সেটা হচ্ছে প্রোগ্রামিং। এরই ধারাবাহিকতায় ধীরে ধীরে কোডিং শেখা শুরু করি টিপু ভাইয়ের হাত ধরে। তিনিই আমার প্রথম প্রোগ্রামিং শিক্ষক। তারপর বিভিন্ন অনলাইন জাজের প্রোগ্রামিং প্রবলেম সলভ, ছোট ছোট বিভিন্ন কন্টেস্টে অংশগ্রহন, ন্যাশনাল হাইস্কুল প্রোগ্রামিং কন্টেস্টে অংশগ্রহন, বিভিন্ন আন্ত:পলিটেকনিক ও আন্ত:ইউনিভার্সিটি প্রোগ্রামিং কন্টেস্টে অংশগ্রহনসহ স্টেপের স্কিল কম্পিটিশন ২০১৫-১৬, বিভিন্ন উদ্ভাবনীমেলা, হ্যাকাথনসহ বিভিন্ন ধরনের তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিযোগিতা, আইটি এওয়ারনেজ বুথ, ওয়ার্কশপ ও অসংখ্য সেমিনারে অংশগ্রহন করি। বেশ কয়েকমাস রোবোটিক্স ও আইওটি নিয়েও কাজ করার সুযোগ হয়েছে, এক পর্যায়ে এন্ড্রয়েড এপসের উপর আগ্রহ জাগে। তাই এন্ড্রয়েড এপলিকেশন শেখা শুরু করি এবং দীর্ঘ ছয় মাস সময় নিয়ে বেসিস ও লিডস কর্পোরেশন থেকে এন্ড্রয়েড এপ ডেভেলপমেন্টের হাতেখড়ি সম্পন্ন করি।
শিক্ষাজীবনের চারবছরে অসংখ্য মানুষের সাথে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল। একবারে প্রথমদিকে বাংলাদেশ গুগল ট্রান্সলেট কমিউনিটির সাথে সম্পৃক্ত হয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে বাংলা ভাষা গুগল ট্রান্সলেটে কন্ট্রিবিউট করি, মজিলা ফাউন্ডেশনের ভলান্টিয়ার হিসেবে সিলেট পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের স্টুডেন্ট এম্বাসেডর হিসেবে প্রায় দুই বছর কাজ করি। বাংলাদেশ গুগল লোকাল গাইড কমিউনিটির সাথে বেশ কয়েক বছর ধরে কাজ করছি, গুগল ম্যাপে আমার কন্ট্রিবিউটগুলো প্রায় দেড় মিলিয়নের কাছাকাছিবার ব্যবহৃত হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ ম্যাথ অলিম্পিয়াডের সিলেট অঞ্চলের অর্গানাইজার ভলান্টিয়ার, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবক, সিলেট উইকিপিডিয়া কমিউনিটির ভলান্টিয়ার হিসেবে অসংখ্য ভাল ভাল মানুষদের সাথে কাজ করার সুযোগ হয়েছে।
২০১৮ সালের শেষের দিকে, বাংলাদেশে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে আগ্রহী ও তাদের দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক-প্রথম আলো আন্তস্কুল ও কলেজ প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করে প্রথমবার। এরই সুবাদে, সমস্ত বাংলাদেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে স্কুল এক্টিভেশন, আঞ্চলিক কর্মশালা, অনলাইন ও অফলাইন প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। আমি Bangladesh Open Source Network (BdOSN) এর মেন্টর হিসেবে স্কুল এক্টিভেশনের জন্য গিয়েছিলাম দিনাজপুর। সেখানে দুইদিনে বেশ কয়েকটি স্কুলে দিনব্যাপী প্রোগ্রামিং ওয়ার্কশপ করি।
Training, Certifications & Award
আমি বরাবরের মতই, সিলেবাস কেন্দ্রিক পাঠ্যপুস্তক পড়াশোনার বিরোধী। তাই এই সিলেবাসের গন্ডি থেকে বেড়িয়ে এসে বিভিন্ন প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা, হ্যাকিং প্রতিযোগিতা, রোবোটিক্স প্রতিযোগিতা ও বিভিন্ন হ্যাকাথনসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করতাম। এরই সুবাদে, ন্যাশনাল হাই স্কুল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা, আন্তঃ পলিটেকনিক প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা, স্কিল কম্পিটিশন প্রতিযোগিতাসহ আরো অনেকগুলো প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করি।
আমি যখন সিলেটে পড়াশোনা করছিলাম, তখন আইসিটি মন্ত্রনালয়ের এডভান্স মোবাইল গেইম ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টে অংশগ্রহন করি। প্রায় ১৫দিন ব্যাপী এই ট্রেনিং থেকে গেইম ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারি এবং সার্টিফাইড হয়।
আইসিটি মন্ত্রনালয়ের আরেকটি প্রজেক্ট LEDP এর অধীনে সিলেটে ‘ডিজিটাল মার্কেটিং’ এর উপরে দুই মাসব্যাপী একটি ট্রেনিং নেই এবং সেখান থেকে সার্টিফাইড হয়।
২০১৫ সালে গাজীপুরের জাতীয় স্কাউট ট্রেনিং সেন্টার থেকে ‘প্রথম জাতীয় কমিউনিটি বেইজড স্কাউট ক্যাম্প’ সার্টিফিকেট গ্রহন করি। ১০ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর মোট পাঁচ দিনের ট্রেনিং এ অনেক কিছু নতুন শিখতে পারি সেখান থেকে।
২০১৭ সালের শেষের দিকে বেসিস ইন্সটিউট অফ টেকনোলজি এন্ড ম্যানেজমেন্ট ও লিডস ট্রেনিং এন্ড কন্সাল্টিং লিমিটেড এর তত্ত্বাবধানে Android Application Development এর উপর ট্রেনিং গ্রহন ও সার্টিফাইড হয়।
২০১৮ সালের শেষের দিকে, আইসিটি মন্ত্রনালয়ের স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর মোবাইল গেইম এন্ড এপলিকেশন প্রজেক্টে প্রায় ২ মাসব্যাপী ট্রেনিং গ্রহন করি এবং সেই প্রজেক্টে বেস্ট তিন জনের একজন হওয়ার সুবাদে ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট গ্রহন করি, যদি আমি দেশের বাইরে থাকার সুবাদে নিজ হাতে গ্রহন করা হয়নি।
একই বছরে, বেসিস ইন্সটিউট অফ টেকনোলজি এন্ড ম্যানেজমেন্ট ও SEIP এর নেতৃত্বাধীন স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের অধীনে Searching Engine Optimization (SEO) এর ট্রেনিং নেয় এবং সেখান থেকেও সার্টিফাইড হয়।
সর্বশেষ, আমি Decodes Lab থেকে আরিফ মইনুদ্দিনে স্যারের কাছ থেকে ইথিক্যাল হ্যাকিং এর ট্রেইনিং নেয় এবং সেখান থেকেও সার্টিফাইড হয়।
Bangladesh Open Source Network (BdOSN) এর মেন্টর হওয়ার সুবাদে সেখান থেকে মেন্টর এওয়ার্ড গ্রহন করি।
Gratitude & Credit
এই ক্ষুদ্র শিক্ষাজীবনে অসংখ্য ভয়ংকর লেভেলের কিছু মেধাবী বড় ভাই ও বন্ধুদের পেয়েছি যারা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন কাজে আমাকে সাহায্য করেছে। আমি তাদের কাছে বিশেষভাবে ঋণী ও আজীবন কৃতজ্ঞ। বিশেষ করে আমার শিক্ষাজীবনের প্রাইমারি, হাই স্কুল ও ডিপ্লোমা লেভেলের সকল শিক্ষকদের প্রতি আমার চিরঋণী ও আজীবন কৃতজ্ঞ। যাদের তত্ত্বাবধায়ন ছাড়া হয়তো এই পথে আসার সুযোগ হত না। আমি আমার জীবনের প্রথম প্রোগ্রামিং শিক্ষক, যার হাত ধরে প্রথম প্রোগ্রামিং এর পথে এসেছি, তিনি মোশারফ হোসেন টিপু ভাই। আমি তার কাছে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। একইভাবে আমার প্রথম এন্ড্রয়েড ডেভেলপমেন্টের শিক্ষক বিজন শর্মা দাদার কাছে কৃতজ্ঞ।
একইভাবে, আমার আরেক এন্ড্রয়েড ডেভেলপমেন্টের শিক্ষক মোহাম্মদ রজব স্যার, SEO এর উত্তম কুমার সরকার স্যার, ইথিক্যাল হ্যাকিং এর আরিফ মইনুদ্দিন স্যারসহ আরো যে কয়েকটা প্রজেক্টে কাজ করেছিলাম সবার প্রতি আমি বিশেষভাবে ঋণী।