21/12/2024
আদাত (العادات) প্রথা
শরিয়াহর সাথে আদাত-এর কিছুটা সম্পর্ক আছে। আদাত হলো ঐতিহ্য; জনগণের আচরণ ও রীতিনীতি। আর মুসলিম জনগণ ইসলামের সাথে শত শত বছর সম্পৃক্ত থাকার কারণে তাদের মধ্যে যে রীতিনীতি গড়ে উঠেছে, তার সঙ্গে ইসলামের গভীর ও ওতপ্রোত সম্পর্ক রয়েছে; কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, সেসব রীতিনীতি সর্বাংশে ইসলাম নয়।
মুসলিম জনগণের রীতিনীতির সাথে ইসলামের জোরালো সম্পর্ক আছে ।কারণ, তারা ইসলামি নৈতিকতা ও সমুচ্চ মূল্যবোধ দ্বারা পরিচালিত হয়েছে; কিন্তু এটা ঠিক ইসলাম নয়। কারণ, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গার রীতিনীতি ভিন্ন হতে পারে। ইসলাম বহুবিধ সংস্কৃতি ও প্রথাকে ধারণকারী দ্বীন। আমি বিভিন্ন মুসলিম দেশে, বিভিন্ন স্থান এবং অমুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশসমূহে সফর করেছি। আমি দেখেছি, মুসলিমরা ইসলাম অনুশীলনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বৈচিত্র্যকে ধারণ করে। এসব হচ্ছে তাদের প্রথা (আদাত), এটা তারা গড়ে নিয়েছে। আমি সালাত ও রোজার কথা বলছি না। আমি বলছি, ধর্মীয় প্রথা ও নেক আমলের বিষয়ে; এটা অভিন্ন নয়; বরং বৈচিত্র্যময়। এটা আপনি ফিকহের নীতিমালা থেকে গ্রহণ করতে পারেন এবং তাসাউফের নীতিমালা থেকে হৃদয় দিয়ে অনুশীলন করতে পারেন।
প্রত্যেক ইবাদতে, যেমনÑনামাজ, রোজা ও হজে রয়েছে মনের ও হৃদয়ের নীতিমালা। অজু করার সময় শারীরিকভাবে করার জন্য কিছু নীতিমালা আছে, পাশাপাশি আছে হৃদয়ের নীতিমালাও। যখন আপনি অজু করেন, তখন আপনি নিশ্চিত করেন যে, আপনি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। আর আপনি এও নিশ্চিত থাকেন যে, আপনি আল্লাহ তায়ালার সাথে সাক্ষাতের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সালাত আদায় করার সময়ও শারীরিকভাবে কিছু করণীয় আছে, পাশাপাশি আছে হৃদয়ের করণীয়ও। আপনি যখন রুকুতে যান, তখন আপনি আল্লাহর মহত্ত্বের বিষয়ে আরও বেশি সজাগ ও মনোযোগী। আর যখন আপনি সিজদায় যান, তখন আপনি জানেন যে-আপনি আল্লাহ তায়ালার অতি নিকটে। সুতরাং প্রত্যেক ইবাদতে শারীরিক ভূমিকা ও অভিব্যক্তির পাশাপাশি রয়েছে হৃদয়ের অভিব্যক্তি ও ভূমিকা ।
কিন্তু আদাত এর থেকে ভিন্ন। এটা সমাজের মানুষের বেড়ে ওঠার ধারা। এতে যেমন অন্তর্ভুক্ত হয় ইসলামের উপাদান, তেমনি এতে সমাবেশ ঘটে সুনির্দিষ্ট সাংস্কৃতিক উপাদানেরও। তা হতে পারে চীনা, মিশরীয় কিংবা ব্রাজিলিয়ান; এমনকি আমেরিকান মুসলিমরা এখন তাদের আদাত বিনির্মাণ করছেনÑযা একইসাথে আমেরিকান আবার ইসলামিকও। বিভিন্ন জাতি ও দেশের মানুষের স্বতন্ত্র পন্থায় জীবনধারণ পদ্ধতি শরিয়াহর মূল্যবোধ দ্বারা অনুপ্রাণিত; কিন্তু তা শরিয়াহ নয় ।
এসব হলো আজকের আলোচনার সাথে সম্পর্কিত পরিভাষা তথা শরিয়াহ, ফিকহ, কানুন, আখলাক, সুলুক ও আদাতের মধ্যকার অতি সূক্ষ্ম পার্থক্যের বয়ান। অতএব, আমাদের এতক্ষণের আলোচনার নির্যাস হলো নিম্নরূপ :
* শরিয়াহ হলো ইসলামি জীবনপদ্ধতি-যা কুরআন-সুন্নাহ থেকে উৎসারিত।
* ফিকহ হলো শরিয়াহর উপলব্ধি বা সমঝ-যা শরিয়াহকে নীতিমালায় পরিণত করে।
* ফতোয়া হলো সুনির্দিষ্ট বিষয় ও পরিস্থিতিতে ফিকহি নীতিমালার প্রয়োগ-যা একটি অভিমত বা উপদেশ হিসেবে বিবেচিত হবে।
* কানুন হলো শৃঙ্খলা সংরক্ষণের নীতি-যা রাষ্ট্র বাস্তবায়ন করে এবং বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করে ।
* আখলাক হলো সদ্গুণাবলি-যা মানুষের চরিত্রকে সুন্দর ও সুশোভিত করে।
* তাসাউফ বা সুলুক হলো আল্লাহ তায়ালার সাথে বান্দার আচরণ ও সম্পর্কের তরিকা ও হৃদয়ের ফিকহ।
* আদাত হলো সমাজের রীতিনীতি-যা শরিয়াহ নয়; তবে শরিয়াহ থেকে অনুপ্রাণিত।
বই : মাকাসিদুশ শরিয়াহর সহজ পাঠ
লেখক : ড. মুহাম্মাদ হাশিম কামালি
ড. জাসের আল আওদাহ
অনুবাদ : মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ
পৃষ্টা সংখ্যা : ৫৬
মুদ্রিত মূল্য : ১০০৳