01/12/2025
বাসর রাতে ঘরে ঢুকতেই মেয়েটি আমার পাশে বসে চুপচাপ তাকিয়ে রইল। তারপর হঠাৎ বলল,
— একটু ঘড়ির দিকে তাকাবেন?
আমি একটু থমকে গেলাম। এমন প্রশ্নে একটু অস্বস্তিতে পড়লাম। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললাম,
— রাত ১২টা ৩০ বাজে।
ও শান্ত গলায় বলল,
— ঠিক এই সময়টায় আমার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল।
আমি অবাক হয়ে তাকালাম। বললাম,
— শুনো, আমি কখনো বিয়ে করতে চাইনি। এই বিয়ে আমার মা-বাবার ইচ্ছেতে হয়েছে। আমি এখনো মানসিকভাবে প্রস্তুত না। তোমার প্রতি কোনো রাগ বা অস্বীকার নেই, কিন্তু এখনই কিছু শুরু করার মতো অবস্থায় নেই।
আমার কথা শেষ না হতেই ও আমার পাঞ্জাবির কলার চেপে ধরল। গলায় আগুন, চোখে জল।
— তাহলে বিয়ে করলেন কেন? আমি কি একটা পুতুল? আপনি আপনার মা-বাবার খুশির জন্য আমার স্বপ্নগুলোকে পুড়িয়ে দিলেন?
আমি চুপচাপ শুনছিলাম, বলার মতো কিছু ছিল না। ওর কণ্ঠ এবার একটু শান্ত হল—
— যা হওয়ার হয়েছে। আপনি চাইলে আমাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে হবে না। কিন্তু একসঙ্গে থাকতে হবে। আজ আপনি খাটে ঘুমাতে পারবেন না। ফ্লোরেই থাকবেন।
বলেই বালিশটা ছুঁড়ে দিল মাটিতে।
আমি নিচে শুয়ে পড়লাম। ঘুম আসছিল না, মাথায় চলছিল হাজারটা চিন্তা। মশা কামড়াচ্ছে, শরীর ব্যথা করছে। হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়লাম কখন জানি না।
ভোরবেলা জেগে দেখি শরীরে কম্বল, পাশে মশার কয়েল জ্বলছে। মনটা হালকা হয়ে গেল। ভাবলাম, মেয়ে তো একেবারে পাষাণ নয়।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি, টেবিলে চা রাখা। নিচে যাব কি না ভাবছি, তখন ও এসে বলল—
— সবাই খেতে বসেছে, আপনি এখনও ঘরে?
তারপর হেসে বলল—
— না হয় খাবারটা রুমেই এনে দিই?
আমি তাকিয়ে থাকলাম। কাল রাতের হিটলারনি মেয়েটা আজ এত মায়াবতী লাগছে! বুঝলাম, আমি ওর প্রেমে পড়ে গেছি।
তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ একটা ধাক্কা খেলাম, দেখি ও ফ্লোরে পড়ে গেছে। দৌড়ে গিয়ে টেনে তুলতেই বলে,
— কেমন স্বামী আপনি? কোলে তুলে বিছানায় নেবেন না?
আমি ওকে কোলে তুলে বিছানায় রাখলাম। ও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
— ইচ্ছে করে সারাটা জীবন এভাবেই আপনাকে ধরে রাখি, কিন্তু আপনি তো আমাকে ভালোই বাসেন না…
বলতে বলতে ওর চোখে জল। আমার মনটা কেমন হয়ে গেল। বলতে ইচ্ছে করছিল,
"পাগলী, আমি যে তোমাকেই ভালোবেসে ফেলেছি।"
কিন্তু কিছু বলার আগেই ও ঠেলে দিল আমাকে, দৌড়ে পালাল।
এইভাবে চলতে চলতে দুই বছর কেটে গেল। এখন আমরা একে অপরকে ছাড়া ভাবতেই পারি না। তানিয়া এখন অন্তঃসত্ত্বা। আজই ডেলিভারির তারিখ।
হাসপাতালে দৌড়ে গিয়ে শুনি, কন্যাসন্তান হয়েছে। কিন্তু তানিয়া?
আমি ঘরে ঢুকে দেখি, চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। আমি ওর গায়ে হাত দিতেই হঠাৎ কানে কামড় দিয়ে বলল,
— ভাবছিলেন একা ফেলে চলে যাবো? আপনি তো এখনও আমার উপর রাগ করে আছেন।
আমি হেসে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।
— রাগ করি, ঝগড়া করি, কিন্তু ভালোবাসি তো শুধুই তোমাকেই, পাগলি।