17/09/2024
বর্তমান রাষ্ট্র কাঠামো নিয়ে প্রচুর কথা হচ্ছে সুশীল,প্রগতিশীল, আস্তিক,নাস্তিক পাড়ায়। ইসলামিস্ট রা সবদাই ইসলামি রাস্ট্রের কথা বলবে এটাই স্বাভাবিক।প্রগতিশীল পাড়ায় অনেকে বলে উঠতেছে রাস্ট্রের আবার ধর্ম হয়?
আচ্ছা ধর্ম শব্দের অর্থ তো ধারণ করা।প্রত্যেক ব্যক্তি বা বস্তুই নির্দিস্ট কিছু রুলস & রেগুলেশন মেনে চলে।একটা রাস্ট্র নির্দিস্ট কিছু মূলনীতির সম্মিলনে একটা কাঠামোতে উপনীত হয় সেটাই তার ধর্ম সেটা হোক ইসলামিক, গণতন্ত্র,সমাজতন্ত্র নতুবা ধর্মনিরপেক্ষতা বা অন্যান্য।বাংলাদেশে অমুসলিমদের সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে ইসলামিক রাজনীতির বাইরের মানুষজন ভয় দেখায়!
আসলে বাস্তবতা কতটা অন্তঃসারশূন্য চলুন দেখা যাক।
আসুন অমুসলিম(হিন্দু,বৌদ্ধ,খ্রিস্টান বা অন্যান্য) দের নিরাপত্তা ও অধিকার নিয়ে কুরআন এবং হাদীস কি বলা হয়েছে--
ইসলাম অমুসলিমদের সঙ্গে সুবিচার ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ওপর গুরুত্ব দেয়।
কুরআন ও হাদীসের বর্ণনা উল্লেখ করা হলো:
১. কুরআন:(সুরা আত-তাওবা, আয়াত ৬:)
"আর যদি মুশরিকদের(আল্লাহ ছাড়াও অন্য কারো ইবাদাত করে) কেউ তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে তাকে আশ্রয় দাও, যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনতে পারে। অতঃপর তাকে তার নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দাও।"
(সূরা আল-মুমতাহিনা, আয়াত ৮:")
"আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না, যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে না এবং তোমাদেরকে তোমাদের ঘরবাড়ি থেকে বের করে দেয় না, তাদের প্রতি সদয় হতে এবং ন্যায় বিচার করতে।"
(সূরা আল-হজ্জ, আয়াত ৪০:")..আর যদি আল্লাহ্ মানুষের একদলকে অন্য দল দিয়ে প্রতিহত না করতেন, তবে অবশ্যই (বিভিন্ন উপাসনালয়), ইহুদি উপাসনালয়, খ্রিস্টান উপাসনালয়, মসজিদ ধ্বংসপ্রাপ্ত হতো—যেখানে আল্লাহর নাম অধিক স্মরণ করা হয়।"
এই আয়াত দ্বারা বোঝানো হয় যে, ইসলাম শুধু মুসলমানদের মসজিদের সুরক্ষার ওপরই নয়, বরং অন্যান্য ধর্মের উপাসনালয়েরও সুরক্ষা নিশ্চিত করেছে।
(সুরা আন-নিসা, আয়াত ৭৫:")..
আর কেন তোমরা সেইসব দুর্বল, নির্যাতিত পুরুষ, নারী ও শিশুদের জন্য যুদ্ধ করবে না, যারা বলে, 'হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের এ জনপদ থেকে বের করে নাও, যার অধিবাসীরা যালিম; এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একজন অভিভাবক প্রেরণ করো, এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একজন সাহায্যকারী প্রেরণ করো।'
এই আয়াতের মাধ্যমে ইসলামের নীতির অংশ হিসাবে সকলের, বিশেষ করে দুর্বল ও অবহেলিতদের রক্ষা করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
কুরআনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ধর্মীয় বিষয়ে কোনও ধরনের জবরদস্তি নেই।
(সুরা আল-বাকারাহ, আয়াত ২৫৬:)
"ধর্মে কোন জবরদস্তি নেই।"
এই আয়াতের মাধ্যমে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, কারও ওপর ধর্ম পরিবর্তনের জন্য বল প্রয়োগ করা যাবে না। প্রত্যেকের স্বাধীনতা রয়েছে তার ধর্ম মেনে চলবে।
চলুন,কিছু হাদীস নিয়ে আলোচনা করি।
-সুনান আবু দাউদ-এর একটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:"
"যে ব্যক্তি কোন ধিম্মিকে (অমুসলিম নাগরিক) অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়, কিয়ামতের দিন আমি তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবো।"
সাহিহ বুখারী-তে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
"যে ব্যক্তি একটি চুক্তিবদ্ধ অমুসলিমকে হত্যা করবে, সে জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না:"যে ব্যক্তি একজন মুআহিদ (চুক্তিবদ্ধ অমুসলিম) এর প্রতি অন্যায় আচরণ করবে, তার সম্পদ দখল করবে, তার ক্ষমতা বহির্ভূত কাজ করতে বাধ্য করবে, অথবা তার সম্মতি ব্যতীত তার থেকে কিছু নিয়ে নিবে, কিয়ামতের দিন আমি(মুহম্মদ সা.) তার পক্ষ থেকে অভিযোগ করবো।"
এই হাদীসের মাধ্যমে অমুসলিমদের সম্পদ, অধিকার এবং সম্মান রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
অমুসলিমদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার:
ইসলামী শাসনে অমুসলিমরা ধিম্মি বা চুক্তিবদ্ধ নাগরিক হিসেবে গণ্য হতো, যারা মুসলিম রাষ্ট্রের সুরক্ষা ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করত। তাদের সম্পত্তির অধিকার, ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা, এবং অন্যান্য নাগরিক সুবিধা লাভের সুযোগ ছিল।ধিম্মিরা ইসলামি শাসনের অধীনে তাদের সম্পত্তির মালিকানায় অধিকারী থাকত এবং সম্পত্তির উত্তরাধিকার লাভ করতে পারত। ইসলামি রাষ্ট্রে তারা তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারত এবং তাদের আয় বা সম্পত্তি রক্ষা করা হতো।
উমর ইবনে খত্তাব (রা.)-এর শাসনকাল:
উমর ইবনে খত্তাব (রা.) তার শাসনামলে ধিম্মিদের সুরক্ষা নিশ্চিত করেছিলেন এবং তাদের অধিকার রক্ষায় নানা পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তার বিখ্যাত চুক্তি, যাকে "উমর চুক্তি" বলা হয়, ধিম্মিদের অধিকার, নিরাপত্তা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
আন্দালুস (স্পেনের মুসলিম শাসন):
মুসলিম শাসকদের অধীনে আন্দালুসে (স্পেন) মুসলমান, খ্রিস্টান, ও ইহুদিরা শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করেছিল। এই সময়কালে তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, উপাসনালয় এবং সামাজিক জীবন সমৃদ্ধ হয়েছিল।
অটোমান সাম্রাজ্য:
অটোমান সাম্রাজ্যে খ্রিস্টান ও ইহুদিরা "মিলেট" নামে পৃথক সম্প্রদায়ের আওতায় তাদের নিজস্ব বিচারব্যবস্থা ও ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারত। তাদের সম্পত্তির অধিকার এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা সংরক্ষিত ছিল।
আল্লাহ ও নবী (সা.) এর এত এত উক্তির বাহিরে এমন কোন দৃষ্টান্ত সব ধর্মের মানুষের সহাবস্থানের ক্ষেত্রে সম্ভব কি না- আপনারা জাজ করবেন।।
আজকে যারা সেকুলারিজম বা রাষ্ট্রের ধর্ম হয় কি না এসব বুলি আওড়াচ্ছেন -- আপনাদের এমন কোন হৃদয়স্পর্শী বাক্য আছে কি না যা মানুষকে একতাবদ্ধ করতে পারে অথবা সৃষ্টির সাথে স্রষ্টার সংযোগ ঘটাতে পারে। আপনারা তো সকালে বলেন একটা রাতে আবার সেটা ভুল প্রমানিত করে নতুনরুপে সঙ্গায়ন করেন।মুসলিমরা সর্বদাই তার স্রষ্টার কথা মানতে দায়বদ্ধ।তবে,আমাদের দেশে প্রাকটিসিং মুসলিমের বেশ অভাব যার প্রধান কারণ অজ্ঞতা।